তোমায়_পাবে_বলে,পর্ব_২,৩
নিশাত_জাহান_নিশি
পর্ব_২
“আই নো। হোয়াই ডিড ইউ কাম টু মাই রুম! আই টোল্ড ইউ না? কয়েকদিনের মধ্যেই আমি “হিমেশকে” খুঁজে বের করে আনব? আমার ফ্রেন্ডকে খুঁজে আমি তোমার মুখোমুখি দাঁড় করাব। দাঁড়িয়ে থেকে তোমাদের দুজনের বিয়েটা দিবো! সো ইউ জাস্ট ডোন্ট ওরি এন্ড গেট আউট অফ মাই রুম রাইট নাও।”
প্রচন্ড ভয়ে জর্জরিত হয়ে আমি অর্নগল কন্ঠে বলতে আরম্ভ করলাম,,
“আপনার বুঝতে ভুল হচ্ছে পরশ ভাই। আমি শুধু নিজের স্বার্থেই আপনার রুমে আসি নি। দেখতে এসেছিলাম কি হয়েছে আপনার। কেনো আপনি রেগে আছেন। কেনো এভাবে আসবাবপএ ভাঙ্গচূড় করছেন।”
পরশ ভাই আমার দিকে রুখে এসে বললেন,,
“তুমি কি ভেবেছ? আমি খুব বোকা? কিছু বুঝি না আমি? তুমি নিজের স্বার্থেই আমার রুমে এসেছ। শুধুমাএ নিজের স্বার্থেই!”
চোখের জল আটকে রাখতে পারলাম না আমি। গড়িয়ে পড়া চোখের জল নিয়েই আমি স্থির দৃষ্টিতে পরশ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম,,
“আপনাদের বাড়িতে থাকছি, খাচ্ছি, পড়ছি বলে আপনার একটু ও বিবেকে বাঁধছে না না? আমাকে এতোটা ইনসাল্ট করতে? আমাকে স্বার্থপর বলতে?”
“না আমার বিবেকে বাঁধছে না তোমাকে ইনসাল্ট করতে৷ কারনটা তুমি নিজেই! তুমিই আমাকে বাধ্য করছ তোমাকে ইনসাল্ট করতে! কেনো আগ বাড়িয়ে এলে আমার রুমে? কেনো আমার মুখোমুখি হলে? অযথা কেনো আমার রাগের কারন জানতে চাইলে? বুঝতে পারো না না? আমি তোমাকে আপাতত সহ্য করতে পারছি না?”
পালাক্রমে আমি পরশ ভাইয়ার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বললাম,,
“তবে কি এবার থেকে আপনার মুখোমুখি হওয়া যাবে না? আপনার রুম প্রবেশ করা যাবে না? প্রতিবারই কি আমাকে এভাবে ইনসাল্টেড হতে হবে?”
পরশ ভাই আঙ্গুল উঁচিয়ে তিরিক্ষি পূর্ণ মেজাজে বললেন,,
“হুম হতে হবে। প্রতিবারই তোমাকে এভাবে ইনসাল্টেড হতে হবে। আমার মুখোমুখি হলেই তোমাকে তোঁপের মুখে পড়তে হবে!”
এক মুহূর্ত ও দাঁড়ালাম না আমি। ফুঁফিয়ে কেঁদে পরশ ভাইয়ার সম্মুখ থেকে প্রস্থান নিতেই পরশ ভাই পেছন থেকে উচ্চ শব্দে চেঁচিয়ে বললেন,,
“হেই ইউ, স্টপ। পারমিশান ছাড়া আমার রুম থেকে বের হওয়ার দুঃসাহস দেখাচ্ছ তুমি?”
থমকালাম আমি। মানুষটাকে বুঝতে ভীষন দ্বিদা দ্বন্ধে ভুগতে হচ্ছে। এই মাএ তো উনি নিজেই বললেন আমাকে রুম থেকে বের হতে। সহ্য হচ্ছে না আমাকে একদম। এখন যখন আমি নিজ থেকেই উনার সম্মুখ থেকে প্রস্থান নিচ্ছিলাম তখনই উনার থেকে পারমিশান নেওয়ার প্রশ্নটা এলো? এ কোন অকূলপাথারে ফেঁসে গেলাম আমি? দারুন ভোগান্তিতে ফেঁসে গেলাম তো!
চোখের কোণে শুকিয়ে আসা জল নিয়ে আমি পিছু ফিরে কান্নাজড়িত কন্ঠে বললাম,,
“আমি আর ইনসাল্টেড হতে চাই না পরশ ভাই। রুমে ইন করতে ও যেমন আপনার পারমিশান নেই নি, তেমনি আউট হতে ও আপনার পারমিশান নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করছি না।”
রাগে গজগজ করে পরশ ভাই ঠিক আমার মুখোমুখি এসে দাঁড়ালেন। রক্তিম বর্ণ ধারন করা মুখের আদলটা একটু একটু করে তার নিজস্বতা ফিরে পাচ্ছে। ঘামে লেপ্টে থাকা কপালের অগ্রভাগের চুল গুলো পেছনের দিকে ঠেলে পরশ ভাই আমার চোখে শান্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললেন,,
“হিমেশকে তুমি সত্যিই ভালোবাসতে?”
আমি আনমনা কন্ঠে বললাম,,
“পরিবার থেকে সম্বন্ধ ঠিক করা হয়েছিলো। বলতে পারেন এরেন্জ্ঞ ম্যারেজ। ভালোবাসা জন্ম নেয় নি কখনো উনার প্রতি। কারন, উনাকে কখনো কাছ থেকে দেখি নি আমি। বিয়ের দিনই প্রথম বারের মতো উনাকে দেখেছিলাম। তাও আবার হিংস্র রূপে। বিয়ে ভেঙ্গে বিয়ের আসর ছেড়ে পালিয়ে যেতে!”
“একটা মানুষকে ভালো না বেসেই তাকে খুঁজতে আমার সন্ধানে আমার বাড়ি অবধি পৌঁছে গেলে? হিমেশ আমার নামে মাএ বন্ধু ছিলো বলে তাকে খুঁজে আনার এতো বড় গুরু দায়িত্বটা আমার কাঁধে শোঁপে দিলে?”
“ভালোবাসার টানে আমি ঐ মানুষটাকে খুঁজতে আসি নি। শুধু কারন জানতে এসেছি! কেনো মানুষটা ঐ দিন বিয়েটা ভেঙ্গে বিয়ের আসর ছেড়ে পালিয়েছিলেন? গোটা সমাজের কাছে কেনো আমার পরিবারকে ছোট করেছিলেন, হেনস্তা করেছিলেন? কি ক্ষতি করেছিলাম আমি উনার? বিয়ে ভাঙ্গার পর একটা মেয়ের অবস্থান সমাজে ঠিক কতোটা সূচনীয় আর বর্বর হয় লোকটা কখনো ভেবে দেখেছিলেন?”
“হিমেশের পরিবার ঐ দিন কিছু বলে নি? হিমেশকে আটকানোর চেষ্টা করে নি?”
“হিমেশ শুধু একটা কথাই বলেছিলেন, বিয়েটা উনি করতে পারবেন না! পরিবারের কোনো বারণ শুনেন নি উনি। সব বাঁধা উপেক্ষা করে উনি বিয়ের আসর ছেড়ে পালিয়েছিলেন। এরপর থেকে উনার আর কোনো খোঁজ খবর পাওয়া যায় নি। উনার পরিবার ও জানেন না, উনি আসলে কোথায় আছেন!”
“আর তুমি ও বিশ্বাস করে নিলে? হিমেশের পরিবার হিমেশের ব্যাপারে কিছুই জানেন না? সন্তানকে এক নজর দেখতে না পেলে মা-বাবা যে ঠিক কতোটা অস্থির উতলা হয়ে উঠে তা আমার মা-বাবাকে দেখে শেখা। সেই জায়গায় তো হিমেশ দীর্ঘ এক মাস পরিবার থেকে দূরে আছে। তুমি কি ভাবছ? হিমেশের পরিবার হিমেশের খোঁজ, খবর, ঠিকানা কিছুই জানেন না?”
“কিছু জানি না আমি। কিছু না। মাথায় কিছু কাজ করছে না আমার। আপাতত আমি নিজেই নিজের সিদ্ধান্তের উপর বিরক্ত। তবে আমি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। হিমেশকে আমি খুঁজে বের করে অন্তত একবার হলে ও তার সম্মুখীন হবো। কড়ায় গন্ডায় হিসেব নিয়ে এরপর নিজের মনোস্থির করব। অতীতটা ভুলে বর্তমান নিয়ে ভাবব।”
নতজানু হয়ে চোখের জল ছাড়ছিলাম আমি। পরশ ভাই দাঁতে দাঁত চেঁপে বললেন,,
“এই মেয়ে কান্না থামাও। কান্না থামাও বলছি।”
তবু ও কাঁদছিলাম আমি। কান্না যেনো কিছুতেই থামছে না আমার। উল্টে কান্নার বেগ ক্রমান্বয়ে বাড়ছিলো। পরশ ভাই ক্রোধ নিবারন না করতে পেরে পাশে থাকা টুলটায় জোরে এক লাথ মেরে বললেন,,
“কান্না থামাতে বলেছি তোমাকে। কথা কানে যাচ্ছে না তোমার?”
হেচকি তুলে কেঁদে আমি কম্পিত চোখে পরশ ভাইয়ার দিকে তাকাতেই পরশ ভাই রাগান্বিত কন্ঠে বললেন,,
“হিমেশকে আমি খুব দ্রুত খোঁজে বের করে আনব বলেছি তো? তবু ও কেনো ফ্যাস ফ্যাস করে কাঁদছ? মেয়েদের ফ্যাস ফ্যাসানী কান্না আমার একদম সহ্য হয় না।”
কান্না থামিয়ে আমি অনবরত হেচকি তুলছিলাম। পরশ ভাই আমার সম্মুখ থেকে প্রস্থান নিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়ালেন। আয়নায় নিজের রাগান্বিত প্রতিবিম্বের দিকে তাকিয়ে আমায় উদ্দেশ্য করে বললেন,,
“টেবিলের উপর থেকে পানির বোতলটা দাও।”
কাঁপা কাঁপা হাতে আমি টেবিলের উপর থেকে বোতলটা নিয়ে পরশ ভাইয়ার হাতে তুলে দিলাম। বোতলের ছিপিটা খুলে পরশ ভাই গড়গড় করে হাফ বটেল ঠান্ডা পানি মাথায় ঢেলে দিলেন। ভেজাক্ত মুখ মন্ডলে পরশ ভাই অর্ধ ভেজা চুল গুলো আলতো হাতে সেট করে পুনরায় নিজের প্রতিবিম্বের দিকে তাকালেন। মাথা ঠান্ডা করার জন্যই হয়তো এই টেকনিকটা কাজে লাগালেন উনি! আমি নির্বাক দৃষ্টিতে ফ্লোরে তাকিয়ে আছি। ফ্লোরটা পানিতে ভিজে চুপচুপ। এতো বড় ওয়াশরুম থাকতে মানুষটা কেনো রুমের মধ্যেই মাথায় পানি ঢালতে গেলেন তাই আমার বোধগম্য হচ্ছে না! ফ্লোর থেকে দৃষ্টি উঠিয়ে আমি পরশ ভাইয়ার দিকে দৃষ্টি বুলাতেই বুঝতে পারলাম উনি স্মোকিং করার ধান্দায় আছেন। খুব ব্যতিব্যস্ত ভঙ্গিতে উনি দু ঠোঁটের মাঝখানে সিগারেট গুজে প্যান্টের পকেট থেকে লাইটার বের করে সিগারেটটা জ্বালাতেই আমি নাক ছিটকে আয়নায় পরশ ভাইয়ের রাগ মিশ্রিত প্রতিবিম্বের দিকে তাকিয়ে বললাম,,
“রুমে স্মোকিং করবেন আপনি?”
সিগারেটে ফুঁক দিয়ে পরশ ভাই ঘাড়ের রগ গুলো টান টান করে অস্পষ্ট কন্ঠে আমায় বললেন,,
“আমার বাড়ি, আমার রুম, আমার মর্জি, আমার লাইটার, আমার সিগারেট। যা ইচ্ছা আমি তাই করব। তুমি কে? আমাকে প্রশ্ন করার?”
মাথা নিচু করে আমি অপরাধী কন্ঠে বললাম,,
“স্যরি।”
পরশ ভাই প্রসঙ্গ পাল্টে বললেন,,
“শাড়িটা পাল্টে নাও!”
আমি বিস্ময়বোধক কন্ঠে বললাম,,
“শাড়ি পাল্টাবো মানে?”
“আই মিন সালোয়ার স্যুট পড়ো!”
“কিন্তু কেনো?”
“পারো? শাড়ি সামলাতে? বার কিন্তু আমি তোমাকে সেইফ করতে আসতে পারব না!”
হেয় হেসে আমি জিগ্যাসু কন্ঠে বললাম,,
“আগের বার ও কি আমায় সেইফ করেছিলেন?”
“করতে চেয়েছিলাম। তুমিই আমাকে ইনসাল্ট করেছিলে!”
“আমি তো ইচ্ছে করে ইনসাল্ট করতে চাই নি!”
“এতোকিছু জাজ করার সময় নেই আমার।”
“একটু সময় বের করে হিমেশকে খুঁজে দিতে পারবেন? হিমেশ তো আপনার বন্ধু। আপনি কি সত্যিই জানেন না? হিমেশ কোথায় আছে?”
মুহূর্তের মধ্যেই পরশ ভাই তীব্র রেগে আমার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বললেন,,
“হিমেশ শুধুমাএ আমার অফিস কলিগ ছিলো। গলায় গলায় বন্ধুত্ব ছিলো না আমাদের, যে হিমেশের সমস্ত খবরা খবর আমি জানব, রাখব। তবু ও আমি ট্রাই করছি। এক মাস সময় চেয়েছি মাএ। সেই সময়টুকু ও সহ্য হচ্ছে না তোমার?”
মাথা নিচু করে আমি ক্ষীণ কন্ঠে বললাম,,
“আমি আসছি। এনগেজমেন্টের প্রোগ্রাম শুরু হয়ে গেছে হয়তো।”
পরক্ষনে মাথা তুলে আমি পরশ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম,,
“আপনি যাবেন না?”
সিগারেটে লাস্ট ফুঁক দিয়ে পরশ ভাই সিগারেটটা পা দিয়ে মারিয়ে মুখ থেকে ধোঁয়া নির্গত করে বললেন,,
“নো। প্লিজ ইউ হেভ টু গো নাও।”
আমি চরম আশ্চর্যিত কন্ঠে বললাম,,
“আপনার বোনের এনগেজমেন্ট আর আপনি যাবেন না?”
রগচটা কন্ঠে আহনাফ আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বললেন,,
“নো। লিভ মি এলোন প্লিজ।”
হম্বিতম্বি হয়ে আমি রুম থেকে প্রস্থান নিলাম। রুম থেকে বের হতেই পায়েলের মুখোমুখি হলাম। আমাকে দেখা মাএই পায়েল উত্তেজিত কন্ঠে বলল,,
“কোথায় ছিলে তুমি আপু? জানো? কতক্ষন যাবত তোমাকে খুঁজছিলাম?”
“কেনো পায়েল? কি হয়েছে?”
“আরে পিয়ালীর আপুর এনগেজমেন্ট তো শুরু হয়ে যাচ্ছে। বর পক্ষরা ও চলে এসেছে!”
“পরশ ভাই যাবেন না?”
পায়েল তব্ধ শ্বাস নির্গত করে বলল,,
“না। ভাইয়া এসব জমজমক অনুষ্ঠানে যেতে পছন্দ করেন না।”
“তাই বলে নিজের বোনের এনগেজমেন্টে যাবেন না?”
“না। ভাইয়া একটু এমনই। গম্ভীর, মুডি, রসকস হীন!”
প্রসঙ্গ পাল্টে আমি পায়েলকে বললাম,,
“শাড়িটা পাল্টাতে হবে আমার!”
“কিন্তু কেনো আপু? শাড়িটা তোমার পছন্দ হয় নি?”
“আসলে আমি শাড়ি সামলাতে পারি না তো, তাই!”
“কোনো ব্যাপার না। আমি আছি তো! ঠিক তোমাকে এবং তোমার শাড়িকে সামলে নিবো!”
পায়েল জোর করে আমায় নিয়ে নিচে নেমে এলো। ড্রইং রুমে গেস্টদের লাইন পড়ে গেছে। এদের মধ্যে পুরুষ গেস্ট ই বেশি। সোফায় পিয়ালী আপু এবং উনার উডবি হাজবেন্ড বসে আছেন। দুজনের পাশেই দুই পরিবারের সদস্যরা বসে আছেন। পায়েল আমায় ছেড়ে সোফায় আন্টির পাশ ঘেঁষে বসলেন। ইতোমধ্যেই কেউ একজন আমার পাশে দাঁড়াতেই আমি চোখ ঘুড়িয়ে সেই ব্যক্তিটির দিকে তাকালাম। ঠোঁটে মুচকি হাসি ঝুলিয়ে ব্ল্যাক শার্ট পরিহিত একজন মধ্য বয়সী যুবক আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছেন। ভ্রু যুগল ঈষৎ কুঁচকে আমি জিগ্যাসু দৃষ্টিতে যুবকটির দিকে তাকিয়ে বললাম,,
“হোয়াট? গাঁ ঘেঁষে এভাবে দাঁড়ালেন কেনো?”
“কোথায় গাঁ ঘেঁষে দাঁড়ালাম? সামান্য পাশ ঘেঁষেই তো দাঁড়ালাম!”
“সেই তো! দাঁড়ালেন কেনো?”
যুবকটি খানিক লজ্জাবোধ নিয়ে মৃদ্যু হেসে বলল,,
“ইউ আর লুকিং সো প্রিটি!”
“তো?”
আগ পাছ না ভেবেই যুবকটি সরাসরি প্রস্তাব রেখে বলল,,
“আমরা বন্ধু হতে পারি?”
কপালে কয়েক ভাঁজ বিরক্তির ছাপ ফুটিয়ে আমি বললাম,,
“কিছু কিছু ছেলে মানুষ আছে, খুব চিপকু টাইপের। আপনি কি তাদের কাতারে পড়ছেন?”
ইতোমধ্যেই মনে হলো পরশ ভাইয়ার গলার স্বর আমার কর্নকুহরে তীক্ষ্ণ ভাবে প্রতিধ্বনিত হলো। পিছু ফিরে তাকাতেই দেখলাম পরশ ভাই উন্মুক্ত শরীরে ঠিক আমার পেছনটায় দাঁড়িয়ে দাঁতে দাঁত চেঁপে আমায় উদ্দেশ্য করে বলছেন,,
“টয়া রুমে এসো। কথা আছে!”
আশেপাশে দাঁড়িয়ে থাকা সুন্দুরী মেয়েরা ড্যাব ড্যাব করে পরশ ভাইয়ার উন্মুক্ত ফর্সা শরীরে তাকিয়ে আছে। আমার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটা মুদ্যু হেসে পরশ ভাইয়ার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বললেন,,
“হেই পরশ ভাই। হোয়াট’স আপ?”
পরশ ভাই জোর পূর্বক হাসি টেনে বললেন,,
“ফাইন। তবে তোমার বিহেভিয়ার দেখে বোধ হয় ভালো থাকাটা হলো না আমার!”
“মানে? ঠিক বুঝলাম না ভাইয়া?”
পরশ ভাই দাঁতে দাঁত চেঁপে বললেন,,
“হ্যাংলাদের মতো মেয়েদের পাশে দাঁড়িয়ে না থেকে তোমার ভাইয়ার পাশে গিয়ে বসো। ডু ইউ আন্ডারস্ট্যান্ড হোয়াট আই মিন?”
আমি এবং যুবকটি অকস্মাৎ ভড়কে উঠে তাজ্জব চোখে পরশ ভাইয়ার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম। মানুষটা কি চুপিচুপি আঁড়ি পাতছিলেন? গোপনে আমাদের কথা শুনছিলেন? এর মধ্যেই হঠাৎ সোফা থেকে আন্টি পরশ ভাইকে উদ্দেশ্য করে চেঁচিয়ে বলে উঠলেন,,
“পরশ এদিকে আয়৷ বোনের এনগেজমেন্টে থাকবি না তুই?”
পরশ ভাই সংকুচিত কন্ঠে বললেন,,
“স্যরি মা। টয়াকে নিয়ে আমার একটু বের হতে হবে!”
চলবে…?
#তোমায়_পাবো_বলে
#পর্ব_৩
#নিশাত_জাহান_নিশি
“স্যরি মা। টয়াকে নিয়ে আমার একটু বের হতে হবে!”
আন্টি আর কথা বাড়ালেন না৷ বিষয়টাকে সহজ, স্বাভাবিক ভাবেই মেনে নিলেন। মনে হলো যেনো পরশ ভাইয়ার এইরূপ অস্বাভাবিক আচরনের সাথে আন্টি পূর্ব থেকেই পরিচিত! হাসিমুখে আন্টি অনুষ্ঠানে মনোনিবেশ করলেন। বর পক্ষের সাথে জরুরী কথা-বার্তায় লিপ্ত হয়ে পড়লেন। বাড়ি ভর্তি সমস্ত অতিথিদের আকর্ষণ এখন পিয়ালী আপু এবং উনার উডবি হাজবেন্ডের দিকে! এই মুহূর্তেই হয়তো আংটি বদল হবে৷ সবাই যেনো এই শুভ মুহূর্তটার অপেক্ষাতেই অধীর আগ্রহ নিয়ে আছেন। এর মধ্যেই পাশে দাঁড়িয়ে থাকা যুবকটি মাথা নিচু করে আমাদের সম্মুখ থেকে প্রস্থান নিলেন। দ্রুত গতিতে হেঁটে যুবকটি পিয়ালী আপুর উডবি হাজবেন্ডের পাশ ঘেঁষে বসলেন। বুঝতে আর দেরি হলো না, যুবকটি পিয়ালী আপুর দেবর জাতীয় কিছু হবেন! যুবকটির আড়চোখে তাকানোর ভাবভঙ্গিমা দেখে আমার গাঁ জ্বালা করছে। পুরুষ মানুষের এই বেহায়া রূপটা আমার মোটে ও পছন্দ না!
যুবকটির থেকে দৃষ্টি ঘুড়িয়ে আমি উৎসুক দৃষ্টিতে পরশ ভাইয়ার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম। অতঃপর পরশ ভাইয়ার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বললাম,,
“কোথায় যাবো আমরা?”
প্যান্টের পকেটে দুহাত গুজে পরশ ভাই আমায় পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে বললেন,,
“এখানেই বলব?”
“কেনো? কোনো সমস্যা?”
“রুমে ডেকেছি শুনো নি?”
“শুনেছি৷ তবে প্রোগ্রাম ছেড়ে এখনই যেতে হবে?”
“তোমার ভাব-ভঙ্গি দেখে তো মনে হচ্ছে এনগেজমেন্ট পিয়ালীর না তোমার হচ্ছে! বেশ ইন্টারেস্টেড দেখছি, তুমি এই এনগেজমেন্ট নিয়ে। সো টেল মি? এর পেছনে কি বিশেষ রিজন আছে?”
“আশ্চর্য! পিয়ালী আপুর এনগেজমেন্টে আমার কেনো ইন্টারেস্ট থাকবে? আর ইন্টারেস্ট যদি থাকে ও এর পিছনে রিজন কি থাকতে পারে? বাড়িতে কোনো প্রোগ্রাম থ্রো করলে স্বাভাবিকভাবেই বাড়ির সব সদস্যরা সেই প্রোগ্রামে এটেন্ড থাকবেই। এর পেছনে বিশেষ রিজন কি থাকতে পারে?”
“এই যে, আশে পাশে সুদর্শন ছেলেরা। ঘুড়ঘুড় করছে তো! একজন তো প্রথম দেখাতেই ফ্রেন্ডশিপ করে নিলো! এই রিজনটাই বেশি চোখে পড়ছে আমার!”
পরশ ভাইয়ার আপত্তিকর কথার বিপরীতে আমার রাগ হওয়াটা নিতান্তই স্বাভাবিক ছিলো। স্বাভাবিক ভাবেই আমি রাগান্বিত দৃষ্টিতে পরশ ভাইয়ার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম। পরশ ভাইয়া ভ্রু যুগল কিঞ্চিৎ উঁচিয়ে তিরিক্ষিপূর্ণ কন্ঠে বললেন,,
“ফর দ্যা গড সেইক, আমার সাথে রাগ দেখাতে এসো না। দয়া করে আমার রুমে এসো। তোমার জন্য একটা গুড নিউজ ওয়েট করছে।”
উদ্বেলিত কন্ঠে আমি উনাকে প্রশ্ন ছুড়ে বললাম,,
“হিমেশের খোঁজ পেয়েছেন?”
পরশ ভাই নিরুত্তর, নিস্তব্ধ থেকে পিছু ঘুড়ে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালেন। অপার সম্ভাবনা নিয়ে আমি ও পরশ ভাইয়াকে অনুসরন করলাম। পিছু পিছু উনার রুমে প্রবেশ করতেই উনি গাঁয়ে একটা হোয়াইট শার্ট জড়িয়ে ব্যতিব্যস্ত ভঙ্গিতে আমার দিকে ঘুড়ে তাকিয়ে বললেন,,
“চট্টগ্রাম যেতে হবে আমাদের। এক্ষনি, এই মুহূর্তে!”
উদগ্রীব হয়ে আমি পরশ ভাইয়ার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বললাম,,
“বলুন না? চট্টগ্রাম কি হিমেশের সন্ধান পাওয়া গেছে?”
শার্টের বাটন গুলো এক এক করে লাগিয়ে পরশ ভাই আমার দিকে শান্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললেন,,
“হয়তো পেয়েছি। বাকিটা চট্টগ্রাম গেলে বুঝা যাবে!”
ক্ষনিকের মধ্যে পরশ ভাই আমার হাত ধরে রুম থেকে প্রস্থান নিয়ে ড্রইং রুম ভর্তি গেস্টদের উপেক্ষা করে বাড়ির বাইরে চলে এলেন। পার্ক করে রাখা গাড়িটার সামনে দাঁড়িয়ে পরশ ভাই হঠাৎ থেমে গেলেন। কিছু একটা ভেবে পরশ ভাই আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,,
“ট্রেন জার্নি করতে পারবে?”
“গাড়ি থাকতে ট্রেন কেনো?”
“কারণ, গাড়িতে পেট্রোল নেই। তাছাড়া কাল পায়েলের কলেজ আছে, পিয়ালীর ও ভার্সিটি আছে। আমরা এই মুহূর্তে চট্টগ্রাম রওনা দিলে ফিরতে ফিরতে আই থিংক কাল দুপুর তো হবেই। হিমেশকে খুঁজতে অনেকটা টাইম লেগে যাবে। গাড়ির পার্কিং নিয়ে ও অনেক প্যারা আছে। তাছাড়া গাড়ির সেইফটির ও একটা ব্যাপার আছে।”
“ওকে। আপনার যা ঠিক মনে হবে!”
বাড়ির মেইন গেইট ক্রস করে পরশ ভাই আমায় নিয়ে মেইন রাস্তায় দাঁড়ালেন। রিকশা খুঁজতে উনি ব্যস্ত। প্রশ্নবিদ্ধ কন্ঠে আমি পরশ ভাইকে বললাম,,
“আন্টিকে কিছু না বলেই চলে এলেন যে?”
“দেখছিলে না? মা ব্যস্ত? তাই ডিস্টার্ব করতে চাই নি। কিছুক্ষন পর কল করে জানিয়ে দিবো।”
এর মধ্যেই একটা খালি রিকশা এসে আমাদের সামনে থামল। রিকশা ওয়ালাকে ইশারা করার পূর্বেই রিকশা ওয়ালা আমাদের ইশারা বুঝে নিলেন? রিকশা ওয়ালাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে পরশ ভাই ব্যতিব্যস্ত কন্ঠে বললেন,,
“কমলাপুর রেলস্টেশান যাবেন?”
রিকশা ওয়ালা দাঁতের পাঁটি বের করে বললেন,,
“যামু না মানে? যাওয়ার লেইগ্গাই তো রিকশাটা থামাইলাম।”
পরশ ভাই আর বিলম্ব করলেন না। রিকশায় উঠে বসলেন। সংকোচ বোধ নিয়ে আমি পরশ ভাইয়ার পাশ ঘেঁষে বসতেই পরশ ভাইয়া হঠাৎ রিকশা থেকে নেমে পড়লেন। অতি আশ্চর্যিত চোখে আমি পরশ ভাইয়ার দিকে তাকাতেই পরশ ভাইয়া উত্তেজিত কন্ঠে বললেন,,
“নো নো নো। এই এক রিকশায় দুজন একসাথে যাওয়া যাবে না। আমি পরের রিকশায় আসছি।”
ভ্রু যুগল কিঞ্চিৎ সংকুচিত করে আমি পরশ ভাইয়ার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বললাম,,
“মানে কি? এই রিকশায় আমি একা যাবো নাকি?”
“ভয়ের কিছু নেই। আমি পরের রিকশায় আসছি!”
উদ্বিগ্ন কন্ঠে আমি মাথা নিচু করে বললাম,,
“এই অপরিচিত শহরে, রাতের আঁধারে আপনি আমাকে একা ছেড়ে দিবেন?”
পরশ ভাই অধৈর্য্য কন্ঠে বললেন,,
“একা কোথায়? আমি তো পেছনের রিকশাটায় আছিই!”
“তবু ও। আমার ভয় করছে!”
কিছু সময় মৌন থেকে পরশ ভাই তিরিক্ষি পূর্ণ কন্ঠে বললেন,,
“ওকে ফাইন। ভুলবশত যদি কোনো ভাবে তোমার শরীরের কোনো অঙ্গে আমার টাচ লেগে যায় তখন কিন্তু আমাকে দোষারোপ করতে পারবে না ওয়ার্ন করলাম!”
আমি মাথা উঁচিয়ে আধো কন্ঠে বললাম,,
“ঠিক আছে!”
পরশ ভাই পুনরায় আমার পাশ ঘেঁষে বসলেন। দুজন দুজনের গাঁয়ের সাথে লেগে আছি। আমার বাঁ হাতের বাহু পরশ ভাইয়ার বাঁ হাতের বাহুতে বিনা বাঁধায় ছুঁয়ে আছে। যদি ও পরশ ভাই খুব উশখুশ করছেন। ডান সাইডে যতোটা সম্ভব চিপকে বসে আছেন। আমার গাঁয়ের সাথে ঘেঁষবেন না বলে হয়তো পণ করে রেখেছেন! কেমন উজবুক ভঙ্গিতে একটুখানি জায়গা দখল করে বসে আছেন উনি। মুখের আদলে বিরক্তির ছাপ স্পষ্টত উনার। যেকোনো মুহূর্তে অগ্নিশর্মা হয়ে রিকশা থেকে নেমে পড়ার ও সম্ভাবনা আছে! আচমকাই খেয়াল করলাম রিকশার হুট উঠানো। তাই হয়তো আমাদের বসতে একটুখানি সমস্যা হচ্ছে। হুট টা নামিয়ে দিলে বসতে অনেকটাই সুবিধে হবে। জায়গাটা একটুখানি প্রশ্বস্ত হবে। পাশ ফিরে আমি পরশ ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করে কিছু বলার পূর্বেই পরশ ভাইয়া আমার মুখের কথা টেনে নিয়ে বললেন,,
“আই থিংক, রিকশার হুড টা খুলে দিলে ভালো হবে।”
“আশ্চর্য! আপনি বুঝলেন কিভাবে? আমি ও ঠিক সেইম কথাটাই বলতে চাইছিলাম?”
“মাঝে মাঝে মনের ভাব মিলতেই পারে। এতে আশ্চর্য হওয়ার কি আছে?”
পরশ ভাই রিকশার হুড টা খুলে দিলেন। স্বস্তির শ্বাস ছেড়ে উনি নিশ্চিন্তে নড়েচড়ে বসলেন। মুখের বিরক্তির ভাবটা এখন লুপ্তপ্রায়। দেখে ভীষন চনমনে লাগছে। রাস্তায় দৃষ্টি ঘুড়িয়ে নিলাম আমি। কমলাপুর রেল স্টেশান পৌঁছার অপেক্ষায় আছি! ওখান থেকেই আমাদের চট্টগ্রাম যাএা শুরু হবে। হিমেশের মুখোমুখি হওয়ার দীর্ঘ একটা পথ ওখান থেকেই শুরু হবে! অজানা সব প্রশ্নের উত্তর পাবো আমি আজ। যার জন্য দীর্ঘ ১ টা মাস ওয়েট করছিলাম।
_______________________________________
ঘড়িতে রাত ১০ টা বেজে ৩০ মিনিট। চট্টগ্রাম শহরের চকবাজার এলাকায় স্থানীয় একটা আবাসিক হোটেলের রিসেপশানে দাঁড়িয়ে আছি আমি এবং পরশ ভাই। পরশ ভাইয়ার এইমাএ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী হিমেশ এই আবাসিক হোটেলেই কোনো একটা রুমে নিজের বাসস্থান গেড়ে নিয়েছেন। বিগত এক মাস যাবত উনি এই হোটেলেই গাঁ ঢাকা দিয়ে আছেন। রিসিপশনিস্টকে অনেক কনভেন্স করে পরশ ভাই অবশেষে সফল হয়েছিলেন হিমেশের রুম নাম্বার কালেক্ট করতে। দু তলার ২০৫ নম্বর রুমটার দিকে আমি এবং পরশ ভাই দ্রুত পায়ে হেঁটে অগ্রসর হচ্ছি। কাঙ্ক্ষিত রুমটা খুঁজে পেতেই পরশ ভাই স্বস্তির শ্বাস ছেড়ে রুমের দরজাটার সামনে দাঁড়ালেন। অতঃপর আমার দিকে স্থির দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললেন,,
“কোনো কথা বলবে না তুমি। জাস্ট দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখবে আমি কি করছি৷ ওকে?”
আমি হ্যাঁ সূচক সম্মতি জানিয়ে পরশ ভাইয়ার ঠিক পিছনের দিকটায় দাঁড়ালাম। আশেপাশে গুটি কয়েক লোকজন রুম থেকে বের হচ্ছেন তো কয়েকজন ব্যস্ত ভঙ্গিতে রুমে প্রবেশ করছেন৷ কোলাহল চোখে পড়ার মতো না। গলা খাঁকারি দিয়ে পরশ ভাই রুমের দরজায় টোকা মারতেই ভেতর থেকে পুরুষারী কন্ঠে হয়তো হিমেশ বলে উঠলেন,,
“কে?”
পরশ ভাই জোরপূর্বক হাসি টেনে বললেন,,
“আমি পরশ। দরজাটা খোল হিমেশ!”
সঙ্গে সঙ্গেই রুমের দরজাটা খুলে হিমেশ হাসোজ্জল মুখে পরশ ভাইয়ার মুখোমুখি দাঁড়ালেন। অশ্রুসিক্ত চোখে আমি পরশ ভাইয়ার পিছন থেকে হিমেশের দিকে উঁকি দিতেই হিমেশ চোখে, মুখে আতঙ্ক নিয়ে রুমের দরজাটা বন্ধ করে দেওয়ার পূর্বেই পরশ ভাইয়া দরজা ঠেলে হিমেশকে নিয়ে রুমের ভেতর প্রবেশ পড়লেন। আমি ও তাড়াহুড়ো করে রুমে প্রবেশ করে প্রথমে রুমের দরজাটা ভেতর থেকে আটকে দিলাম। হিমেশের শার্টের কলার ধরে পরশ ভাইয়া জোরে এক ধাক্কা মেরে হিমেশকে বিছানার উপর ছুড়ে মারলেন৷ হিমেশ চোয়াল শক্ত করে বিছানা ছেড়ে উঠে পরশ ভাইয়ার শার্টের কলার চেঁপে ধরে বললেন,,
“কাজটা তুই ঠিক করিস নি পরশ। বন্ধুত্বের সম্পর্কটা আজ এই মুহূর্তে আমাদের নষ্ট হয়ে গেলো!”
পরশ ভাই নাক, মুখ শক্ত করে কঠোর ভঙ্গিতে হিমশকে বললেন,,
“বন্ধুত্বের সম্পর্কটা আমাদের ঐদিনই নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো হিমেশ। যেদিন তুই বিয়ে ভেঙ্গে টয়ার সাথে সাথে তার গোটা পরিবারের সাথে অন্যায় করেছিলি। টয়াকে কষ্ট দিয়েছিলি। আমি তোকে বলেছিলাম অতীতের সব ভুলে যেতে। ভালোবেসে টয়াকে আপন করে নিতে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে তুই তাই করলি, যা তুই আগে থেকেই ভেবে রেখেছিলি!”
“খুব কষ্ট হচ্ছে টয়ার জন্য না? খুব কষ্ট হচ্ছে? অথচ আমার কষ্টটা তোর চোখে পড়ল না? কি অন্যায় করেছিলাম আমি? যার জন্য টয়ার বড় বোন আমার সাথে চিট করেছিলো? কোথায় ছিলো ঐদিন তোর নীতিকথা? হাজার চেষ্টা করে ও কি ফেরাতে পেরেছিলি ফারিনকে?”
চলবে….?