#তোমার_সমাপ্তিতে_আমার_প্রাপ্তি Season_2,পর্ব (৯)
#রোকসানা_রাহমান
পার হলে কুড়ি
ডাকে তারে বুড়ি!
ইশাদ বিরতিহীন ছড়া কাটছে আর পেট চেপে হাসছে। মাঝে মাঝে চোরা চোখে তিহির মতিগতি বোঝার চেষ্টা করছে। তবে সরাসরি চোখ রাখছে না৷ রাখার সাহস থাকলে তো রাখবে৷ মুহূর্তেই মেয়েটির নাকের ডগা লাল হয়ে গেল। চোখে ফুটছে শানিত দৃষ্টি। যেন চোখ দিয়ে ছিন্নভিন্ন করে দিবে ইশাদের সর্বস্ব! এমন ধারালো দৃষ্টির কাছে ধারালো অস্ত্রটাও বুঝি নগন্য। আচ্ছা,কেমন ব্যথার ধার হবে সেই ছিন্নভিন্নের? জানার আগ্রহটা কি নেহাৎই ছেলেমানুষই? নাকি ভালোবাসানামক পিন্জিরায় বন্দী হওয়ার ছটফটানি? সে কি চাইছে এই মেয়েটির সবকিছুতে বন্দী হয়ে যেতে? সন্তর্পণে নিজেকে উৎসর্গ করতে!
রাগে তিহির নাক দিয়ে বের হচ্ছে তপ্ত নিশ্বাস। সে কী করবে না করবে দিশা পাচ্ছে না৷ তবে কিছুতো একটা করবে। কিন্তু সেটা কী?
এদিকে টনু মিয়ার চোখে উচ্ছ্বাস দেখা যাচ্ছে। তার পুরো নজর ইশাদের উপর। ইশাদের ছড়া কাটা ভঙ্গিটা বুঝি তার খুব পছন্দ হয়েছে। তার ঠোঁটে ফুটছে এক ঝলক তরল হাসি। চোখের চাহনিতে ভেসে যাচ্ছে ছোটবেলার পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে বেড়ানো দিনগুলোতে। কিছুক্ষণ নিরবে আনন্দ উল্লাস করলেও এবার ইশাদের সাথে তাল মেলাতে শুরু করে। এতে তিহির রাগ দাবানলের চূড়ায়! সে ঘন ঘন কয়েক বার নিশ্বাস ফেলে এদিক ওদিক ছুটতে শুরু করল। দিগভ্রান্ত হয়ে ঘুরছে ছাদের চারপাশ। বিড়বিড় করে কি কিছু বলছে? হয়তো!ঠোঁটদুটো ক্রমাগত নড়ছে যে। তবে তা ইশাদ কিংবা টনু কারো কানেই পৌঁছুল না৷ ইশাদ দম ফেলে বড় নিশ্বাস টানতেই তিহি দৌড়ে এল। তার দু’হাতে মাখানো সিমেন্ট। সময় জ্ঞান না করে ইশাদের ধূসর টি-শার্টটিতে মেখে দিল। ইশাদ স্তব্ধ,হতবাক,হতভম্ব! বুদ্ধিশূন্য হয়ে তাকিয়ে আছে তিহির দিকে। তার এমন বোকা চাহনিতে ফিক করে হেসে দিল তিহি। উদ্যত সুরে বলল,
“ফের যদি বুড়ি বলেছেন,আপনার গেঞ্জিতে নয় জিভে সিমেন্ট লাগিয়ে দেব। তারপর মিস্ত্রী সেজে ইটও পর পর বসিয়ে দেয়াল তুলে দেব। হুহ! তখন দেখব কী করে দেয়াল ভেঙে ছড়া কাটেন।”
তিহি বাঁকা হেসে রুমে চলে গেল। তার দরজা লাগানোর শব্দে ইশাদের চেতনা ফিরে। মতিষ্কে বসে যায় ক্ষনিকের হারিয়ে যাওয়া চিন্তা ও বুদ্ধি শক্তি। দ্রুত তাকায় তার বুকের প্রান্তে! ধূসর রঙে নরম সুতোর মাঝে ভেজা সিমেন্টে আরো ধূসরের ছায়া পড়েছে যেন। কী করবে? খুলবে নাকি পড়ে থাকবে? খানিকটা দ্বিধাগ্রস্থ হয়ে পড়ে ইশাদ। তন্মধ্যেই টনুর হাসি কানে এল। ইশাদ কড়া চোখে তাকায়। টনু হাসছে,আর শরীরের অর্ধেক অংশ পেছনে ঝুলে পড়ছে। তার এই ঝুলানো হাসিতে ইশাদ অসস্থিতে পড়ে গেল। সামনে তাকাতে লজ্জায়ও পড়তে হল। কাজের ছেলে দুটিও তার দিকেই তাকিয়ে আছে। বিস্ময়মাখা চাহনি। যেন সিমেন্টমাখা সার্কাস পৃথিবীতে সেই প্রথম শুরু করেছে। যা বিনা টিকিটে সকলে উপভোগ করল!
ইশাদ নিজের স্থান থেকে দ্রুত কেটে পড়ার সিদ্ধান্ত নিল। দু’পা এগিয়ে থমকে যায়। মাথার পাশেই রশি বাধা। তাতে গোটা কয়েক কাপড় নাড়া। কিছুক্ষণ আগেই হয়তো নেড়েছে। এখনো কোণা বেয়ে পানি পড়ছে। ইশাদের ঠোঁটে দুষ্টু কামড় পড়ে। আগপিছ না দেখে এক টানে গেঞ্জি খুলে ফেলে। মেলে দেয় রশিতে। ঠিক তিহির আকাশী রঙের ওড়নাটির সাথে লাগিয়ে!
_________________________
সকালে ঘুম ভাঙার পূর্বেই শাহিনা শাইখা মিহিকে টেনে তুললেন। আড়মোড়া ভাঙার সময়টুকুও দিলেন না। টানতে টানতে সোজা রান্নাঘরে হাজির! মিহি তখনো ঘুমে ঢুলছে। বেখেয়ালে ধাক্কা খেল চুলার পাশের দেয়ালে। মাথায় খানিকটা লাগল। ব্যথাতুর স্বর বের হয়ে আসে কন্ঠ ছেড়ে,
“আহ্!”
শাহিনা শাইখা ফ্রিজ থেকে ডিম বের করছিলেন হুড়মুড়িয়ে এসে বললেন,
“কী হলো?”
ততক্ষণে মিহির ঘুম কেটে গিয়েছে। বিনয়ী রক্ষায় বলল,
“কিছু না আন্টি।”
শাহিনা শাইখার কপালে হঠাৎ ভেসে উঠা উদ্বেগের ছাপটা মিলিয়ে যায়। ঠোঁটে মিষ্টি হাসি ঝুলিয়ে আহ্লাদ নিয়ে বললেন,
“আজ তোমাকে ‘ডিম পরোটা’ বানানো শেখাব। ইশাদের খুব পছন্দের। সপ্তাহের একদিন সে আয়েশ করে খায়। সেই দিনটি হলো আজ। বলো তো আজ কী বার?”
মিহি কিছুক্ষণ চুপ থেকে হঠাৎ বলল,
“শুক্রবার।”
“বাহ! এইতো পেরেছো। আজ সরকারী ছুটি। তবে আমার ছেলে মানে ইশাদের কিন্তু ছুটি নেই। বল তো কেন?”
মিহি আবারও কিছুক্ষণ চুপ রইলো। তবে এবার মাথায় কিছু আসছে না। আন্দাজে ঢিল ছুড়ে বলল,
“উনি যে ডাক্তার তাই।”
শাহিনা শাইখা মেলামাইন বোলে ডিম ভাঙলেন। পর পর দুটো ডিম ভেঙে মিহির দিকে তাকালেন। বললেন,
“হুম। তবে সরকারী নয় বেসরকারী!”
কথাটা বলেই একগাল হাসলেন শাহিনা শাইখা। মিহি খেয়াল করল শাহিনা শাইখা যখন হাসেন তখন তার ডান গালে গর্তের মতো ছাপ পড়ে। বান্ধুবীদের কাছে শুনেছে এমন গর্তকে টোল বলে। আর টোল পড়া মেয়েরা সবসময় প্রসংশার পঞ্চমুখে থাকে। তাহলে কি উনিও অনেক সুন্দর। মিহি সময় বুঝে শাহিনা শাইখার নাক,মুখ,চোখ,ভ্রূ,গাল ভালো করে দেখে নিল। শেষে মনে মনে উচ্চারণ করল,আমার আন্টি টোল সুন্দরী!
শাহিনা শাইখা খানিকটা ধমকের সুরে বললেন,
“এই মেয়ে এত দূরে দাড়িয়ে আছো কেন? এদিকে এসো। শিখতে হবে তো। বিয়ের পর স্বামীকে ভালোমন্দ রেঁধে খাওয়াতে হবে না?”
মিহি প্রতিত্তোরে চুপ। যেন শাহিনা শাইখা একটা কঠিন কথা বলেছেন। যার অর্থ তার জানা নেই। জানার বিন্দুমাত্র আগ্রহও নেই। তবে সে সামনে এগোয়। শাহিনা শাইখার হাতের দিকে তাকিয়ে বলল,
“ইশাদ ভাইয়া তো বলেছেন আমায় কিছু শিখতে হবে না।”
“কেন?”
“কারণ উনি যা খেতে পছন্দ করেন তা আমি রাঁধতে পারি।”
শাহিনা শাইখার মুখে সন্দেহ। এক পলক মিহির আপাদমস্তক দেখে বললেন,
“কী কী পারো?”
মিহির সরল উত্তর,
“ডাল আর ভাত।”
শাহিনা শাইখা মুখ কুঁচকে নিলেন। বললেন,
“ডাল? পৃথিবীতে এই একটি খাবার দানা যাকে ইশাদ অখাদ্য,কুখাদ্য বলে আখ্যা দিয়েছে। আর তুমি বলছো ডাল ইশাদের পছন্দ?”
মিহি দুর্বল কন্ঠে বলল,
“উনি তো তাই বললেন।”
শাহিনা শাইখা উত্তরে কিছু বললেন না। কিছুক্ষণ থম মেরে রইলেন। সহসা মিহির থুতনি চেপে ধরেন। মুখটা সোজা করে মৃদু হেসে বললেন,
“আমার ছেলেটা তোমাকে এতোটাই পছন্দ করেছে যে তোমার হাতে ডাল খেতে রাজি হয়ে গিয়েছে। বাহ! এবার আমার চিন্তা পড়ল। আমি তো আরো ভেবেই মরছিলাম, ছেলেটা না আমার কথা রাখতে গিয়ে বিয়ে করতে রাজি হয়েছে সেই দুশ্চিন্তায়।”
শাহিনা শাইখার সাথে মিহির হাসিরও যোগসূত্র ঘটল। মিহির মাথায় কিছুক্ষণ হাত বুলিয়ে বললেন,
“তাই বলে ভেবো না তোমাকে আমি ছেড়ে দিচ্ছি। মা হয়ে তো আর ছেলেকে শুধু ডাল ভাত খেতে দেখতে পারি না! এসো। দেখ আমি কী করে ‘ডিম পরোটা’ বানাই। আজ শুধু দেখবে। পরের সপ্তাহে তুমি বানাবে। কেমন?”
মিহি মুখে কিছু বলল না। মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়। দু’চোখে আগ্রহ নিয়ে শাহিনা শাইখার রান্না দেখতে শুরু করে
শাহিনা শাইখা ডিমের উপর একে একে লবণ,জিরে গুড়ো,ধনিয়া পাতা আর কুঁচি করা টমেটো ছাড়লেন। এরপর ভালো করে ডিমটা ফেটে নিলেন। তাতে এক কাপ দুধ ও আটা ঢেলে ভালো করে মিশিয়ে নিলেন। পাশাপাশি চুলায় আগুন জ্বালিয়ে ফ্রাইপ্যান বসালেন। এক চামচ ঘি ঢেলে দিতেই মিহির প্রশ্ন,
“পরোটা বেলবেন না? বেলুন পিড়ি কই? দেন আমি বেলে দেই। আম্মু বলে আমি খুব সুন্দর রুটি বেলতে পারি।”
শাহিনা শাইখা সামান্য হাসলেন। সহাস্যে বললেন,
“না। এটাতে বেলার প্রয়োজন নেই। দেখছো না আটা তো তরল করে গুলেছি? তুমি ধরতেই পারবে না। বেলবে কী করে?”
নিমিষেই মিহির চোখে কৌতুহল ভর করল। বলল,
“তাহলে পরোটা কী করে হবে?”
“দেখ কী করে হয়!”
শাহিনা শাইখা আটা আর ডিমের মিশ্রণটির বোলটা তুলে নিলেন। পরিমাণমতো কড়াইতে ঢেলে দিলেন। শেষে কড়াইয়ের হাতল ধরে মাঝের অংশটা চারপাশে ছড়িয়ে দিলেন। চুলোর আঁচে হালকা জমে আসতেই নাড়ুনি দিয়ে চেপে চেপে এপাশ ওপাশ ভেজে নিলেন। প্লেটে তুলে নিয়ে মিহির সামনে ধরে হাসিমুখে বললেন,
“দেখ তো পরোটার মতো দেখাচ্ছে নাকী!”
মিহির কৌতুহলী চোখ দুটো এতক্ষণে বিস্ময়ে ভরে গেল। হাত দিয়ে হালকা ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখছে। বেলুন পিড়ি ছাড়াই যে এমন সুন্দর পরোটা বানানো যায় সে তো জানতোই না।দেখতে এতো সুন্দর খেতে না জানি কত সুস্বাদু! মিহি মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিল,আজ থেকে তারও ডিম পরোটা খুব পছন্দের!
ইশাদ ছাদ ছেড়ে সোজা ড্রয়িং রুমে চলে আসে। সোফায় বসতে গিয়ে চোখ পড়ে রান্নাঘরের দিকে। দরজায় আড়াল হয়ে দাড়িয়ে আছেন রুবিনা। লুকিয়ে লুকিয়ে কী দেখছেন ওভাবে? ইশাদ তক্ষুণি ধীর পায়ে এগোয় রান্নাঘরের দিকে। কিছুটা কাছে যেতেই নাকে লাগে পরোটার সুঘ্রাণ! ধীর চালে চপলতা চলে আসে। বড় বড় পা ফেলে রুবিনার পাশে এসে দাড়ায়। তার লুকানো চোখের দৃষ্টি অনুসরণ করে ভেতরে তাকায়। নিজের আম্মু আর মিহি ছাড়া কাউকে দেখা যাচ্ছে না। দুজনে মৃদু হাসছে আর ছোটখাটো কথাবার্তা চালাচ্ছে। এখানে লুকিয়ে দেখার মতো বিশেষ কিছু চোখে পড়ছে না ইশাদের। তাহলে উনি দেখছেনটা কী? ইশাদ নিরবতা ভেঙে বলল,
“আপনার কিছু লাগবে?”
রুবিনা চমকে উঠেন। ভীত চোখে ইশাদের দিকে এক পলক তাকিয়েই দ্রুত কদমে পালিয়ে গেলেন।
____________________________
ফাল্গুন মাসের আজ তৃতীয় দিন। শীতের ঝরা পাতার মর্মর শব্দ ছাপিয়ে বৃক্ষপল্লবে নতুন পাতারা উঁকি দিচ্ছে। আকাশের সোনালী কাঁচা রোদ সময়ে সময়ে তীব্রতার রূপ ধারণ করছে। মাঝে মাঝে জমছে সাদা মেঘের পুঞ্জ! মেঘে আর সূর্যের লুকোচুড়ি খেলার মধ্যে ঝরে পড়া সোনারোদ মাথায় নিয়েই জুমু’আর নামাজের জন্য বের হয়েছিলেন ইশাদ আর তার বাবা সোবহান শাইখ। দীর্ঘ সময় পর বাবা ছেলে এক সাথে নামাজ আদায় করলেন। নামাজ শেষে মসজিদ ছেড়ে বের হতেই ইশাদ হঠাৎ বলল,
“বাবা,তুমি যাও। আমি আসছি।”
ইশাদ কথা শেষ করেই আবার মসজিদের দিকে ছুটল। সোবহান শাইখ কিছুক্ষণ সেদিকে তাকিয়ে রইলেন। হঠাৎ করে ছেলের কী এমন কাজ পড়ল তা বুঝে উঠতে পারছেন না। পারবেন বলেও মনে হয় না। ছেলের সাথে তার মন কষাকষিটা তেমনভাবে বসেনি। তিনি চলে যাবেন নাকি ছেলের অপেক্ষা করবেন ভাবছেন।
ইশাদ প্রায় দশ মিনিট পর মসজিদ থেকে বের হল। তার মনে হয়েছিল বাবা হয়তো এতক্ষণে চলে গিয়েছেন। কিন্তু না তিনি তখনো দাড়িয়ে আছেন। সূর্যের আলোয় তাঁর আধপাকা চুলগুলো ঝিলমিলিয়ে উঠছে। ইশাদ বাবার কাছে আসে। কিছু না বলেই সামনে পা চালায়। সোবহান শাইখ ছেলের হাতের দিকে তাকিয়ে বললেন,
“তুমি জিলিপি খাওয়া শুরু করেছো কবে থেকে?”
বাবার প্রশ্নে ইশাদ অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। হাতের জিলিপির দিকে চোখ রেখে ইতস্ততভাবে বলল,
“আমার জন্য নয়।”
“তাহলে?”
ভদ্রতার খাতিরে হোক আর সম্পর্কের খাতিরেই হোক তার উত্তর দেওয়া উচিত। কিন্তু সে দিল না। নিরবে হেঁটে চলছে বাসার উদ্দেশ্যে। বাহিরটা নিরব থাকলেই কি ভেতরটাও নিরব থাকতে হয়? ইশাদের নেই। তার মনে মনে চলছে নানা রকম প্রশ্ন। সবগুলো প্রশ্নের মূল কেন্দ্র হলো তার বাবা। তার খুব জানতে ইচ্ছ করছে,বাবার জীবনের লুকিয়ে থাকা গল্পটি! এত বছরে তো তার এই ইচ্ছেটি জাগেনি আজ কেন জাগছে? কেন?
“তোমার মাকে বলবে,আজই নতুন ভাড়াটিয়াদের না করে দিতে। আগামী মাসের এক তারিখেই যেন চলে যায়। উঠে যখন পড়েছে বের করে তো দেওয়া যায় না। মাস শেষ হতে এখনো বারো/তেরো দিন বাকি। নতুন বাসা খোঁজার জন্য অনেক সময়।”
“আমি কেন বলব? তোমার বউকে তুমি বলো!”
ইশাদের মুখে এমন কথায় ক্ষনিকের জন্য থেমে গেলেন সোবহান শাইখ। বিপরীতে আর কিছু বলার ইচ্ছেপোষণ করলেন না। মৌনাবলম্বন করেই বাড়ি ফিরলেন।
ইশাদ বাসায় পৌছেই সোজা মিহিদের রুমের সামনে চলে গেল। দরজায় এক পা রাখবে অমনি দরজা আটকাল তিহি। সে বোধহয় ভেতরেই ছিল। দরজার এক পাশে দাড়িয়ে হাত দিয়ে অন্যপাশ আটকে ধরে আছে। ইশাদ ভ্রূ উঁচিয়ে বলল,
“কী সমস্যা? দরজা আটকালেন কেন?”
তিহি বাঁকা হেসে বলল,
“বোনকে সুস্থ রাখার জন্য।”
“বোন?”
তিহি ভেতরে তাকাল। মিহির উদ্দেশ্যে সুধাল,
“মিহি,আমি তোমার কে হয়?”
ইশাদও ভেতরে তাকাল। মিহি খাটের উপর পুতুলের মতো বসে আছে। কাঠগলায় বলল,
“তিহিআপু।”
তিহি পুনরায় ইশাদের দিকে ঘুরে বলল,
“হলো তো বোন?”
“একবার আপু ডাকলেই বোন হয়ে যায় নাকি?”
“অন্য কারোর বেলায় না হলেও আমার বেলা হয়। আজ থেকে এই মুহূর্ত থেকে মিহি আমার ছোট বোন। আপনাকে সাক্ষী রেখে বোন বানালাম। আচ্ছা,বোন বানাতে হলেও কি টাকা পয়সা দিতে হয়? আমার কাছে কিন্তু নেই। আম্মুর কাছ থেকে আনতে হবে। এখনতো যাওয়া যাবে না। আপনার উপর আমার বিশ্বাস নেই।”
ইশাদ কিছু বলবে তার আগেই ওর প্যান্টের পকেটে হাত ঢুকাল তিহি। মানিব্যাগ বের করেই মিহির কোলে ছুড়ে বলল,
“এই ব্যাগে যত টাকা আছে তত টাকার বিনিময়ে আমি তোকে বোন বানালাম। আমিন, আমিন, আমিন!”
তিহির অকস্মাৎ কর্মে ইশাদের মুখ হা হয়ে গেল। পাশ থেকে মিহি বলল,
“আমিন,আমিন,আমিন!”
ইশাদ দুইজনের দিকে চোখ বুলিয়ে তিহির উদ্দেশ্যে বলল,
“আপনি বোন বানান বা অন্যকিছু বানান তাতে আমার কী? সরুন আমি ভেতরে যাব।”
তিহি এবার দু’হাতে দরজা চেপে ধরে বলল,
“না। বড় বোন থাকতে ছোট বোন কে কামড়ে শেষ করে দিবেন এ অন্যায় কিছুতেই হবে না৷ আমি আপনাকে আটকাব। দরকার হলে…”
“আমাকে কামড়াবেন?”
“আমি এ কথা কখন বললাম?”
“বলেননি বলতে চেয়েছিলেন।”
“না।”
“তাহলে কী বলতে চেয়েছিলেন শুনি?”
তিহি নিজের অসম্পূর্ণ বাক্যটা শেষ করতে গিয়ে সব তালগোল পাকিয়ে ফেলল। ইশাদের কথা ছাড়া অন্যকিছু খুঁজেই পাচ্ছে না। তাহলে কি সে এটাই বলতে চেয়েছিল?
“কী হলো বলুন?”
ইশাদের তাড়ায় তিহি কড়া চোখে তাকায়। ইশাদ তিহির কানের কাছে ঝুঁকে আসে। ফিসফিসিয়ে কিছু বলতে গিয়ে থমকে যায়। মনে পড়ে ভেতরে হয় তো মিহির মা রুবিনা আছে। তাই সে কথাবার্তা এখানে শেষ করেই তিহির হাতে জিলিপিটা ধরিয়ে দিয়ে বলল,
“দুই বোন ভাগ করে খাবেন। নতুন সম্পর্ক বানালেন মিষ্টিমুখ তো করা উচিত!”
_______________________________
অন্ধকার ঘরটিতে হঠাৎ করেই আলো জ্বলে উঠে। দীর্ঘক্ষণ অন্ধকারে ডুবে থাকা চোখটিতে আলোর ছোঁয়া বিষে মাখা তিরের মতো বিঁধে ইশাদের চোখে। সে ব্যথা সহ্য করতে না পেরে চোখ বন্ধ করে ফেলে। চোখের সহনীয় কাজটা শেষ করে তাকায়। সঙ্গে সঙ্গে কানে আসে কোনো নারীর তীক্ষ্ণ আর্তনাদ। ইশাদ পাশ ফেরে। সোজা দৃষ্টি রাখে রুমের এক কোণে। একটা মেয়ে বসে কাঁদছে। তার মুখ ঢেকে আছে অগোছালো চুলে। দুঃসহ সেই কান্না। ইশাদ দৌড়ে আসে তার কাছে। মুখের সামনে পড়ে থাকা চুল সরাতে সে বিস্ময়ে স্খলিত! উৎকন্ঠা ভেসে আসে কন্ঠ থেকে,
“তিহি?”
তিহির কান্নার বেগ বেড়ে যায়। ভেঙে পড়ে মরণ কান্নায়। চিৎকার করে বিরামহীন বলছে,
“আমি আর পালাব না। ছেড়ে দিন। ছেড়ে দিন! আমি আর সহ্য করতে পারছি না।”
ইশাদ তিহির কথায় আরো অস্থির হয়ে পড়ে। সে তো তাকে ধরেনি,ছোঁয়নি তবুও কেন বলছে ছেড়ে দিতে? কী সহ্য করতে পারছে না? ইশাদ আরেকটু ঘেষে আসে তিহির দিকে। তখনি নজরে পড়ে তিহির পা। পায়ের কাছে পড়ে আছে কয়েকটি জ্বলন্ত সিগরেট!
চলবে