তোমায়_পাবো_বলে,পর্ব_২০
নিশাত_জাহান_নিশি
“কারন আম্মু আমাদের এই বিয়েতে রাজি নন! তোমার কার্লপ্রিট বাবার জন্য অনেক অপমানিত হয়েছেন তো তাই!”
নিজ বাবা সম্পর্কে কটুক্তি শ্রবণ করা মাএই মুহূর্তের মধ্যে আমার বিবেক বোধ জাগ্রত হয়ে উঠল৷ ভ্রুু যুগল খড়তড় ভাবে কুঁচকে আমি অগত্যা লোকটার দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে বললাম,,
“ওয়েট ওয়েট কার্লপ্রিট কাকে বললেন? আমার বাবা কার্লপ্রিট?”
পরশ রূঢ় স্বরে বললেন,,
“কার্লপ্রিট নন তো কি হুম? কি সুন্দর মুখের উপর মানা করে দিলেন উনার কোনো মেয়েকেই নাকি আমার কাছে বিয়ে দিবেন না। কেনো বাপ? কি এমন মহা অন্যায় করেছিলাম আমি? উনার মেয়েকে বিয়ে করার উদ্দেশ্য নিয়েই তো আমি একটু ঘনিষ্ঠ হয়েছিলাম! তোমার হিটলার বাপ এতে অন্যায় কোথায় খুঁজে পেলেন বুঝলাম না! আমি তো অস্বীকার করি নি যে উনার মেয়ের সাথে ঘনিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বে ও উনার মেয়েকে আমি বিয়ে করব না। তাহলে আমাকে মেনে নিতে উনার বাঁধাটা কোথায় ছিলো?”
“বাঁধা ছিলো। নিশ্চয়ই ছিলো৷ আর সেই বাঁধাটা ছিলো মিলি আপুকে নিয়েই! দু বোনই আপনার জন্য পাগল প্রায়। কি করতেন আমার বাবা? কাকে রেখে কাকে আপনার কাছে বিয়ে দিতেন? তাছাড়া কোনো বাবাই তার মেয়েকে অন্য একটা ছেলের সাথে অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখে নিজের রাগ, জেদকে সংবরণ করতে পারবেন না এটা স্বাভাবিক। আমার বাবা ও এর উর্ধ্বে ছিলেন না। ঐ পরিস্থিতিতে আমার বাবা যা করেছিলেন, একদম ঠিক করেছিলেন। অন্যসব বাবারা থাকলে ও ঠিক তাই করতেন। এতে আপনি আমার বাবার হিটলার গিরীর কি দেখলেন?”
“হয়েছে, হয়েছে। বাবার হয়ে সাফাই দেওয়া বন্ধ করো এবার। এখন যদি আমি এই পালানোর উদ্যোগটা না নিতাম না? তাহলে তো ঠিকই বধূ ভেসে পিয়াসকে বিয়ে করে দিব্যি সংসার করতে। বাবার আর্দশ মেয়ে হিসেবে ঠিক নিজেকে জাহির করে নিতে। মুখে মুখেই শুধু ভালোবাসি না? এই ১৫ দিনে একবার ও চেষ্টা করেছিলে আমার সাথে সামান্যতম যোগাযোগ করার?”
“মেয়েরা চাইলেই সব পারে না পরশ। মেয়েদের ও কিছু বাধ্যবাধকতা থাকে। তাছাড়া গত ১৫ দিন আমি রুম বন্ধী ছিলাম। শুধু খাবারের সময়টাতেই আম্মু বাধ্য হয়ে খাবারটা রুমে দিয়ে যেতেন। আমার কাছে কোনো সেলফোন ও ছিলো না যে আপনার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করব। পালানোর অনেক পথ খুঁজেছিলাম। তবে যথেষ্ট সাহস এবং সুযোগের অভাবে প্রতিবারই ব্যর্থ হয়েছিলাম। এর মানে এই না যে, বিয়ের দিন আমি কনে ভেসে হেসে খেলে দিব্যি পিয়াস ভাইকে বিয়ে করে নিতাম! অবশ্যই আমি ঐ দিন মুখ খুলতাম। আর বেশি কিছু হলে ঠিক পালিয়ে যেতাম!”
এর মধ্যেই পরশের সেলফোনটা হঠাৎ ভাইব্রেড মোডে বেজে উঠল। তিক্ততা নিয়ে পরশ উচ্চ আওয়াজে বললেন,,
“ওহ্ শিট। ফোনটাই তো সুইচ অফ করতে ভুলে গিয়েছিলাম! নিশ্চয়ই বাবা ফোন করেছেন!”
“মানে কি? আপনি ও কি বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছেন?”
“আম্মু কোনো ভাবে জানতে পেরেছিলেন আমার উডবি শ্বশুড় আমার গাঁয়ে হাত তুলেছিলেন! তখনই আম্মু ভীষণ ক্ষেপে বলেছিলেন, মরে গেলে ও তোমার সাথে আমার বিয়ে দিবেন না! আমি যতই উপোস থাকি, ড্রিংক করি বা জব ছেড়ে দেই!”
“মানে কি? আপনি ড্রিংকস করেছিলেন? জবটা ও ছেড়ে দিয়েছেন?”
“তোমাকে ছাড়া কাটানো ১৫ টা দিন ছিলো, আমার কাছে ১৫ টা বছরের মতো সুদীর্ঘ তীব্র যন্ত্রণার। বুকে তীব্র অদেখা অসুখ বেঁধেছিলো, যে অসুখের ভার ধমনী জুড়ে ভয়ঙ্কর বিস্ফোরকের সৃষ্টি করেছিলো। ভাগ্যিস সেই বিস্ফোরক বিস্ফোরিত হওয়ার পূর্বেই তুমি অবধি ছুটে এসেছিলাম নয়তো আমার কি হতো বলো?”
কলটা বেহায়ার মতো বেজেই চলছে। মনে হচ্ছে যেনো কেউ খুব সময় নিয়ে ভীষন দরকার প্রয়োজনে কলটা অবিরত করেই চলছেন। পরশকে বাঁ হাত দিয়ে হালকা ঠেলে আমি ব্যস্ত স্বরে বললাম,,
“কলটা রিসিভ করুন আগে। দেখুন কে কল করেছে?”
পরশ রাস্তার বাম পার্শ্বে বাইকটা দাঁড় করালেন। প্যান্টর পকেট থেকে ফোনটা বের করে স্ক্রীনের দিকে তাকাতেই হঠাৎ প্রকান্ড দৃষ্টিতে ঘাড় ঘুড়িয়ে আমার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আধো স্বরে বললেন,,
“ফারিহা। তোমার বড় বোন!”
শুকনো ঢোক গিলে আমি চট জলদি বাইক থেকে নেমে পড়লাম। মুখমন্ডলে দারুন ভয়ার্ত ভাব ফুটিয়ে আমি মাথা থেকে হেলম্যাট টা খুলে পরশের দিকে অস্থির দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললাম,,
“আপু? আপু হঠাৎ আপনাকে কল করলেন কেনো? বিষয়টা কি বাড়িতে সবাই জেনে গেছেন?”
কপালে উদয়স্ত বিন্দু বিন্দু ঘাম রেখা মুছে পরশ গলা খাঁকিয়ে আচম্বিতে কলটা রিসিভ করে শান্ত গলায় বললেন,,
“হ্যালো!”
পরশ ফোনের লাউড স্পীকার অন করতেই ওপাশ থেকে আপুর উত্তেজিত গলার স্বর ভেসে এলো। অর্নগল কন্ঠে আপু বলতে আরম্ভ করলেন,,
“পরশ? তোমরা এখন কোথায়?”
পরশ পুনরায় শান্ত গলায় আপুকে শুধিয়ে বললেন,,
“কেনো ফারিহা? কি হয়েছে?”
“ভয় পাওয়ার কিছু নেই পরশ। আমি জানি তোমরা পালিয়েছ। বিশ্বাস করো আমি ও এতোদিন মনে মনে চেয়েছিলাম তোমরা পালিয়ে যাও। শুধু এতটুকুই জানতে কল করেছিলাম যে, তোমরা আসলে কোথায় যাচ্ছ?”
“একচুয়েলি এখন ও ডিসাইড করি নি কোথায় যাব!”
“যেখানেই যাও, তাড়াতাড়ি যাও। আপাতত কুমিল্লা ছাড়া টা ভীষন জরুরি!”
“হুম তাই করছি। ওকে রাখছি এখন। পরে কথা হবে!”
ক্ষনিকের মধ্যে পরশ কলটা কেটে ফোনটা অনতিবিলম্বে সুইস্ট অফ করে দিলেন। পকেটে ফোনটা প্রবেশের জোগাড়ে লিপ্ত হয়ে পরশ আমায় উদ্দেশ্য করে উত্তেজিত গলায় বললেন,,
“তাড়াতাড়ি বাইকে উঠ। ফারিহাকে আমার সন্দেহজনক মনে হচ্ছে!”
“তাহলে আপুকে বলতে গেলেন কেনো আমরা একসাথে আছি?”
“তোমার পরিবার যেনো অন্য কোনো কারনে তোমায় নিয়ে টেনশান না করেন তাই!”
তাড়াহুড়ো করে আমি বাইকে চেঁপে বসতেই পরশ পুনরায় বাইকটা ফুল স্পীডে স্টার্ট করে দিলেন। যতদূর দৃষ্টি যাচ্ছে কেবল নিকষ কালো অন্ধকার দৃষ্টিতে পড়ছে। মাঝে মাঝে দু, একটা ছোট গাড়ি, বাস, ট্রাক চলাচল করছে পিচঢালা রাস্তায়। রাস্তা জুড়ে কেবলই পিনপতন নীরবতা বিরাজ করছে খুব মিহিভাবে৷ কোনো কোনো বড় রাস্তার পাশ ধরে সোডিয়ামের আলো নিভু নিভু ভাবে জ্বলছে৷ সেই সূক্ষ্ণ আলোয় দূরের পথ ঠিক ঠাওড় করা যাচ্ছে না। টানা এক ঘন্টা জার্নির পর রাত যখন গাঢ় গভীর হচ্ছিলো তখন আশপাশ তাকিয়ে আমি পরশকে শুধিয়ে বললাম,,
“কোথায় যাচ্ছি আমরা? কিছুই তো ঠাওড় করতে পারছি না!”
“আমরা এখন চান্দিনা রোডে আছি। ঢাকা যাওয়া আপাতত ক্যান্সেল। বাইকের পেট্রোল ও ফুরিয়ে আসছে!”
“চান্দিনা মানে? চান্দিনা কার বাড়ি?”
“চান্দিনা আমার এক ক্লোজ ফ্রেন্ডের বাড়ি।”
“ঢাকা যাওয়া ক্যান্সেল কেনো? পেট্রোল তো যেকোনো পেট্রোল পাম্প থেকেই পুশ করা যেতো!”
“ঘিলু নেই তোমার মাথায়? আই থিংক আমাদের পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টা জানাজানি হয়ে গেছে। তোমার পরিবার নিশ্চয়ই এখন আমার পরিবারের কাছে ফোন করে আমাদের অনুসন্ধান করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। আমার পরিবারের মেইন সন্দেহের তালিকায় রয়েছে হিমেশ। তাই আপাতত হিমেশের বাড়ি যাওয়া ক্যান্সেল।”
“তাহলে সিলেট চলুন?”
“বললাম তো পেট্রোল ফুরিয়ে আসছে। এখন কোথাও এক সেকেন্ড দাঁড়িয়ে ও সময় নষ্ট করার পর্যাপ্ত সময় আমাদের হাতে নেই!”
“ঠিক আছে। তবে… এভাবে বলা নেই কওয়া নেই হুট করে এই মাঝরাতে আপনার ফ্রেন্ডের বাসায় উঠা কি ঠিক হবে?”
“আমি দেখে নিব৷ আপাতত তুমি একটু চুপ থাকো।”
“শুনুন? অযথা আমার উপর রাগ ঝাঁড়বেন না। এমনিতেই পরিবারকে ছেড়ে এসেছি বলে আমার ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে আসছে তার উপর আপনি করছেন অহেতুক রাগারাগি?”
“পরিবারকে ছেড়ে আমি ও এসেছি ওকে? কষ্ট আমার ও হচ্ছে। আর এই সব হয়েছে তোমার ঐ হিটলার বাপটার জন্য!”
“আবার আব্বুকে আপনি হিটলার বললেন? ব্যবহার দেখছি ক্রমশ খারাপের দিকে যাচ্ছে আপনার। এখনই এই অবস্থা বাকি জীবন কি করবেন হুম?”
“বাকি জীবন ও ঠিক এভাবেই শ্বশুড় এবং জামাইয়ের মধ্যে দ্বন্ধ লেগে থাকবে। উনার ব্যবহারটাই এমন বিরূপ ছিলো!”
“বাইক থামান। বাড়ি ফিরব আমি!”
“কেটে রেখে দিব। চুপচাপ বসে থাকো!”
“কি ভেবেছেন কি আপনি? আপনার হুমকিকে ভয় পাই আমি?”
“না! ভয় তো আমি তোমাকে পাই। ঐ যে ক্ষনে ক্ষনে মুড সুইং হয়। কখন না আবার বলে বসো বিয়েটা করব না আমি। সত্যি সত্যিই বাড়ি ফিরে যাব!”
ফিক করে হেসে দিলাম আমি। পরশ মৃদ্যু হেসে বললেন,,
“কোনো ব্যাপার না। মুড অন করার মেডিসিন জানা আছে আমার!”
“ভাট না বকে তাড়াতাড়ি বাইকটা চালান। ভয় করছে আমার এই শুনশান রাস্তায়। কখন কি থেকে কি বিপদ ঘটে যায়!”
“ওকে ম্যাম। আপনার কথাই শীরধার্য!”
,
,
প্রায় ২ ঘন্টা পর। ছোট খুুপড়ির মতো আলো, বাতাসহীন বদ্ধ রুমটায় ঘাপটি মেরে বসে আছি আমি। বিছানাটা দৈর্ঘ্যে, প্রস্থে সিঙ্গেল খাটের মতোন এইটুকুনি। অত্যধিক ভয়ে থরথরিয়ে কাঁপছি আমি। লোড শেডিং হয়েছে মাএ। পরশ সেই কখন আমাকে এই একলা রুমে রেখে বেরিয়েছেন তার কোনো নির্দিষ্টতা নেই। বাড়িটা ভীষণ ভুতূড়ে প্রকৃতির মনে হচ্ছে আমার। পরশের বন্ধুটাকে ও কেমন যেনো অদ্ভুতুড়ে লাগছিলো। চোখের চাহনি নিকৃষ্ট প্রকৃতির ঠেঁকছিলো। লালসার নজরে লোকটা দেখছিলেন আমায়। আস্ত একটা ফ্ল্যাট খালি থাকতে লোকটা কেনো আমাদের এই ছোট্ট খুপড়ীর মতো রুমটায় আশ্রয় দিলেন? এমনকি পরশ ও এই বিষয়ে কিছু বললেন না কেনো তাই আমার মগজে ঢুকছে না? হাজারো প্রশ্ন, কৌতুহল, জড়তা, কুন্ঠা, হঠাৎ পরিবেশ বদলের কারনে আমার কান্না ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়ে হেচকি তুলার দিকে ধাবিত হতেই রুমের দরজা খুলে হুড়মুড়িয়ে কেউ রুমে প্রবেশ করলেন। অন্ধকারে ঠিক আন্দাজ করতে পারছিলাম না আগন্তুকটা কে! গভীর তমসায় ছায়া টুকু পর্যন্ত অবলোকন ক্ষমতায় বাইরে ছিলো। তাৎক্ষনিক ছটফটিয়ে বসা থেকে উঠে আমি কম্পিত গলায় বললাম,,
“কেকেকে?”
সেই চির পরিচিত চেনা স্বরটা আমার কর্নকুহরে মধুরভাবে ভেসে আসতেই পরশ হম্বিতম্বি হয়ে আমার দিকে দৌঁড়ে এসে বললেন,,
“আর ইউ ওকে টয়া?”
কান্নারত অবস্থায় আমি তড়িৎ বেগে পরশকে ঝাপটে ধরে জিগ্যাসু স্বরে বললাম,,
“কোথায় ছিলেন আপনি? জানেন কতোটা ভয় পাচ্ছিলাম?”
“বিকির সাথে কথা বলছিলাম। তাই একটু দেরি হয়ে গেলো।”
“বিকি ছেলেটাকে আমার খুব একটা সুবিধের ঠেঁকছে না পরশ। কেমন যেনো অদ্ভুত লোকটার চাহনি। লোভাতুর দৃষ্টিতে দেখছিলেন আমায়। প্রচন্ড ভয় করছে আমার ঐ ছেলেটাকে।”
“আমি আছি তো টয়া। প্লিজ সাহস রাখো। সকাল হতেই আমরা সিলেটের উদ্দেশ্যে রওনা হবো। কোনো রকমে এই ৩/৪ ঘন্টা একটু কষ্ট করে এখানে ম্যানেজ করে নাও প্লিজ। আসলে সাহস পাচ্ছি না এই মাঝরাতে তোমায় নিয়ে রাস্তায় বের হতে। রাস্তা ঘাটের পরিবেশ খুব খারাপ তো তাই! কখন কি থেকে কি হয়ে যায়!”
“পরশ, চলুন আমরা বাড়ি ফিরে যাই। আর ও একবার চেষ্টা করে দেখি আমরা পরিবারকে মানাতে পারি কিনা! এভাবে ভয়, শঙ্কা নিয়ে আমরা কতদূর আগাতে পারব বলুন? আর কতদিনই বা এভাবে নিজেদের আড়াল করে রাখতে পারব বলুন?”
“মাঝপথে এসে আমার হাতটা ছেড়ে দিবে টয়া? আমি জানি, বাড়ি ফিরলে আর কখন ও আমরা এক হতে পারব না। বিচ্ছেদ ঘটবে আমাদের প্রেমের। দূরত্ব বাড়বে আমাদের মনের। অপূর্ণ থেকে যাবে আমাদের ভালোবাসা। আর যাই হয়ে যাক না কেনো, তোমায় ছাড়তে পারব না আমি। ভালো থাকতে পারব না আমি তোমায় ছাড়া। আত্নার মৃত্যু ঘটবে আমার নির্ঘাত!”
“তাহলে কি করব বলুন না? বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে বুঝতে পারছি দুনিয়াটা কতো নির্মম, অদ্ভুত, ভয়ঙ্কর এবং চাকচিক্যতায় মোড়ানো এক গোলকধাঁধা। প্রতি পদে এখানে অপ্রত্যাশিত শত সহস্র ভয় এবং বিপদের সম্মুখীন হতে হয়। আমি আর পারছি না পরশ। এইটুকুতেই আমি ধৈর্য্য হারিয়ে ফেলেছি!”
“আচ্ছা? তুমি আমায় নিয়ে কোনো রকম ইনসিকিউরিটিতে ভুগছ না তো? মানে বিশ্বাস করছ তো আমায়?”
“আজকে এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে, আমার মা-বাবার পর আপনার থেকে বেশি আমায় কেউ ভালোবাসে না। যদি ভীষণ প্র্যাক্টিক্যালী ও ভেবে দেখি— “তাহলে আপনার সাথে আমার ভবিষ্যতটা অনেক বেশি সুরক্ষিত!”
ইতোমধ্যেই বিদ্যুৎ চলে এলো। মিটমিটে রশ্মিতে জ্বলে উঠা টিউব লাইটের অতি স্বল্প আলোতে পরশের ঠোঁটের কোণে লেগে থাকা মৃদ্যু হাসিতে আমার বুকে অত্যধিক কম্পনের সৃষ্টি হলো। শরীরের সাথে পুরোপুরি মিশিয়ে পরশ আমায় আদুরে গলায় বললেন,,
“কিছু ঘন্টা পরই আমরা বিয়ে করছি টয়া। বিধাতার নির্ধারিত এক পবিএ বন্ধনে আবদ্ধ হতে চলছি। পৃথিবীর আর কেউ আমাদের আলাদা করতে পারবেন না। স্বয়ং তোমার বাবা ও না। আমার শ্বশুড় বাবা যদি খলনায়ক হন না? আমি ও কিন্তু সিনেমার হিরোদের মতো কোনো অংশে কম যাই না!”
ফিক করে হেসে দিলাম আমি। আহ্লাদি হয়ে পরশের বুকের মাঝখানটায় আলতো চুমো এঁকে দিতেই পরশ আমায় নিয়ে ধপাস করে বিছানায় ছিটকে পড়লেন। খাটটার বুঝি অন্তিমসংস্কার হয়ে গেলো এবার! পূর্ব পাশটা ভেঙ্গে খানিক নিচের দিকে ডেবে গেছে। দুজনই বেকুব ভঙ্গিতে খাটের পূর্ব পাশটায় কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে অতঃপর দৃষ্টি ঘুড়িয়ে দুজন দুজনের দিকে চেয়ে হু হা শব্দে হেসে উঠলাম। হাসির রেশ কাটতেই পরশ এক অতি মোহনীয় দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালেন। মনে হচ্ছে যেনো এই দৃষ্টিতে আমি খুন হয়ে যাচ্ছি। এতো কামনা, বাসনা, ভালোবাসায় রঞ্জিত কেনো লোকটার চাহনি? আকৃষ্ট না হয়ে থাকাই যায় না। অপরদিকে লোকটার শরীরের ভার ও বইতে পারছিলাম না আমি। নাক, মুখ কুঁচকে আমি কুঁড়ে গলায় বললাম,,
“দেখি। উঠুন আমার উপর থেকে। এতো ভারী কেনো আপনি?”
ঠোঁটের আলিজে ক্রুর হাসি ফুটিয়ে পরশ আমার বাঁ গালটায় নাক ঘঁষে ঘোর লাগা গলায় বললেন,,
“প্র্যাক্টিস করে নিন মিস টয়া। রোজ নিয়ম করে এই লোকটার ভার বহন করতে হবে আপনার!”
লজ্জায় কুঁকিয়ে উঠে আমি লোকটাকে ধাক্কা দিয়ে গাঁয়ের উপর থেকে ছিটকে ফেলে ডান পাশ ফিরে মুখ লুকিয়ে বললাম,,
“ধ্যাত!”
লোকটা পুনরায় বেহায়ার মতো পেছন থেকে আমায় শক্ত হাতে ঝাপটে ধরে আমার ঘাঁড়ে মুখ ডুবিয়ে বললেন,,
“ধ্যাত কি হুম? সত্যিটাই তো বললাম!”
“ঘুমান তো। বেশি বাজে না বকে!”
“একটু পরেই ফজরের আযান পড়বে। সত্যিই এখন ঘুমুবে?”
লম্বা এক হামি তুলে আমি ঘুম জড়ানো স্বরে বললাম,,
“হু। আমার ভীষণ ঘুম পেয়েছে!”
তাৎক্ষণিক পরশ আমায় হেচকা টান দিয়ে উনার দিকে ঘুড়িয়ে বুকের পাজরে আমায় পরম আদরে, যত্নে মিশিয়ে মিহি গলায় বললেন,,
“আমার ও ঘুম পেয়েছে!”
,
,
পাখির কিচির মিচির শব্দ বহু পূর্ব থেকেই আমার কর্নকুহরে বাজছে৷ আন্দাজ করতে পারছি প্রভাত ঘনিয়ে এসেছে। তন্মধ্যেই সমস্ত মুখমন্ডলে কারো উষ্ণ হাতের বিচরন অনুভব করতেই আমি তাৎক্ষণিক ঘুম ভেঙ্গে লাফিয়ে উঠলাম! ভয়াল দৃষ্টিতে অগ্রে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই হাত দুখানা মুখে চেঁপে ধরে আমি চিৎকার করে বললাম,,
“আপনিনিনিনি? আআপনি এএএই রুমে কি করছেন?”
চলবে….?