তোমার_প্রেমে_মাতাল,পর্ব_১৫,১৬

0
1726

তোমার_প্রেমে_মাতাল,পর্ব_১৫,১৬
লেখিকা_মায়াবিনী (ছদ্মনাম)
পর্ব_১৫

মায়াবিনী আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই!

নিবিড় ৩০মিনিট যাবৎ এই লাইনই বলছে। কিন্তু আমি পাত্তা দিচ্ছি না। কেনইবা দিবো? আমার কথার খেলাফত করেছে সে।

নিবিড় কথা বলা বন্ধ করে দিলো হটাৎ। কাপড় গোছাচ্ছিলাম আলমারির।ভাজ করে করে আলমারিতে তুলছিলাম। পিছন পিছন ঘুরে নিবিড় আমাকে কথা শোনাতে চাচ্ছে। এভাবে থেমে পরায় অবাক হলাম। কিন্তু তাও ওর দিকে তাকালাম না।এরকম নিস্তব্ধতা মানে ঝড়ের পূর্বাভাস। আমার ভাবনার ছেদ ঘটালো আমার প্রানের প্রিয় স্বামী।

এক ঝটকায় নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিজের সাথে আমায় মিশিয়ে নিয়েছে।
-তুমি কথা বলো না ইট’স ওকে। বাট কথা শুনতে কি সমস্যা তোমার?

এতো জলদি সব হয়ে গেছে ভাবার সময় আর পেলাম না। জেদ আরো কয়েকশো গুন বেড়ে গেল। রাগে কটমট হয়ে নিবিড় এর চোখে চোখ রেখে বললাম
-এসব অসভ্যতামোর কি মানে?

-হোয়াট?

-ওয়াট ময়াট দুরে যেয়ে বলো।

-তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে বউকে ছুবো?

নিবিড় এর মুখে বউ শুনে ক্ষোভে দূঃখে ওর মাথার চুল টেনে ছিড়ে ফেলতে মন চাচ্ছে। ওর কাছে থেকে নিজেকে এক ঝটকায় সরিয়ে ফেললাম।
নিবিড় আমাকে বেডরুমে রেখে চলে গেল।

নীরবের জ্বর এসেছিল বলে ওকে দেখতে গিয়েছিলাম। ওর চোখ লাল হয়ে আছে। বুঝলাম অনেক জ্বর। কপালে চেক করে দেখেছি ভালই জ্বর এসেছে। নাপা খাইয়ে রেখে এলাম। আমার এত বেশি শরীর খারাপ করেনি। আমি আমার নিজের রুমে ফেরত এসে এবং নিজের কাপড়চোপড় গোছানো শুরু করে দেই।কিছু করার ছিল না। সময় পার করতে চাইছিলাম। হঠাৎ নীরব রুমে এসে আমাকে এই কথাটাই বলা শুরু করে দেয়। কি জানি কি বলতে এসেছিল। আসলে ওর কথা শোনার মতো আমার ইচ্ছেটুকুই নেই।

রাত ১২টা বাজতে ৬ মিনিট বাকি। নিবিড় এসে আমার পাশে শুয়ে আছে। কিছুক্ষণ পর আমাদের দুইবছর পূর্ণ হবে বিয়ের।

ড্রয়িং রুমের ঘড়িতে জানান দিলো ঘন্টা বাজিয়ে ১২টা বাজে, তোমাদের জীবনের আরেকটি বছরে পরল মানে নতুন ভাবে শুরু করার আর একটি সুযোগ। মন হটাৎ নরম হয়ে গেল।ওর দিকে ফিরে শুইলাম।

নিবিড় ঘুমিয়ে গিয়েছে আমার পাশ ফিরেই। না না বোধহয় হয়। চোখ বন্ধ করে আছে। বারান্দার লাগোয়া জানালা দিয়ে চাঁদের ফিকে আলো ওর মুখটায় পরেছে। জানালার পর্দা পুরোটা টানা হয়নি।আমি একটু উঁচু হলাম। আমার ছায়া দিয়ে ছেয়ে গেল ওর মুখ খানা। চাঁদ এখন আমার নিবিড়কে দেখতে পাচ্ছে না। আমার ছায়া পরার পরও যদি নিবিড়ের চোখ খুলে নাই তাহলে বুঝে গেলাম ঘুমিয়ে গিয়েছে।ভালোই হলো ঘুমিয়ে গিয়েছে। আজ আমি কিছু বলবো তা না শুনাই এখন ভালো।আমি বলছি নিবিড়কে,
“জানো কালকে থেকে শুরু করব আমাদের নতুন যাত্রা। কালকে আমি তোমাকে একটা বড় সারপ্রাইজ দেবো। সব ঠিক করে নেব নিজেদের মধ্যে। তুমি আমায় কি বলতে চেয়েছিলে তা আমি মনোযোগ দিয়ে শোনব। সম্পর্কে সুযোগ দিতে হবে। আমাদের আরেকটু স্পেস দিতেই হবে। এভাবে থেমে থাকা যাবে না।বড্ড ভালোবাসি যে তোমায়।”

এমন বলেই ঈষৎ হেসে ফেললাম। যেয়ে জানালার পর্দা টেনে দিলাম। আমার নিবিড়কে দেখা? নজর লাগানো? সব শখ ঘুচিয়ে দিবো।চাঁদকে ভেঙচি কেটে চলে আসলাম। নিবিড় এর পাশে শুয়ে ওর সিল্কি চুলগুলো হাত দিয়ে সরিয়ে দিলাম কপাল থেকে।ওকে দেখতে দেখতে কখন ঘুমিয়ে গেছি জানি না।

-মায়া সাজ সকালে এসব কি করছো?

-নীরব তুমি রান্নাঘরে কেন? জ্বর এসেছে তোমার। কি চাই তোমার? (কোমড়ে হাত দিয়ে বললাম)

-আমার জ্বর এসেছিল এখন নেই। তোমার আসেনি?

-না তো।সকালের নাস্তা খাও। বেশ বেলা করে উঠেছো। খেয়ে নাপা খেয়ে নাও।আর রান্নাঘর থেকে যাও তো।

-তুমি অফিস না যেয়ে রান্না করছো?

-চকোলেট কেক বানাই?।

-কেন??

-তোমার ভাইয়ার জন্য।

-মানে? কাল রাতে সব ঠিক হয়ে গেছে তোমাদের?

-নাহ! তবে খুব জলদি হবে।এখন যাও খেয়ে নাও।

নীরব রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে গেল।

সকালবেলা ঘুম ভাঙার পর নিবিড়কে কোথাও দেখতে পেলাম না রুমের। বুঝতে পেরেছি হয়তোবা ও বাইরে গিয়েছে। ওয়াশরুম গিয়ে ফ্রেস হয়ে নিলাম। এখন রান্নাঘরে গেলাম। আজকে রান্না করবো নিবিড়ের পছন্দের খাবার। পছন্দের চকোলেট কেক বানাবো।ও আমার হাতের কেক খুব পছন্দ করে। বুঝলাম সকালবেলায় বেরিয়ে অফিস গিয়েছে। আমার একটু দেরিতেই ঘুম ভেঙেছে। মা বলল আমি আর নীরব নাস্তা করিনি। ঘুমাচ্ছিলাম। রান্না আমি করব দুপুরের। তাই বলে মাকে রুমে পাঠিয়ে দিলাম।

কালকের ঘটনার পর থেকে আমি আর নীরব আগের মত বন্ধু হয়ে গেছি। জ্বরটা কমেছে নীরবের। চিন্তাটা কমে গেল। আমার জন্য অসুস্থ হয়ে ছিল কিনা!

পোলাও, রোস্ট, গরুর রেজালা, কাবাব আর কেক বানিয়েছি। কেক সন্ধ্যার পর কাটবো। মাকে দিয়ে নিবিড়কে কল করিয়েছি দুপুরে বাসায় আসতে। জরুরি তলব দিয়ে। আর মাকে বলেছি,
-মা! বিয়ের পর আলাদা আমি কিছু রান্না করিনি। আজকে করবো। বাবা আর নিবিড়কে দুপুরে আসতে বলো কোনো বাহানা করে। ওদের সারপ্রাইজ দিবো।

বিয়ের পর মা আমাকে আজ এত হাস্যজ্জল দেখলো বলেই এক কথাতেই মেনে গেল। এইদিকে নীরব আমাকে নাকি রান্নায় হেল্প করবে।খুন্তি দেখিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছি। বই থেকে যে মুখ তুলে না সে নাকি হেল্প করবে তাও আবার রান্নায়!

রান্না তাড়াতাড়ি হওয়ায় গোছল সেরে বাসন্তী রং এর তাতের শাড়ি পরে নিলাম। দুই হাতে সোনার বালা পরেছি। বিয়ের পাকা কথা হওয়ার পর মা পরিয়ে দিয়েছিল। আজকে থেকে সবসময় পরে থাকবো।দুই হাতে চুড়ি নাকি বিবাহিতার চিহ্ন।

ডাইনিং গিয়ে দেখলাম বাবা এসে গেছেন। ২টা বাজে প্রায়। মেইন দরজায় বার বার তাকাচ্ছি।কখন যে আসবে নিবিড়। নীরব বাবা টেবিলে বসে গেছেন।
-আজ জরুরি তলব দিয়ে ডাকলে কেন রত্না?

-তোমার মেয়ে আজকে নিজ হাতে পোলাও মাংস রেঁধেছে। তোমাকে ডেকে আনতে বলেছে। সারপ্রাইজ দিবে।

-মায়াবী মা তুমি?

-জ্বি বাবা।

-খুব ভালো মা খুব ভালো।গন্ধও বেশ।(খুশি হয়ে)

-এখন কি এভাবেই বসিয়ে রাখবা নাকি খাইতেও দিবে মায়া?

-কি অসভ্যতা নীরব? ভাবীকে নাম ধরে ডাকিস? (মা রেগে বললেন)
আর তোর ভাইয়া আসছে? এতো জলদি কিসের?

মুখ নামিয়ে বসে রইলো নীরব। আমিও কখন থেকে অপেক্ষা করছি। নিবিড় কোথায়? এত দেরি কেন করছে? সবার ক্ষুদা লেগেছে। এভাবে কতক্ষণ অপেক্ষা করবে টেবিলে সবাই?

-মা থাকুক না। বাবা নীরব খাওয়া শুরু করো সবাই। মা তুমিও বসো। আমি সার্ভ করছি। খালাকে খাবার দিয়ে দিয়েছি। খালুর সাথে নিচে একসাথে খাবেন। আমি ওর জন্য অপেক্ষা করবো। ও এলে খাবো। তোমরা খেতে বসো তো।

-রত্না তোমার বউ তোমার চেয়েও বেশি সংসারী। কি করে ওকে আনতে চেয়েছিলে না প্রথমে?

-হিরে চিনেছিলাম না বলে। যখন দেখলাম আমার ছেলে ওকে ছাড়া অচল, বাঁচতে পারবে না নিয়ে এসে পরলাম। না মানে যখন চিনলাম নিয়ে এসে পরলাম।

মা এ কি বলে ফেলছিল। বাবা আর নীরব একবার আমার দিকে একবার মার দিকে তাকাচ্ছে। মায়ের দিকে আমি তাকিয়ে চোখ নামিয়ে দিলাম। ভীষণ লজ্জা লাগছে এখন।

দরজায় বেল বাজতেই লজ্জা কাটিয়ে সাথে সাথে শীতল এক অনুভূতি মনটাতে ছেয়ে গেল।দৌড়িয়েই যাচ্ছিলাম। মনে পরল সবাই আমাকে দেখছে। যতটা সম্ভব স্বাভাবিক হেটে দরজা খুলে দিলাম। হ্যা জানতাম নিবিড় এসেছে। ওকে দেখে যতটা আনন্দিত হয়ে ছিলাম ততটাই বিষন্নতায় মনটা ছেয়ে গেল ওর পিছনের ব্যক্তিকে দেখে। এ আর কেউ নয় রুশমি!!

বাবা মা দুইজনই টেবিল ছেড়ে গেইটের সামনে চলে এসেছে। কারন নিবিড় ড্রয়িং এ ঢুকেই মা বলে ডাক দিয়েছে। বাবা এ সময় বাসায় তা ও জানত না। নীরব সবার সাথে ড্রয়িং রুমে এলো। আর এ দিকে নিবিড় মেয়েটাকে ভেতরে আসতে বলে নিজে ভেতরে চলে এলো।

-মা আর্জেন্ট বলে ডাকলে যে? (নিবিড় শার্টের ফোল্ড করা হাতাকে খুলছে)বাবা তুমিও এসময় বাসায়?

সবাই আপাতত মেয়েটাকে দেখতে ব্যস্ত।

নীরব আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি ওর দিকে তাকাতেই ইশারা করলো মেয়েটা এখানে কেন? আমার মুখের এক্সপ্রেশন দেখে ও বুঝে গেছে আমি জানি তো নাই। উল্টো মেয়েটাকে দেখে রেগে ফেটে যাচ্ছি।

বাবাঃ নিবিড় মেয়েটা কে?
নিবিড়ঃ ও রুশমি। মা বলো না কেন? কিসের জন্য ডাকলে। কত তাড়াহুড়ো করে এলাম।
মাঃ তোমার বাবা মেয়েটার সম্পুর্ণ পরিচয় চেয়েছে।কেবল নাম নয়।
নিবিড়ঃ ও আমার বন্ধু । দেশের বাইরে থেকে এসেছে। কিছুদিন এ বাসায় থাকবে।
বাবাঃ তোমার অনেক বন্ধু এ বাসায় আসা যাওয়া করে। কিন্তু ওকে আগে তো কখনো দেখিনি।
নিবিড়ঃ ও আমার স্কুল জীবনের বন্ধু। তারপরই বাইরে চলে গিয়েছিলো। এজন্য তোমরা ওকে দেখনি।
বাবাঃ আচ্ছা। নিয়ে এসেছো ভালো করেছো। মায়াবী রান্না করেছে। তুমি ফ্রেস হয়ে এসো। খেয়ে নিক আমাদের সাথে।কি নাম বললে মেয়েটার?
নিবিড়ঃ রুশমি।
বাবাঃ হ্যা হ্যা রুশমি। ভালো আছো?
রুশমিঃ জ্বি! আঙ্কেল আপনি?
বাবাঃ আলহামদুলিল্লাহ। আসো আমাদের সাথে খেয়ে তারপর বাসায় যেয়ো।
নিবিড়ঃ বাবা আমি বলেছি ও এখানে কিছুদিন থাকবে। ওর বাংলাদেশে কেউ নেই।
বাবাঃ তবে এলো কেন?
নিবিড়ঃ মা তুমি আমাকে বিশ্বাস করো? (মায়ের সামনে এগিয়ে দাড়িয়ে)
মাঃ কেন করবো না বাবা?
নিবিড়ঃ আমি যা করছি আমায় করতে দাও। ওকে থাকতে দাও। ওর শুধু এক ছোট ভাই আছে। তাও এবোর্ড। বাবা মা কেউ বেচে নেই।এখানে ছাড়া ওর যাওয়ার কোনো জায়গা নেই।
মাঃ ঠিক আছে।
বাবাঃ রত্না!
মাঃ একটা অসহায় মেয়েকে বের করে দিবো? এমন করো না।থাকতে দাও। সবার সাথে ওকে পরিচয় করিয়ে দাও নিবিড়। তারপর মায়াবী মেয়েটাকে গেস্টরুমে দিয়ে আসো। ফ্রেশ হয়ে খেতে আসুক।আমি তোমার বাবাকে খেতে দিচ্ছি। (বলে হন হন করে বাবার পিছন পিছন ডাইনিং রুমে চলে গেল)

আমি নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে আছি। কি সিচুয়েশনে আমাকে ফেলে দিলো লোকটা।

-ও হচ্ছে আমার ছোট ভাই নীরব।

-কেমন আছো নীরব?(রুশমি খানিকটা হাসি মুখে)

-ভালোই ছিলাম। আপাতত কেমন আছি বোঝার চেস্টা করছি।

-নীরব?(নিবিড় খানিকটা ধমকের সুরে বলল)

নীরব ও ডাইনিং রুমে চলে গেল।

-রুশমিকে ওর রুম দেখিয়ে দাও। কি কি লাগবে জিজ্ঞেস করে দিয়ে দিও।(আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে চলে যেতে নিল নিবিড়)

-ও কে নিবিড়? কি হয় তোমার? তোমার তো বোন নেই। তবে এই ছোট মেয়েটা কে?

কিহ! আমি ছোট মেয়ে? নিজে ২৮ বছরের ঢ্যামরা বেটি। আমাকে আমার জামাই এর বোন ও ভাবা হচ্ছে? জীবনে আরো কতকিছু দেখবো কে জানে? আর শয়তান ছেলে আমার পরিচয় ও দিলো না? রুমে যেয়ে নেই। তোরে আচ্ছা মতো ধুলাই দিমু খচ্চর লোক!

-ও মায়াবিনী। না মানে মায়াবী। আমার ওয়াইফ……

চলবে

#তোমার_প্রেমে_মাতাল
#লেখিকা_মায়াবিনী
#পর্ব_১৬

-এই রুশমি কি সেই রুশমি?(রাগে নিবিড় এর সামনে দাড়িয়ে জিজ্ঞেস করলাম)

-কোন রুশমি?(ভাব নিয়ে)

-মনে হয় জানোই না! বন্ধু বলে পরিচয় দেওয়ার কি মানে?(রাগে নিবিড় এর মাথায় হাতুড়ি পিটা করতে ইচ্ছে করছে)

-বাবার সামনে এক্স বলবো?(নিবিড় খানিক ভ্রু উঁচু করে)

-তুমি এই মহিলাকে কেন এ বাসায় নিয়ে এসেছো?

-মহিলা কি? কেন এনেছি জানো না? (বিরক্ত হয়ে)

-বাংলাদেশে কেউ নেই তবে কেন এলো? আর যাদের কেউ নেই প্রয়োজনে এলে হোটেলেই থাকে।

-কয়েক মাস থাকবে। এতোদিন হোটেলের টাকা কে দিবে? যার জামা কাপড়ই তুমি দিয়েছো।( মনে হলো মজা করে বলল)

নিবিড় এর কলার টেনে নিচু করে আমার দিকে টেনে বললাম
-কয়েক মাস? মানে কি? তুমি বলতে চাও আমি সতিনের সংসার করব? বিয়ের একমাস পার হয়নি এখনো।

-হোয়াট দ্যা! সতিন মানে কি?

-জানো না তুমি?(চোখ ছলছল করছিল আমার)

-আমার একটাই বউ ছিল এই একটাই থাকবে। এই অধিকার কেবল একজনেরই।(বলে কলার থেকে আমার হাত নামিয়ে দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেল)

আমি রুশমিকে গেস্ট রুমে নিয়ে এসে বললাম, আপনি ওয়াশরুমে যেয়ে ফ্রেশ হতে থাকুন আমি জামা কাপড়ের ব্যবস্থা করছি।
উনি আচ্ছা বলে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল।

রুমে এসে দেখি নিবিড় ওয়াশরুমে। অপেক্ষা না করে আমার আলমারী থেকে কিছু থ্রি-পিস বের নিয়ে গেস্ট রুমের দিকে গেলাম। বিয়ের সময় অনেক নতুন থ্রি-পিস বানানো হয়েছিল। সবসময় তো শাড়ি পরা যায় না তাই। নতুন কয়েকটি থ্রি-পিস ওই মেয়েটির জন্য নিয়ে গেলাম। এসব করছি ঠিকই। কিন্তু শুধু মাত্র শ্বশুর শাশুড়ীর জন্য। কোনো প্রকার অশান্তি করতে চাই না শ্বশুর বাড়িতে। আর আমি লক্ষী বউ না কেবল মেয়ের মতো উনাদের জন্য। কি করে মিসবিহেব করতে পারি। কিন্তু রাগে আমার নিজের চুল নিজেরই ছিঁড়তে মন চাচ্ছে। কোনোরকমে নিজের রাগ কন্ট্রোল করে গেস্ট গেলাম। ওয়াশরুমের দরজার কাছে গিয়ে বললাম,
-আপনার জামা কাপড় বিছানার উপর রেখে যাচ্ছি। লক করে টান দিয়ে রেখে যাচ্ছি দরজা রুমের। বের হয়ে চেঞ্জ করে নিতে পারবেন।

-ঠিক আছে।

রুম থেকে বের হয়ে নিজের রুমে যাবো তখনই নীরবের সাথে দেখা।
-কি মায়া এসব কি? ওইদিন এই মেয়েকে দেখে কেঁদে শরীর খারাপ করলে।বৃষ্টিতেও ভিজলে আমাকে ভেজালে।আজকে এই মেয়েরই সেবা করছো নিজের জামা দিয়ে সাহায্য করছো। কি ব্যপার সতিন বানিয়ে ফেললে নাকি?

যতটুকু শান্ত ছিলাম তা সব ফুস হয়ে গেছে। রুমে যেয়ে নিবিড়কে দেখলাম টাওয়াল দিয়ে মাথা মুচ্ছে। রাগে ঘটঘট করে তাকিয়ে এসবই বললাম। কিন্তু নিবিড় এর মুখে একটাই বউ শুনে সব ভুলেও গেলাম।মনটা শান্ত হয়ে গেল নিমিষেই। দৌড়ে বেরিয়ে এলাম রুম থেকে। নিবিড়কে খেতে দিতে হবে কিনা।

খাবার টেবিলে নিবিড় এর প্লেটে খাবার বেরে দিচ্ছি। আমার প্লেটে বাড়তেই নিবিড় এর পাশে বসবো, ওমনেই কোথা থেকে রুশমি এসে আমার চেয়ারটায় বসে পরল। আমি নিবিড় এর দিকে তাকিয়ে লুক দিচ্ছি। এই ছেলের হুস নেই। হাপুস হুপুস খাচ্ছে। ভাই জানি তোর আমার হাতের রোস্ট খুব পছন্দ। তাই বলে আমার দিকেই নজর নাই? অসহ্যকর!

অন্য চেয়ারে বসলাম আরেকটা প্লেট বেরে।

-তা নিবিড় বিয়ে করলে কবে?

-মাস খানেক হবে।

-আমি ফোন দেওয়ার আগে?

নিবিড় খাওয়া বন্ধ করে একবার আমার দিকে তাকালো। পানি খেয়ে বলল,
-কাছাকাছি সময়!

-ওহ!

নিবিড় চলে গেল হাত ধূয়ে।

বেলা ৪টা বাজে প্রায়। বারান্দায় দোলনায় বসে ভাবছি। আমি জানি আমাদের বিয়ের দিন রাতে কিছু তো হয়েছিল। শ্বশুরবাড়ী এসে আমাকে ঘরে তুলে নিল মা। বাড়িভর্তি বেশ কিছু মানুষ। এরা সবাই আশেপাশের মানুষ। নতুন বউ দেখতে আসা। আমাদের বউভাত হবে না। আমার শশুর শাশুড়ীর আত্মীয় স্বজন নেই তেমন। দূরের কিছু আছেন। দেশের বাহিরেই থাকেন। তাই আর করা হয়নি। আমার সাথে শশী আপুই এসেছিল। বাসরঘরে বসিয়ে রেখে চলে গেছে। যখন নতুন বউ দেখতে সবাই ব্যস্ত নিবিড় হটাৎ গায়েব। আপু বলে,

-জামাইকে কম খোঁজ। নতুন বিয়ে নাকি চোখে হারাচ্ছিস?

লজ্জা পেয়ে আর খুঁজি নাই। রাতেও যখন এলো না তখন বুঝলাম কিছু তো হয়েছে। কালকে নিবিড়কে ফলো করে এটাও বুঝে গেছি রুশমি কোনোভাবে জড়িত নিবিড় এর এমন ব্যবহারের জন্য। আজকে খাবার টেবিলে এটাও জানলাম রুশমি নিবিড়কে ফোন করে ছিল।বুঝেও গেলাম সেটা বিয়ের দিন রাতে।

মায়াবিনী দোলনায় বসে আছে। ওর চুল বাধাহীন ভাবে উড়েই চলেছে। দুর থেকে দাড়িয়ে ওকে দেখছি। মেয়েটার জন্য এ দোলনা বানিয়েছি। তবে এত সুন্দর দৃশ্য দেখতে পাবো ওকে দোলনায় তা কল্পনা করিনি। যেন মায়াবিনীকে এভাবে দেখতে থাকলে আমি মোহে পরে যাব। মুখ ডুবিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে ওর চুলে।

মনে মনে বলছি,”মায়াবিনী আমাকে আর খানিকটা সময় দাও। আমি অনেকটা গুছিয়ে নিয়েছি। আর বাকিটুকু হলেই তোমায় আমি কাছে পাবো। এই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করা জানতাম মিষ্টি। কিন্তু আজ বড়ই তেতো লাগছে। কত কষ্টে তোমার থেকে দূরে থাকছি কেবল আমিই জানি। কবে পারবো তোমায় বুকে জড়িয়ে নিতে! ঠিক কবে?”

যাই পাতা লাগাই??,- দোলনায় অনেকক্ষণ ভাবছি। এখন খুজে বের করতে হবে রহস্য। আমার হনুমান জামাই তো বলবে না। নিজেরই বের করতে হবে।

উঠে পিছনে ঘুরে দেখি নিবিড় দরজায় ঠেস দিয়ে দাড়িয়ে আছে। আমারই দিকে তাকিয়ে। খাবার গিলেছে অথচ আগের মতো প্রশংসা করে তো নাই। আমার চেয়ারে অন্য কেউ বসলো তাও ওর পাশে, তখনো কিছুই বলে নাই। এখন তাকিয়ে থাকলেই কি আমি পাত্তা দিবো? নেভার। ওর মুখের সামনে ভেংচি কেটে চলে এলাম।

মেয়েটা ভেংচি কাটলো কেন? কিন্তু এত রান্না ও করলো কেন? আজকে কি? কি সমস্যা মেয়েটার? এমন রান্না করে আনতো ও স্পেশাল কোনো দিন হলে। আজকে কি স্পেশাল কিছু? কিন্তু ও কি জানে না এমন করে খাওয়ানোর পর চুমু খাওয়াতে হয় আমাকে! দাঁড়িয়ে ছিলাম ভাবলাম দিবে। দিলও না। আমি না দিতে পারছিলাম না সিচুয়েশনের স্বীকার।মায়াবিনী তো দিতে পারতো?।

-আসতে পারি?

-আরে মায়াবী তুমি?

রুশমির ঘরে চলে এসেছি। কোনো প্রকার ইচ্ছে নেই আমার জামাই এর এক্সের সাথে গল্প করার। আজ ঠেকায় পরে আসা। তবে মেয়েটাকে আপাদমস্তক দেখা শুরু করলাম। ভীষণ ফর্সা। লালচে চুল। সাস্থ মোটামুটি। চেহারা ভালোই। তবে আহামরি খুব সুন্দর না।শরীর ভেঙে পরা। চোখের নিচে কালো দাগ।তাহলে আমার বয়সে আসলেই সুন্দরী না কড়া সুন্দরী ছিল। কিন্তু বয়সের জন্য এমন না। হসপিটালে ছিল। তার মানে সত্যি অনেক অসুস্থ। কথা বলে দেখি বাকিটা জানা যাবে।দেখি উনি মেডিসিন খাচ্ছিল।

-কিসের মেডিসিন খান আপু?

-দূর্বলতার। হসপিটালে ছিলাম কিনা।

-কি হয়েছিল?

-ভিতরে আসো বসো। বলছি।

ভিতরে যেয়ে বসলাম বিছানায়।

-আপু বলেই বলছি আপনাকে। নিবিড়ের বন্ধু আপনি। আপনাকে অনেক উইক লাগছে।

-আমি তোমার থেকে বেশ বড়। তবে নাম ধরেই ডাকছি তোমায় । আমি বাংলাদেশে আসি ২৩/২৪ দিন আগে। এসেই এক্সিডেন্ট হয়। এ কদিন হসপিটালেই ছিলাম।

-কিহ! কীভাবে আপু?

-জানি না হটাৎ সামনে গাড়ি চলে এসেছিল। রাত ছিল বেশ। তাই বোধহয়।

অনেকটাই জেনে ফেলেছি আমি। কিন্তু এখনো অনেকটা আপছা।যতটা সহজ লাগছে বিষয়টা ততটাও সহজ নয়। উনার এক্সিডেন্টের সাথে নিবিড় এর আচরণ কেন পাল্টাবে? কিছু তো আছেই যেটা আমার চোখে পরছে না। জোরে নিশ্বাস ছাড়লাম।

-আপু আপনি এখন ঠিক আছেন তো?

-হ্যা মায়াবী আমি ঠিক আছি। তবে নিবিড় না থাকলে মরেই যেতাম। আজ ও ছিল বলেই আমাকে দেখতে পাচ্ছো।

-বন্ধু হয়ে বন্ধুকে হেল্প করবে না?
(খানিকটা খোঁটা দিয়ে বললাম উনার রিয়াকশন দেখতে। কিন্তু উনি স্বাভাবিক ভাবেই কথা পাল্টে দিল)

-তা তুমি কিসে পড়?

-বিএসসি শেষ হয়েছে। নিবিড় এর অফিসে মেইন ফ্যাশন ডিজাইনার পদে আছি।

-ভালো তো। তোমাকে আমি আরো ছোট ভেবেছিলাম। (হাসি মুখে) তা বিয়ে কি এ্যারেঞ্জ ম্যারেজ নাকি লাভ?

এইটাই শুনতে চেয়েছিলাম।এর জন্যই খাস গল্প করতে এসেছি। উনাকে শুনিয়ে শুনিয়ে আমার আর নিবিড় এর প্রেম লীলা বলবো?। খারাপ ভাববেন না আমায়। কোন মেয়ে নিজের স্বামীর এক্সকে সহ্য করবে? হাহ!

-লাভ ম্যারেজ আপু। পাঁচ বছরের প্রেম।

-ওহ!(মুখটা হাসিও না কষ্ট ও না।বোঝা বড়ই মুশকিল)

-আপনার তো বিয়ে হয়ে গেছে না? বেবি আছে?

খানিক চমকে উঠলো রুশমি।উনার মুখ কেমন যেন হয়ে গেল। মনে হচ্ছে শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে উনার।
-বিয়ে?

-মায়াবিনী কি করছো এখানে? আর ইউ ওকে রুশমি?

(নিবিড় পিছনে এসে দরজায় কখন দাড়িয়েছে জানি না। এইদিকে রুশমির কাছে এসে জিজ্ঞেস ও করলো।দেখি রুশমির শ্বাস নিতেই পারছে না।

-মায়াবিনী ইনহেলার নিয়ে আসো জলদি।

এনে দিলাম বিছানার সাথে লাগোয়া টেবিল থেকে। নিবিড় রুশমির মুখে ধরলো। কিছুক্ষণের মাঝে উনি স্বাভাবিক হয়ে গেল। নিবিড় আমার দিকে তাকিয়ে এক ঝলক, রুশমিকে বলল,
-তুমি কি ঠিক আছো? মেডিসিন খেয়েছিলে?

-ঠিক আছি। হ্যা খেয়েছি।

-আচ্ছা বিশ্রাম করো।

বলে বের হয়ে যাচ্ছিল। আমি রুশমিকে কিছু বলবো ওই সময় নিবিড় বলল,
-মায়াবিনী আমার আসো তো! চা করে দিবে।

বের হয়ে গেলাম রুম থেকে ওর পিছু পিছু।
-মায়াবিনী রুশমিকে বিয়ে বেবি সংসার নিয়ে কিছু বলবে না!(বলেই রুমে চলে গেল)

ভাবনায় পরে গেলাম বিয়ে বাচ্চা শুনে কেন এমন করলো রুশমি? নিবিড় ও আমাকে চায়ের উছিলায় বের করে আনল। ভাবতে হবে খুব ভাবতে হবে। না জানতে হবে!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here