তোমার_প্রেমে_মাতাল,পর্ব_৭

0
2209

তোমার_প্রেমে_মাতাল,পর্ব_৭
লেখিকা_মায়াবিনী (ছদ্মনাম)

হাওয়াতে ভেসে বেড়াচ্ছি আমি।ওড়না উড়েই চলেছে পাখির ডানার মতো। তবে কি আমি পাখি? বাবা ভাইয়া অনেক স্বাধীনতা দিয়েছে। কিন্তু এমন ডানা মেলে উড়তে তো কখনো ইচ্ছে হয়নি। নিবিড় এর মাঝে এমন কি আছে যা আমাকে আমায় চেনায়? নতুন নতুন কতো কি যে ইচ্ছে জেগেছে..

আচমকা আমি নিবিড়কে জড়িয়ে ধরলাম পিছন থেকে। অসভ্য ছেলে!

-আমি জড়িয়ে ধরছিলাম ওইদিন। আজকে তোমাকে সুযোগ করে দিলাম।
-এ্যাঁ?
-এ্যাঁ না হ্যা?। ছাড়বে নাকি আরো কিছুক্ষণ ধরে রাখবে?
তাড়াতাড়ি ওকে ছেড়ে বাইক থেকে নামলাম।

আমি নীচে নেমে যেয়ে দেখি নিবিড় বাইককে চড়ে বসে আছে।তাকিয়ে ভুবন ভোলানো হাসি দিল। আমাকে দেখে না। আমি তার বলা কথার মানে বুঝতে পেরে সাদা পরেছি তাই?।ইশারায় বসতে বলল পিছনে।বুঝলাম আমার বাসার সামনে দাড়িয়ে সে কথা বলতে চায় না।আমায় সমস্যায় ফেলতে চায় না ও। একপাশে পা দিয়ে বসে পরলাম।ওর সাদা শার্ট খামচে ধরেই বসেছিলাম। কোথায় যাচ্ছি জানি না। তবে একটু সামনে এগিয়ে বলল,
-ওইদিন তোমার সমস্যা হতো দুইপাশে পা দিয়ে বসলে, তাই একপাশে পা দিয়ে বসতে বলছিলাম। আজকে দুপাশে পা দিয়ে বসতে পারো।

-উঁহু। এভাবে বসতে কমফোর্ট। ওইদিনের বলার কারন বুঝেছিলাম।(মৃদু হেসে)

রাস্তায় আর কোনো কথা হয়নি। হটাৎ ব্রেক কষে আমাকে এভাবে হেনস্তা করার কি মানে বুঝলাম না?।

আমরা একটা পার্কে নামলাম।নিবিড় আগে আগে যাচ্ছে।পিছনে আমি।একটা বেঞ্চে বসল।আমাকেও ইশারায় বসতে বলল। আমি আশপাশ ভালোভাবে দেখলাম। কলেজে থাকতে একবার এসেছিলাম।কেন এখানে আনলো।আমাকে সে একবারই তাকিয়ে দেখছে। তখনই ওই হাসি দিয়ে দেখিয়েছিল আমায়।এখানে এসেও তাকায়নি একবারও। সাদা পরতে বলছো অথচ দেখছো না।বিরক্তিকর।

-মনে মনে গালি দিচ্ছো কেন? (সোজা সামনের দিকে তাকিয়ে বললাম)

-আমার মন চাচ্ছে তাই?।

-কলেজে থাকতে এখানে এসে খুব আড্ডা দিতাম।শশী আর শিমুল আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল।ওরাও থাকতো আমার সাথে।

(মেয়ে নাকি তার বেস্ট ফ্রেন্ড। উফফ বিরক্তিকর)
-ছিল বলছেন কেন?

-বেস্ট ফ্রেন্ড মানে জীবনের সবকিছু শেয়ার করা।এতোদিন সব কিছু ওদের বলেছি।তুমি আমার জীবনে আসার পর আর বলা হয়নি ওদের কিছু।

-কেন?(অবাক হয়ে)

-প্রেমিকা মানে গোপনীয়তা। তাকে মুক্ত করে সবাইকে দেখাতে নেই। যত গোপনে থাকবে ততো সৌন্দর্য ফুটবে।

আমি অবাক হয়ে তাকে শুনেই চলেছি।

-আমি জীবনে যেখানে যেখানে গিয়েছি আর যাব।ওই সবখানে তোমাকে নিয়ে যাব।কেন জানো? দ্বিতীয়বার ওখানে গেলে যেন আমি তোমায় পকেটে নিয়ে যেতে পারি।ওখানে পৌছিয়ে পকেট থেকে বের করে ছেড়ে দিব। আগেরবার এসে তুমি যেখানে বসেছিলে, ছুঁয়েছিলে। সব আমার চোখের সামনে ভাসবে।মনে হবে তুমি আমার সাথেই আছো।মিশে আছো।

আমি বিস্ময় চোখে তার দিকে তাকিয়ে শুনেই যাচ্ছি। সে সোজা সামনের দিকে তাকিয়ে বলছে।হটাৎ হটাৎ আমার দিকে তাকাচ্ছে।কিছুক্ষণ থেমে আবার বলা শুরু করল নিবিড়।

-আমাদের মাঝে সম্পর্ক হবে বন্ধুত্বের মতো। কিন্তু আমরা মোটেও বন্ধু নয়। তুমি যেকোনো কিছু বলতে পারবে আমাকে।আমার কাছে কখনো কিছু লুকাবে না মায়াবিনী। কখনো কিছু বলতে না পারলে সময়ের উপর ছেড়ে দিবে। কিন্তু মিথ্যে বলবে না। যদি তোমার মনে হয় আমাকে কখনো কষ্ট দিবে তোমার বলা কোনো কথা।তাহলে ভুল ভাববে।তোমার লুকানো টা আমাকে কষ্ট দিবে। তোমার না জানানো টা আমায় কষ্ট দিবে। বলে ফেললে দুই একদিন অভিমানে থাকব কিন্তু ভুলেও যাব। কিন্তু লুকালে ভুলব না।

(নিবিড় বলা শেষ করার সাথে সাথে কি মনে করে আমি হটাৎ এমন বলে বসলাম)
-আমিও কি আপনার কাছে এই একই রকম আশা করতে পারি?

-(মৃদূ হেসে) শর্ত একই থাকবে মায়াবিনী। গন্তব্যও এক।শুধু লক্ষ্য আলাদা।

-মানে?

-তুমি আমার প্রেম মায়াবিনী। শুধু প্রেম বললেও ভুল হবে। তোমার আমার ভবিষ্যত এক। তুমি আমারই হবে। আমিও তোমারই। তোমার লক্ষ্য থাকবে তুমি নিজেকে সবসময় গুছিয়ে রাখবে বাধনে রাখবে আমার কাছে। আমি জোর করে না। তোমার নিজের স্বেচ্ছায়। আমার করে রাখবে তোমাকে। কোনো কিছুর বিনিময়ে আমার থেকে সরে যাওয়ার চেষ্টাও করবে না। এটা তোমার দায়িত্ব। আর আমি জীবনে যা করব সবকিছু থাকবে তোমাকে পেতে। তুমি আছো বলেই আমি সব করব। তোমাকে পেতে যা যা করতে হবে তা করতে আমি এক পাও পিছাবো না।

(এখন সোজা আমার দিকে তাকিয়ে বলা শুরু করল।)

-এতো ভনিতা আমি করতে পারি না মায়াবিনী। এখন যা বলছি ভালো মত শুনো।আমি তোমাকে ভালোবাসি। এই ভালোবাসা আজীবন থাকবে। আমার তোমাকে চাই চাই। তুমি আমার না তো তুমি কারো না এসব কথা আমি বলি না। তুমি আমার মানে আমারই। আমার জীবনেরর একমাত্র লক্ষ্য তোমাকে অর্জন। আল্লাহর রহমতে আমার বাবা-মা সহ সবকিছু আমি পেয়েছি। তোমাকে আমি পেয়েছি। কিন্তুু তোমাকে আমার সম্পুর্নরূপে চাই।যেখানে তোমার নাম নিলে আমার নাম সাথে জড়িত থাকবে। প্রতি পদক্ষেপে আমার মনে হবে তুমি আমার ভিতর আছো। প্রতিদিন ভালোবাসি ভালোবাসি বলতে পারব না। কারন আমি তোমাকে প্রতি মিনি সেকেন্ড ভালোবাসি। কি করে বলবো এতবার ভালোবাসি তোমাকে মায়াবিনী?

এই চোখজোড়ায় অসম্ভব মায়া দেখতে পাচ্ছি। পাচ্ছি দেখতে আকুলতা নেশা প্রেম অধিকারবোধ আসক্তি। এইসব আমার। আমার জন্য।

ওইদিন আর কোনো কথা হয়নি আমাদের। চুপচাপ থেকেছি পাশাপাশি বসে।তারপর নিবিড় আমাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে চলে যায়। বিকালে টেক্সট দিয়ে বলছে,
“দেখা আজকে হয়ে গেছে বলে ছাদে আসা মিস দিবে না।এটা থেকে আমায় বঞ্চিত করো না।”

আসলেই সে পাগল। তার সাথে আমার এমন বোঝা পরার সময় যাচ্ছে। একজন আর একজনের পছন্দ-অপছন্দ ভালো লাগা মন খারাপের কারন সব জেনে নেয়া।ভাগাভাগি শেয়ারিং সব শিখে ফেলছি দুজন। আমাকে ছ’মাস পড়তে বলছেন উনি।এডমিশন টেস্ট এ কোনো ফাকি নাকি দেওয়া যাবে না।ভবিষ্যৎ নিয়ে বিশাল বড় বক্তিতা দিয়েছেন। তাই এখন বাইরে যেয়ে দেখা সাক্ষাৎটা ১৫ দিনে একদিন হয়।এভাবেই চলছে আমাদের দিন গুলো।

মাঝে আমি জিজ্ঞেস করেছি অসভ্য লোকটাকে, আমাকে কেন সে মায়াবিনী ডাকে? তার উত্তর ছিল,
“তুমি যেদিন আমার চোখ থমকে দিয়েছিলে, ওই মুহুর্তে আমার মনে কেউ বলে দিয়েছিল মায়াবিনী সে, নজর তো কাড়বেই।ব্যস আর কিছু আমি ভাবিনি।মায়াবিনীই তুমি আমার। যেদিন তোমার খোঁজ পাই সেদিন জানতে পারি তুমি মায়াবী। আমার শশুর বড্ড ভালো মানুষ। আমার প্রেমিকার সঠিক নাম রেখেছেন।”

হেসেই আমি শেষ। ছেলেটা শুধু অসভ্যই নয় পাগল ও বটে♥️।

অন্য একটা কথা বেশ কয়েকদিন জিজ্ঞেস করেছি। আসলে এটা কিউরিওসিটি। আমার খোঁজ সে কি করে পেল।কিন্তু সে বলছে বাসর রাতে এটা বলবে।বাকি আরো কিছু বলতে নিলেই দুষ্ট কথা শুরু করে দেয়?।

নীরব একদিন আমায় ফোন দিয়ে দেখা করতে বলল। অনেকদিন কথা হয়না।ওর রেজাল্ট ডিভিশন 9th. তারজন্য ট্রিট দেবে। আমি ওর একমাত্র বন্ধু। কি করে না করব? যাওয়ার আগে স্বভাবতই নিবিড়কে বললাম,
-আমার দেবর ট্রিট দিবে রেজাল্টের।আমি বের হব।
-কি? কার সাথে?
-নীরবের সাথে।
-না।
-মানে?
-তুমি যাবে না।
-কি বলছেন? যাব না কেন?
-প্লিজ মায়াবিনী। যেয়ো না।
-কেন যাব না বলেন।
-কেন এর কোনো উত্তর হয় না।তুমি যাবে না মানে যাবে না।এইটা আমার শেষ কথা।
-শো..
ফোনটা রেখে দিয়েছে নিবিড়।

আমি নীরবকে কল করে বলি ইমার্জেন্সি আমার সমস্যা। তাই দেখা করতে পারছি না।নাম্বার ব্লক করে দিয়েছি। মেসেজ সিন করা অফ করে দিয়েছি।এরপর হলুদ রাতেই কথা হয়েছিল নীরবের সাথে।

ভার্সিটিতে চান্সও হয়ে গেল। ক্লাস ও শুরু করলাম।নিবিড় এমএসসি করছে।আর ছোট একটা জব করছে।এখন আমাদের প্রেম গভীর থেকে গভীর হচ্ছিল।কি করব? বছর তো একবার ঘুরে চলেছে।

সাদা কামিজ সালোয়ারের সাথে ভিন্ন রঙের চুনরি ওড়না পড়ে, তাকে লাল ফুলহাতা শার্ট পড়িয়ে মেলায় ঘুড়িয়েছি। লাল চুড়ি কিনে পরিয়ে দিয়েছে। রাস্তায় গুনগুন করে গেয়েছি,

“প্রতিদিন এ-গলি ও-গলিতে ঘুরঘুরি কেটে যায় সময় আসে রাত
মেয়েটা বাঁকা করে চুল বাঁধে প্রেম পড়ে দেখো ছেলেটাও পড়ে, ফুলহাতা শার্ট

এই দেখে হাসাহাসি, গানটাকে ভালবাসি
এই ভালো আছি এই স্বপ্ন আমার
কখনও বুঝিনি যে তা এটা ছিল সূচনা
আছে বাকি স্বপ্নের উপসংহার
মন, আঁধারের নীলিমায়
তোমাকেই আজ খুঁজতে চায়
জানি না (জানি না) কোথায় পাবো তোমায়?
একবার এসে দেখো আমায়”

(একটা গোপন কথা-তপু)

তার জন্মদিনে সাদা শাড়ি কালো ব্লাউজে সেজেছি। নিবিড় গাজরা কিনে মাথায় পড়িয়ে দিয়েছে। কালো পাঞ্জাবিতে তাকে আমার দেখা সবচেয়ে সুদর্শন পুরুষ লেগেছে।তারদিকে বারবার পলকহীন চোখে তাকিয়ে দেখেছি। সেদিন সারা শহর আমাদের ছিল। রিক্সায় ঘুরে শহর চোষে ফেলেছিলাম দুজন।

আমায় কেমন লাগছে দেখতে তা ও কখনোই বলে না। এটার রহস্যও আমার জানা নেই। কিন্তু আমার এ জানা আছে, তার কাছে আমাকে মায়া রাজ্যের রানী মায়াবিনী লাগে। আর কি চাই আমার!

সেদিন ছিল আমাকে দেওয়া ওর প্রথম প্রেম স্পর্শ কপালে। খুব মাথা ব্যথা নিয়ে ভার্সিটি থেকে ফিরছিলাম।আমার সতীন মানে নিবিড়ের বাইক ওর সাথে ছিল না।মেকানিকে ছিল।রিকশায় তার পাশে বসে কাঁধে মাথা রেখে বাসায় যাচ্ছিলাম। আমার নিলজ্জ চুল ওর চোখ মুখে বারবার ছুঁয়ে দিচ্ছিল। আমি আড় চোখে ওর দিকে তাকাতে গেলাম দেখতে, আমার চুলগুলোর বেহায়াপনাতে সে বিরক্ত কিনা। দেখি এক দৃষ্টিতে পলকহীনভাবে আমাকে দেখে চলেছে। আমার কপালে চুল পরে আছে।সে আনমনে আমার কপালে চুমু এঁকে দিল।আমি টুপ করে চোখ বন্ধ করে স্বর্গ অনুভুতি চাইলাম।আমি আমার চুলগুলো কপাল থেকে সরিয়ে দিলাম।সে তখন মুচকি হেসে বলল,
“এখন দিলে তোমার কপাল ছুঁইবে আমার অধোর।কিন্তু আমি চেয়েছি আমার প্রেম স্পর্শ প্রথম তোমার চুল পাক। আর মন চেয়েছে কপাল ছুঁইতে। দুজনারটা একবারে এঁটে দিয়েছি মায়াবিনী। কেউ কাউকে দোষ দিবে না। হিংসে করবে না।প্রমিজ।”

এই ছেলেটার প্রেমে রোজ নতুন করে পরতে ইচ্ছে করে। মুগ্ধ নয়নে দেখলেও তাকে, আমার মন ভরে না।

বাইকে পুরো শহর সন্ধ্যার পর ঘুরে বেরিয়েছি কতোবার। পিছন থেকে ঝাপটে ধরে মাথা ওর পিঠে রেখে ঘুমিয়েছিও।আমি ওকে প্রথম প্রেম স্পর্শ পীঠে দিয়েছিলাম। কারন ওইদিন অনেক খুশি হয়ে ছিলাম। হাসনাবাদে ফ্লাইওভারে দাড়িয়ে রাত ১১টায়, ভালোবাসি বলে ছিল। পীঠে মাথা রেখে ঠোঁট ছুইঁয়ে দিয়েছিলাম।

আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্ত মায়াবিনী যখন পিছন থেকে জড়িয়ে পীঠে মাথা রাখে। আমার মনে কেউ এসে বলে যায়, “এই নারী তোমার নিবিড়। এই নারী তোমার।” অজানা এক ভালো লাগা মন ছুঁয়ে দিয়ে যায় আমার। প্রেয়সীর স্পর্শে। প্রেয়সীর ভরসার স্পর্শে। পিছন থেকে জড়িয়ে যখন মায়াবিনীর বাম হাত আমার বুকের বাম পাশে রাখে, আমি জানি ওই সময় আমার হৃদয়ের সকল বার্তা ওর কাছে পৌঁছে যায়। আমার হৃদয় ওকে সবটা জানিয়ে দেয়। বাইক চালানো অবস্থায় যখন ও ঘুমিয়ে যায় তখন অগোচরে ওর হাত টেনে আমার ঠোঁট ছুঁইয়ে দেই।তারপর আবার বুকে চেপে ধরি। ইশশ! এ অনুভূতি…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here