তোমার_সমাপ্তিতে_আমার_প্রাপ্তি Season_2,পর্ব (২)

0
1418

#তোমার_সমাপ্তিতে_আমার_প্রাপ্তি Season_2,পর্ব (২)
#রোকসানা_রাহমান

“আপনি চুমু খেয়েছেন। হ্যাঁ আপনিইতো আমাকে চুমু খেলেন।এখানে,এইতো এখানে,আমার ঠোঁটে। আপনার বড় বড় চোখ দুটো দিয়ে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে ছিলেন। তারপর টুপ করে চুমু খেয়ে নিলেন! এখন কথা হচ্ছে চুমুটা কি স্বপ্নে খেলেন নাকি বাস্তবে? I am so confuse!”

ইশাদের পানি গলায় আটকে গেলো। নাকের তালায় বাঁধলো। হাত থেকে গ্লাসটাও পড়ে গেছে! শরীর ঝাকিয়ে কাঁশি চলে আসায়। বিরতিহীন কাশির চটে বুকে যন্ত্রণা শুরু হয়েছে। চোখ লাল হয়ে ভিজে আছে। সে নিজেকে সামলাতে বিছানার এক পাশে বসে পড়ে। তখনি পাশ থেকে মেয়েটি ক্রমাগত নরম চপেটাঘাত মারছে ইশাদের মাথায়। ইশাদ কাশতে কাশতে মেয়েটির দিকে তাকাল। তাৎক্ষনিক মেয়েটি উৎসুকে অতিদ্রুত বলল,

“হ্যাঁ,এইতো এভাবেই তাকিয়েছিলেন। অনেক্ষণ! তারপর হাসলেন। আর টুপ করে চুমু খেলেন। বিশ্রী শব্দ করে। তারপর..”
“আমি মোটেও ড্যাবড্যাব করে তাকাইনি।”

ইশাদ দ্রুত কথা ছেড়ে দাড়িয়ে গেল। অসস্থি হচ্ছে তার। ভয়ঙ্কর অসস্থি! কী করবে? কিভাবে সামলাবে? মেয়ে তো সরাসরি তার দিকে আঙুল তুলছে। আঙুল অন্যদিকে ঘুরাতে হবে। কিন্তু কিভাবে? ইশাদের উদ্বেগমাখা চোখদুটো আটকালো ড্রেসিং টেবিলটায়। সম্পূর্ণ আয়নাটি দখল করে আছে মেয়েটির প্রতিচ্ছবি। সে বিছানার মাঝে বসে আছে৷ বাম হাতে চাদরটা খামচে ধরে আছে গলার দিকটায়। মেয়েটির সম্পূর্ণ দৃষ্টি ইশাদের উপরে। চোখদুটো বাদে বাকি সবকিছুতে উদাস ভাব। কেমন হয় উদাসভাবটা কাটিয়ে দিলে?

“মিথ্যে বলছেন। আমি দেখেছি। আপনি আমার গাল টানলেন। নাকটাও! এই দেখুন গালটা কেমন লাল হয়ে আছে। এতো জোরে কেউ চিমটি কাটে? আপনি তো ভারী নির্দয়! মেয়েদের গাল ধরতে হয় আলতো করে। ভালোবেসে। মায়া ঢেলে। এই যে এভাবে।”

মেয়েটি বিছানা ছেড়ে চটপটে নামছে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে সে এখন ইশাদের গাল টেনে ধরবে। শিক্ষিকা হয়ে শেখাবে কিভাবে গাল টানতে হয়। ইশাদ মহাবিপদ সামলাতে চৌকশ গলায় বলল,

“নড়বে না। তিহি ওখানেই বসে থাকো।”

তিহি আশ্চর্য হয়ে বলল,

“আরে! আপনি দেখি আমার নামও জানেন। কী করে? আমাদের কি আগেও দেখা হয়েছে?”

ইশাদ জবাব দিল না। সোজা হেঁটে চলে গেল স্নাগারে। পূর্বেই তিহির রেখে যাওয়া জামাকাপড় ছুড়ে মারল তিহির গায়ে। শক্তগলায় বলল,

“তাড়াতাড়ি পড়ে নিন। হাতে সময় খুব কম। আম্মু এখনি চলে আসবে।”

তিহির ভ্রূ কুঁচকে গেলো। সরু চোখের সুক্ষ্ম দৃষ্টি নিজের জামাকাপড়ে। হঠাৎ গলা ফাটিয়ে চিৎকার তুলল,

“আম্মু! আম্মু! তোমার মেয়ের সর্বনাশ করে দিল গো। ও আল্লাহ! বাঁ..”

তিহির ভয়ার্ত আর্তনাদ মাঝপথেই আটকে গেল। ইশাদ ওর মুখ চেপে ধরে আছে। এমন একটা পরিস্থিতির জন্য সে মোটেই প্রস্তুত ছিল না। সঙ্কিত চোখদুটো তিহির চোখে। দুজনের চোখদুটোই ভীতপানিতে ডুবে। ভয়ে দুজনেই শ্বাসরুদ্ধভাবে সময় কাটাচ্ছে। সময় এখন পিনপতন নিরবতার হাতে। কে ভাঙবে এই নিরবতা? তিহি নাকি ইশাদ? তিহির মুখ বন্ধ তাই ইশাদকেই ভাঙতে হল। সে অসহায় গলায় বলল,

“তুমি যা ভাবছো তা নয়।”

তিহি ইশাদের হাত থেকে মুক্ত পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে বলল,

“তারমানে সব সত্যি? আপনি আমার স্বপ্নে নন? আপনার চুমুও স্বপ্নে নয়? সব বাস্তব? ছি! আপনিতো শুধু নির্দয় নন। চরিত্রহীন,লম্পট! আমাকে একা পেয়ে..ছি! নাম্বার ওয়ান নষ্ট পুরুষ।

মুহুর্তেই ইশাদের অসহায়ত্ব দূরীভূত। ভীত চোখ দুটো ধারালো দৃষ্টি রেখে কর্কশ গলায় বলল,

“আমি চরিত্রহীন? আমি লম্পট? তাহলে আপনি কী? গোসলখানায় ঢুকে যে দরজা আটকাতে হয় জানেন না? তারমধ্যে একটা ছেলে আপনার গোসল করা দেখছে। আপনার কথামতো ড্যাবড্যাব করে দেখছে তার বিপরীতে আপনিও তো ড্যাবড্যাব করে দেখেছেন। মুখে কি গাম লাগানো ছিল? এখন চিৎকার করতে পারছেন তখন পারলেন না? অমন বটগাছের মতো শক্ত হয়ে ছিলেন কেন? দয়ালু সেজেছিলেন? নিঃস্বার্থভাবে ছায়া দিয়ে উপকার করবেন বলে? নাকি আমাকে চরিত্রহীন বানাতে! আমারি ভুল। আপনাকে চুমু না ঠাস ঠাস করে চড় মারা উচিত ছিল। বিনা অনুমতিতে অন্যের রুমে এসেছেন। গোসলখানা দখল করেছেন। পরিশেষে আমার চরিত্রেই দাগ লাগাতে চাচ্ছেন। বেরিয়ে যান। এখনি আমার রুম ছাড়বেন। আর একটা কথা বললে,গাল লাল করতে সটাং সটাং কয়েকশো চড় বসাব। অতঃপর কেচি দিয়ে নাক কেটে দিব!”

তিহি মাথা নিচু করে ফেলল। চোখ দুটো জলে পূর্ণ। চুপচাপ কাপড় পড়ে বেরিয়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গে দরজায় খিল দিল ইশাদ। বিজয়ী আর চতুর হাসি ফুটছে। ঠোঁটের কোণদ্বয়ের দীর্ঘ প্রসারিত ভাবই বহন করছে দাম্ভিকতার ধার।

~~~

মেয়েকে গুনে গুনে সাজিয়ে দিচ্ছেন রুবিনা। তাতে বোনা খয়েরী শাড়ির আঁচলটি সযত্নে বিছিয়ে দিলেন মিহির কাঁধে। কানে দুল,গলায় মালা,হাতে দু মুঠো চুড়ি পড়িয়ে চিরনি তুলে নিলেন হাতে। মিহির রেশম কালো চুলে চিরনি চালিয়েই থমকে গেলেন। আচমকা সব ছেড়ে দৌড়ে গেলেন দরজার পাশে। শরীরের একপাশ আড়াল রেখে মায়া দৃষ্টি ছুড়লেন বাইরে। ইশাদ হেঁটে যাচ্ছে তাঁর রুমের সামনে দিয়ে। পায়ের ভারিক্কি চালে ভূমি কাঁপছে। সাথে রুবিনার চোখের কোল ভরে উঠছে।

“কী হয়েছে মা? অভাবে ছুটে আসলে কেন?”

মেয়ের ডাকে রুবিনা চমকে উঠলেন। তার কথাটি ইশাদও বুঝি শুনল। সেও হাঁটা থামিয়ে এক পলক চাইল রুবিনার দিকে। সঙ্গে সঙ্গে দুয়ার থেকে সরে গেলেন ভেতরে। সাবধানে মুছে নিলেন চোখের কোণ। শুকনো ঢোক গিলে মেয়ের দিকে তাকালেন। মাথায় হাত বুলিয়ে বিড়বিড় করলেন,তুই খুব ভাগ্যবতী!

“বিড়বিড় করে কী বলো?”

রুবিনা হালকা হাসলেন। দৌড়ে চিরনি এনে মিহির চুলগুলো ঝটমুক্ত করলেন। কপালের দুই পাশে চিকন বেনি তুললেন। পেছনের ছাড়া চুলগুলো এক পাশে ফেলে বললেন,

“সোজা ইশাদের কাছে যাবি। তারপর কী করবি বল তো?”
“কী?”

রুবিনা বেগম নিজের খোপা আলগা করলেন। সবগুলো চুল সামনে ফেলে মিহির কাছাকাছি দাড়ালেন। মাথা খানিকটা সামনে ঝুকিয়ে নিলেন। হঠাৎ ঘাড়টা একদিকে এমনভাবে বাকা করলেন যে চুলগুলো পিঠে পড়ার আগে মিহির মুখে বাড়ি খেল। আহ্লাদে বললেন,

“এমনভাবে চুলের বাড়ি দিবি। বুঝলি?”

মিহি অবাক হয়ে বলল,

“কেন? উনি কী দোষ করছে যে চুলের বাড়ি দিতে হবে?”

রুবিনা বেগমের আহ্লাদী ভাব চলে গেল। চোয়াল শক্ত করে মিহির মাথায় চাটি দিলেন। বললেন,

“গর্দভ! কিছু করেনি দেখেই তো দিবি। তবেই না কিছু করবে।”
“কী করবে?”
“আগে বাড়ি দিয়ে আয় তারপর বলব।”

~~~
ইশাদ মামার সাথে কথা বলছে। অনেক দিন পর দেখা। তাও প্রায় বছর চার হবে। কাজের ব্যস্ততায় মামা বাড়ি যাওয়া হয় না। মায়ের দিক থেকেও কোনো তাড়া নেই। নানি বেঁচে থাকতে বছরে একবার যাওয়া হতো। কিন্তু তিনি ইন্তেকাল করেছেন প্রায় পাঁচ বছর। তার এক বছর বাদেই মামার বিয়ে ছিল। শাহিনা শাইখা বড় বোনের দায়িত্ব পালনে তিনদিন থেকেছিলেন। সে সুবাদে ইশাদকেও যেতে হয়েছিল। তারপর আর যাওয়া হয়নি। ওটাই শেষ। দেখা সাক্ষাত খুব কম হওয়ায় মামার সাথে তেমন ভালো সম্পর্ক নেই ইশাদের। যতটা পারছে বিনয়ী হওয়ার চেষ্টা করছে। উনার প্রশ্নে হা,হু উত্তর দিয়ে যাচ্ছে তখনি চোখ পড়ে ডান পাশে। ইশাদের দৃষ্টি গাঢ় হয়ে আসে। তিহি! হ্যাঁ ঐ মেয়েটাই তো। এখানে কী করছে? কী কথা বলছে সবার সাথে? হাসিখুশি খোশগল্প বলে তো মনে হচ্ছে না। তাহলে? কিছু কি খুঁজছে? আমাকে নয় তো? সঙ্গে সঙ্গে ভীত ঢোক গিলে ইশাদ। মেয়েটা হাঁটে হাঁড়ি ভেঙে দিবে না তো? তখনতো বেশ কুশলতায় ভুলভাল যুক্তি দিয়ে পরাস্ত করেছিল। কিন্তু এখন? সামনে পড়লে নির্ঘাত ফেঁসে যাবে। কী করবে? কোথায় লুকোবে? কিছুতেই এই মেয়ের সামনে পড়া যাবে না। কিছুতেই না।

ইশাদ মামাকে পাশ কাটিয়ে সিড়ির দিকে ছুটল। এক ধাপে পা ফেলতেই পেছন থেকে নারীকঠ,

“এই যে,শুনুন। নষ্ট পুরুষ! আমি উত্তর পেয়েছি। দাড়ান তো। এভাবে ঘোড়ার মতো ছুটছেন কেন? আমি বাঘ না শেয়াল?”

ইশাদ সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেল। পারলে দৌড়োতো। কিন্তু বাড়িভর্তি মানুষ! তাই যতটা পারছে দ্রুত হাঁটছে। তন্মধ্যেই বিড়বিড় করল, বাঘিনী,শেয়ালনী।

নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালেও থামল না। বড় বড় কদম ফেলে মায়ের রুমে ঢুকে গেল। সাথে সাথে দরজা আটকানোর শব্দ। ইশাদ বিস্ময় নিয়ে বলল,

“আম্মু,দরজা আটকালে কেন?”
“দরকার আছে।”

মায়ের এমন কথায় ইশাদের বিস্ময় মাত্রা বেড়ে গেল। সন্দেহী গলায় বলল,

“তুমি এমনভাবে কথাটা বললে যেন জানতে আমি আসব!”
“জানতামই তো।”
“কী করে?”
“মায়ের জানার মধ্যে সন্তানের প্রশ্ন তুলতে হয় না। কেন বলতো?”
“কেন?”
“কারণ,একটা মেয়ে মা হওয়ার সাথে সাথে দৈবশক্তি অর্জন করে। সেই শক্তির প্রধান কাজই হলো,সন্তানের ভাবভঙ্গি পূর্বেই জেনে যাওয়া।”
“আসলেই?”

শাহিনা শাইখা নিরব। তিনি কাঠের আলমারির তালা খুলছেন। চাবির ছড়াটি তাঁর আঁচলে বাধা। ঝনঝন শব্দের সাথে ইশাদের প্রশ্নটা হারিয়ে গেল। শাহিনা শাইখা একাধারে শাড়ি ছুড়ে মারছেন বিছানায়। পুরো আলমারি খালি করে ক্ষান্ত হলেন। দ্রুত ইশাদের কাছে ছুটে গেলেন। ছেলেকে বিছানায় বসিয়ে আমোদিত গলায় বললেন,

“কোন রঙের শাড়িটা পড়ব?”

ইশাদ মায়ের দিকে তাকালেন। তাঁর চোখদুটো আনন্দিত,উল্লাসিত। ঠোঁটে অপেক্ষার শেষ হওয়ার হৃষ্ট হাসি। মাথার চুল ভেজা। মাত্রই গোসল করেছে কি? ইশাদ শঙ্কিত গলায় বলল,

“গোসল করেছো?”

শাহিনা শাইখা কাঁচুমাচু হয়ে বললেন,

“একদম বাবা হওয়ার চেষ্টা করবি না। তুই আমার ছেলে। শাসন আমি করব তুই না। বুঝেছিস?”
“বাবা কখন আসছে?”

শাহিনা শাইখা উদাস গলায় বললেন,

“বলেনি।”
“তাহলে জানলে কী করে বাবা আসছে?”
“আমি জানি আসবে।”
“কিভাবে জানলে?”

শাহিনা শাইখা চুপ। ক্ষণকাল নিরব থেকে হঠাৎ বললেন,

“ছেলের এনগেজমেন্ট আর বাবা আসবে না তাই হয়? উনি তোকে কত ভালোবাসে বল তো।”
“বাবা জানে? আমিতো বলিনি।”
“আমি বলেছি।”
“কখন?”

শাহিনা শাইখা ছেলের প্রশ্ন এড়িয়ে গেলেন। কপটরাগ নিয়ে বললেন,

“একটা শাড়ি পছন্দ করে দিতে বলেছি দেখে এতো প্রশ্ন করছিস? লাগবে না। যা আমার রুম থেকে।”

শাহিনা শাইখা সত্যি সত্যি দরজা খুলে দিলেন। অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে রেখেছেন। ইশাদ ধীর পায়ে মায়ের কাছে যায়। চুলে ছোট্ট চুমু খায়। মায়ের মাথাটা বুকের সাথে চেপে ধরে বলল,

“আমাকে কে বেশি ভালোবাসে সেটা দেখে আমার কাজ কী? আমি তো শুধু দেখব আমি কাকে বেশি ভালোবাসি। আমার ভালোবাসা তো শুধু আমার এই মা’টির জন্য।”

শাহিনা শাইখা চুপ। ছেলের বুকে মাথাটা আরেকটু গেঁথে দিয়ে বললেন,

“দেখলাম তো কেমন ভালোবাসা।”

ইশাদ মৃদু হাসল। বলল,

“সবগুলোইতো সুন্দর। কোনটা পছন্দ করি বলো তো? এক কাজ করো,বাবার পছন্দের রঙেরটা পড়ো। বাবাও খুশি,তুমিও খুশি!”

শাহিনা শাইখা অগোছালোভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শাড়িগুলোর দিকে তাকালেন। একেকটা একেক রঙের। এর মধ্যে তাঁর পছন্দের রঙ কোনটা? জানলে কি আর ছেলের সামনে নির্লজ্জ সাজে? শাহিনা শাইখা সরে গেলেন। বিরক্ত গলায় বললেন,

“আমি তোর পছন্দের কথা বলেছি। তুই উনাকে টানছিস কেন? তোর পছন্দের রঙ নেই? থাকলে বল নাহলে যা। আমি এখন ব্যস্ত!”

ইশাদ কি মায়ের রাগের মানে বুঝলো? হয়তো বুঝেছে। চুপচাপ একটি শাড়ি মায়ের হাতে তুলে দিয়ে বেরিয়ে এল। বাবাকে কল দিতে হবে। আসবে তো? আসতেই হবে। মায়ের খুশিটুকু ধরে রাখতে হলেও বাবাকে এ বাড়িতে হাজির করতে হবে। এখনি,এই মুহুর্তে!

ইশাদ পকেট থেকে ফোন বের করল। তবে কল দেওয়ার প্রয়োজন হয়নি তার পূর্বেই কলিংবেল বেজে উঠল। মন বলছে,মায়ের কথাই ঠিক। বাবা এসেছে। হ্যাঁ বাবাই এসেছে। কতদিন পর এল? তিন মাস? চার মাস? নাকি ছয় মাস? কিসের এতো ব্যস্ততা যে নিজের পরিবার ছেড়ে অন্যত্র থাকতে হয়?

~~~

“কী দেখছিস?”

ইমদাদের প্রশ্নে ইশাদের নাক কুঁচকে গেল। কঠিন ধমকে বলল,

“সালা,আর এক কদমও আগাবি না। তোর চেম্বার থেকে আমার বাসায় আসতে সময় লাগে পঁচিশ মিনিট। সেখানে লাগিয়েছিস দেড় ঘন্টা। এইটুকু দুরত্বের মধ্যে কয়টা মেয়ের সাথে গা ঘেষেছিস? ঠোঁট কামড়েছিস?”

ইমদাদ সামনে এগুতে এগুতে বলল,

“তুই কিন্তু আমার চরিত্রে কালি মাখছিস। তুই খুব ভালো করেই জানিস আমি ভুল করেও কারো উপর কুদৃষ্টি দেইনা।”

ইশাদ ব্যঙ্গ করে বলল,

“তাই? তা কোন দৃষ্টি দিস শুনি?”
“তা জেনে তোর কী? তুই তো মেয়ে মানুষ দেখতেই পারিস না। মানুষের বেগুনে,পুঁইশাকে,চিংড়ি মাছে,ইলিশ মাছে এলার্জি হয়। ধুলো ময়লাতেও এলার্জি হয়। আর তোর? তোর তো মেয়ে মানুষের ছোয়ার এলার্জি। মেয়ের শরীরের গন্ধে এলার্জি!”

ইশাদ প্রত্যুত্তরে ইমদাদের কলার খামছে ধরল। টেনে ফেললো গোসলখানায়। কড়া গলায় বলল,

“তোর সাথে কথা আছে। জরুরী কথা। আগে গোসল দে তারপর কথা বলব।”

ইমদাদের করুণ গলা,

“এই রাত্রিবেলায় গোসল!”

ইশাদ ইমদাদের হাতে ডেটলের শিশি দিল। স্যাভলনের শিশিও দিল। তারপর একটা নতুন তোয়ালে ধরিয়ে বলল,

“খবরদার ঝরণা ছাড়বি না! বালতিতে পানি ছাড়। এই ডেটল,স্যাভলন সবটা পানিতে মিশাবি। সেই পানিতে গোসল করবি। পুরো আধঘন্টা শরীর ডলবি!

ইমদাদকে কথা বলার সুযোগ না দিয়েই বাইরে থেকে দরজা আটকে দিল ইশাদ। নাক,মুখ এখনো কুঁচকে রেখেছে। জিভটা কেমন ভার আর তেতো হয়ে আছে। বমি করতে পারলে ভালো হতো!

“তোর মায়ের হাত তো দেখি আলাদীনের চেরাগ থেকেও শক্তিশালী! সকালে এক মেয়েকে বাসায় তুলতে না তুলতেই তার সাথে তোর বিয়ে ঠিক। একটু পরেই আংটি বদল হবে। আর বিকেলে আরেক মেয়েকে তুলতে না তুলতেই সোজা বাসর! যদিও সম্পূর্ণ হয়নি,হবে। দেখি তোর মাথাটা নামাতো,দেখি তোর চান্দীতে কয়টা তাঁরা!”

ইমদাদ কথা শেষ করতেই প্রচন্ড আঘাত খেল। নাকটা বুঝি ভেঙেই গেল! রক্ত পড়ছে কি?

চলবে

[এই গল্পটি যারা পড়ছেন,তারা স্কিপ করে পড়বেন না। তাহলে জট পাকিয়ে ফেলবেন। গল্পের প্রত্যেকটা চরিত্র নিজ নিজ সত্তা,অনুভূতি,গল্প ফুটিয়ে তুলবে।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here