তোমায়_পাবো_বলে,পর্ব_১১
নিশাত_জাহান_নিশি
“ইসসস! আগে তো লুঙ্গিটা সামলান! এরপর না হয় আমায় শাসাবেন!”
সশব্দে হেসে আমি দরজার চৌকাঠে পদার্পন করতেই পেছন থেকে লৌহকন্ঠে পরশ ভাই আওয়াজ তুলে বললেন,,
“ইউ ইডিয়ট গার্ল। আমার সাথে ইয়ার্কি করা হচ্ছে তাই না? সুন্দর, সাবলীল ভাবে আমার খিল্লি উড়ানো হচ্ছে?”
ঘাঁড়টা পেছন দিকে কিঞ্চিৎ বাঁকিয়ে আমি রঙ্গরসিকতা পূর্ণ হাসি হেসে প্রত্যত্তুরে বললাম,,
“ইয়ার্কি করলাম কোথায়? সত্যিই তো আপনার লুঙ্গির গিট্টুটা ঢিলে হয়ে আসছে। এবার বুঝি সত্যিই আপনার মান-সম্মান নিলামে উঠল বলে!”
প্রসঙ্গ পাল্টাতে যেনো পরশ ভাই মরিয়া হয়ে উঠলেন। লজ্জা ঠেঁকানোর এ যেনো এক অদম্য চেষ্টা। তৎপর কন্ঠে পরশ ভাই ইতস্তত ভঙ্গিতে বললেন,,
“প্যাপ্যাপ্যান্টটা দিদিদিয়ে যাও বলছি!”
“দিচ্ছি দিচ্ছি৷ এতো উতলা, অস্থির হচ্ছেন কেনো? আপনার হাব ভাব দেখে তো মনে হচ্ছে, প্যান্টটা খাওয়ার জিনিস! গিলে খেয়ে ফেলব আমি! লোভে বুঝি আমার জিভ লকলক করছে।”
“তোমার ফালতু কথা শোনার ধৈর্য্য বা সময় কোনোটাই আপাতত আমার নেই। হারি আপ এন্ড গেট মাই প্যান্ট অন কুইকলি।”
আমি বিষিয়ে উঠা কন্ঠে বললাম,,
“এনে দিচ্ছি। একটু সবুর করুন!”
ভেংচি কেটে ক্রমশ সিঁড়ির দিকে পা বাড়াতেই আমার বড় খালামনির একমাএ ছেলে পিয়াস ভাই হঠাৎ রগচটা ভাব নিয়ে আমার সম্মুখস্থ হয়ে দাঁড়ালেন। আচম্বিত হয়ে আমি কৌতুহলী দৃষ্টিতে পিয়াস ভাইয়ার রাগী দৃষ্টিতে দৃষ্টি নিবদ্ধ করতেই আলতো এক চড় পড়ল আমার গালে। যদি ও চড়ের আঘাত তেমন ভয়ঙ্করভাবে আমার গালে অনুভব হয় নি। তাও ঘটনার আকস্মিকতায় আমি ফ্যাল ফ্যাল ঈষৎ গালে হাত রেখে ঈষৎ গোঙ্গিয়ে উঠলাম। অনতিবিলম্বে পিয়াস ভাই দাঁতে দাঁত চেঁপে আমার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বললেন,,
“আমার ফ্রেন্ড পরানকে আমার সম্পর্কে কি বলেছিলি তুই?”
টলমল দৃষ্টিতে আমি আশেপাশে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই ড্রইং রুমে জড় হওয়া মেহমানদের অবাক চাহনী আমার দৃষ্টিলোকন হলো। যতদূর দৃষ্টি যাচ্ছে ততদূর ই যেনো পরিবারের লোকজনদের অনুপস্থিতি আমার চোখে পড়ছে। নিজেকে বড্ড অসহায়, অসহনীয় লাগছে এই মুহূর্তে। পিয়াস ভাই সম্পর্কে তো পরান ভাইকে কিছুই বলি নি আমি। অযথা পিয়াস ভাই কেনো আমার গাঁয়ে হাত তুললেন? অযাচিতভাবে কেনো আমাকে দোষারোপ করছেন? অনুচিত কার্য করলামটা কি আমি? লজ্জায় মাথা নিচু করে আমি ফুঁফিয়ে কেঁদে উঠতেই পিয়াস ভাই ক্ষিপ্র কন্ঠে পুনরায় বললেন,,
“কি হলো? প্রশ্নের উত্তর দে? আমার সম্পর্কে পরানকে তুই কি বলেছিলি?”
হেচকি তুলে কেঁদে আমি মাথা উঁচিয়ে প্রত্যত্তুরে বললাম,,
“কিছু বলি নি আমি। অযথা আমার সাথে সিনক্রিয়েট করছ কেনো তুমি? সম্পূর্ণ বিষয়টা না জেনে না বুঝে কেনো আমাকেই দোষারোপ করছ?”
“তুই যদি সত্যিই পরানকে কিছু নাই বলে থাকিস, তবে পরান কেনো আমায় থ্রেড দিয়ে বলল আমার সাথে তোর প্রেমের সম্পর্ক ছিলো এবং আছে? কেনো বলল, আমার কারনেই তোর বিয়েটা ভেঙ্গেছে? তোর হাজবেন্ড কারনবশত বিয়ের আসর ছেড়ে পালিয়েছে?”
নির্বোধ কন্ঠে আমি গলা উঁচিয়ে বললাম,,
“আমি এই বিষয়ে কিছুই জানি না ভাইয়া, বিশ্বাস করো। পরান ভাই এমনিতেই মাঝে মধ্যে ভার্সিটিতে আমায় বেশ উত্ত্যক্ত করতেন। তাই আমি তোমার পরিচয় দিয়ে বলেছিলাম, ভার্সিটির ছাএলীগ নেতা আমার খালাতো ভাই হয়। অযথা আমায় উত্ত্যক্ত করলে আমি অন্য ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবো!”
“কার কথা বিশ্বাস করব আমি? এক্সয়েক্টলি একটু বলবি? পরানসহ ভার্সিটির অনেক ফ্রেন্ডসরা মিলে আমার দিকে আঙ্গুল তুলছে। আমার গাঁয়ে হাত তুলতে ও চেয়েছিলো! একা পারছি না আমি তাদের সামলাতে, তাদের মুখ বন্ধ করতে!”
পেছন থেকে যেনো মনে হলো খালামনির কন্ঠস্বর আমার কর্নকুহরে ভেসে এলো। ছলছল দৃষ্টিতে আমি সিঁড়ি টপকে উঠা খালামনির দিকে দৃষ্টি আবদ্ধ করতেই খালামনি দৃঢ় কন্ঠে পিয়াস ভাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন,,
“কে বলেছে তাদের মুখ বন্ধ করতে? তো বিয়ে করে নে না টয়াকে! আংশিক কিছু না রটলে তো অযথা লোকজন কিছু রটায় না তাই না?”
মাথাটা বোধ হয় ঘুড়ে এলো আমার। চেতনা শক্তি বিসর্জন দিতে খুব বেশি একটা বিলম্ব হবে না বলেই ধারনা করতে পারছি৷ নিতান্ত অবিশ্বাস্যকর কিছু মুহূর্তের স্বাক্ষী হিসেবে নিজেকে বহাল রাখতে বিবেকে অনেকটাই বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। আমার সম্মুখে দাঁড়িয়ে থাকা পিয়াস ভাই হটকারী দৃষ্টিতে খালামনির দিকে তাকাতেই খালামনি মৃদ্যু হেসে পিয়াস ভাইয়ার কাঁধে হাত রেখে বললেন,,
“রুম্পার বিয়েটা হয়ে নিক। সাইদার কাছে তোদের বিয়ের প্রস্তাব রাখব আমি!”
পিয়াস ভাই তিরিক্ষি পূর্ণ কন্ঠে খালামনিকে শুধিয়ে বললেন,
“আর ইউ মেড মা? টয়াকে বিয়ে করব আমি? প্রশ্নই আসছে না! তুমি প্লিজ এসব চিন্তা মাথা থেকে ঝেঁড়ে ফেলো!”
পিয়াস ভাই হনহনিয়ে সিঁড়ি টপকে ড্রইং রুমের দিকে পা বাড়াতেই আমার পেছন থেকে পরশ ভাইয়ার তীক্ষ্ণ কন্ঠস্বর আমার কর্নকুহরে ভেসে এলো। পিয়াস ভাইকে উদ্দেশ্য করে পরশ ভাই বেশ রূঢ় কন্ঠে বললেন,,
“এক্সকিউজ মি, মিঃ পিয়াস। অযথা একটা মেয়ের গাঁয়ে হাত তুললেন। অন্তত স্যরি তো বলে যান। সামান্য স্যরি তো মেয়েটা ডিজার্ভ করে তাই না?”
পিয়াস ভাই পিছু ঘুড়ে পরশ ভাইয়ার দিকে তাকাতেই পরশ ভাই ক্ষিপ্র দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন পিয়াস ভাইয়ার দিকে। পিয়াস ভাই ভ্রু যুগল কিঞ্চিৎ উঁচিয়ে পরশ ভাইয়ার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বললেন,,
“হু আর ইউ?”
“আমরা পরে ও পরিচিত হতে পারব মিঃ। প্লিজ আগে টয়াকে স্যরি বলুন। এই মুহূর্তে স্যরি বলাটাই ভীষন গুরুত্বপূর্ণ!”
অবাক না হয়ে পারছি না। যে লোক সারাক্ষন আমার সাথে খিটখিটে মেজাজে কথা বলেন, বকেন, ধমকান, হুটহাট শাসিয়ে উঠেন, সুইমিং পুলে নিক্ষেপ করতে ও যে বিন্দু পরিমান দ্বিধাবোধ করেন না, সে নাকি আবার অন্যজনকে হুমকি দিচ্ছেন অন্যায় করে আমায় স্যরি বলতে? ভাবা যায় এসব? এ তো দেখছি, ভূতের মুখে রাম নাম! আচ্ছা? কোনো ভাবে আমি দিবাস্বপ্নে লিপ্ত নই তো? এ কোনো মহা ঝঞ্ঝাটে ফেঁসে গেলাম আমি? যাই হোক, নিজে করলে কোনো দোষ নেই! অথচ বাকিরা করলেই মহাদোষ? এই ভুলের জন্য ক্ষমা ও চাইতে হবে? লোকটা কি আমাকে নিজের সম্পত্তি বলে দাবী করতে শুরু করেছেন? আমার ক্ষেএেই উনার যতো জোর?
ইতিমধ্যেই পিয়াস ভাই রাগান্বিত কন্ঠে পরশ ভাইকে শাসিয়ে বললেন,,
“এটা আমাদের ভাই-বোনদের পার্সোনাল ম্যাটার। আমরা ঠিক বুঝে নিবো। আপনি আমাদের মাঝখানে বাঁ হাত দেওয়ার কে?”
হুট করেই কোথা থেকে যেনো আম্মুর অপ্রত্যাশিত উপস্থিতি ঘটল ড্রইং রুমে। পাশে অবশ্য রুম্পা আপু, মিলি আপু, স্নিগ্ধা এবং নীলা ও আছে। শাড়ির আঁচলে ভেজা হাত জোড়া মুছে আম্মু বেশ সাবলীল কন্ঠেই পিয়াস ভাইয়ার উদ্দেশ্যে বললেন,,
“পরশ এই বাড়ির মেহমান পিয়াস। তুই সত্যিই ভুল করেছিস! অকারনে আমার মেয়ের গাঁয়ে হাত তুলেছিস। অবশ্যই তোকে স্যরি চাইতে হবে। আমার মেয়ের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে তোকে।”
আম্মুর মুখের কথা টেনে নিয়ে খালামনি তীক্ষ্ণ কন্ঠে আম্মুকে শুধিয়ে বললেন,,
“এসব তুই কি বলছিস সাইদা? আমার ছেলে তোর মেয়ের কাছে ক্ষমা চাইবে? সামান্য একটা ভুলের জন্য টয়ার কাছে ক্ষমা চাইতে হবে?”
পরশ ভাই লুঙ্গিতে হাত রেখে ঝড়ের গতিতে আমার পাশাপাশি দাঁড়িয়ে যথেষ্ট শান্ত কন্ঠে আন্টিকে শুধিয়ে বললেন,,
“সামান্য ভুল কোথায় আন্টি? টয়ার দিকে ভালোভাবে একটু তাকিয়ে দেখুন, গালে পাঁচ আঙ্গুলের দাগ স্পষ্টত। শারীরিক ক্ষতির পাশাপাশি বাড়ির এতো এতো মেহমানদের সামনে ও তাকে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়েছে। ক্ষমা তো আপনার ছেলেকে চাইতেই হবে!”
বাপরে বাপ কি মিথ্যেবাদী এই লোক! গালে নাকি পাঁচ আঙ্গুলের দাগ পড়ে গেছে? কই আমি তো গালে পাঁচ আঙ্গুলসম দাগের তীব্র কোনো ব্যাথা অনুভব করছি না! লোকটা কি ইচ্ছেপ্রবণ ভাবে পিয়াস ভাইকে কোনো ভাবে ফাঁসাতে চাইছেন? কি এমন ক্ষতি করেছেন আমার পিয়াস ভাই এই ভয়ঙ্কর মিথ্যবাদী লোকটার?
তন্মধ্যে আম্মু ব্যথীত দৃষ্টিতে আমার দিকে চেয়ে পরক্ষনে খালামনির দিকে নির্লিপ্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললেন,,
“পরশ তো ঠিকই বলেছে আপু। দেখো তোমার ছেলে আমার মেয়ের কি অবস্থা করেছে। এমনকি বাড়ি ভর্তি লোকজনদের সামনে ও আমার মেয়েকে ইনসাল্ট করেছে। ক্ষমা তো পিয়াসকে চাইতেই হবে!”
খালামনি ক্ষুব্ধ কন্ঠে আম্মুর দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বললেন,,
“বাইরের একটা ছেলের কথা ধরে তুই সবার সামনে আমার ছেলেকে ছোট করতে চাইছিস সাইদা?”
“তুমি ভুল বুঝছ আপু। ক্ষমা চাইলে কেউ ছোট হয় না!”
ইতোমধ্যেই পিয়াস ভাই তিতা তিক্ত কন্ঠে খালামনিকে উদ্দেশ্য করে বললেন,,
“হয়েছে তো আম্মু। বিষয়টা অযথা বাড়াচ্ছ কেনো? সত্যিই তো আমি অন্যায় করেছি। কোনো কিছু যাচাই-বাছাই না করেই অযথা টয়ার গাঁয়ে হাত তুলেছি। ক্ষমা তো আমার চাইতেই হবে!”
পিয়াস ভাই ব্যতিব্যস্ত ভঙ্গিতে সিঁড়ি টপকে আমার ঠিক মুখোমুখি দাঁড়ালেন। অতঃপর শুকনো মুখে আমার আহত মুখমন্ডলে শান্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে নিচু গলায় বললেন,,
“স্যরি টয়া। না বুঝেই আমি তোর গাঁয়ে হাত তুলেছি, ক্ষমা করা যায় না আমাকে?”
খালামনি রাগে গজগজ করে প্রস্থান নিলেন। গোটা বিষয়টা খালামনির খুব ইগুতে লেগেছে। খুব অপমানিত বোধ করেছেন আমার খালামনি। তাই হয়তো একই জায়গায় দন্ডয়ান থাকতে পারছিলেন না। নিরুপায় হয়ে প্রস্থান নিতে বাধ্য হয়েছিলেন। ন্যাকা কান্না জুড়ে আমি পিয়াস ভাইকে শর্ত জুড়ে দিয়ে বললাম,,
“এক শর্তেই কিন্তু তোমাকে ক্ষমা করতে পারি ভাইয়া!”
মুহূর্তের মধ্যেই পিয়াস ভাই ঠোঁটের আলিজে ক্রুর হাসি ফুটিয়ে বললেন,,
“বুঝে গেছি কি শর্ত! রাত ১২ টার পর পেয়ে যাবি!”
কান্না ভুলে আমি মিহি কন্ঠে পিয়াস ভাইয়ার কানে ওষ্ঠদ্বয় ঠেঁকিয়ে শুধালাম,,
“সত্যি তো?”
“পাক্কা সত্যি!”
“তাহলে ছাঁদে৷ ওকে?”
“মিলি থাকবে তো?”
“মিলি আপুর প্রতি খুব বেশি ইন্টারেস্ট দেখছি তোমার!”
“স্বাভাবিক!”
“কিন্তু খালামনি যদি সত্যি সত্যি তোমার সাথে আমার বিয়ে ঠিক করেন?”
“বিয়ে ভেঙ্গে পালাবো আমি!”
অট্ট হেসে পিয়াস ভাই আমার সম্মুখ থেকে প্রস্থান নেওয়ার পূর্বে রাগে রীতিমতো লাভার রূপ ধারন করা পরশ ভাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
“থ্যাংকস টু ইউ।”
পরশ ভাই ভাবলেশহীন ভাবে প্রসঙ্গ পাল্টে নেতিবাচক দৃষ্টিতে আমায় দিকে চেয়ে খড়তড় কন্ঠে বললেন,,
“ইউ প্যান্টটা তাড়াতাড়ি রুমে দিয়ে যাও। এক্ষনি বের হতে হবে আমায়!”
পরশ ভাই অত্যধিক রাগে গজগজ করে প্রস্থান নিলেন। পিয়াস ভাই এক অদ্ভুত দৃষ্টিতে পরশ ভাইয়ার যাওয়ার পথে তাকিয়ে আমায় শুধিয়ে বললেন,,
“কি হলো বিষয়টা?”
মৃদ্যু হাসি চেঁপে আমি বললাম,
“তুমি বুঝবে না!”
পিয়াস ভাই নির্বোধ ভঙ্গিতে পিছু ঘুড়তেই মিলি আপুর সম্মুখীন হলেন৷ হাতে থাকা ভাঁজ করা প্যান্ট সমেত মিলি আপু পিয়াস ভাইকে উপেক্ষা করে আমার সম্মুখস্থ হয়ে বললেন,,
“যা। প্যান্টটা দিয়ে আয় পরশকে!”
পিয়াস ভাই ভড়কে উঠে মিলি আপুর দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বললেন,,
“পরশ? তুমি চিনো নাকি ছেলেটাকে?”
“আপনার সাথে কথা বলেছি আমি? বুঝলাম না, সবসময় গাঁয়ে পড়ে কথা বলার অভ্যেসটা কি আপনার অতি পূর্ব থেকে?”
পিয়াস ভাই বিষন্ন মনে মিলি আপুর সম্মুখ থেকে প্রস্থান নিলেন। হাত বাড়িয়ে আমি মিলি আপুর হাত থেকে প্যান্টটা হাতে তুলে নিরাগের সুরে আপুকে শুধিয়ে বললাম,,
“এই আপু? তুমি সবসময় পিয়াস ভাইয়ার সাথে অমন খারাপ ব্যবহার করো কেনো গো?”
“ভুলে গেছিস, না? এই তো, একটু আগেই তো চড়টা খেয়েছিলি। ক্ষত শুকিয়ে গেছে এতো তাড়াতাড়ি?”
কাঁচুমাচু মুখভঙ্গিতে আমি ছোট আওয়াজে আপুকে বললাম,,
“আস্তেই তো মেরেছিলো। একটু ও ব্যাথা পাই নি বিশ্বাস করো!”
আপু চরম বিরক্তিকর কন্ঠে বললেন,,
“এই তুই যা তো যা৷ প্যান্টটা পরশকে দিয়ে আয়!”
“তুমিই দিয়ে আসো না। আমাকেই কেনো যেতে হবে?”
“কারন পরশের মুখোমুখি হতে আমার অতিব লজ্জা, জড়তা এবং সংকোচবোধ কাজ করে। সঠিক সময় হলে নিশ্চয়ই আমি পরশের মুখেমুখি হবো!”
আপু প্রস্থান নিলেন। ম্লান হেসে আমি আপুর যাওয়ার পথে সরল দৃষ্টি নিক্ষেপ করে মিনমিনে কন্ঠে বললাম,,
“কি আশ্চর্য আপু! তুমি পছন্দ করো পরশ ভাইকে। আর তোমাকে পছন্দ করেন পিয়াস ভাই! এিকোন প্রেমকাহিনী হয়ে গেলো না বিষয়টা? শেষ পর্যন্ত কে কার হবে আপু? পরশ ভাই কি আদৌ কখনো মুখ খুলে আমার প্রতি উনার পুঞ্জীভূত ভালোবাসার নূন্যতম অংশটুকু প্রকাশ্যে আনতে চাইবেন? তোমাদের মাঝখানে আমার উপস্থিতি ক্ষনিকের জন্য ও দৃষ্টির সম্মুখে আনার প্রয়াসে অনড় থাকবেন?”
,
,
রাত ৯ টা বেজে ২৫ মিনিট। বাসস্টপে পাশপাশি দাঁড়িয়ে আছি আমি এবং পরশ ভাই। মানুষটা খুব তৃপ্তির সহিত ভাঁড়ে চুমুক দিয়ে চা খাওয়ার প্রয়াসে লিপ্ত প্রায়। পাশে জড়তা সমতে আমি লালসা ভরা চাহনিতে পরশ ভাইয়ার চা খাওয়ার অতি লোভনীয় চিএ প্রদর্শন করছি। খানিক ক্ষন বাদে পাষন্ড লোকটা কেমন যেনো আড়চোখে আমার দিকে উজবুকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করছেন। বোধ হয় আমার গতি বিধি লক্ষ্য রাখতে চাইছেন। আমার লোভাতুর চাহনীতে লোকটা যে এক পাশবিক আনন্দ খুঁজে পাচ্ছেন তা বেশ ভালোভাবেই টের পাচ্ছি আমি। লোকটার থেকে দৃষ্টি ঘুড়িয়ে আমি ভাবশূন্য গলায় বললাম,,
“বাস কতদূর?”
“কোন দিক থেকে আমায় কন্ট্রাকটর মনে হচ্ছে? গাঁয়ে কন্ট্রাকটরের লেবাস আছে নাকি?”
“কথা এভাবে ঘুঁড়িয়ে পেঁচিয়ে বলার স্বভাবটা কি আপনার জন্মগত?”
“জন্মগত কি না জানি না! তবে মাঝে মধ্যে কিছু নির্বোধ মানুষের নিবোর্ধ কথাবার্তার বিপরীতে আমার ও এমন ঘুঁড়িয়ে পেঁচিয়ে কথা বলার স্বভাবটা নতুনভাবে তৈরী হয়েছে!”
“ভারি মুশকিল তো! কোন দিক থেকে আমাকে আপনার নির্বোধ মনে হয়?”
“পুনরায় নির্বোধপূর্ণ কথা বললে আই সোয়ার সাথে সাথে তোমার ভুলটা ধরিয়ে দিবো। নির্বোধের পরিচয়টা ও তখন বিচার বিশ্লেষন করে তাৎক্ষণিক বুঝিয়ে দিবো!”
প্রসঙ্গ পাল্টাতে আমি ব্যতিব্যস্ত কন্ঠে বললাম,,
“মশা কাঁমড়াচ্ছে। মশার কাঁমড় খাওয়ানোর জন্য নিশ্চয়ই এতো রাতে আমাকে সাথে করে নিয়ে এসেছেন?”
“উহ্ আহ্ জাতীয় কোনো শব্দ তো আমার শ্রবণ শক্তিতে ঠেঁকে নি! কখন থেকে মশা কাঁমড়াচ্ছিলো তোমায়?”
“অনেকক্ষন যাবতই ফিল করছিলাম, মশা কাঁমড়াচ্ছিলো আমায়।”
“ওয়েট ওয়েট, তোমার আবার গন্ডারের চামড়া নয় তো?”
“এক্সকিউজ মি! গন্ডারের চামড়া বলতে আপনি কি বুঝাতে চাইছেন?”
“ভারী চামড়া। ব্যাথা পাওয়ার অনেক সময় পর তাদের চেতনা শক্তি কাজ করে। তোমার ও কি এই জাতীয় কিছু কাজ করছে?”
“মোটে ও না। উহ্ আহ্ জাতীয় শব্দ শুনাতে বিশ্রি দেখায়৷ তাই শব্দহীনভাবে ব্যাথা নিবারন করার চেষ্টায় অনড় ছিলাম!”
“হোয়াট এ্যা লজিক। তবে তোমার এই লজিকটা ও ফেল করে গেলো!”
“মানে?”
“মানুষ শুধু অত্যধিক সুখেই উহ্ আহ্ জাতীয় শব্দ করে না! ব্যাথা পেলে ও ব্যাথার বিপরীতে গুঙ্গিয়ে উঠে। আশেপাশের লোকজন নিশ্চয়ই এই উহ্ আহ্ জাতীয় শব্দের কারনটা বুঝতে বেশি হিমশিমে ভোগবে না!”
“ইসসস। কথায় কথায় এতো ভুল ধরতে যান কেনো আপনি? কলটা করে খুঁজ নিন না আন্টিরা কতদূর আছেন!”
“ব্যালেন্স নেই ফোনে। তাছাড়া আমার ভালোই লাগছে এক কাপ চা, সাথে এই নিরিবিলি পরিবেশের স্নিগ্ধ হিমেল হাওয়াটা!”
“নিরিবিলি পরিবেশ দেখলেনটা কোথায়? আশেপাশে তো অত্যধিক কলরব। শ’খানিক লোকজনের বিচরণ তো হবেই।”
“ফিল করছি! মনে মনে ফিল করছি। আমি একাই এই ভয়ঙ্কর সুন্দরতম মনোরম পরিবেশটায় এক কাপ চা হাতে নিয়ে দাঁড়িয় আছি!”
“পাশে আমার উপস্থিতি টের পাচ্ছেন তো?”
পরশ ভাই আচমকা আমার দিকে প্রেমময় দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললেন,,
“টের পাচ্ছি বলেই তো, এই মুহূর্তটাকে অতি ভয়ঙ্কর সুন্দরতম মুহূর্ত বলে মনে হচ্ছে!”
অতি আশ্চর্যিত দৃষ্টিতে আমি পরশ ভাইয়ার দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করতেই পরশ ভাই প্রসঙ্গ পাল্টাতে চায়ে চুমুক দিয়ে বললেন,,
“চা খাবে?”
মাথা ঝাঁকিয়ে আমি হ্যাঁ সূচক সম্মতি জানাতেই পরশ ভাই ভাবশূন্য কন্ঠে বললেন,,
“তবে একটা শর্তে!”
লোভের বশবর্তী হয়ে আমি আগ্রহী কন্ঠে বললাম,,
“কি শর্ত?”
“পিয়াস কি বলছিলো তোমায়? রাত ১২ টার পর কি আছে?”
“চা খাবো না আমি! ইচ্ছে করছে না।”
“মালাই চা। না খেলে মিস করবে কিন্তু। জীবনে এই প্রথম এতো ভালো চা খাচ্ছি আমি!”
নাক সিঁটকে আমি ব্যাঙ্গাত্নক কন্ঠে বললাম,,
“খাবো না বললাম তো। চায়ের প্রতি আমার অতো ঝোঁক নেই বাপু।”
রোড সাইডে অবস্থানরত চাপের দোকানটায় স্থির দৃৃষ্টি নিক্ষেপ করে পরশ ভাই আমায় উদ্দেশ্য করে বললেন,,
“বুঝলে টয়া? এই রোড সাইডের চাপ গুলো খেতে খুব বেশি টেস্টি হয়। অফিস শেষে আমি এবং হিমেশ প্রায়শই এই ক্রিস্পি, স্পাইসি, টেস্টি চাপগুলো খাই। আমাদের ঢাকায়!”
“আমি ও খাবো। প্লিজ চলুন না!”
“তাহলে বলো পিয়াস কি বলেছিলো?”
“উফফ কি ভ্যাপসা গরম পড়ছে। কখন যে বাস স্টপে বাস এসে থামবে!”
“ওহ্ সিট। আমি তো তেঁতুলের আঁচারের কথা ভুলেই গেছি!”
জিভে জল লকলক করে উঠল আমার। তড়িৎ বেগে আমি পরশ ভাইকে প্রশ্ন ছুড়ে বললাম,,
“কার জন্য? আপনি সত্যিই তেঁতুলের আঁচার খাবেন?”
“পিয়ালীর জন্য। বাস জার্নি করার পর পিয়ালীর তেতুলের আঁচার খেতে হয়!”
পর পর দীর্ঘ কয়েক ঢোক গিলে আমি মিটিমিটি চোখে ডান হাতের তর্জনী আঙ্গুলের প্রথম গিরায় বৃদ্ধা আঙ্গুল ঠেঁকিয়ে আবদারের স্বরে পরশ ভাইকে বললাম,,
“আমাকে ও একটুখানি দিবেন? বেশি না। অঅঅল্প একটু। এই যে আমার এই আঙ্গুলের গিরাটার সমান!”
মুহূর্তের মধ্যেই পরশ ভাই ঠোঁটের আলিজে ক্রুর হাসি ফুটিয়ে বললেন,,
“তাহলে বলো…
ক্ষনিকের মধ্যে আমি চোখ বুজে অণর্গল কন্ঠে বললাম,,
“ভাং! পিয়াস ভাই ভাং আনার কথা বলছিলেন!
চলবে…?