তোমার_প্রেমে_মাতাল,পর্ব_৯,১০

0
2121

তোমার_প্রেমে_মাতাল,পর্ব_৯,১০
লেখিকা_মায়াবিনী (ছদ্মনাম)
পর্ব_৯

ঘুম ভাঙ্গছে নিবিড় এর কলে। ৫মিনিটে বের হয়ে নিচে নামতে বলছে। সেখানে ১৯ মিনিট লাগাইছি। মুচড়ামুচড়ি করব ফ্রেশ হবো রেডি হবো লেট হবো না? তার ভাষ্যমতে এতো তাড়াতাড়ি শুয়ে দেরিতে কেন উঠবা? সকাল থেকে কল করে যাচ্ছি ঘুম ভাঙ্গে না কেন? কি করে বলি তাকে, তার ভাবনায় কাল মশগুল ছিলাম।৪টার সময়ও নিজেকে সজাগ দেখেছি। ঘুম কি এতো তাড়াতাড়ি ভাঙ্গতো নাকি।

বাইক থেকে নেমে নিবিড় আমার হাত ধরে নিয়ে হাঁটা শুরু করেছে। কোথায় যাচ্ছি কতবার জিজ্ঞেস করলাম।বললই না। ক্যাম্পাস মোড়ে বাইক থামিয়ে কতোগুলি ছেলেমেয়ে দাড়িয়ে আছে তাদের দিকেই এগোচ্ছি আমরা।কালকের ওই ফালতু মেয়েকে দেখছি ওখানে।আমাকে গিলে খাচ্ছে।আমি খাবার হলে এই মেয়ে এতক্ষণে আমায় চেটেপুটে খেয়ে ফেলত সিউর?।

সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।একজন পরিচিত মুখ দেখলাম।
শিমুলঃকেমন আছো মায়াবী?
মায়াবীঃ আলহামদুলিল্লাহ ভাইয়া।আপনি?
শিমুলঃ আমিও আলহামদুলিল্লাহ। (হাসি মুখে)

সবাই অবাক।শিমুল মেয়েটাকে চিনে?

নিবিড় মায়াবীর দিকে তাকিয়ে,
-ওরা সবাই আমার বন্ধু। ও শশী। শশীর কথা তো তোমায় বলেছি আগেই।
আমিঃহ্যা
নিবিড়ঃ এ হলো দিহান, সাদি, দিপু। আর ও নীলা। শিমুলকে তো আগেই চিনতে।

হাসি মুখে সবার দিকে তাকালাম।

শশী বলল
-আর এই ছোট বোনটি আমাদের কি হয়? পরিচয় ওকে আমাদের সাথে করাবি না?

নিবিড়ঃ পরিচয় করাতেই তো তোদের ডাকা।

আবার নিবিড় মায়াবিনীর দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে হাত ধরা অবস্থায় একটু হেসে বলছে,
-ও মায়াবী। আমার বর্তমান ভবিষ্যৎ আমার অস্তিত্ব আমার প্রেম আমার ভালোবাসা আমার জীবন। আমার সবকিছু।

আমি নিবিড়ের দিকে মুগ্ধ নয়নে দেখছি। কিন্তু আমি জানি এভাবে আর কিছুক্ষণ থাকলে ঠোঁটে ঠোঁট বসিয়ে দিবে। অসভ্য একটা ছেলে! না জায়গার খেয়াল থাকে না মানুষের।

শশীঃ নিবিড়!!

নিবিড় এর ধ্যান ভেঙেছে।
-আস্তে চিল্লা শাঁকচুন্নি।

শশীঃ ভাই কি বললি তুই? তুই প্রেম করিস? আর শিমুল সেটা জানতো??
শিমুলঃ নারে ভাই। আমি খালি একবছর আগে মায়াবীকে দেখছিলাম।
দিহানঃকিহ! একবছর আগে?
সাদিঃছিহ ছিহ! দেখছিস শশী তোরে কেউ বলে নাই।
নিবিড়ঃ আরে থাম তোরা। বলতাছি আমি সব।

নিবিড় বলল ওদের রিলেশনের কথা। অন্যদিকে দেখি নীলা নামের মেয়ে টা কেঁদে চলেছে নিবিড় এর দিকে তাকিয়ে। তারপর হটাৎ উঠে দৌড়ে চলে গেল। সবাই তাকিয়ে দেখলো। যেন এমনটাই হওয়ার কথা ছিল সবার ভাবে। আপাতত কারো কিছু করার নেই।

সবাই আমাকে ভাবী ডাকছে।লজ্জায় আমার মুখ লুকানোর জায়গা নেই। শশী আপু নাম ধরে ডেকেছিল।নিবিড় বলে দিছে
-আমার বউকে ভাবী ডাকবি। নাম ধরে ডাকতে পারবি না। শিমুল তুই ও না।

(এই লোকটার এক ফোঁটা লজ্জা নেই। নিলজ্জ!)

দিপু ভাইয়া হেন্ডশেক করতে চাইছিল। নিবিড় নিজেই করে নিছে। বলছে
-আমি আর মায়াবিনী একই কথা। আমি করি আর মায়াবিনী করুক।

(মাটি ফাক হয়ে যাক৷ আমি নিচে ঢুকে যাই। বেহায়া লোকটা!)

————

এক পশলা বৃষ্টিতেও আমাদের প্রেম ভরপুর।প্রকৃতি এক নতুন সাজ দিয়েছে। সবুজে উজ্জ্বল প্রতিটি জায়গা। তার উপর বৃষ্টির ফোঁটা অসম্ভব সৌন্দর্য ছড়ায়। নিবিড় একে জলরঙ এর প্রকৃতি বলে।সারাদিন গাছের পাতা থেকে টিপটিপ পানি ঝরতেই থাকে। আমার জেদের কাছে আজ আবার হেরে গেছে নিবিড়। মুশুলধারে বৃষ্টিতে আমি একা নই নিবিড় ও আমার সাথে ভিজছে।জ্যামহীন রাস্তা ছেড়ে জনবহুল স্থান রেখে ব্যস্ত মানুষের ভীর ঠেলে নির্জন মাঠে ভিজে চলেছি একসাথে। যেখানে বৃষ্টির মাঝে আমি আর নিবিড় ছাড়া কেউ নেই।

নিবিড়ের চুলের পানি আমার মুখের উপর ঝাড়া মেরে ফেলছে।ছেলেটা আমায় খুব জ্বালায়।বৃষ্টি কিছুটা হালকা হয়েছে। আমি খানিকটা রেগে ওর দিকে তাকালাম।নিবিড় আরো কিছুটা এগিয়ে আমার কাছে এসে দাড়ালো। ওর সেই দৃষ্টি। আর আমার বুকে ঝড় বয়ে চলেছে। এতো জোরে ডেকে চলেছে হৃদয় স্পন্দন যেন নিবিড় সবটা শুনতে পাচ্ছে।

-মায়াবিনী তুমি রহস্যময় সুন্দর!

এমন বলে আরো একটু কাছে গেলাম ওর।বৃষ্টিতে মেয়েটা ভিজে গেছে পুরো। ভিজে ওর জামাটা শরীরে লেগে গিয়েছে। শরীরের ভাজ স্পষ্ট। চুলগুলো ভিজে এলোমেলোভাবে মুখের উপর পরে রয়েছে। কপালে ছুঁয়ে ওর চুলগুলো কানের পিছনে গুজে দিলাম। কি মোহনীয় দেখাচ্ছে আমার মায়াবিনীকে।কাঁপতে থাকা ঠোঁটে আঁঙ্গুল দিয়ে স্পর্শ করলাম। ওর শরীরের শিহরণ আমায় জানিয়ে দিল এ নারী তোমার।তোমার জন্য তার এই শিহরন। ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলাম বাধ্য ছেলের মতো।

না না এ ঠিক না মনে মনে বলে ওকে ছেড়ে একটু দূরে দাড়ালাম।

নিবিড় এর মাঝে আফসস গিল্টি দেখছি।
-আজকে তো ছ সেকেন্ড ও হয়নি।

-মানে? (মায়াবিনীর দিকে তাকালাম)

-আজকে ছ সেকেন্ডের আগে ছেড়ে দিয়েছো।(মুখ ফুলিয়ে বললাম)

-এটা ঠিক না মায়াবিনী। এ অন্যায়। আমার নিজেকে কনট্রোল করা উচিত ছিল।

হা করে নিবিড়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আছি।

নিবিড় আবার বলা শুরু করল
-আমি তোমার দিকে কেন তাকাই না জানো? যে মেয়ে আমার দৃষ্টি একটানা তার দিকে থমকে রেখেছিল, যার নাম জানি না শুধু কয়েক মিনিট দেখে মেয়েটাকে পাগলের মতো খুঁজে বেড়িয়েছি। মেয়েটাকে না পাওয়া অব্দি আমার রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছিল।সেই মেয়েকে পেয়ে আমি তাকিয়ে দেখবো না? আমার কাছে তো তার দিকে একধ্যানে আজীবন তাকিয়ে থাকলেও আমার চোখের পিপাসা মিটবে না। তুমি সামনে আর আমি তাকাচ্ছি না। মানে হচ্ছে তোমার দিকে চোখ থমকে গেলে কেউ এই দৃষ্টি সরাতে পারবে না। তোমার মাঝে ডুব দিলে তুমিও কখনো আমায় সরাতে পারবে না। কখনোই না। আমি নিজেও মনে হয় পারব না। এই ভয়টাই আমি পাই। আমি নেশাখোর মাতাল। সব তোমার জন্য। আমি পাগল হয়ে যাব মায়াবিনী। তোমায় ঘিরে কোনো ভুল আমি করতে চাই না। ভালোবাসি আমি তোমায়, তোমার চোখজোড়াকে, সরু নাককে, তোমার গোলাপি ফুলে থাকা ঠোঁটকে, অসম্ভব সুন্দর লতার মতো ঝুলে থাকা সিলকি চুলগুলোকে, গালের দুপাশের ভাজকে, হাসির ডান গালের টোলকে আর এই চিকন চ্যাপ্টা হাতগুলোকে যার সাথে চুড়ি খুবই মানানসই, চিকন লম্বা লম্বা আঙুল গুলোকে যাদের আমার কামড় বসিয়ে দিতে ইচ্ছে করে। এই ভালোবাসা গভীরতা চায় মায়াবিনী। কিন্তু আমি এখন চাই না।একবার তোমার ঠোঁটের নেশায় মাতাল হয়ে গেলে সারাদিন তোমার ঠোঁটেই ডুবে থাকবো। এটা ঠিক না।

(একটানা বলে ছেলেটা নিশ্বাস নিচ্ছে। কেন যেন আজ অবাক হলাম না। জানতাম মনে হয় আমি মনে মনে সবই। এখন আমি বললাম)
-কে বলল তুমি আমার ঠোঁটের নেশায় পড় নাই?

-(বিষম খেয়ে)কিহ!

-কিহ মানে কি? কয়েকদিন পর পর আসো মাতাল ছেলে আমার ঠোঁটে নেশা মেটাতে। (বিরক্ত হয়ে বললাম)

-আমায় ক্ষমা করে দাও। আমি এমন চাইনি। আজকের পর থেকে আর এ ভুল হবে না।(মাথা নিচু করে)

কিছু একটা ভেবে বললাম,
-আচ্ছা প্রতিবার ছ’সেকেন্ডে নেশা কেটে যায়? (ভাবুক হয়ে)

নিবিড় জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায়। আমি একফালি হাসি দিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে থাকি।ওর না তাকানোর কারন আমি জানি এখন। ছেলেটা বড্ড পাগলাটে। বৃষ্টি এখনো গুড়ি গুড়ি পড়েই চলেছে। হাওয়া মাখানো বৃষ্টি। অনেক সময় আমরা ভিজেছি কিন্তু এ খেয়াল নেই। অসুখের চিন্তা আজ কারো নেই। আমি নিবিড় এর দিকে এগিয়ে গেলাম। ওর দিকে ওভাবেই তাকিয়ে জুতা জোড়া খুলে ওর পায়ের উপর পা রেখে দাঁড়ালাম কাঁধে ভর দিয়ে।

-কি করছো মায়াবিনী? ( ঘাবড়িয়ে ফিস ফিস করে)

-তোমার না হয় ছ’সেকেন্ডে নেশা কাটে! আমার তো কাটে না চ্যাপ্টা ভাজঁ পরা ঠোঁটের। আমিও তোমার প্রেমে মাতাল।আমার বুঝি অধিকার নেই?

নিবিড় এখনো ঘোরলাগা চোখে তাকিয়ে আছে। এ যেন আমিও চাই আজ থেকে নিবিড় এর মাঝে কোনো অনুশোচনা না থাকুক।ছেলেটা আমার প্রেমে মরে যাচ্ছে।

বামহাত দিয়ে ওর ঘাড় ভালোভাবে জড়িয়ে ডানহাত ওর গাল স্পর্শ করলাম। এতো কাছে এসে সরে যাওয়া বারণ।বৃষ্টি বিলাসিতায় আমি আমার প্রেম নিবিড়কে জানাতে চাই। কি চাই আমি তা বুঝিয়ে দিতে চাই। কতোটা চাই নিবিড়কে তা বোঝাতে চাই। ওর ছ’সেকেন্ড আমি ভেঙে দিবো।এ কেমন অনুভূতি!

এ আমি কাকে দেখছি? ও কি মায়াবিনী? যার চোখে ছিল অসম্ভব লজ্জা। হাত ধরলে মেয়েটা কেঁপে উঠতো।আজ সে নিজে আমার এত কাছে এসে দাঁড়িয়েছে। আমার শরীরে শরীর লেপ্টে। ওর নরম কোমল হাত আমার ঘাড় জড়িয়ে রেখেছে। ওর মোলায়েম হাত আমার দাড়িতে বোলাচ্ছে। ও কি বুঝতে পারছে না আমি আর এভাবে থাকতে পারছি না। এখন এক অসম্ভব কাজ করে বসলো মায়াবিনী। আমার ঠোঁটে ওর ঠোঁটের স্পর্শ। চোখ বন্ধ করে নিয়েছে ও। নাহ! এভাবে ওকে ঠেলে দিতে পারব না আমি।ওর এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে কষ্ট হচ্ছে। দুহাত উঠিয়ে ওর কোমড় চেপে ধরলাম।ওর চুম্বন গভীর হলো। মায়াবিনী কেবল আমার।তবে কিসে বাঁধা? কেন চুপ করে আছি? আমিও ভুলে যেতে চাই পৃথিবীকে।নেশায় মত্ত হতে চাই একে অপরের। কোমড় জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে আরো মিশিয়ে নিয়েছি। বৃষ্টিতে আমার মায়াবিনীর সব দূরত্ব লাঘব হোক……..

——————————————-

মা আর আমি রাতের জন্য খাবার রেডি করলাম। রাত ৯টা বাজে। সবাই টেবিলে আসবে।বাবা বেলা ৫টায় বাসায় চলে আসেন কলেজ থেকে। বিয়ের দুইদিন হয়ে গেছে।নিবিড় সকালে নাস্তা করে বের হয়। আসে রাত আটটার দিকে। আজ ও এর ব্যতিক্রম হয়নি।সবাই রাতে খাবার টেবিলে।

বাবাঃ নিবিড় কালকে মায়াবীমা কে নিয়ে ওর বাবা বাড়ির যাবি।
নিবিড়ঃ রাতে যাব।
বাবাঃ রাতে যাবি মানে? সকালে খেয়ে নিয়ে যাবি।
নিবিড়ঃ ঠিকাছে।
বাবাঃদুইদিন ওখানে থাকবি। পরে মায়াবীকে নিয়ে একবারে ফিরবি।
নিবিড়ঃজ্বি।
মাঃএই দুইদিন অফিস যাবি না।
নিবিড়ঃ এ সম্ভব না মা।
মাঃ সম্ভব না মানে?
নিবিড়ঃ আমার কাজ আছে। (বলে অর্ধেক খাওয়ার উপর হাত ধুয়ে রুমে চলে গেল)

বাবা মা দুজন দুজনের মুখ চাওয়া চাওয়ি করলেন। সবাই চুপচাপ খেয়ে উঠলো। শুধু দেখলাম নীরব আরামে খেয়ে উঠল। যেন সবকিছু স্বাভাবিক। বাবা মা নিজের রুমে চলে গেছেন।আমি টেবিল গোছাচ্ছিলাম। নীরব আমার পাশে দাঁড়িয়ে পানি খেয়ে মগ টেবিলে রাখার সময় একটু হেসে বলল,
-মা আর বাবা ভাবছেন তাদের ছেলে আর ছেলের বউ এর ঝগড়া হয়েছে। কিন্তু তারা এ জানে না তাদের আদরের ছেলে নতুন বিবাহিত জীবনে সুখি নয় তাই বাহিরেই সময় কাটাচ্ছে।

বলেই চলে গেল। এই দিকে আমি মুর্তির মতো দাড়িয়ে আছি। কি বলে গেল নীরব?

সব ধুয়ে গুছিয়ে রুমে গেলাম। নিবিড় ল্যাপটপে কি করছে। আমি রাত ৩টা অব্দি অপেক্ষা করছি। ও ওইভাবে কাজ করতে থাকে। আমি সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি নিবিড় সোফায় ঘুমায়। দুই দিনে আমি নিবিড় এর সাথে কথা বলার কোনো চেষ্টা করি নাই। নিবিড় নিজেও কোনো কথা বলে নাই। আমার নিবিড়কে চিনতে খুব কষ্ট হচ্ছে। এই সে ছেলে যে সবকিছুর বিনিময়ে আমাকে চেয়েছিল! নীরবের কথায় আজকে ভয়টা বেড়ে গেছে। দম বন্ধ হয়ে আসছে আমার। তাই না পেরে নিবিড় এর সামনে যেয়ে দাঁড়ালাম।
-কি চাও নিবিড়?

-কি চাইবো? (লেপটপের দিকে তাকিয়েই)

-কি চাও তা জানি না। তবে কি চাও না তা জানি।

-(আমার দিকে তাকালো) কি চাই না?

-আমার দিকে তাকাতে! (তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললাম)

এখন নিবিড় আবার নিচের দিকে তাকালো। হয়তোবা অনুশোচনা হচ্ছে। হাসলাম আমি। একদিন অনুশোচনা হয়েছিল আমায় স্পর্শ করে। কেন বিয়ের আগে ছুঁয়েছে? আর আজকে অনুশোচনা বিয়ে করা বউ এর দিকে তাকায় না বলে। দিন কি করে পাল্টে যায়।

আমি চলে আসতে নিলাম।পিছন ফিরেছি।পা বাড়াবো, নিবিড় পিছন থেকে ডাকলো
-মায়াবিনী!

পা বাড়াতে গেলেও থেমে গেলাম…..

চলবে

#তোমার_প্রেমে_মাতাল
#লেখিকা_মায়াবিনী (ছদ্মনাম)
#পর্ব_১০

ভালোবাসার শেষ পরিণতি এমনই হয়? অবহেলা! হ্যা আমি শুধু অবহেলা পাচ্ছি নিবিড় এর কাছে থেকে। আমি কে? কেন আসছি এখানে? প্রতিদিনের মত দুপুরে বারান্দার দোলনায় বসে আছি। দোলনাটা আগে ছিল না। আমি বিয়ের আগে নিবিড়কে বলছিলাম বারান্দায় দোলনা রাখতে।বিয়ের আগে ও ঠিকই দোলনা কিনে রেখে দিয়েছে। কাল রাতে নিবিড় কি যেন বলতে চেয়ে পিছন থেকে ডেকেছিল। পরে কি ভেবে আর বলল না। জানতাম বলবেও না। বলার মতো মুখ থাকলে তো বলবে!

আজ সকালে নাস্তার টেবিলে নাস্তা শেষে নিবিড় বের হয়ে যায়। নীরব সাথে সাথে আমার কানে বলে,
-বিয়ের হইছে এতোদিন, সকালে গোছল তো তুমি করো না।

-হাও চিপ ইউ আর!(লজ্জা না পেয়ে ঘৃনার নজরে ওর দিকে তাকালাম)

-এসব না বলে হাসবেন্ডকে ফলো তো করতে পারো। কোথায় যায় খোঁজ নাও। (আমার কথায় পাত্তা না দিয়ে বলে চলে গেল)

ওর মুখে কেমন এক হাসি।ঘৃনায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে আমার।রান্নাঘরে চলে আসলাম।

রান্নাঘরের কাজ করছিলাম ঠিকই কিন্তু বারবার মনে হচ্ছিল আমার একবার হলেও নিবিড় কে ফলো করা উচিত কিন্তু ভালো মন বলছিল উচিত না।

মনমরা হয়ে দুপুরে বারান্দায় বসে এসব কথাই ভাবছিলাম হঠাৎ করে নীরব পিছন থেকে,
-কি ব্যাপার আমার কথাই ভাব ছিলে বুঝি।

হঠাৎ করে পিছন থেকে নীরব আসায় চমকে উঠেছি আমি।

ডেকে বলল তোমার সাথে কিছু জরুরী কথা ছিল আমি কি বলতে পারি জরুরী কথা গুলো।

-না আমি কোনো কথা শুনতে চাই না।

তাও আমার সাথে ননস্টপ কথা বলা শুরু করে দিলো। আশ্চর্য ছেলে!

নিরব এসে আমার পাশে বসলো কিছুক্ষণ আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকলো হঠাৎ বলা শুরু করলো
-মায়া তুমি কি জানো কলেজ জীবনে একমাত্র তুমি আমার বন্ধু ছিলে? তুমি তো জানতে! কি করার বলো। আমার একমাত্র বন্ধুকেও আমি হারিয়ে ফেলেছিলাম।কার জন্য তা তুমিও জানো আমিও।

অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছি।

জানো মায়া কলেজ জীবনে আমার খুব ভালো বন্ধু ছিল একটা মাত্র মেয়ে। কিন্তু তার যে আমি ছাড়াও হাজার বন্ধু ছিল কিন্তু জানো সে সবার কাছ থেকে একবার এসে হলেও সারাদিনে আমাকে সময় দিতো। বন্ধুত্বের টানে। আমার সাথে লাইব্রেরীতে বসে থাকতো ঘন্টার পর ঘন্টা। আমি যা বলতাম যা পড়তে বলতাম যা পেতাম তাই আমার কথাগুলো মন দিয়ে শুনতে থাকতো। আমার যে কেউ বন্ধু হতে চেতো না তা কিন্তু না। অনেকে আমার বন্ধু হতে চাইতো কিন্তু আমি আমার মায়া ছাড়া কারো সাথে বন্ধুত্ব করতে চাইতাম না। মেয়েটা বড়ই পাগলী।আর ওর পাগলামি ছিল আমার কাছে সর্বশ্রেষ্ঠ উপহার। আর পাগলামি যত বেশি করতো তত আমার নিজেকে স্বাধীন মনে হতো। ওর চোখে ছিল এমন মায়া যা আমাকে গ্রাস করে নিতো আমাকে।ও ছাড়া অন্য কোন বন্ধু কখনো ভাবতেই পারিনি।

আমার চোখ দিয়ে পানি পড়ল দুফোঁটা। ওর একমাত্র বন্ধু যে আমি ছিলাম!

ও একটু থেমে আবার বলা শুরু করলো,

-মায়া শেষবার আমার সাথে একবার দেখা করতে আসতে চাইল হঠাৎ কি হলো মেয়েটা আসলোই না। আমাকে ইগনোর করা শুরু করলো, আমার মেসেজ সিন করার বন্ধ করে দিলো।এমন কি আমাকে ফোনে ব্লক করে দিল। কি হয়ে গেল মেয়েটার আমাকে ভুলে গেল ওর একমাত্র প্রিয় বন্ধু আমাকেও ভুলে গেল! আমি ভাবতে পারছিলাম না আর। দেখাও হচ্ছিল না। ভাবলাম ও ভুলে গেলে আমিও ভুলে যাবো। ৩/৪ বছর আমার কি একটা নেই ভেবে কাটিয়ে দিয়েছি। কি করেছিলাম আমি কি দোষ করেছিলাম। তাই আমি জানতাম না। হঠাৎ একদিন তার সাথে আমার দেখা হয়ে গেল।জানতে পারলাম ওমা আমার জন্য কিছু হয়নি। আমাকে নিজে থেকে সরিয়ে দিয়েছে। আমাকে দূরে ঠেলে দিয়েছে। কি দোষ ছিল আমার। পরে জানতে পারলাম, মেয়েটারও এখানে দোষ নেই। দোষ হচ্ছে তার প্রিয় ব্যক্তির। হ্যাঁ আমার প্রিয় ব্যক্তি মায়া। তোমার প্রিয় ব্যক্তি তো আমি ছিলাম না যে তোমার প্রিয় ব্যক্তি ছিল সেই ব্যক্তি হয়তোবা আমার সাথে মিশতে দিতো না। আমি জেনেছিলাম সব কিছুই।তাতে অবশ্য কোনো লাভ হয়নি। কিভাবে আমাকে রেখে চলে যাবে মায়া? ছেড়ে দেবো আমি? কখনোই না।আমার বন্ধু ছিল আমার বন্ধু থাকবে। হয়তো আমার থেকে চার বছর দূরে ছিলে।৩/৪ বছর আমাদের দূরত্ব ছিল কিন্তু তাই বলে সারা জীবন আমি ভুলে যাব কখনো না। আমার বন্ধু হবে আবার, আমার বন্ধু হবেই। আমি কথা দিচ্ছি।আমার প্রিয় ভাই তোমাকে আমার কাছ থেকে দূরে করেছিল না? দেখো এখন আমি আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি ও নিজে আমার বন্ধুকে আমার কাছে ফিরিয়ে দেবে।

নীরব ঝড়ের বেগে এসে ঝড়ের বেগে চলে গেল। কি বলে গেল আমি তো কিছুই বুঝতে পারলাম না। সব আমার মাথার উপর দিয়ে চলে গেল। নীরব কি বলছিল? নিবিড় নীরব? না না, আমি আর নিতে পারছি না….

রাতেবেলা খাবার টেবিলে সবার সামনে আমি হঠাৎ বলে বসলাম,
-আমি অফিস জয়েন করতে চাই আবার।

নিবিড় খাওয়া বন্ধ করে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল।

এতে আমার খুব একটা বেশি যায় আসে না। আমি যেন জানতাম নিবিড় এরকমই একটা রিয়েক্ট করবে। অথচ এখনো মুখ দিয়ে কিছু বলছে না এখন আমাকে ভাবাচ্ছে। বাবা বললেন,
– ঠিক আছে তুমি তো জয়েন করতে পারো। তুমি আগে চাকুরী করতেই। তবে তোমার পদোন্নতি হয়েছে। তুমি সরাসরি ম্যাইন ফ্যাশন ডিজাইনার হিসেবে যাবে।

নিবিড় আবার খাওয়া শুরু করে দিলো। খাওয়া থেকপ উঠার আগে বলল,
– আর কয়েকদিন পর থেকে জয়েন করো । এখন কালকে থেকে যাওয়ার দরকার নেই।

আমি কালকে থেকে জয়েন করবো। আর তোমার সাথে কালকে অফিস যাবো।

সবাই চলে গেল একে একে। খালা আর আমি কাজ করছিলাম। মাকে এখন কিছু করতে দেই না। বলছি অফিস যাবো যখন তখন তুমি করো।

নীরব সবার শেষে আমাকে বলে গেলো
– তোমাকে শুধু ফলো করতে বলছিলাম তুমি তো সরাসরি ওর সাথেই যাওয়া শুরু করে দিচ্ছো। টেলেন্টেড গার্ল।

অফিসের সবাই জানে আমি নিবিড় বসের একমাত্র ওয়াইফ এবং কয়েকদিন আগে আমাদের বিয়ে হয়েছে। সবাই আমাকে ম্যাম বলে সম্বোধন করল। অফিসে যাবার পর কিন্তু নিবিড় আমাকে নামিয়ে দিয়ে যে গায়েব হয়ে গেছে সেই সন্ধ্যায় আসলো এবং আমাকে সরাসরি ড্রপ করে বাসায় গিয়ে নামিয়ে দিলো। না সারাদিন কোথাও পাইনি আর নিবিড়কে।

আজকে বারান্দায় বসা হয়নি। রাতে খেয়ে এসে বারান্দায় বসলাম। নিবিড় অফিস যায় নাই এ কদিন তা আমি জেনে গেছি নিবিড় ও জানে এখন।আজকে নিবিড় কাজ করতে বসে নাই পিসিতে।বিছানায় শুয়ে পরেছে। হয়তোবা আমার মুখোমুখি হতে চায় না।আমি যেয়ে ওর পাশে শুয়ে পরলাম। দুজন দুপাশে ঘুরে। হটাৎ ওর দিকে ফিরে ওর কাঁধে হাত রাখলাম। চমকে উঠলো নিবিড়। আমার হাত টা আলতো করে সরিয়ে দিলো। আমি ফের রাখলাম। ও একই কাজই করলো।যেন ছলচাতুরী খেলা হচ্ছে। তৃতীয়বার রাখতে যাবো তখনই বলে বসলো,

-আমাকে ছুবে না মায়াবিনী।

এক কথায় কি ছিল আমি জানি না সাথে সাথে পিছন ফিরে চোখ বেয়ে অনবরত পানি পড়ে যাচ্ছে। পড়েই যাচ্ছে। যে আমাকে এই দুইদিন আগে বিয়ে করেনি আরো দুই বছর আগে আমাকে ও বিয়ে করেছে দুই বছর আগে থেকে আমি ওর বউ।

নিবিড় বলা শুরু করলো হটাৎ।
-মায়াবিনী আমাকে কিছু সময় দাও।আমি সব ঠিক করে দেবো। অনেক বিশ্বাস করো না আমায়? এই বিশ্বাসের মূল্য আমি কতোখানি দিতে পারবো জানি না। কিন্তু বিশ্বাস করো আমি তোমায় ঠকাচ্ছি না।একটু সময় দাও আমায়।একটু সময়!

এসব মনে মনে বললাম। একটু জোরে বললে মায়াবিনী ঠিকই শুনতে পেতো। হয়তো কিছুটা রিল্যাকসেও থাকতো।ভাবলাম বলি তবে…

কাঁদতে কাঁদতে কখন ঘুমিয়ে গিয়েছে জানিনা।

অনেকটা রাত হওয়ার পর নিবিড় উঠে বসল। দেখলো তাকিয়ে মায়াবিনী ঘুমিয়ে গিয়েছে কিনা। হ্যাঁ মেয়েটা ঘুমিয়ে গিয়েছে। এখন উঠে একবার মায়াবিনীর মুখটা দেখলাম
-কি মায়া এই মুখটায় ইসশ!

আবার যেয়ে মায়াবিনীর পাশে শুয়ে পড়লাম। মেয়েটাকে আমার দিকে ফিরিয়ে নিলাম ওর মায়া মুখ দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে যাবো বলে।

মায়াকে সকালে অফিসে ড্রপ করে চলে গেলাম হসপিটালে।
সোজা সিটি হসপিটাল এ বাইক চালিয়ে চলে গেলাম। তারপর উপরে উঠে ন’তালায়, সোজা রুমে যেয়ে জিজ্ঞেস করলাম ডক্টরকে,
– ও এখন কেমন আছে?

ডক্টর বলল
-হ্যাঁ উনি এখন ভালো আছে তবে চিন্তার কারণ এই অর্ধেক করে জ্ঞান আসে। ওলট পালট চিৎকার করে।ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়াতে হয়।

-ওর জ্ঞান কবে ফিরবে?

-মিস্টার নিবিড় আহাম্মেদ উনার জ্ঞান কবে ফিরবে সেটা বলা যাচ্ছে না ঠিকই, কিন্তু আবার হঠাৎ কখন ফিরে যাবে কখন কাকে খুঁজবে এটাও বলা যাচ্ছে না। তাই বলে আপনি সারাদিন কোনো কাজ না করে কেন বসে থাকেন? সেটা দেখতে ভালো দেখা যায় না.।আপনি বরং উনার পরিবারের কোনো মেম্বারকে এখানে বসিয়ে রাখতে পারেন। যেমন ধরেন কোনো মেয়ে মানুষ। বা যেই হোক না কেন আপনি এভাবে পুরুষ মানুষ হয়ে এখানে বসে থাকেন দেখতে খুব খারাপ দেখা যায়। খুব খারাপ লাগে আপনাকে এভাবে দেখতে। অসহায় লাগে। আপনি একটা কাজ করুন উনাকে বাসায় নিয়ে যেতে পারেন। তাহলে হয়তবা তারা থাকতে জ্ঞান ফিরে আসতে পারে। হঠাৎ হঠাৎ যখন উঠে তখন তো আমি ভেতরটাকে বুঝে উঠতে পারি না। হয়তোবা কাছের মানুষকেও থাকলেও কিছু বুঝতে পারবে।

-ডক্টর বাসায় লোক বলতে আমি একমাত্র। আমি না আসলে আর কে আসবে।আপনি আমার কথা চিন্তা করবেন না। ওকে বাসায় নেওয়া যাবে না যতদিন পর্যন্ত ওর জ্ঞান না আসবে এখানে থাকতে হবে। আর কেউ যেন কখনো জানতে না পারে আমি ছাড়া এখানে অন্য কোনো ব্যক্তি আছে।আমি এখানে আসি, এটাও জানি কেউ কখনো জানতে না পারে। এটা দেখার বিষয় একমাত্র আপনার। আমি চাই ও জলদি সুস্থ হয়ে উঠুক।

-মিস্টার নিবিড় আহমেদ আপনি যতদিন চাইবেন না ততদিন পর্যন্ত ওর কথা ঘুণাক্ষরেও কেউ জানতে পারবে না। আপনি নিশ্চিন্ত থাকেন। কোনো কথা হয়েছে? আপনাকে দেখে আমার যা খারাপ লাগছে আপনি থাকতে চাইলে তো আমি আপনাকে না করবো না। তবে আপনার থাকার কোনো দরকার নেই। আপনি বরং অফিসে যেতে পারেন। উনার জ্ঞান ফিরলে আপনাকে ফোন দেওয়া হবে। এক নার্সকে নিয়োজিত করছি।ওই দেখভাল করবে।

-ঠিক আছে আমি তাহলে ওকে একটু দেখে আসি আজকে আবার অফিসে জয়েন করবো।

-আচ্ছা একটা কথা আপনাকে জিজ্ঞেস করবো নাকি ভাবছি।

-জ্বি বলুন।

-আপনার স্ত্রী উনি?

-জ্বি হ্যা না। মানে….(আমতাআমতা করছি)

-আপনাকে অনেক পোজেসিভ দেখি উনাকে নিয়ে।

-মানে না মানে আর কি….

-উনার কিন্তু শুধুমাত্র অ্যাকসিডেন্ট থেকে এত বড় ক্ষতি হয়নি উনার শরীরে অসম্ভব পরিমানে দাগ রয়েছে। যার কারণে নতুন ও পুরানো ক্ষত রয়েছে। এসবের থেকেও অনেক বেশি অসুস্থ মানসিকভাবে। আপনি ভয় পাবেন না।অনেক জলদি সুস্থ হয়ে যাবেন আশা করি।

-জ্বি ডক্টর।

বলে কেবিনে চলে এলাম।

হসপিটালের বেডে শুয়ে রয়েছে ও। ওকে দেখতে আসা হয় রোজ। কি অদ্ভুত পরিবর্তনের মুখের ভেতর। কে বলবে ও এখনো যুবতী! দেখে মনে হচ্ছে মুখের চামড়া ফেটে গেছে। ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছে হয়ে গেছে। মুখটাতে তীব্র ব্যথার ছাপ। ওর চেহারা দেখাচ্ছে মলিন।

বেডের পাশের চেয়ারটায় যেয়ে আমি বসলাম।

মেয়েটার চেহারা দেখে মাথায় হাত রাখতে ইচ্ছে করলো। হাত বাড়িয়ে দিলাম। কি হলো কে জানে? হঠাৎ মায়াবিনীর মুখটা আমার চোখের সামনে ভেসে উঠলো।

-না না এ ঠিক না। আমি অন্য নারীকে ছুঁতে পারি না। আমি ঠকাতে পারি না মায়াবিনীকে। কোনোভাবেই ঠকাতে পারি না।

বের হয়ে আসলাম কেবিন থেকে সোজা রাস্তায়। মনে পড়ছে মায়াবিনীর কথা।ওর জন্য কেমন ছিলাম আমি।কি কি পাগলামি করতাম! ফিরে যাচ্ছি দু’বছর আগে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here