তোমায়_পাবো_বলে,পর্ব_৩৫
নিশাত_জাহান_নিশি
“শ্বশুড় আব্ববাবাবাবাবাবাবা! আপনি কোথায়য়য়য়? মেয়ের জামাইকে পিক করতে আসবেন না?”
সঙ্গে সঙ্গেই বাবা শক্ত হাতে বাঁ কানটা চেঁপে ধরলেন! অন্য হাতে বাবার ফোনটা ঢকঢক করে কাঁপছে। অনতিবিলম্বে আমি ও কান দু খানা চেঁপে ধরতে বাধ্য হলাম। কানের পোকা জাস্ট নড়ে গেল আমার! পুরুষ মানুষদের গলা তো এমনিতেই অনেক বড়। তার উপর হাঁক ছাড়লে অতিরিক্ত শব্দ দূষণে মানবজীবন ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে! যার প্রমাণ আমি এবং বাবা স্বয়ং নিজেরাই। কপালের ভাজে অঢেল জেদ এবং বিরক্তির বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে বাবা ফোনের স্পীকারে ওষ্ঠদ্বয় ঠেঁকিয়ে বললেন,,
“এই চুপ করো! একদম চুপ করো। গলার আওয়াজ নামিয়ে কথা বলো! এভাবে চিৎকার চেঁচামেচি করছ কেন? কানে কালা নাকি আমি? যে নিম্ন আওয়াজে কথা বললে শুনব না?”
কিয়ৎক্ষনের মধ্যেই পরশ কদাচিৎ হেসে বললেন,,
“আরেহ্ মেরি শ্বশুড় আব্বা! বিষয়টা বুঝতে হবে আপনার। সন্ধ্যা সাতটা থেকে আপনার পেছনে পড়ে আছি আমি। ম্যাসেজ, কলস ক্রমাগত করেই চলছি। কোনো ভাবেই আপনার সাথে যুক্ত হতে পারছিলাম না। ধৈর্য্যের বাঁধ প্রায় ভেঙ্গে দিচ্ছিলেন আমার! দীর্ঘ অনেকক্ষন চেষ্টার পর অবশেষে আমি পেরেছি আপনার সাথে যুক্ত হতে শ্বশুড় আব্বার কান অবধি আমার কথা পৌঁছাতে! নাও হ্যাভ এ্যা রিলাক্স।”
“এই? তুমি কি মানুষ হবে না? গুরুজনদের সাথে কিভাবে আচরন করতে হয় তা ও জানা নেই তোমার?”
“না আব্বা। সত্যিই আমার জানা নেই! থ্যাংকস টু ইউ! আপনি না বললে হয়তো জানতেই পারতাম না গুরুজনদের সাথে এরচেয়ে ও অতি নম্র ভাষায় আচরণ করতে হয়!”
“মানে কি? তুমি কবে, কখন আমার সাথে নম্র ভাষায় আচরন করেছিলে? সবসময় তো এই একই অসভ্যের মতো আচরণ করো!”
“এখন এত কথা বাড়িয়ে লাভ নেই শ্বশুড় আব্বা। খুব আরামে আছেন না? মেয়ের জামাইকে মশার কামড় খাইয়ে খুব চিল মোডে আছেন?”
বাবাকে অভিব্যক্তি প্রকাশ করার সুযোগ না দিয়েই পরশ পুনরায় বিদ্রুপাত্নক গলায় বললেন,,
“ওহ্ হ্যাঁ শ্বশুড় আব্বা! আপনার তো আবার মশাকে থ্যাংকস জানানো উচিত! আপনি না পারলে ও আপনার সহচর কিন্তু ঠিকই পারছে আমার রক্ত চুষে খেয়ে নিতে! কেউ না কেউ তো আমায় জব্দ করতে পারছে তাই না?”
মুহূর্তের মধ্যেই বাবা পৈশাচিক হাসিতে মত্ত হয়ে বললেন,,
“তাহলে আর ও এক ঘন্টা অপেক্ষা করো বাছা! হাতের কাজটা সেরে আসছি আমি। অনেক ইস্পর্টেন্ট কাজ কিন্তু। মিলির বিয়ে সম্পর্কিত কাজ!”
পরশ অট্ট হেসে বেগহীন গলায় বললেন,,
“আপনি কিন্তু আমায় এখন ও চিনেন নি শ্বশুড় আব্বা! যে বাস দিয়ে আমি কুমিল্লায় এসেছি না? ঠিক সেই বাস দিয়েই এখন আমি ঢাকায় ব্যাক করব! তখন কিন্তু ঢাকা গিয়ে তোষামোদ করে আমায় সঙ্গে করে নিয়ে আসতে হবে আপনার! নাও ডিসিশান ইজ ইউর’স! বিনা ঝামেলায় আপনি ১৫ মিনিটের মধ্যে আমায় পিক করতে আসবেন নাকি আমিই ঢাকায় ব্যাক করব?”
বাবা থমকালেন। শুকনো মুখে আমার দিকে মলিন দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন। আমি রাগে লুচির মতো ফুলছি। অসভ্য লোকটাকে আজ হাতের কাছে পেয়ে নেই। বাদড়ামো করার শখ মিটিয়ে দিব। নিরুপায় হয়ে আমি বাবার হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিয়ে তটস্থ গলায় লোকটিকে শুধিয়ে বললাম,,
“কি হয়েছে টা কি আপনার? কি শুরু করেছেন আপনি? বাবা যাচ্ছেন তো আপনাকে তুলে আনতে। অযথা কথা বাড়াচ্ছেন কেন বাবার সাথে!”
“ওহ্হো! শ্বশুড়, জামাইয়ের কথা বার্তার মধ্যে তুমি কেন বউ মানুষ হয়ে ঢুকতে গেলে? দেখি বাবাকে ফোনটা দাও। যা বলার আমি বাবাকে বলব!”
“নিকুচি করেছি আপনার যতসব অপ্রাসঙ্গিক কথা বার্তা! বাবার সাথে আমি আসছি। আপনার এই রং ঢং আমি এসে বের করছি!”
দুষ্টুমি ভুলে পরশ ক্ষনিকের মধ্যেই বেশ তৎপর গলায় বললেন,,
“এই না না টয়া। এই অবস্থায় তোমার আসতে হবে না। তার উপর অনেকটা রাত হয়ে গেছে। আচ্ছা, বাবাকে আমি আর ঘাঁটাব না। যত দ্রুত সম্ভব তুমি বাবাকে পাঠিয়ে দাও।”
টুং টাং শব্দে কলটা কেটে গেল! কত সিরিয়াস মানুষটা আমায় নিয়ে! বিষয়টা যখন আমায় নিয়ে তখনই তিনি হেয়ালী পূর্ণ আচরন পাল্টে তৎপর হয়ে উঠলেন! পিছু ঘুড়ে আমি বাবার দিকে ফোনটা এগিয়ে দিয়ে নতজানু হয়ে বললাম,,
“স্যরি বাবা! পরশের হয়ে আমি তোমার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি! মানুষটা একটু পাগলাটে স্বভাবের হলে ও ভেতর থেকে কিন্তু অনেক ভালো। তোমাকে ও পরশ অনেক ভালোবাসেন বাবা! যথেষ্ট সম্মান ও করেন!’
ঐ পাশ থেকে বাবার কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে আমি মাথা উঁচিয়ে উৎসুক দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই দেখলাম বাবা হনহনিয়ে হেঁটে সিঁড়ির দিকে অগ্রসর হচ্ছেন। রওনা হয়ে গেছেন বাস স্টপের উদ্দেশ্যে! না জানি বাবা কতটা খারাপ ভাবছেন পরশকে! লোকটা শুধু শুধু বাবার পিছনে লাগছেন। বাবা যদি হঠাৎ রেগে যান তখন কি হবে? সম্পর্কটা তখন খারাপ বৈ তো ভালো হবে না! কেন যে পরশটা এই সহজ বিষয়টাকে বুঝতে পারছেন না তাই আমার বোধগম্য হচ্ছে না।
,
,
রাত প্রায় ১১ টা বাজছে ঘড়িতে। পরশ হাত-পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসার ঘরের সোফায় মাথা এলিয়ে রেখেছেন। শ্বশুড় আব্বু এবং হিমেশ ভাই ধোঁয়া উঠা চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছেন। পাশে অবশ্য শ্বাশুড়ী মা ও আছেন। পিয়াস ভাই একটু আগে বাড়ি ফিরে গেছেন। বিয়ের কিছু বন্দোবস্ত এখন ও বাকি আছে তাই। বাবার বিক্ষুব্ধ দৃষ্টি পরশের ক্লান্ত মুখমন্ডলে সীমাবদ্ধ। বাবা পারছেন না ধোঁয়া উঠা গরম চা টা পরশের মুখমন্ডলে ফেকতে! শুকনো ঢোক গিলে আমি পরশের ঠিক পেছনের দিকটায় দাঁড়িয়ে আছি। মা এবং চাচীমনিরা ডাইনিং টেবিলে রাতের খাবার সাজাতে ব্যস্ত। চাচাতো বোনরা সব এক জোট হয়ে হল ঘরে সিনেমা দেখছে। তাদের সাথে অবশ্য পিয়ালী আপু এবং পায়েল ও আছে। লজ্জায় পায়েল হিমেশ ভাইয়ার মুখোমুখি হতে চাইছে না। অন্যদিক, হিমেশ ভাই অস্থির দৃষ্টিতে কেবল পায়েলকে খুঁজে চলছে! ইতোমধ্যেই আমার বাবা দাঁতে দাঁত চেঁপে আমায় শাসিয়ে বললেন,,
“তোর জামাইকে আর ও বল, ক্লান্ত শরীর নিয়ে আমায় হয়রানি করতে! কি দরকার ছিল শর্টকার্ট রাস্তা ছেড়ে পুরো কুমিল্লা শহর ঘুড়ে রাত ১১ টায় বাড়ি ফিরতে? ১৫ মিনিটের রাস্তা পাকা দেড় ঘন্টায় বাড়িয়েছে। নিজে ও ক্লান্ত হয়েছে পাশাপাশি আমাদের চার চারটে লোককে ও ক্লান্ত করে ছেড়েছে!”
শ্বাশুড়ী মা ফিক করে হেসে দিলেন। উপস্থিত সবাই তাজ্জব দৃষ্টিতে মায়ের দিকে তাকাতেই মা অট্ট হেসে বললেন,,
“বুঝলাম না! আমার এই ছেলে কার মতো হয়েছে। মানে শ্বশুড়কে কেউ এভাবে হেনস্তা করে? অবশ্য যেমন শ্বশুড় তেমনি তার জামাই!”
মা আর এক সেকেন্ড ও বসলেন না। আড়চোখে বাবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে একবার তাকিয়ে তাড়াহুড়ো করে স্থান পরিবর্তন করে রান্নাঘরে মা এবং চাচীমনিদের সাথে যুক্ত হলেন। শ্বশুড় আব্বু এবং হিমেশ ভাই মিটিমিটি হেসে উঠতেই পরশ ক্লান্তি ভুলে ফটাফট চোখ জোড়া খুলে সোজা হয়ে বসলেন। বাবার বিক্ষুব্ধ দৃষ্টিতে তৎপর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললেন,,
“আমি ছিলাম বলেই তো আপনি পুলিশ কেইস থেকে বেঁচে ফিরেছেন শ্বশুড় আব্বা! গাড়ির কোনো কাগজপত্র ছিল নাকি আপনার? আমি না থাকলে পারতেন সব দিক সামলে বাড়ি ফিরতে? কৃতজ্ঞতা স্বীকার করা উচিত আপনার! তা না করে আপনি অযথা আমাকেই দোষারোপ করছেন?”
“তোমার ক্ষেত্রে আমার কৃতজ্ঞতা আসে না বুঝেছ? ধড়িবাজ ছেলে একটা!”
“ধড়িবাজ বলুন আর যাই বলুন। সব শেষে কিন্তু আমি আপনার জামাই। আমার শ্বশুড় আব্বা হয়ে আপনি কিভাবে পারলেন এতটা অমনযোগী হতে? গাড়ির কাগজপত্র বাড়িতে ছেড়ে যেতে? হাও স্ট্রেন্জ্ঞ শ্বশুড় আব্বা!”
বাবা জায়গা থেকে খানিক নড়েচড়ে বসলেন। গলা খাঁকিয়ে প্রসঙ্গ পাল্টাতে মরিয়া হয়ে বললেন,,
“ক্লান্ত আমি! এখন অপ্রয়োজনীয় কোনো ব্যক্তির সাথে কথা বাড়াতে চাইছি না আমি!”
বসা থেকে উঠে দাঁড়ালেন বাবা। ইতোমধ্যেই পরশ ব্যাঙ্গাত্নক হেসে বাবার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বললেন,,
“আপনি কি কোনো ভাবে অস্বস্তিতে পড়ে গেলেন শ্বশুড় আব্বা? মানে লজ্জা টজ্জা পেয়েছেন নাকি?”
বাবা কটমট দৃষ্টিতে পরশকে উপেক্ষা করে আমার দিকে চেয়ে বললেন,,
“এই? একে খাইয়ে দাইয়ে মুখ বন্ধ কর! কাল সকাল ১০ টার আগে যেন এর ঘুম না ভাঙ্গে! মিলির বিয়ের এরেন্জ্ঞমেন্ট কাল থেকে শুরু হবে। এর পাগলামীর জন্য যেন আমার কাজে কোনো বিঘ্ন না ঘটে!”
বাবা সিঁড়ির দিকে পা বাড়াতেই পরশ পেছন থেকে বাবাকে ডেকে বললেন,,
“আরেহ্ শ্বশুড় আব্বা। যাচ্ছেন কোথায়? খাবারটা তো খেয়ে যান। আপনার জন্য কি আমি ও উপোস থাকব নাকি?”
“তোমার খাবার তুমি খেয়ে নাও। আমার খাবারের পেছনে তোমার পড়তে হবে না।”
“তা, কি খাব টা শুনি? বিফ বিরিয়ানির ব্যবস্থা আছে তো?”
“বাড়ির গিন্নিদের জিজ্ঞেস কর। আমাকে জিজ্ঞেস করছ কেন?”
ইতোমধ্যেই মা দ্রুত পায়ে হেঁটে এসে পরশের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে শুকনো গলায় বললেন,,
“বিরিয়ানি তো আজ করি নি বাবা! পোলাও, মোরগ, বিফ করেছি। কষ্ট করে আজ একটু ম্যানেজ করে নাও। কাল অবশ্যই বিরিয়ানির ব্যবস্থা করব!”
পরশ ক্রুর হেসে মাকে ইশারায় বললেন শান্ত হতে। অতঃপর চ্যালচ্যালিয়ে হেঁটে পরশ বাবার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বললেন,
“বিরিয়ানি ছাড়া কিন্তু আমি অন্য কিছু মুখে তুলব না শ্বশুড় আব্বা! ফুড ফান্ডা থেকে এক্ষনি বিরিয়ানি অর্ডার করে দিন!”
“আশ্চর্য তো! তোমার শ্বাশুড়ি আম্মা তো বললেন ই আজ ম্যানেজ করে নিতে!”
“ম্যানেজটা ঠিক আমার দ্বারা হয় না শ্বশুড় আব্বা। আমি বিরিয়ানি খেতে চেয়েছি। আপনি বিরিয়ানির ব্যবস্থা করে দিন ব্যাস শেষ!”
বাবা কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে বললেন,,
“বড় মেয়ের জামাই ও আমায় এতটা পেইন দেয় নি! এই ছোট মেয়ের জামাই আমায় যতটা পেইন দিচ্ছে!”
অপারগ হয়ে বাবা এই রাতে ফুড পান্ডায় বিরিয়ানি অর্ডার করলেন। আধ ঘন্টার মধ্যে হোম ডেলিভারি আসতেই পরশ ফ্রেশ হয়ে বাড়ির সবাইকে নিয়ে খেতে বসে পড়লেন। বাবা যদি ও খেতে চাইছিলেন না। পরশ জোরপূর্বক বাবার হাত চেঁপে ধরে বাবাকে নিয়ে খেতে বসলেন৷ খুব আনন্দ, হুল্লোড়ের মাঝেই খাবার সময়টা কেটে গেল। পায়েল এবং হিমেশ ভাইয়ার চোখাচোখির বিষয়টা খুব মজা লেগেছে আমার। এর মধ্যে আমি প্রায় অনেক বার এ ও খেয়াল করেছি বাবা আড়চোখে উৎফুল্ল দৃষ্টিতে পরশের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছিলেন! এই দৃষ্টিতে যেমন এক ধরনের আনন্দ ছিল তেমনি মায়া, মমতা, ভালোবাসা, এক ধরনের তৃপ্তি ও ছিল!
বাড়ির সবাইকে গুড নাইট জানিয়ে পরশ আমায় নিয়ে শোবার ঘরে প্রবেশ করলেন। দরজার খিলটা কোনো রকমে আটকে তিনি এক মুহূর্ত ব্যয় না করে আমায় জড়িয়ে ধরে আদুরে গলায় বললেন,,
“খুব ভালোবাসি বউ! জানো? এই এক সপ্তাহ কতটা মিস করেছি তোমায়? বিয়ের পরে ও কতটা দূরত্ব আমাদের মধ্যে! চাইলে ও তোমায় কাছে পাচ্ছি না, ছুঁতে পারছি না, ভালোবেসে জড়িয়ে ধরতে পারছি না!”
প্রসঙ্গ পাল্টে আমি বিষন্ন গলায় পরশকে শুধিয়ে বললাম,,
“কেন এভাবে ঘাঁটাচ্ছেন আমার বাবাকে? বাবা তো মনে মনে কষ্ট ও পেতে পারেন তাই না? কেন করছেন এমন ছেলে মানুষী?”
“উফফফ! ছাড় তো ঐ প্রসঙ্গ! আমি জানি, বাবা আমার ব্যবহারে মোটে ও কষ্ট পাচ্ছেন না। উল্টে প্রতিটা ঘটনাই বাবা খুব আনন্দের সাথে মেনে নিচ্ছেন। রাগী মুখের আড়ালে যে প্রাণোচ্ছ্বল মুখভঙ্গি লুকিয়ে আছে তা বেশ বুঝতে পারি আমি!”
“জ্যোতিষ বিদ্যা রপ্ত করেছেন বোধ হয়? এত সিউর কিভাবে?”
আহ্লাদি স্বরে পরশ আমার গাল দুটো টেনে বললেন,,
“ওরে আমার মেয়ের মাম্মামটা রে। জিজ্ঞাসাবাদ করা একটু বন্ধ করুন এবার। বরের দিকে একটু নজর দিন। আপনার আদরের অভাবে দেখুন কত রোগা, সোগা হয়ে গেছে আপনার বরটা!”
ক্রুর হেসে আমি এক এক করে পরশের প্রতিটা শার্টের বাটন খুলে উন্মুক্ত বুকের মাঝখানে দীর্ঘ কয়েক জোড়া চুমো এঁকে বললাম,,
“সত্যিই তো আমার বরটা অনেক শুকিয়ে গেছে। একদম যত্ন নেওয়া হয় নি আমার বরটার৷ আচ্ছা? আদরের অভাবে ও কি মানুষের শরীর এতটা শুকিয়ে যায়?”
পরশ অতি উত্তেজিত হয়ে শক্ত হাতে আমায় বুকের পাজরে চেঁপে ধরে বললেন,,
“হুম যায়! যার ক্ষতিপূরণ তোমার এক্ষনি, এই মুহূর্তে পুষিয়ে দিতে হবে!”
পরশ আর এক মুহূর্ত বিলম্ব করলেন না। পাজা কোলে তুলে নিলেন আমায়। রুমের লাইটটা অফ করে আমায় নিয়ে বিছানায় শায়িত হলেন। ভারী শরীরটাকে আমার গাঁয়ের উপর প্রতিস্থাপন করে লোকটা আমার সমস্ত মুখমন্ডলে চুমো খেয়ে ঘোর জড়ানো গলায় বললেন,,
“আমার বউটা ও খুব শুকিয়ে যাচ্ছে! নিয়মিত খাওয়া দাওয়া করছ তো তুমি? এই অবস্থায় কিন্তুু অধিক পরিমানে খেতে হয়। নিজের খুব যত্ন নিতে হবে বউ৷ তবেই আমাদের বেবি ভালো থাকবে।”
প্রেমময়ী দৃষ্টিতে আমি পরশের প্রেমপিপাসু দৃষ্টিতে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে বললাম,,
“রাখছি তো নিজের খেয়াল। একটু বেশিই খেয়াল রাখা হচ্ছে। নিজের মা, বাবা, পরিবার এবং শ্বাশুড়ী, ননদের আদর-যত্নে খুব ভালোই খেয়াল রাখা হচ্ছে আমার!”
পরশ মৃদ্যু হাসলেন। কপালে ওষ্ঠদ্বয় ঠেকিয়ে বললেন,,
“ঢাকায় ফেরার পর তোমার বরই সারাক্ষন তোমার খেয়াল, যত্ন রাখবে বউ! আমি একাই যথেষ্ট আমার বউয়ের জন্য!”
নির্ভেজাল হেসে আমি পরশের চুলে হাত বুলিয়ে দিতেই পরশ ক্রুর হেসে আমার ঠোঁট জোড়া আঁকড়ে ধরলেন। তৎপর হয়ে উঠলেন তিনি আমায় আপন করে নিতে। আমি ও আটকালাম না লোকটিকে। তৃপ্তির হাসি হেসে লোকটাকে সঙ্গ দিতে লাগলাম।
সকাল ৮ টা বাজতেই আমি সদ্য শাওয়ার সেরে রান্নাঘরে চলে এলাম পরশের জন্য কফি বানাতে। প্রায় পাঁচ মিনিট দেরি হতেই পরশ গলায় টাওয়াল ঝুলিয়ে উদ্দেশ্যহীন ভাবে হেঁটে বাবার রুমের দরজায় দাঁড়ালেন। কফির মগ হাতে নিয়ে আমি পরশের পিছু পিছু ছুটতেই পরশ বাবার রুমের দরজায় কড়াঘাত করে হাঁক ডাক ছেড়ে বললেন,,
“শ্বশুড় আব্বব্বাব্বা… আপনার মেয়েকে বলুন, তাড়াতাড়ি আমার জন্য কফি করে আনতে!”
চলবে….?