তোমার_প্রেমে_মাতাল,পর্ব_১৯,২০

0
1807

তোমার_প্রেমে_মাতাল,পর্ব_১৯,২০
লেখিকা_মায়াবিনী (ছদ্মনাম)
পর্ব_১৯

-আমাকে কি তুমি সত্যি ভালোবাসো মায়াবিনী?

বেশ কয়েকদিন ফ্যাশন শো এর কাজে আমি আর নিবিড় এতো ব্যস্ত ছিলাম যে ঘুমানোর সময় ও পাইনি। আজকে নিবিড় বেশ কয়েকটি কনট্রাক্ট সাইন করেছে। তাই আজকে রাতে ফ্যামিলি ডিনার হওয়ার কথা ছিল আমাদের। আমি না করে দিয়েছি। কারন কালকে শশী আপু ভাইয়ার হলুদ। আমি ওই বাসায় আজকেই যাবো। একমাত্র ভাই এর বিয়ে আমার। তার চেয়েও বড় কথা নিবিড় এর সাথে কাজ ছাড়া একঘরে থাকা আমার দ্বারা সম্ভব না।দম আঁটকে আসে আমার।

জামা কসমেটিকস আরো প্রয়োজনীয় জিনিস লাগেজে ঢুকাচ্ছিলাম। মাত্রই সবাইকে বলে এলাম আজ রাতে আমি ফ্যামিলি ডিনারে থাকতে পারবো না। ভাবীপু অনেকবার কল করেছে।এখন বাসায় যাবো। নিবিড় খানিক বাদে রুমে আসলো। এসেই এই কথাটাই বলল।

ডোন্ট কেয়ার ভাব দেখিয়ে উত্তর দিলাম না। কেন দিবো? কজের ঠেলায় ঘুমানোর সময় পায় নাই কিন্তু রুশমিকে ঠিকই প্রতিদিন বেশ কিছুক্ষণ করে সময় দিছে।খেয়েছে কিনা, সারাদিন কি কি করেছে সব শুনেছে বসে। এমন ভাব ওর মা আর আমি খাইতেই দিতাম না রুশমিকে নিবিড় না বললে। মা ওই মেয়ের সাথে কথা বলে না। একাই থাকে সারাদিন। ওকে তো নিবিড় সময় দেয়। আর কি বা চাই তার? আমার সাথে সবাই কথা বলে সময় দেয়। শুধু নিজের স্বামী বাদে। আমার আর রুশমির সবটাই বুঝি বিপরীত। ফ্যামিলি ডিনারেও মেয়েটাকে নিবে। থাক ভাই আমার যাওয়া লাগবে না। ভবিষ্যতে যে মেয়ে এ বাড়ির বউ হবে তাকে তো নিচ্ছে। তাতেই চলবে।

নিবিড় হটাৎ আমার ডান বাহু ধরে ওর দিকে ফিরালো হেঁচকা টেনে।
-কি সমস্যা তোমার?

-আমার সমস্যা?

-Answer me damn it.

-তোমার পৈতৃক সম্পত্তি আমি? না তো? তবে এভাবে জোর খাটাতে আসবা না!(বলে নিবিড় এর কাছে থেকে নিজেকে ছুটিয়ে নিলাম)

আরো জোরে চাপ দিয়ে ধরলো আমার বাহু দুই হাতে চেপে।
-আমি তোমার হাসবেন্ড। তুমি আমায় উত্তর দিতে বাধ্য।

-wait a minute. Who the hell are you? Husband? It’s too much funny.(তাচ্ছিল্যের হাসি দিলাম)

হটাৎ নিবিড় শান্ত হয়ে গেল। ওর চোখে এখন রাগ নেই। চোখেজোড়া লাল। তবে রাগের নয়। অভিমানের।
-ভালোবাসো না আমায় তাই না?(একটু থেমে আবার)।আজকে আমার আনন্দের একটা দিন। আনন্দ আসার আগে যে কষ্ট টা করতে হইছে তখন ঠিকই পাশে ছিলে।সাথে ছিলে। কিন্তু সার্থকতা যখন পেলাম তখন তুমি আমার পাশে রইছো না?

নিবিড় আমায় নিজের কাছে ধরে রেখেছে।ওর নিঃশ্বাস আমার মুখে আঁচড়ে পরছে। চুপ করে নিবিড় এর কথা শুনে চলেছি। বাঁধা দিতে মন চাচ্ছে না এখন। কিন্তু আমি চাই নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে ওর কাছে থেকে। চাই না ওর চোখে নিজের সর্বনাশ দেখতে।এভাবে কিছুক্ষণ থেমে নিবিড় আবার বলল,
-আমার প্রতি আর কোনো অনুভূতি নেই তোমার তাইনা?

অনুভূতি? এই শব্দ টাকে আমি ঘৃণা করি। শব্দটি শুনলে ভেতরে মোচড় দিয়ে উঠে। মনে হয় কেউ গলা চেপে ধরেছে। দম নিতে পারি না। নিঃশ্বাস আঁটকে আসে।শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। হৃদয়কে মনে হয় কেউ হাতুড়ি পিটা করছে। যত আবেগ আমার ভর করেছিল ততটাই ঘৃনায় পরিণত হলো সবটুকু।

নিবিড় এর অনুভুতি আবার জেগেছে যা ও মিস করছিল।

একঝটকায় নিবিড়কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলাম।আমার হটাৎ এমন ধাক্কা দেওয়ায় নিবিড় হকচকিয়ে পিছিয়ে গেল খানিকটা। জোরে চিৎকার করে বলতে লাগলাম,
-তোমার জন্য আমার মনে কিছুই নেই। শুনছো তুমি? আর কি যেন বললে? পরিশ্রম অধ্যাবসায়ের সময় পাশে ছিলাম, অর্জন হওয়ার পর নয়? এটাই। যে শূন্য পকেটে কাছে থাকে তাকে সফলতার পর কাছে রাখতে হয়। অবহেলা নয়। সফলতা পেয়ে তাকে ছেড়ে দিলে তুমি সুখে থাকতে পারবে ভাবছো? কখনোই নয়।

একদমে নিবিড়কে বলে লাগেজ নিয়ে বের হতে নিলাম, কি মনে হলো দরজা দিয়ে বের হওয়ার আগে বললাম,
-নিজে ছেড়ে দিচ্ছো নিবিড়। নিজে দূরে ঠেলে দিচ্ছো। দেখো আবার পস্তাতে না হয়!

-মা আমি বের হচ্ছি। তুমি বাবাকে বলে দিও। আর হ্যা কালকে তাড়াতাড়ি চলে এসো তো বাবাকে নিয়ে।

-তা তুই কার সাথে যাচ্ছিস? নিবিড় যাবে না?

-না মা।

-কেন? ওর বান্ধবীর বিয়ে। ও আগে যাবে না? না গেলেও দিয়ে তো আসুক।

-না মা। ও এতো দিন কাজ করেছে। অনেক প্রেসারে ছিল। ওকে আরাম করতে দাও। আমি যাই।

-নিবিড় এসেছে দেখছি।(মা আমার পিছনে ইশারা করে বলল।)

নিবিড় আমার পিছন এসে দাঁড়িয়েছে। নীরব বাইরে থেকে বাসায় ঢুকছে। যেন আমি এমনটাই চাচ্ছিলাম। নিবিড় কিছু বলার আগে তাড়াতাড়ি বললাম,

-মা আমাকে নীরব দিয়ে আসবে।

-(মা পিছনে ঘুরে বলল) তাহলে নীরব মায়াবীকে দিয়ে আয় তো।

-এখনই যাবে মায়া?

-আমার বউকে ভাবী ডাকা শিখ! (কাঠখোট্টা গলায় নিবিড় নীরবকে বলল)

-কেন? আমার বন্ধু আগে। পরে তোর বউ। আমি নাম ধরেই ডাকবো।

-নীরব এসব কি কথা? তোকে অনেকদিন ধরে বলছি ভাই এর বউকে ভাবী ডাকতে হয়। ডাকিস তো নাই। এখন আবার ভাই এর সাথে এভাবে কথা বলছিস?

-কেন মা বলবো না? ভাইয়ার সব বন্ধুরা ভাবী ডাকে মায়াকে? ওর প্রিয় বান্ধবী মায়াকে নাম ধরে ডাকে যেখানে আগে কখনো দেখেই নাই। বন্ধুর বউকে নাম ধরে ডাকে তখন তো ভাইয়া কিছু বলে নাই। আর মায়া তো আমার কলেজ থেকে বন্ধু। ওকে আমি নাম ধরেই ডেকেছি ৭ বছর ধরে। একদিনে ডাক পরিবর্তন সম্ভব নয়। যার ভাবী ডাকা উচিত তাকে গিয়ে ভাইয়াকে ধমকাতে বলো। আমাকে না।

মা আর কোনো কথা বাড়াতে পারলেন না। কি করে বলবে? নিজের ছেলের এমন হটাৎ পরিবর্তন তার চোখেও তো ধরা পরেছে। যেখানে আমার ভাবী হয় শশী আপু, আমি তার ননদ। তাও বন্ধুর বউ বলে আমাকে ভাবীই ডাকে। সেখানে রুশমি আমায় কি করে নাম ধরে ডাকতে পারে? তাও নিবিড় সেখানে কিছুই বলে না।

বাসা থেকে বেরিয়ে পরলাম নীরবের সাথে।
আপসস লাগছে নিবিড় এর মুখ টা কেন ফিরে তাকিয়ে দেখলাম না নীরবের কথা শুনে কি এক্সপ্রেশন দিলো। কথা বলার মুখ নেই ওর আমি জানি। তাকিয়ে দেখতাম। কিন্তু গেস্ট রুমের দরজার বাহিরে রুশমিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নিবিড় এর দিকে তাকানোর আর রুচি হলো না।

মায়াবিনী কি করে পারলে তুমি এমন করতে? এতদিন বন্ধ দরজার পিছনে ঘরে অবহেলা পেয়েছি তোমার। আজ মার সামনে আমার ছোট ভাই দ্বারা অপমান করলে? তোমাকে আমি ভালোবাসি। কিন্তু তুমি? আমি জানতাম এমন কিছু হবে। জোর করে ঠকিয়ে কিছু পাওয়া যায় না। আমি দুইটাই একসাথে করেছি। কি করে পাবো আমি? পেয়েও হারিয়ে ফেলছি। একটু একটু করে হারিয়ে যাচ্ছে আমার মায়াবিনী। কি করে চোখের সামনে আমি সবটা সহ্য করছি তা কেবল আমি জানি।

বাসায় আসার পর ভীষণ ব্যস্ত হয়ে গেলাম কাজে। ভাইয়ার বিয়ে বলে কথা। ওইদিন টা কাজ শপিং এসবেই কেটে গেছে।

– হ্যা রে ভাবী তোর জামাই কখন আসবে?

-জানি না। আরে নইরো না।সাজাতে সমস্যা হচ্ছে মেয়েদের।

-তোর জামাই আমার এক কালের ক্রাশ ছিল।

-আমার ভাই কি আছিলো তাইলে??

-এ্যাঁ??

-যাই ভাইয়াকে বলে আসি?।

-কি মেয়ে বাবা। ওর জামাই আমার ক্রাশ বললাম হিংসা করা বাদ দিয়ে ভাইয়ের কাছে চুগলি করতে যাচ্ছে?।

-ভাইয়া!!(চিৎকার করে ডাকতে নিলাম)

-এই এই আমার বিয়ে টা ভাঙ্গিস না ভাবী?।

হেসেই ফেটে পরলাম শশী আপুর কথা আর রিয়েক্ট করা দেখে।

-ভাবী সবসময় এমন হাসি খুশি থাকিস। তোর মায়াবী মুখে হাসি বড্ড মানানসই।

-(মলিন হাসি দিয়ে) তাড়াতাড়ি রেডি করাতে দাও।এত দেরি করলে অন্য ভাবী খুঁজবো কিন্তু ?।

-আচ্ছা বাপ। নিবিড়কে ফোন দিয়ে দেখ কতোদুর এলো।

-আচ্ছা করছি।

– আর শোন রুশমিকে আনতে বলিস।

ফোন করতে নিয়েও শশী আপুর দিকে তাকালাম। কিছু না বলে রুমের বাহিরে চলে আসছিলাম।

-আমি তো ওর বান্ধবী। শিমুলরা সবাই আসছে। নীলাও আসবে। ওইখানে মানিয়ে নিয়েছিস। রুশমিরটাও ম্যানেজ করে নে ভাবী। মেয়েটা বড্ড অসহায়। পরশুদিন আমি রুশমিকে এ বাসায় নিয়ে এসে পরব। তোর যা ছিল তোরই থাকবে। আর দুটোদিন সহ্য কর।

-ভাবীপু আমার যা আমারই থাকবে। কিন্তু আমার যা না তো আমি জোর করে রাখতে পারবো না। আমি ফোনে বলে দিচ্ছি। (বলে বের হলাম)

আজকে ভাইয়া শশী আপুর গায়ে হলুদ। আমাদের বাসার ছাদেই একসাথে অনুষ্ঠান। মাকে ফোন দিয়ে বলে দিয়েছি রুশমিকে আনতে।

ছাদে গিয়ে তদারকি করছি। দাদাবাড়ি কাজিনদের ধমকাচ্ছি।আমার ভাই এর হলুদ বলে কথা।সব ঠিক আছে কিনা চেক করছি। ভাইয়া এসে বলল,

-বনু নিবিড় কখন আসবে রে?

-ভাইয়া তোর বিয়ে। তোর বউ আজকে আসবে কিনা এইটা ভাব।

-আমার বউ এর কি হইছে? সাজা শেষ হয় নাই শশীর?

-এখনো সাজতাচ্ছে। পার্লার থেকে যে মেয়ে গুলো আসছে ওদের উপর ঝড় চলতাছে। পছন্দ করার আর মেয়ে পেলি না?

-তোর অনেক পছন্দের আপু তাই আমারও পছন্দ হইছিল?।

-এ্যাঁ? (বোকা বনে গেলাম ভাইয়ার কথা শুনে)

শশী আপুকে স্টেজে আনতে হবে। তার আগে আশপাশ টা ঠিক করে দেখে নিচে যাবো হটাৎ ছাদের একপাশে এক টুকরা কাপড় পরে আছে দেখলাম। এগিয়ে তুলে নিলাম। ছাদ থেকে নিচের দিকে তাকাতেই পুরোনো স্মৃতি ভেসে উঠলো। হ্যা এ জায়গাতেই আমি দাঁড়াতাম একটা পাগল ছেলেকে দেখতে। যে রোজ সন্ধ্যায় আমার জন্য এ রাস্তায় দাড়িয়ে থাকতো আমার ছাদের দিকে মুখ করে। যাওয়ার আগে আমায় কোনোদিন বিদায় দিয়ে যেতো না। বাইকে চড়ে কিছু ইশারা না দিয়ে চলে যেতো। জিজ্ঞেস করেছিলাম আমি,

“কেন বিদায় দিয়ে যাও না যাওয়ার বেলায়?
নিবিড় বলেছিল, শেষ যাওয়া তো না। ফিরে তোমার কাছেই আসতে হবে। তবে কেন বিদায় দিবো?”

সেই পাগল ছেলে কি আমায় ছেড়ে সত্যি চলে গেল? কই বিদায় তো দেয়নি। ভাবতেই চোখে পানি চলে এসে গাল বেয়ে নামল। ঠিক সে সময় আমার কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পেলাম।কান্না লুকাতে আমি ব্যস্ত তখন। কে এসেছে?

চলবে

#তোমার_প্রেমে_মাতাল
#লেখিকা_মায়াবিনী (ছদ্মনাম)
#পর্ব_২০

ছাদের সবটা জুড়ে সাজানো হয়েছে। রাত হয়ে আসায় চারপাশ অন্ধকার হওয়ার সত্বেও এত বাতির জ্বলকানিতে সব জায়গা রঙিন। কিন্তু তবুও কি যেন কমতি।উঁহু কি যেন না কার যেন কমতি। আমার চোখেই কেবল মনে হচ্ছে। আমি জানি আমার চোখ তৃষ্ণার্ত। তৃষ্ণা মেটাতে হবে। গোটা ৩১ ঘন্টা ২৬ মিনিট ধরে আমার চোখ তৃষ্ণার্ত। পিপাসা না মেটালে এই কমতি ভরবে না। তাই সময় নষ্ট না করে খুজতে লাগলাম।হটাৎ চোখ থমকে গেল ছাদের বা পাশটার কাছে। চুল খোলা একটা মেয়ে পিছন করে রাস্তা মুখি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। উপরের পরিহিত জামা দেখা যাচ্ছে না চুলের জন্য। তবে বাকা কোমড় থেকে নিচ পর্যন্ত সবুজে মুড়ানো লেহেঙ্গার নিচের পার্টটা দেখা যাচ্ছে। এই নারীকে আমি চিনি। এ নারী আমার। এ নারীর শরীরের পোরোতে পোরোতে আমার স্পর্শ রয়েছে। আমি মিশে আছি ওর সবটায়।সামনে থেকে কেমন লাগছে দেখতে? তড় সইলো না আর আমার। যেয়ে ওর কাছে দাঁড়ালাম। কাঁধে হাত রাখলাম।

মাথা ঝিমঝিম করছে। তাকাতে কষ্ট হচ্ছে তাও তাকানোর চেষ্টা করছি। তাকিয়ে নিজেকে আবিষ্কার করলাম বিছানাতে। হ্যা নিজের রুমের বিছানাতে। আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম আমার পাশে মা বসে আছে। নিবিড় আমার ডান পাশের দেয়ালটায় পিঠ ঠেকিয়ে দাড়িয়ে আছে। আমার চোখ খোলা দেখেই এগিয়ে আসতে নিলো অমনি শশী আপু রুমে ঢুকে নিবিড়কে সরিয়ে আমার কাছে এসে দাঁড়ালো।

-আন্টি ভাবীর জন্য স্যুপ এনেছি। খাইয়ে দিবো?

-না আমার কাছে দাও। আমি দিচ্ছি।

-নিন আন্টি।

-দেওয়া হইছে? সর সামনে থেকে। (নিবিড় শশী আপুকে কড়া গলায় বলল)

-হ্যা হ্যা যাচ্ছি। তোর বউ তুই রোজই দেখার চান্স পাস।

-তুই যাবি?(রাগিভাবে তাকিয়ে)

-তোরা থাম। মেয়েটা অসুস্থ। মায়াবীকে উঠতে হেল্প কর।

শশী আপু ভেংচি কেটে চলে গেল।

-মায়াবিনী! (আমার কাছে এসে দাঁড়িয়ে আমার মাথায় হাত দিয়ে) ঠিক আছো?

-ঠিক থাকলে মাথা ঘুরিয়ে পরে যেত না।
নীরব বলতে বলতে ঢুকলো রুমে।

-মানে?(নিবিড় আমার মাথা থেকে হাত সরিয়ে দরজার দিকে তাকালো)

-তোর যদি এত দুশ্চিন্তা থাকতো তবে মায়ার প্রতি তোর কেয়ারিং ও থাকতো। মেয়েটা আজ অসুস্থ ও হতো না।

-আমার ওয়াইফ ও। আমার চেয়ে বেশি কেয়ার এটলিস্ট তোর থাকবে না?

-তোর মায়াকে নিয়ে এত ভাবনার সময় থাকলে এতক্ষণে উঠিয়ে খাইয়ে দিতি। দাঁড়িয়ে ন্যাকামি করতি না কেমন আছো ঠিক আছো বলে। (বলে আমার কাছে এসে ধরে বসিয়ে দিল)

এত জলদি কাজটা করলো নীরব, না আমি কিছু বলতে পারলাম না মা। নিবিড় হতভম্ব হয়ে গেল। যেন ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। কিন্তু এইটা খানিক সময়ের জন্য। চোয়াল হটাৎ শক্ত হয়ে গেল ওর। নীরবের দিকে তেড়ে এলো। জানি আমি এখন সিচুয়েশন অত্যাধিক খারাপ। কনট্রোলের বাহিরে চলে যাচ্ছে। কিন্তু আমি এটাও জানি নিবিড় আমার সামনে কখনোই রাগ দেখায় না।কিন্তু আমি এটাও জানি এ আর আগের নিবিড় নেই। নিবিড় এগিয়ে যাচ্ছে নীরবের দিকে। মা কিছু বলবে ওই সময় আমার বাবা ভিতরে ঢুকলেন।

ছাদে দাঁড়িয়ে পুরোনো স্মৃতি ভাবতেই পিছনে এসে হাত আমার কাঁধে রাখে নিবিড়,
-কি ভাবছো?

-(চোখ চটজলদি মুছে) সেটা তোমার জানার কোনো দরকার নেই।

(বলে ওর দিকে তাকালাম পিছন ঘুরে। একদৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো।)

উপরের টপসটা গোল্ডেন রং এর। মায়াবিনীর ওড়নাটাও। পেটটা একটুও দেখা যাচ্ছে না তাও এত মোহনীয় কেন লাগছে মেয়েটাকে?
-তবে কাঁদছিলে কেন?

-আমি কাঁদলে তোমার কিছু কি যায় আসে? নাতো?

-তবে কি তোমার একমাত্র বন্ধুর যায় আসবে?(একটু মলিন হেসে)

তাকিয়ে রইলাম নিবিড় এর দিকে। কি বলল? যাই বলুক ওর সাথে কথা বাড়ানো ইচ্ছে আপাতত আমার নেই।মরতে মরতে বেঁচেছি এইটাতে একটা মানুষেরই যায় এসেছে। তাই বললাম,
-হয়তোবা!

আর কিছু বলতে পারছিলাম কেউ। আমার কাজিনরা নিবিড়কে সাথে করে নিয়ে গেল দুলাভাই আসছে দুলাভাই আসছে বলে। এতো আমাদের বোনের সাথে কি? সারাদিন চোখে হারাও নাকি? এই সেই বলে ওরা নিবিড় এর সাথে মজা করতে করতে নিয়ে গেল। নিবিড় এমন একটা পরিস্থিতিতে পরে গেল, তবে বিরক্তি হলো না। হাসি মুখে ওদের সাথে তাল মিলাতে লাগলো।

আমি যেয়ে বাবা মার সাথে দেখা করলাম। মাকে আমি গোল্ডেন পাড়ের সবুজ শাড়ি দিয়েছিলাম। মা সেই শাড়ীটা পরে আসছে। আর বাবা আমার দেওয়া সাদার মাঝে সবুজ সুতার কাচ করা পাঞ্জাবি টা পরেছেন।

-বাবা মা তোমাদের খুব সুন্দর লাগছে। (ভীষণ খুশি হয়ে)

– আমাদের মেয়ের দেওয়া উপহার পরেছি তাই। (বাবা আমার মাথায় হাত দিয়ে বলল)

-আমি তোমাদের মেয়ে? ( অবাক হয়ে)

-আমার মেয়ে তুই আমি সিউর। তবে তোর শাশুড়ীর কাছে কিনা তা জানি না।

-মায়াবী আমার মেয়ে। আমি এ বাসায় এসে ওর বাবার কাছে চেয়ে নিয়ে গেছি। তুমি চেয়েছিলে?

শুরু হয়ে গেল বাবা মার খুনসুটি।

-মা বাবা তোমাদের পেয়ে আমি ধন্য। আমায় এভাবে ভালোবাসবে তো আজীবন?

মা আমাকে টেনে বুকে নিয়ে বলল
-তুই আমাদের কাছে এমনই থাকবি। ভালোবাসা তুই আদায় করতে জানিস। তুই ছাড়া আজকের সারাদিনটা আমার খুব একা কেটেছে। আজকেই শেষ রাত এ বাসায় তোর। কালকেই তোকে সাথে করে নিয়ে যাবো।

-(বাবা আমার মাথায় হাত দিয়ে বলল) তোকে ছাড়া আমাদের বাড়িটা বড় ফাঁকা ফাঁকা রে। তোকে ছাড়া নীরবতার আড়ালে বাড়িটা হাসতে ভুলে গেছে একদিনেই। তুই তাড়াতাড়ি চলে আয়। আমি তো তোর শাশুড়ীকে বললাম আজকেই তোকে নিয়ে যাবো। তোর মা বলল এ বাসাও তোরই। এখানেই জীবনের ২৩টি বছর পার করেছিস। তাই একটা দিন বেশি থাকতে দিচ্ছি। কাল কিন্তু যেতেই হবে।

আমার চোখের আনন্দের অশ্রু। মা নেই এমন মেয়ের কপালে এত সুখ ছিল? নিবিড়কে মনে মনে অনেক ধন্যবাদ দিলাম। ও আমাকে এত সুখ দিয়েছে। আমায় এখন ছেড়ে দিলেও আমি ওর ঋণ শোধ করতে পারব না আজীবন। আমি আমার মাকে পেয়েছি শাশুড়ীর মাঝে। বাবার থেকেও দূরে থেকে বাবা সমতূল্য শ্বশুরকে পেয়েছি। আমার এখন আর কিছু চাইতে ইচ্ছে করছে না নিবিড় এর কাছে। ও আমার স্বর্গ সুখ অলরেডি দিয়ে ফেলেছে। নিবিড় এর দিকে তাকালাম। আমার ছোট বড় কয়েকটি চাচাতো ফুপাতো ভাইবোনদের সাথে গল্পে মেতে আছে। আড় চোখে আমাকে বাবামার সাথে জড়িয়ে ধরে আবেগঘন মুহুর্তটি দেখছে। ওর চোখে জ্বলন নয়। তৃপ্তির হাসি।

শশী আপুকে ভাইয়াকে স্টেজে বসালাম।অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেল। সবাই হলুদ লাগিয়ে দিচ্ছে একে একে। সবাই সবুজ গোল্ডেনের কম্বিনেশনের ড্রেস পরেছে।ছেলেরা পরেছে সবুজ পাঞ্জাবির মধ্যে গোল্ডেন সুতার গলায় হালকা ডিজাইন। আর মেয়েরা সবুজ লেহেঙ্গার গেরুয়া আর গোল্ডেন রং এর উপরের টপস।ওড়নাটাও সবার সবুজ আমারটা বাদে। পাঞ্জাবি লেহেঙ্গা আমি ডিজাইন করে বানিয়ে দিয়েছি।আমার বাবা, নিবিড় এর বাবা আর শশীর আপুর বাবাকে একই পাঞ্জাবি।

সব কাজিনরা মিলে প্ল্যান করেছি এক সাথে নাচানাচি গান হবে। আমি বিবাহিত, তার উপর শ্বশুরবাড়ির সবাই আছে বলে কথা। আমার কি নাচা যাবে কিনা বোনরা এ নিয়ে খুব চিন্তিত। বললাম,
-আমার টেনশন নেই তোদের এতো ভাবনা কিসের? ইডিয়ট। যার বিয়ে তার খবর নেই, পাড়াপড়শির ঘুম নেই। যতসব আদিক্ষেতা।

-মায়াবী আপি তুই সবসময় এমন খিটখিটে মেজাজে থাকিস।

-কি বললি তুই?

-এই তোরা দেখছিস দুলাভাই ঠিকই বলছিল তুই বরাবরই একরোখা।

-দুলাভাই? মানে নিবিড় বলেছে? (রাগ উঠে গেল আমার)

-আমার নাম নিচ্ছিল কেউ মনে হচ্ছে।(নিবিড় ভাইবোনদের গোল মিটিং এর কাছে এসে বলে বসলো)

-হ্যা দুলাভাই তোমার কথাই আমরা nagariya
স্পেশালি তোমার বউ।আসো আসো।(বলে সব কয়টা বেহায়া বোন আমার জামাইকে হাত ধরে টেনে মিটিং এর মাঝে আনলো)

রাগে আরো শরীর জ্বলে উঠলো।
-অসভ্য??।

সবাই অবাক। হা হয়ে আছে সবকয়টি। বুঝলাম না কি এমন বললাম।তাই আবার বললাম
-বলদের মতো আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছিস কেন তোরা? আজকে প্রথম আমাকে দেখলি? অসহ্য। (বলে বিরক্তি প্রকাশ করলাম)

এদের হা বন্ধ না হয়ে আরো বেশি হয়ে গেল। অমনি একটা ফুপাতো ভাই বলল
-দুলাভাই তুমি ঠিকই বলেছিলে।

-কি বলছিলাম না? আমার বউটা এমনই। অসহ্য, অসভ্য, বিরক্তিকর, নিলজ্জ বেহায়া বলদ এসবই বলে আমাকে। তোমাদের ও বলল। কমন কথা আমার বউয়ের। আসলে ওর ডায়ালগ এসব।(বলেই ভাব নিলো)

এতক্ষণে বুঝলাম কাহিনি। আরো বিরক্ত হয়ে গেলাম। একটা ফুপাতো বোন বলল
-দুলাভাই খালি হ্যান্ডসাম আর ডেশিং না অনেক ইন্টেলিজেন্ট ও?।

-অনেক চার্মিং বয় ও।

এরা আমার সামনে দাড়িয়ে আমার জামাইকে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে। খাবেও বা না কেন? সবুজ পাঞ্জাবি আর সাদা প্যান্টটায় ছেলেটাকে আমারই খেয়ে ফেলতে মন চায়। মনে মনে ভালো লাগছে সে ভালো কথা, সাথে প্রশংসাও করতে হবে? আর সহ্য হলো না আমার। আমার জামাইকে এদের সামনে থেকে সরাতে হবে। নয় তো মুখ পাতলা গুলো আরো কি কি যেন বলে বসবে।আমার নিলজ্জ জামাই দাঁত কেলিয়ে হাসছে। যেন ওদের কথায় খুব এনজয় করছে। বুঝলাম এই অসভ্য লোকটাকেও শিক্ষা দিতে হবে। এক ধিলে দুই পাখি মারতে হবে।কিন্তু বুদ্ধি পাচ্ছিলাম না। হটাৎ আইডিয়া চলে এলো।

-এহেম এহেম। আমার হাসবেন্ড ওরফে তোদের দুলাভাই অনেক সুন্দর গান পারে। তোরা এতো সুন্দর নাচছিস। খুশি হয়ে তোদের গান উপহার দিবে। নাচতোও তোদের সাথে। কিন্তু আনফরচুনেটলি পারে না। তবে গান গাইবে। তাই না নিবিড়? (বলে দাঁত বের করে ভ্রু উঁচিয়ে বললাম)

নিবিড় রাগি রাগি লুক দিচ্ছে। কিন্তু কিছু বলতে পারছে না। তাতে আমার কি? আমাকে আর কিছু করতে হবে না। আমার খচ্চর ভাইবোনগুলো ওকে স্টেজে পাঠিয়ে দিবে ঠেলে। সো আমার আর কোনো মাথা ব্যথা নেই। ভাব নিয়ে চলে এলাম।

যেয়ে এক কর্ণারে দাঁড়াতে নীরব এসে বলল
-মায়াকে তো ভালোই দেখা যাচ্ছে।

-কিহ? খালি ভালো?

-মানে লেহেঙ্গাটায় মানিয়েছে। ডিজাইন খুব সুন্দর হয়েছে।

-তোমার পাঞ্জাবিটাও?।

-হ্যা নিজের করা যে?।

হেসে দিলাম। হটাৎ মিউজিক সিস্টেম বন্ধ হয়ে গিটারের টুংটাং শব্দ হতে লাগলো। সবার নজর শব্দের উৎসের দিকে।

হা হাসি বান গায়ে
হা নামি বান গায়ে
…..তুম মেরে আছমা
মেরি জামি বান গায়ে…..
হা হাসি বান গায়ে
হা নামি বান গায়ে
তুম মেরি আছমা
মেরি জামি বান গায়ে….ও ও..আআ..
হা হাম বাদালনে লাগে
……মিলনে সামালনে লাগে
. যাবছে হে যানা তুমহে
তেরি ওর চালনে লাগে (২)
… হার সাফার হার জাগা
হার কোই বান গায়ে
. মান যো দেখে খুদা
ওর হা ওহি বান গায়ে……….
হা হাসি বান গায়ে
হা নামি বান গিয়ে.
. তুম মেরি আছমা
মেরি জামি বান গায়ে…..
(হামারি আধুরি কাহানি–হাসি বান গায়ে সং)

নিবিড় কি আমার জন্য গাইলো? তাকিয়ে দেখি দূরে রুশমি সবুজ একটা থ্রি পিছ পরে দাঁড়িয়ে আছে। জামাটা আমারই বটে। কিন্তু আমি ওকে এটা দিয়ে ছিলাম না। আমার আর নিবিড়ের আলমারিতে ছিল। আমি কখনোই সবুজ পরি না। জামাটা অনেক শখ করে শশীআপু বানিয়ে দিয়েছে ভাইয়ার পছন্দের রং বলে।পরেছিলাম ও না।ভেবেছিলাম ভাইয়ার কাছে যেদিন আসবো পরে আসবো। কিন্তু বিয়ের পর ওমন করে সুযোগ পাওয়া হয়নি। ভাইয়ার প্রিয় বলে আজ হলুদে সবুজ পরার প্ল্যান করেছি। আজকে সবাই হলুদে সবুজ পরবে বলে নিবিড়ই রুশমিকে এ জামা দিয়েছে। কারন আলমারি নিবিড় ছাড়া কেউ ধরবে না।

-মায়া তুমি পারফরম্যান্স করবে না?

নিচের দিকে তাকিয়ে ছিলাম চোখ ঘোলা হয়ে আসছিল বলে।নীরবের কথা শুনে মনে হলো আমার ভাইয়ের বিয়ে। অন্যের দেওয়া কষ্টে আমার খারাপ লাগবে কেন?

-হ্যা করবো। আসো তুমিও।

-আমি?

-হ্যা রে বাবা। চলো। (বলে হাত টেনে নিয়ে গেলাম নীরবকে)

Panghat pe aake saiyyan marode baiyaan
And everybody blames it on Radha
Chhedde hai humka daiyaan, bairi Kanhaiya
And everybody blames it on Radha

Hoga woh lakhon dil ka chor
Humka toh laage woh
Hua hai aise baawla jo kehta jaaye:

“O Radha teri Chunri
O Radha tera Challa
O Radha teri natkhat najariya
O Radha tera Jhumka
O Radha tera Thumka
O peechhe peechhe saari nagariya” (x2)

Radha on the dance floor
Radha likes to party
Radha likes to move that sexy Radha body (x2)

আমি আর নীরব কাপল ডান্স করছিলাম। কিন্তু কেউ কাউকে ছুয়ে নয়। কিন্তু নীরব ভালোই আমার সাথে তাল মেলাচ্ছে। বার বার নিবিড় এর দিকে তাকাচ্ছিলাম। রাগে জ্বলছিল। তাতে আমার কি? হাহ!

হটাৎ নিবিড় এসে আমার হাত ধরে টেনে নিজের কাছে নিয়ে নিলো।

Hey Radha Radha kaahe itna guroor bhala
Chhodo bhi nakhre ye kaisi adaa
Tune kya socha ek tu hi mash’hoor yahaan
Laakhon hain Gopiyan bhi humpe fida
Ho saari hi duniya ye maani hai
Shuru humse teri kahaani hai

O rehne de re Kaanha
Bhoolega tu sataana
Jo girungi main banke Bijuria

O Radha teri Chunri
O Radha tera Challa
O Radha teri natkhat najariya
O Radha tera Jhumka
O Radha tera Thumka
O peechhe peechhe saari nagariya
(Student of the year- Radha song)

আমি আর নিবিড় নাচের ভেতর দিয়ে দুজনের কাছে দুইজন চলে এসেছি বিয়ের পর এই প্রথম। ওর কাধে থেকে বুকে আমার দুহাত নেমে এলো। নিবিড় আমার কোমড় জড়িয়ে ধরে রেখেছে। না আছে গুরুজনদের খেয়াল না আছে নিবিড় এর উপর জমে থাকা অভিমান।হারিয়ে যাচ্ছি নিবিড় এর চোখে। আজ আমি পুরো মাস খানেক পর নিবিড় এর চোখে আমার জন্য নেশা দেখছি। আমার পুরোনো মাতাল ছেলে। ওর চোখ আমাকে বলছে, “আমি তোমার প্রেমে মাতাল”

চোখে ডুব দেওয়া অবস্থায় মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠলো। আমার দৃষ্টি গভীর নিবিড় এর বড় কর্নিয়ার গহীনে যেয়ে অতল ছুইছিলো। কিন্তু তাল সামলিয়ে উঠতে পারলাম না আর।এতো গভীরতা বুঝি আর সহ্য হলো না। পরে গেলাম ঢুলে নিবিড় এর বুকে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here