তোমায়_পাবো_বলে,পর্ব_২৩
নিশাত_জাহান_নিশি
“পরশ প্লিজ তাড়াতাড়ি বের হয়ে আসুন। আব্বু আমাদের সন্ধানে চলে এসেছেন!”
মুখমন্ডলে ঘোর আতঙ্কের পাশাপাশি আমার নেত্রযুগল হতে শ্রাবণের বারিধারা বইছে। কলিজাটা কেঁপে ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে আসছে। স্থির ভঙ্গিতে দাঁড়াতে পারছি না এক জায়গায়। বিদ্যুৎস্পৃষ্টের মতো পুরো শরীর অবশ এবং ঝিমঝিম করছে। বাক শক্তি বেগতিক রুদ্ধের দিকে ধাবিত হচ্ছে। গলা থেকে কোনো সাউন্ড ই বের হচ্ছে না। এমতাবস্থায় চেতনা শক্তি আমার লোপের দিকে অগ্রসর হতেই দরজায় বিকট শব্দে কড়া নেড়ে উঠল আমার আব্বু এবং চাচারা। তেজীয়ান গলায় আব্বু উচ্চ আওয়াজে চিৎকার করে বলছেন,,
“টয়া দরজাটা খোল বলছি। তাড়াতাড়ি দরজাটা খোল।”
অত্যধিক ভয়ে ভেতর থেকে গোঙ্গানি নিঃসৃত হতেই ওয়াশরুমের দরজা খুলে পরশ ভেজাক্ত শরীরে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে এলেন। পড়নে শুধু কালো প্যান্ট উনার। শরীরের উপরের অংশ উন্মুক্ত। চুল থেকে টপটপ শব্দে পানি নিঃসরন হচ্ছে। সাদাটে মুখশ্রী তে ভয়, কৌতুহল, উদগ্রীবতা যেনো গাঢ় ভাবে ফুটে উঠেছে। আঁখি দ্বয়ে হাজারো প্রশ্ন নিয়ে পরশ আমার সম্মুখীন হতেই আমি ঢুলুঢুলু শরীরে কম্পিত গলায় বললাম,,
“আআআব্বু এসেছে!”
মুহূর্তের মধ্যেই পরশের ভয়াটে মুখশ্রী তে তুখার জেদ ফুটে উঠেছে পরিপূর্ণ ভাবে। ঘাড়ের রগ গুলো টান টান হয়ে উঠতেই পরশ আমায় উপেক্ষা করে কাবার্ডের উপর থেকে টি-শার্ট টা গাঁয়ে জড়িয়ে দ্রুত পায়ে হেঁটে রুমের দরজার দিকে অগ্রসর হতেই পেছন থেকে আমি পরশের ডান হাতটা চেঁপে ধরে মিনতি ভরা স্বরে বললাম,,
“যাবেন না পরশ প্লিজ। এরা আমাদের আলাদা করে দিবেন। প্লিজ আপনি যাবেন না!”
পরশ ঘাড় বাঁকিয়ে আমার দিকে শান্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললেন,,
“তোমার বাপের, বাপের ও সাহস নেই আমার থেকে তোমাকে আলাদা করার। অনেক হয়েছে এসব লুকোচুরি, অহেতুক পালিয়ে বেড়ানো, অন্যের আশ্রয়ে গাঁ ঢাকা দেওয়া। এবার যা হবে সামনে থেকে হবে, একদম সরাসরি হবে।”
এক ঝটকায় পরশ আমার হাতটা সরিয়ে মুখমন্ডলে প্রখর রাগী ভাব সমেত রুমের দরজার দিকে অগ্রসর হতেই অপ্রত্যাশিত ভাবে আন্টির গলার স্বর আমাদের কর্নকুহরে ভেসে এলো। আন্টি যেনো লৌহ কন্ঠে পরশকে উদ্দেশ্য করে বলছেন,,
“পরশ দরজাটা খোল বলছি। চূড়ান্ত বদ মেয়েটার সাথে তোর সংসার করা চলবে না!”
এর মধ্যেই আব্বু আন্টির মুখের কথা টেনে নিয়ে ঝাঁঝালো গলায় পাল্টা জবাবে আন্টিকে বললেন,,
“চূড়ান্ত বদ আপনার ছেলে। আমার মেয়ে নয়। আপনার ছেলের প্ররোচনাতে পড়েই আমার মেয়ে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলো। টানা ১৫ দিন আটকে রেখেছিলাম তো আমরা আমাদের মেয়েকে। আপনারা কেনো পারলেন না? আপনাদের ছেলেকে আটকে রাখতে?”
“আমরা ও আমাদের ছেলেকে আটকে রেখেছিলাম বুঝেছেন? কিন্তু আটকে রেখে কি লাভ হবে? আপনার মেয়ে তো ফুস মন্তর জানে! ঠিক আমার ছেলেকে বাড়ি থেকে বের করে এনেছে। এমন নির্লজ্জ, বেহায়া মেয়ে মানুষ আমি আমার বাপের জন্মে দেখি নি!”
পরশ এবার রাগে গজগজ করে দরজার খিলটা খুলতে বাধ্য হলেন। আমি ও দৌঁড়ে এসে পরশের পাশাপাশি দাঁড়ালাম। আমাদের দুজনকে দেখা মাএই দুই পরিবারের সদস্যরা হিংস্র দৃষ্টিতে আমাদের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলেন। হিমেশ ভাই নির্বোধ ভঙ্গিতে আন্টি, আঙ্কেলের পাশে দাঁড়িয়ে আছেন। উনি হয়তো বুঝে উঠতে পারছেন না কি থেকে কি হয়ে গেল! পিয়াস ভাই আব্বুর পাশে দাঁড়িয়ে নিরুপায় ভঙ্গিতে মাথা চুলকিয়ে বুঝাচ্ছেন, তাদের আটকে রাখতে পারি নি আমি। শেষ পর্যন্ত তাদের সঙ্গ দিতেই হল। ইতোমধ্যেই আব্বু ক্ষীপ্ত হয়ে ঝড়ের বেগে আমার ডান হাতটা চেঁপে ধরে বললেন,,
“বাড়ি চল তুই। এরপর তোকে আমি বুঝাচ্ছি পরিবারের মুখে চুল কালি দেওয়ার পরিনাম ঠিক কতটা ভয়ঙ্কর হয়।”
সঙ্গে সঙ্গেই পরশ আব্বুর হাত চেঁপে ধরে রাগ যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণে এনে সাবলীল গলায় বললেন,,
“আপনার মেয়ে এখন আমার ওয়াইফ। নিশ্চয়ই জানেন আপনি? হাজবেন্ডের পারমিশান ছাড়া আপনার মেয়ে আপনার সাথে আপনার বাড়ি অথবা অন্য কোথাও যেতে পারবে না?”
“এই হ্যালো? তুই এখন শিখাবি? আমার মেয়ে আমার সাথে কোথায় যেতে পারবে বা পারবে না?”
“হ্যাঁ শিখাব। কারণ, আপনার মেয়ের প্রতি এখন আমার অধিকার আপনার চেয়ে ও দ্বিগুন বেশি। আমি যা বলব, আপনার মেয়ে ঠিক তাই শুনতে বাধ্য!”
ঠাস করে পরশের ডান গালে এক চড় পড়ল! আন্টি রাগান্বিত হয়ে পরশের গালে কঠিন এক চড় বসিয়ে বললেন,,
“বউয়ের প্রতি খুব অধিকার খাটানো শিখে গেছিস না? দু দিনের সংসারেই এত টান? বড়দের মুখের উপর তর্ক করতে ও এখন মুখে আটকাচ্ছে না তোর? ভাই তো ঠিকই বলেছেন! যে মেয়ে বংশের মুখে চুনকালি মেখে অন্য একটা ছেলের হাত ধরে পালিয়ে আসে তাকে বাড়ি নিয়ে শিক্ষা দিবেন না তো কি করবেন? থালা সাজিয়ে পূজো করবেন?”
পরশ নাক টেনে মুহূর্তের মধ্যে আন্টির হাত দু খানা চেঁপে ধরে মাথা নুঁইয়ে কান্না জড়িত গলায় বললেন,,
“সংসারটা দুদিনের হলে ও টান অনেক গুলো বছরের মা। তোমার বউমা কে ছাড়া তোমার ছেলে বাঁচবে না মা। মরে যাবে তোমার এই এক মাত্র ছেলে! হয়তো সুসাইড করবে নয়তো রোড সাইডে বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে পড়ে থাকবে! জানি না, তখন তুমি এই ভুল সিদ্ধান্তের জন্য কতটা অনুতপ্ত হবে! আদৌ তোমার ছেলের অকাল মৃত্যুতে আফসোস করবে কিনা! আমি অনেক শুনেছি জানো? ছেলে-মেয়ের সুখের জন্য নাকি মা-বাবারা অনেক দিক সেক্রিফাইজ করেন। আমার বেলায় কেন এত কৃপনতা করছ মা? কেনো নিজেদের রাগ-ক্ষোভ ভুলে টয়া এবং আমাকে মেনে নিচ্ছ না? আমি একটা সহজ, সরল, সুন্দর, গুছানো, হাসি খুশি এবং ভালোবাসায় মোড়ানো পূর্ণ সংসার চাই মা। এত রাগ-ক্ষোভ, বিবেধ, হিংসা এবং কুটিলতায় ভরা কঠিন বাস্তবের মুখোমুখি হতে চাই না।”
পাশ থেকে আমি ফুঁফিয়ে কেঁদে উঠলাম। কান্নায় কন্ঠস্বর রুদ্ধ হয়ে এলে ও আমি কম্পিত গলায় আব্বুকে বললাম,,
“আমি ও পরশকে ছাড়া বাঁচব না আব্বু। গতবার তো ১৫ দিন রুম বন্ধী থাকা অবস্থাতে ও নিজের কোনো ক্ষতি করতে পারি নি আমি। গুরুত্বের সাথে ভেবে ও দেখি নি বিষয়টা। তবে এইবার আমি পিছিয়ে যাব না আব্বু! স্বেচ্ছায় আত্নহননের পথ বেছে নিব! তখন কিন্তু তোমার মেয়েকে তুমি চির জীবনের জন্য হারিয়ে বসবে বাবা। পারবে তো মেয়ে হারানোর শোক সামলে নিতে?”
কলিজা ছেদ হয়ে যাওয়া আমার নির্মম আকুতিতে ও আব্বুর মন বিন্দু পরিমান গলল না। মুখমন্ডলে তেজর্শি ভাব ফুটিয়ে আব্বু ক্ষনিকের মধ্যে ঝট করে আমরা হাতটা আঁকড়ে ধরে আমায় নিয়ে প্রস্থান নিতেই আন্টি পেছন থেকে আমার হাতটা টেনে ধরে নিম্ন গলায় আব্বুকে উদ্দেশ্য করে বললেন,,
“আমার বউমা আপনার সাথে কোথাও যাবে না বেয়াই! যেতে হলে আমার বউমা কে রেখে আপনার যেতে হবে!”
হতবিহ্বল দৃষ্টিতে আমি ঘাড় ঘুড়িয়ে আন্টির দিকে তাকালাম। আন্টি দ্রুত পায়ে হেঁটে এসে আব্বুকে বেগড়া দিয়ে বললেন,,
“আমার বউমা কে রেখে যান। আমার ছেলের জীবনের চেয়ে আমার রাগ-অভিমান বেশি প্রিয় হতে পারে না।”
রাগান্বিত গলায় আব্বু প্রত্যত্তুরে বললেন,,
“কিন্তু আমার মান-সম্মান আমার কাছে অধিক প্রিয়!”
“বিয়েটা এখন হয়ে গেছে বেয়াই। মান-সম্মান দিয়ে আর কি হবে? যা ক্ষতি হওয়ার তা তো হয়েই গেছে। কেনো আপনি এখন ও অহেতুক মান-সম্মান নিয়ে পড়ে আছেন?”
“শুনুন? আমি আপনার এত উপদেশ মূলক কথা শুনতে চাইছি না। সামনে থেকে সরুন। আমার মেয়েকে সাথে নিয়েই তবে আমি বাড়ি ফিরব।”
ইতোমধ্যেই পরশ পেছন থেকে আমার হাত টেনে ধরে হেচকা টানে আমাকে উনার বাহুডোরে মিশিয়ে আব্বুকে উদ্দেশ্য করে তটস্থ কন্ঠে বললেন,,
“আজ থেকে ভুলে যান আপনার দ্বিতীয় কোনো মেয়ে ছিলো বা আছে! আপনার মতো নির্মম, নিষ্ঠুর, পাষন্ড বাবা অন্তত আমার ওয়াইফের কোনো প্রয়োজন নেই।”
আব্বু দাঁতে দাঁত চেঁপে আমার দিকে তেজী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে জিগ্যাসু কন্ঠে বললেন,,
“তুই ও কি তাই চাস? চলে যাব আমি? বাবা হিসেবে আমি নির্মম, নিষ্ঠুর, পাষন্ড?”
মাথা নুঁইয়ে আমি হেচকি তুলে কেঁদে উঠতেই আব্বু উচ্চ আওয়াজে চাচাদের উদ্দেশ্য করে বললেন,,
“এই চলে আয় তোরা। আজ থেকে এই মেয়ে আমার কাছে মরে গেছে!”
কান্না থামিয়ে আমি অগ্রে আহত দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই দেখলাম আব্বু এবং চাচারা পিছু ফিরে প্রস্থান নিচ্ছেন। পিয়াস ভাই আমার পাশে দাঁড়িয়ে ব্যতিব্যস্ত গলায় বললেন,,
“চিন্তা করিস না তুই। আঙ্কেল তোকে অনেক বেশি ভালোবাসেন। এই প্রথমবার আমি দেখেছিলাম আঙ্কেলের চোখে তোর জন্য জল! তোকে খুঁজে না পেয়ে আঙ্কেল কতটা উতলা হয়ে উঠেছিলেন। তুই তো জানিস ই আঙ্কেল উপর থেকে কতটা রাগী আর ভেতর থেকে কতটা নরম। খুব জলদি আঙ্কেলের রাগ পড়ে যাবে। আর ঠিক তখনই সব পূর্বের মতো স্বাভাবিক হয়ে যাবে। আর একটা কথা – ” মিলির সাথেই আমার বিয়েটা হচ্ছে! মাস খানিক বাদে। এখন আসছি। আই হোপ সো, পরশ তোকে খুব সুখে রাখবে!”
মৃদ্যু হেসে পিয়াস ভাই প্রস্থান নিলেন। আমি মুখ চেঁপে কাঁদতে কাঁদতে ধপ করে ফ্লোরে বসে পড়তেই পরশ পেরেশান হয়ে আমার পাশে বসে বাহুডোরে আমায় আবদ্ধ করে শান্ত গলায় বললেন,,
“শান্ত হও প্লিজ। আর কান্না থামাও। তোমার তো খুব খুশি হওয়ার কথা তাই না? আম্মু আমাদের মেনে নিয়েছেন!”
খুশিতে আত্নহারা হয়ে পরশ আমাকে ছেড়ে বসা থেকে উঠে পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা আন্টিকে জড়িয়ে ধরে বললেন,,
“থ্যাংকস মা। ম্যানি ম্যানি থ্যাংকস। সঠিক সময়ে তুমি যে আমায় ঠিক কতটা স্বস্তি দিয়েছ সিরিয়াসলি তোমাকে বলে কয়ে বুঝাতে পারব না আমি। এই অনুভূতিটাই যেনো অন্য রকম। আমার প্রতি তোমার ভালোবাসা ঠিক কতটা গভীর তুমি আবার ও প্রমাণ করে দিয়েছ!”
আন্টি ম্লান হেসে বললেন,,
“হয়েছে হয়েছে। এবার বাড়ি চল। অনেক দৌঁড় করিয়েছিস আমাদের। এবার একটু বিশ্রাম চাই!”
ইতোমধ্যেই আঙ্কেল অর্থাৎ আমার শ্বশুড় মশাই আমাকে বসা থেকে উঠিয়ে অতি যত্নে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,,
“আর কেঁদো না মা। বাড়ি চল। তোমার বাবা ও আস্তে ধীরে তোমাদের মেনে নিবেন। অপেক্ষা শুধু সঠিক সময়ের। পরিবারের মান-সম্মান বলে প্রশ্ন তো? তাই তোমার বাবা এতটা ক্ষীপ্ত হয়ে আছেন!”
,
,
রাত প্রায় এখন ১০ টার কাছাকাছি। বিকেলের হতেই আমরা ঢাকায় ফিরে এসেছি। আসার পর থেকেই পিয়ালী আপু এবং পায়েল আমার পিছু ছাড়ছেন না। এক মুহূর্তের জন্যে ও আমাকে একা থাকতে দিচ্ছেন না। সর্বক্ষন নানা ভাবে আমায় হাসানোর চেষ্টা করছেন। কাউকে বুঝাতে পারছি না, আমার ভেতরে ঠিক কতটা জ্বলন হচ্ছে৷ বাবার জন্য কতটা কষ্ট হচ্ছে৷ পরিবারের সবার জন্য ভেতরটা ঠিক কতটা পুড়ছে। আসার পর থেকে পরশ ও বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। আমার সাথে সামান্য কথা বলার সময় টুকু ও বের করতে পারছেন না। সকল ব্যস্ততার পর এই তো একটু পূর্বে রাতের খাবার খেয়ে মাত্র রুমে প্রবেশ করছিলাম। এর মধ্যেই আমার দৃষ্টি পড়ল পিয়ালী আপুর রুমের দিকে৷ আমাদের বেড রুম থেকে পিয়ালী আপুর রুমটা স্পষ্ট দেখা যায়। সিঁড়ি কোঠার পাশের রুমটাই পিয়ালী আপুর। ফোন হাতে নিয়ে পিয়ালী আপু ছাদ থেকে নামছেন। তবে চোখের কোণে জল চিকিচিক করছে উনার। জল গুলো দু হাতে মুছে আপু রুমে প্রবেশ করে ঠাস করে রুমের দরজাটা বন্ধ করে দিলেন। বিষয়টা আমার সন্দেহের ঠেঁকতেই আমি কৌতুহল নিয়ে ধীর পায়ে হেঁটে আপুর রুমের দরজায় আঁড়ি পাতলাম। সঙ্গে সঙ্গেই শুনতে পেলাম আপু চিৎকার করে কেঁদে বলছেন,,
“আই হেইট ইউ সৌরভ। আই রিয়েলি হেইট ইউ। ভাবতে পারি নি, তুমি আমার পরিবারের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে আমাকে এভাবে ঠকাবে!”
ইতোমধ্যেই আমাদের বেড রুমের ভেতর থেকে পরশের ডাক এলো। পরশ উচ্চ শব্দে চেঁচিয়ে বলছেন,,
“এই টয়া? কোথায় তুমি?”
লোকটা ডাকার আর সময় পেল না? এই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তেই লোকটাকে ডাকতে হলো? ধ্যাত ভাল্লাগে না! শুনতেই পারব না আর পিয়ালী আপু কেনো কাঁদছেন? আর কাকেই বা হেইট ইউ বলছেন! বিরক্তি নিয়ে আমি দ্রুত পায়ে হেঁটে আমাদের বেড রুমে প্রবেশ করলাম। হাতে থাকা পানির গ্লাসটা ডেস্কের উপর রেখে পরশ মুখে পানি সমেত আমায় বললেন,,
“কোথায় ছিলে? কতক্ষন যাবত ওয়েট করছিলাম?”
ক্ষিপ্র দৃষ্টিতে আমি লোকটার দিকে এগিয়ে এসে বললাম,,
“তো কতক্ষন ওয়েট করছিলেন? ১ ঘন্টা, ২ ঘন্টা, ৪ ঘন্টা?”
পরশ বেকুব দৃষ্টিতে ভ্রু যুগল উঁচিয়ে আমার দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে বললেন,,
“হলো টা কি? এত হাইপার কেনো?”
পরশের দিকে আমি পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে বললাম,,
“সৌরভ কে?”
পরশ আমার দিকে খানিক এগিয়ে এসে আমার ডান হাতটা চেঁপে ধরে হাতের তালুতে চুমু খেয়ে বললেন,,,
“পিয়ালীর উডবি!”
“আমার মনে হচ্ছে পিয়ালী আপু কিছু গোপন করছেন আমাদের! আমি নিজ কানে শুনেছি আপু বলছিলেন…
পরশ মাঝপথে আমায় থামিয়ে দিয়ে মোহসিক্ত দৃষ্টি নিয়ে আচমকা আমার ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলেন। হাজার ঠেলে ও আমি লোকটাকে বিন্দুমাত্র নড়াতে না পেরে কুটুস করে লোকটার ঠোঁটে কামড় বসিয়ে বললাম,,
“ছাড়ুন বলছি। আমার কথাটা শুনুন?”
তীব্র কামড়ের আঘাতে ও লোকটার বোধ হয় কিছু এলো গেল না। চুমু খাওয়া অবস্থাতেই লোকটা দ্বিগুন উত্তেজিত হয়ে আমাকে পাজা কোলে তুলে বিছানায় শুইয়ে দিলেন। শার্টের বাটন গুলো এক এক করে খুলে লোকটা আমার ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে ঘোর লাগা স্বরে বললেন,,
“যা শুনার কাল সকালে শুনব। এখন প্লিজ আমায় বিরক্ত কর না।”
চলবে…?