তোমার_প্রেমে_মাতাল,পর্ব_27+28

0
1899

তোমার_প্রেমে_মাতাল,পর্ব_27+28
লেখিকা_মায়াবিনী (ছদ্মনাম)
পর্ব_27

তখন আমাদের লুকানো বিয়ের প্রায় বেশ কয়েকমাস পার হয়ে গেছে। এক মাঝরাতে আমার বারান্দায় বসে আমি আর নিবিড় চন্দ্রবিলাশ করছিলাম। নিবিড় দেয়ালে ঘেষে পিঠ ঠেকিয়ে বসে আছে। আর আমি নিবিড় এর কোলে ওর বুকে আমার পিঠ ঠেকিয়ে হেলান দিয়ে বসে। এক চাদরে মোড়ানো দুজন। দুইজন নিশ্চুপ অনেকটা ক্ষণ। নিরবতা ভেঙে নিবিড় বলল,

-তোমায় মন ভরে ভালোবাসতে পারি না।

-কেন পারো না?এর চেয়ে বেশি আরো ভালোবাসা যায়?(অবাক হয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে ওর দিকে তাকালাম)

-যায় বইকি। দেখানো ভালোবাসাটা। ভালোবাসা প্রকাশের ভিন্ন ভিন্ন প্রকার রয়েছে মায়াবিনী। (আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল)

-যেমন?(জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে)

-যেমন শরীর বেয়ে যে ভালোবাসা তোলা হয় তাকে রূপ দিতে হয় চূড়ান্ত প্রেমে।

-You mean Physical relationship?

-উহু। চূড়ান্ত প্রেম আর সেক্স কখনোই এক নয়। একটা মনের ক্ষুদা একটা শরীরের। সন্তান একটা পবিত্র সম্পর্কের রূপ। তবে তার ধরন নিশ্চয়ই বাজে কিছু হতে পারে না। কিন্তু নিজের চাহিদা মেটাতে মানুষ যা করে ওইটা নিশ্চয়ই ধরণই পাল্টে যায়। পবিত্রতার নামে বদ্ধ ঘরে চাহিদা মেটানো নিশ্চয়ই প্রেম হতে পারেনা! পার্থক্য বুঝেছো মায়াবিনী?

-মাথা উপর নীচ করে জ্বি বোঝালাম।

-এখন বলি চূড়ান্ত প্রেমের কথা। যেখানে খেয়াল থাকে না বাহ্যিক পৃথিবীর। তৈরি করে দুইটি মানুষ একসাথে অন্যভুবন। তবে যদি অন্যভুবন বানাতে ব্যস্ত মানুষ যদি পৃথিবীর কিছু চিন্তা মাথায় রেখে ভালোবাসায় ডুবে থাকে তবে কি সে মন ভরে ভালোবাসতে পারে?

-তার মানে তুমি বলছো তুমি পৃথিবীর কিছু খেয়াল রেখে আমায় ভালোবাসো? (অভিমানের সুরে বললাম)

-হ্যা অনেকটা এমনই।

খুব রাগ হলো আমার। উঠে চলে যেতে নিলাম নিবিড় এর কোল থেকে। কিন্তু ও আমায় যেতে দিলো না। কোলে চেপে ধরে বসিয়ে রাখলো।

-আরে আরে সবটুকু শোনো তো।

পেছন ফিরে ওর দিকে তাকালাম না। অভিমান হয়েছে আমার।

-আমি মন ভরে ভালোবাসলে অনেক চিহ্ন নিয়ে যে তোমায় ঘুরতে হবে।

-মানে?(অবাক হয়ে তাকালাম)

-হ্যা। অনেক অনেক চিহ্ন ওরফে দাগ?।

ঢোক গিললাম বড়সড় করে।

-ইসশশ। এখন না বউ। বাসায় নিয়ে তুলি তোমায় তারপর। এখন চিহ্ন একে দিলে লুকাতে হবে তোমায়। বাসায় তুলে নিলে শাশুড়ীর সামনে দেখিয়ে দেখিয়ে ঘুরবে। বোঝাবে দেখো মা, তোমার ছেলে আমায় কত ভাবে আদর যত্ন করে?।

-চুপ!(বলে নিবিড় এর মুখ চেপে ধরলাম। এই ছেলের সত্যি লজ্জা নেই)

তবে এই ছেলের চিন্তা ভাবনা যেমন প্রতিটা পুরুষের এমন চিন্তা ভাবনা হলে কোনো নারীকে সংসারের দাবানলে বন্দিনী থাকতে হতো না। বরং প্রতিটি নারী খুশি মনে সংসার চালিয়ে যেত। একটা নারী শুধু ভালোবাসা চায়। ভালোবাসা দাও অল্প, বিশ্বাস করো সে তার পুরো পৃথিবী তোমায় দিয়ে দিবে। নিজেকে উৎসর্গ করে দেবে তার নিজ পুরুষের নামে।

———————————-

এই সেই নিবিড় যাকে আমি নিজেকে উৎসর্গ করে দিয়েছি তাও এমন প্রশ্ন? একটু আগে হোটেলের রুম টায় ঝড় বয়ে গেল। ঝড়ের শেষে যা থাকে বা ঘূর্ণিঝড় টর্নেডো বয়ে যাওয়ার পর যে চিহ্ন রেখে যায় ওই স্থানে এমন পুরো রুমটাতে জিনিসপত্র পত্রের ওলট-পালট, তার মাঝে আমি একা বসে আছি। আমার ভয় করা উচিত। কিন্তু হচ্ছে না। হিসেব মিলাতে আমি ব্যস্ত।

পৃথিবী যখন আমার ভাঙচুর, তখন আবার নিবিড়কে জিজ্ঞেস করছি, আসলেই ঠিক শুনেছি নাকি ভুল।

-কি বললে তুমি?

-তোমার সাথে নীরবের কি সম্পর্ক? তোমাদের সম্পর্কের কতদিন চলছে?

না আমি ঠিকই শুনেছি।

-কি সম্পর্ক মানে? কোন সম্পর্কের কতোদিন? (অসহায় চোখে দেখছি)

-কবে থেকে চলছে? (চোয়াল শক্ত করে)

-কি বলছো নিবিড়? তোমার মাথা ঠিক আছে?

-অবশ্যই। আমি নিজের চোখে দেখেছি।

-কি দেখেছো?

-তোমাদের একসাথে।

-একসাথে থাকলে কি প্রমাণ হয়?

-একসাথে মানে ঘনিষ্ঠ অবস্থ….

-Just shutup. What are you talking like rubbish?

-Me? Am I talking like rubbish? Or you are doing that cheap things with me. With my brother you are involved in illegal relationship. Oh I’m sorry it is called love relationships or affair.

নিবিড় এর বলতে দেরি হয়েছে থাপ্পড় ওর গালে পরতে দেরি হয়নি। কতটা নিচে নামলে মানুষ নিজের ভাইয়ের সাথে ওয়াইফকে নিয়ে সন্দেহ করে। কত নিচু মনের মানুষ হলে এ করতে পারে। আমার চোখে নিবিড় এখন ঘৃণা ছাড়া কিছুই দেখবে না। কারন আমি ওকে যতটা ভালোবাসতাম তা সব এক নিমিষেই ঘৃনার রূপ দিয়ে ফেলেছে। শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে থাপ্পড় মেরেছি। জীবনে এমন এক পরিস্থিতিতে পরবো কোনোদিন ভাবিনি। নিজের চুল নিজের টেনে ছিঁড়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে। জোরে জোরে চুল টানছি। কি করবো যেন বুঝতেই পারছি না। পাগল হয়ে যাবো আমি, পাগল হয়ে যাবো। এ কি বলল নিবিড়। নিবিড় আমায় সন্দেহ করে? ও আমাকে নীরবের সাথে কি অবস্থায় দেখেছে…? ছিহ! নিজেই বিশ্বাস করতে পারছি না। এটা নিবিড় তো? নাকি বহুরুপী? নাকি Double split personality disorder এ ভুগছে?(একদম নিচে বিস্তারিত লেখা আছে)। নিবিড় এর দিকে তাকালাম। না নিবিড়ই এই লোকটা। কিন্তু আমার নিবিড় এর সাথে এর বিস্তর পার্থক্য। গালে হাত দিয়ে রক্তচক্ষু নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। হটাৎ রুমের সব জিনিস পত্র ফেলতে শুরু করলো। যত রাগ হয়েছে সব রুম তচনচ করে শোধ নিচ্ছে। বেডশিট একটানে মাটিতে ফেলে দিলো। এই প্রথম আমি নিবিড় এর রাগ দেখছি। কিন্তু আমি বিচলিত নই। নিথর!!!

-কি মিস্টার নিবিড় আহমেদ বেশি জোরে লেগেছে বুঝি? আপনার ঠিক যতখানি লেগেছে গায়ে তার চেয়ে বহুগুনে আমার এ মনে লেগেছে। আপনি আমায় যে কষ্ট দিয়েছেন তার তুলনায় কিছুই দিতে পারলাম না ফিরিয়ে। (রাগে বললাম)

-আর তুমি আমাকে যা দিচ্ছো?(তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে)

-আমি?(অবাক হয়ে)

-দিয়েছো দিচ্ছো। প্রতিনিয়ত। এটার তীব্রতা তুমি বুঝবে? এই থাপ্পড়ে ব্যথা বা কষ্ট না এইখানে ব্যথা।(বুকের বাম পাশকে ইঙ্গিত করে)

-আমি কি করেছি?

-কি করোনি তা বলো? আমার ছোট ভাইএর ভাবী হও তুমি। তারপরের তার আলিঙ্গনে তুমি থাকতে পারো?

বুঝতে পারছি ও এখন কিসের কথা বলছে। বারবার নিজেকে শান্ত করছি। উত্তর আমায় দিতেই হবে। তার আগে নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে নিচ্ছি।

-চুপ কেন বলো? আমি কয়েকদিন সময় দেয় নাই বলে অন্যজনকে খুঁজে নিয়েছো সময় কাটাতে? ছাদে তাও? প্রতিদিন সময় মতো? টাইম ঠিক করা ছিল বুঝি? রাস্তায় দাঁড়িয়ে নীরবকে জড়িয়ে ধরেছিলে। তার বেলায়? এ অস্বীকার করতে পারবে তুমি? এটা ঘনিষ্ঠ নয়?

এই ছেলে নিশ্চয়ই অসুস্থ। যা মন চায় তাই বলছে। আমার নিজেকে শান্ত হওয়ার সময় দিচ্ছে না। কখন বলবো?

-আমি অফিস যায়নি এই সুযোগে তুমিও যাওনি। বৃষ্টিতে ভিজে একসাথে ফিরেছো। তাও সকাল থেকে দুপুর গড়িয়ে? এতক্ষণ বাহিরে কি করছো? এরপর ও বলবে তুমি আমায় ঠকাচ্ছো না?

ওর কথা গুলোর পয়েন্ট আমি বুঝতে পারছিলাম। কিন্তু শেষে কি বলল ঠকাচ্ছি? রাগে মাথা চারা দিয়ে উঠলো। আমায় সন্দেহ না সরাসরি আঙ্গুল তুলে বলছে আমি নাকি ঠকাচ্ছি। অনেকক্ষণ সহ্য করেছি আর না।

-আর একটা কথাও বলবে না নিবিড়। আর একটা কথাও না। অনেক বলেছো। ঠকাচ্ছি বলছো? নিজেকে প্রশ্ন করো নিজেকে? তোমাকে আমি বিশ্বাস করেছি। কিন্তু তুমি কি করছো? নিজের প্রাক্তনকে বুকে নিয়ে ছিলে। হাতে হাত ধরে বসে ছিলে। তখন কি আমি তোমায় এমন প্রশ্ন করেছি? বিয়েরদিন রাতেও তুমি আসোনি নিবিড়। বাসররাতে আসোনি। যদি আমি এমন করতাম? বউকে এসে দেখতে ফুলসজ্জার খাটে অনুপস্থিত? তবে তো বলতে বউ পালিয়েই গেছে। অফিসের কথা বলে দশটা দিন সারাদিন কাটিয়ে রাতে ফিরেছো। তখন তো আমি জিজ্ঞেস করিনি। আমি এক দিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বাইরে ছিলাম তাতেই প্রশ্ন স্বামীর ছোট ভাই এর সাথে কি করছিলাম? নিজে একবার না তিনবার আমি নিজের চোখে দেখেছি প্রাক্তনকে বুকে নিয়ে জড়িয়ে ধরতে। তাহলে আমার অনুপস্থিতিতে আরো এমন হয়নি তার কি গ্যারান্টি? তাও আমি বিশ্বাস করেছি। প্রতিদিন হসপিটালের যাওয়া। হসপিটালের জড়িয়ে ধরা অবস্থায় দেখে মানুষ কি ভাবতে পারে? আর ওই অবস্থায় জড়িয়ে ধরে বলছিলে,

“রুশমি আমি আছি।কোথাও যাবো না তোমায় ছেড়ে। ভরসা করো। আমি আছি।”

এ শুনে কোন মেয়ে স্বাভাবিক থাকে? কিন্তু আমি থেকেছি।কারন আমি তোমায় বিশ্বাস করি। কিন্তু নিজের তো কষ্ট হয়েছে। কফিশপেও তোমাদের দেখেছি। ওর পর আমি মরতে গেছিলাম। নীরব বাঁচিয়ে ছিল আমায় গাড়ির সামনে থেকে। মরতে মরতে বেঁচে ছিলাম আমি। যে জীবন দান করেছে সে আমার হাসবেন্ডের ভাই। মানে আমার ও ভাই। তার বাহুবন্ধনে থাকা ঘনিষ্ঠ মুহুর্ত? এতকিছুর পরেও ধৈর্য্য ধরেছি। জানি তুমি একদিন সব বলবে। আজ এই বিশ্বাসের মূল্য সন্দেহ?

নিবিড় আমার কথা শুনে খানিকটা শান্ত হলো। নিজের করা প্রশ্নে অনুতপ্ত হলো বুঝি। কিন্তু কেন জানি মনে হচ্ছে নিবিড় নিজে আমায় এ প্রশ্ন করেনি। কারো করা প্রশ্ন আমার দিকে ছুঁড়েছে।

-আমি হসপিটাল যেতাম তুমি জানতে?

-সো সেড। জেনে গেলাম, সব দেখে ফেললাম। তাই না??

-তুমি আমায় বিশ্বাস করো বলছো? তুমি তো সব মনের মাঝে রেখে অভিনয় করছিলে।

-এ কি বলছো নিবিড়? নিজের করা কৃতকাজ ঢাকতে আমার দিকে আঙুল তুলছো?

-অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকো না। আমি ক্লিয়ার করে দিচ্ছি সব। বিয়ের দিন রাতে রুশমির ফোন আসে। অনেক বিচলিত ছিল। আমি যেন তাড়াতাড়ি যাই অনেক আকুতি মিনতি করছিল। এয়ারপোর্টে পৌঁছে দেখি এক্সিডেন্ট করে রাস্তায় সেন্সলেস হয়ে পরেছিল। আমি যদি ওর কথা প্রথমে বিশ্বাস করতাম তবে কখনোই ওইদিন আমি দেরিতে যেতাম না, আর বাজে ছেলেদের পাল্লায় পরে এক্সিডেন্ট ও করত না। ওইদিন সারারাত হসপিটালে এ ছিলাম। বাসরঘরে পৌঁছাতাম কিভাবে? মন থেকে একটা মেয়ে কতখানি ভাঙে এমন পরিস্থিতিতে, নিশ্চয়ই অনুভব করতে পারো। আমার জন্য কোনো মেয়ে রিস্কে ছিল, আবার এক্সিডেন্ট করে মাথায় ব্যথা পেয়েছিল। সেন্স আসতো সারাদিন এক দুই বার। উঠে স্বাভাবিক ব্যবহার করতো না। ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়াতে হতো। এসব আমার জন্য হয়েছিল। আর আমি সুখে বউয়ের সাথে বাসর করতাম মায়াবিনী? তুমি আমাকে এই চিনো? মেয়েটা না ওঠা পর্যন্ত আমি স্বাভাবিক হতে পারতাম না। যেদিন সেন্স ফিরে সেদিন তুমি আমাকে আর রুশমিকে দেখেছিলে। তুমি জানো আমি কতোটা রিলিফ ফিল করেছিলাম। শুধু মেয়েটাকে আশ্রয় দিয়ে ভরসা দিচ্ছিলাম। ভয়ে কাঁদছিল সে। আমার মনে কিছুই ছিল না। তাই বাসায় এনেছিলাম। আমি জানতাম তুমি নিশ্চয়ই গ্রহন করবে ভালো মনে। আর বাইকে চড়ানো। মেয়েটাকে সাইকাস্ট্রিক এর কাছে নিয়ে যেতাম কাউন্সিলিং এর জন্য। রিকসায় নিতাম? তার চেয়ে ভালো বাইকে বসানো। কফিশপে বসা নিয়ে বলছো? মেয়েটা বাংলাদেশে কেন এসে জানো? এত কিছু হওয়ার যে কারন এখন সেটা বলছি। রুশমির হাসবেন্ড ওর থেকে বেশ বড়। বিয়ের পর ৬/৭ বছর ভালোই ছিল। কিন্তু রুশমি মা হতে পারছিল না। এতে ওর হাসবেন্ডের রাগ হয়ে যায়। প্রথমে রাগারাগি পরে গায়ে হাত তোলা। প্রতিদিন রুশমি টর্চার ফেস করতো। ভাই এর কাছে যেতো। কাছাকাছি জায়গাতেই ছিল ভাই। কিন্তু ওর হাসবেন্ড ওকে এনে আবার মারত। এই টর্চার নিতে নিতে অসুস্থ হয়ে যায় মানসিক ভাবে। এত দিনে ওর মা মারা যায়। জার্মানে লুকানো জায়গাও ছিল না। বাংলাদেশে আসবে প্লেন করে। আমার নাম্বার জোগাড় করে চলে আসে। এ-ই ছিল ওর অতীত। আমি প্রথম দিকে খোঁজ রাখতাম রুশমি ভালো আছে কি না। যদি খোঁজ রেখে যেতাম, তবে ও মানসিক ভাবে অসুস্থ হতো না।এভাবে রোজ টর্চার ও হত না। এসব কফিসপে বলছিল, কান্না কমছিল না তাই ওইদিনও সাহারা দিয়েছিলাম জড়িয়ে ধরে। ওইদিন নীলা থাকলেও এমনই করতাম। রাস্তার কোনো মেয়ে থাকলেও। আর শশী হলে আমি কেঁদেও ফেলতাম। এখন পার্থক্য বুঝেছো? আর যেদিন তুমি আমাকে আর রুশমিকে দেখেছিলে অফিসের সামনে ফার্মাসিতে। আসলে ওর হাসবেন্ড ওর বাংলাদেশের আসার খবর ও পেয়েছিল। আবার রুশমির বাংলাদেশের ফোন নাম্বার ও। এটার জন্য রুশমি ভয় পেয়ে হাত কাটে। ব্যান্ডেস করাতে ওখানে নিয়েছিলাম। ভয়ে সেদিন আমায় ধরেছিল। আমি তো ওইদিন ধরিনি।

বলে নিশ্বাস নিলো নিবিড় আবার বলতে লাগল,

-মায়াবিনী তুমি যদি দুইদন্ড সময় বসতে রুশমির পাশে, তবে ওর শরীরের হাজারো ক্ষত তোমার চোখে পরত। ডক্টর আমাকে বলছিলেন। যার শরীরে এমন দাগ সে মানুষটার মনে কেমন দাগ পরেছে? পৃথিবীতে কেউ নেই যার কাছে মন খুলে বলতে পারবে। আমার মা হয়ে তিনি বুঝতে পারেন নাই এক নারীর হৃদয়ের হাহাকার। তুমি চুপ ছিলে বলে ভেবেছিলাম তুমি হয়তো বুঝতে পেরেছো। আসলে তুমিও বুঝোনি।

বলে নিবিড় থামলো। আমার চোখ দিয়ে অনবরত পানি ঝড়ছে। কেন এমন হচ্ছে জানি না। গিল্টি ফিলিংস হচ্ছে? নাকি অনুশোচনা? কি ভাবছি? শাব্দিক অর্থ একই তো। ধপ করে খাটে বসে পরলাম। নিবিড় ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। হটাৎ আবার বলা শুরু করলো। ওর মুখ পানে তাকালাম কথাগুলো শুনে।

-মায়াবিনী তোমার মনে আছে কিনা জানিনা তবে একদিন আমি তোমায় কথা দিয়েছিলাম,
“আমি অন্য কোনো নারীকে জড়িয়ে ধরবো না, ছুঁয়েও দেখবো না পুরুষত্বের অধিকারে।”
আমি কোনোদিনও ধরিনি। ধরবো ও না। আমার সব জুড়ে তুমি ছিলে। তুমিই থাকবে। তুমি ব্যতিত কোনো নারীর জায়গা নেই এই নিবিড় আহমেদের জীবনে।

বলে বেরিয়ে গেল নিবিড়। ঝড় না বলে কয়ে এসেছিল। একই ভাবে চলেও গেল। শুধু ঝড়ের পরের বিধস্ত করে রেখে গেছে আমায় নিবিড় নামক ঘুর্ণিঝড়।

চলবে……

???
প্রিয় পাঠকবৃন্দ, একটু ধৈর্য্য ধরুন। পরের পর্বে নিবিড় আর মায়াবী আবার এক হবে। আজকের পর্বটা দরকার ছিল। নিজেরা কেন কি করেছে তা দুইজনের কাছে এখন সবটা খোলাসা হলো আজকের পর্বে। বাজে মন্তব্য না করে গঠনমূলক মন্তব্য করুন। একটা গল্পের থিম ভাবাই যায়। তবে রং দিয়ে সাজিয়ে গল্পকে সাজাতে পাঠকের মন মতো অনেক সময় লাগে। আপনাদের মন রাখতে লেখকেরা বহু কষ্ট করে থাকেন। লেখকদের সুন্দর মন্তব্য দিয়ে আগ্রহ দিবেন। অন্যান্য কিছু আমার প্রিয় পাঠকবৃন্দ আছেন উনাদের সুন্দর মন্তব্যের জন্য গল্পটি লেখা বাদ দেইনি। তাদেরকে আমার আন্তরিক ভালোবাসা❤️❤️।

?Double split personality disorder( বিভক্ত ব্যক্তিত্ব ব্যাধি) বা Dissociative identity disorder (বিযুক্তি পরিচয় ব্যাধি একাধিক ব্যক্তিত্ব ব্যাধি) -কে সংক্ষেপে ডিআইডি (DID) বলা হয়। বিযুক্তি পরিচয় ব্যাধি (ডিআইডি) একটি মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা। যা একপ্রকার মানসিক রোগ। ডিআইডি আক্রান্ত ব্যক্তিদের আলাদা আলাদা পরিচয় থাকে। এই ব্যক্তিত্বগুলি বিভিন্ন সময়ে তাদের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে। প্রতিটি পরিচয়ের নিজস্ব ব্যক্তিগত ইতিহাস, বৈশিষ্ট্য, পছন্দ এবং অপছন্দ রয়েছে। ডিআইডি মেমরি এবং হ্যালুসিনেশনের ফাঁকে ফাঁকে ডেকে আনতে পারে বিভিন্ন ব্যক্তিত্বকে। মজার কথা হলো এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি নিজেই জানে তার এমন রোগ আছে। এবং মাঝে মাঝে নিজের একটি ব্যক্তিত্বকে অন্য একজন মানুষ হিসেবেও আখ্যায়িত করে?।

#তোমার_প্রেমে_মাতাল
#লেখিকা_মায়াবিনী (ছদ্মনাম)
#পর্ব_২৮

হসপিটালের করিডরে সবাই। চিন্তায় সবাই মগ্ন। কয়েক ঘন্টার মাঝে কত কিছু হয়ে গেল ভাবতেই পারছি না। ডক্টর বের হলো অপারেশন থিয়েটার থেকে।

-সমস্ত পয়জন বের করা হয়ে গেছে। বেশি পয়জন পেটে পরেনি। সাবধান ছিল বাড়ির লোক। কিছুক্ষণ পর জ্ঞান ফিরে আসবে। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে রোগীকে কোনো প্রকার প্রেশার না দেওয়া হয়। মেন্টাল ট্রমার মাঝে আছে। অনেক বেশি কেয়ার করতে হবে। আপনি তো আগে থেকেই জানেন রোগীর সমস্যা। আশা করি এবার আপনি আরো কেয়ারফুল থাকবেন মিস্টার নিবিড় আহমেদ।

-জ্বি ডক্টর।

——————–

জীবনে ট্র্যাজিডি থাকবেই। তাই বলে সিনেম্যাট্রিক ভাবে? আশ্চর্য লাগে আমার। হোটেল রুমে বসে ভাবছিলাম নিবিড় নিজের সবকিছুর সাফাই দিয়ে গেল। আমি তো পারলাম না। আসলে আমরা কেউ কাউকে আগে থেকে সবটা বলিনি। যদি বলতাম তবে এতকিছু হতো না। জানি নিবিড় আগে বলে নাই, কিন্তু আমার উচিত ছিল নিজে থেকে প্রশ্ন করা। প্রথমে জিজ্ঞেস করলেই আমাদের সম্পর্ক চির ধরতো না। যা হয়ে গেছে তা নিয়ে ভেবে কি হবে? আমার সংসার আমাকেই সামলাতে হবে। তার সন্তান আসছে তাকে বলাও হয়নি। ভেবেছিলাম হানিমুনে তাকে সারপ্রাইজ দিবো সেই ছেলে আর হতো দিলো কোথায়! যাক এইটা বলেই সম্পর্ককে আবার ঠিক করতে হবে। পেটে হাত দিয়ে বললাম,

-তোকেই যে মা বাবার সম্পর্কের বাঁধন মজবুত করতে হবে। তুই আসার খবর দিয়েই তোর বাবাকে নিজের কাছে ডাকতে হবে।

ওইরাতে অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে গিয়েছি। ভোরের দিকে ঘুম ভেঙে গেছে অনেকটা। নিজের হাত পা নাড়াতে চেস্টা করছি কিন্তু পারছি না। কেমন অস্বস্তি লাগছে ঘুমের মাঝে। অনেকদিন পর এভাবে ঘুম ভেঙেছে আমার। কি মনে হতে চটজলদি চোখ খুললাম নিজের। দেখি আমি বিছানাতেই। আমার পাশে একজন শুয়ে আছে। মনে করার চেষ্টা করছি কালকে রাতে কোথায় ছিলাম। হ্যা নিবিড় এর অপেক্ষা করতে করতে খাটের পাশে নিচে বসে ছিলাম। কখন ঘুমিয়েছিলাম জানি না। যার পাশে শুয়ে আছি সে আমায় আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে বেঘোরে ঘুমোচ্ছে। আমি তার বুকের কাছে মাথা চেপে শুয়ে আছি। তার বুকের হৃৎস্পন্দন আমি শুনতে পাচ্ছি। তার ডান হাতের উপর আমি শুয়ে। তার শরীরের ঘ্রাণ আমার অনেক পরিচিত। এ যে আমার চিরচেনা। যার বাম পাঁজরের হাড় দিয়ে আমায় বানিয়েছে। মুখ উঁচু করে মানুষটাকে দেখলাম। আমার প্রেম, আমার পাগল বর নিবিড়। তার মানে ও আমায় বিছানায় এনে শুইয়েছে? মনটা সাথে সাথে খুশিতে ভরে উঠলো। ওর দিকে তাকালাম, দেখি চুল গুলো লেপ্টে আছে কপালে। এভাবে মিশে শোয়ায় ঘেমে গেছে ছেলেটা। কি নিশ্চিন্ত দেখাচ্ছে তাকে। একদম নিষ্পাপ। কপালের চুল গুলো আমার ডান হাত দিয়ে সরিয়ে দিয়ে ফু দিলাম। আমায় দুই হাত দিয়ে যেভাবে জড়িয়ে শুয়েছে যেন হালকা বাঁধন ছাড়লেই আমি পালিয়ে যাবো। ভোরের আলো এখনো ফোটেনি। উঠে বসতে হবে। আমার কোমড় থেকে ওর বাঁহাত সরিয়ে দিতে উঠে বসবো তখনই নিজেকে দেখে চমকে উঠলাম। আমার শরীরে আঁচলটা নেই। কালকে শাড়ি পরেই ঘুমিয়েছি। তাই বলে এভাবে নিয়ে শুবে? এই ছেলে প্রতি সময় এমন করে। আমি শাড়ী পরি বা জামা। ঘুম ভাঙার পর দেখতাম আমার আঁচল নেই নয়তো ওড়না নেই শরীরে। একা শুলে এমন হয় না। নিবিড় যে কিভাবে এমন করে ঘুমের মাঝে কে জানে। উঠে বসে নিজেকে ঠিক করে ওজু করে নামাজ পড়ে নিলাম। বিছানার কাছে এসে ভাবলাম নিবিড় যেদিন আমার সাথে ঘুমাতো আমার এলার্ম এর শব্দে ঘুম ভাঙাতে হতোনা ফজরের নামাজের জন্য। একাই আমার ঘুম ভেঙে যেতো। দুইবছরে এইভাবেই আমি নামাজে উঠতাম। এই এক মাসে প্রায় নামাজ বাদ গেছে ফজরের নামাজ পড়তে। নিবিড় আমার জড়িয়ে ঘুমায় নাই। আবার নিশ্চিন্তের ঘুম ও হয় নাই আমার। এতদিন পর সবই হলো। নিবিড় এর পাশে থেকেও আমার প্রতি কেয়ারিং প্রেম দেখতে পাচ্ছি। তার মানে সত্যি এখন যাহ হবে ভালো হবে। আমি আগে এগোবো। তোমায় আমায় গ্রহণ করতেই হবে মাতাল ছেলে। বলে মুচকি হাসলাম।

মুখে কারো হাতের স্পর্শ অনুভব করছি। কেউ আমার দাঁড়ির উপর হাত ঘোরাচ্ছে। আবার চুল গুলো জোরে জোরে টানছে। এতে আমার অনেক আরাম লাগছে। যেন ঘুমিয়ে যাবো আবার। কিন্তু সামনের মানুষটা হতে দিলে তো। ঠোঁটের বাম পাশের নিচে নরম কিছুর ছোঁয়া পেলাম। হ্যা আমি এ চিনি। মায়াবিনীর ঠোঁটের স্পর্শ। চাইলে আমি ওকে চেপে ধরতে পারি। কিন্তু এখন আমার রাগ। কথা বলবো না। সাড়াও দিবো না। মেয়েটা আমার জন্য অপেক্ষা করেছিলো কত রাত। কিন্তু ঘুমিয়ে গেছে। কেন? আরো একটু অপেক্ষা করতে পারলো না? এসে দেখি নিচে বসে বেডের সাথে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে আছে। আমাদের তো কথা শেষ হয়নি। ঘুমাবে কেন? খুব রাগ হলো আমার। কিন্তু কোলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিলাম। আমারই তো বউ। রাগ করে কি বা হবে? মায়াবিনীর ঘাড় ব্যথা করবে নিচে ওভাবে থাকলে। আর আমিও আর মায়াবিনী থেকে আলাদা থাকতেও পারবো না। আমি পাশে যেয়ে শুয়ে ডান হাত ওর মাথার নিচে দিয়ে হাতটা ঘুরিয়ে ওকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলাম। এভাবে শুলে মেয়েটা ঘেমে যায়। গলার ঘাম জমলে ঠান্ডা লেগে যাবে ওর। আবার না জড়িয়ে শুতেও পারি না। অনেকদিন দূরে থেকেছি। রাগ থাকুক আর যাই থাকুক আর মায়াবিনী থেকে আমি দূরে থাকবো না। কোনোভাবেই না। তাই যখন জড়িয়েই শুবো আগের মতো ওর শাড়ীর আঁচল সরিয়ে দিলাম গায়ে থেকে। এ তো নতুন নয়। এখন বাঁহাত দিয়ে কোমড় জড়িয়ে ওকে দেখতে দেখতে ঘুমিয়েছি। সকালে এমন করে ঘুম ভাঙাচ্ছে না তো, ভাব করতে চাচ্ছে আমার সাথে। আমিও এখন এত তাড়াতাড়ি ভুলবো না। কিন্তু মায়াবিনী আবার আমার দাঁড়িতে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। আর সহ্য হলো না। নাকি পুরোনো স্মৃতি মনে হয়ে গেল কি জানি? তাই বেখেয়ালি হয়ে মায়াবিনীর হাত খপ করে ধরে ঠোঁটের উপর হাত চেপে ধরলাম। হাতের তালুতে চুমু দিলাম। তাকিয়ে দেখি মায়াবিনী বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে। মনে মনে বললাম এই বুঝি ধরা খেয়ে গেলাম। তাড়াতাড়ি উঠে বসে রিরক্ত মাখা কন্ঠে বললাম,

-এখানে কি করছো? সরো।(বলে উঠে চলে গেলাম ওয়াশরুমে)

পেছন থেকে মায়াবিনী বলল,
-নামাজ পড়তে ডেকেছি।

নিবিড়কে ডেকে তুলে দিয়েছি নামাজ পড়তে। খুব বিরক্ত হওয়ার ভাব নিয়েছে। কিন্তু আমি জানি এটা মন থেকে নয়। হাতে দেওয়া চুমু তাই প্রমাণ করে। ভেবে হাসলাম।

সকালে নাস্তা করছিলাম হোটেলে। হটাৎ নিবিড় এর ফোন আসে। দেখি নিবিড় ফোন ধরে শকে আছে। কি কিভাবে কখন এমন বলছে। ওপর প্রান্তের কথা শোনা যাচ্ছে না। শেষে নিবিড় বলল,

-তুই একটু ম্যানেজ কর। আমি আর মায়াবিনী ফিরে আসছি। কয়েক ঘন্টা তুই সামলে নে। কোনোভাবেই যেন নিজের ক্ষতি না করে।

বলে ফোন রেখে দিল। জিজ্ঞেস করলাম,
-কি হয়েছে নিবিড়?

-রুশমির হাসবেন্ড নাকি বাংলাদেশে এসেছে। রুশমির নাম্বারে মেসেজ দিয়ে জানিয়েছে। বার বার কল ও দিচ্ছে। রুশমি বুঝছে ওর ঠিকানা জেনে ফেললে ওকে নিয়ে যাবে। এবার নিলে মারবে না একদমই মেরে ফেলবে। ভয়ে বার বার বলছে সুইসাইড করবে। পাগলামি শুরু করেছে। ম্যানেজ করা মুশকিল হচ্ছে। বারবার আমাকে খুঁজছে।

-ভাবীপু একা তো সামলাতে পারবে না। রুশমীর ভেতর দিয়ে কি চলছে!

-হ্যা মায়াবিনী। আমাদের এখন ফিরে যেতে হবে। তুমি তো বুঝতে পারছো তাই না? আমার দায়িত্বে এখন। ক্ষতি হয়ে গেলে মানতে পারবো না।

-এসব নিয়ে এখন ভেবো না। আমি সব বুঝি। আমাকে নিয়ে ভেবো না। ওর ডক্টর কে? ওনাকে কল করো নিবিড়। আমাদের বাসায় যাক। ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিক। আমাদের তো যেতে সময় লাগবে। ততক্ষণ একটানা চোখে চোখে রাখা কি পসিবল?

-মায়াবিনী তুমি ঠিক বলেছো। Thank you so much. ডক্টরকে কল করছি আমি।

-তুমি কল করো।

নিবিড় ফোন দিয়ে বলে দিলো।

আমরা শীপে বসে আছি। নিবিড়কে দুশ্চিন্তায় কিছু ভাবতে দেখছি। আমার ও মনে বিভিন্ন জিনিস মাথায় আসছে। নিবিড়কে বলবো কি না ভাবছিলাম। তারপর ও বলেই ফেললাম,

-একটা কথা বলি?

-বলো। এটা আবার জিজ্ঞেস করতে হয়?

-না মানে রুশমির ব্যাপারে।

-কি বলো তো?(ভ্রু কিঞ্চিৎ উঠিয়ে)

-ও বাংলাদেশে আসছে ওর হাসবেন্ড কি ভাবে জানলেন? তাও না হয় পাসপোর্ট মিসিং আর এয়ারপোর্টের পেসেঞ্জার লিস্ট দেখে জানতে পারছে। কিন্তু ফোন নাম্বার? এই নাম্বার কি করে পেল?

-জানো মায়াবিনী আমিও এটাই ভাবছি। যেদিন হাত কেটেছিল ওইদিন এবোর্ড এর নাম্বার থেকে কল এসেছিল। তাও ভেবেছি পেল কি করে?

-এখন বাংলাদেশে লোকটা চলে এসেছে। মানে নাম্বার দেখে চিনেছে। সিম তুমি কিনে দিয়েছো? কে কে জানে নাম্বার টা?

-আমি কিনে দিয়েছি সিম হসপিটালে এডমিটের পরেরদিন। ফোনে সিম ভরে হসপিটালে রেখে এসেছিলাম। যদি ওর জ্ঞান ফিরলে যেন যোগাযোগ করতে পারে। আমার নাম্বার আর শশীর সেভ করে দিয়ে এসে ছিলাম। শশীকেও এসএমএস করে রুশমির নাম্বার পাঠিয়ে ছিলাম। এই হিসেবে আমি আর শশী ছাড়া… ওয়েট ওয়েট মায়াবিনী

কথা বলতে গিয়েও আঁটকে যায় নিবিড়। কি যেন ভাবছে।

-কি হয়েছে নিবিড়? (চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম)

-এয়ারপোর্টে রুশমি আমাকে বাংলাদেশী নাম্বার থেকে কল করেছিল। আর ও বলেছিল ওর নাম্বার থেকে আমায় কল করেছে। কিন্তু এয়ারপোর্টে নেমে ওর কাছে কি বাংলাদেশী সিম থাকবে? আবার আমি পৌঁছে দেখেছিলাম ওর ওই নাম্বার সুইচ অফ। ওকে খুঁজে পেতে তাই আমার দেরি হয়। চুরি গেলে ওর ফোন ও যেতো শুধু সিম কেন গায়েব?

-এমন ও তো হতে পারে কারো কাছে থেকে ফোন নিয়ে করেছিল।

-হতে পারতো। কিন্তু এমন না। রুশমি বলছিলো ও ফোনে হোটেলের লোকেশন দেখছিল। সিম ছাড়া ডাটা ওন করেছে কিভাবে? ওয়াইফাই ও তো পাবে না তখন। আবার ওর ফোনের সমস্ত ডাটা ডিলিট ছিলো। একদম ফ্লাশ করা হয়েছে এমন। ও কাছে আমার নাম্বার ছিল। তাই ফোন দিতে পেরেছিল। ওর ফোনে গুগলেই মেইল একাউন্ট খোলা ছিল না। আমার নাম্বার ও না। তবে ও ফোন কল আমাকে করেছে কিভাবে?

বুঝতে পারছিলাম কিছু চিন্তা করছে। এখন এসব নিয়ে ভাবার সময় না। নিবিড় ফোন বের করে দেখি রুশমির নাম্বারে কল করলো। ফোন সুইচ অফ। দ্যান নিবিড় শশী আপুকে ফোন দিল।

-হ্যালো শশী। রুশমিকে ফোনটা দে তো। কথা বলবো আমি।

-………….কি বলল জানিনা।

-হ্যালো রুশমি শান্ত হও। শান্ত হও বলছি। আমি আসছি। ৭-৮ ঘন্টা লাগবে।

-ওপর প্রান্তে কি বলল জানি না আমি।

-আর একটা কথা। তোমার নাম্বার আমি আর শশী ছাড়া কেউ জানে?

-(…………)

-জানে না? কাউকে নিজে থেকে কল ও করোনি?

-(………..)

-এত হাইপার হচ্ছো কেন? তোমার হাসবেন্ড নাম্বার কি করে পেল ভাবছি। আচ্ছা শোনো তুমি এয়ারপোর্টে কার নাম্বার দিয়ে কল করেছিলে আমায়? সিম ছাড়া ফোনে লোকেশন দেখছিলে কি করে? যেখানে মেইল একাউন্ট খোলা ছিল না।

-(……….)

-হ্যালো রুশমি? রুশমি? তুমি ঠিক আছো?

-(………..)

-কিহ?

-(……….)

-ডক্টর পৌঁছায় নাই? আমি আবার কল করে দেখছি।

-(………)

-খেয়াল রাখিস।

নিবিড় এর কথা শেষ হলে আবার কল করল কাকে যেন। হ্যা ডক্টরকে। এখনো যায় নাই কেন আমাদের বাসায় তাই। ফোন রেখে দিলো।

জিজ্ঞেস করলাম,
-কি হলো?

নিবিড় বলল,
-ফার্স্টে অনেক অশান্ত শোনাচ্ছিল। কিন্তু যখন বললাম আসছি। তখন আবার একটু শান্ত হলো। কিন্তু জানো প্রশ্ন গুলো করলাম তখন আর কিছু বলল না। ঘরঘর শব্দ করছিল। শশী ফোন নিয়ে বলল রুশমি নাকি কাঁপছে। চোখমুখ উল্টে ফেলছে। হসপিটালে ওকে এমন করতে দেখেছি। এ সময় ইনজেকশন দিতে হবে। ডক্টর এখনো পৌঁছায় নাই। তাই ইমিডিয়েটলি যেতে বললাম।

রাস্তায় আর কথা বললাম না কেউ এ নিয়ে। শহরে পৌঁছানোর আধা ঘন্টা আগে কল আসে নিবিড় এর। শুনি রুশমি পয়জন খেয়েছে। তাও ওয়াশরুমের হারপিক। সেন্স ফেরার পর দরজা খুলে ওয়াশরুমে নাকি গিয়েছিল রুশমি। একটু মুখে দিতেই শশী আপু দেখে ফেলে। হসপিটালে নিয়ে যাচ্ছে সবাই। নিবিড় তাড়াতাড়ি বাসায় ফোন করে। বাবা মাকে যেতে বলল হসপিটালে। পুলিশ কেস। বাবা না গেলে ডক্টর রোগি ধরবে না। তাই ফোন করা। আমরা বাস থেকে নেমে হসপিটালে পৌছালাম। যেয়ে দেখি সবাই হসপিটালের করিডরে। তারপর ডক্টর বের হওয়া মাত্র জানলাম রুশমি ঠিক আছে। এইদিকে আমি আমার বাসার আর নিবিড় এর বাসার সবাইকে জানালাম রুশমির এখানে আসার কারন। সবাই নিবিড় এর উপর রেগে আছে। কেন আগে সবাইকে জানায় নাই। মা বলছে এসব জানলে রুশমিকে বাসায় উঠতেই দিতো না। উল্টো আমার বাবার বাড়ি পাঠিয়ে নিবিড় আরো বড় ভুল করেছে। কারন আমাদের বাসায় এ কাজ করেছে রুশমি। আমার বাসার সবাই জেরার মুখোমুখি প্রায়। আবার কিছু মেহমান ও ছিল আমাদের বাসায়। এসব মিলিয়ে মা বাবা রেগে আছেন। কিন্তু একমাত্র আমার বাবা চিন্তিত নয় মতেও। বিরক্ত ও না। বরং নিবিড় এমন একটা মেয়েকে আশ্রয় দিয়েছে বলে জামাই এর উপর তিনি অনেক সন্তুষ্ট। এইদিকে নিবিড় এখনো চিন্তায় মগ্ন। কে কি বলছে তা ওর কানে পৌছাচ্ছে কিনা সন্দেহ। নিবিড় হটাৎ যেয়ে শশীর কাছে থেকে রুশমির ফোনটা নিয়ে কি যেন দেখতে লাগলো। কিন্তু এখন চিন্তা মুক্ত নয়। বরং আরো চিন্তিত হয়ে গেল। চিন্তার ডুব সাগরে ডুব। যেয়ে ওর পাশে দাঁড়ালাম। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতে দেখি, ও আমার হাতে ফোনটা দিল। আমি হাতে নিয়ে চেক করতে দেখি নিজেও ভাবনায় পরে গেলাম। রুশমি চায় টা কি?……..

চলবে………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here