তোমার_সমাপ্তিতে_আমার_প্রাপ্তি সিজন_৩,১২,১৩

0
923

#তোমার_সমাপ্তিতে_আমার_প্রাপ্তি সিজন_৩,১২,১৩
রোকসানা রাহমান
পর্ব (১২)

” তুমি না শাড়ি পরেছিলে? ”
” হ্যাঁ। ”
” তাহলে পাল্টেছ কেন? ”
” ইশাদ ভাইয়া চলে গেছে তাই। ”

ইশাদের চলে যাওয়ার সাথে শাড়ি পালটানোর কী সম্পর্ক বুঝতে পারছে না ইমদাদ। সন্দেহ কাটাতে জিজ্ঞেস করল,
” ইশাদ চলে গেলে শাড়ি পালটাতে হবে? ”
” হ্যাঁ। ”
” কেন? ”
” আমি তো উনার জন্যই শাড়ি পরেছিলাম। ”

ইমদাদ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল,
” তুমি ইশাদের জন্য শাড়ি পরেছিলে? ”

মিহি আগের মতোই সরলমনে বলল,
” হ্যাঁ। মা বলেছিল, আমি যেন ইশাদ ভাইয়ের সামনে শাড়ি পরে ঘুরঘুর করি। তাহলে উনার ভালো লাগবে। আপনার এখানে আসার পর আমার কোনো শাড়ি ছিল না তাই পরতে পারিনি। ঐ দিন আসার পথে আন্টি একটা উপহার দিয়েছিল। সেটাই আজ পরেছি। ”

মিহির সরল বয়ানে ইমদাদ ভারি বিরক্ত হলো। রাগও হলো খুব। চটে গিয়ে বলতে চাইল, ‘ তখন তোমার ইশাদের সাথে বিয়ের কথা ছিল তাই হয়তো বলেছে। কিন্তু এখন তো তোমার বিয়ে হয়েছে আমার সাথে। সে হিসেবে শাড়ি পরে আমার সামনে ঘুরঘুর করবে। ‘ বলা হলো না। ভেতরের রাগ ভেতরে নিয়েই দরজা ছেড়ে ফিরে গেল সিঁড়ির মুখে। মিহি চিৎকার করে জানতে চাইল,
” আপনি কি চলে যাচ্ছেন? ”
” হ্যাঁ। ”
” কেন এসেছিলেন সেটা তো বললেন না? ”

ইমদাদ কয়েক সিঁড়ি নেমে পেছনে তাকাল। মিহির আপাদমস্তকে দ্রুত চোখ বুলিয়ে বলল,
” তোমার কাছে নয়, অন্য একজনের কাছে এসেছিলাম। ”

কথাটা বলে আরেক সিঁড়িতে পা দিবে সেসময় মিহি বলল,
” মিতু আপুর কাছে এসেছিলেন? ”

মিতু নামটা কর্ণ গহ্বরে প্রবেশ করতে ইমদাদ এলোমেলো হয়ে গেল। শরীরের বল হারিয়ে পড়ে যাচ্ছিল প্রায়! সিঁড়ির রেলিং চেপে ধরে নিজেকে রক্ষা করে বলল,
” মিতু! কে মিতু? তুমি চিনলে কী করে? ”

মিহি দরজা ছেড়ে ইমদাদের দিকে অগ্রসর হতে হতে বলল,
” সকালে চিনেছি। আপনাকে খুঁজতে এসেছিল। ”

ইমদাদ ঘোড়ার ন্যায় সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে এলো। মিহির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে হাঁসফাঁস করতে করতে জিজ্ঞেস করল,
” তোমার সাথে দেখা হয়েছে? কথা হয়েছে? ”

মিহি মাথা উপরনিচ করতে সে দ্রুত প্রশ্ন করল,
” কী কথা? ”

মিহি একটু সময় নিয়ে বলল,
” তেমন কিছু নয়। আমি কে, এখানে কেন, আপনার কী হই এসব জিজ্ঞেস করছিল। ”
” উত্তরে কী বলেছ? ”
” বলেছি, আমি মিহিম্মা মিহি, আপনার বউ। বিয়ে হয়েছে তাই এখানে আছি। ডিভোর্স হলে চলে যাব। ”

ইমদাদ বিস্ফারিত চোখে বলল,
” এগুলো বলেছ? ”

মিহি নিরুদ্বেগে বলল,
” হ্যাঁ। ”

ইমদাদ কিছু বলতে পারল না। কয়েক সেকেন্ড ফোঁসফোঁস শব্দে নিঃশ্বাস ফেলে চলে গেল।

_______
ইমদাদের পুরো বিকেল কাটল বিরক্তে, রাগে আর দুঃখে। একটুতে রাগারাগি করল চিকিৎসায় সহযোগিদের সাথে। একবার তো একটা ইনজেকশন ভেঙেই ফেলল। চিনি কম হয়েছে বলে চা দিতে আসা এক বাচ্চা ছেলেকে চড় মেরে বসল। সন্ধ্যা কাটাল এই রাগের কারণ খুঁজতে খুঁজতে, পেল না। মিতুকে ভাবনায় আনতেই পারল না। বার বার মিহির কথাগুলোই মনে পড়ছে। তাহলে কি মিতুর সামনে বউ বলেছে বলে তার রাগ হয়েছে নাকি ডিভোর্স হলে চলে যাবে বলে কষ্ট হচ্ছে! যে কষ্ট প্রকাশ পাওয়ার পথ না পেয়ে রাগে রুপান্তর হয়েছে? ইমদাদ চেয়ারে শরীরের ভার ছেড়ে দিয়ে এসব ভাবছিল তখনই ল্যান্ডলাইনে কল আসল। ধরতে মিহি বলল,
” আপনি কি মোবাইল নিতে আসবেন না? মিতু আপু বার বার কল করছে। আমি কি ধরব? ”

ল্যান্ডলাইনে মিহির কণ্ঠ পেয়ে ইমদাদ বিস্মিত হলো। পরমুহূর্তে মিতুর নাম শুনে আগের রাগ তাজা হলো। একটা রামধমক দিতে গিয়েও নিজেকে সামলে নিল। চুপচাপ ফোন কেটে দিল। কিছুক্ষণ ঝিম ধরে বসে থেকে নিজেই কল দিল মিহির কাছে। সে ধরলে বলল,
” মিতুর সাথে আমার দু-মাসের প্রেম ছিল। আমরা একসাথে ঘুরেছি, থেকেছি, ঘনিষ্ঠ হয়েছি। ”
” আপনি এটা বলার জন্য কল দিয়েছেন? ”
” না। ”
” তাহলে? ”
” মিতুর মতো আমার অসংখ্য মেয়ের সাথেই এমন প্রেম ছিল, ঘনিষ্ঠতা ছিল। যাদের নাম আমার মনে নেই। ”
” নাম মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য কল করেছেন? কিন্তু আমাকে তো আগে তাদের নাম বলেননি। মনে করিয়ে দিব কিভাবে? ”

ইমদাদ ফট করে কল কেটে দিল। মনে মনে নিজেকে গালাগাল করে বিড়বিড় করল, ‘ আমি কাকে কী বলছি? কেন বলছি? মিহি কি এসবের কিছু বুঝবে? বাচ্চা একটা! ‘ বাচ্চা শব্দটা উচ্চারণ করতেই দুপুরের সেই শাড়ি পরা মিহির মুখটা ভেসে উঠল। মুহূর্তে ইমদাদের রাগ পড়ে গেল। দুষ্টু হেসে বলল, ‘ অতটাও বাচ্চা নয়। পুরুষের নজরে পড়ার মতো হৃষ্টপুষ্ট গড়ন আছে তার। ‘

_________
ইমদাদ রাতে বাড়ি ফিরল হাতে শপিং ব্যাগ নিয়ে। মিহির হাতে দিয়ে বলল,
” ফোনে বলছিলে না তোমার শাড়ি নেই? তাই নিয়ে আসলাম। ”

মিহির নিজের বলা কথাটুকু মনে করিয়ে দিয়ে বলল,
” নেই বলিনি তো, বলেছিলাম আপনার এখানে আসার পর…”
” ঐ একই হলো। ”

মিহিকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বলল,
” তুমি মাঝে মাঝে বেশি কথা বলো। ”

মিহি কিছু একটা বলতে চেয়েছিল আর বলল না। চুপ হয়ে গেলে ইমদাদ বলল,
” দাঁড়িয়ে আছ কেন? প্যাকেট খুলে দেখ, ঠিক আছে নাকি। ”

মিহি শপিংব্যাগের মুখ খুলে ভেতরে তাকিয়ে বলল,
” ঠিক আছে। ”

ইমদাদ অসন্তোষ্ট হয়ে বলল,
” এভাবে দেখলে বুঝবে নাকি? পরে দেখ। ”
” আমি শাড়ি পরতে পারি না। ”
” দুপুরে না পরলে? ”
” তখন রাধুনি খালা পরিয়ে দিয়েছিল। ”

ইমদাদ হতাশ হলো। নিরাশমনে কাপড় বদলাতে স্নাগারে ঢুকল। ক্লান্ত ধুয়ে সতেজ হয়ে বেরুতে চমকাল। বিস্ময়াভিভূত হয়ে মিহিকে সুধাল,
” তুমি না বললে শাড়ি পরতে পার না? ”
” ভেবেছিলাম পারি না। চেষ্টা করতেই পারলাম। ”

ইমদাদ মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে মিহিকে দেখছে। এমন গাঢ় দৃষ্টিতে এর আগে কাউকে দেখেছিল কি? ইমদাদ ঘোর কাটিয়ে বলল,
” ভালো লাগছে। ”
” ভাত দেব? ”

এমন মুহূর্তে ভাতের প্রসঙ্গ টেনে আনায় ইমদাদ হেসে ফেলল। খেতে বসে বলল,
” তুমি খুব সরল ও সাদাসিধে। ”
” আপনার এমন পছন্দ না, তাই না? ”
” এরকম বলেছি? ”

মিহি পানির গ্লাস এগিয়ে দিয়ে বলল,
” বলতে হবে কেন? আমি বুঝেছি। ”
” কী করে বুঝলে? ”
” মিতু আপুকে দেখে। ”
” একজনকে দেখেই বুঝে গেলে? ”
” হ্যাঁ, আপনিই তো বললেন আপনার সব প্রেমিকা মিতু আপুর মতো। ”

_______
শাড়ি পরেই মিহি বিছানায় শুয়ে পড়ল। ইমদাদ আলো নেভানোর আগে জিজ্ঞেস করল,
” শাড়ি বদলাবে না? ”
” ইচ্ছে করছে না। ”

ইমদাদ আলো নিভিয়ে মিহির পাশে শুয়ে পড়ে। চোখ বন্ধ করতে মনে হলো মিহির গলাটা অন্য রকম লাগছে। সে মিহির দিকে ঘুরে বলল,
” তোমার কি মন খারাপ? ”

মিহি সাথে সাথেই উত্তর দিল,
” হ্যাঁ, মায়ের কথা মনে পড়ছে। ”

ইমদাদের মনটাও খারাপ হয়ে গেল। ইচ্ছে করছে মিহির মাথায় হাত রাখতে। কিন্তু সাহস পাচ্ছে না। দুপুর থেকে তার চিন্তা-ভাবনা পালটে গেছে। যদি ভুলে যায় মিহি এখনও ছোট?

” আপনার আমাকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে না? চুমু খেতে ইচ্ছে করে না? ”

ইমদাদ অন্ধকারেও টের পেল মিহি তার দিকে ঘুরে একটু কাছে সরে এসেছে। নিঃশ্বাসের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে স্পষ্ট।

মিহি আগের সুরেই বলল,
” আমি জানি, আপনার ইচ্ছে করছে। তাহলে কেন ধরছেন না? ”

বলতে বলতে মিহি কেঁদে ফেলল। কাঁদতে কাঁদতে বলল,
” আমি মায়ের কাছে যাব। আমাকে দিয়ে আসুন। এখনই। ”

মিহির চাপা কষ্টটা ইমদাদ অনুভব করতে না পারলেও কান্নাটা সহ্য করতে পারল না। আলতো জড়িয়ে ধরে বলল,
” আচ্ছা, দিয়ে আসব। কিন্তু এখন না, কাল। এত রাতে গেলে তোমার মা ভয় পাবে তো। মিহি, কান্না থামাও। প্লিজ! ”

মিহি সুযোগ পেয়েই ইমদাদের বুক ভিজিয়ে দিল চোখের পানিতে। শক্ত করে পিঠ খামচে ধরে বলল,
” আমার খুব কষ্ট হচ্ছে! ”
” ঘুমালেই আর কষ্ট হবে না। কান্না থামিয়ে ঘুমাও। ”

মিহি আর কথা বলল না। ইমদাদ চুলে হাত বুলিয়ে দিতে ঘুমিয়ে পড়ল।

__________
সকালে ইমদাদের ঘুম ভাঙল ইশাদের কলে। ঘুমের ঘোরেই ফোন কানে ধরতে ইশাদ ধমকে উঠল। মনে করিয়ে দিল আজ তাদের তিহিদের বাড়িতে যাওয়ার কথা। এক ঘণ্টার মধ্যে তৈরি হয়ে যেন মোড়ে এসে দাঁড়ায়। সেখান থেকেই তাকে গাড়িতে তুলবে।

ইমদাদ ফোন কানে নিয়েই মিহিকে খুঁজছে। বিছানায় না পেয়ে কান থেকে ফোন নামাল। তোয়ালে নিতে নিতে বেশ কয়েকবার মিহিকে ডাকল, সাড়া পেল না। তোয়ালে কাঁধে নিয়ে গোসলখানার দরজা মেলল। সেখানে না পেয়ে রান্নাঘরের দিকে এগুলো। রান্নাঘরেও মিহি নেই।

ইমদাদ খানিকটা চিন্তায় পড়ল। একা একা বাইরে বের হওয়ার মেয়ে তো সে নয়। তারমধ্যে এত সকালে তাকে রেখে বাইরে যাবে? অনুমতি না নিয়ে? ইমদাদ নিজেকেই প্রশ্ন করল, ‘ গোসল করে কাপড় নাড়তে ছাদে যায় নি তো? ‘

সে ছুটে ছাদে গেল। ছাদের চারধার ঘুরে কোথাও মিহিকে না পেয়ে ইমদাদের হৃদয় কেঁপে উঠল। বেফাঁসে বলে ফেলল, ‘ মিহি মায়ের কাছে চলে যায়নি তো? ‘

চলবে

#তোমার_সমাপ্তিতে_আমার_প্রাপ্তি
#সিজন_৩
পর্ব (১৩)

প্রহর শেষের আলোয় রাঙা
সেদিন চৈত্র মাস,
তোমার চোখে দেখেছিলাম
আমার সর্বনাশ!

রবীন্দ্রনাথের লেখা লাইন দুখানা ইশাদের কানে বাজতে সে চমকে তাকাল পাশে। ইমদাদ মুখের সামনে মুঠো হাত রেখে নাটকীয়ভঙ্গিতে খুক খুক শব্দে কেশে বলল,
” তোদের দুজনের নীঃশব্দের প্রেম দেখে লাইনদুটো মনে পড়ল। ”

ইশাদ খানিকটা লজ্জা পেল। গাড়ি থেকে নেমে গেইট পার হয়ে প্রথম চোখ পড়েছিল বারান্দায়। সাথে সাথে চোখাচোখি হলো তিহির সাথে। দুজনের কেউ চমকাল না, বরঞ্চ দৃষ্টি বিনিময় দীর্ঘ হলো। যেন এই মুহূর্তটার জন্যই অপেক্ষায় ছিল যুগযুগ ধরে। কিন্তু কে জানত, তাদের নীরব ভাষা আরেকজন পড়ে ফেলবে?

ইশাদের চাপা লজ্জার আভাসটুকু ঠিক মতো প্রকাশ পাওয়ার আগেই কিছু একটার সাথে পা আটকে গেল। উপুত হয়ে সামনে পড়বে তখনই ইমদাদ হাত দিয়ে পিঠের দিকের পাঞ্জাবি টেনে ধরল। দুষ্টু হেসে বলল,
” আমি এই সর্বনাশের কথাই বলছিলাম, বন্ধু। বিয়ে করতে এসে নাক কেটে ফেললে তো মহা সর্বনাশ! ”

ইশাদ খেয়াল করল তারা মূল দরজার দিকে না গিয়ে বাগানের দিকে চলে এসেছে। বালু-সিমেন্ট দিয়ে বানানো বাগানের সীমানার সাথেই ধাক্কা খেয়েছে। সে অত্যাশ্চর্য হয়ে বলল,
” আমরা এখানে এলাম কখন? ”

ইমদাদ ইশাদকে সোজা করে দাঁড় করাল। কাঁধ চেপে ধরে বলল,
” যখন চোখে চোখে সর্বনাশ ঘটাচ্ছিলে তখন। তোর ভবিষ্যৎ কল্পনা করতে পেরেছিলাম বলেই রক্ষা করলাম। নাহলে তো আমিও আন্টির পাশেই দাঁড়িয়ে থাকতাম! ”

ইশাদ চট করে বা-পাশে তাকাল। শাহিনা শাইখা গেইটের ওখানে দাঁড়িয়ে মিটিমিটি হাসছেন। জিভ কামড়ে লজ্জায় চুলে আঙুল ঢুকিয়ে মায়ের কাছে হেঁটে যাচ্ছে। হঠাৎ বলল,
” আমার সর্বনাশ চৈত্রে না মাঘের শেষে দেখেছিলাম। ”

ইমদাদ হা হা শব্দে হেসে উঠে থেমে গেল। মনে করতে চাইল তার সর্বনাশের দিনক্ষণের কথা। তেমন কিছুই মনে পড়ল না৷ কল্পনায় অসংখ্য নারী মুখ উঁকি দিলেও তাকে নাশ করার মতো কোনো আঁখির দেখা পেল না। তবে কি তার সর্বনাশ হওয়া এখনও বাকি? ইমদাদ ভাবনা ছেড়ে ইশাদের পিছু নিল। একপা ফেলে আরেকপা ফেলবে সেসময় মিহির আদুরে মুখখানা মনে পড়ল। পরক্ষণে অভিমানি দুটি চোখ! চোখদুটোর কোল অশ্রুতে ভরে উঠতে ধপাস শব্দ হলো।

ইশাদ দৌড়ে এসে ইমদাদের এক হাত টেনে বলল,
” পড়লি কী করে? ”

ইমদাদ তখনও কল্পনাবাসী। বিভোর হয়ে বলল,
” প্রহর শেষের আলোয় রাঙা সেদিন চৈত্র মাস
তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ! ”

ইশাদ কপাল কুঁচকে বলল,
” তুই দেখি কবি হয়ে গেছিস। যখন তখন কবিতার লাইন আওড়াচ্ছিস। ”

শাহিনা শাইখাও ছুটে এসেছিলেন। উদ্বিগ্ন হয়ে বললেন,
” চেয়ে চেয়ে কী দেখছিস? টেনে তোল। ব্যথা পেল নাকি দেখ! ”

বলতে বলতে শাহিনা শাইখাও ইমদাদের শরীরে হাত রাখলেন।
___________
রুকমিনি মুখার্জির মুখোমুখি বসতে ইশাদ অস্বস্তিতে পড়ে গেল। ভয়ে হাত-পা শীতল হয়ে এসেছে। তিহিকে তার হাতে তুলে দিবে তো? নাকি অন্য কোনো মতলব আঁটবেন? ইশাদ ভেতরে ভেতরে দুর্বল হয়ে পড়ল খুব। তার মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে কতটা ভীত হয়ে পড়ছে! শাহিনা শাইখা ছেলের একহাত চেপে ধরে রুকমিনি মুখার্জির সাথে কুশল বিনিময় শুরু করলেন। ধীরে ধীরে আতিথেয়তা শুরু হলো। কিছু সময়ের মধ্যেই ইশাদের ভয় কেটে গেল। নিশ্চিত হলো বিয়ের ব্যাপারেই কথা বলছে। ইশাদ আটকে রাখা নিশ্বাসটা ছাড়ল। একটু শান্তির বাতাস টেনে নিতেই ইনা ছুটে এলো তার কাছে। কোলের উপর বসে কানে কানে বলল,
” আম্মু বলেছে, তুমি কুঁচি না ধরলে শাড়ি পরবে না। ”

বিস্ময়ে চোখ বড় করে তাকাল। ইনাকে আদরে জড়িয়ে ধরে কিছু বলবে তার আগেই সে হাত ফসকে পালিয়ে গেল। সামনে মুরব্বিরা বসা দেখে উঠতেও পারল না। ইনাটাও চোখের পলকে কোথায় লুকাল সেটাও টের পেল না। সেসময় রুকমিনি মুখার্জি জিজ্ঞেস করলেন,
” ইশাদের বাবা আসেননি? দেখতে পাচ্ছি না যে? ”

ইশাদ সরাসরি বলল,
” উনি আসবেন না। ”

রুকমিনি মুখার্জির দৃষ্টি ঘুরে গেল ইশাদের দিকে। কৌতূহলে জানতে চাইলেন,
” কেন? ”

ইশাদ সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিতে পারল না। মাথা নত করে নিলে রুকমিনি মুখার্জি অসন্তোষ হয়ে বললেন,
” তিনি না আসলে কী করে হবে? ইশাদের অভিভাবক তো তিনিই। পরিবারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। তাকে ছাড়া তিহিকে আপনাদের পরিবারে কিভাবে পাঠাব? ”

ইশাদ চোখ তুলে তাকাল। কিছু বলার সুযোগ পেল না। ইনা তার হাত ধরে টানছে। ইশাদ একটু নিচু হতে সে ফিসফিস করে বলল,
” আম্মু বলেছে, তুমি কানে ফুল গুঁজে না দিলে চুল বাঁধবে না। ”

ইশাদ হালকা হাসল। ইনার কপালে চুমু দিতে চাইল, পারল না। সে আবারও ছুটে পালাল। সেসময় মায়ের স্পষ্ট গলার স্বর পেল,
” ইশাদের অভিভাবক ইশাদ নিজেই। ভালো-মন্দ বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য আমি আছি। ও আমার কথার অবাধ্য হয়নি কখনও, ভবিষ্যতেও হবে না ইনশাআল্লাহ। আপনি যদি তিহিকে আমাদের দিতে চান তাহলে ভরসাটুকু আমাদের উপরেই করতে হবে, আপা। ”

রুকমিনি মুখার্জি ঘাড় বাঁকিয়ে স্বামীর দিকে তাকালেন। তাপান মুখার্জি স্ত্রীর পাশেই বসে ছিলেন। স্ত্রীর জিজ্ঞেসা চাহনিতে সহজভাবে বললেন,
” এ ব্যাপারে আমার রায় দেওয়া উচিত নয়। ওদেরকে কাছ থেকে তুমি দেখেছ। যদি ভরসা করতে পার তাহলে মেয়ে দিবে নাহয় দিবে না। ”

রুকমিনি মুখার্জি একবার শাহিনা শাইখার দিকে তাকালেন তারপরে ইশাদের দিকে। কোনো কিছু না বলে আচমকা সোফা ছেড়ে চলে গেলেন। ইশাদ অস্থিরতায় দাঁড়িয়ে পড়লে গলা জড়িয়ে ধরল ইনা। কানে কানে বলল,
” আম্মু বলেছে, তুমি কলম না ধরলে আম্মু সাইন করবে না। ”

কথা শেষ করে ইমদাদের কোল থেকে নামতে চাইল, পারল না। ইমদাদ শক্তভাবে জড়িয়ে ফিসফিস করে বলল,
” পাকনি বুড়ি, শুধু বাবার সাথে কানাকানি করলে হবে? আংকেলের সাথেও তো করতে হবে। ”

ইনা চোখ-মুখ কুঁচকে বলল,
” আম্মু তো তোমাকে কিছু বলতে বলেনি। ”
” তাহলে তুমিই বলো। ”

ইনা গালে হাত রেখে কিছু একটা ভাবল। কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল,
” ইনা বলেছে, আমাকে কোল থেকে না নামালে তোমাকে কেউ চুমু খাবে না, আদর করবে না, বিয়ে করবে না। ”

ইমদাদ শব্দ করে হেসে ফেলল। হাসতে হাসতে বলল,
” আমাকে তো একজন বিয়ে করে ফেলেছে। ”

ইনা অখুশি হলো। কৌতূহলে জিজ্ঞেস করল,
” চুমু খেয়েছে? ”

ইমদাদের হাসি মিলিয়ে গেল। চুপ হয়ে ম্লান মুখে তাকালে ইনা কোল থেকে নেমে গেল। পদতলে ছন্দ তুলে দৌড় দিলে মনে পড়ল তাকে অনেকেই চুমু খেয়েছে, আদর করেছে। কিন্তু বলতে পারেনি। যতক্ষণ ইনা কোলে ছিল ততক্ষণ ঐ মানুষগুলোর কথা মনেই পড়েনি। শুধু একজনের কথা মনে পড়েছিল। যে তাকে চুমু খায়নি, আদর করেনি। শুধু একবার জড়িয়ে ধরে কেঁদেছিল।

হঠাৎ কাঁধে ভারী চাপে ইমদাদ পাশ ফিরে তাকাল। ইশাদকে অনুসরণ করে সামনে তাকালে, তিহির দেখা পেল। বেনারশী জড়িয়ে শাশুড়ির পায়ে পা মিলিয়ে নিচে নামছে।

রুকমিনি মুখার্জি তিহিকে তাদের সম্মুখে দাঁড় করিয়ে মৃদু হেসে বললেন,
” আমরা তো হিন্দু পরিবার। এখানে মুসলিম রীতিতে বিয়ের আয়োজন করা সম্ভব নয়। তাই আইনি ব্যবস্থা করেছি। তোমাদের আপত্তি না থাকলে বিয়ের কার্যকলাপ শুরু করা যাক? ”

___________
বিদায়বেলা তিহি যখন কান্নাকাটি করে অচেতন হওয়া অবস্থা তখন ইশাদ কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল,
” কে জানি বলেছিল, কুঁচি না ধরলে শাড়ি পরবে না? কানে ফুল না দিলে চুল বাঁধবে না? ”

তিহি ফুঁপাতে ফুঁপাতে ইশাদের দিকে তাকালে সে আবার বলল,
” কলম না ধরলে সাইনও করবে না বলেছিল। ”

মুহূর্তে তিহির ভেজা চোখদুটো রক্তিম হয়ে উঠল। ইশাদের থেকে গাড়ির অন্যপাশে চেপে বলল,
” আমার কান্না না থামিয়ে মজা করছ তো? শোধ তুলব আমি। ”

তিহি কথা শেষ করতে অকস্মাৎ গাড়ি থেমে গেল। ইশাদ অবাক হয়ে বলল,
” মাঝ রাস্তায় গাড়ি থামালে, আমাকে গুম করবে নাকি? ”

তিহি বিরক্ত হয়ে বলল,
” আমি কেন গাড়ি থামাতে যাব? ”
” তাহলে কে থামাল? ”

ইশাদ সামনে ড্রাইভারের দিকে তাকালে ইমদাদের গলার স্বর পাওয়া গেল,
” গাড়ি থেকে নাম। ”

ইশাদ স্বাভাবিকভাবেই নামল। ইমদাদের চোখে চোখ রাখলে সে সরাসরি বলল,
” মিহি কোথায়? ”

ইশাদ যেন আকাশ থেকে পড়ল এমন মুখ করে বলল,
” তাই তো মিহি কোথায়? ওর তো আমার বিয়েতে আসার কথা ছিল। ”

ইশাদ আশেপাশে মিহিকে খুঁজছে অমন ভাব করলে ইমদাদ রেগে গেল। রুক্ষ স্বরে বলল,
” একদম নাটক করবি না, ইশাদ। মিহি যে আমাদের সাথে নেই সেটা তুই সকালেই খেয়াল করেছিস। কিন্তু একবারও জিজ্ঞেস করিসনি। কেন? ”

ইশাদ চুপ করে থাকলে ইমদাদ খানিকটা জোর গলায় বলল,
” ইশাদ, মিহি কোথায়? ”

ইশাদ ইমদাদের একটু কাছে এসে দাঁড়াল। চোখে চোখ রেখে বলল,
” তুই একটা বাচ্চা মেয়েকে নিয়ে খেলেছিস, যাকে কিনা আমি বোনের মতো জানি। এরপরও আমার সামনে সুস্থভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেন জানিস? কারণ, মিহি চায় না তার জন্য তুই কোনো কষ্ট পাস। ”

ইমদাদ চোখ সরিয়ে ফেললে ইশাদ আবার বলল,
” মেয়েটা ছোট হতে পারে কিন্তু মন? বিশাল! আমি এতদিন যাবৎ তোর সব অন্যায় মাফ করেছি কিন্তু এবার করব না। মনে রাখিস, কষ্ট শুধু মিহি না আমিও পেয়েছি। ”

ইমদাদ কিছু বলতে পারল না। একঝাঁক বিষণ্ণতায় মনটা পূর্ণ হলেও স্বস্থি পেল এই ভেবে যে মিহি এখনও ইশাদের তত্ত্বাবধানে আছে।

__________

নিজের বাড়ির সাধারণ নিয়ম-কানুন শেষ করে ইশাদ তিহির কাছে এলো। গাঁদা আর রজনীগন্ধা দিয়ে বাসর সাজানো হয়েছে তাদের। পুরো বিছানায় গোলাপের পাপড়ি ছড়ানো। তার মধ্যেই তিহি ঘোমটা টেনে বসে আছে। ইশাদ ঘোমটা খুলতেই ইনা ‘ভাউউ’ করে উঠল। ইশাদ ভয়ে পেছনে সরে যায়। এই সময়ে এই ঘরে ইনাকে আশা করেনি সে। তারমধ্যে আবার তিহির ঘোমটার আড়ালে লুকিয়ে ছিল।

তার হৃদপিণ্ড কাঁপছে। নিশ্বাস পড়ছে ঘনঘন। নিজেকে স্বাভাবিক করতে বেশ সময় নিয়ে বলল,
” মামনি? তুমি এখানে এলে কখন? ”

ইনা হেসেই বলল,
” আম্মু নিয়ে আসল যখন। ”

ইশাদ চট করে তিহির দিকে তাকাল। শেরপুর থেকে আসার পথে গাড়িতেই ঘুমিয়ে পড়েছিল ইনা। বাসায় পৌঁছে তাকে কোলে করে মায়ের রুমে দিয়ে এসেছিল স্পষ্ট মনে আছে তার। রাতে খাওয়ার জন্য ডাকাডাকি করেও তোলা যায়নি। শেষে তার মা ঘুম ভাঙলে খায়িয়ে দিবে বলে ইশাদকে রুমে পাঠিয়ে দেয়। এরমধ্যে তিহি রুম থেকে বের হলো কখন আর মেয়েকে ডেকে আনল কখন?

ইশাদ ইশারায় কিছু একটা বললেও তিহি গ্রাহ্য করল না। মেয়েকে কাছে টেনে বলল,
” চল, আমরা ঘুমাই। ”

তিহির আদেশ পেয়েই ইনা তার মাকে জাপটে ধরে শুয়ে পড়ল। চোখ বন্ধ করলে তিহি ইশাদকে ইশারায় কাছে ডাকল। সে মাথা এগিয়ে নিলে কান টেনে ধরল তিহি। ঠোঁটের কাছে নিয়ে ফিসফিস করে বলল,
” আমার প্রতিশোধ কেমন লাগছে? ”

এতক্ষণে পুরো ব্যাপারটা মাথায় ঢুকল তার। বিয়ের প্রথম রাতে বউয়ের হাতে অপদস্ত হয়ে একটুও মন খারাপ হলো না। ঠোঁটে কুটিল হাসি নিয়ে আলো নিভিয়ে ইনার অন্যপাশে শুয়ে পড়ল।

________
তখন রজনীর দ্বিতীয় প্রহর চলছে। আকাশ মেঘমালা বুনায় ব্যস্ত। বাতাসে নববর্ষের ঘ্রাণ। কুয়াশার নরম স্পর্শে জানালার কাঁচ ঝাপসা হয়ে আসতে তিহির শীত অনুভূত হলো। ইনাকে বুকের ওম দেওয়ার জন্য জড়িয়ে নিল ঘুমের ঘোরে। সেসময় এক জোড়া কোমল ঠোঁট তার চিবুক কামড়ে ধরল। তিহি পিটপিটে চোখে তাকাতেই বিস্ময়ে চিৎকার করে উঠল। চিৎকারের শব্দ রুমের দেয়াল পার হওয়ার আগেই মুখ চেপে ধরল ইশাদ। হালকা শাসিয়ে বলল,
” পাশের রুমে তোমার শাশুড়ি ঘুমাচ্ছে, একটু মায়া করো। ”

তিহি নিজের মুখ ছাড়িয়ে পুরো রুমে চোখ বুলিয়ে বলল,
” ইনা কোথায়? ”
” আম্মুর সাথে ঘুমাচ্ছে। ”
” কখন গেল? ”
” আমি যখন দিয়ে আসছি। ”

তিহি অসহায় চোখে তাকালে ইশাদ হেসে ফেলল। পর মুহূর্তেই অনুরোধের সুরে বলল,
” আজ রাতটা শুধু আমাকে দেও, কাল থেকে ভাগ করো, প্লিজ? ”

তিহি আর দূরত্ব বজায় রাখতে পারল না। ইশাদকে গাঢ়ভাবে জড়িয়ে বলল,
” আমাকে বাঁচিয়ে নেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। বিনিময়ে আপনার কী চাই?”

ইশাদ সাথে সাথেই বলল,
” আপনার নিশ্বাসটুকু উপহার দিলেই চলবে। ”

রজনি তখন শেষ প্রায়। সূর্যের আগমনের তোরজোর চলছে। সেদিকে কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই ইশাদের। ঘুমানোর একটা ছোট্ট চেষ্টা চালিয়েও আয়ত্বে আনতে পারল না। চোখের পাতা এক করলেই তিহির বিবস্ত্র শরীরের অগণিত দাগগুলো ছবির মতো ভেসে উঠছে। এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে আঘাতের চিহ্ন নেই, একমাত্র মুখটি ছাড়া। ইশাদ তিহিকে বুক থেকে সরিয়ে বালিশে রাখল। গাঢ় ঘুমে আচ্ছন্ন মুখটাতে চেয়ে প্রশ্ন করল, ‘ তোমার কখনও জানতে ইচ্ছে হয়নি এই দাগগুলো কিসের? ‘

ইশাদ প্রশ্নের উত্তর পায় না। ছোট্ট নিশ্বাস ফেলে তিহির গালে হাত রেখে মুখটাতে গভীর চোখে চেয়ে থাকে। হঠাৎ দরজায় ঠকঠক শব্দ হয়। তারপরেই কান্নার আওয়াজ। ইশাদের বুঝতে বাকি থাকে না ইনা কাঁদছে। সে ছুটে দরজা খুলতে ইনা কোমর জড়িয়ে চিৎকার করে বলল,
” আমার একা ভয় করছে। আম্মুর কাছে শোব। ”

ইশাদ তাকে কোলে নিয়ে জিজ্ঞেস করল,
” একা কেন হবে, মামনি? তোমার দাদু কোথায়? ”
” নেই। ”

ইনার কান্নার শব্দে তিহির ঘুম ভেঙে গেছে। নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে কী হয়েছে জানতে চায়। ইশাদ উত্তরে বলল,
” তুমি ও কে ঘুম পাড়াও। আমি আসছি। ”

ইশাদ মায়ের রুমে ছুটে গেলে নতুন কাজের মেয়েটির সাথে দেখা হয়। তার কাছে জানতে পারে হাসপাতাল থেকে একটা কল পেয়ে ছুটে বেরিয়ে যান শাহিনা শাইখা। ইশাদ ভারী দুঃশ্চিন্তায় পড়ে যায়। এতরাতে মাকে একা ছাড়ার সাহস পায় না। সে কোনো রকম প্রস্তুতি ছাড়াই বাসা থেকে বেরিয়ে যায়। গাড়ি পার্কিং লনে গিয়ে নিজের টাকায় কেনা নতুন গাড়িতে চড়ে বসে। মা গেছে অনেক্ষণ, হেঁটে গেলে ধরতে পারবে না, এতরাতে রিকশাও পাবে না। তাছাড়া কোন হাসপাতালে গেছে সেটাও জানে না।

ইশাদ গাড়ি নিয়ে লন থেকে বের হতে সামনে তিহি পড়ে। জোর করে গাড়িতে চড়ে বলল, সে ও যাবে। ইশাদের মানা শুনে না। ইশাদ বাধ্য হয়ে তিহিকে নিয়েই বড় রাস্তায় বেরিয়ে আসে। খালি রাস্তায় গাড়ির গতি বাড়িতে দিতে তিহি সঙ্কায় পড়ে। কমানোর জন্য বলতে গিয়ে থেমে যায়। হঠাৎ চোখে ঝাপসা দেখতে থাকে। চারপাশের সবকিছু অদ্ভূত লাগে। কয়েক সেকেন্ড থম মেরে বসে থেকে আচমকা স্পিয়ারিং থেকে ইশাদের হাত সরিয়ে দিতে চায়। ইশাদ আশ্চর্য হয়ে বলল,
” আরে কী করছ? এক্সিডেন্ট করব তো। ”

তিহি নিজের কাজে অটুট থেকে বলল,
” আমি তো তাই চাই, তাজ। এক্সিডেন্ট যদি আমাকে মুক্ত দিতে পারে, তাহলে আমি মুক্তি চাই। ”

বলতে বলতে তিহি সিট ছেড়ে ইশাদের দিকে হেলে পড়ে। ইশাদের হাত সরিয়ে গাড়ির গতি সর্বোচ্চ করে দেয়। স্টিয়ারিং একবার ডানে তো আরেকবার বামে ঘুরাতে থাকে। তিহির মুখে তাজ নামটা শোনার পর ইশাদ এতটাই অবাক হয়েছিল যে তিহি কী করছে সেদিকে খেয়ালই নেই। যেন সে অন্য রাজ্যে চলে গেছে। চেতন ফিরল সামনে থেকে ছুটে আসা দ্রুতগামী একটি ট্রাকের সাথে সংঘর্ষের ভয়ঙ্কর শব্দে!

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here