তোমার_প্রেমে_মাতাল,পর্ব_৪০+৪১

0
2395

তোমার_প্রেমে_মাতাল,পর্ব_৪০+৪১
লেখিকা_মায়াবিনী (ছদ্মনাম)
পর্ব_৪০

উঁচু করে বাঁধা এলোমেলো চুলে এক পনেরো বছরের কিশোরী দড়িলাফ খেলছে। হলদে গায়ের রং রৌদে পুড়ে ফ্যাকাশে হয়ে উঠেছে। কিন্তু মুখটায় এখনো হাসি বিরাজমান। কি এক মন খোলা খিলখিল হাসি। অদ্ভুত সুন্দর টোল পরে। স্কুলের মাঠে সাথীদের সাথে খেলায় মগ্ন মেয়েটি যখন পা বেজে বাদ হয়ে গেল তখন লাফানোর সময় নিচে হয়ে যাওয়া ঝুটি করা চুলগুলোকে একটানে খুলে ফেলল। তারপর খোলা চুলগুলো ঝাড়া দিয়ে আবার একমুঠো করে উঁচু করে ফের বেঁধে নেয়। হটাৎ খেয়ালে মেয়েটির চোখ চলে গেল সামনের দিকে কয়েকটা ছেলের দিকে যারা এই স্কুলেরই ছাত্র হয়ে মেয়ে বান্ধবীদের খেলা দেখচ্ছিল। মেয়েটি ছেলেদের কাছে গিয়ে একটা ছেলের কান মোলে দিল। আরো কি কি বলে যেন বকছেও। এখান থেকে শোনা না গেলেও বুঝতে খুব একটা অসুবিধে হয় না। আমি ও কয়েকটা ছেলে অন্য এক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসেছি। উদ্দেশ্য বিজ্ঞান মেলার জন্য আমন্ত্রণ করা। নাম না জানা কিশোরীকে বাসায় যেয়েও ভুলতে না পারা আমাকে আমি নিজেই বকছি। আমার ও একই বয়স প্রায়। চোখ খুললেও মেয়েটি বন্ধ করলেও ওই মেয়েটি। সেই টোল পরা হাসি, সেই চুল খুলে আবার বাঁধা যেন ভুলতেই পারছিলাম না। নিজেকে অনেক কষ্টে বুঝিয়ে শুনিয়ে নিলাম এ ঠিক না, তখনই আবার তার সাথে দেখা। আমার স্কুলে তার বন্ধুদের নিয়ে এক প্রজেক্ট করেছে। ওখান থেকে নাম মায়াবী, দশম শ্রেণি জেনে নিলাম। তার প্রজেক্ট ফার্স্ট হওয়ায় আর একটু মিউচুয়াল বন্ধুর কাছে জেনে নিলাম সে খুব মেধাবী ছাত্রী। তারপর তাকে দেখেই কিনা জানি না, পড়ালেখায় বড্ড মনোযোগী হয়ে গেলাম। এই ফাকে মাঝে মাঝে তার স্কুলে যেয়ে উঁকি দিয়ে দেখে আসতাম। তারপর কলেজে যেয়ে দেখি মায়াবী একই কলেজ। শহরের নাম করা কলেজ, মায়াবী মেধাবী। তাই জানতাম এই কলেজেই দেখা হবে। শুরু করলাম ভালো ছাত্র হওয়ার অভিযান। সকল নোট করা। জানি এই উছিলায় হলেও মায়াবী আসবে আমার সাথে কথা বলতে, বন্ধু হতে। তখন আমি ওকে ছাড়া কাউকে চিনি না জানি না। আমার জীবন কেমন পরিবর্তন হতে লাগলো। শুধু ওর চোখে আমায় সুদর্শন যুবক লাগাতে নিজেকে ওইভাবে গড়ে তুলছিলাম। অনেক মেয়ের চোখে পরেও গেলাম। বুঝলাম অনেকটা সফল আমি। কিন্তু যার জন্য এতকিছু? তার কিছু হলো না। তবুও নিজের উপর ছিল আত্মবিশ্বাস। জানি মায়াবী একদিন তো বুঝবে। এভাবে কলেজ পার হয়ে গেল। মায়াবীর অন্য কারো উপর আগ্রহ নেই। পড়া নিয়ে খেলা নিয়ে ব্যস্ততায় থাকে সে। তাই ভরসা পেলাম আর কিছুদিন যাক। বোর্ডে স্ট্যান্ড করায় মায়াবীকে বলি দেখা করতে। ওইদিন প্রেম নিবেদন করব বলে নিজেকে তৈরি করলাম। কিন্তু সকালে নাকচ করে দিলো। আসলো না বলেও আশা ছাড়িনি। ফোন থেকে আমি ব্লক লিস্টে থাকতাম তাই অন্য নম্বর দিয়ে ফোন দিয়ে মায়াবীর মুখে মায়াবী কন্ঠস্বর শুনতাম। ফেসবুকে পাঁচ বছরে অনেক মেসেজ দিয়েছি। কখনো মেয়েটি চেক করেনি। তাও আমি ভালো ভার্সিটিতে চান্স পাই। জীবনে অনেক এগোতে হবে মায়াকে আমার পেতেই হবে। মায়ার টান এত বেশি কেন? পিছনে ফলো করার ছেলে আমি কোনোদিন ও ছিলাম না। মায়ার বাসার নিচ তলায় স্কুলের এক ছোট ভাই ছিল। সে খবর দিত মায়ার। এটাও জানতাম বিয়ে হয়নি মেয়েটার। শুনলাম জব ও করছে। ভাইয়া একদিন এক ফাইল বাসায় রেখে যায়, ইমার্জেন্সি হওয়ায় প্রথম আমি ভাইয়ার অফিস যাই। সেই মায়া। সামনে দাঁড়াতে চেয়ে ফিরে আসি। নিজে যোগ্যতা অর্জন করবো তারপর একবারে ওর বাবার সামনে যেয়ে হাত পেতে মেয়েকে চেয়ে নিবো। তারপর মুখোমুখি দেখা হয়েই গেল। ভাইয়ার জন্য মেয়ে দেখতে গিয়ে ওই বাসায় ঢুকলাম যেখানে নিজের জন্য স্বপ্ন দেখেছিলাম!

নীরবের মুখের দিকে তাকিয়ে নেই আমি। তাও দিব্যি বুঝতে পারছি কাঁদছে সে। যেন জীবনে পরাজিত এক সৈনিকের অশ্রুজল। সন্ধ্যা হয়ে গেছে। আশেপাশে আলো জ্বালানো হয়নি এখনো। তাই কালো করে রাখা নীরবের মুখে অন্ধকার ছেয়ে আছে। জানি আরো অনেক কিছু বলবে ও। কিন্তু একি? আমার হাতের উপর পানি পরল কি করে? আমার চোখ থেকে গাল বেয়ে পরেছে। আমার ভালো লাগল না। আমি কি কষ্ট পাচ্ছি? গল্পের মেয়েটা আমি না হয়ে অন্য কেউ হলে এতক্ষণে আমি নীরবকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলতাম। কিন্তু আজ আমি কাঠগড়ায় দাঁড়ানো। কিছু বলা আর হলো না। উঠে চলে এলাম। আসার আগে বলে এলাম,

-নিচে এসো। নামাজ পড়ে কড়া চা বানিয়ে দিচ্ছি। মাথা ব্যথা কমে যাবে।

জানি নীরব আমায় শুনে অবাক হয়েছে। কি করে খেয়াল করলাম। আসলে বিয়ের পর থেকে শ্বশুরবাড়ির প্রতিটা মানুষের কখন কি প্রয়োজন আমি জানি। নিচে নেমে গেলাম। দুই কাপ চা বানিয়ে বারান্দার দোলনায় বসলাম। নিবিড় আজকে কখন আসবে জানি না। আদো ফিরবে কিনা তাও জানি না। নীরব আমার পাশে এসে বসেছে। কাপটা নিজেই নিয়ে খাচ্ছে। আমার চোখে নীরব এখনো ভালো বন্ধু। আমার মনে কোনোদিন নীরবের জন্য কোনো অনুভূতি জন্ম দেয়নি। আজও ওর গল্প শুনে আমার অনুভূতি জাগেনি। কষ্ট পেয়েছি। বন্ধু হয়ে অন্য বন্ধুর জন্য বুকে চাপা কষ্ট। ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। বুক ভারী হয়ে আছে আমার।

-আমি যা করেছি তার জন্য আমি সত্যি দুঃখিত। আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছিলাম তাই রুশমির হাসবেন্ডকে তোমার সামনে আসতে বলি। তবে তিন্নির সাথে যা করেছি শুধু শেষ একবার দেখতে ছিলাম তোমার কি কখনো আমার প্রতি অনুভূতি আসে নাই? না আসেনি। আসলে মা এভাবে দেখে ফেলবেন বুঝতে পারিনি। সত্যি আমি কষ্ট দিতে চাইনি তিন্নিকে। খুব ইনোসেন্ট একটা মেয়ে। কিন্তু আমার ওর প্রতি কোনো অনুভূতি নেই। তুমি প্লিজ বুঝিয়ে বলো তিন্নিকে। আমি সামনে গিয়ে কখনো দাঁড়াতে পারব না। যেন আমায় ক্ষমা করে দেয়।

ক্ষমা! এই শব্দ শুনে কি হলো জানি না। গায়ে জ্বালা পোড়া শুরু হয়ে গেল। দুই ভাইয়ের এক স্বভাব। কিছু বললাম না। নিজের রাগ কন্ট্রোল করার জন্য দাঁতে দাঁত চেপে নিজের জামা চেপে ধরেছি। তারপর মনে হলো তিন্নির কথা। ওর সেই কান্নার শব্দ যেন আমার মাথা থেকে যাচ্ছেই না। মন ভীষন খারাপ লাগছিল। শান্ত করে নিজেকে কিছু বলতে গেলাম তার আগেই নীরব নিজেই বলল। তবে আচমকা আমার দুইহাত মুঠো করে ধরে।

-আমি তোমাকে আজও একই রকম ভালোবাসি। আমাকে ফিরিয়ে দিও না। তুমি তো জানো এখন সব। ভাইয়া তোমার কাছে সব স্বীকার করেছে। তুমি নিশ্চয়ই আমার দিক বোঝেছো।

নীরবের হাত থেকে এক ঝটকায় হাত সরিয়ে নিয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম,
-কি যা তা বলছো?

নীরব আমার সাথে দাড়িয়ে গেল,
-ভালোবাসি আমি তোমাকে। ভাইয়ার কথা চিন্তা করো। অন্য কোনো মেয়ে এভাবে বিয়ের রাতে ফোন দিলে বের হয়ে চলে যেত? না! কারন সে রুশমি ছিল। যেখানে তোমাকে ভাইয়া ভালোবাসে তাও এমন করেছিল। কারন প্রথম প্রেম কখনো মানুষ ভুলতে পারে না। আর আমার বেলায় দেখো আমি এই আট বছর ধরে তোমায় ভালোবেসে এসেছি। আমার প্রথম আর শেষ প্রেম শুধু তুমি। চলে এসো আমার কাছে মায়া। সবাইকে ছেড়ে দিবো। তোমাকে নিয়ে আলাদা হয়ে যাবো। তুমি ভাইয়াকে ছেড়ে…

আরেকবার থাপ্পড় দিয়ে ফেলেছি। জীবনে কারো উপর আমি হাত তুলিনি। সেখানে এই ছেলেকে দুইবার। আমার নিশ্বাস আটকে যাচ্ছে। পেটে চাপ ব্যথা উঠছে। ক্ষমতা থাকলে এখন আরো কয়েকটা মেরে দিতাম।

-Just stop talking nonsense you idiot. তোমাকে আমি বন্ধু ভেবেছি আর তুমি এটার সুযোগ নিলে? আমি তোমার সাথে তিন্নির কথা বলতে এসেছিলাম। আর তুমি কিনা? নিবিড়কে ছাড়বো কেন আমি? আমার সাথে আমার হাসবেন্ডের সম্পর্ক নিয়ে কথা বলার তুমি কে? Who the hell are you? মায়া কে? আমাকে ভাবী বলে ডাকা শিখো।

(বলে বড় ওড়নাটা গা থেকে ফেলে দিলাম। আর নীরবের আমার পেটের দিকে চোখ পরলো।)

-See! See nah! I’m pregnant. তুমি চাচ্চু হতে চলেছো। বুঝতে পেরেছো? তুমি যেদিন আমায় বাঁচালে ওইদিন তোমার উপর আমার ভরসা কত যে বেড়ে গেছিল। যার ফলাফল আমি তোমায় জড়িয়ে ধরেছিলাম। আমার কাছে আমার ভাই যেমন আর উৎস যেমন তোমাকেও আমি ওই স্থান দিয়েছিলাম। আর তুমি! তিন্নির সাথে যা করেছো অন্যায় করেছো। প্রথম প্রেম নিয়ে কি কি যেন বললে? এইটা তিন্নির হয়ে চিন্তা করে দেখো। সেখানে তুমি ওকে ধোঁকা দিয়েছো৷ আমার বোনটা না খেয়ে সেন্সলেস হয়ে যাচ্ছে, কারো সাথে কথা বলে না যেন বোবা হয়ে গেছে। যদি ওর কোনো ক্ষতি হয় তবে আমার চেয়ে খারাপ আর কেউ হবে না।

বলে জোরে জোরে নিশ্বাস নিলাম। না এখন ব্যথাটা আর সহ্য করা যাচ্ছে না। নীরবের দিকে তাকিয়ে দেখলাম ও মূর্তির ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে। ওর দিকে তাকাতেই ঘৃনায় মরে যেতে ইচ্ছে করলো।

-Sick people! Now you can leave. Get out. Just get out.

নীরব বেরিয়ে চলে গেল। আমি আস্তে আস্তে হেঁটে রুমে প্রবেশ করলাম। বেডে এসে শুয়েছি। এই ব্যথা সহনশীল নয় মোটেও। এভাবে চিৎকার করা আমার বাবুর জন্য ক্ষতিকর।

——————————-

আমি একটা মাস তোমার খোঁজ না পেয়ে অস্থির হয়ে উঠেছিলাম। কোনোভাবেই হোক তোমার পরিচয় আমার জানার খুব দরকার ছিল। আমি তখন কত রাত না ঘুমিয়ে পার করে দিয়েছি। আচমকা তোমার র‍্যাগ ডের আগের দিন রাতে আমি তোমার খোঁজ পেয়েই যাই। ওই রাতে আমার ফোনের চার্জার কাজ করছিল না বলে নীরবের রুমে নক করি ওর চার্জার নিতে। কোনো উত্তর পাই না বলে রুমে ঢুকে দেখি ও ওয়াশরুমে। আমি চার্জার খুজছিলাম দেখি ওর ফোনের লক খোলা। আর মেসেঞ্জারের একজনের উইন্ডোজ খোলা। একটা মেয়ের। নাম মায়াবী আলম। ভাবলাম দেখি ছোট ভাই প্রেম করছে নাকি। মেয়ের ফেসবুক প্রোফাইলে যেয়ে বুক কেঁপে উঠলো। এই সেই মেয়ে যার জন্য আমার রাতের ঘুম উড়ে গেছে। সারাদিন যে আমার মনে চেপে বসে থাকে। তাড়াতাড়ি নীরবের ম্যাসেজ চেক করলাম। ব্যাচমেট, আবার র‍্যাগ ডে পরেরদিন। কিন্তু প্রেম নেই। যাক নিশ্চিন্ত হলাম। মেসেঞ্জার অপশন থেকে বের হয়ে লক করব। ওয়ালপেপারে চোখ আঁটকে গেল। তোমার ছবি। লক করে নিজের রুমে চলে এলাম। মায়াবিনী মেয়ের খোঁজ পেয়ে গেছি। অথচ দেখো সে নাকি আমার ছোট ভাইএর মনেও। সারারাত ভেবে পেলাম না কি করবো। অনেক চেষ্টা করে মানালাম তোমার সামনেই পরব না। সেখানে আমি নিরুপায়। সকাল হতেই ছুটে গেলাম তোমায় দেখতে। তোমার কাছে আমার জন্য যে অনুভূতি তোমার চোখ প্রকাশ করে দিল তা আমি জেনে গেলাম। তোমার মনেও কেবল আমি আছি। তাই পরে নীরবের সাথে তোমায় কথা বলতে দিতাম না। তবে আমি ভেবেছিলাম নীরব তোমায় ভুলে গেছে। কিন্তু বিয়ের কয়েকদিন আগে ও আমার রুমে এসে জবাব চায়। আমি কিছু বলার আগেই বলে পাঁচ বছর আগে ওর ওয়ালপেপারের ছবি আমার ফোনে কেন? বুঝলাম আমার ফোনে গুগল ফটোস থেকে নীরব বের করেছে। ওইদিন আমি চুপ ছিলাম। তারপর ভেবেছি ভাবী হয়ে যাবে হয়তোবা তোমায় মেনে নিবে। কিন্তু আমি আবার ভুল প্রমাণিত হলাম। বিয়ের পর সবসময় বলতো তোমাকে আমার কাছে থেকে কেড়ে নিবে। তারপর তুমি সব জানো।

বলে নিবিড় আমার দিকে ঘুরে না তাকিয়ে মাটির দিকেই তাকিয়ে রইলো। আমি বেঞ্চ থেকে উঠে নিবিড় এর সামনে দাড়ালাম। নিবিড়কে আমার দিকে তাকাতে বললাম কিন্তু ও না তাকিয়ে হাত জোড় করে বলল,

-আমায় ক্ষমা করে দাও মায়াবিনী। আমায় ক্ষমা করে দাও। জানি এর মাফ নেই। কিন্তু তাও বলছি ক্ষমা করে দিও। তুমি যা করতে চাও করতে পারো। আমি তোমায় বাঁধা দিবো না। আমি আমার ছোট ভাইয়ের কাছেও অপরাধী। তবে এখন ইচ্ছে হলে তুমি ওর কাছেও…

নিবিড়কে শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে কষিয়ে এক থাপ্পড় মেরে দিয়ে উপরে চলে এলাম। শিমুল তলা সাক্ষী হয়ে রয়ে গেল সবটার। রুমে এসে বারান্দায় গিয়ে দেয়াল ঘেষে বসলাম। এখান থেকেও শিমুল গাছ দেখছি। আমি জানি এই বারান্দার ঠিক নিচেই নিবিড় বসা। স্থানের দূরত্ব কম হলেও মনের দূরত্ব অনেক বেড়ে গেছে। কেউ কারো অতল ছুঁতে পারবে না। কাঁদতে কাঁদতে বসে কখন ঘুমিয়েছি জানি না। সকালে ঘুম ভেঙে দেখলাম আমি বিছানায়। বেলা অনেক তাই জানি নিবিড় অফিসে চলেও গেছে। উৎস ফোন করে বলল তিন্নির শরীর খুব খারাপ। দরজা বন্ধ রাখে কিছুদিন ধরে। খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। আজ নাকি সেন্সলেস ও হয়ে ওয়াশরুমে পরেছিল। যদি তিন্নি জানতো নীরব ওকে ভালোবাসে না তাও হয়ত মানিয়ে নিতে পারতো৷ কিন্তু যখন জেনেছে ওরই বড় মামাতো বোনকে ওর প্রেমিক ভালোবাসে তখন তা আত্মসম্মানে লেগে গেছে। এই বেদনা কাউকে বোঝানো সম্ভব নয়। বুঝলাম নীরবের সাথে আমায় কথা বলতে হবে। আজকে রাতে কথা বলে যা জানলাম দুইভাই মানসিক রোগী। এদের চিন্তা ভাবনা অতন্ত্য নিচু লেভেলের।

———————————

এতগুলো মাস পেরিয়ে গেছে মায়াবিনীকে দেখিনা। শেষ কথা হয় যে রাতে ওই রাতেই ওকে মন ভরে দেখে নিয়েছিলাম। আমি তো আমার বউকে চিনি। এসবের পর কোনোদিন ও আমার সাথে এ বাসায় থাকতে চাইবে না। তাই মনে হতেই দৌড়ে উপরে যাই। রুমে নেই, ওয়াশরুমে নেই। গেল কোথায়? তারপর বারান্দায় এগিয়ে যেতে দেখি দেয়াল ঘেষে বসে আছে। চোখ বন্ধ। কাছে দাঁড়াতে চোখ খুলে রাগে ফেটে পরে নাই মানে ঘুমিয়ে গেছে। সামনে যেয়ে বসে মায়া মুখ খানায় চেয়ে রইলাম। এতো সুন্দর কেন এই রমণী? চাঁদের আলোয় ওকে আরো মায়াবী লাগছে। চোখের ঘন পাপড়িতে এখনো পানি জমে আছে। দুই চোখে আলতোভাবে ঠোঁট ছোঁয়ালাম। একটু কেঁপে উঠলো। মনে হলো আমার ছোঁয়ায় এভাবে আর কখনো কি ওর কেপে উঠা দেখা হবে না? তারপর কোলে নিয়ে ঘরে এসে বেডে শুইয়ে দিলাম। ওর মাথার নীচে ডান হাত দিয়ে আমিও শুয়ে পড়লাম। একদম বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়েছি। এই জীবনের শেষ এত কাছে আমার মায়াবিনী। বাম হাত ওর পেটের উপর রাখলাম। আর সারারাত মায়াবিনীকে দেখে গেলাম। এই তৃষ্ণা মেটানোর সুযোগ মিলবে না আর বলে। ভোরের আলো ফুটেছে। চোখ মেলে রাখা ভার। কিন্তু চোখ বন্ধ করতেও পারছি না। শেষ সময় হারিয়ে যাবে বলে। সকাল সাতটা কখন বেজে গেছে। উঠে ভালোভাবে ঢেকে দেওয়ার আগে পেটে এক বড় চুম্বন করেছিলাম। তারপর মায়াবিনীর চুলগুলো মুখ থেকে সরিয়ে কপালে একটা গম্ভীর চুম্বন দিয়েছিলাম। এই স্বপ্নটাই তিন মাস যাবৎ দেখে আসছি।

———————————

শীতকাল পেরিয়ে গেছে। গরমভাবটা হটাৎ জোরালো হয়ে উঠেছে। ফ্যান ছাড়তে ঠান্ডা বন্ধ করলেই গরম। বারান্দাতেও যেয়ে শান্তি নেই। বিল্ডিং এর পেছন পাশ দেখার অভ্যেসটা নষ্ট হয়ে গেছে। সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা আমি। ভাবীপু ওরফে শশী আপু অনেক যত্নে রেখেছে। পেট এখন লুকানো যায় না। সবার জানা সাড়ে পাঁচ কি ছয় মাস চলে। কিন্তু ভাবীপু বুঝে গেছে ব্যাপার। জিজ্ঞেস করায় সত্যি স্বীকার করে নিয়েছি। আর বানু খালা বুঝেছেন কিন্তু প্রশ্ন করে আমায় বিব্রত করেন নাই। আমার মা থাকলে যেমন খেয়াল রাখতেন তার চেয়েও বেশি যত্ন করছেন। বাবা ভাইয়া ছেলে মানুষ বলে কয় মাস হিসেব জানতে চায়নি। বই পড়ে আমার দিন কেটে যায়। একাকী হওয়ার আগেই ভাবীপু এসে বসে পরে। যদিও একা থাকতেই বেশ লাগে। তবে শরীর আমার দিন দিন খারাপ হচ্ছে ডক্টরের কাছে চেকাপ করতে গেলাম। ওজন মেপে দেখলেন সবে পয়তাল্লিশ পয়েন্ট চার কেজি। ডক্টর বকেছেন ইচ্ছে মতো। আমার ওজন কই বাচ্চার ওজন কই বলে। আমার পঞ্চাশ কেজি থাকতো সবসময় বিয়ের আগে। এখন দেখছি প্রেগ্ন্যাসির সময় কমেছে। দুশ্চিন্তা বড্ড খারাপ জিনিস। শুধু মানসিক নয় শারীরিক ভাবেও খারাপ করে দেয়।

তিনমাসের বেশি সময় আমার বাসায় এসেছি। বাবার বাসা বলছি না কারন এখন স্থায়ী ভাবে আমি এখানেই থাকবো। পেট ব্যথায় ওইদিন সহ্যের বাহিরে চলে গেছিল। আমার ভাইয়াকে কল করে বাসায় আসতে বলি। ভাইয়া আমায় ওইদিন হসপিটালে নিয়ে আসে। আমার শ্বশুর শাশুড়ী হসপিটালে এসেছিলেন। নিবিড়কে মা খবর দিয়ে এনেছিলেন। আমি পরের দিন হসপিটালে থেকে ভাইয়ার সাথে বাসায় চলে আসি। ওইদিন না বুঝলেও মা পরে বুঝতে পারেন কি হয়েছে। বাবাকে কিছু বলেন নাই আর। নিবিড় এর সাথে আমি কথাও বলিনি। ওর দিকে ফিরেও তাকাই নাই। জানি ও সামনেও আসবে না আমার। এই তিন মাসে নিবিড় এর আমার কোনো কন্টাক্ট ও হয়নি। মাঝে একবার বাবা মা আমায় নিতে আসেন। স্বামী স্ত্রীর মাঝে ঝগড়া হয় বুঝিয়েছেন। কিন্তু আমার কথায় আমি অনড় ছিলাম। যাইনি ওই বাড়ি। বাবা ভাইয়া কেউ এ নিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করে নাই।

মায়ের সাথে বাচ্চাদের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত, কি করে বাচ্চাদের মানুষ করতে হয়, কি করে সিংগেল মাদার পৃথিবীর সাথে লড়াই করে বেঁচে থাকে, পড়ালেখা আসল নয় সন্তানদের মানুষের মত মানুষ করে গড়ে তুলতে হয় কিভাবে এইসব জাতীয় বই পড়া হয় আমার। বই পড়ায় বিরক্ত চলে এলে আজগুবি চিন্তা ভাবনা মাথায় খেলা করে। আমার জীবন পুরো বাংলা সিনেমার মতো। দুই ভাইয়ের এক নায়িকা। এসব মুভি ছোট বেলায় অনেক দেখতাম আর ডিরেক্টরদের গালি দিতাম। ভাই দুনিয়ায় মেয়ে কম পরছে? এক মেয়ের পিছে কি পায়? ফাইজলামির জায়গা খুঁজে পায় না। শেষে কিনা এই ছিল আমার কপালে? সবচেয়ে হাস্যকর ব্যপার হলো দেবর বলে তার ভাইকে ছেড়ে তার সাথে সংসার করতে। আবার আমার গুনধর জামাই বলে তারে ছাইড়া দেবরের কাছে যাইতে। মানে কি ভাই? আমাকে সরকারি সম্পত্তি লাগে? এক ভাই ইউস করছেন এখন অন্যভাইয়ের পালা। জীবন আমার দ্রৌপদী। আমার শ্বশুর দিব্যি ভালো শিক্ষক। কিন্তু ছেলেদের সঠিক শিক্ষা দিতে পারেন নাই। এমন ভাবনা আসতেই আবার বই নিয়ে বসি। না না আমার সন্তানকে আমার একাই মানুষ করতে হবে। সঠিক শিক্ষা দিতে হবে।

অবশ্য ডিভোর্সের কথা আমি ভাবিনি তা না। ভেবেছি। প্রেগন্যান্ট অবস্থায় ডিভোর্স নাকি হয় না। তাই ভেবেছিলাম ডেলিভারি হোক তারপর। কিন্তু বই পড়ে বুঝেছি এতে বাচ্চার মনের উপর খুব প্রেসার পরে। তবে একসাথে থাকবো না। এখন চিন্তা টা একটু ভিন্ন। ডিভোর্স না সেপারেশনে থাকবো। এইটা ভালো আইডিয়া। পুরুষ মানুষ মানেই খারাপ। ছাইড়া দিলেই আবার বিয়ে বসবে। আমি সুখে থাকবো না তোকেও থাকতে দিবো না। সেপারেশনে তোর দুই নম্বর বিয়ে বন্ধ। এইসব চিন্তা করলে আমার পেটে থেকে বাচ্চা যে কি শিখবে খোদা মালুম। এই ভাবতেই দরজায় নক করলো কেউ। ভাবীপু বা বানু খালা হবেন ভেবে দরজার লক খুলে না দেখেই ভেতরে প্রবেশ করতে দিয়ে নিজে আবার খাটের দিকে এগিয়ে গেলাম। পেছন থেকে একটা কন্ঠস্বর ভেসে উঠলো। চমকে উঠলাম।

চলছে……..

#তোমার_প্রেমে_মাতাল
#লেখিকা_মায়াবিনী (ছদ্মনাম)
#পর্ব_৪১
ভাবী ডেকে উঠা একটা শব্দোচ্চারণের কন্ঠস্বর শুনে থমকে দাঁড়িয়েছি। দরজায় কে এসেছে না জেনেই ঢুকতে দিয়েছি। তবে কন্ঠস্বর পরিচিত। পেছন ফিরে তাকাতেই দেখি নীরব। তিন মাস রাগ পায়নি আমার। এখন দেখি সব জমানো রাগগুলো একসাথে এর উপর ঢেলে দিবো। কিন্তু হটাৎ মনে পরে গেল আমায় কি বলে ডেকেছে নীরব?

-ভাবী দেবরকে কি রুমে আসতে বলবে না?

নীরবের দিকে তাকিয়ে আছি বহুক্ষণ। পরে রুমে ঢুকতে না বলে বিরক্ত হয়ে বললাম,

-আমার কাছে কি চিন্তা করে এসেছো?

-একটা আবদার নিয়ে এসেছি। (রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলল)

-কি আবদার?(বিস্মিত চোখে)

-বাসায় ফিরে আসো ভাবী। ভাইয়া ভালো নেই।

এখনো রাগে ফেটেই পরলাম। মনে হচ্ছে একে আরো কয়েক ঘা লাগিয়ে দেই।

-তোমার বলা শেষ হয়ে গেলে চলে যেতে পারো।

-আমাকে তুমি চেনো না? আমি না তোমার বন্ধু? মা, ভাইয়া, বাবা কেউ আমাকে মায়া ডাক ডাকার থেকে থামাতে পারে নাই। আর আজ নিজ থেকেই ভাবী ডেকেছি তোমায়। নিজেকে খুব ছোট লাগছে। আয়না দেখতে পারছি না। আমার জন্য তোমার আর ভাইয়ার এতদিনের সম্পর্কে চির ধরেছে। আমি মানতে পারছি না। তুমি জানো ভাইয়ার কি অবস্থা। সে না পারছে তোমার সাথে যোগাযোগ করতে না পারছে কোনোভাবে তোমায় ছেড়ে বেঁচে থাকতে। ভাববে এতদিন পর কেন এসেছি তোমার কাছে। না পেরে এসেছি। এই তিন মাসেও ভাইয়া বাসা থেকে বের হয়নি। সারাদিন রুমে থাকে মাঝে মাঝে ছাঁদে যায়। সারাদিন একবেলা খায় কিনা সন্দেহ। অফিস পর্যন্ত যায় না। আজকে কি করেছে জানো? বিজনেস বিক্রি করে দিবে সে।

-What?

-হ্যা ঠিকই শুনেছো। ভাইয়া মায়ের কাছে চিৎকার করে কাঁদছিল আর বলছিল যেহেতু আমার কিছুই নেই তবে এসব কার জন্য করবো। যার জন্য করেছিলাম বা আরো করতে চেয়েছিলাম সে আমার জীবন থেকে চলে গেছে তাই এসব ও রাখবো না। ভাইয়াকে আমি বুঝ হওয়ার পর কাঁদতে দেখিনি কোনোদিন। কালকে দিয়ে দুইবার দেখলাম এমন।

নীরবের কথায় ওর দিকে ফিরে তাকালাম। জিজ্ঞাসু দৃষ্টি দেখেই নীরব মৃদু হাসলো।

-তোমাদের বিয়ে ঠিক হওয়ার পূর্বে ওইদিন বিকালে আমি বাসা থেকে ফিরে নিজের রুমে যাচ্ছিলাম। ভাইয়ার রুমে কথার শব্দ পেয়ে উঁকি দিতে দেখি ভাইয়া মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে। বলছিল, ওকে ছাড়া আমি বাঁচবো না মা। আমার কাছে থেকে কেড়ে নিও না। বুঝেছিলাম মা বেঁকে বসে আছেন। কোনোভাবেই ভাইয়ার পছন্দের মেয়ের সাথে মা বিয়ে দিতে চান না। আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছিল। ভাইয়াকে এমন করতে দেখিনি আগে। পরের দিন বিয়ে ঠিক হয়ে গেলে আমিও সবার সাথে এলাম তোমার বাসায়। পাত্রী তুমি দেখে ভুলেই গেছিলাম ভাইয়ার কষ্ট। কালকে যখন দেখলাম ভাইয়াকে এভাবে। তখন এর চেয়ে খারাপ অনুভব কোনোদিন করিনি। আজকে না ছুটে এসে পারলাম না। ভাইয়া আমার জন্য তোমার কাছে আসছে না। তুমি এই ভুল ভেঙে দাও ভাবী। প্লিজ ভাবী। আমার ভাই এভাবে বেঁচে থাকতে পারবে না। তুমি ওর সন্তানকে দূরে রেখো না ভাইয়া থেকে। আমি বাসায় থাকলে তোমার সমস্যা হলে আমি তোমায় একটা খরব দিচ্ছি। আমি সামনের মাসে এবোর্ড চলে যাচ্ছি। সব কনফার্ম হয়ে গেছে। মায়া ভাবী চলে এসো ভাইয়ার কাছে আমার ভাইপো বা ভাইজিকে নিয়ে। মা বাবা ভীষন কষ্ট পাচ্ছেন বাড়ির বউ এবং বংশধরকে দূরে দেখে। আমাদের বাড়ি প্রাণ নেই। ফিরে এসো মায়াভাবী।

আমি ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। চোখ দিয়ে অনবরত পানি পরছে। নিবিড় এর চোখে পানি আমিও একদিন দেখেছি। তা ছিল ওর সন্তান আসার খবরে। এই ছেলের জীবন জুড়ে কেবল আমার অস্তিত্ব। সবকিছু আমাকে ঘিরে। আমাদের ভালোবাসার চিহ্ন আমার কাছে। কি করে আমার ভালোবাসার বর বেঁচে থাকবে! নীরব আমার কাছে কোনো উত্তর আর আশা করেনি। বেরিয়ে চলে গেছে বহুআগে। যাওয়ার আগে বলে গেছে,

-ভাইয়া তোমাকে ভীষণ ভালোবাসে ভাবী ভীষণ। ওর মতো তোমায় আর কেউ ভালোবাসতে পারে না।

নির্ঘুম রাত কাটানো বড় কষ্ট। বেশ কয়েকমাস ধরে এভাবেই কাটছে রাত। কিন্তু আজকেরটা যেন বেশি কষ্টদায়ক। এতদিন ভাবছিলাম নিবিড় কেন ঠকিয়ে আমায় জিতে নিয়েছে। যদিও আমি জানি নিবিড় আমার জীবনে না এলে নীরবকে আমি কোনোদিন গ্রহণ করতাম না। ভালোবাসা এভাবেই হয়ে যায় না। নিবিড়কে প্রথম দেখায় ভালোবেসেছি। এই অনুভূতি সেই প্রথম দিনের মতোই আছে। নিবিড় এর কি করে আমায় পেয়েছে, কি অনাচার করেছে এতে আমি রাগ করিনি মন খারাপ করেছি। কিন্তু নিবিড়ের বলা শেষ কথা আমায় ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে। এই কথা আমি ভুলতেই পারছিলাম না। তাই নিবিড় এর কথা ভাবতেও পারছিলাম না। ক্ষমা করা তো দূরের কথা। কিন্তু আজ নীরব যা বলে গেল তাতে আমি এখন নিজেকে ক্ষমা করতে পারছি না। কতোটা কষ্ট হলে ও আমায় শেষে ওই কথা বলেছিল। আর আমি বোকা ওর এই কষ্ট দেখতেই পাইনি?

রাত কি করে পার হলো জানি না। ঘুমিয়েছি কখন তাও বলতে পারবো না। বেলা সাড়ে এগারোটা বাজে প্রায়। ফ্রেশ হয়ে নাস্তা না করেই ছাঁদে যেতে খুব ইচ্ছে হলো। আমার ঘর থেকে নিবিড় এর দেওয়া সেই ঘুড়ি হাতে নিয়ে রওনা হলাম। রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছি। আজ বিকালে আবার ছাঁদে উঠবো। আমি জানি আমার মাতাল প্রেমিক ঠিক এখানে আসবে। সাড়ে পাঁচ বছর আগের দিনটি মনে পড়ছে। কি সুন্দর করে আমায় প্রেম নিবেদন করছিল। ওইটা না ছিল চিঠি, না ছিল আবেদন পত্র। তা ছিল লিখিত দলিল। সেদিন থেকে আমি শুধুই তাহার। আমাকে যেতে হবে নিবিড় এর কাছে। অভিমান আজ আমার ভাঙানোর পালা। এ যে আমায় ভাঙাতেই হবে। মাথা কিছুটা ঘুরিয়ে উঠতে বুঝলাম নিচে যেতে হবে। বাবু চায় আম্মু যেন তাড়াতাড়ি বাবার কাছে ছুটে চলে যায়। সাবধানে নিচে আসছিলাম হটাৎ গা গুলিয়ে উঠছে। তিন তলার কোনো ফ্ল্যাটে ভাত রান্না হচ্ছে। আমার আবার কিছুদিন ধরে গরম ভাতের গন্ধ সহ্য হয় না। ব্যস পেয়ে গেল বমি। সিড়িতে করে ফেললে অনেক সমস্যা হবে। তাই খানিক দ্রুত নেমে পরছিলাম। শেষভাগের সিড়িতে পরে গেলাম। সারা শরীর অবশ হয়ে যাচ্ছে। উপলব্ধি করার ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। আশেপাশে সবটা অন্ধকার লাগছে। পেটে হাত দিয়ে নিবিড় বলে চিৎকার দিলাম। তারপর পুরাটায় অন্ধকার ছেয়ে গেল।

———————————-

আজকাল দোলনার পাশে নিচে বসে থেকে সময় কেটে যায়। সিগারেটের ধোঁয়া ফুকানো রোজ সময় বেঁধে চলছে। ইদানীং নতুন এক ইচ্ছে জেগেছে। এই ধোঁয়া মায়াবিনী মুখে দিকে ছেড়ে দিতে পারতাম। তাই এখানে বসে থাকি। কল্পনা করি মায়াবিনী দোলনায় বসে আছে। আমি ওর পায়ের কাছে বসে ওর মুখে ছুড়ে মারছি বিষাক্ত ধোঁয়া। মেয়েটা কি রাগ করবে? মনে হয় না। বড় বড় চোখ করে ডান ভ্রু কিঞ্চিত উঁচু করে তাকিয়ে থাকবে। যাতে থাকবে শাসন ও একরাশ বিরক্তি মুখের ছাপ। আর বলবে, “অসভ্য”। তবে আমার ভীষণ আনন্দ হবে। উচ্ছাসের সাথে আবার টেনে নিয়ে ধোঁয়া ছেড়ে দিবো। পরেরবার অবশ্য আমি ছাড়তে পারবো না ওর মুখের উপর। তার আগেই ওর নরম হাতের একঘুষি আমার পিঠে পরবে। সাথে শাস্তি হিসেবে আমি ওর গাল চেপে ধরে ঠোঁটে ঠোঁট বসিয়ে মুখের সমস্ত ধোঁয়া ওকে ট্রান্সফার করে দিবো। কেশে উঠবে। ওই একই বেগে সিগারেট বারান্দা দিয়ে অনেক দূরে ফেলে দিয়ে আমার কলার টেনে থুতনিতে এক কামড় বসিয়ে হনহন করে ঘরে ঢুকে যাবে। তবে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বলবে, “বেহায়া কোথাকার”। আমি তো চাই আমার এই বাজে স্বভাব মায়াবিনী আবার ছাড়িয়ে দিক। এভাবে হাত থেকে সিগারেটের প্যাকেট ফেলে দিক। নিলজ্জ, মাথামোটা, অসহ্যকর বলে বকে দিক আমায়। প্রতি মুহূর্তে আমি বুঝতে পারি মায়াবিনী আমায় বকছে। এ যে মনের টান। প্রতিরাতে হুবহু মায়াবিনীর মত দেখতে এক ছোট্ট মেয়ে এসে ডেকে বলে “বাবা আসো আমার আর আম্মুর কাছে চলে আসো।” ধপ করে ঘুম ভেঙে যায়। এই যন্ত্রণা নেওয়া দিন দিন কষ্টের হয়ে উঠেছে। এসব চিন্তার মাঝে বুকে কেমন ধুকধুকানি শুরু হয়ে গেল। যেন মনে হচ্ছে যা হচ্ছে তা খারাপ। চোখ বন্ধ করে নিলাম। তখন আবার এক অদ্ভুত ঘটনার মুখোমুখি হলাম। একটা ছোট বাচ্চার গলায় আমায় কানে কানে বলল,

-বাবা তুমি আজও কি আসবে না? তুমি যদি না আসো তবে আমি চলে যাবো।

চোখ খুলে ফেললাম একঝটকায়। আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম কেউ নেই তো। কিন্তু এক অজানা আশংকায় আমার দম বন্ধ হয়ে এলো। মায়াবিনী? মায়াবিনী ভালো আছে তো? আমার সন্তান? সে কেমন আছে? রুমে থাকা দূর্বিষহ হয়ে উঠলো কয়েক মুহুর্তেই। একটা শার্ট গায়ে জড়িয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসতেই দেখি মা চিৎকার করে উঠলেন। যতটা নিজেকে থামিয়ে রেখেছিলাম তা দুমড়ে মুচড়ে দলা পাকিয়ে গলায় আঁটকে গেল। কান্নার ফলে কথা বলতে পারছেন না মা। এর মাঝেও শুনে নিলাম মায়াবিনী সিড়ি থেকে পরে গেছে।

——————————–

প্রচন্ড গরমে ঘেমে ভিজে যাই সবটায়। সারাদিনে তিন থেকে চারবার শুধু জামা পাল্টাতে হয়। এসি সহ্য হয় না। গলা ব্যথা হয়ে যায়। তাই গরমে ভিজে একাকার হয়ে যাই। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে থাকে। কিন্তু ঠান্ডা পানি খাওয়া একদম নিষেধ। তাও লুকিয়ে খেয়ে ফেলেছি কয়েকদিন। কিন্তু এর ফলাফল বাসার সমস্ত ঠান্ডা পানির বোতল ফেলে দিয়েছে। আমার জন্য এখন অন্যরা কষ্ট পাচ্ছে। কি হয়েছে কে জানে। আমার পাগলামি দিন দিন বেড়েই চলেছে। ওইদিন মা আমার জন্য ভাত মাখিয়ে নিয়ে এলেন খাইয়ে দিবে বলে। আমি মায়ের হাতে থেকে বাটি নিয়ে মাটিতে ফেলে দিলাম। মা বকবে ভাবলাম। বরং এমন কিছু ঘটলো না। মা নিচে বসে খাবার জড়ো করে নিয়ে চলে গেলেন। খালা এসে ফ্লোর মুছে দিলেন। কিন্তু রাগ এবার আমার পেল। আমি খাবার ফেলে দিয়েছি অথচ কেউ কিছু বলল না কেন। এই বলে কয়েক ঘন্টা জেদ ধরে বসে থাকায় আমায় কেউ কিছুই খাওয়াতে পারলো না। শেষে নিবিড় এসে কতোভাবে বুঝিয়ে শুনিয়ে খাইয়ে দিলো। খাওয়ার পর বুঝতে পারলাম আমায় বাচ্চাদের মতো ভুলিয়ে খাইয়ে দিয়েছে। তাই রাগ করে গলায় আঙ্গুল ঢুকিয়ে বমি করে দিবো বলে ভয় দেখিয়েছি। এখন দেখ কেমন লাগে?

——————————-

শশী ফোন দিয়ে জানিয়ে দিয়েছিল মায়াবিনীকে ওরা সিটি হসপিটালে নিয়ে গেছে। সৃষ্টিকর্তার কাছে ভিক্ষা চেয়েছি মায়াবিনীকে সুস্থ রেখো। আমার বাচ্চার যেন কিছু না হয়। বানু খালা এমনি খুব ভালো মানুষ কিন্তু মাঝে মাঝে অনেক বেশি কথা বলেন। হসপিটালের করিডরের ফ্লোরে বসে চিৎকার করে এমনভাবে কান্না জুড়িয়ে দিলেন যে সবাই হতভম্ব হয়ে গেলেন। শুধু কান্নাতে উনি ক্ষ্যামা দেন নাই। বিলাপ ও বকছেন। যেন উনি জানেন মায়াবিনীর মিসকারেজ হয়েই গেছে। মায়ের বকুনিতে খালা কিছুটা থামলেন। সংসারবিহীন এক মহিলা এতো বছর শুধু মায়াবীকে বুকে জড়িয়ে বেঁচে আছেন। মায়ের বুকে কেমন লাগে জানি না তবে বাবা মায়ের ভিতরের কষ্ট বুঝি অনেকটা একই। শুধু প্রকাশ ভিন্ন। আমার সন্তানকে আমি না দেখেই যেমন ছটফট করছি ওর চিন্তায়। মনে হচ্ছে আমার জান ভেতর থেকে কেউ বের করে ফেলছে। তাই বানু খালার কষ্ট আমিও অনুভব করছি। ফ্লোর থেকে উনাকে তুলে বুকে জড়িয়ে ধরলাম। ডক্টর ওটি থেকে বেরিয়ে জানালেন আমার সন্তান সম্পুর্ন সুস্থ আছে। সবাই সৃষ্টিকর্তার কাছে শুকরিয়া আদায় করছে। আমি কিছুটা চিন্তামুক্ত হলেও মায়াবিনীর জন্য অস্থির হয়েই রইলাম। ডক্টর নিজেই বললেন,

-পেশেন্টের জীবন এখনো রিস্কে আছে। তবে ক্ষতি হয়নি কারো। আরো সাবধানে রাখতে হবে। কিছুটা ব্লিডিং হয়ে গেছে। খাবারের একটা চার্ট দিয়ে দিচ্ছি খেয়াল রাখবেন। আমি তো ওর পার্সোনাল ডক্টর। কি করে পরে গেছিলো? আর ওর ওজন দিন দিন কমছেই। চোখমুখ কেমন ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। ম্যান্টালি কিছু প্রেসারে আছে। অনেক বেশি খেয়াল রাখতে হবে ওর।

আমার ওয়াইফ আর বেবি সুস্থ আছে এর চেয়ে বেশি কিছু আমি আশা করি না। বাকি যা যা সমস্যা হয়েছে সব আমি ঠিক করে দিবো। সেন্স আসার পর আমরা বাসায় নিতে পারবো জেনে মায়াবিনীকে একবার বলাতেই আমার সাথে বাসায় আসতে রাজি হয়ে গেল। মেয়েটা আমার বলার ও প্রয়োজনবোধ করেনি। নিজেই বলল,

-তোর বাসা ওইটা? না তো। আমার শ্বশুরবাড়ি। আমার নিজের বাড়ি। তুই জিজ্ঞেস করার কে?

এই মেয়েটা আসলেই অদ্ভুত চরিত্রের অধিকারিণী। কখন কি বলে কখন কি করে বোঝা মুশকিল। কিন্তু খুশির খবর হলো আমার মায়াবিনী ইজ ব্যাক।

মায়াবিনীকে বাসায় আনার পর ওর আচরনে উদ্ভব কিছু পরিবর্তন দেখা গেছে। আমাদের মাঝে যে কিছু নিয়ে সমস্যা হয়েছে তা ও বেমালুম ভুলে গেছে। মায়াবিনীর আচরণ সম্পুর্ন স্বাভাবিক। যেন আমার আগের প্রেমিকা। সারাদিন ভয়ে তরস্ত হয়ে থাকি আমি আর পুরো পরিবার। এই কখন কোনটায় যে ভুল ধরে ফেলে। তুই তুকারি করে বকাঝকা তো খুবই নরমাল। কিছু বই পড়ে এবং ডক্টরের মাধ্যমে জানলাম এটা ওর মুড সুইং। প্রেগ্ন্যাসি অবস্থায় নারীদের এসব আচরন খুব সাধারণ। তবে আস্তে আস্তে বোঝতে পারছি মায়াবিনী মোটেও স্বাভাবিক নয়। এগুলোর ওর বেলায় অনেক বেশি হচ্ছে। যেমন এই তো সেদিনের কথা নীরবকে এ রুমে ঢুকতেই দিচ্ছিল না কারন আর কিছুই না নীরব আমাদের রুমে এলেই নাকি আমার বাচ্চা ওকে পেটে লাত্থি দেয়। এগুলো কোনো কথা? আবার মায়াবিনী ড্রয়িং রুমে সোফায় বসে থাকে যখন, তখন নীরবকে সোফায় বসতে দেয় না। ফ্লোরে বসিয়ে রাখে। নীরব যে ওই সময় নিজের রুমে চলে আসবে তার ও সুযোগ হয় না। নিজেই বলে,

-তোর মায়া ভাবী বলছে মাটিতে বসে থাকবি। একপা ও নড়বি না।

বেচারা ভাই আমার। মাথা নিচু করে এভাবেই বসে থাকে। আবার মায়ের হাতের রান্না খেয়ে প্রায় বলে দেয়,

-এসব কি রান্না করো মা? খুব বাজে হয়েছে খেতে। এখন তোমাকে আর রাঁধতে হবে না। আমি কালকে থেকে রাঁধব।

মা আচ্ছা বলে আজকে কোনোরকমে খেয়ে নিতে বলেন। পরেরদিন মায়াবিনী ভুলে যায় মাকে কিছু বলেছিল। বাবা ও এসবের শিকার হচ্ছেন মাঝে মাঝে। হটাৎ বাবা মায়ের রুমে ঢুকে বাবাকে মায়াবিনী বলে,

-বাবা আপনি শিক্ষক হিসেবে খুবই ভালো। কিন্তু আপনার দুই ছেলের শিক্ষার বড় অভাব।

বাবা রাগ না করে সাথে তাল মেলান। জানতে চান কি করলে এখন আমাদের সঠিক শিক্ষা দেওয়া যাবে। মায়াবিনী বাবার কাছে থেকে সন্ধি বেত নিয়ে আসে। নিজেই নাকি আমাকে আর আমার ভাইকে মেরে মেরে সোজা করবে?‍♂️। রহিমা খালা আর মজিদ খালুর ও নিস্তার নেই এসবে। খালাকে সারাদিনে রুমে কয়েকশো বার ডেকে ফেলে। প্রতিবার ডাকার পর খাবারের মেন্যু চেঞ্জ করে রান্নাঘরে পাঠিয়ে দেয়। পাঠানোর আগে এও বলে দেয়,

-কুটনামী কম করবা খালা!

খালা মোটেও রাগ করেন না। হাসতে হাসতে আচ্ছা বৌমা বলে চলে যান। খালুকে প্রতিদিন সকালে গেইট থেকে উপরে এনে জিজ্ঞেস করে,

-আজকে কয়টা চোর ধরা পরছে খালু?

প্রথমদিকে খালু একটাও না বললে মায়াবিনী ভীষণ রেগে যেত। বলতো,

-তুমি ধরতেও পারবা না। নিবিড় যে রোজ রাতে ওয়াল টপকে আমার কাছে যেত তুমি জানতেই না। চোর ধরবা কেমনে?

আমার এতো বোল খুলে যাচ্ছে বলে খালুকে শিখিয়ে দেওয়ায় এখন রোজ দুই-তিন চোর ধরে বলে মায়াবিনীকে। মায়াবিনী বাহ বাহ দিয়ে নিচে পাঠিয়ে দেয়।

ডক্টরের কাছে দেখানোর পর বললেন কিছু মেয়েদের প্রেগ্ন্যাসির সময় এমন হয়। সুস্থ মস্তিষ্ক কাজ করে না সবসময়। এই স্বাভাবিক এই অস্বাভাবিক আচরন করে। স্বাভাবিকভাবে পাগল বললে ভুল বলবে লোকে। শর্ট টাইম ম্যামোরি লস বললেও ভুল বলবে। ডেলিভারি হয়ে গেলে এই রোগী আবার আগের মতো হয়ে যায়। এই রোগের কোনো মেডিসিন নেই। ডক্টর পরামর্শ দিলেন শুধু সাবধানে রাখতে। বিবেক বুদ্ধি সুস্থ মানুষের মতো না থাকায় নিজের বা নিজের বাচ্চার ক্ষতি করে ফেলে এই অবস্থায় কিছু নারী। তাই রাতে ঘুমানোর পর কেউ না কেউ রাত জেগে পাহারা দেয় যেন। এসবের জন্য আবার অফিস যাওয়া বাদ দিয়ে দিলাম। ল্যাপটপে মিটিং সেরে নেই। সারাদিন চোখে চোখেই রাখছি। তবুও কিছু না কিছু হয়েই যায়। ওইদিন ইমার্জেন্সি দুই ঘন্টার জন্য অফিস গেলাম। আমি না খেতে দিয়ে মা খেতে দিয়েছে বলে খাবার ফেলে দিয়েছে। না বলে গেলাম কেন বলে আমাকে এতগুলো কামড় দিয়েছে। আগে দুষ্টামি করে দিতো আমার ব্যথা করবে এমন জোরে কখনো দিতো না। আর এখন শরীরে যত শক্তি আছে তা দিয়ে কামড় দেয়। সব হাসি মুখে মেনে নেই। কারন আমার জীবন আমি ফিরে পেয়েছি। আমার মায়াবিনীকে আমি পেয়েছি। আমার সন্তানকে আমার কাছে রাখতে পারছি। এতটা পেয়ে আমি ধন্য। আর কিছু আমি আশা করি না।

সবকিছু এভাবে চললেও কিছু ব্যপার মায়াবিনী সত্যি বেশি করে ফেলে। মাঝে মাঝে মাঝরাত্রে উঠে আমার কোলে উঠে বসে থাকে। বারান্দায় যেতে জেদ করে। কোলে নিয়ে হাঁটতে বলে আরো কত কি। সমস্যা এখানেও না। বারান্দায় বসেই নিজের পরা পোশাক খোলা শুরু করে দেয়। আবদার চুড়ান্ত প্রেম চাই। আদর চাই। এমন ভাবে আকুতি মিনতি করে যেন ওকে ফিরিয়ে দিলে খুব কষ্ট পাবে। অথচ ওই সময় নিজেকে সংবরণ করা কত কষ্ট হয়ে যায় তা কেবল আমি জানি। এটাও মেনে নেই। কিন্তু সকালে উঠে রাতের কথা জিজ্ঞেস করলে বলে,

-ছিহ নিবিড় আমি কেন এসব আবদার করব? আমি কি নিলজ্জ নাকি তোমার মতো। রাতে তো আমি বিভোর হয়ে ঘুমিয়েছি। আহহ তুমি আমার ঘুমের সুযোগ নাওনি তো?

অসহায় মুখ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া আমার কাজ থাকে না। এমনকি গোছল কখনোই একা করে না। আমাকেই করিয়ে দিতে হয়। আবার চেঞ্জ করিয়ে দিয়ে কোলে এনে বিছানায় শুইয়ে দিলে কি অভিমান তার। গাল ফুলিয়ে নিচের ঠোঁট ভেটকিয়ে বলবে,

-আমার প্রতি আর আর্কষণ নেই না? রাতে আদর ও করো না। জামা পাল্টে দেওয়ার সময় আগের মতো নেশাভরা চোখে তাকিয়েও থাকো না। এখন আর আমায় ভাল্লাগেনা নাহ?

এই রাগ মাঝে মাঝে এতদূর যায় কি বলবো। আমার নাকি বাহিরে পরকীয়া আছে। কেমন লাগে তখন? কার জন্য এতকিছু সহ্য করছি? নিজেই এখনো বাচ্চা। আমার বাচ্চাকে কি করে যে লালন করবে খোদা মালুম। এভাবেই দিন কাটছিল আমাদের। সবাই মোটামুটি অভ্যস্ত হয়ে গেল। এর মাঝে মায়াবিনীর নয় মাস পেরিয়ে গেছে। ডেলিভারীর সময় এসে গেছে। তখন ঘটলো আরেক বিপত্তি।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here