#তোমার_সমাপ্তিতে_আমার_প্রাপ্তি সিজন_৩,১৮,১৯
রোকসানা রাহমান
পর্ব (১৮)
রুবিনার ঝাড়ি খেয়ে ইমদাদকে ডাকতে আসে মিহি,
” এই যে, শুনছেন? ”
মিহির ডাকে ইমদাদ ঝট করে চোখ মেলে। সটাং উঠে বসে জিজ্ঞেস করল,
” তুমি কি আমাকে ডাকছ? ”
মিহি বিরক্তের মুখ বানাল। অন্যদিকে তাকিয়ে বলল,
” না। মা ডাকছে। ”
ইমদাদ খুশি হলো। দারুন উৎসাহ নিয়ে বলল,
” রান্না হয়ে গেছে? ”
মিহি উত্তর দিল না। এক পলক চেয়ে দরজার দিকে হাঁটা ধরল। ইমদাদ তার চলে যাওয়ার দিকে চেয়ে থেকে চিৎকার করে বলল,
” আমি খাব না। ”
মিহি দরজার মুখে পৌঁছে গিয়েছিল। সেখান থেকে ফিরে দাঁড়াল। বিস্ময় নিয়ে বলল,
” কেন? ”
ইমদাদ ভেবেছিল মিহি বলবে, ‘ না খেলে আমার কী? ‘ তেমন বলেনি। উল্টো কারণ জানতে চাওয়ায় ভীষণ খুশি হলো সে। মনে মনে বলল, ‘ জোর করে মন বদলানো যায় না, যেটা তুমি করছ। ‘ ইমদাদ বাচ্চাদের মতো জেদ ধরে বলল,
” আমার উত্তর চাই। ”
মিহির ভুরুর মাঝে একাধিক ভাঁজ পড়ল। কৌতূহলী হয়ে পড়ল কিশোরী মন। ইমদাদের দিকে এগিয়ে এসে জানতে চাইল,
” কিসের উত্তর? ”
ইমদাদ বসা থেকে দাঁড়িয়ে পড়ল। মিহির কাছ ঘেষে এসে দাঁড়াল। চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,
” এই যে, আমাকে না বলে পালিয়ে আসা হলো কেন? ”
ইমদাদের চাহনিতে মিহি অস্বস্তিতে পড়ে গেল। চোখ নামিয়ে নিলে ইমদাদ মনে করিয়ে দিল,
” সেদিন তো আমাদের মধ্যে ঝগড়া হয়নি। তুমি কষ্ট পাবে এমন কোনো কথা বলিনি, তোমাকে খুশি করতে জড়িয়েও ধরেছিলাম। তাহলে কেন চলে এসেছ, মিহি? ”
মিহির চোখ ছলছল হলো। গলা ধরে এলো। বুকে চিনচিনে ব্যথা শুরু হলো।
ইমদাদ মিহির নিচু করে থাকা মুখটায় চেয়ে নরম সুরে ডাকল,
” মিহি? ”
মিহি হালকা কেঁপে উঠল। নিচু কণ্ঠে বলল,
” কয়েকদিন পর তো আপনি আমাকে রেখেই যেতেন, আপনি রেখে চলে গেলে যদি আমার কষ্ট হতো? কান্না পেত? সে ভয়ে আমি চলে এসেছি। ”
মিহির কণ্ঠে অপ্রকট ব্যথা। ইমদাদের ভেতরটা কেমন নড়ে গেল। কিছু একটা চুরমার হলো সেটাও টের পেল। জানতে চাইল,
” নিজে থেকে চলে এসেছ বলে কষ্ট হয়নি? কান্না পায়নি? ”
মিহি চোখ তুলে তাকাল। টলমল চোখদুটো ইমদাদের মনজুড়ে মনখারাপের বাতাস ছড়িয়ে দিল। সে গলার স্বর পাল্টে ফেলল। উত্তর না নিয়ে প্রশ্ন করে বসল,
” আমি তোমাকে রেখে যাব কেন? এমনটা কখনও বলেছি? ”
” না, বলেননি। তাহলে কি ইশাদ ভাইয়াকে বলতেন রেখে আসতে? ”
ইমদাদ ব্যস্ত হয়ে বলল,
” ইশাদকেই কেন বলব? রেখে আসার কথা উঠছে কেন? তুমি কি ডিভোর্সের জের ধরে এমন ভেবেছ? ”
” ডিভোর্স হওয়ার পর রেখে আসেন? ”
” রেখে আসি মানে কী? কাকে রেখে আসলাম? ”
” যাদের সাথে ঘুমিয়েছেন। ”
ইশাদের চোখজোড়া মাত্রাতিরিক্ত বড় হয়ে গেল। গোল গোল চোখ নিয়ে বিস্ময় ঝরে পড়ল কণ্ঠ থেকে,
” ঘুমিয়েছি! কে বলেছে এসব? ”
” আপনি বলেছেন। মিতু আপুও বলেছে। ”
ইমদাদ বিস্ময়ে স্তব্ধ হয়ে গেলে মিহি বলল,
” ঘুমানোর পর নাকি তাদের সাথে সম্পর্ক রাখেন না। আমিও তো আপনার সাথে ঘুমিয়েছি। তারমানে আমার সাথেও রাখবেন না। ”
ইমদাদ বিস্ময়ভরা চোখ দুটো স্বাভাবিক হয়ে এলেও পলক পড়ল না। বোঝার চেষ্টা করছে মিহি ঘুমানো মানে কী বুঝেছে। বুঝে আসতেই বলল,
” আরে, এ ঘুমানো সে ঘুমানো নয়। ”
” তাহলে কেমন ঘুমানো? ”
ইমদাদ কিছু একটা বলতে গিয়ে থেমে গেল। খানিকটা ভেবে বলল,
” স্বামী-স্ত্রীর মতো ঘুমানো। ”
মিহি সরলমনে বলল,
” আমরা তো স্বামী-স্ত্রীই। ”
ইমদাদ যেন ভুলে গেছিল এমনভাবে বলল,
” হ্যাঁ, তাই তো। ”
” আপনি উত্তর পেয়েছেন? ”
ইমদাদ বিভ্রান্ত হয়ে বলল,
” হ্যাঁ, পেয়েছি। কিন্তু..”
” কিন্তু কী? ”
” তোমার বুঝায় ভুল হয়েছে। ”
ইমদাদ একটু চুপ থেকে আবার বলল,
” তুমি কি আসলেই ঐ ঘুমানোর মানে বুঝতে পারনি? ”
” কোন ঘুম? ”
ইমদাদ সরাসরি বলতে গিয়ে আবার আটকে গেল। বুদ্ধিমত্তা জেগে উঠল। মনে করিয়ে দিল, এই মেয়েটি তার স্ত্রী। স্বামী অন্য মেয়ের সাথে দৈহিক মিলনে মজেছে। একবার নয়, বারবার। সেটা নিশ্চয় সহ্য করবে না। সে কেন কোন স্ত্রীই সহ্য করবে না। সম্পর্ক ভেঙে দেওয়ার জন্য খুব একটা সময়ও নিবে না। কিন্তু ইমদাদ চায় না, মিহির সাথে সম্পর্কটা ভেঙে যাক। অসহণীয় কষ্ট পাক। তাই প্রশ্নটা এড়িয়ে বলল,
” চলো খেয়ে আসি। মা অপেক্ষা করছে। ”
মিহি কোনোরূপ বাধা দিল না। ইমদাদকে নিয়ে বাইরে বের হলো। দরজা ডেঙাতে রুবিনার সাথে দেখা হলো। দুজনের আসতে দেরি হওয়ায় সে দেখতে এসেছিল কিছু সমস্যা হয়েছে নাকি। ইমদাদকে দেখে বললেন,
” ঘুম ভাঙছিল না? ”
ইমদাদ মৃদু হেসে বলল,
” ভেঙেছে। খুব ঠাণ্ডা তো তাই লেপ ছেড়ে উঠতে ইচ্ছে করছিল না। ”
” তাহলে কষ্ট করে এলে কেন? মিহিকে বলে পাঠাতে আমি খাবার নিয়ে ভেতরে আসতাম। ”
ইমদাদ কী উত্তর দিবে বুঝতে পারছিল না। চুপ হয়ে গেলে রুবিনা বললেন,
” তুমি যাও, আমি মিহিকে দিয়ে খাবার পাঠিয়ে দিচ্ছি। ”
ইমদাদ ব্যস্ত হয়ে বলল,
” আরে না, না। লাগবে না। আমি বাইরে খেতে পারব। ”
রুবিনা ইমদাদের বাধা শুনল না। জোর করে ভেতরে পাঠিয়ে দিল। খাবারের প্লেট নিয়ে নিজেই ভেতরে আসল। ইমদাদের গায়ে লেপ দিয়ে বললেন,
” আমার মেয়েটার বয়স কম, একটু বোকাও। তোমাকে খুব সমস্যায় ফেলছে, তাই না? ”
ইমদাদ মিহির দিকে এক পলক তাকাল। উত্তর দেওয়ার জন্য শাশুড়িমার দিকে ঘুরতে অবাক হলো। তিনি ভাত মেখে তার মুখের সামনে ধরে আছে। ইমদাদ সেই লোকমা ফিরিয়ে দিতে পারল না৷ কিংবা মায়ের হাতের স্বাদ নেবার লোভ সামলাতে পারল না। ইমদাদ মুগ্ধতায় ডুবে মুখ হাঁ করল। রুবিনা স্বাভাবিকভাবেই খালি হাত নিয়ে রাখলেন মাখা ভাতে। আরেকটু মেখে বললেন,
” মিহি বোকা হলেও খুব লক্ষ্মী মেয়ে। মুখে মুখে তর্ক করে না। যে যা বলে তাই বিশ্বাস করে, মেনে নেয়। তুমি শুধু কষ্ট করে শিখিয়ে নিও। ”
ইমদাদ চুপচাপ খেয়ে চলল আর মাথা একবার ডানদিকে তো আরেকবার বামদিকে কাত করল। খাওয়া শেষে পানির গ্লাস ধরিয়ে দিয়ে বেরিয়ে গেলেন রুবিনা। ইমদাদ বেখেয়ালে পানি মুখে দিতে গিয়ে ঠোঁট পুড়িয়ে ফেলল। হাত থেকে গ্লাস পড়ে গেলে মিহি উদ্বিগ্ন হয়ে বলল,
” গরম পানি ছিল তো। ধোয়া উড়ছিল দেখতে পাননি? ”
বলতে বলতে বাইরে থেকে ঠাণ্ডা পানি নিয়ে এসে বলল,
” ঠোঁটে ঠাণ্ডা পানি দেন। ”
ইমদাদ ঠাণ্ডা পানি দেওয়ার বদলে খেল। পানি হাতে মিহিকে বলল,
” এদিকে এসো। ”
” কেন? ”
” কানে কানে কথা বলব। ”
মিহি পেছনে তাকিয়ে বলল,
” মা তো নেই। তাহলে কানে কানে বলবেন কেন? ”
” সেই ঘুমানোর কথা কানে কানেই বলতে হয়। ”
” কোন ঘুমের কথা? ”
ইমদাদ খানিকটা শক্ত গলায় বলল,
” তোমার মাকে ডেকে দেখাব, তুমি কেমন তর্ক করতে পার? ”
মিহি মনখারাপ করে ফেলল। ধীরে মাথা ঝুকালে ইমদাদ কান টেনে কিছু একটা বলতেই মিহি মাথা সরিয়ে নিল। এককদম দূরে সরে নাক-মুখ কুঁচকে বলল,
” ছি! ”
তারপর আর এক মুহূর্তও দাঁড়াল না৷ ইমদাদের পাশে থাকা বালিশটা নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। ইমদাদ কতক্ষণ থম মেরে থেকে বিড়বিড় করল, ‘ আমি তো ভেবেছিলাম এই মেয়ে কিছুই বুঝে না। এখন তো দেখছি একটু বলতে আরেকটু বুঝে গেল। বোকামো করে বসলাম না তো? বাড়ি থেকে যদি বের করে দেয়? এত রাতে ফিরব কী করে? ‘ ইমদাদ মহাচিন্তায় পড়ে গেল। তার চিন্তা বাস্তব করতে কেউ এলো না। রাত গভীর হতে সে নিজেই রুম থেকে বেরুল। গুটিগুটি পায়ে মিহিকে খুঁজতে শুরু করে। একটু হেঁটে যেতে আরেকটি রুম দেখতে পায়। দরজার ফাঁক দিয়ে ক্ষীণ আলো ঠিকরে বের হচ্ছে। ইমদাদ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ডাকল,
” মা? ”
সাথে সাথে দরজা খুলে গেল। রুবিনা জিজ্ঞেস করলেন,
” কিছু লাগবে, বাবা? ”
ইমদাদ ভেতরে উঁকি দিয়ে বলল,
” মিহি? ”
” ও তো ঘুমিয়ে পড়েছে। ”
ইমদাদ ভারি আশ্চর্য হলো। মিহি এ রুমে এসে শুয়েছে অথচ তার মা একবারের জন্যও প্রশ্ন করছে না তাদের মধ্যে কিছু হয়েছে নাকি। তাহলে কি মিহি সন্দেহ না করার মতো কিছু বলেছে? ইমদাদ মনে মনে আওড়াল, ‘ মিহি মোটেও বোকা নয়। খুব চালাক। ‘ সামনাসামনি বলল,
” আমি আপনার ছেলে নই? ”
রুবিনা সংশয় নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
” হঠাৎ এমন বলছ কেন? ”
” আগে বলুন, আমি আপনার ছেলে নই? ”
” হ্যাঁ। ”
” তাহলে তো ছেলে মায়ের রুমে ঘুমাতেই পারে। ”
বলতে বলতে ভেতরে ঢুকে গেল। মাটিতে শুয়ে পড়লে রুবিনা হায় হায় করে উঠলেন,
” মাটিতে শুচ্ছ কেন, বাবা? উপরে শোও। আমি নাহয় অন্যরুমে…”
” তাহলে আমিও যাব। আমি তো আপনার সাথেই ঘুমাব। ”
ইমদাদ কথা শেষ করতেই মিহির নড়াচড়ার শব্দ পেল। জিভ কামড়ে বলল,
” মানে ঐ রুমের মাটিতে শোব। ”
রুবিনা ইমদাদের সাথে না পেরে মাটিতে কাঁথা পেরে দিয়ে মিহির সাথে শুয়ে পড়লেন।
মিহি ঘুমানোর ভাব ধরে শুয়ে থাকলেও ঘুমাতে পারল না। মাথা উঁচু করে মাকে ডিঙিয়ে নিচে তাকাতে দেখল, ইমদাদ বসে আছে। চাঁদের আলো ঘরে পড়লেও ইমদাদের মুখাবয়ব দেখা যাচ্ছে না। তবুও মিহির মনে হলো সে কোনো দুশ্চিন্তা করছে। সেজন্যই ঘুম হচ্ছে না। তার ইচ্ছে হলো ইমদাদের পাশে গিয়ে বসতে। কিন্তু গেল না। আগের ন্যায় চোখ বন্ধ করে শিথীল হয়ে পড়ে রইল।
ইমদাদ বসা থেকে দাঁড়িয়ে জানালার কাছে হেঁটে গেল। কুয়াশাচ্ছন্ন অন্ধকারে তাকাতে মনটা বিবশ হয়ে পড়ল। চোখ বন্ধ করে তিহি আর তার পরিবারের মিলনের মুহূর্তটা মনে করল। ইশাদের বাবার জোর করে ছেলেকে ঘরে নিয়ে যাওয়া মুহূর্তটা মনে করল। সেই বাচ্চাটার মায়ের রোদন মুখটা মনে করল। মুহূর্তে তার বুকের ভেতরটা ফাঁকা লাগতে লাগল। নিঃসঙ্গ চেপে ধরল মন ও মস্তিষ্ক। এই সাতাশ বছরে পা দিয়ে প্রথমবারের মতো মনে হলো, সে একা। তার পরিবার নেই। নিশ্বাসটা আটকে চোখ বন্ধ করে নিতে শুনল,
” এভাবে জানালা খুলে দাঁড়িয়ে আছেন কেন? ঠাণ্ডা হাওয়া আসছে তো। বুকে সর্দি… ”
মিহি কথাটা শেষ করতে পারল না। তার আগেই হাওয়া গতিতে মিহিকে জড়িয়ে নিল। হাওয়ার মতোই মিশে যেতে চাইল মিহির নরম শরীরটাতে। ঘটনার আকস্মিকতায় মিহি হতবাক। অনুভূতিশূন্য হয়ে পড়ল। বেশ কিছুক্ষণ পর চাপা স্বরে বলল,
” কী করছেন? মা দেখবে তো। ছাড়ুন। ”
ইমদাদ ছাড়ল না। আগের চেয়েও আরও গভীরভাবে জড়িয়ে বলল,
” তুমি আমার পরিবার হবে, মিহু? ”
চলবে
#তোমার_সমাপ্তিতে_আমার_প্রাপ্তি
#সিজন_৩
পর্ব (১৯)
” তুমি আমার পরিবার হবে, মিহু? ”
” পরিবার! ”
মিহির কণ্ঠ থেকে বিস্ময় গলে পড়ল। ইমদাদ তাকে ছেড়ে গালদুটো আঁজলে নিয়ে থুতনি উঁচু করল। জোসনারঙা মুখটাতে চেয়ে বলল,
” আমি চাইলে হয়তো অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারব, বউয়ের মর্যাদা দিতে পারব। সন্তান আনতে পারব। একটা ছোট্ট গুছানো পরিবার গড়তে পারব। কিন্তু মন যে চাইছে না অন্য কাউকে বিয়ে করতে। ”
মিহি কৌতূহলপূর্ণ চোখ মেলে বলল,
” কেন? ”
ইমদাদ মিহিকে আরেকটু কাছে টেনে নিল। কৌতূহলপূর্ণ মনিদুটোতে চেয়ে বলল,
” সে যে তোমার সরলতা, নিঃস্বার্থতা, বোকা চাহনির লোভে পড়েছে। মিহু, হবে তো আমার পরিবার? ”
ইমদাদের কাতর অনুরোধে মিহি নিশ্চুপ, নির্বাক, মূক। ইমদাদ অস্থিরতায় কাঁপছে। চোখের পলক ফেলছে ঘন ঘন। মিহিকে আরেকটু কাছে টেনে ছেড়ে দিল। অন্যদিকে ঘুরে বলল,
” আমার কেমন জানি লাগছে। এত অসহায়, উগ্র, পাগলামি বোধ হয়নি কখনও। নিজেকে নিঃসঙ্গ লাগছে খুব। ভরসাহীন, আশাহীন হয়ে পড়ছি। পরগাছা, ঝঞ্জাট মনে হচ্ছে নিজেকে। বেঁচে আছি কেন তাই বুঝতে পারছি না। ”
ইমদাদ পেছন ঘুরল। মিহির দিকে এগিয়ে এসে পাগলের মতো বলল,
” এতদিন অন্যদের বিরক্ত করেছি, এখন তোমাকে করছি। মিহি, আমি এত খারাপ কেন? ”
মিহির দিক থেকে কোনো উত্তরের আশা করল না ইমদাদ। তাকে ফেলে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। বারান্দায় পা ফেললে মিহি পেছন পেছন ছুটে এসে জিজ্ঞেস করল,
” কোথায় যাচ্ছেন? ”
ইমদাদ দাঁড়াল না। হাঁটায় থেকে বলল,
” চলে যাচ্ছি। ”
” এত রাতে? পথ চিনবেন না। ”
” না চিনলে হারিয়ে যাব। আমার জন্য কেউ অপেক্ষায় নেই, খোঁজ করবে না কেউ। ”
” ইশাদ ভাইয়া অপেক্ষায় থাকবে, আপনার খোঁজ করবে। ”
এ পর্যায়ে ইমদাদ থামল। মিহির দিকে ঘাড় ফিরিয়ে বলল,
” হয়তো করবে কয়েকদিন, তারপর ঠিক ভুলে যাবে। বয়স হলে বন্ধুত্ব এমনি ছুটে যায়। ”
ইমদাদ বারান্দা ছেড়ে উঠোনে নামল। গেইটের কাছে গিয়ে থামল। পেছন ঘুরে বলল,
” সব প্রশ্ন করা শেষ? ”
মিহি একহাত দূরে দাঁড়িয়ে নীঃশব্দে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বুঝালে ইমদাদ বলল,
” তাহলে পেছন পেছন আসছ কেন? ভেতরে যাও। ”
মিহি নড়ল না। মাথা নিচু করে ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইল। ইমদাদ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে রাস্তায় বেরিয়ে এলো। কয়েক কদম হেঁটে আবার দাঁড়াতে বাধ্য হলো। চোখ বন্ধ করে শব্দ করে নিশ্বাস ছাড়ল। পেছনে না তাকিয়ে বলল,
” মিহি, পেছন পেছন আসা বন্ধ করো। ”
মিহির গলার স্বর পাওয়া গেল না। পায়ের শব্দও না। ইমদাদ উল্টো ঘুরে মিহির সামনে এসে দাঁড়াল। বুকে হাত বেঁধে কঠিন স্বরে বলল,
” তোমার মাকে ডেকে দেখাব, তুমি বড়দের কথা শোনো না? ”
এতক্ষণে মিহি কথা বলব,
” আমিও বলে দেব, আপনি ইচ্ছে করে হারিয়ে যাচ্ছেন। ”
ইমদাদ অবাক হওয়ার ভান করে বলল,
” বলে দিলে কী হবে শুনি। আমাকে মারবে নাকি? ”
” মারবেই তো। ছেলে বখে গেলে মা মারবে না? ”
ইমদাদ কিছুক্ষণ চুপ থেকে জিজ্ঞেস করল,
” তুমি কাঁদছ? ”
” না। ”
ইমদাদ থুতনি উঁচু করে ভেজা চোখে চেয়ে বলল,
” তুমি কাঁদছ। ”
মিহি নিজেকে ছাড়িয়ে উল্টো ঘুরে দাঁড়াল। হাত দিয়ে চোখ মুছে বলল,
” না, কাঁদছি না। ”
ইমদাদ হেসে ফেলল। মিহিকে আলতো জড়িয়ে নিয়ে বলল,
” তোমার সরলতা আমার খুব পছন্দ। কেন কঠিন হচ্ছ? ”
মিহি এবার শব্দ করে কেঁদে ফেলল। আহ্লাদে গলে পড়ে বলল,
” আমি তো অভিমান করেছি। অভিমান না ভাঙিয়ে আমাকে ফেলে চলে গেলে কাঁদব না? ”
ইমদাদের হাসি চওড়া হলো। বলল,
” হ্যাঁ, কাঁদবেই তো। ”
” সেজন্যই কাঁদছি। ”
” আচ্ছা, কাঁদো কিন্তু কাঁদতে কাঁদতে অভিমান ভাঙবে কী করলে সেটা বলো। ”
” বলব না। ”
” কেন? ”
” অভিমান ভাঙার দায়িত্ব আপনার তাহলে আমি বলে দেব কেন? ”
” কিন্তু অভিমান তো তুমি করেছ, আমি না। তাহলে ভাঙব কিভাবে? ”
মিহি ইমদাদের দিকে ঘুরে দাঁড়াল। বিভ্রান্ত হয়ে বলল,
” তাই তো। ”
ইমদাদ শব্দ করে হাসছে। সেই হাসির শব্দ চারপাশের নির্জন, নিস্তব্ধতাকে কাঁপিয়ে তুলছে। মিহি ভয়ে কাঁচুমাচু হয়ে পড়লে ইমদাদ কোলে তুলে নিল। উঠোন পার হতে হতে বলল,
” কোন দিকে যাব? মায়ের রুমে নাকি তোমার রুমে? ”
” দিয়ে আবার চলে যাবেন? ”
ইমদাদ বারান্দায় উঠে বলল,
” তুমি বললে চলে যাব। ”
” না বললে? ”
” যাব না। ”
” আর যদি কিছুই না বলি? ”
ইমদাদ হাঁটা থামিয়ে দিল। অবাক চোখে চেয়ে বলল,
” তোমার মাকে ডেকে দেখাব, তুমি মোটেও লক্ষ্মী নও। খুব দুষ্টু? ”
মিহি ভয় পেল। ইমদাদের বুকে মুখ লুকিয়ে অনুরোধ করল,
” আর করব না। মাকে ডাকবেন না, প্লিজ। ”
ইমদাদ দুষ্টু হাসল। দুই রুমের মাঝে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল,
” মিহু, তোমার বয়স কত? ”
মিহি মুখ বের করে বলল,
” সতেরো। ”
ইমদাদ মায়ের রুমের দিকে পা বাড়িয়ে বলল,
” আমার চেয়ে অনেক ছোট। ”
মিহি কিছু একটা বলতে চাইলে ইমদাদ ফিসফিস করে বলল,
” আর কথা নয়, মা জেগে যাবে। ”
মিহি সচেতন হলো। ইমদাদ তাকে মায়ের পাশে শুয়িয়ে দিয়ে কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল,
” তুমি ছোট দেখে শুরু থেকেই খারাপ লাগত। কিন্তু আজ মন থেকে খারাপ লাগছে। মিহু, চোখের পলকে বড় করার যাদুটা যদি কারতাম! ”
ইমদাদের আফসোসের কারণ ধরতে পারল না মিহি। প্রথমের কথা ধরে মনখারাপের সুরে বলল,
” আমাকে আপনার পছন্দ নয়? তখন যে বললেন পছন্দ? ”
” হ্যাঁ, পছন্দ তো। খুব পছন্দ। শুধু তোমার বয়সটা পছন্দ না। ”
” কেন? বয়স কী দোষ করল? ”
ইমদাদ একহাতে মিহির দুইগাল চেপে ধরল। হাতের চাপে ঠোঁটদুটো ফুলে উঠতে সেখানে নিজের ঠোঁট ছুঁয়াল সাবধানে। তারপর বলল,
” সেভাবে ঘুমাতে পারছি না বলে। ”
ইমদাদের ঠোঁটের ছোঁয়ায় মিহির চোখ বড় বড় হয়ে গিয়েছিল। বিস্ময়ে বরফের মতো জমে যাওয়া শরীরটা দেখতে ভীষণ আদুরে লাগল ইমদাদের। সরতে ইচ্ছে হলো না, ঐ পাশে গিয়ে শুতে ইচ্ছে করল না। চোখের ঘুমটুকু কয়েক রাতের জন্য বেচে দিতে ইচ্ছে হলো শুধু। অনিচ্ছায় উঠে দাঁড়িয়ে বিড়বিড় করল, ‘ তুমি আমার নিঃসঙ্গ জীবনে সঙ্গ দিতে নয়, অনুভূতিহীন মনটাকে অনুভূতি দ্বারা পাগল করতে এসেছ। ‘
পরেরদিন সকালে মিহি ব্যাগ গুছিয়ে ইমদাদের সাথে সংসার সাজাতে চলে গেল। রুবিনাকে সাথে নেওয়ার অনেক চেষ্টা করেছিল ইমদাদ, পারেনি। তার এককথা, এই বয়সে স্বামীর ভিটে ছেড়ে কোথাও যাবে না। তবে কথা দিয়েছে, মাঝে মাঝে তাদের ওখান থেকে বেড়িয়ে আসবে।
______
গোসল সেরে জানালার পাশে এসে দাঁড়াল তিহি। চুল আলগা করে দিল রোদের আলোয়। সতেজ মনে চারপাশটা আগ্রহ নিয়ে দেখছে। বাড়ির পাশের পুকুরটা শুকিয়ে ভরে এসেছে প্রায়। কচুরিপানার বদলে জংলী লতাপাতা গজিয়েছে। পুকুরটার ওপাশের রাস্তাটা আগের চেয়েও বড় করেছে। অনায়াসে দুদিক থেকে রিকশা, ভ্যান, অটো চলছে। তিহি মন দিয়ে পরিবর্তনগুলো দেখছিল। সেসময় তীব্র শব্দ করে একটি মোটরসাইকেল এসে থামল। হয়তো কিছু একটা সমস্যা হয়েছে। মোটরসাইকেলের মালিক সেটাই সারানোর চেষ্টা করছে। তিহি সেদিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে তাজকে কল্পনায় নিয়ে আসল। সেদিন সিঁদুর পরিয়ে দেওয়ার পর যখন জানল তিহি মুসলমান তখনই মোটরসাইকেল নিয়ে হাওয়া হয়ে গেছিল তাজ। বেশ কয়েকদিন আর দেখা যায়নি। তিহিও ভয়ে মা-বাবাকে কিছু বলেনি। ভেবেছিল আর কখনও আসবে না। এদিকে নিজের বিয়েটা আটকাতেও ব্যর্থ হয়ে পড়ল। আকদ করতে চলে এলো মাতব্বরের পরিবার। আতিথেয়তা শেষ করে তিহিকে নিতে আসবে। সে সাজছিল। আহামরি কিছু না। একটু পরিষ্কার, পরিচ্ছন্ন, পরিপাটি সাজ। সাজ শেষ হলে খালি রুম পেয়ে তিহি মুখ ঢেকে কাঁদছিল। তন্মধ্যে কেউ একজন বলল,
” তিহি? ”
তিহি চমকে তাকিয়ে ভয় পেয়ে যায়। পুরো রুম অন্ধকার! সে চিৎকার করতে চাইল তার আগেই নাকে তীব্র গন্ধ পেল। জ্ঞান হারাতে হারাতে শুনল,
” আমি থাকতে অন্য কোথাও তোমার বিয়ে হতে পারে না। ”
তিহির জ্ঞান ফিরেছিল কখন সে বুঝতে পারেনি। কারণ, যে ঘরে রাখা হয়েছিল সে ঘরে কোনো জানালা ছিল না। ঘড়ি ছিল না। বাইরের আলো-বাতাস ঢোকার মতো ছোট্ট ছিদ্রও ছিল না। বাতি নিভিয়ে দিলেই গাঢ় অন্ধকারে ডুবে যেত তিহি। তাজ প্রথমে আদুরে ভাষায় আইনি নিয়মে তাকে বিয়ে করার জন্য বলেছিল। অনুরোধ করেছিল। তিহি রাজি হয়নি। একে তো ধর্মের মিল নেই, তার মধ্যে মানুষটাকে সামান্যতমও মনে ধরছিল না। ঘৃণায় চোখ-মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। একসময় তাজের ধৈর্য্য ভেঙে যায়। ভালোমানুষি ভাবটা হারিয়ে হিংস্র হয়ে পড়ে। চিৎকার করে বলে, ‘ তোর ভালোর জন্যই রেজিস্ট্র করতে চেয়েছিলাম। পছন্দ হয়নি তো? ভালো। হিন্দু ধর্মের নিয়ম অনুযায়ী তুই আমার বউ। আমি সেটাকে ধরেই সংসার করব। ‘ তাজ নানানভাবে তিহির মন পাওয়ার চেষ্টা করেছে, ভালোবাসা অর্জন করার চেষ্টা করেছে। কেন জানি কিছুতেই তিহিকে দুর্বল করতে পারছিল না। শেষে জোর করে দৈহিক মিলন করে। তারপরে তিহি একেবারে ভেঙে যায়। বাঁচার ইচ্ছে হারিয়ে ফেলে। তাজ জোর করেও খাওয়াতে পারে না। তিহি শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনে অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাজ বাধ্য হয়ে ডাক্তার আনে। ডাক্তার ওষুধ দিয়ে পরামর্শ দেয়, যথেষ্ট আলো-বাতাস আছে এমন কোথাও রাখতে। তারপরেই তিহির সেই ছোট্ট অন্ধকার ঘরটি থেকে মুক্তি মেলে। তাকে নিয়ে একটা নতুন বাসায় উঠে তাজ। একতলা বাসাটা বেশ খোলামেলা। গাছগাছালিতে ভরা। সেই বাসার শীতল হাওয়াও তিহি নিজের মতো করে উপভোগ করার সুযোগ পায় না। হাতে-পায়ে শিকল পরিয়ে দিয়ে তাজ বলেছিল,
” তুমি যেদিন আমাকে নিবে সেদিন স্বাধীনতা পাবে, আমি সেই প্রহরের অপেক্ষায় আছি, নেশাবউ। ”
তাজ এই নামে সম্বোধন করলে ঘৃণায় তিহির গা রি রি করে উঠত। শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মরে যেতে ইচ্ছে হতো। সে বুঝে যেত এখনই ভোগের স্বীকার হবে। এই এত ব্যথা, যন্ত্রণা, কষ্টের মধ্যেই তিহি অন্তঃসত্ত্বা হলো। প্রথমে তাজকে বুঝতে দিল না। অপেক্ষা করছিল, একটা সুবর্ণ সুযোগের। তাজের থাবা থেকে বের হতে পারলেই বাচ্চাটা নষ্ট করে ফেলবে। তিহি খুব ভালো করেই জানত, তাজ বাচ্চার ব্যাপারে জানলে আরও বেশি পাগল হয়ে পড়বে। সময় যত এগুচ্ছিল, তিহি মুক্তির পথ খোঁজায় তত মরিয়া হয়ে উঠেছিল। বেশ কয়েকটি রাত নির্ঘুম কাটিয়ে সেই সুবর্ণ সুযোগ পায়। সে রাতে তাজ প্রচুর মদ্যপান করেছিল, তিহির সামনেই। মদের নেশায় বুঁদ হয়ে ঝিমিয়ে পড়ে। সেই সুযোগে তিহি তাজের পকেট থেকে চাবির ছড়া হাতিয়ে নেয়। হাত- পা উন্মুক্ত করে রুম থেকে বের হয়। লন পেরিয়ে পুব দিকের দেয়ালের কাছে আসে। তিহি গুনে গুনে হিসেব করেছে এই দিকের দেয়ালটা একটু নিচু। পার হতে পারলেই রাস্তা। এপাশ থেকে রিকশার ক্রিংক্রিং শব্দ পাওয়া যায়। তিহি চারপাশে ছোটাছুটি করে বিভিন্ন জিনিসের সাহায্যে উঁচু টিলা বানায়। তাতে দাঁড়িয়ে দেয়ালে উঠবে তখনই শুনতে পায়,
” আমাকে রেখে চলে যাচ্ছিস? ”
তিহি ভয়ে টিলা থেকে পড়ে যায়। তাজ দৌড়ে এসে তাকে তোলে। চুল গুছিয়ে সোজা করে শীতল চোখে চেয়ে থাকে অনেক্ষণ। তার এই নীরব আচরণে তিহির কলিজা শুকিয়ে যায়। নিজ থেকে বলে,
” আমাকে মুক্তি দিন। ”
তাজ হালকা হাসে। হাসতে হাসতে সিগারেট ধরায়। নাকে-মুখে ধোঁয়া ছুঁড়তে ছুঁড়তে বসে পড়ে। তিহির ডানপা টেনে ধরে চিৎকার করে উঠে,
” এই পা আছে বলেই পালাতে পারছিস, যদি না থাকে? ”
বলতে বলতে পায়ের তলায় সিগারেটের জ্বলন্ত মুখ চেপে ধরে। তিহি সহ্য করতে না পেরে অজ্ঞান হয়ে যায়। আরও একবার ডাক্তারের আগমন ঘটে এবং তাজকে সুসংবাদ জানিয়ে দেয়। তারপরে তাজ অনেকটাই বদলে যায়। তিহির প্রতি নরম ব্যবহার করে সবসময়। একটা স্বাভাবিক সম্পর্কে আসার জন্য আবার চেষ্টা চালায়। সবকিছু পাল্টে গেলেও তিহির বন্দীদশার সমাপ্তি ঘটে না। তিহি হাঁপিয়ে উঠে। তাজের ভালো ব্যবহারও সহ্য করতে পারে না। একসময় বুঝে ফেলে তাকে স্বাভাবিক হতে হবে। এই মানুষটার থেকে মুক্তি পেতে হলে তাকে বশে আনতে হবে। সে পরিকল্পনা অনুযায়ী তাজের মতো তিহির আচরণেও বেশ পরিবর্তন হয়। তাজ খুশি হয়। ভেবে নেয় তিহি তাকে মেনে নিচ্ছে, ভালোবাসছে। তাদেরও অন্য সবার মতো একটা সুন্দর গোছানো সংসার হবে। তেমন স্বপ্নে যখন বিভোর তখনই তিহি বাইরে ঘুরতে যাওয়ার আবদার করে বসে। প্রথমে তাজ মানতে না চাইলেও পরবর্তীতে রাজি হয়। মাঝরাতে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। তিহিও মুক্তির আশায় দিশাহারা হয়ে পড়ে। দিগভ্রান্ত হয়ে তাজের উপর হামলা চালায়। তাজ গাড়ি সামলাতে ব্যস্ত হয়ে কাতর স্বরে অনুরোধ করেছিল বার বার,
” পাগলামি করো না, তিহি। তোমার কিছু হলে আমার বাচ্চাটা বাঁচবে না। ”
তিহির কল্পনা ছুটে যায়। হাত গিয়ে পড়ে পেটে। জামা সরিয়ে পেটে হাত রেখে উচ্চারণ করল,
” আমার বাচ্চা! ”
চলবে
[আশা করছি সকল রহস্য এ পার্টেই উন্মোচন হয়ে গেছে। তারপরেও যদি কোনো ধোঁয়াশা থেকে থাকে কমেন্টে জানানোর অনুরোধ রইল। ]