তোমায়_ভালোবেসে_যাবো প্রথম_পর্ব
#লেখা_অধরা_জেরিন
যখন শুনলাম আমাকে একটা মানসিক রুগি ছেলের সাথে বিয়ে দেওয়া হচ্ছে আমার পায়ের তলা থেকে মনে হচ্ছিল মাটি সরে যাচ্ছে । বিয়ে টা ঠিক করেছে আমার বাবা । যদিও আমার নিজের বাবা না। আমি তাদের পালিত মেয়ে । অনেক ছোট থাকতেই আমার বাবা মা কে হারিয়েছি। তাদের চেহারা আমার মনে নেই। আমাকে একটা এতিম খানা থেকে তুলে এনেছে । একমাত্র আমার মায়ের জন্য । এখন আমি যাকে মা বলে জানি। তার একটা মৃত মেয়ে হয়েছিল । পাগলের মতো হয়ে যায় । তখন আমার এই বাবা আমাকে এতিম খানা থেকে তুলে এনে তাঁর কোলে দেয়। যদিও পরে আমার একটা বোন হয়েছে । কিন্তু সে আমাকে নিজের মেয়ের থেকে বেশি ভালবাসে।
,,
কিন্তু লোক টাকে আমি যখন বাবা বলে ডাকি তখন এক দলা চাপা কষ্টে আমার মুখ বুজে আসে । কোনও দিন আমাকে ভাল চোখে দেখেছে কিনা আমি জানিনা। শুধু মা আর ছোট্ট বোন টার দিকে তাকিয়ে পারি না কোথাও চলে যেতে । অভাবের সংসার । অনেক কষ্ট করে ইন্টার পর্যন্ত পড়েছি। ডাক্তার হওয়ার অনেক সপ্ন ছিল । কিন্তু গরিবের সপ্ন শুধু সপ্নে আসে । কিন্তু জীবনে আসে না।
,,
বু বু তোমাকে মা ডাকছে । দিবার কথা শুনে বাস্তব এ ফিরে এলাম। ওকে বললাম যা আমি আসছি। ওকে আমি ছোট বেলা থেকে খুব ভালবাসি। ও আমাকে নিজের বড়ো বোন মনে করে। মায়ের কাছে যেতে আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠে বললো মারে তনু তোর বাবা তোকে একটা পাগল ছেলের সাথে বিয়ে ঠিক করেছে । আমি মায়ের মুখে পাগল কথা টা শুনে চমকে উঠলাম । আমার স্বামী হবে পাগল । তিনি আবার বললো সেই ছেলে রা বিরাট বড়ো লোক । কোনও কিছুর অভাব নেই। তোর বাবা কে সেই ছেলের চাচা অনেক টাকা দিয়েছে । তাইতো তোর বাবা লোভে পড়ে তোকে ওই পাগলের সাথে বিয়ে দিচ্ছে । তুই পালিয়ে যা মা । পালিয়ে যা । আমি বললাম মাগো আমি এখন পালিয়ে কোথায় যাবো। আর চলে গেলে বাবা তোমাদের উপরে অত্যাচার শুরু করবে । আমার ভাগ্যে যা আছে তাই হবে । বাবা কে বলো ওই টাকা দিয়ে তোমাকে ভাল ডাক্তার দেখাতে। তুমি অনেক দিন ধরে রোগে ভুগছো। আর দিবার অনেক দিনের শখ একটা ভারি কাজ করা জামার। তুমি বাবা কে বলে ওর জামা কিনে দিও। আমার কথা শুনে মা আর দিবা হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো । ওদের কান্নার আওয়াজ আমার কাছে কেমন যেন অদ্ভুত লাগছে । আচ্ছা আমার কোনও কষ্ট লাগছে না কেন ?? কেন চোখে পানি নেই ?? আমি কি মানুষ না অন্য কিছু । আমার অনুভূতি গুলি হারিয়ে গেছে অনেক আগে হারিয়ে গেছে ।
,,
আজ বিয়ে । আমার বিয়ের সব খরচ শশুড় পাঠিয়ে দিয়েছেন । আমার গহনা দামি শাড়ি দামি কসমেটিক্স সব দিয়েছে । আমি এই সব কোনও দিন চোখে ও দেখিনি। যখন আমাদের আশেপাশে কোনও বড়ো লোকের মেয়ের বিয়ে হয় তখন তাদের এভাবে সাজানো হতো। দুরে দাড়িয়ে থেকে দেখতাম । আর সপ্ন বুনতাম দু চোখে । আমার ও সপ্ন পূরণ হয়েছে । আমি ও রাজরানির মতো থাকবো। কিন্তু কোনও রাজার না । একজন মানসিক রোগীর । ছি ছি আমি কি ভাবছি এই সব। হোক সে পাগল । তবু ও আমার স্বামী ।
,,
শুনেছি বিয়েতে আসে পাশের অনেকে আসেনি । ভয়ে পাগলের ভয়ে । যদি হঠাৎ করে তার পাগলামি শুরু হয়ে যায় । আমার খুব হাসি পেয়েছিল কথা টা শুনে । আচ্ছা আমি তো তার ঘরের বউ যদি পাগলামি শুরু করে তখন আমি কি আর সবার মতো পালাতে পারবো ?????
রাতুল নাকি বিয়েতে কবুল বলবে না। ও পাগলামি শুরু করলো। ওর বলছে রিয়াকে ছাড়া আমি বিয়ে করবো না। সবাই ওকে বুঝিয়েছে রিয়ার সাথেই বিয়ে হচ্ছে । তখন রাতুল কবুল বলেছে।
,,
আমি বাসর ঘরে বসে আছি। আমার শশুড় ভিষন বড়োলোক। আমার কেমন যেন অস্বাভাবিক লাগছে । মনে হচ্ছে এ সব জিনিস ধরলে কেউ হয়তো বলবে তোমার এতো বড়ো সাহস লজ্জা করে না গরিব হয়ে বড়ো লোক দের জিনিস ধরতে । হঠাৎ করে আমি রাতুলের চিৎকার শুনতে পাচ্ছি । ও খুব চিৎকার করছে । আর বলছে আমাকে ছেড়ে দাও ওই যে রিয়া আমাকে ডাকছে আমি ওর কাছে যাব। হঠাৎ করে চড়ের শব্দ । কেউ মনে হলো কাউকে অনেক জোড়ে একটা চড় দিল। আমার পরিস্থিতি তে আমার শরীর কাঁপছে ভয়ে । তারপর সব কিছু চুপচাপ । একটু পর রাতুল কে শুইয়ে দেওয়া হলো আমি যে ঘরে বসে আছি। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি।
,,
এমন সময় বললো আমি রাতুলের বাবা। ওকে ঘুমের ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে । সকালের আগে আর বিরক্ত করবে না । আমি আমার শশুড় কে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করলাম । তিনি আমার মাথায় হাত দিয়ে দুআ করলেন । এই প্রথম আমি কোনও পিতার বয়সি লোকের আদর পেলাম । তিনি আমাকে বললো তোমার অনেক কিছু জানার বাকি আছে । এখন অনেক রাত । ঘুমিয়ে পড়ো। কাল সকালে আমি তোমার সাথে কথা বলবো। এই বলে তিনি চলে গেলেন ।
,,
আমি রাতুলের ঘুমন্ত চেহারার দিকে তাকিয়ে আছি। কি নিষ্পাপ চেহারা । কেন ছেলে টা এমন হলো। আমার নিজের অজান্তে চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে । এমন সময় আমার শাশুড়ি এলো। তাকে ও আমি সালাম করলাম । তিনি আমাকে তার হাতের বালা দুটি পড়িয়ে দিয়ে বললো এটা আমার শাশুড়ি আমাকে দিয়েছিল । আজ তোমাকে দিলাম । তুমি এই বাড়ির বউ। আমাদের সবার আদরের । এই সংসার এখন থেকে তোমার । তুমি আগলে রেখ। আর আমার অবুঝ ছেলে টাকে তোমার ভালবাসা দিয়ে ভাল করে দিও।
,,
আমার কেন যেন সেদিন এই বাড়ির সবার জন্য মায়া হয়ে গেল । মনে হচ্ছে সবাই আমার কতো আপন। আমি যেন সবার কাছে বড়ো আদরের মেয়ে হয়ে গেলাম । ছোট বেলা থেকে বড়ো লোকেদের জন্য একটা ঘৃণা হতো। আজ সব দুর হয়ে গেল । আমি রাতুলের কাছে গিয়ে বসলাম । ও কি কখনও আমাকে মেনে নেবে। নাকি সকালে আমাকে দেখে চিৎকার করে বলবে এ কে ??? আমার রুমে কেন ঢুকেছে । ওকে এখন ই চলে যেতে বলো। আচ্ছা রিয়া কে ??? আর রাতুল এতো রিয়া রিয়া কেন করে ???
আর আমাকে সকালে কি বলবে আমার শশুড় ?? কি এমন অজানা কথা আছে ????
,,
,,
#চলবে