তোমার_সমাপ্তিতে_আমার_প্রাপ্তি সিজন_৩,পর্ব (১)

0
1212

#তোমার_সমাপ্তিতে_আমার_প্রাপ্তি সিজন_৩,পর্ব (১)

” এটা কার বাসা এমদাদ ভাইই..”
কথাটা শেষ করার পূর্বেই বেনারশীতে পা জড়িয়ে পড়ে গেল মিহি! হাতের কনুই আর হাঁটু চাপ খেল কংক্রিটের মেঝেতে। খোঁপা খুলে চুলের অগ্রভাগ শামিয়ানার ভেতর দিয়ে বেয়ে এসে বাড়ি খেল গালে। ব্যথায় মৃদু আর্তনাদ করতে ইমদাদ দৌড়ে এসে বাহু চেপে ধরল মিহির। সাবধানে দাঁড় করিয়ে বিরক্ত কণ্ঠে বলল,
” ঠিক করে হাঁটতে পার না? ”

মিহি মন খারাপ চোখে তাকাল। ছলছল চোখে কনুইয়ে ফু দিল কয়েক বার। তারপর বলল,
” আমরা এখানে এসেছি কেন? বাসায় যাব না? ”

ইমদাদ উত্তর দিল না। বিরক্তমাখা চাহনি ফেলে মিহিকে ছেড়ে বাসার গেইটের ভেতর ঢুকল। দ্রুত কদমে দুতলা সিঁড়ি কাটছে। মিহি পিছু পিছু আসছে নাকি দেখার প্রয়োজনবোধও করছে না। পকেট থেকে চাবি বের করে তালা খুলতে খুলতে চুড়ির ঝনঝন শব্দ পেল। পেছন না তাকিয়ে বলল,
” ভেতরে এসে দরজা আটকে দেও। ”

মিহি ভেতরে ঢোকার আগে ডানে-বায়ে তাকাচ্ছিল। সে সময় হাতে হেঁচকা টান খেল। কিছু বুঝার আগেই দরজায় খিল টেনে ইমদাদ বলল,
” কানে শুনতে পাও না? ”

মিহি মৃদু কেঁপে উঠল। অসহায় চোখে তাকাল ইমদাদের মুখে। কয়েক ঘণ্টা আগেও মানুষটা কী মিষ্টি করে কথা বলছিল! সেই মিষ্টি কণ্ঠে ভুলেই তো বিয়ের আসর ছেড়ে এসেছিল তার সাথে। কোথায় গেল সেই কণ্ঠ? নরম ব্যবহার? মিহি ভীষণ অসহায়বোধ করছে। ভেতরটা ভয়ে জমে যাচ্ছে। মুহূর্তে মনের আয়নায় মায়ের মুখটা উঁকি দিল। তারপরে ইশাদের মুখ, আংকেলের মুখ। শেষে তো তিহির মুখটাও!

ইমদাদ তোয়ালে কাঁধে নিয়ে স্নাগারে ঢুকল। দরজা আটকানোর পূর্বে বলল,
” আমাকে না বলে দরজা খুলবে না কিন্তু! ”

মিহি সম্মতিতে মাথা একপাশে কাত করল ভীষণ উদাসীনে। পরক্ষণে ছুটে গেল স্নাগারের দরজার কাছে। ততক্ষণে ইমদাদ দরজা বন্ধ করে দিয়েছিল সেই বন্ধ দরজায় খটখট শব্দ করে বলল,
” আমরা বাসায় যাব কখন, ইমদাদ ভাইয়া? অনেক রাত হয়েছে। মা চিন্তা করবে তো! ”

একই কথা ঘন ঘন উচ্চারণ ও অবিরত দরজায় ঠকঠক শব্দে আধ গোসলে দরজা খুলতে বাধ্য হলো ইমদাদ। সাবান মাখা মুখটা বের করে ধমকের সুরে বলল,
” একটু চুপ করে বসবে, প্লিজ? ”

মিহি চুপ হয়ে গেল। বাধ্য মেয়ের মতো বিছানার কিনারে বসে ইমদাদের অপেক্ষা করছে।

ইমদাদ গোসল শেষে বের হলো প্রায় পনেরো মিনিট পর। শরীর মুছে গায়ে ইস্ত্রী করা শার্ট পরল। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুলে আঙুল ডুবাতে গিয়ে চোখ পড়ে মিহির উপর। হাঁটুর উপর মুখ ফেলে চোখ বুজে আছে। ঘুমিয়ে পড়েছে বোধ হয়। নিষ্পাপ মুখখানায় দৃষ্টি স্থির হতেই ফোনের রিংটোন বেজে উঠল ইমদাদের। স্ক্রিনে প্রিয়া নামটা দেখতে সে অস্থির হয়ে পড়ে। রিসিভ করে উত্তেজিত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল,
” কোথায় আছ? ”
” তোমার বাসার নিচে। ফ্ল্যাট নাম্বার বলো। ”

ইমদাদের কণ্ঠ আগের চেয়েও দ্বিগুন উত্তেজিত হয়ে পড়ে। বলল,
” এই না, এসো না। ”

কথাটা বলেই ফোন নামিয়ে ফেলে ইমদাদ। বুকের সাথে চেপে ধরে মিহির দিকে তাকায়। বুঝতে পারে বেশি জোরে কথা বলে ফেলেছে, ঘুম না ভেঙে যায়! কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থাকার পরও মিহিকে নড়তে না দেখে ফোন কানে তুলে নেয় পুনরায়। গলার স্বর খাদে নামিয়ে বলল,
” তোমার আসতে হবে না, আমি আসছি। ”
” কেন? ”
” কী কেন? ”
” আসব না কেন? কাল রাতে তো তুমিই বললে আজ রাতটা আমরা একসাথে কাটাব। ”

প্রিয়ার কথাগুলো এবার বিরক্ত লাগল ইমদাদের নিকট। খানিকটা রাগ ধরা পড়ল নাকের পাটায়। মিহি আছে দেখে ঠিকমতো কথা বলা যাচ্ছে না। সে নিজেকে সংযত রেখে ধীরে বলল,
” নিচে অপেক্ষা করো, প্লিজ। দু-মিনিটের মধ্যে নামছি। ”

কথাটা বলেই কল কেটে দিয়ে ফোন পকেটে ভরল। মিহির দিকে এক পলক চেয়ে ধীর পায়ে দরজার দিকে এগুচ্ছে।সিটকানি খুলে বের হবে ঠিক সেসময় মিহি চিৎকার করে উঠল,
” কোথায় যাচ্ছেন? ”

ইমদাদ চমকে দাঁড়িয়ে পড়ে। চকিত চোখে পেছন ঘুরলে মিহি বিছানা থেকে নেমে আসে দ্রুত। উৎসাহিত স্বরে বলল,
” আমাদের বাসায় যাচ্ছেন? আমিও তো যাব। চলুন। ”

মিহি ইমদাদকে রেখে আগে আগে দরজা ছেড়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে শুরু করল।

_______

ইশাদদের বাসার বসার রুমে বসে আছে রেখা ভূইয়া। তার একপাশে স্বামী ও অন্যপাশে তিহি। যার হাতটা এখনও রেখা ভূইয়ার হাতে বন্দী। শাহিনা শাইখা সকলের জন্য পানি সাজিয়ে আনলেন গ্লাসে। প্রথম গ্লাসটা ইশাদের দিকে এগিয়ে দিলে সে হাত দিয়ে বাঁধা দেয়। অস্থিরচিত্তে রেখা ভূইয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,
” আমি কিছু বুঝতে পারছি না, আন্টি। দয়া করে সবটা খুলে বলুন! ”

রেখা ভূইয়া সহানুভূতি চোখে তাকাল ইশাদের দিকে। তারপরেই দৃষ্টি ফিরিয়ে আনল তিহির দিকে। সেখানে দৃষ্টি স্থির রেখে বলতে শুরু করল,
” আমাদের একমাত্র সন্তান তাজ। ভীষণ আদরের! ছোট থেকে কোনো চাওয়া অপূর্ণ রয়েছে বলে আমার মনে নেই। ব্যবসার কাজে ওর বাবা প্রায়ই দেশের বাইরে থাকত। সে সুযোগে ভীষণ বেপরোয়া হয়ে পড়ে। তাকে সামলানোর সাধ্যি টুকু ছিল না আমার। তেমন অবস্থায় একদিন এসে বলল, ‘ মা, আমি বিয়ে করব। ‘ আমি তো খুব অবাক! খুশিও হয়েছিলাম এই ভেবে যে, ওকে সামলানোর দায়িত্ব এবার আরেকজনের উপর ছাড়তে পারব। তাই খুশিমনে জানতে চেয়েছিলাম কাকে বিয়ে করবে? মেয়ে পছন্দ নাকি। বাড়ির ঠিকানা দিক বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাব। সাথে সাথে মুখ কালো করে জানায়, মেয়ে পছন্দ কিন্তু তার বাড়ি থেকে নাকি মানবে না। আমি খুব রেগে গেলাম। ছেলে আমার কমতি কিসে? মানছি একটু উগ্র স্বভাব তাই বলে ফিরিয়ে দিবে? আমি সগর্বে মানিয়ে নিব এমন শপথে ঠিকানা চাইলে তাজ বলে, ‘ তিহিরা মুসলিম, মা! ”

এতটুকুতে আসতে ইশাদের দৃষ্টি তাৎক্ষণিক সরে গেল রেখা ভূইয়ার স্বামীর দিকে। কপালে তিলকটার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,
” আপনারা হিন্দু? ”

রেখা ভূইয়া ভারী নিশ্বাস ফেলে। ইশাদের দিকে তাকিয়ে দুর্বল কণ্ঠে বলল,
” হ্যাঁ, আমার ছেলের পুরো নাম তাজাস মুখার্জি। ছোট্ট করে ডাকি তাজ। ”

তারপর স্বামীর দিকে ঘাড় বাঁকিয়ে বলল,
তাজের বাবা তাপান মুখার্জি আর আমি রুকমিনি মুখার্জি। ”

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here