তোমার_প্রেমে_মাতাল,পর্ব_২৬
লেখিকা_মায়াবিনী (ছদ্মনাম)
হাওয়া কি সবসময়ই মিষ্টি থাকে? নাকি প্রিয় মানুষের ছোঁয়ায় হাওয়া মিষ্টি লাগে। যতবার আমায় ও ছুঁয়ে দিচ্ছে ততবার হাওয়া দলা পাকিয়ে শরীরে এসে লেপ্টে যাচ্ছে আমাদের গায়ে। আমাদের নবজীবনের সূচনা ঘটেছে গোটা একটাদিন।সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত আটটা ছুঁই ছুঁই। নিবিড় এর বাহুবন্ধনে শ্বাস নিতে বড্ড কষ্ট হচ্ছে। জোরে চেপে ধরায় নয় নিবিড় এর স্পর্শে নিজেকে আজ মাতাল লাগায়। নিবিড় এর বুকে আমার পিঠ থেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছি তবুও মনে হচ্ছে নিজেকে কাবু করে রাখতে পারছি না। নিবিড় এর দুই হাত আমায় পুরাটা মুড়িয়ে রেখেছে, পরব না কোনোভাবেই। তবুও বলছি ও হাতের বাঁধন হালকা করে দিলে আমি পরে যাবো। নিবিড় এক হাত পেট থেকে সরিয়ে আমার ডান পাশের চুল গুলো ঘাড় থেকে সরিয়ে দিল। ওর সে হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে আমার কানের নিচে খালি ঘাড়টায় ছোঁয়ালো। এখন সেই হৃৎস্পন্দন ধুপ করে থেমে গেল। নিশ্বাস আঁটকে এলো। যেন অনুভুতি শূন্য হয়ে গেলাম। হটাৎ কি হলো হৃৎস্পন্দন স্বাভাবিক অবস্থা থেকে ৫/৬গুন স্পিডে স্পন্দিত হতে লাগলো। হবেই বা না কেন? নিবিড় এর ঠোঁট যে ছুঁয়ে আছে আমার ঘাড়টায়। নিবিড় এর যে হাত আমার কোমড় পেঁচিয়ে ছিল ওর ওই হাত চেপে ধরলাম দুইহাত দিয়ে। ধরা তো নয়।শরীরের যত শক্তি ছিল তা দিয়ে খামচে ধরে আছি। আমার হাতের বাঁধন যত শক্ত হচ্ছে নিবিড় এর চুম্বন ততই গাঢ় হচ্ছে। কতটা সময় পর হাওয়াটা হালকা হলো জানি না। তবে ভারী হয়ে গায়ে লাগছে না এখন। তাকিয়ে দেখলাম সামনের খোলা জানালা দিয়ে এখনো বাতাস বয়ে চলেছে। হাওয়ার বেগ কমেছে তবে কেন? কারন নিবিড় আমায় ওর থেকে খানিকটা হালকা ছেড়েছে। তাই তো বলছি নিশ্বাস কি করে নিতে পারছি! নিবিড় আমায় ওর দিকে ঘোরালো। মুখ নিচু করে রেখেছি। ও আবার আমার কানের নিচের দিকে হাতের তর্জনী দিয়ে ছুঁইলো। আমি ফের কেঁপে উঠলাম। নিবিড় ফিসফিসে গলায় বলল,
-দেখেছো কেমন দাগ হয়েছে?
চোখ কপালে উঠে গেল। চটজলদি নিবিড় এর কাছে থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে হোটেলের রুমের দেয়ালে টানানো বড় আয়নাটার সামনে দাঁড়ালাম। বাম ঘাড়ের কাছটায় অনেকখানি লালচে-নীলচে রং এর মিশ্রিত বেগুনি রং ধারণ করেছে। নিবিড় দ্বারা না-হয় ঘাড়ে দাগটা হলো। কিন্তু গাল দুটো লালাভায় ভরে গেছে কেন? কি লজ্জা কি লজ্জা। নিবিড় এখন পেছনে এসে দাঁড়ালো। পেছন থেকে ফুঁ দিলো। অনেক গুলো চুল আমার মুখে এসে পরলো।
-ইসশ! (বলে চুলগুলো কানে গুঁজলাম)
-মায়াবিনী তোমায় কেমন মোহনীয় দেখাচ্ছে।
নেশা ভরা চোখে চেয়ে আছে আমার দিকে। বিরক্ত হয়ে চুল গুলো সরিয়ে নিবিড়কে এভাবে দেখলাম। বিরক্তের ছাপটা মুখ থেকে সরে গেল আমার।
-মোহনীয় কি?
-শাব্দিক অর্থ না বলে তোমায় এমনি বুঝিয়ে দিচ্ছি। যখন তোমায় মোহনীয় দেখায় তখন তোমায় খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে।
বড় বড় করে তাকালাম। কি বলে ছেলে? বাচ্চার বাবা হয়ে যাচ্ছে সে। তাও এসব? লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে ফেলেছে। তখন নিবিড় এর দিকে তাকিয়ে একটা কড়া লুক দিলাম।
-Darling come here. I just wanna…..
-চুপ! কি বলো না বলো। বেহায়া (বলেই লজ্জায় মুখ ঢেকে ফেললাম)
হটাৎ নিজেকে সামলিয়ে নিবিড় এর দিকে তাকালাম। ওকে বেখেয়ালি হয়ে জানালার সামনে দাড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখলাম। এত তাড়াতাড়ি ওখানে গেল কখন। আবার এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখলাম। বুঝতে পারছি না কিছুই। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে নিবিড় এর দিকে তাকিয়ে রয়েছি। নিবিড় ওই বেখেয়াল হয়েই কিছু বলল। যাহ শুনে আমার পৃথিবী ভেঙে হটাৎ থমকে গেল। কি বলল নিবিড়। এ কি বলল ও। সময় বুঝি এখন প্রতিকূলে বয়ে চলেছে।
—————–
নিবিড়ের আঙ্গুলে ঠোঁট ছোঁয়া মাত্র নিবিড় ইসশ করে আঙুল ছাড়িয়ে নিলো। নিজেও আঙুলে ঠোঁট ছোঁয়ালো। আমাকে বলল,
-This is called indirect lip kiss?.
-এ্যাঁ? এমন কিস আছে বাপের জন্মে শুনিনি বাপু?।
-সব পুরোনো কথা।
পুরোনো স্মৃতি আওড়াচ্ছিলাম। নিবিড় মুখের উপর তুড়ি বাজিয়ে জাগিয়ে দিলো।
-বউ এত কিছু ভেবো না তো। চলো অফিস। সাতদিনের জন্য যাবো দুইজন একসাথে। সবাইকে চলো কাজ গুলো বুঝিয়ে দিয়ে আসি।
-এ্যাঁ? সাতদিন?
-হ্যা। কেন আরো বেশিদিন থাকতো চাও স্বামীর প্রেমে ডুবে? (বলে ভাব নিলো)
-ডুবে? এত প্রেম যে হাবুডুবু খেয়ে ডুবে যাই।(বিরক্তে মুখ ঘুরিয়ে নিলাম)
-ডুবিয়ে দিবো তোমায় বউ। আমার প্রেমে আমি রোজই ডুবাতে পারবো। তার জন্য হানিমুনে যেতে হবে না।?
এই ছেলে কখনোই ঠিক হবে না। তবে না হলেই ভালো। এই পাগল ছেলেটার পাগলামি আমি বড্ড মিস করছিলাম। আমি ফিরে পেয়েছি। পেয়ে গেছি আমার পুরোনো নিবিড়কে। কিন্তু আর যত টুকু ফাঁকা রয়ে গেছে ওইটাও পূর্ণ হয়ে যাবে খুব শীগ্রই।
ড্রয়িং রুমে যেয়ে দেখলাম শশী আপু উৎস চলে যাচ্ছে। রুশমি নাকি গোছাচ্ছে। তাই তার রুমে গেলাম আমি।
-আসতে পারি আপু?
-হ্যা আসো। হটাৎ এখানে?
-আপনার সাথে কথা হলো যেদিন সেদিনই শেষ কথাও হলো। আসলে আমার কথায় আপনি ওমন অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলেন, তাই আর আসিনি আগ বাড়িয়ে। যদি আবার কিছু…. সরি কিছু মনে করবেন না।
-না না। তুমি ইচ্ছে করে করো নাই।
-আপনি ড্রেস গুলো নিয়ে যান আপু। ওখানে কাজে লাগবে।
-তুমি আর তোমার স্বামী আমার জন্য অনেক করেছো। ধন্যবাদ দিয়ে এই ঋণ শোধ হবে না। তাই আর দিলাম না।
-আপনি এতদিন ছিলেন ভালো লেগেছে। আবার আসবেন।
রুশমি হাসি দিলো। যদিও মন থেকে দিয়েছে বলে মনে হলো না। মনে হচ্ছে ভিতর থেকে না। ভদ্রতার খাতিরে হাসলো। যাই হোক আমি এসেছিলাম উনি অসুস্থ বলে। মানুষ হওয়ায় মানুষের সমস্যাকে নিয়ে হাসি তামাশা বানাতে চাই না।
বেরিয়ে চলে আসছিলাম রুশমি পেছন থেকে বলল,
-আবার নিশ্চয়ই আসবো। আমাকে এখানে ফিরে আসতেই হবে। আমি নিজে না আসলেও আমায় যেয়ে ও আনবেই। আমি এখন ওর অভ্যেস। অভ্যেস মানুষ চট করে ছেড়ে দিতে পারে না। বদভ্যাস গুলো আর নিষিদ্ধ ব্যাপারে আরো বেশি আকর্ষণ মানুষের। আকর্ষণ এক প্রকার আসক্তি মায়াবী। জলদি কেউ ছাড়ে না। ছাড়তে পারে না।
ফিরে তাকালাম। মেয়েটা চুপ হয়ে গেল। এদিকে আমার দম বন্ধ হয়ে এলো। শরীর হিমশীতল হয়ে গেল। কি বলল রুশমি? আবার গোছাতে ব্যস্ত হয়ে গেল মেয়েটা। চলে এলাম ড্রয়িং রুমে। এইদিকে আমি আকাশ পাতাল ভাবছি। আমার প্রায় পেছন পেছন চলে এলো রুশমি। আমার মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ দেখেই শশী আপু জিজ্ঞেস করল,
-কিরে ভাবী কি হয়েছে?
-হু? কিছু না।
-ওইতো রুশমী চলে এসেছে।
-ভাবী এখন চলো যাই। বিচ্ছু পার্টি বার বার ফোন দিচ্ছে। (উৎস বিরক্ত হয়ে বলছে)
-হ্যা যাবো এখনই। চল রুশমি। আন্টির কাছে বিদায় নে।
রুশমি হ্যা বলে মায়ের দিকে এগিয়ে গিয়ে সালাম করতে নিল।
-আচ্ছা আচ্ছা এসব করতে হবে না। পায়ে হাত দিয়ে কাউকে সালাম করতে হবে না। আর এখন অন্য বন্ধুর বাসায় যাচ্ছো ভালো কথা। যখন তখন যার তার ঘরে সময় অসময় চলে যাবে না। এসব মানুষ পছন্দ করে না। অসভ্য মেয়েছেলে বলে।
-মা!( নিবিড় একটু জোরে বলে মাকে থামালো)
এতক্ষণে নীরব বাসায় চলে আসছে। প্রায় সবাই এখন ড্রয়িং রুমেই।
-নিবিড় আমি ওকে শিখিয়ে দিচ্ছি কারো বাসায় থাকলে কি কি করতে হয়। কি কি করতে হয় না।
-মা রুশমির বাবা মা বাঁচা থাকলে এসব এখন জানতো নিশ্চয়ই।
-মায়াবীর ও মা নেই। জন্মের পর মাকে দেখতেও পারে নাই। তা ওর সংস্কৃতি ভদ্রতা আচরন দেখ। আর এই মেয়ের মা দাঁড়িয়ে বিয়েও দিয়েছে মেয়েকে। আবার মাত্র দুইবছর আগে গত হয়েছে। সে হিসেবে তখন ওর যত বয়স ছিল, মায়াবীর এখনো ওই বয়সে পা দেয়ই নাই। মা বাবা আসল না। নিজের মন মানসিকতাই আসল।
-মা থামো। কিসব বলছো। একটা মানুষ আমাদের বাসায় থেকেছে। আমাদের অতিথি এখনো।
-শিখ। এই হলো মায়াবী। ওর কথার ধরণই আলাদা। যেখানে ও ভালো ব্যবহার করেছে, সেখানে ওর এত সুন্দর ব্যবহার পাওয়ার যোগ্যতাই নেই।
-মা প্লিজ আর বলো না। এখন তো চলেই যাচ্ছে। কেন এমন করছো?
-তুই কিছুই জানিস না মায়াবী। যেখানে তুই মেয়েটার কথা ভাবছিস, চিন্তা করছিস, সেখানে সেই তোর সংসার ভাঙ……..
-মা! শশী রুশমিকে নিয়ে যাহ। রাইট নাও। জাস্ট গো ওয়ে।
বেরিয়ে গেল শশী আপু রুশমির হাত ধরে টেনে নিয়ে। যাওয়ার সময় গেইটে দাড়িয়ে রুশমি আমাকে বলল,
-আমি যাই ভাবী আবার আসবো….
মেয়ের শেষ বলা ভাবী শুনতে কেমন যেন লাগলো। ভাবতে আর পারলাম না কিছু। নিবিড় আমার হাত ধরে টেনে বাইরে নিয়ে গেল। যেয়েই বাইক স্টার্ট দিয়ে আমাকে পেছনে উঠতে ইশারা করল। ওর কাঁধে হাত দিয়ে বসতেই নিবিড় বাইক টানলো।
অফিসে গিয়ে আমি আর নিবিড় ব্যস্ত হয়ে গেলাম। কাজ অনেকটা গুছিয়ে সবাইকে বুঝিয়ে দিলাম। নতুন কনট্যাক্ট এর কাজ চলছে। ওইটাই আমরা রিচেক করেছি।
৭.৪৫ এ বাস। ৬টার মাঝে আমরা বাসায় গেলাম। অনেক ক্লান্ত আমরা দুইজনই। বাসায় পৌঁছে নিবিড় ড্রয়িং রুমে স্যুট খুলে টাই খুলছে।
-মায়াবিনী তুমি আগে ফ্রেশ হয়ে নাও। দ্যান আমার জন্য কড়া লিকারের দুধ চা বানাবে। তখন ফ্রেশ হবো।
আচ্ছা বলে নিজের রুমে এসে একটা থ্রিপিছ নিয়ে গোছল করে বেরিয়ে আসলাম। নিবিড় টিশার্ট ট্রাউজার নিয়ে রেডি ছিল। আমি বের হওয়া মাত্র ওয়াশরুমে ঢুকে গেল। আমি নিচে চা আর নুডলস বানাতে বানাতে দেখি নিবিড় একদম রেডি হয়ে ড্রয়িং রুমে এসে পরেছে। এখন বাবা মা দুইজনই ড্রয়িং রুমে সোফায় বসে টিভি দেখছে। আমি নুডলস পরিবেশন করে সবার সামনে দিলাম। নীরব মাত্র বাসায় ঢুকলো। মা বলে দিলো ফ্রেশ হয়ে এখানে আসতে।
-নিবিড় তুমি আবার এ পোশাকে? বাইরে যাচ্ছো নাকি?
-জ্বি বাবা শহরের বাহিরে। কয়েকদিনের জন্য।
-মানে কি? নতুন বউ রেখে এভাবে যাওয়ার কি মানে?
নিবিড় আমার দিকে ঘুরলো। চা দিতে সবার সামনে দাড়িয়ে আছি। উপর থেকে নিচ পর্যন্ত দেখে বুঝছে আমি রেডি হইনি।
-মায়াবিনী চা নাস্তা সার্ভ করা হয়েছে? এখন যাও ১০ মিনিটে রেডি হবে।
এইদিকে মা বাবা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। তাড়াতাড়ি উনাদের সামনে থেকে কেটে পরতে পারলে বাঁচি। আমি নিজের রুমের দিকে রওনা হলাম নিজের চা নিয়ে। পেছন থেকে নিবিড়কে বলতে শোনলাম,
-কয়েকদিনের জন্য যাচ্ছি নতুন বিয়ে করলে কেউ বউ ছাড়া যায় নাকি। আমিও যাই না বউ ছাড়া।
শুনে চোখ আমার কোটর থেকে বের হওয়ার জোগাড়। পেছনে তাকিয়ে দেখি মা বাবা মুচকি মুচকি হাসছেন।
-বিয়ের একমাস পার হয়ে গেছে। এখন যাচ্ছিস! আগে বললাম তখন তো যাস নাই।
-তাতে কি প্রমাণ হয় বাবা? তখন ফ্যাশনশো এর কাজের চিন্তা মাথায় ছিল। ওই শেষ হওয়ার পর ভাইয়া আর শশীর বিয়ে।কালকে রাত পর্যন্ত ব্যস্ত ছিলাম। তাই আজকেই ফ্রী আজকেই যাচ্ছি। আর আমি কখন তোমাদের বললাম যাবো না? বউ নিয়ে অবশ্যই যাবো। নতুন পুরোনো এসব আমি মানি না। আমার বউ আমার কাছে সারাজীবন একই থাকবে।
নিবিড় এমন বলে আমার পিছু পিছু রুমে আসলো। এইদিকে বাবা মা হেসেই যাচ্ছেন। ছেলের এসব পাগলামি তারা বিয়ের আগে দেখেছেন। অনেকদিন পর আবার এমন দেখলেন কিনা।
ক্রেডিট কার্ড ওয়াচ আর লাগেজ নিয়ে বের হচ্ছে নিবিড়। আমি ড্রেস চেঞ্জ করে এলাম। আয়নায় বসে হালকা লিপস্টিক লাগিয়ে নিলাম। চুল গুলো ভেজা। তাই আর বাধলাম না। জিন্সের উপর লংকামিজ পরে ওড়নাকে স্কার্ফ এর মতো পরলাম। আয়না দিয়ে দেখি নিবিড় ফুল হাতা শার্ট পরেছে। হাতা ফ্লোড করেছে। সাথে জিন্স। এতো সুন্দর লাগছে। এ তো আমার আগের নিবিড়। যাকে দেখে চোখ ফেরাতে পারতাম না।
-তোমারই হাসবেন্ড। ওখানে গেলেও দেখতে পাবে। এখন বের হও।
লজ্জা আমাকে এই ছেলে দিবেই। আমাকে এমন দেখলে ওর বুঝি আনন্দ লাগে। অসভ্য।
-বউ গালি দিও না তো। এসব করতে হয় না।
এই ছেলে অনেক বিরক্তিকর। নিলজ্জ ও বটে। দুইজনই ড্রয়িং রুমে গেলাম। দেখি নীরব ও এখানে। নুডলস খাচ্ছে। আমাদের দেখে মুখ তুলে তাকিয়ে আছে।
-মায়া ভাইয়া কোথায় যাও?
-আমার সব বন্ধু মায়াবিনীকে ভাবী ডাকে। এমনকি রুশমিও। শুনেছিস নিশ্চয়ই সকালে। নেক্সট টাইম আমার বউকে ভাবী ছাড়া অন্যকিছু বলবি না।
ভাবছিলাম রহিমা খালা বলছিল হলুদের রাতে ফিরে নিবিড় নীরব ঝগড়া করছে। নিবিড় মারতেও চেয়েছিলো। অথচ কালকে বিয়ের দিন, নিবিড় ডেকে নীরবকে বসিয়ে ছিল আমার ভাইবোনদের সামনে। নীরব ও নিবিড় এর কথা শুনেছিল। আজকেও নীরব স্বাভাবিক। কিন্তু নিবিড় না। কিছু বুঝতে পারছি না ব্যাপারটা।
-নিবিড় এখন যাওয়ার সময় এসব ছাড়ো। ৭.১০ প্রায়। বাস স্ট্যান্ডে এখন পৌঁছাতে অনেক সময় লাগবে। যে জ্যাম।
নিবিড় কিছু বলল না আর আমাকে। মা নীরবকে বলল,
-ওরা ঘুরতে যাচ্ছে। কয়েকদিন পর আসবে। বিয়ের পর এইটা ওদের প্রথম ভ্রমণ।
আমি নিবিড় একে অপরের দিকে তাকালাম। সত্যি দুই বছর বিয়ের পর এইটা আমাদের প্রথম ভ্রমনই বটে। আমরা বেরিয়ে যাচ্ছি বাবা মাকে বিদায় দিয়ে। নীরব এতক্ষণ আর কোনো কথা বলেনি। পেছন থেকে বলল,
-আশা করি তোমাদের যাত্রা শুভ হবে।
নিবিড় তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল,
-অবশ্যই শুভ হবে। আমার সুন্দরী বউ এর সাথে হানিমুনে যাচ্ছি কিনা।
বলে একহাত দিয়ে আমায় জড়িয়ে ধরলো। তারপর বেরিয়ে এলাম বাসা থেকে।
বাসে এই সিলেট যাওয়ার দিনের কথা মনে পরছে। একইভাবেই নিবিড় বাহু বন্ধনে পেঁচিয়ে গুটিয়ে শুয়ে আছি। শীত শীত লাগছে। আবহাওয়া বড়ই মধুর। নিবিড় আমার উড়তে থাকা চুল গুলোকে মুখের উপর থেকে বারবার সরিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু আমার চুলগুলো বড্ড অবাধ্য। ওর ছোঁয়া পেতে বারংবার আমার মুখে ঢুলে পরছে।আমি বিরক্ত অথচ নিবিড় যেন বিরক্ত নয় বরং আনন্দিত। আনন্দের সাথে প্রতিবার আমার চুল সরিয়ে দিচ্ছে।
এমন হতে হতে কখন ঘুমিয়ে গেছি জানি না। নিবিড় আমায় জাগিয়ে দিল ভোরে। গন্তব্য স্থলে পৌঁছে নাস্তা করলাম টেকনাফে। শীপে উঠলাম সেইন্ট মার্টিনের উদ্দেশ্যে। পৌঁছেও গেলাম ঝড়ো বাতাসের কুন্ড থেকে। নিবিড় এর সাথে এসময় অনেক ছবি তুলে ফেলেছি। এত সাদা মেঘের ভেলায় নিজেকে রুপকথার রানী বানিয়ে আমার রাজার বুকে লেপ্টেও থেকেছি। পৌঁছে দুইজন হোটেলের রুমে শুয়ে পরেছি। টায়ার্ড এতো বিছানায় শুয়েই ঘুম। উঠলাম বিকালের শেষ ভাগে। দুইজন চটজলদি রেডি হয়ে গেলাম সূর্যাস্ত দেখে। এতো সুন্দর দৃশ্য দেখবো জীবনে ভাবা হয়নি। নিবিড়কে জড়িয়ে গালে চোখে কপালে অসংখ্য চুমুতে ভরিয়ে দিয়েছি বিচে। এত আনন্দ হচ্ছে আমার সব নিবিড় দিয়েছে বলে। ছেলেটা আমার খুশি দেখে নিজেও তৃপ্তির হাসির রেখা মুখে ফুটিয়ে তুলেছে।
এভাবে সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত চলে এলো। এখন ও পর্যন্ত সবই ঠিক ছিলো। হটাৎ নিবিড় এর কি হলো। হোটেলের রুমে আমি নীল রং য়ের জর্জেটের একটি শাড়ি পরেছিলাম। নিবিড় এর মন মতো নিজেকে সাজিয়েও ছিলাম। নিবিড়ের মন তো উদাসী ছিল না তা ওর ভালোবাসার আলিঙ্গন ও পেয়েই বুঝেছি। ভালোবাসার চিহ্ন ও পেয়েছি। তবে এ হটাৎ কি হলো। এ কি কথা নিবিড় বলছে? আমার ভেতরের সব চুরমার করে ভাঙছে। আমার হৃদয় ক্ষত বিক্ষত হয়ে যাচ্ছে।
চলবে………