তোমার_সমাপ্তিতে_আমার_প্রাপ্তি সিজন_৩,১০,১১

0
920

#তোমার_সমাপ্তিতে_আমার_প্রাপ্তি সিজন_৩,১০,১১
রোকসানা রাহমান
পর্ব (১০)

ইশাদ চেম্বারে প্রবেশ করার পাঁচ মিনিট বাদেই দরজায় বাবার ছায়া টের পায়। বাবার দিকে না তাকিয়ে চিৎকার করে তার কাজে নিয়োজিত ওয়ার্ডবয়কে ডাকে। সে বাইরে দেয়ালের সাথে ঠেস দেওয়া ছোট টেবিল-চেয়ারে বসে রোগীদের সিরিয়াল নাম্বার টুকছিল। আচমকা হুংকারে ছুটে ভেতরে ঢুকে। সঙ্গে সঙ্গে ঝারি দিতে থাকে ইশাদ,
” তোমাকে না বলেছি, অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছাড়া কাউকে ভেতরে ঢুকতে দিবে না? ”

ওয়ার্ডবয় থতমত খেল। ভয়ে ভয়ে পুরো রুমে চোখ বুলাল। সে রকম কাউকে দেখতে না পেয়ে মিনমিনে বলল,
” কেউ তো ঢুকেনি, স্যার! ”

ইশাদ রাগে চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে গেল। অগ্নিশর্মা হয়ে বলল,
” তাহলে ইনি কে? তোমার কি এনাকে মানুষ বলে মনে হচ্ছে না? ”

কথার মধ্যে ইশাদ হাত উঁচিয়ে আঙুল তাক করেছিল সোবহান শাইখের দিকে। ওয়ার্ডবয় সেদিকে তাকিয়ে চমকে গেল। বিস্মিত কণ্ঠে বলল,
” ইনি তো আপনার…”

ইশাদ তাকে মাঝপথেই আটকে দিল। টেবিলে দুই হাত ফেলে ওয়ার্ডবয়ের দিকে ঝুঁকে আসল। শান্ত ও ধীর স্বরে বলল,
” তোমাকে যতটুকু কাজ দেওয়া হয়েছে ততটুকুই করো। এর বাইরেরটা না দেখলেও চলবে। ”

ওয়ার্ডবয় নতজানু অবস্থায় সোবহান শাইখের কাছে গেল। কিছু বলার আগেই সোবহান শাইখ দরজা ছেড়ে কাউন্টারে চলে গেলেন।

ইশাদ একের পর এক রোগী দেখছে। মনোযোগ দিতে পারছে না ঠিকমতো। বাবাকে ফিরিয়ে দিলেও মনে মনে তার আসার অপেক্ষায় আছে যেন। এক রোগী বিদায় দিয়ে অন্য রোগী পাঠানোর জন্য বেইল টিপেই দরজার দিকে উৎসুকে চেয়ে থাকে। বাবার মুখের বদলে অন্য কাউকে দেখলে হতাশ হয়। মলিন বদনে চিকিৎসা করে, প্রেসক্রিপশন লিখে। প্রায় চল্লিশজন রোগী বিদায় দেওয়ার পর বাবার মুখ দেখার সৌভাগ্য হলো ইশাদের। আনন্দে দাঁড়িয়ে পড়ল। চোখের চাহনিতে হর্ষদীপ্ত ছড়িয়ে পড়ল। কত দিন পর দেখল এই মুখটা? একটু কি শুকিয়ে গেছে? চলনে এত দুর্বলতা কেন? ক্লান্ত চাহনি ইশাদের চোখে পড়তে মায়া কেটে গেল তার। চেতনা ফুরল বুঝি! বাবা একদম নিকটে এসে দাঁড়াতে কব্জি উল্টে হাতঘড়ি দেখল ব্যস্তভঙ্গিতে। তারপরেই টেবিলে রাখা মোবাইলটা পকেটে ভরে হেঁটে গেল দরজায়। বাবাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলল,
” বাকিদের লাঞ্চের পর দেখব। ”

কথাটা বলেই এক মুহূর্তও দেরি করল না ইশাদ। হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে রিকশায় উঠল। বাসায় মা খাবার নিয়ে অপেক্ষা করছে।

______________
ইশাদ খেতে বসে টুকিটাকি কথা বলছিল মায়ের সাথে। তার মনের অবস্থা বুঝার চেষ্টা করছিল। বাবার কথাটা কিভাবে উঠাবে সেই সুযোগও খুঁজছিল। সেরকম কোনো উপায় না পেয়ে মিথ্যা বলল,
” ইমদাদ বলছিল শুটকির বোরা খায় না অনেক দিন। আজ রাতে আসতে বলব? ”

শাহিনা শাইখা ছেলের জন্য পানি ঢালছিলেন। হঠাৎ থামলেন। ছেলের দিকে তাকিয়ে থাকলেন শান্ত চোখে। বেশ কিছুক্ষণ পর হালকা হেসে বললেন,
” বাসায় তো শুটকি নেই। আসার সময় নিয়ে আসতে বলিস। বসে থেকে নিয়ে যাবে। ”

ইশাদ আশাহত হলো। তার ভাবনা ছিল অন্যকিছু। এদিকে বাবার কথা না বলে শান্তিও পাচ্ছে না। তাই সরাসরি বলেই ফেলল,
” বাবা এসেছিল আমার সাথে দেখা করতে। ”

শাহিনা শাইখা স্বাভাবিকভাবেই বললেন,
” তোকে খুব ভালোবাসে তো। তাই দেখতে এসেছিল মনে হয়। ”

কথাটা বলে খাবার টেবিল ছাড়লেন। রান্নাঘরের দিকে হাঁটা ধরলে ইশাদ এক হাত চেপে ধরে বলল,
” আমার এক কথায় তুমি বাবাকে ছেড়ে চলে এসেছ, ব্যাপারটা আমি এখনও হজম করতে পারছি না। কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছি না। আম্মু, আমি কি স্বপ্ন দেখছি? ”

শাহিনা শাইখা ছেলের দিকে ঘুরলেন। মৃদু হেসে বললেন,
” স্বপ্ন ভেঙে গেলেও সমস্যা নেই। কারণ, আমি তাকে বাস্তবেও ছেড়ে এসেছি। ”

ইশাদ মনে ব্যথা পেল। মায়ের এমন রূঢ় আচরণ তার পছন্দ হলো না। আগের সেই নরম আচরণের মা’কে মনে হতে লাগল খুব। ব্যথিত মনেই প্রশ্ন করল,
” কেন আসলে? ”

শাহিনা শাইখা ছেলের প্রশ্নটা বুঝেনি এমনভাবে তাকালে সে আবার বলল,
” আমি বলেছি, তুমি চলে এসেছ এমনটা আমি মানতে পারছি না। মানা উচিতও না। কারণ, তুমি অন্য কারণে এসেছ। আমি সেই কারণটাই জানতে চাই, আম্মু। ”

ছেলের কাছে ধরা পড়ে একটুও বিচলিত হলেন না শাহিনা শাইখা। উপরন্তু অহংকারের প্রদীপ্ত আলো ছড়িয়ে পড়ল চোখেমুখে। এই তুখোর বুদ্ধিমান ছেলেটি তার ভাবতেই গর্বে বুক ভরে গেল।

ইশাদ চেয়ার ছেড়ে মায়ের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলল,
” বলবে না আমাকে? ”

শাহিনা শাইখা উদাস গলায় বললেন,
” অধিকাংশ মেয়েরাই বুঝতে পারে না তারা উপহারের চেয়ে ভালোবাসা পেতে পছন্দ করে। কেউ কেউ ভালোবাসার চেয়েও বেশি পছন্দ করে সম্মান পেতে। যতক্ষণে বুঝতে পারে ততক্ষণে সম্মান পাওয়ার যোগ্যতাটুকু হারিয়ে ফেলে। আমিও ফেলেছি, সেজন্যই তোর বাবা আমাকে সারাটা জীবন অসম্মান করেছে। আমি তার কাছে উপহার চাইনি, ভালোবাসাও না, একটু সম্মান চেয়েছিলাম শুধু। দেয়নি কখনও। যখন-তখন যার-তার সামনে ছোট করেছে। আমি দুঃখ পেলেও সয়ে নিয়েছি। নিজেকে আড়াল করেছি সবসময়। কিন্তু সেদিন যখন তোর সামনে ঐ কথাগুলো বলল, আমার ধৈর্যের বাদ ভেঙে গেল। মন ভেঙে গেল। বুঝে গেলাম আমার বাড়া হাত আজীবন খালিই ফেরত দিবে! ”

ইশাদ মাকে জড়িয়ে ধরল আলতো করে। সে অবস্থায় পকেট থেকে ফোন বের করে তার বিভাগের অন্য এক ডাক্তারকে তার চেম্বারে পাঠিয়ে দিতে বলল। আজ সে হসপিটালে যাবে না।

___________
ইমদাদ রাতে খেতে বসে খেয়াল করল তার খাবার বাড়ছে বেতনে রাখা রাধুনি। সে কপাল কুঁচকে আশেপাশে মিহিকে খুঁজল। না পেয়ে জিজ্ঞেস করল,
” মিহি কোথায়? ”
” রান্নাঘরে। ”
” ওখানে কী করছে? আর তুমি এখনও বাসায় যাওনি কেন? ”

রাধুনি উত্তর দেওয়ার আগেই মিহি উপস্থিত হলো। খাবার টেবিলে চোখ বুলিয়ে জিজ্ঞেস করল,
” সব ঠিকমতো দিয়েছেন? ”

রাধুনি মাথা একপাশে কাত করে হ্যাঁ বুঝালে, সে গিন্নির মতো বলল,
” রান্নাঘরে আপনার জন্য খাবার বেড়ে রাখছি। বাসায় নিয়ে খেয়ে নিবেন। ”

তারপরে তাকাল ইমদাদের দিকে। অনুরোধের সুরে বলল,
” উনাকে একশ টাকা দিবেন? ”

ইমদাদ ভ্রূ উঁচিয়ে বলল,
” কেন? ”
” উনি তো সন্ধ্যায় চলে যান, আমার কথায় আজ থেকেছেন এতক্ষণ। ”
” কেন থেকেছে? ”

মিহি নিরুত্তর থাকলে ইমদাদ বিরক্ত হলো। একই প্রশ্ন দ্বিতীয়বার করতে চাইল। সেসময় রাধুনি চলে আসায় দ্রুত পকেট থেকে একশ টাকা বের করে বলল,
” নেও। ”

মিহি টাকা নিলে সে খাওয়াই মন দিল। রাধুনি চলে গেলে মিহি দরজা আটকাতে আটকাতে বলল,
” আপনার সামনে সব দেওয়া আছে। তারপরও কিছু লাগলে আমাকে ডাকবেন। আমি ভেতরে আছি। ”

ইমদাদ উত্তর দিল না। পেছনও ফিরল না। ভাত মেখে এক নলা মুখে দিতে ভীষম খেল। চিৎকার করে বলল,
” পানি কোথায়? ”

মিহি দৌড়ে আসল। ইমদাদের প্লেটের সামনে খালি গ্লাস দেখে চিন্তায় পড়ে গেল। তাড়াহুড়ায় পানি ঢালতে গিয়ে হাত থেকে জগ পড়ে গেল। পানি ছিটে গেল ইশাদের কাপড়ে। সে আচমকায় উঠতে উঠতে বকাঝকা শুরু করল।

” পানিও ঢালতে পার না? উফ! ”

ইমদাদ ভেজা গেঞ্জি খুলল মুখে ঝারি নিয়ে। ভেতরে ঢুকতে গিয়ে কী ভেবে পেছনে তাকিয়ে দেখে মিহি কাঁদছে। সে থেমে গেল। সন্দেহ চোখে এসে দাঁড়াল মিহির সামনে। নিশ্চিত হলো মিহি সত্যিই কাঁদছে। সে অবাক হলো। বকাঝকা তো আজ প্রথম নয়, তাহলে কাঁদছে কেন? অন্যদিন তো কাঁদে না! সে সন্দেহ নিয়েই বলল,
” কাঁদছ কেন? ”

মিহির নীরব কান্না এবার শব্দে পরিণত হলো। হেঁচকি তুলে বলল,
” জ্বলছে! ”
” জ্বলছে? কোথায়? কেন? ”

মিহি হাতদুটো ইমদাদের সামনে মেলে বলল,
” এখানে। ”

ইমদাদের চোখদুটো অস্বাভাবিক রকম বড় হয়ে গেল। খানিকটা চিৎকার করেই বলল,
” এগুলো কী? ও মাই গড, পুরো হাতে ফোস্কা পড়ে গেছে! ”

মিহি কাঁদতে কাঁদতে বলল,
” পানি লাগার পর অনেক জ্বলছে! ”

ইমদাদ বুঝতে পারল পানি ঢালতে গিয়ে কিছু একটা হয়েছে। যার ফলে চামড়া উঠে গেছে। এখন পানি লাগায় অসহণীয় জ্বালা হচ্ছে। সে তাৎক্ষণিক ডাক্তারি ব্যাগের খুঁজে গেল। মলম বের করতে করতে জেনে গেল রান্না করতে গিয়ে এ অবস্থা হয়েছে। মলম লাগাতে গিয়ে বলল,
” আমাকে আগে বলোনি কেন? ”

মিহি কাঁদতে কাঁদতে বলল,
” আপনাকে বললে, ইশাদ ভাইয়া জেনে যেত। তারপর উনি আপনাকে বকত, মারত। আপনাকে কেউ বকলে আমার ভালো লাগে না। ”
” আমাকে বললে ও জানবে কেন? ”
” আপনি উনাকে সব বলে দেন। মার খান, তাও বলেন। ”

ইমদাদ মলম লাগানো বন্ধ করে বলল,
” আসলেই সব বলে দেই? ”

মিহির কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি তুলছে। সে অবস্থায় বলল,
” হ্যাঁ। ”

ইমদাদ যেন ব্যাপারটা এই প্রথম ধরতে পারল এমন ভাব করে কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার মলম লাগাচ্ছে।

______

রুমের লাইট নিভিয়ে মিহির পাশে শুয়ে পড়ে ইমদাদ। পাশ থেকে ফোন নিয়ে ইশাদকে কল দিবে সে সময় মিহি বলল,
” ভাইয়াকে বলবেন না কিন্তু আমি হাত পুড়িয়েছি, তাহলেই বকা খাবেন। ”

ইমদাদ খানিকটা ঘাবড়ে গেল। যদি সত্যিই বলে দেয়? সে ভয়ে ফোন আগের জায়গায় রেখে দিল। চোখ বন্ধ করতে মিহির আগের বলা কথাটা মনে পড়ল, ‘ আপনাকে কেউ বকলে আমার ভালো লাগে না। ‘ সে আপন মনে বিড়বিড় করল, ‘ তোমাকে যে আমি বকি তখন খারাপ লাগে না? ‘

মনের প্রশ্নের উত্তর আসে না। কিন্তু অনেক কিছু ভাবিয়ে ফেলে। ভাবতে ভাবতে এক সময় উঠে বসল। মিহি তখনও শুয়ে। হাতদুটোতে ফু দিচ্ছে একটু পর পর। চোখ বন্ধ থাকায় ইমদাদের উঠে বসা দেখেনি। ইমদাদ নিজেই ডাকল,
” মিহি? ”

মিহি চোখ মেলল। তাকে বসা দেখে চমকালও। দ্রুত উঠে বলল,
” আপনার কিছু লাগবে? ”

ইমদাদ উত্তর দিল না। এই প্রথম মিহির দিকে ভালো করে তাকাল। বুঝতে পারল দেখতে আহামরি সুন্দর না হলেও বদনখানা স্নেহপূর্ণ ও আদুরে।

” না, কিছু লাগবে না। ”

ইমদাদের এতক্ষণ পরে এই উত্তরে মিহি হতাশ হয়ে বলল,
” তাহলে? ”
” তোমার সাথে কথা আছে। ”
” কী কথা? ”

ইমদাদ একটু চুপ থেকে বলল,
” ইশাদ যাতে তিহিকে বিয়ে করে সেজন্য আমি তোমাকে একটু অভিনয় করতে বলেছিলাম। কিন্তু আমি ভুলে গেছিলাম তুমি ছোট একটা মেয়ে, বয়স কম, বুদ্ধিও কম। সেই ভুলের জন্য তোমার আমার সত্যি সত্যি বিয়ে হয়ে গেছে। আমি ভেবেছিলাম ওদের বিয়েটা হয়ে গেলে ইশাদকে সত্যিটা বলে উকিলের সাথে কথা বলব। কিন্তু ভাগ্য খারাপ! ওদের বিয়ে হলো না। এখনও হচ্ছে না। কবে হবে জানিও না। আর না হওয়া পর্যন্ত সত্যিটা ইশাদকে বলতেও পারছি না, তোমাকে ছাড়তেও পারছি না। তাই বলছি, এই যে বউয়ের মতো সারাক্ষণ আমার ভালো-মন্দ খোঁজ রাখছ এগুলো করতে হবে না। এগুলো করতে গিয়ে নিজের ক্ষতি করছ, কষ্ট পাচ্ছ। তাছাড়া কী দরকার আমার জন্য রান্না শেখার? কয়েকদিন পর তো আলাদা হয়েই যাব। ”

এই এতক্ষণে মিহি প্রশ্ন করল,
” আমরা আলাদা হয়ে যাব? ”
” হ্যাঁ, ওদের বিয়ে হলে তোমাকে ডিভোর্স দিব। ”
” ডিভোর্স! ”

মিহি এমনভাবে ডিভোর্স শব্দটা উচ্চারণ করল যে ইমদাদ ভাবল, সে ডিভোর্সের মানে বুঝেনি। তাই বুঝিয়ে বলল,
” ডিভোর্স মানে স্বামী-স্ত্রী আইনিভাবে আলাদা হয়ে যাওয়া। বিয়ের বন্ধন থেকে মুক্তি পাওয়া। তখন আর আমরা স্বামী-স্ত্রী থাকব না। ”
” কিন্তু আপনি যে ঐদিন বললেন, আমাকে সারাজীবন আপনার সাথে থাকতে হবে? ”

ইমদাদ মৃদু হেসে বলল,
” ওটা মজা করে বলেছিলাম। তোমার উপর রাগ করে। ”
” আমার আম্মুও মজা করে বলেছে? ”
” তোমার আম্মু আবার কী বলেছে? ”

মিহি সে উত্তর না দিয়ে বলল,
” ডিভোর্স হলে আপনি আর আমার স্বামী থাকবেন না? ”
” না। ”

মিহি একটু চুপ থেকে বলল,
” ইশাদ ভাইয়া সত্যি জানলে রাগ করবে না? ”
” তা তো করবেই। ”
” আপনাকে যদি মারে? ”
” মারলে, মারবে। সে আমি হজম করে নিব। ”

তারপর করুণ গলায় আবার বলল,
” শুধু এখন একটু ভালোমতো থাকো। যাতে ইশাদ সন্দেহ না করে। ও কিন্তু খুব চালাক! ”
” আচ্ছা। ”

মিহি ছোট্ট শব্দে সম্মতি প্রকাশ করে শুয়ে পড়ল। ইমদাদও আর বসে থাকল না। বালিশে মাথা ঠেকিয়ে বলল,
” এখনও জ্বলছে? ”

মিহির বলতে ইচ্ছে হলো, ‘ হ্যাঁ, খুব জ্বলছে। কিন্তু কোথায় জ্বলছে বুঝতে পারছি না। ‘ বলা হলো না। চোখ বন্ধ করে ভারী নিশ্বাস ফেলল।

চলবে

#তোমার_সমাপ্তিতে_আমার_প্রাপ্তি
#সিজন_৩
পর্ব (১১)

‘চৈত্রের সেতারে বাজে বসন্ত বাহার
বাতাসে বাতাসে ওঠে তরঙ্গ তাহার’

রবীন্দ্রনাথের লেখা এই দুখানা লাইন যেন তিহির জন্যই লিখেছিলেন! চৈত্রের প্রথম সপ্তাহের ঝকঝকে সকালে তিহির হাসির খিলখিল শব্দেই বুঝা যায়, মনের সকল প্রকোষ্ঠ বসন্তের রঙের মাখামাখি। চালচলনে সমুদ্রের ছন্দময়ী আদুরে তরঙ্গ।

রুকমিনি মুখার্জি সকালের নাস্তা সাজাতে গিয়ে আড়চোখে তাকাচ্ছেন তিহির দিকে। ইনার সাথে হাসিখুশি মুহূর্ত চলছে। তিহি কিছু একটা বলতে ইনা হাসতে হাসতে গলে পড়ছে মায়ের কোলে। সঙ্গে সঙ্গে গলে পড়া নরম শরীরটাকে ঝাপটে ধরছে তিহি। ঠোঁট থেকে যেন হাসিটুকু সরছেই না দুজনের। তিনি দেখছেন আর মুগ্ধ হচ্ছেন। তার সেই মুগ্ধতা কাটল তাপান মুখার্জির আগমনে। চেয়ার টেনে খাবারের জন্য প্লেট উল্টালেন। রুকমিনি মুখার্জি তিহির থেকে চোখ সরিয়ে আনলেন দ্রুত। স্বামীর প্রতি তটস্থ হলেন তাৎক্ষণিক। হাতে হাতে খাবার এগিয়ে দিচ্ছেন মনোযোগে।

তাপান মুখার্জি খাবার মুখে তুলতে ব্যস্ত হলে তিনি আবারও ফিরে তাকালেন তিহি আর ইনার দিকে। তারা আর দূরের সোফাতে বসা নেই। একটু পাশে সরে কিছু একটা নিয়ে কাড়াকাড়ি চলছে। তার কপাল কুঁচকে এলো। কী নিয়ে কথা হচ্ছে বুঝার চেষ্টা করলেন। দূর থেকে পারছেন না দেখে দুই কদম এগিয়ে গেলেন তাদের দিকে। সেই সময় ইনা দৌড়ে এলো। তার পিছু পিছু তিহিও এলো। রুকমিনি মুখার্জিকে মাঝখানে রেখে একে অপরের পেছন পেছন ঘুরছে। তাদের এই ছেলেখেলায় রুকমিনি মুখার্জি হেসে ফেললেন। কাঙ্ক্ষিত শান্তির বাতাসে দোল খেল মনের জানালার পাল্লা। বিড়বিড় করে বললেন, ‘ অবশেষে মা-মেয়ের দূরত্ব ঘুচল! ‘ সেসময় কাচ ভাঙার শব্দে কর্ণলতিকা কেঁপে উঠল। রুকমিনি মুখার্জি চমকে পেছনে তাকালেন। সাথে সাথে ভয়ে মুখমণ্ডল পাংশুটে বর্ণে ছেয়ে গেল। ছুটে গেলেন খাবার টেবিলে। স্বামী অগ্নিশর্মা হওয়ার আগেই ধমকে উঠলেন তিহিকে,
” কী করলি এটা? গ্লাসটা ভেঙে ফেললি? ইশ! উনার পুরো শরীর ভিজে গেছে। এখন বাইরে যাবে কিভাবে? ”

ধমকাতে ধমকাতে তিহিকে দূরে ঠেলে দিলেন রুকমিনি মুখার্জি। ইনা আম্মুর হাত ধরে টানতে টানতে বলল,
” আম্মু, পালাও। দাদু বকবে। ”

তিহি তখনও মাথা নিচু করে ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইল। যেন তাপান মুখার্জির বকা না খাওয়া পর্যন্ত সরবে না! রুকমিনি মুখার্জি স্বামীকে চেয়ার থেকে দাঁড় করিয়ে দ্রুত বললেন,
” চলো, শার্টটা পালটে দেই। ”

তিনি চোখমুখ শক্ত করে তিহির দিকে তাকালে রুকমিনি মুখার্জি চট করে তিহির সামনে এসে দাঁড়াল। কাঁধে হাত রেখে জোর করে অন্যদিকে ঘুরিয়ে সামনে ঠেলে দিলেন। রাগ সুরে আবারও ধমকে উঠলেন,
” এখনও এখানে দাঁড়িয়ে আছিস? মানুষটাকে শান্তিতে পানিও খেতে দিলি না। যাবি নাকি থাপ্পড় খাবি? ”

রুকমিনির এমন কৃত্রিম রাগে তিহিকে একফোঁটাও ভয় দেখাতে পারল না। শুধু ঘাড় বাঁকিয়ে ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে থাকল। ইনা আর অপেক্ষা করতে পারল না। সে সর্বশক্তিতে আম্মুকে টেনে দূরে সরিয়ে নিচ্ছে। সে সুযোগে রুকমিনি মুখার্জি স্বামীর দিকে ঘুরলেন। শশব্যস্ত হয়ে বললেন,
” শার্ট ইস্ত্রী করাই আছে। তুমি এসো আমার সাথে। ”

রুকমিনি মুখার্জি তাড়া নিয়ে রুমের দিকে হাঁটা ধরলে তাপান মুখার্জি বললেন,
” মেয়েটা স্বাভাবিক জীবনে ফিরছে। ”

স্বামীর এমন বাক্যে রুকমিনি মুখার্জি নিজের জায়গায় স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লেন। মন্থর গতিতে পেছন ঘুরলেন। কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে জিজ্ঞেস করলেন,
” কার কথা বলছ? ”

তাপান মুখার্জি ভেজা শার্টে চেয়ারে বসলেন। রুটি ছিঁড়ে বললেন,
” যাকে নিজের মেয়ের মতো আগলে রাখছ তার কথা বলছি। তিহি সুস্থ হচ্ছে। ”

তাপান মুখার্জির মুখে তিহির নাম শুনে হকচকিয়ে গেলেন। এক্সিডেন্টের পর তিহিকে বাড়িতে আনায় ঘোর আপত্তি করেছিলেন তিনি। স্ত্রীর অশ্রুসিক্ত নয়নের অনুরোধ ফেলতে পারছিলেন না বলে বাড়িতে জায়গা দিলেও স্পষ্ট করে বলে দিয়েছিলেন তিহি সম্পর্কিত কোনো প্রসঙ্গেই যেন তাকে টানা না হয়। রুকমিনি মুখার্জিও স্বামীর সেই কথা মেনেছেন। সেই প্রথম দিন থেকে আজ পর্যন্ত এক হাতে সব সামলেছেন, সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সেই মানুষটা এই প্রথম তিহিকে নিয়ে কথা বলছেন। তার পরিবর্তন লক্ষ্য করছেন। ব্যাপারটা তাকে খুব আনন্দ দিল। হৃদয় পুলকিত হলো। উৎসাহ নিয়ে স্বামীর কাছে ছুটে এসে বললেন,
” হ্যাঁ, একদম সুস্থ হয়ে গেছে। ইনাকে মেনে নিয়েছে, ভালোবাসছে, হাসছে, খেলছে। পুরো বাড়ি মাতিয়ে রেখেছে। আমি তো এইটুকুই চেয়েছিলাম। আমার এত দিনের পরিশ্রম, কষ্ট আজ সার্থক। ”

তাপান মুখার্জি রুটি মুখে দিতে গিয়েও মাঝপথে থেমে গেলেন। একপেশে হেসে বললেন,
” তোমার কি মনে হয় এই আমূল পরিবর্তন তোমার জন্য ঘটেছে? ”

রুকমিনি মুখার্জি সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিতে পারলেন না। কেমন যেন দ্বিধায় জড়িয়ে গেলেন। সন্দেহ দৃষ্টি রেখে বললেন,
” আমার জন্য নয়? ”
” না। ”
” তাহলে? ”
” ইশাদের জন্য। ”

ইশাদের নাম কানে বাজতে তিনি মৃদু কেঁপে উঠলেন। এক মুহূর্তের জন্য চেতনা হারালেন। দুর্বল কণ্ঠে প্রতিবাদ করলেন,
” না। ওর জন্য কিছু হয়নি, কিছু না। তিহিকে আমি সুস্থ করেছি। আমি দেখে রেখেছি, সামলেছি। ”

তাপান মুখার্জি পাশের চেয়ারটি টেনে বের করলেন। স্ত্রীকে টেনে এনে বসিয়ে বললেন,
” সত্যিটা তোমাকে মানতে হবে, রুকমিনি। আমি মানছি তিহির বেঁচে থাকা সম্ভব হয়েছে তোমার জন্য। কিন্তু সঠিকভাবে জীবনযাপন করা সম্ভব হয়েছে ইশাদের জন্য। তিহি আর তোমার মধ্যে আমি কখনও ছিলাম না। তবুও বলতে পারি, ইশাদের সাথে পরিচয় হওয়ার পর থেকেই তিহির চালচলনে ইতিবাচক পরিবর্তন শুরু হয়েছে। ”

রুকমিনি মুখার্জি প্রত্যুত্তরে কিছু বলতে পারলেন না। না চাইতেও ইশাদের সাথে তিহির কাটানো দিনগুলো মস্তিষ্কে ঘুরঘুর করতে লাগল। মানতে ইচ্ছে হলো, ইশাদের উপস্থিতিতেই তিহি প্রথম হেসেছে, রাগ করেছে, অভিমান করেছে, কেঁদেছে, আহ্লাদী আবদার নিয়ে হাজির হয়েছে। একজন সুস্থ মানুষের মতো অনুভূতির নানা দিকগুলো প্রকাশ করেছে। তার আগে বেঁচে থাকলেও সবকিছুতে ছিল উদাসীনতা, অসারতা, অনীহা। যেন বসে বসে মৃত্যুর অপেক্ষা করত।

তাপান মুখার্জি মাথাটা স্ত্রীর দিকে এগিয়ে নিলেন খানিকটা। কোমল স্বরে বললেন,
” মেনে নেও, রুকমিনি। এতেই তিহির ভালো হবে। ”

রুকমিনি মুখার্জি রাগে জ্বলে উঠলেন। মমতাময়ী চেহারায় অগ্নি দর্শন হলো। চেয়ার থেকে দাঁড়িয়ে বললেন,
” কী মেনে নিব? কেন মেনে নিব? তোমার কি জ্ঞান-বুদ্ধি লোপ পেয়েছে? ভুলে যেও না তিহি তাজের বউ। ”

তাপান মুখার্জিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই তিনি আবার বললেন,
” তুমি তো বলেছিলে তিহির কোনো ব্যাপারে কথা বলতে আসবে না। তাহলে আজ কেন আসছ? ”

তাপান মুখার্জি স্ত্রীর প্রশ্ন উপেক্ষা করে বললেন,
” তিহিকে ছেলের বউ হিসেবে গ্রহণ করলেও যত্ন-আত্তি করেছ মেয়ের মতো। তাই বলব, শাশুড়ির মতো না মায়ের মতো ভাব। তোমার এক সিদ্ধান্তে ওর জীবনটা সম্পূর্ণ বদলে যাবে। ”

কথাটা বলে তাপান মুখার্জি গ্লাসে পানি ঢেলে খেলেন। চেয়ার ছেড়ে উঠে বাইরে যাওয়ার জন্য মূল দরজার দিকে এগুচ্ছেন। তখনই পেছন থেকে স্ত্রীর আকুল গলা পেলেন,
” কিন্তু আমার ছেলের কী হবে? ও যে তিহিকে খুব ভালোবাসে! ”

তাপান মুখার্জি পেছন ঘুরার প্রয়োজন মনে করলেন না। দরজার বাইরে একপা ফেলে বললেন,
” বাবা হিসেবে যেমন মানি, তিহির জন্য আমার ছেলেকে হারিয়েছি তেমন বাবা হিসেবে এটাও মানি তিহির এই দুর্দশার জন্য দায়ী আমার ছেলে। তাজের মা হিসেবে তোমারও এটা মানা উচিত। কারণ, আমার থেকে তুমি ওকে ভালো করে চিনো, জানো। ”

তাপান মুখার্জি বেরিয়ে গেলেন। রুকমিনি মুখার্জি স্তব্ধ, স্থির হয়ে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে রইলেন অনেক্ষণ। কাজের মেয়েটা দরজা আটকে দুপুরের রান্নার কথা জিজ্ঞেস করলে চুপচাপ নিজের রুমে চলে গেলেন। ভেতরে ঢুকতেই ইনা বিরতিহীন চিৎকার করল,
” দাদি এসেছে, দাদি এসেছে। ফোন লুকাও, ফোন লুকাও। আম্মু, ফোন লুকাও। ”

তিহি ফোন লুকানোর আগেই রুকমিনি মুখার্জি ফোন কেড়ে নিলেন৷ কানে চেপে ধরতে শুনলেন ইশাদ বলছে,
” এত অধৈর্য্য হলে কীভাবে হবে, তিহিপাখি? একটু অপেক্ষা করো, তোমার আম্মা ঠিক বিয়েতে রাজি হবে। আমি উনাকে যতটুকু দেখেছি তাতেই বুঝে গেছি, তোমাকে কতটা ভালোবাসেন। আল্লাহ নিশ্চয় উনার মন সহজ করে দিবেন। বুঝিয়ে দিবেন কোনটাতে তোমার…..”
” তুমি কি বাসায়? ”

তিহির বদলে রুকমিনি মুখার্জির কণ্ঠস্বরে থতমত খেল ইশাদ। অপ্রস্তুত হয়ে টেনে টেনে বলল,
” কেমন আছেন, আন্টি? ”

রুকমিনি মুখার্জি প্রশ্নটা এড়িয়ে বললেন,
” তোমার আম্মু যদি আশেপাশে থাকে তাহলে তার কাছে ফোনটা দেও। ”

ইশাদ ভয় পেল। ইতস্ততভাবে বলল,
” আমি তো হসপিটালে। ”
” তাহলে উনার নাম্বারটা আমাকে পাঠাও। ”
” কেন? ”
” শুধু তোমার কথাই তো মেয়েকে তুলে দিতে পারি না। অভিভাবকের মত লাগবে। ”

___________
ইশাদ হঠাৎ কল দিয়ে বলেছিল, সে আসছে। দুপুরে একসাথে খেতে খেতে একটা সুসংবাদ দিতে। ইমদাদ তার কণ্ঠের উচ্ছলতায় বুঝে গিয়েছিল কী সুসংবাদ শুনতে চলেছে। তবুও তার কাছ থেকে না শোনা পর্যন্ত চাপা একটা উত্তেজনায় ডুবে থাকল। ফোন করে মিহিকে বলে দিল রাধুনিকে বলতে ভালো কিছু রান্না করতে।

ইমদাদ ইশাদকে তার চেম্বার থেকে নিয়ে একসাথে বাসায় ফিরেছে। ভেতরে ঢোকার পর থেকে তার অস্থিমজ্জায় বাচ্চাদের মতো চঞ্চলতা ঢুকে গেল। ইশাদকে ফেলে নানা বাহানায় রান্নাঘরে দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়াচ্ছে। একবার তো বলেই ফেলল,
” মিহি, তোমাকে অন্য রকম লাগছে কেন? ”

মিহি স্বাভাবিক গলায় বলল,
” মা বলেছিল, শাড়ি পরলে মেয়েদের অন্য রকম লাগে। ”

ইমদাদ সন্দেহ কাটাতে সাথে সাথে প্রশ্ন করল,
” বিয়ের দিনও তো পরেছিলে তখন তো অন্য রকম লাগেনি। ”

মিহি শাড়ির আঁচল কোমরে গুঁজে বলল,
” লেগেছিল, আপনি খেয়াল করেননি। ”

ইমদাদ ভাবনায় পড়ে গেল। মনে করার চেষ্টা করতে লাগল, সেদিনও মিহিকে অন্য রকম লাগছিল নাকি।

খাবার খেতে খেতে ইশাদ সুসংবাদ বলে দিল। ইমদাদের চাপা উচ্ছ্বাসটা ঠিক মতো প্রকাশ পেল না। এই প্রথম তার মনোযোগ ইশাদের চেয়ে মিহির দিকে চলে গেছে। সে বিস্ময় নিয়ে বলছে,
” শুক্রবার তো কালকেই। তার মানে কালকেই তিহি আপু আর তোমার বিয়ে? ”

ইশাদ ভাতের দলা জমাতে জমাতে বলল,
” সেরকমই তো মনে হচ্ছে। উনি অবশ্য সরাসরি বিয়ের কথা বলেননি। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে, আর দেরি করবেন ন। ”

মিহি ইশাদের পাতে সালাদ দিয়ে বলল,
” বিয়েতে আমিও যাব? ”
” হ্যাঁ, তোরা না গেলে হবে নাকি! ”

মিহি খুব খুশি হলো। হালকা হেসে ইমদাদের দিকে তাকিয়ে বলল,
” খাচ্ছেন না কেন? রান্না ভালো হয়নি? ”

ইমদাদের চোখের পলক নড়ল। ঘন ঘন পাতা ফেলে ভাত মুখে দিয়ে বলল,
” হ্যাঁ, খুব ভালো হয়েছে। ”

মিহি ইমদাদের সামনে থেকে প্লেট সরিয়ে বলল,
” ভালে হলে তো খেতেনই। ”

অন্য প্লেটে নতুন করে ভাত আর ভাজা মাছ দিয়ে বলল,
” ঐ তরকারিটা আমি রেঁধেছি, তাই ভালো হয়নি। আপনি এটা খান। ”

ইমদাদ ভারি অখুশি হলো। বুঝতে পারল মিহির রান্না করা তরকারি না খেয়ে তাকে দেখা উচিত হয়নি। নিশ্চয় দুঃখ পেয়েছে। এমন শাড়ি পরা অন্য রকম দেখতে হওয়া মেয়েটাকে দুঃখ দেওয়া অন্যায়। তার একটা শাস্তি পাওয়া উচিত। কী শাস্তি পাবে? কে দিবে এই শাস্তি?

ইশাদ খাওয়া শেষে হাত ধুতে ধুতে বলল,
” তোর কি আজ সরকারি ছুটি? চেম্বারে ফিরবি না? এমন পিঁপড়ের মতো খাচ্ছিস কেন? ”

ইশাদের ধমকে নাকেমুখে খাবার তুলে খাওয়া শেষ করল ইমদাদ। মিহির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে সিঁড়ি কাটতে কাটতে আচমকা চেঁচিয়ে বলল,
” মিহি বড় হয়ে গেছে! ”

ইশাদ পাশ থেকে জিজ্ঞেস করল,
” কী হয়েছে? ”

ইমদাদ দাঁত দিয়ে জিভ কাটল। কথা কাটিয়ে নিতে বলল,
” রিকশা নিবি নাকি হেঁটে যাবি? ”

ইশাদ উত্তর দেওয়ার সুযোগ পেল না। তার আগেই ইমদাদ বলল,
” বন্ধু, আমার শরীরটা আজ ঠিক লাগছে না। তুই চলে যা। আমি একটু বিশ্রাম নিয়ে পরে যাব। ”

ইশাদ উদ্বিগ্ন হয়ে বলল,
” ঠিক লাগছে না? হঠাৎ কী হলো? আচ্ছা, আমিও নাহয় পরে…”

ইমদাদ তাৎক্ষণিক বলল,
” এই না। তুই কেন পরে যাবি? তেমন কিছু না। বেশি খেয়ে ফেলেছি তো তাই মাথা ঘোরাচ্ছে। একটু বিশ্রাম নিলে ঠিক হয়ে যাবে। তুই যা। ”

ইশাদকে ঠেলেঠুলে বড় রাস্তায় পাঠাল ইমদাদ। দূর থেকে রিকশা ইশারা করে বলল,
” বেশি খারাপ লাগলে আমি ফোন করব। ”

ইশাদ খানিকটা চিন্তিত বদনেই রিকশা করে চলে গেল। ইমদাদ ছুটে ফিরে আসল। চপলতায় কলিংবেল চাপছে বিরামহীন। মিহি দরজা খুলে খানিকটা অবাক হয়ে বলল,
” আপনি এখনও যাননি? ”

ইমদাদ তার থেকেও দ্বিগুণ পরিমাণের অবাক কণ্ঠে বলল,
” তুমি না শাড়ি পরেছিলে? ”
” হ্যাঁ। ”
” তাহলে পাল্টেছ কেন? ”
” ইশাদ ভাইয়া চলে গেছে তাই। ”

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here