তোমায়_পাবো_বলে,পর্ব_৪
নিশাত_জাহান_নিশি
“খুব কষ্ট হচ্ছে টয়ার জন্য না? খুব কষ্ট হচ্ছে? অথচ আমার কষ্টটা তোর চোখেই পড়ল না? কি অন্যায় করেছিলাম আমি? যার জন্য টয়ার বড় বোন আমার সাথে চিট করেছিলো? কোথায় ছিলো ঐদিন তোর নীতিকথা? হাজার চেষ্টা করে ও কি ফেরাতে পেরেছিলি ফারিনকে?”
“ফারিন অন্যায় করেছিলো মানছি। তবে এতে টয়ার কি দোষ ছিলো? একজনের রিভেঞ্জ তুই আরেকজনের উপর অন্যায়ভাবে নিলি?”
“হ্যাঁ নিয়েছি। যা করেছি আমি বেশ করেছি। কোনো অপরাধবোধ কাজ করছে না আমার। উল্টে আনন্দ হচ্ছে। আমার সাথে করা অন্যায়ের রিভেঞ্জ নিতে পেরেছি আমি!”
হাজারো প্রশ্ন, কৌতুহল, উদ্বেগ নিয়ে আমি দুজনের মুখোমুখি দাঁড়ালাম। হিমেশের হাত থেকে পরশ ভাইয়ার শার্টের কলারটা ছাড়িয়ে আমি উচ্চ আওয়াজে হিমশের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বললাম,,
“আমার আপু আপনার সাথে কি অন্যায় করেছিলেন? কিভাবে আপনাকে ঠকিয়েছিলেন? কোন অন্যায়ের রিভেঞ্জ নিলেন আপনি আমার থেকে?”
হিমেশ কঠিন দৃষ্টিতে আমার দিকে চেয়ে গলা উঁচিয়ে বললেন,,
“কি না করে নি তোমার বোন আমার সাথে? আমার নিঃস্বার্থ ভালোবাসার সুযোগ নিয়ে সে আমার সাথে প্রতারনা করেছিলো। আমাকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সে অন্য কাউকে বিয়ে করে নিয়েছিলো। টাকা, পয়সা, ধন, সম্পত্তি দেখে লোভ সামলাতে পারে নি তোমার বোন। তুমি সেই লোভী মেয়েটার বোন হয়ে কিভাবে এক্সপেক্ট করো আমি তোমার বোনের পরম শত্রু হয়ে ও তোমাকে বিয়ে করব? ভালোবেসে তোমাকে আপন করে নিবো?”
নিরুত্তর, নিশ্চুপ, নিস্তব্ধ আমি। নির্বিকার নির্লপ্ত ভঙ্গিতে চোখের জল ছাড়ছি। হিমেশের বলা কথা গুলো বিশ্বাস করতে বড্ড কষ্ট হচ্ছে আমার। আমার বড় আপু কখনো কারো সাথে সম্পর্কে জড়াতে পারে না! কাউকে প্রতিশ্রুতি দিয়ে সেই প্রতিশ্রুতি ভাঙ্গতে ও পারে না! আমার সামনে থাকা ভয়ঙ্কর খারাপ লোকটা নিশ্চয়ই মিথ্যে বলছেন। নিজের করা অন্যায়টা ধামা চাঁপা দেওয়ার জন্যই লোকটা আমার আপুর উপর আঙ্গুল তুলছেন! যদি তাই হয়ে থাকে তবে এই খারাপ লোকটাকে আমি কিছুতেই ছাড়ব না। এক্ষনি, এই মুহূর্তে গলা চেঁপে ধরব।
আর এক মুহূর্ত বিলম্ব করলাম না আমি। তেজর্শিনী ভাব নিয়ে হিমেশের শার্টের কলার চেঁপে ধরে বললাম,,
“মিথ্যে বলছেন আপনি। নিজের অন্যায়টা ঢাকার জন্য আপনি আমার আপুর উপর মিথ্যে আরোপ দিচ্ছেন। আমি আপনার কথা এক রত্তি ও বিশ্বাস করি না৷ আপনি হলেন চূড়ান্ত লেভেলের একজন খারাপ লোক৷ আপনার কথা বিশ্বাস করা ও পাপ!”
হিমেশ শক্ত কন্ঠে বললেন,,
“বিশ্বাস না হলে পরশকে জিগ্যাসা করো। অন্তত পরশকে তো তুমি ভরসা করো। যদি পরশের কথাতে ও তোমার বিশ্বাস না হয় তবে তোমার বোন ফারিনকে সরাসরি জিগ্যেস করো। তাহলেই সবটা জলের মতো ক্লিয়ার হয়ে যাবে!”
হিমেশের শার্টের কলারটা ছেড়ে আমি পরশ ভাইয়ার দিকে জিগ্যাসু দৃষ্টিতে তাকালাম। গড়িয়ে পড়া চোখের জল গুলো মুছে আমি পরশ ভাইয়ার সম্মুখস্ত হয়ে বললাম,,
“কি হলো বলুন? হিমেশ যা বলছেন সব সত্যি? আমার আপুর সাথে সত্যিই হিমেশের সম্পর্ক ছিলো? দুজন দুজনকে ভালোবাসতেন? আপু কি সত্যিই হিমেশকে ঠকিয়েছিলেন?”
পরশ ভাই নাক টেনে মাথা নিচু করে ম্লান কন্ঠে বললেন,,
“সব সত্যি। হিমেশ যা বলছে সব সত্যি। ফারিন সত্যিই হিমেশকে ঠকিয়েছিলো। অনেক বুঝানোর পরে ও ফারিনকে আটকানো যায় নি। পরিবার থেকে ফারিনের জন্য যাকে পাএ হিসেবে ঠিক করা হয়েছিলো, ফারিন ঠিক তাকেই বিয়ে করে নিয়েছিলো। হিমেশের সম্পর্কে পরিবারকে কখনো কিছু জানানোর প্রয়োজন মনে করি নি না কখনো হিমেশকে সুযোগ দিয়েছিলো তোমাদের পরিবারে বিয়ের প্রস্তাব পাঠানোর। যদি ও হিমেশকে তোমার পরিবার যোগ্য পাএ হিসেবে মেনে নিতেন। কারন, হিমেশের যোগ্যতা ও কিন্তু কম ছিলো না। ওয়েল সেটেল্ড প্লাস ফ্যামিলির অভার অল ব্যাকগ্রাউন্ড ও ভালো ছিলো। ফারিন সত্যিই ঐদিন হিমেশের সাথে অন্যায় করেছিলো। আমি ও অনেক বুঝানোর চেষ্টা করেছিলাম ফারিনকে। তবে ফারিন কারো কথাই কানে তুলে নি। নিজে যা ভালো মনে করেছিলো, ঠিক তাই করেছিলো।”
মানতে পারছিলাম না কথা গুলো। দুঃস্বপ্নে ও ভাবি নি আপুর বিরুদ্ধে বাইরের দু দুটো লোকের কাছে আমার এত্তো এত্তো কথা শুনতে হবে। যে কথা গুলো মেনে নেওয়া আদৌ আমার পক্ষে সম্ভব হবে না! শাড়ির আঁচল চেঁপে ধরে হেচকি তুলে কাঁদছিলাম। শেষ বারের মতো হিমেশের দিকে তাকিয়ে আমি দৌঁড়ে রুম থেকে বেরিয়ে এলাম। পেছন থেকে পরশ ভাইয়ার হাক ডাকের আওয়াজ আমার কর্নকুহরে স্পষ্টত বাজছে। সম্পূর্ণ বিষয়টাকে কর্ণগোচড় করে আমি এক ছুটে হোটেল থেকে বেরিয়ে রাস্তার পাশ ঘেঁষে দাঁড়ালাম। রাত প্রায় ১১ টার কাছাকাছি হলে ও রাস্তাঘাট কোলাহলপূর্ণ ছিলো না এক রত্তি ও। শত শত পথচারীদের পদচারনে মুখরিত ছিলো রাস্তার আশপাশটা। যানবাহনের বিকট আওয়াজ কানের পোকা নাঁড়িয়ে দিতে যথেষ্ট। রাতের হিম শীতল হাওয়া যতোটা না শরীরে গাঁয়ে কাটা তুলে দিচ্ছিলো তার’চে অত্যধিক কাঁটা তুলছিলো একটু পূর্বের সম্মুখীন হওয়া জীবনের সব’চে তেঁতো সত্যিটা!
ইতোমধ্যেই মনে হলো কেউ নিঃশব্দে এসে আমার পাশাপাশি দাঁড়িয়েছেন। দ্বিতীয় কারো অস্তিত্ব আমি টের পেতেই অশ্রুসিক্ত চোখে পাশ ঘুড়ে তাকালাম। শান্ত দৃষ্টিতে পরশ ভাই আমার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বললেন,,
“শান্তি তো এবার? অজানা সব প্রশ্নের উত্তর পেয়েছ তো?”
পরশ ভাইয়ার থেকে দৃষ্টি ঘুড়িয়ে আমি আহত কন্ঠে বললাম,,
“হুম পেয়েছি।”
“দেট’স ফাইন। এবার অন্তত মনোস্থির করে ফিউচার নিয়ে ভাবো। বিয়ে ভেঙ্গে যাওয়া মানেই, জীবন থেমে যাওয়া নয়। মনে লালন করা এতো গুলো বছরের স্বপ্ন, আশা, ভরসা, আকাঙ্ক্ষা গুলো ভেঙ্গে যাওয়া নয়। উপর ওয়ালা হয়তো তোমাকে আরো একবার সুযোগ করে দিয়েছেন নিজের ভেঙ্গে যাওয়া স্বপ্ন গুলোকে নতুন উদ্যমে পূরন করার। নিজের লক্ষ্যে বিনা দ্বিধায় এগিয়ে যাওয়ার। বলা বাহুল্য, উপর ওয়ালা হয়তো তোমার জন্য অধিক ভালো কিছু ভেবে রেখেছেন। তুমি যা চেয়েছ বা চাইছ তার’চে অধিক কিছু।হয়তো খুব শীঘ্রই উপর ওয়ালা তোমাকে সেই প্রাপ্যটা ফেরত দিবেন!”
প্রসঙ্গ পাল্টে আমি অশ্রুসিক্ত কন্ঠে বললাম,,
“আমি বাড়ি ফিরতে চাই পরশ ভাই। প্লিজ আমাকে বাড়ি পৌঁছে দিন।”
“সিরিয়াসলি টয়া? এই মাঝরাতে তুমি বাড়ি ফিরতে চাইছ?”
“নিজের বাড়ি ফিরতে চাইছি। এক্ষনি, এই মুহূর্তে!”
“স্যরি টু সে টয়া। এই মুহূর্তে আমি নিজে ও কোথাও যেতে পারব না এমনকি তোমাকে ও বাড়ি পৌঁছে দিতে পারব না। কোনো রূপ রিস্ক নিতে চাইছি না আমি। পাশে একটা যুবতী মেয়ে থাকা মানেই হলো হাজারটা রিস্ক। মাঝরাতে ছেলে, বুড়ো, বখাটের কুড়কুড়ানি বাড়ে। কারো সাথে ঝগড়া, বিবাধ, ফ্যাসাদে যেতে চাইছি না আমি।”
মাথা নিচু করে আমি নাক টেনে বললাম,,
“কি চাইছেন কি আপনি? কোথায় থাকতে চাইছেন এই রাতটা?”
“হোটেলে। যে হোটেল থেকে আমরা এইমাএ বেরিয়ে এলাম!”
বিস্মিত আঁখিপল্লবে আমি পরশ ভাইয়ার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বললাম,,
“হিমেশ যে হোটেলে আছেন ঐ হোটেলে?”
পরশ ভাই ভ্রু যুগল ঈষৎ কুঁচকে ক্ষীন কন্ঠে বললেন,,
“হুম। অবাক হওয়ার কি আছে?”
“স্যরি পরশ ভাই। আমি ঐ খারাপ লোকটার সাথে একই হোটেলে থাকতে পারব না। মাফ করবেন আমায়!”
“এই? আমি কি তোমায় বলেছি? হিমেশের সাথে একই হোটেলে, একই রুমে থাকতে? আমি জাস্ট তোমায় বলেছি হিমেশের পাশের রুমটায় আজ রাতটা এডজাস্ট করে নিতে। হিমেশের সাথে আমি এক রুম শেয়ার করে নিবো৷ কাল সকালেই আমরা দুজন ঢাকা ব্যাক করব।”
কিছু সময় ভেবে চিন্তে আমি পরশ ভাইয়ার দিকে স্থির দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললাম,,
“ওকে। তবে কাল দুপুরের মধ্যেই আমি আপনাদের বাড়ি ছেড়ে কুমিল্লায় রওনা হবো!”
সঙ্গে সঙ্গেই পরশ ভাই আমার থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলেন। চোখে, মুখে নিরাগতার ছাপ ফুটিয়ে কেমন যেনো আহত কন্ঠে বললেন,,
“এজ ইউর উইশ।”
আর এক মুহূর্ত ও বিলম্ব করলেন না পরশ ভাই। হোটেলের গেইটে মোড় নিয়ে পেছন থেকে শক্ত গলায় আমায় ডেকে বললেন,,
“চলে এসো। রাস্তায় বখাটে ছেলেদের প্রাদুর্ভাব আছে কিন্তু!”
ছুটলাম পরশ ভাইয়ার পিছু পিছু। ডানে, বায়ে, পেছনে তাকাতে ও ভয় করছে। সত্যিই যদি কোনো বখাটে পিছু নেয়! ভাবতেই অন্তর্আত্তা কেঁপে উঠছে। রিসেপশনিস্টের সাথে কথা বলে পরশ ভাই একটা রুম বুক করে নিলেন। হিমেশের পাশের রুমটাই বুক করতে হলো আমাদের। এছাড়া আর কোনো রুম আপাতত খালি নেই। পরশ ভাই অনেক ফোর্স করে ও আমায় রাতের খাবার খাওয়াতে রাজি করাতে পারেন নি। পরশ ভাই নিজে ও আমার জন্য উপোস রয়ে গেলেন। হিমেশের মুখোমুখি দাঁড়াতে ও বিবেকে বাঁধছিলো আমার। তাই হিমেশের রুমটা কোনো রকমে ক্রস করে আমি দৌঁড়ে পাশের রুমটায় প্রবেশ করে দরজার খিল লাগিয়ে দিলাম!
দরজায় পিঠ ঠেকিয়ে ঢুকড়ে কাঁদছিলাম। বাড়ি ফিরে যেতে ইচ্ছে করছে খুব। বিশেষ করে বড় আপুর মুখোমুখি হওয়ার জেদটা যেনো অধিক দৃঢ় হয়ে উঠছিলো। বড় আপুর মুখ থেকে সব সত্যিটা জানতে চাই আমি। একতরফা কোনো কথাই বিশ্বাসযোগ্য হচ্ছে না আমার। উভয় দিকটা জেনে শুনেই তবে হিমেশ এবং পরশ ভাইয়ার কথা বিশ্বাসযোগ্য হবে আমার।
বিছানায় এপাশ ওপাশ করছিলাম। ঘুম ধরা দিচ্ছিলো না দুচোখে। যেমন অস্থিরতা কাজ করছিলো তেমন ক্ষুধামন্দা ও কাজ করছিলো। রাত যতো গভীর হচ্ছিলো ক্ষুধার্ত ভাবটা যেনো ততোই সমানুপাতিক হারে বাড়ছিলো। ক্ষুধার যন্ত্রনা সহ্য করতে না পেরে আমি অপারগ হয়ে রুম থেকে বেরিয়ে দারুন দ্বিধা দ্বন্ধে ভুগে হিমেশের রুমের দরজায় টোকা মারতেই অকস্মাৎ ভেজানো দরজাটা নিঃশব্দে খুলে গেলো। বিস্মিত চিত্তে আমি ছোট ছোট পা ফেলে রুমে প্রবেশ করতেই ব্যালকনী থেকে সিগারেটের বিশ্রি গন্ধ নাকে এসে ঠেঁকছিলো। নাকটা টিপে ধরে আমি ব্যালকনীর দিকে পা বাড়াতেই হিমেশের শক্ত কন্ঠস্বর আমাকে কর্নকুহরে মন্থর গতিতে প্রতিধ্বনিত হলো। হিমেশ যেনো বলছিলেন,
“এখনো বলছিস না কেনো? ভালোবাসিস?”
আর এক পা সামনে বাড়াতেই পরশ ভাইয়ার অট্ট হাসি আমার কর্ণপাত হলো। উচ্চ শব্দে হেসে পরশ ভাই বললেন,,
“আমার মহল্লায় সে প্রসিদ্ধ হলে ও, তার মহল্লায় আমি নিষিদ্ধ! আমার মহল্লার প্রতিটা জনপ্রানী, প্রকৃতি, আকাশ, বাতাস, সাগর, পাহাড় সবার কাছে সে মাশহুর হলে ও তার মনের অলিগলিতে পরশের কোনো অস্তিত্বই নেই।”
“কি বলিস? একমাসে ও সে বুঝতে পারে নি কিছু?”
“বুঝালে তো বুঝবে? আমি কখনো বুঝতেই দেই নি!”
“কিন্তু কেনো? না বুঝালে সে বুঝবে কিভাবে?”
“বুঝাতেই হবে এমন তো কোনো নিয়ম নেই। দু দিনের আলাপে প্রেম, ভালোবাসা, প্রতিশ্রুতি। এর দুদিন পর আবার ব্রেকআপ। এসবে আর যাই হোক, প্রকৃত ভালোবাসা পাওয়া যায় না। ভালোবাসা দুদিনে তৈরী হয় না ইয়ার। একটা মানুষকে বুঝতে, অনুভব করতে, তার প্রতি প্রেম, ভালোবাসা তৈরী হতে কমপক্ষে বছর তো লেগেই যায়। প্রকৃত ভালোবাসা তো তাই, যার সাথে দু সেকেন্ড বসলে তার সম্পর্কে জানার প্রতি আগ্রহ বাড়ে, তার পাশে অন্তত দু সেকেন্ড বসে যে একটা প্রশান্তি অনুভব করা যায় না? এই প্রশান্তির অনুভূতিটাকেই বলে ভালোবাসা! টয়া যদি আমার পাশে জাস্ট দু সেকেন্ড বসে ও সেই প্রশান্তির অনুভূতিটা পায় না? তবেই সে বুঝতে পারবে শুধু আমিই নই, সে ও আমাকে অতোটাই ভালোবাসে, যতোটা আমি বাসি।”
হতভম্ব আমি। আকস্মিকতার চূড়ান্ত পর্যায়ে বোধ হয় আরোহন করছি। এই মুহূর্তে নিজেকে ধাতস্থ করার কোনো উপায় বুদ্ধি খুঁজে পাচ্ছি না আমি। নিজ কানকে ও বিশ্বাস করতে বুকে চিনচিনে একটা কষ্টের অনুভূতি হচ্ছে। শুধুমাএ এক মাসের পরিচয়ে কেউ কাউকে এতোটা ভালোবাসতে পারে? উনি তো নিজ মুখেই বললেন, একটা মানুষকে চিনতে, জানতে, তাকে বুঝতে বছর লেগে যায়। তবে উনি কিভাবে পারলেন মাএ এক মাসের পরিচয়ে আমাকে ভালোবাসার মানুষ হিসেবে দাবী করতে?
সমস্ত জল্পনা কল্পনাকে প্রশ্রয়ের অধীনে রেখে আমি অগ্রে আরো এক কদম বাড়াতেই হিমেশের রূঢ় কন্ঠস্বরে শুনতে পেলাম,,
“অন্তত আমি তো জানি পরশ। টয়ার প্রতি ভালোবাসা তোর একমাসে তৈরী হয় নি৷ দু বছরের ও অধিক সময় ধরে তুই টয়াকে ভালোবেসে এসেছিস। আমি বুঝতে পেরেছিলাম, সে দু বছর পূর্বে ফারিনের সাথে প্রথমবার টয়াকে দেখে নিজের অজান্তেই তুই ভালোবেসে ফেলেছিলি। মাঝখানে ফারিনের বিয়ে হয়ে গেলো। প্রতিশোধপরায়ন হয়ে আমি টয়াকে বিয়ে করার প্রস্তাব রাখলে ও বন্ধুর ভালোবাসা হিসেবে টয়াকে আমার হাতে ছেড়ে দিতে তুই বাধ্য হয়েছিলি। আমি তো প্রথম থেকেই জানতাম। টয়াকে আমি বিয়ে করব না। টয়া অবশেষে তোরই হবে। বিশ্বাস কর? আমি মন থেকে চাইছি টয়াকে তুই বিয়ে কর। টয়াকে বুঝিয়ে দে, কতোটা ভালোবাসিস তুই টয়াকে।”
অকস্মাৎ পরশ ভাই উগ্র কন্ঠে হিমেশকে বললেন,,
“শালা। শুধুমাএ তোর বোকামোর জন্যই টয়া আমাকে রীতিমতো ভুল বুঝতে বাধ্য হচ্ছে। তোর কি মনে হয়? এতো বড় ব্ল্যান্ডারটা করার পর তোর বন্ধুকে টয়া চোখ বুজে বিশ্বাস করে নিবে? আমাকে মানতে বাধ্য হবে? আমার ভালোবাসাকে স্বীকার করবে? ভাববে দুই বন্ধুই একই ধাঁচের! প্রতারক, বিশ্বাসঘাতক!”
চলবে…?