তোমার_প্রেমে_মাতাল,পর্ব_৩

0
2547

তোমার_প্রেমে_মাতাল,পর্ব_৩
লেখিকা_মায়াবিনী (ছদ্মনাম)

সংঘে নতুন সদস্য ক’জন হচ্ছে। গোনা শুরু করছিলাম।ছেলেদের পাশ গুনে মেয়েদের সারির পিছন থেকে গুনে দ্বিতীয় বেঞ্চের সবচেয়ে কিনারে বসা মেয়েটাকে দেখে থেমে গেলাম।কি গুনছিলাম কতো গুনছিলাম কেন গুনছিলাম আদো গুনছিলাম কিনা গুলিয়ে ফেলেছি। হা করে দেখছি তাই জানি শুধু।মেয়েটাও দেখলাম ফোন থেকে চোখ তুলে আমার দিকেই তাকালো। চোখে চোখ পড়ায় ইতস্তত লাগল বুঝি মেয়েটার। সাথে সাথে চোখ নামিয়ে নিলো। কয়েক সেকেন্ড পর আবার তাকালো, আবার চোখ নামালো।এইদিকে আমার ধ্যান যেন এখনো ভাংগে নাই। এমন দুই/তিনবার হওয়ার পর মেয়েটি তাকিয়ে আমার দিকে বিরক্ত প্রকাশ করলো।মায়াবী মুখের এমন বিরক্তি প্রকাশের চেহেরাটা মনে হয় আমার আর মনে ধরল না।ধ্যান ভাংলো।
বন্ধু এসে জিজ্ঞেস করল,
দিহানঃগুনেছিস নিবিড়? (কাধে ধরে নিবিড় এর)
নিবিড়ঃ গোনা আর হল কোথায় (বিড়বিড় করে)
দিহানঃ কি বিড়বিড় করছিস?
নিবিড়ঃ দূর কি বলব আবার।তুই গুন।মেয়েগুলো একদম বেহায়া।তাকিয়ে থাকে মুখের দিকে।(বিরক্তভাব নিয়ে)
সাদিঃ তুই তো সুপুরুষ তাই তোকে দেখে।????
দিহানঃএকদম সত্যি?।
শশীঃ এরা ছোট বয়সে।এই বয়সে বড় ছেলে দেখলে তাকাতে ইচ্ছে করেই।? সুপুরুষ ভেবে না।
(এরা সবাই বন্ধু। বিএসসি কমপ্লিট এদের। ৫০৪০জন প্লাস সদস্য।বেশিরভাগই এদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু, জুনিয়র, সিনিয়ররা। এদের অনির্বাণ বন্ধু সংঘ নামের একটা সংঘ আছে। যেখানে গরিবের সাহায্য, বন্যায় -শীতে সাহায্য, রক্তদান, রাজনীতিবিদ দের সাথে সম্পর্ক, বিভিন্ন সভায় অংশগ্রহণ, আরো বিভিন্ন কাজ করে থাকে।এখন এইটা নিজেদের ক্যাম্পাসের বাহিরেও ছড়ানো জন্যই বিভিন্ন কোচিং এ আসা। আস্তে আস্তে ক্লিয়ার হয়ে যাবেন।)
নিবিড়ঃ তুই ও এমন ছ্যাচড়া ছিলি শশী??( ভাব নিয়ে)
শশীঃতোর মাথা কুত্তা।(রাগে ফুসফুস করতে করতে গোনা শুরু করল)
সবাই হাসা শুরু করে দিল???

সতেরো বছরের এক মেয়ে কোচিং এ বসে অনবরত মোবাইল চেপে যাচ্ছে। টেস্ট পরিক্ষার রেজাল্ট সামনে। ২/৩ দিন পরেই কোচিং বন্ধ করে দিবে। সামনে এইচএসসি। অথচ মেয়েটি ফোনে গ্রুপ চ্যাট করায় ব্যস্ত। কারন ১২ তারিখে র‍্যাগ ডে। ওইদিনেরই প্ল্যান চলছে। আজকে কোচিং এ একটা সংঘের সদস্যরা আসবে।এলাকায় ওই ভাইয়ারা রাজ করে। যদিও এসব নিয়ে মোটেও মায়াবীর মাথা ব্যথা নেই। ক্লাস হচ্ছে না, সেটাই ইম্পর্ট্যান্ট। কিন্তু এরা কখন ঢুকেছে কে জানে? উপর দিকে তাকাতেই একটা ছেলে দেখলাম। চোখে চোখ পড়তেই চোখ নামিয়ে নিলাম। আবার তাকালাম, দেখি আমারই দিকে তাকিয়ে আছে। নাহ অসহ্য! এভাবে টলারেট করা যায় নাকি? বিরক্তি হয়ে গেলাম।পরেরবার দেখলাম বুইড়ার ধ্যান ভেংগেছে। খাটাশ! বয়স তো কম হয়নি। আমার মতো কচি মেয়ে দেখে গিলে খাচ্ছে।অসভ্য ছেলে।মনে মনে হাজারো গালি দিলাম।নাম আমার মায়াবী ঠিকই কিন্তু দয়া মায়া আমার বরাবরই কম।?

-কিন্তু যতক্ষণ ছিল কোচিং এ বারবারই চোখে চোখ পড়ছিল। এত গভীর চাহনি আমি আর কোনদিন দেখিনি।এত বড় কর্নিয়া(চোখের মনি) কেন লোকটার? কালো কতো। মনে হয় কুয়া। হাহ!

-মেয়েটা এমন মায়াবিনী কেন? বার বার না চাওয়া সর্তেও চোখ ওর দিকেই টানছে। তা নাহলে ২৩ বছরের ভার্সিটি কমপ্লিট করা ছেলের এই কলেজ পড়ুয়া পিচ্চি মেয়ের দিকে চোখ যাবে? ভীমরতিতে ধরছে আমাকে। (এসব মনে মনে বলে নিবিড় বের হয়ে চলে যেতে নেয়, আবার একবার পিছন ঘুরে শেষবার তার মায়াবিনীকে দেখতে চায় তার চোখ জোড়া)

-যাহ বাবা!চলে যাচ্ছে??আমার আবার কি হলো।অসভ্য লোকের চলে যাওয়ায় মন খারাপ হচ্ছে? পাগল হয়ে গেলাম কিনা? দেখুক বা না দেখুক আমার কি? চলে গেলেই বাচিঁ।বারবার লজ্জায় চোখ তো নামাতে হবে না। বলেই তার যাওয়া দেখছিলাম। হটাৎ এভাবে পিছন ঘুরে আমার দিকেই তাকাবে,একদম বুঝতে পারিনি। এবার তো আমি ধরা পরে গেলাম। আমি যে উনাকে দেখছিলাম বুঝে ফেলল লোকটা?

-কি ব্যপার? আমার দিকে তাকানো কেন? চোখ যেন কিছু বলতে চাচ্ছে আমায়। কিন্তু কি?

-উনার এমন পিছন ঘুরে তাকানোতে কি ছিল জানি না। কিন্তু মুচকি হেসে দিয়েছিলাম এটা জানি। সাথে সাথে চোখ নামিয়ে নেই। আর ভুলেও তাকানো হয়নি।লজ্জায় মনে হচ্ছিল মাটির নিচে ঢুকে যাই।কি নিলজ্জ আমি! যেন লাল হয়ে গেছে পুরো মুখ খানি। যে কেউ তাকালেই বুঝে যাবে আমার মুখে লজ্জার ছাপ!!

-হাসিতে কি ছিল জানি না। শুধু বুঝতে পারছিলাম এই নারী আমার নজর কেড়েছে। আর কিছুক্ষণ থাকলে মায়াবিনীর সামনে ভুল কিছু করেও ফেলতে পারি। নিজের কথা বাদ দেই। ছোট বাচ্চা মেয়েটিকে সবার সামনে লজ্জা দেওয়া কাপুরুষের কাজ হবে। বের হয়ে গেলাম কোচিং থেকে তাড়াহুড়ো করে।

অনেক খুজেছি আমার মায়াবিনীকে৷ কোচিং বন্ধ। সংঘের সদস্য হয়েছিল কিনা জানতাম না।আগে চলে আসায়। কোন কলেজ টাও জানা ছিল না।ছোট একটা মেয়ের খোঁজ করব, এসব শুনলে বন্ধুদের হাসির খোরাক হতে হবে। তাই নিজের নজরে খুজছিলাম। এত বড় শহরে কোথায় খোজ করব। কিন্তু হটাৎ এভাবে তার খোঁজ পাব বুঝতেই পারিনি। আকাশের চাঁদ পেয়ে গেলাম মনে হলো।একটা মাস আমি পুরো পাগল হয়ে গিয়েছিলাম মায়াবিনী হীনা। এক দেখায় কেও এমন বশীভূত করতে পারে তাকে না দেখলে জানতেই পারতাম না বোধহয়। তার খোঁজ পেয়েও মনটা খারাপ হয়ে গেল। এক রাত বারান্দায় বসে পার করার পর স্বার্থপরের মতো নিজের প্রাণ বাচাতে চলে গেলাম তার খোঁজে।

আজ র‍্যাগডে। ডিসেম্বর ১২, জাম রঙের একটি চুরিদারি পরে, ওই রঙের লিপস্টিক লাগিয়ে, পিঠ ছাড়ানো কোমড় ছোয়া চুল গুলো ছাড়া রাখলাম। আর সাজলাম না। জানি আমাকে যত সুন্দর লাগছে সবগুলো বেহায়া ছেলে এমনি তাকিয়ে থাকবে। নিজেকে নিজে মাশাল্লাহ বলে ওয়াকথু দিয়ে বেরিয়ে গেলাম। উদ্দেশ্য কলেজের আঙিয়া মাঠ। ওখান থেকে হোয়াইট টিশার্ট পড়ে সবাই সিগনেচার করবে আর রঙ খেলবে।

সকাল ৯টা হতে দাঁড়িয়ে আছি। এখনো আসার নাম নেই।১০.২২এ ম্যাডাম কলেজ গেইটে নামলো রিকশা থেকে। এতক্ষণ যে অপেক্ষায় অভিযোগ জমচ্ছিল,ওকে দেখে বেমালুম ভুলে গেলাম সবটা। এ কাকে দেখছি আমি। ওইদিন শুধু মুখ আর চোখ দেখেছিলাম। আজ পুরো মায়াবিনীকে। পাতলা গড়নে ৫ফিট২ লম্বা মেয়েটার সকল ওজন ওই চুলেরই। একদম সোজা সিল্কি চুল তার বাঁকা কোমড় ছুঁয়েছে।খোলা মাঠের বাতাসে তার বেশরম চুল গুলো ঠোঁটে আঁটকে যাচ্ছে।চুল গুলো আমার মন না ছুলে এতক্ষণে ওদের অঘটন ঘটে যেতো।রিকশাওয়ালা মামার সাথে খাসগল্প জমিয়ে দিয়েছে সে।হেসেই চলেছে অনবরত। ডান পাশে তার টোল পড়ে। টুপ করে চুমু বসিয়ে দেওয়ার এক তীব্র বাসনা মনে চারা দিয়ে উঠলো। চটজলদি চোখ নামিয়ে নিলাম।

-আমার গালে মুখে রঙ। ওয়াশরুমে আসলাম দৌড়িয়ে। আরও একটা কারণ টিশার্ট এ ছেলেরা সিগনেচার করবে। এসব আমার কেন যেন পছন্দ না একদম। তাই ওয়াশরুমের বাহানায় খানিকটা পালিয়েই চলে এলাম।বেসিনে দাড়িয়ে মুখ ধুচ্ছিলাম।পিছনে কেঊ এসেছে। কারন দরজা লাগানোর শব্দ পেলাম। মুখ উঠিয়ে দেখার আগেই কেউ একজন আমাকে ঘুরিয়ে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো। চিৎকার দিব তার আগেই মুখ চেপে ধরলো সে।বড় বড় চোখ করে তার দিকে তাকানো মাত্রই আরও বড়সড় একটা ধাক্কা খেলাম…….

অনেকক্ষণ যাবৎ দেখছি ছেলেগুলো ওকে রঙ লাগানোর বাহানা করছে। মেয়েদের ভীড়ের মাঝে থেকে বের হচ্ছে না বলেই কেউ সুযোগ পাচ্ছে না।কিন্তু এখন সিগনেচার করা হবে বলেই মেয়ে ছেলেরা এক হয়ে গেল। আলাদা আর পাশ রইলো না। যে ভয়টা পাচ্ছিলাম, এখন বুঝি তাই হবে।ওকে ছুঁতে নিলেই কেলেংকারী হয়ে যাবে। আমার সে। আমিই এখনো ছুইনি। কি করে আমার সামনে তাকে অন্য কাউকে দ্বারা ছুঁতে দেই? বুঝলাম শেষ রক্ষা আজ আর হবে না।একে তো এতদিন তার খোঁজ পাইনি।আজকে পেয়েও কথা বলার সুযোগ হয়নি।নিচে তাকিয়ে ছিলাম কখন যে ভাড়া মিটিয়ে কলেজে ঢুকে পরেছে বুঝতে পারি নাই।তার চুলে হাত ঢুকিয়ে টান দেওয়ার বাসনা কারন ঠোঁট বারবার ছোয়ার অপরাধে। আর তার এমন ক্ল্যাভিক্যাল ভাসিয়ে দুড়ুম দুড়ুম চলায় বারবার ওখানে চোখ আটকে যাচ্ছে। এত কিছুর পরও নিজেকে সংযত রাখছি।এখন নাকি আবার আমারই সামনে আমার মায়াবিনীকে ছুয়ে দেখতে দিব পরপুরুষদের? এ আমার দ্বারা হবে না।এজন্য মায়াবিনীকে শাস্তি পেতে হবেই।এতক্ষণ তাকে লজ্জিত হতে দিতে চাই নাই।তাই দূরে থেকেছি।এখন এ আর সম্ভব নয়। যেই না ওর কাছে যাব অমনি কেউ ওর দিকে আসছিল সিগনেচার করতে। মায়াবিনী বলে বসলো, “রঙ টা ধুয়ে আসছি “।বলেই উপরের দিকে দৌড়।

ভেবাচেকা খেয়েও একটা প্রশান্তির হাসি মুখে ছুয়ে গেল।মনে মনে বললাম এখন তো তোমায় ধরা দিতেই হবে।মন কি করে বুঝে যাও মায়াবিনী? হাসি নিয়েই বললাম।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here