তোমায়_পাবো_বলে,পর্ব_৯,১০

0
1169

তোমায়_পাবো_বলে,পর্ব_৯,১০
নিশাত_জাহান_নিশি
পর্ব_৯

“তুই হাসছিস কেনো টয়া? আমার কথা তোর বিশ্বাস হচ্ছে না? আমি সত্যিই হিমেশকে নয় জিহাদকে ভালোবাসতাম!”

মুহূর্তের মধ্যেই দম ফাঁটা হাসিতে বিঘ্ন ঘটল আমার। সন্দিহান দৃষ্টি পড়ল আপুর অস্থির মুখের গড়নে। ভ্রু যুগল খড়তড়ভাবে কুঁচকে আমি আপুর দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বললাম,,

“কি বললে তুমি? হিমেশকে ভালোবাসতে না তুমি?”

এক অস্থির অনুতাপে আপু মাথা ঝুঁকাতে বাধ্য হলেন। অতঃপর ঋজু কন্ঠে বললেন,,

“প্রথম দিকে অনেকাংশেই ভালোবাসতাম। তবে পরিশেষে যখন জিহাদের সাথে আমার বন্ধুত্ব হয়, দুজন দুজনকে চিনতে শুরু করি, জানতে শুরু করি, বুঝতে শুরু করি। তখন থেকেই কেনো জানি না অল্প স্বল্প করে হিমেশের প্রতি আমার ভালো লাগা, ভালোবাসার টান গুলো ক্রমশ হ্রাসের দিকে ধাবিত হচ্ছিলো। সমস্ত অনুভূতি গুলো আয়ত্তাধীন হয়ে উঠছিলো। জিহাদের অস্তিত্বকেই ক্রমান্বয়ে আষ্টেপৃষ্টে আঁকড়ে ধরছিলো। অতঃপর আমি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হই যে, হিমেশকে নয় জিহাদকেই আমি জীবনসঙ্গী হিসেবে পেতে চাই! ঠিক হলো ও তাই। জিহাদকেই আমি জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়েছিলাম!”

আপুর স্বার্থপরায়নতার ভাবার্থ বুঝা মাএই ফট করে আমার মাথায় অঢেল রাগ চেঁপে বসল। এতোটাই বিশ্বাসঘাতক আমার আপু? প্রথম ভালোবাসাকে ভুলে সে দিব্যি দ্বিতীয় ভালোবাসা নামক মানুষটাকে অন্তর্পনে গ্রহন করে নিলো? বিবেকে কিঞ্চিৎ পরিমান বাঁধছিলো না তখন? একবার ও জ্ঞানে আসে নি যে, আমি কাউকে নির্মমভাবে ঠকাচ্ছি? তার অফুরন্ত ভালোবাসা নিয়ে খেলা করছি? তার বিশ্বাস ভেঙ্গে, চূড়ে অন্য কারো সাথে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখছি? প্রেম অন্ধ জানতাম, তবে প্রেমে পড়া মানুষগুলো এতোটাই অন্ধ আর নিচ প্রকৃতির হয় তা আজ জানলাম। রূঢ় কন্ঠে আমি আপুর দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বললাম,,

“তুমি জানতে না? হিমেশর সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছিলো?”

“জানতাম! তবে এটা জানতাম না, হিমেশ রিভেঞ্জ নেওয়ার জন্যই তোকে বিয়ে করছিলো!”

“সর্বনাশ করলে তো আমার? এবার তুমি শান্তি হয়েছ? ফিলিংস সো হ্যাপি না? সেলিব্রেট করার স্কোপ খুঁজছ তাই তো? ব্যাপার না, সেই স্কোপটা ও আমি তোমাকে তৈরী করে দিবো। পুরো পরিবার সেই সেলিব্রেশানে প্রেজেন্ট থাকবে।”

ঠান্ডা মাথায় আপুকে হুমকি দিয়ে আমি প্রখর রাগান্বিত ভাবমূর্তি নিয়ে আপুর সম্মুখ থেকে প্রস্থান নেওয়ার পূর্বেই আপু পেছন থেকে আমার হাতটা টেনে ধরে অসহায় কন্ঠে বললেন,,

“প্লিজ বনু। কাউকে এই ব্যাপারে কিছু বলিস না। সংসারটা ভেঙ্গে যাবে আমার। জিহাদ আমাকে ভুল বুঝবে। পরিবারের সবাই আমাকে ছিঃ, চিৎকার করবে। সমাজে মুখ দেখাতে পারব না আমি। প্লিজ থেমে যা বনু, প্লিজ!”

“যখন একটা মানুষের সাথে দিনের পর দিন অন্যায় করেছিলে। তার অগোচড়ে তাকে রীতিমতো ঠকাচ্ছিলে। তার কোমল হৃদয়টাকে বেদনায় জর্জরিত করছিলে, তখন এই কথা গুলো মাথায় আসে নি তোমার? সমাজ, পরিবার, জিহাদ ভাই তাদের কথা একবার ও স্মরনে আসে নি?”

কিঞ্চিৎ মুহূর্ত থেমে আমি পুনরায় বললাম,,

“খামোখা আমি হিমেশকে দোষারোপ করছিলাম। এখন তো মনে হচ্ছে হিমেশ যা করেছে একদম ঠিক করেছে। তোমার মতো দ্বিমুখী মেয়ে মানুষদের ঠিক এভাবেই শাস্তি দেওয়া উচিত! বোনের বিয়ে ভেঙ্গে যাওয়াতে খুব কেঁদেছিলে না? দুদিন না খেয়ে ছিলে, রাতের পর রাত আমার সাথে নির্ঘুম কাটিয়েছিলে, অনুতাপ, অনুশোচনায়, অপরাধবোধে প্রতিনিয়ত দ্বগ্ধ হচ্ছিলে? তখন সত্যিই ভেবেছিলাম বোনের কষ্টে তুমি হয়তো সত্যিই খুব কষ্ট পাচ্ছ। কিন্তু এখন তো সবটা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার হয়ে গেলো। সত্যিটা জেনে শুনেই তুমি কষ্ট পাচ্ছিলে আপু! তোমার পাপের ফল তোমার ছোট বোনকে ভোগ করতে হয়েছে বলেই তুমি অনুশোচনায় কাতরাচ্ছিলে।”

আপু আমার হাতের বাঁধনটা ছেড়ে দিলেন। অতঃপর ফুঁফিয়ে কেঁদে দৌঁড়ে সিঁড়ি টপকে দুতলায় উঠে গেলেন। দীর্ঘশ্বাস নির্গত করে আমি ধীর গতিতে হেঁটে ড্রইং রুমের দিকে পা বাড়ালাম। ইতোমধ্যেই পরশ ভাই উপস্থিত সবাইকে উপেক্ষা করে জড়তা কাটিয়ে অস্থির কন্ঠে আমায় ডেকে বললেন,,

“টয়া?”

মাথা উঁচিয়ে আমি প্রশ্নবিদ্ধ চোখে পরশ ভাইয়ার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম। পরশ ভাই সংকোচবোধ করে শার্টের কলারটা টেনে আমার দিকে সরল দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললেন,,

“ঢাকায় ব্যাক করতে হবে আমার! ইউ নো না? ইম্পর্ট্যান্ট কাজ আছে?”

মুখ খুলে প্রত্যুত্তর করার পূর্বেই আমার সমবয়সী কাজিনরা সমস্বরে আওয়াজ তুলে পরশ ভাইকে বললেন,,

“এই না না। আপনার কোথাও যাওয়া হচ্ছে না ভাইয়া। বড় আপুনির বিয়ে না খেয়ে আপনার কোথাও যাওয়া হচ্ছে না!”

পরশ ভাই ভ্যাবাচ্যাকা খেতেই আম্মু নরম গলায় পরশ ভাইকে শুধিয়ে বললেন,,

“দুটো দিন থেকে গেলে কি হয় বাবা? আমার মেয়ে ও তো দীর্ঘ এক মাস তোমাদের বাড়িতে থেকে, খেয়ে, পড়ে এসেছে। আমাদের ও একটু সুযোগ করে দাও, তোমার সেবা-যত্ন করার, আদর যত্ন করার, মন ভরে একটু আপ্যায়ন করার।”

মেঝো চাচী, ছোট চাচী পেছন থেকে পরশ ভাইকে আবদারের স্বরে বললেন,,

“থেকে যাও না পরশ প্লিজ। দুটো দিনেরই তো ব্যাপার। আমাদের বাড়িতে যখন বিয়ের অনুষ্ঠান হয় না? তখন পুরো এলাকায় নাঁড়া পড়ে যায়। বিয়ে বাড়ি পুরো জমজমাট, আনন্দ-অনুষ্ঠানের রোল পড়ে যায়, নাচ-গান, হৈ-হুল্লোড়ে মেতে উঠে পুরো মহল্লা। আশা করছি তোমার ও ভালো লাগবে! এনজয় করবে খুব।”

পরশ ভাই রাগে গজগজ করে ক্ষিপ্র দৃষ্টি নিক্ষেপ করছেন আমার দিকে। আমি ঠোঁট উল্টিয়ে ইশারায় বললাম,,

“আমি কি করব? পারলে আপনি সামলান!”

পরশ ভাই রাগে টুকটুকে রঙ্গিন হয়ে কপাল ঘঁষতেই সদর দরজা থেকে আব্বুর আগমন ঘটল। হাসি হাসি মুখে আব্বু ড্রইং রুমের দিকে পা বাড়িয়ে আম্মুকে উচ্চ আওয়াজে শুধিয়ে বললেন,,

“শুধু পরশকেই থাকতে বলছ কেনো সাইদা? ছেলেটার গোটা পরিবার কি দোষ করেছে? খবর দাও উনাদের। একে-অপরের সাথে আনন্দ-অনুষ্ঠান ভাগাভাগি করে নেই।”

পরশ ভাই নিরুপায় হয়ে অসীম রাগ আয়ত্তের চেষ্টায় কপাল চাঁপড়াতে আরম্ভ করলেন। মেঝো চাচীর মেয়ে স্নিগ্ধা হঠাৎ উদ্বিগ্ন হয়ে পরশ ভাইয়ার দিকে উঁকি মেরে বললেন,,

“কি হয়েছে ভাইয়া? মাথায় যন্ত্রনা হচ্ছে?”

হু হা শব্দে হেসে উঠলাম আমি। উপস্থিত সবাই আমার দিকে বিস্মিত দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন। পরশ ভাই পারছেন না, চোখ দিয়ে আমায় গুলি বিদ্ধ করতে! উড়নার আঁচল দিয়ে হাসি চেঁপে আমি মাথা নিচু করে নিলাম। তাৎক্ষনিক আমার থেকে সবাই দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলেন। এর মধ্যে আব্বু গলা খাঁকিয়ে পরশ ভাইয়ার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বললেন,,

“কি পরশ? রাজি তো আমাদের শর্তে?”

পরশ ভাই ইতস্ততবোধ করে আব্বুর দিকে অস্থির দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললেন,,

“একচুয়েলি আঙ্কেল। অফিসে আমার অনেক ইম্পর্ট্যান্ট কাজ আছে। আজ না গেলে হয়তো অনেক বড় একটা ডিল হাত ছাড়া হয়ে যাবে। আই হোপ সো, আপনি বুঝবেন!”

আব্বু অসম্মতি জানিয়ে রূঢ় কন্ঠে বললেন,,

“উহু। আমি বা আমরা কিছু বুঝতে চাই না। আগামী দুদিন তোমার কোথাও যাওয়া হচ্ছে না ব্যাস। আর তাছাড়া এই ইয়াং বয়সে আনন্দ, হুল্লোড় করবে না তো কোন বয়সে করবে বলো? অযথা কাজের চাপ মাথায় না চেঁপে আনন্দ, হুল্লোড়কে সামান্য প্রশ্রয় দাও৷ তাহলেই খিটখিটে মেজাজটা কিঞ্চিৎ আয়ত্তে আসবে! এই অতি ক্ষুদ্র জীবনটাকে আনন্দের সহিত উপভোগ করতে পারবে।”

আব্বুর প্রতিটা কথাতেই লজিক ছিলো। সত্যিই তো কখনো ভেবে দেখা হয় নি! মানুষটা কেনো এতো খিটখিটে মেজাজের? কেনো হুটহাট রেগে যান? কেনো এতো বাজে ব্যবহার করেন? কেনো সহজ বিষয়টাকে জটিল ভাবে দেখেন? মানুষটার জীবনে তো কোনো আনন্দ, উল্লাসের সামান্যতম ছিঁটেফোঁটা ও নেই। না আছে একটু খানি হাসির রেশ। মোদ্দা কথা, উনি কোনো আনন্দ-অনুষ্ঠানেই যেতে চান না। কেমন যেনো নির্জীব, নিষ্প্রাণ, নিষ্প্রভ। এভাবে আবার জীবন উপভোগ করা যায় নাকি? বেঁচে থাকার সঠিক ভাবার্থ উপলব্ধি করা যায় নাকি? এই হুতুম পেঁচা লোকটাকে তো নিজের ঠিক করা নির্দিষ্ট গন্ডি থেকে বেরুতে হবে। হাসি, খুশি, আনন্দ, হুল্লোড়র মেতে থাকতে হবে। তবেই তো জীবনকে জীবনের মতো করে উপভোগ করতে পারবে!

জল্পনা কল্পনায় ইতি টেনে আমি রাগে ফুসফুস করা পরশ ভাইয়ার দিকে শান্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম। অতঃপর গলা খাঁকিয়ে পরশ ভাইকে উদ্দেশ্য করে বললাম,,

“আন্টির ফোন নাম্বারটা দিন আব্বুকে। আব্বু আন্টির সাথে কথা বলবেন!”

“আর ইউ মেড টয়া? তুমি ও এই কথা বলছ?”

রূঢ় কন্ঠে আমি বললাম,,

“দিতে বলছি দিন। কথা বাড়াচ্ছেন কেনো অযথা?”

মুহূর্তের মধ্যে পরশ ভাই চোয়াল শক্ত করে বললেন,,

“ইউউউ…

খড়তড় দৃষ্টিতে আমি চোখ ঘুড়িয়ে ইশারা করে বললাম,,

“আশেপাশে সবাই আছেন। অযথা সিনক্রিয়েট করবেন না!”

পরশ ভাই তাৎক্ষনিক মাথা নিচু করে নিলেন। দাঁতে দাঁত চেঁপে প্যান্টের পকেট থেকে ফোনটা বের করে আমার দিকে কঠোর দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন। ভাবলেশহীন ভাবে আমি শরীর দুলিয়ে আশেপাশে দৃষ্টিপাত করতেই লোকটা মাথা নিচু করে নিলেন। আন্টির নাম্বারটা ডায়াল করে পরশ ভাই ফোনটা অধিক নম্রতার সহিত আব্বুর দিকে এগিয়ে দিলেন। আব্বু ফোনটা কানে ধরতেই পরশ ভাই অকস্মাৎ নম্র কন্ঠে আমায় শুধিয়ে বললেন,,

“ওয়াশরুমটা কোন দিকে?”

প্রত্যুত্তর করার পূর্বেই আমার ছোট চাচীর মেয়ে নীলা উৎসাহের সহিত বলে উঠল,

“আসুন ভাইয়া। আমি দেখিয়ে দিচ্ছি!”

বিস্মিত না হয়ে পারছি না! ১৬ বছরের কুমারী নীলা ও নাকি শেষ পর্যন্ত পরশ ভাইয়ার উপর নিমগ্ন হয়ে উঠেছে? এ তো দেখছি আমার সব বোনরাই পরশ ভাইয়াতে কাবু! মানুষটা ফুঁস, মন্তর জানে নাকি? প্রথম দেখাতেই যে কোনো কাউকে নজর বন্ধী করে নেন! জোরপূর্বক হাসি টেনে পরশ ভাই নীলার উদ্দেশ্যে বললেন,,

“টয়া দেখিয়ে দিক?”

নীলা মন খারাপ করতেই আমি হাসি চেঁপে পরশ ভাইকে বললাম,,

“চলুন!”

হুড়মুড়িয়ে বসা থেকে উঠে পরশ ভাই আমার পিছু নিলেন। এক তলার বাঁ পাশের ওয়াশরুমটার দিকে মোড় নিয়েছি আমি। পেছন থেকেই পরশ ভাইয়ার স্বস্তির শ্বাস আমার কর্নকুহরে মিহি ভাবে ভেসে এলো। মানুষটা যেনো মাএ হাঁফ ছেঁড়ে বাঁচলেন। মুক্ত বাতাস ফুসফুসে সঞ্চার করতে সমর্থ হলেন। ঝড়ের বেগে মনে হলো পরশ ভাই পেছন থেকে আমার বাঁ হাতটা টেনে ধরলেন। হেচকা টানে আমাকে মানুষটার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে রক্তিম চোখে চোয়াল শক্ত করে বললেন,,

“কি হচ্ছে এসব? ড্রামা করছ সবাই মিলে?”

বিস্মিত দৃষ্টিতে আমি মানুষটার দিকে তাকিয়ে নির্বোধ কন্ঠে বললাম,,

“কে, কোথায় ড্রামা করল?”

“থেকে যেতে বলছ কেনো আমায়? এর মাঝে আবার আমার পরিবারকে টেনে আনলে কেনো?”

“আপনার পরিবার আমার কাছে আলাদা কিছু নয়! আন্টি, পিয়ালী আপু, পায়েল সবাই আমার মনের খুব সন্নিকটের। তাই সবার সাথেই আনন্দ-অনুষ্ঠানটা ভাগাভাগি করতে চাইছি!”

“ওকে ফাইন। ভাগাভাগি করে নাও। আই হেভ নো প্রবলেম৷ তবে এর মাঝে আমাকে টানছ কেনো? কাজকর্ম রেখে আমি তোমাদের ড্রামা দেখব এখানে বসে বসে?”

“আমার পরিবার ভালোবেসে আপনাকে এই পুরো ব্যাপারটাতে ইনভলভ করতে চাইছেন। আর আপনি কিনা সেই অতি অমূল্য ভালোবাসাটাকে নাটক হিসেবে আখ্যা দিচ্ছেন? এতোটাই অবিবেচক আপনি? এতোটাই নিচ মন মানসিকতার?”

পরশ ভাই থমকালেন। মুহূর্তের মধ্যে আমার হাতের বাঁধনটা ঢিলে করে খানিক ইতস্ততবোধ করে বললেন,,

“স্যরি। যদি আমার কথায় হার্ট হয়ে থাকো। একচুয়েলি আমি বুঝাতে পারছি না আমার অবস্থাটা। তাই অকারনে রিয়েক্ট করে বসছি।”

রাগ, জেদ অসহ্য পর্যায়ে ঠেকছিলো আমার। তীক্ষ্ণ কন্ঠে আমি পরশ ভাইকে শাসিয়ে বললাম,,

“ইউ হেভ টু গো নাও। কেউ আটকাবে না আপনাকে। হোল লাইফ এভাবে নিসঙ্গ, নির্জীব, নিষ্প্রান হয়ে বাঁচবেন এটাই ঠিক আপনার জন্য। আপনি সভ্য সমাজের মানুষদের অন্তর্ভুক্ত নন বুঝেছন? অন্ধকারে নিমজ্জিত দুর্বিষহ জীবনটাই আপনার প্রাপ্য!”

জায়গা পরিত্যাগ করতেই পরশ ভাই পুনরায় পেছন থেকে আমার হাতটা টেনে ধরে কেমন যেনো বেদনাহত কন্ঠে বললেন,,

“নিসঙ্গতা কখনো আমার প্রাপ্তি হতে পারে না। সঙ্গ কূলেই আমার ললাট পরিপূর্ণ করেছেন বিধাতা। ধ্যান ভেঙ্গেছে আমার বহু পূর্বেই, তবে নিমগ্নতা ভাঙ্গলে খান খান হয়ে যাবে তোমার মনের প্রতিটা অলি-গলি!”

“মূর্খের বাস নিমগ্নতায়! মগ্নতা হতে হবে নিদ্রাহীন রাতের মতো। ধ্যান ভাঙ্গতে আরম্ভ করেছেন মাএ। নিমগ্নতা ও ভেঙ্গে ফেলুন বীরদর্পে!”

“পাবো তো তাকে? যার জন্য এই নব উপাখ্যান?”

প্রত্যুত্তর করার পূর্বেই “রুম্পা আপু” মানে বিয়ের কনে ওয়াশরুমের পাশের রুমটা থেকে বেশ ব্যতিব্যস্ত ভঙ্গিতে বই হাতে নিয়ে বেরিয়ে এলেন। পরশ ভাই তড়িঘড়ি করে আমার হাতটা ছেড়ে দিতেই রুম্পা আপু আমাদের সম্মুখীন হলেন। চশমাটা চোখ থেকে এক ইঞ্চি নিচে নামিয়ে রুম্পা আপু আমার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বললেন,,

“হু ইজ হি?”

চলবে…?

#তোমায়_পাবো_বলে
#পর্ব_১০
#নিশাত_জাহান_নিশি

চশমাটা চোখ থেকে এক ইঞ্চি নিচে নামিয়ে রুম্পা আপু আমার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বললেন,,

“হু ইজ হি?”

সংকোচ প্রবনতায় রীতিমতো ব্যাঘাত ঘটিয়ে আমি ঠোঁটের আলিজে স্নিগ্ধ এক ম্লান হাসি ফুটিয়ে রুম্পা আপুর সম্মুখস্থ হয়ে বললাম,

“পরশ ভাই।”

আপুর খর্বাকৃতির মুখমন্ডলে অতি আশ্চর্যের ছিটিঁফোঁটা আন্দাজ করা মাএই আমি তিক্ত গলায় বললাম,,

“আরে আপু পরশ ভাইকে চিনলে না? ঐ যে, যার বাড়িতে আমার মাসব্যাপী ঠাঁয় হয়েছিলো! যার বদৌলতে আমি হিমেশ অবধি পৌঁছানোর সাহস এবং সুযোগ পেয়েছিলাম!”

আপুর চেতনাশক্তি বোধ হয় মাএ পুনরুত্থান হলো। সম্মতি ফিরে পাওয়া মাএই আপু কিঞ্চিৎ রুক্ষ হাসিতে পরশ ভাইয়ার দিকে পূর্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,,

“এবার চিনতে পেরেছি। হিমেশ ভাইয়ার ফ্রেন্ড আপনি তাই তো?”

পরশ ভাই জোর পূর্বক হাসিতে এক প্রকার তিক্ততার রাগিনী মিশিয়ে মিহি কন্ঠে বললেন,,

“ইয়াহ, হিমেশের ফ্রেন্ড!”

অপ্রত্যাশিত ভাবেই আপু ঠোঁটের আলিজে ক্রুর হাসি সমেত কেমন যেনো মোহ ভরা কন্ঠে বললেন,,

“মানতে হবে বস। ইউ আর লুকিং সো হট, কিউট, হ্যান্ডসাম এন্ড ড্যাশিং অলসো! সিরিয়াসলি, আমার যদি তুহিনের সাথে বিয়েটা না ঠিক হতো না? আমি এক্ষনি, এই মুহূর্তে আপনাকেই বিয়ের প্রপোজালটা দিতাম। ইউ আর জাস্ট বেটার অপশন ফর মি।”

সেকেন্ডের কাটা টা ও বোধ হয় কিঞ্চিৎ এদিক থেকে ওদিক হওয়ার সময়, সুযোগ পেলো না। এর অতি পূর্বেই হেচকি সমেত পরশ ভাইয়ার খুক খুক শুকনো কাশির আবির্ভাব ঘটল। ঠোঁটের উপর ঠোঁট চেঁপে ধরে আমি অট্ট হাসি আটকানোর চেষ্টায় প্রয়াত প্রায়। বাঁধ ভাঙ্গা হাসিতে এক্ষনি লাগাম না টানলে আগাম জলোচ্ছ্বাস হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে! এই পরশটার সাথে একদমই বিশ্বাস নেই! পরে দেখা গেলো, গুমড়ো মুখো লোকটার খিল্লি উড়ানোর অপরাধে আমাকে বদ্ধ ঘরে তালাবন্ধি করে দিলো! ৪/৫ দিনের খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে আমায় অভুক্ত, অনাহারে রাখা হলো! বাপরে বাপ এই ভয়ঙ্কর লোকটার সাথে এক রত্তি ও বিশ্বাস নেই!

পরশ ভাইয়ার কাশির রেশটা যেনো বেগতিক বৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলো। ঐদিকে আমার হাসির ঝংকার ও মাএাতিরিক্ত ভাবে বেড়ে পরশ ভাইয়ার মাথা ব্যাথার কারন হয়ে উঠছিলো! লোকটা খড়তড় দৃষ্টিতে খানিক বাদে আমার দিকে দৃষ্টিলোকন করছেন। আমাদের এহেন অনাকাঙ্ক্ষিত ভাব ভঙ্গি দৃষ্টিলোকন হওয়া মাএই রুম্পা আপু কপালের ভাঁজে বিরক্তির ছাপ ফুটিয়ে আমাদের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বললেন,,

“আশ্চর্য! হলোটা কি তোমাদের? একজন কাশছ তো আরেকজন হাসছ! মানে কি ভাই? কি এমন মহা আশ্চর্যকর কথা বলে ফেললাম আমি?”

কাশি থামিয়ে পরশ ভাই বেশ তৎপর কন্ঠে রুম্পা আপুর উদ্দেশ্যে বললেন,,

“আপনার উডবি হাজবেন্ড যদি জানতে পারেন না? উনার অগোচরেই আপনি উনাকে অপশন হিসেবে দেখছেন? আ’ম ড্যাম সিউর উনি সাথে সাথেই বিয়ে ভেঙ্গে দেওয়ার এই কঠিন সিদ্ধান্তটা নিতে ও দ্বিধাবোধ করবেন না! আপনার উডবি হাজবেন্ড হার্ট হতেন এসব হটকারী কথাবার্তায়। মজার ছলে ও এসব কথা কখনো কাউকে বলবেন না। হতে পারে আপনার বিপরীতে থাকা মানুষটা আপনার হাসি, মশকরা যুক্ত সামান্য তম কথা গুলো ও স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারছেন না। ইউ নো না? মাইন্ডে লাগবে ভীষন। পৃথিবীতে কোনো ছেলেই চাইবে না, তার পছন্দ করা মানুষটা, তার ওয়াইফ বা তার গার্লফ্রেন্ড তাকে অপশন হিসেবে দেখুক বা ভাবুক! তাকে তুচ্ছ জ্ঞান করুক। তার চেয়ে ব্যাটার কাউকে দেখে অন্তত তাকে অযোগ্য হিসেবে ভাবুক! অন্য কারো সাথে তার কিঞ্চিৎ পরিমান অযোগ্যতা নিয়ে কম্পেয়ার করুক! তার বাহ্যিক সৌন্দর্যকে উপেক্ষা করে অন্য কারো সৌন্দর্যে প্রশংসিত হোক। আই থিংক আপনার উডবি হাজবেন্ড তুহিন ও চাইবেন না তার উডবি ওয়াইফ অন্য কারো প্রশংসায় পঞ্চমুখ হোক! আমরা ছেলেরা, ভুলক্রমে যদি একবার ও কারো কাছ থেকে আঘাত পাই না? তবে সেই ব্যক্তিটাকে দ্বিতীয় বার সুযোগ দিতে একবার নয় বরং হাজারটা বার পিছিয়ে যাই। আমাদের আঘাতের জখম খুব গাঢ় হয়, পারবেন না সেই জখমে বিন্দু পরিমান উষ্ণতার স্পর্শ ছোঁয়াতে!”

টুম্পা আপুর থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে পরশ ভাই আমার হতবাক দৃষ্টিতে স্থির দৃষ্টি নিক্ষেপ করে জিগ্যাসু কন্ঠে বললেন,,

“ওয়াশরুমটা কোন দিকে?”

তব্দিত ভঙ্গিতে আমি আঙ্গুল দিয়ে ওয়াশরুমটা দেখিয়ে দিতেই পরশ ভাই দ্রুত পায়ে হেঁটে ওয়াশরুমে প্রবেশ করলেন। রুম্পা আপু শুকনো ঢোক গিলে আমার হাতের কব্জিতে হালকা হাতে ধাক্কা মেরে বললেন,,

“কি বলল রে এসব? সব তো আমার উপর দিয়ে গেলো! বুঝলাম না, কি এমন আহামরি বলে ফেললাম আমি!”

মুখমন্ডলে রাগী ভাব ফুটিয়ে আমি তিক্ত গলায় আপুকে বললাম,,

“এমনি এমনি তুহিন ভাইয়া তোমাকে টিউব লাইট বলে না। তুমি জাস্ট যা তা!”

প্রস্থান নিলাম আমি। রুম্পা আপুর বুদ্ধি শুদ্ধি আদৌ এই জীবনে খুলবে কিনা বিধাতা জানেন। বুঝে শুনে মোটে ও কথা বলতে পারেন না এই অকালকুষ্মান্ডটা। কোন জায়গায় কোন কথাটা বলতে হবে তা ও আজ পর্যন্ত বুঝতে পারল না? অথচ ২৫ বছরের একজন প্রাপ্ত বয়সী যুবতী সে! দুদিন বাদেই তার বিয়ে! উফফফস! নিতে পারছি না এসব।

,
,

রাত ৮ টা৷ লুঙ্গি পরিহিত অবস্থায় ডিভানের এক পাশে জড়সড় ভঙ্গিতে বসে আছেন পরশ ভাই। হাতে জ্বলন্ত সিগারেটের বিশ্রি গন্ধ বাতাসের বেগে হুড়মুড়িয়ে নাকে ভেসে আসছে আমাদের পাশের ডিভানে। নাকে হাত চেঁপে আমি কদাকার গন্ধটা এড়িয়ে চলার যথেষ্ট চেষ্টা করছি। রাগে রীতিমতো ফুসফুস করছেন পরশ ভাই। নাকটা ফুলে, ফেঁপে রক্তিম বর্ণের রূপ নিয়েছে। কপালের অগ্রভাগে লেপ্টে থাকা চুল গুলো বাঁ হাত দিয়ে অনবরত টেনে মানুষটা পরিহিত লুঙ্গিটার দিকে ক্ষোভের দৃষ্টিতে চেয়ে আছেন। হাতে কোনো বেটার অপশন পেলে নির্ঘাত পড়নের লুঙ্গিটা এক টানে খুলে উনি দাবালনে নিক্ষেপ করতেন। জ্বলে পুড়ে খাঁক হয়ে যেতো লুঙ্গিটা। সাথে উনার মনের জ্বালা টুকু ও এক নিমিষেই নিভে যেতো! বুঝলাম না, লুঙ্গিতে কোন জাতীয় এলার্জি আছে লোকটার? লুঙ্গি পড়লে সমস্যাটা কোথায়? বাঙ্গালী পুরুষদের পরিচয় তো লুঙ্গিতেই। ইতোমধ্যেই পাশ থেকে নীলা ফিক করে হেসে আমায় ঝাঁকিয়ে বলল,,

“কি অবস্থা করলে বলো তো ঐ গুমড়া মুখো পরশ ভাইয়াটার? দেখছ তো? রাগে কেমন ফুসফুস করছেন?”

“হাট! আমি ইচ্ছে করে করেছি নাকি এসব? হাত ফসকে হঠাৎ চায়ের কাপটা সরাসরি উনার প্যান্টে পড়লে আমি কি করতে পারি এতে?”

স্নিগ্ধা প্রখর সন্দেহের বশবর্তী হয়ে এক ভ্রু উঁচিয়ে আমার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বলল,,

“কেনো জানি না আমার মনে হচ্ছে তুমি ইচ্ছে করেই এই কু-কর্মটা ঘটিয়েছ আপু! তোমার মুখমন্ডলে আমি বিরূপ কিছুর আভাস পেয়েছিলাম! তোমার চিন্তাধারা মাপ করতে আমার কিন্তু খুব বেশি একটা সময় লাগে না!”

স্নিগ্ধা এবং নীলার দিকে কঠোর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আমি প্রসঙ্গ পাল্টাতে ধমকের স্বরে বললাম,,

“তোদের এখানে কি হুম? আমার রুমে কি করছিস তোরা? যা পড়তে বস দুজন। বড় আপুর বিয়ে বলে পড়ালেখা একদম চাঙ্গে উঠে গেছে তাই না?”

দুজন আমার দিকে তেঁড়ে এসে সমস্বরে বলল,,

“এক্সাম তো তোমার ও কিছুদিন পর আপু। পড়াশোনা চাঙ্গে তুলে তুমি ও আমাদের সাথে এই ডিভানে কি করছ হুম? পরশ ভাইয়াকে টুকুর টুকুর দেখছ তাই না?”

থতমত খেয়ে আমি চোয়াল শক্ত করে বললাম,,

“কি বললি? পরশ ভাইকে আমি টুকুর টুকুর দেখছি?”

“হুম দেখছই তো। সাথে আমরা ও দেখছি। সেইম সেইম!”

“পড়তে যাবি কিনা বল? চাচাীমনির কাছে আমি নালিশ জানাবো?”

“তোমাকে ও আমাদের সাথে পড়তে বসতে হবে, তবেই আমরা পড়তে বসব ব্যাস!”

“এই তোরা কি আমাকে নূন্যতম ভয়টা ও পাস না? উল্টে আমাকেই শাসাচ্ছিস? তোদের তো আমি!”

দাঁতে দাঁত চেঁপে আমি দুজনের দিকে কঠোর হাত বাড়াতেই দুজন খিলখিলিয়ে হেঁসে ডিভান থেকে প্রস্থান নিচ্ছে আর বলছে,,

“মোটে ও পড়তে বসব না আমরা। বিয়ের স্টেইজ সাজানো দেখব। পরশ ভাইয়াকে ও সাথে নিয়ে যাবো।”

তড়িঘড়ি করে আমি পেছন থেকে নীলা এবং স্নিগ্ধাকে ডেকে বললাম,,

“এই নীলা, স্নিগ্ধা না। পরশ ভাইকে অযথা ঘাটাস না। উনি এসব টানা হেঁছড়া, ইয়ার্কি, দুষ্টুমি, হৈ-হুল্লোড় পছন্দ করেন না।”

দুজনই এতক্ষনে রুম থেকে প্রস্থান নিয়ে কোথাও একটা মিলিয়ে গেছে। ইতোমধ্যেই আমার ছোট চাচীর বড় মেয়ে মিলি আপু হুড়মুড়িয়ে আমার রুমে প্রবেশ করলেন। শুভ্র মুখে রাগের ছাপটা যেনো অত্যধিক ভাবে ফুটে আছে। সাংঘাতিক কিছু একটা হয়েছে বোধ হয়। কিছু বুঝে উঠার পূর্বেই আপু গুরু গম্ভীর ভাব নিয়ে সোজা ডিভানে আমার মুখোমুখি এসে দাঁড়ালেন। ব্যতিব্যস্ত কন্ঠে আমি আপুর দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বললাম,,

“কি হয়েছে আপু? তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেনো?”

বুকে দুহাত বেঁধে আপু রুক্ষ কন্ঠে আমার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বললেন,,

“পরশ ছেলেটা স্মোকিং করে?”

ঘটনার আকস্মিকতায় আমি ভড়কে উঠতেই আপু অধৈর্য কন্ঠে পুনরায় বললেন,,

“কি হলো বল? পরশ স্মোকিং করে?”

আপুর দিকে আমি পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে বললাম,,

“কেনো আপু? কি হয়েছে? হঠাৎ এই প্রশ্ন জিগ্যেস করছ কেনো?”

“যা বলছি, তার উত্তর দে। প্রশ্ন তুই পরে ও করতে পারবি।”

“আজব, এসব আমাকে জিগ্যেস করছ কেনো? সরাসরি উনাকে জিগ্যেস করলেই তো পারো!”

“সময় হলে নিশ্চয়ই সরাসরি কথা বলব, এমনকি যা জিগ্যেস করার তা ও জিগ্যেস করব। এখন যা জানতে চাইছি, তার উত্তর দে?”

অপারগ হয়ে আমি মাথা নিচু করে বললাম,,

“হুম। পরশ ভাই স্মোকিং করেন!”

“ওকে ফাইন। পরশকে বারণ করবি, আজ থেকে যেনো কোনো রকম স্মোকিং না করেন। ইট’স ইনজুেরিয়াস টু হেলথ।”

ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে আমি আপুর দিকে তাকাতেই আপু পুনরায় আমায় প্রশ্ন ছুড়ে বললেন,

“পরশের কোনো অতীত আছে? আই মিন কোনো গার্লফ্রেন্ড? ভালো লাগা বা ভালোবাসা?”

বুঝতে আর বিলম্ব হলো না, আপু পরশ ভাইয়ার উপর ইন্টারেস্টেড! এই প্রথম আপু কোনো ছেলের প্রতি এতোটা ইন্টারেস্ট প্রকাশ করছেন! ছেলে মানুষদের উপর চরম এলার্জি আপুর। কিন্তু এই প্রথম আপু একটা ছেলে সম্পর্কে এতোটা কৌতুহল প্রকাশ করছেন! তার মানে কি আপু….!

আমার অপ্রতুল ভাবনায় ছেদ ঘটিয়ে আপু তিরিক্ষিপূর্ণ কন্ঠে বললেন,,

“কি হলো বল?”

মাথা নিচু করে আমি আগ পাছ না ভেবেই ছোট আওয়াজে বললাম,

“না নেই!”

মুহূর্তের মধ্যেই আপু মুদ্যু হেসে রুম থেকে প্রস্থান নিলেন। মাথা উঁচিয়ে আমি আপুর যাওয়ার পথে তাকিয়ে থেকে প্রশ্নবিদ্ধ কন্ঠে বললাম,,

“প্রথম দেখাতেই আপু পরশ ভাইয়ার প্রতি এতোটা দুর্বল হয়ে পড়েছেন? প্রথম দেখাতেই কাউকে ভালো লেগে যায় বুঝি?”

মনে কেনো জানি না বিষন্নতার মেঘ জমতে আরম্ভ করেছে। বুকটা ভারী হয়ে আসতেই আমি ধপ করে বিছানার উপর দু হাতে ভর করে বসে পড়লাম। চোখ জোড়া বুজে আমি ক্ষনিকের জন্য মাইন্ড স্থির করার প্রয়াসে লিপ্ত হলাম। আত্নীয় স্বজনদের সমাগত ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে পুরো বাড়িতে। হাঁকডাঁক, হৈ-হুল্লোড়ে মেতে উঠছে সারা বাড়ি। কাজিনদের চেঁচামেচির আওয়াজ দু কানে স্পষ্টত। গান, বাজনার উচ্চ আওয়াজ ভেসে আসছে কর্নকুহরে। ধ্যান স্থির করতে পারছি না একরত্তি। তিক্ত হয়ে বসা থেকে উঠে আমি না চাইতে ও পরশ ভাইয়ার রুমের দিকে অগ্রসর হলাম। ভেজানো দরজাটা হালকা হাতে ধাক্কা দিয়ে আমি রুমে প্রবেশ করতেই রাগে গজগজ করে পরশ ভাই লুঙ্গির গিট্টু চেঁপে ধরে আমার সম্মুখীন হয়ে বললেন,,

“এই তোমার মধ্যে কি সামান্য মেনারসটুকু ও নেই? গেস্টদের কিভাবে আপ্যায়ন করতে হয় জানো না?”

নির্বোধ চাহনীতে আমি জিগ্যাসু কন্ঠে বললাম,,

“কি করেছি আমি?”

“একবার ও খোঁজ নিয়ে দেখছ আমি কতোটা কমফোর্টেবল ফিল করছি? এই পরিস্থিতিতে আমি নিজেকে আদৌ মানিয়ে নিতে পারছি কিনা?”

“কি হয়েছে বলবেন তো?”

“এই ডিজগাস্টিং লুঙ্গিটা আর কতক্ষন পড়ে থাকতে হবে আমার? প্যান্টটা কোথায় আমার?”

“ডিজগাস্টিং বলছেন কেনো? লুঙ্গি পড়াটা কোন দিক থেকে খারাপ? জানেন? লুঙ্গি পরিহিত অবস্থায় আপনাকে কতোটা পরিশুদ্ধ বাঙ্গালী মনে হচ্ছে? দেশি দেশি একটা ফিলিং আসছে!”

“ইউ জাস্ট শাট আপ। নিকুচি করেছে আমার বাঙ্গালীয়ানা। কখন কোঁমড় থেকে এই ইরেটেটিং লুঙ্গিটা খসে পড়ে আমার মান-সম্মান নিলামে উঠে গড নৌজ। যাও তাড়াতাড়ি আমার প্যান্টটা নিয়ে এসো।”

এক রোঁখা ভাব নিয়ে আমি বললাম,,

“পারব না। তাছাড়া আপনার প্যান্ট এখনো শুকোয় নি!”

দাঁতে দাঁত চেঁপে পরশ ভাই বললেন,,

“ভেজা প্যান্টটাই পড়ব। আই হ্যাভ নো প্রবলেম। যাও তাড়াতাড়ি প্যান্টটা নিয়ে এসো।”

“স্যরি। আমার অন্য কাজ আছে। প্যান্ট শুকালেই পরে প্যান্টটা পাবেন বুঝতে পেরেছেন?”

ভাবলেশহীন ভাবে আমি পরশ ভাইয়ার সম্মুখ থেকে প্রস্থান নেওয়ার পূর্বেই পরশ ভাই পেছন থেকে আমার হাতটা উনার শক্ত হাতে টেনে ধরে তেজর্শী কন্ঠে বললেন,,

“এক্ষনি আমার বাস স্টপ যেতে হবে। আম্মু, পায়েল, পিয়ালীকে পিক করতে হবে। বেশি ঘাটি ও না আমায়। ইচ্ছে করে আমার প্যান্টে চা ঢালার অভিযোগে আমি তোমার যে ঠিক কি হাল করব তুমি জাস্ট ভাবতে ও পারছ না!”

কাঠ কাঠ গলায় আমি ঘাঁড়টা সামান্য পেছন দিকে ঘুড়িয়ে বললাম,,

“ইচ্ছে করে চা ঢেলেছি মানে?”

“মানেটা তুমি নিজে ও জানো! ড্রামা করবে না একদম!”

“বুঝলাম না! অনুমানের ভিত্তিতে আপনি কিভাবে পারেন আমার উপর আঙ্গুল উঠাতে? যা আমি করি নি তাই আমার উপর চাঁপিয়ে দিচ্ছেন?”

“দুর্জন বিদ্বান হলে ও পরিতাজ্য! ইউ নো দেট না? তুমিই হলে সেই দুর্জন!”

রাগে গজগজ করে আমি এক ঝটকায় পরশ ভাইয়ার হাতটা ছাড়িয়ে তেজী কন্ঠে লোকটার সম্মুখস্থ হয়ে বললাম,,

“সেইম প্রবাদটা যদি আমি ও আপনার উপর আরোপ করি তখন হুদাই লাফালাফি করবেন না তো? আপনি ও কিন্তু দুর্জনের চে কম যান না ওকে?”

পরশ ভাই চোয়াল শক্ত করে আমার দিকে তেঁড়ে এসে বললেন,,

“ইউ….!

আচমকাই আমার দৃষ্টি পড়ল পরশ ভাইয়ার লুঙ্গির গিট্টুর দিকে। গিট্টুটা খানিক ঢিলে হয়ে আসতেই আমি জিভ কেটে চোখে, মুখে হাত চেঁপে ধরে দৌঁড়ে রুম থেকে প্রস্থান নিচ্ছি আর বলছি,,

“ইসসস! আগে তো লুঙ্গিটা সামলান! এরপর না হয় আমায় শাসাবেন!”

চলবে…?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here