তোর উঠানে বিকাল ছায়া?,২৫তম খন্ড
লেখিকা-লামিয়া রহমান মেঘলা
জীবন টা কিছু মানুষের ভুলের কারনে খুবই কঠিন হয়ে যায়।
জীবন টা কিছু মানুষের ভুল ডিসিশন এর জন্য অনেক জটিল হয়ে যায়।
আজ হয়ত সব ঝামেলার কারন টা নির্ঝরের বাবা ই। কিছুই বুঝতে পারার আগে থেকে সব হচ্ছে।
বারান্দায় দাঁড়িয়ে পকেটে হাত রেখে কথা গুলো ভাবছে নির্ঝর।
–কি করছেন?
হটাৎ ছায়ার কন্ঠ পেয়ে নির্ঝর ফিরে তাকায়।
ছায়ার এখন প্রায় ৬ মাস হতে চলল।
পেট টা বড়ো হয়েছে।।
মেয়েটা নির্ঝর কে পেয়ে নিজের উজ্জ্বল চেহারা টা একটু হলেও ফেরত পেয়েছে।
ছায়াকে দেখে হেঁসে বলল,
–এসো।
নির্ঝর ছায়ার হাত ধরে নিজের পাশে দাঁড় করালো ছায়াকে।
–ওই দেখো কি সুন্দর অবকাঠামো।
–আমার এগুলা ভালো লাগে না আমার ভালো লাগে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।
–আচ্ছা তাই।
–হ্যাঁ চারিদিকে সবুজ হবে সুন্দর পরিবেশ মিষ্টি বাতাস।
সো সো শব্দ।
সুন্দর লাগবে না।
ছায়া বাচ্চামি শুরে কথাটা বলল।
নির্ঝর হেসে বলল,
–হুম নিয়ে যাবো তোমায় ঘুরতে।
–মজা হবে।
নির্ঝর ছায়ার কপালে চুমু দিলো।
–তুমি পাগল বুঝেছো।
–না আমি পাগল না আমি ত বাবু আম্মু আর তুমি বাবুর আব্বু।
–ওরে বাবা পিচ্চি বড়ো হয়ে গেছে।
–হ্যাঁ বড়ো হবো না আমি না বাবুর আম্মু।
–হ্যাঁ তুমি ত বাবুর আম্মু।
কিন্তু বোধহয় তুমি দুটে বাবুর আম্মু হবা এক সাথে।
নির্ঝর এর কথায় ছায়া চোখ রসগোল্লা করে তাকিয়ে বলে,
–সত্যি!
–হুম।
কিন্তু আমি সিওর না।
(এটা মিথ্যা বলল নির্ঝর। নির্ঝর আসার পর থেকে ছায়ার সব কিছুই নির্ঝর এর হাতে।
নির্ঝর খুব ভালো করেই জানে ছায়ার দুটো বাবু হবে।)
–আপনি সিওর না তাহলে কে সিওর।
–কেউই না। আল্লাহ যা দেবে।
এখন এসো খেয়ে নেও।।
–না খাবো না এখন।
–কি বললা।
–ইয়ে মানে রেগে জান কেন খাবো একটু পরে।
–না পরে না এখন এসো।
–এখনি
–হ্যাঁ এখনি এসো।
–ধুরো চলেন।
ছায়াকে নিয়ে নির্ঝর ঘরে আসে।
নিজেদের ঘরে নয় রুহির ঘরে।
রুহি এখনো সেই অবস্থায় জানালায় মাথা ঠেকিয়ে বসে আছে।
সার্ভেন্ট এসে খাবার দিয়ে গেল।
নির্ঝর ছায়াকে বসালো।
তাও রুহির কোন হেলদুল নাই।
রুহি এখনো একি ভাবে বসে।
নির্ঝর ছায়ার দিকে তাকিয়ে ইসারা করলো।
ছায়া রুহির দিকে তাকিয়ে একটা নিশ্বাস ছেড়ে বলল,
–উফ বাবু রে তোর এতো খুদা লাগছে তোর মারও এতো খুদা লাগছে।
তাও খাওনের উপায় নাই।
দেখ না তোর ছোট মা না খেয়ে বসে আছে।
এই অবস্থায় তোর খিদা লাগলে খাওন যায় ক তো।
উফ কি যে খুদা লাগছে কেউ যদি বুঝতো।
ছায়া বেশ নাটক করে আর চিল্লিয়ে কথা বলছে।
ছায়ার চিল্লানো শুনে রুহি ওদের দিকে তাকায়।
সব খাবার নিয়ে বসে আছে।
–কেন খাস নি খেয়ে নে।
রুহি নির্ঝর কে দেখে নিচে নেমে শাড়ির আচল দিয়ে মাথা ঢেকে নেয়।
–ধুরো কেউ খাবে না তোর পেলাপান রেও না খাওয়ায় রাখমু তুই না খাইলা।
–ছায়া কেন বাচ্চাদের মতো করছিস খেয়ে নে।
–খেতে ত দিচ্ছিস না৷
–আমি খেতে দিচ্ছি না।
–হ দিচ্ছোস না ত বলছি আমাগো খুদা লাগছে তুই ত নিজেও খাবি না আমারেও খাইতে দিবি না সাথে তোর পোলা পান গের ও খাইতে দিবি না।
–ভাইয়া ছায়াকে,
–রুহি তুমি না খেলে আমরা সবাই না খেয়ে থাকবো।
–ভাইয়া আপনিও!
–হ্যাঁ আমিও। (নয়লা বেগম)
দরজা দিয়ে আসতে আসতে কথাটা বলে।
রুহি এবার মাথা নিচু করে বলল,
–উনিও খায় নি সকালে।
সব কথার মাঝে রুহির কথাটা শুনে নির্ঝর এর চোখে এমনি পানি চলে এলো।
মেয়েটা কতো ভাবে সবার ব্যাপার টা।
কি করে কেউ এতটা ভালো হতে পারে।
নির্ঝর রুহির কাছে গিয়ে বলল,
–এসো রুহি খেয়ে নেও আমি দেখবো ওর টা।
রুহিকে এক প্রকার জোর করেই খাইয়ে দেয় ছায়া।
সবার খাওয়া শেষে রুহিকে নির্ঝর ঘুমের ঔষধ দেয়।
রুহির শরীর খারাপ করার আগে ওকে ঘুমাতে হবে।
ওর প্রয়োজন ঘুম।
এখন না ঘুমালে ওর সমস্যা হবে।
নির্ঝর এর ঔষধ এ রুহি ঘুমিয়ে যায়।
রুহিকে ঘুমাতে দেখে ছায়াকে নিয়ে নির্ঝর চলে আসে।
নয়লা বেগমের মাথা ধরায় তিনিও শুয়ে পরেন।
নির্ঝর ছায়া চলে আসে।
— ছায়া।
–জি।। —
–আমি তোমায় লক করে বাইরে যাচ্ছি ঘরে সব আছে।
আমি না আসা পর্যন্ত তুমি ঘরে থাকবে।
–কোথায় যাচ্ছেন।
–হসপিটালে কাজ আছে।
–আচ্ছা ওকে কিন্তু তালা দিবেন আমায়।
–হুম তালা দিবো।
ছায়ার কপালে চুমু দিয়ে নির্ঝর বেরিয়ে যায়।
,
,
,
এদিকে,
–কি হচ্ছে আবির তুমি আমার থেকে এমন দুরে দুরে থাকছো কেন?
–কই দুরে থাকছি তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে এসো।
আবির তমাকে নিয়ে এলো একটা রুমে যেখানে সব গোলাপ দিয়ে সাজানো।
সুন্দর খাবারের আয়োজন।
–ওয়াউ আবির আমার জন্য এগুলো।
–হুম তোমার জন্য এগুলা।
এসো।
তমাকে নিয়ে বসায়।
–ওয়াউ ওয়াইনের ব্যবস্থা ও আছে।
–হুম।
–নেও শুরু করো।
–না না বেশি খেলে চড়ে যাবে।
–নাহ চড়বে না এসো আমিও তুমিও।
তমাকে ওয়াইন খাইয়ে খাইয়ে অনেক টা খাইয়ে ফেলে আবির।
তমা গুলাতে শুরু করে ধিরে ধিরে,
–হা হা।
আবির তুমি কি জনো আমি তোমায় শুধু ব্যাবহার করি।
তুমি আমার কাছপ টিস্যুর মতো।
ব্যবহার করে ফেলে দি।। ভালো না।
–হুম ভালো ত।। এবার বলো ত তুমি কটা খুন করেছে জীবনে।
–আমি আর আমার বাবা মিলে করেছি ২ টা।
একটা নির্ঝর এর মতো দেখতে ছেলেকে আর একটা হচ্ছে আদনান।
–তুমি আদনান কে কেন মারলে?
–আদনান কে মারতে চাই নি আমি বাবা মারতে বাধ্য করলো।
কারন আদনান কে নির্ঝর সুস্থ করে ফেলছিল আর আদনান না সব জানত আমাদের সম্পর্কে।
বাবা তাই আদনানের মুখ খুলা বন্ধ করার জন্য আদনান কে মেরে দেয়।
–ওকে এবার বলো তোমার বাবা কটা খুন করেছে নিজের জীবনে।
-আমার বাবা অজস্র।
অনেক।
তার মধ্যে একটা সিক্রেট বলবো।
–হুম।
–আমার চাচা চাচি কে না আমার বাবাই মেরেছে।
কথাটা বলে হাসতে থাকে তমা।
–আচ্ছা।
এগুলা কিসের জোরে করেছে তোমার বাবা।
–ও মা আমার বাবা পুলিশ এর অফিসার না সেই জোরে।
হা হা হা।
তমা হাসছে আর কথা বলছে মাতাল হয়ে।
তমা নিজের মুখে সব শিকার করে।
আবির তমাকে টানতে টানতে বের করে আনে।
এনে সোজা মুখে পানি মারে।
তমার হুস তাও আসে না।
আবির নির্ঝর কে ফোন করে তমাকে রুমে বন্ধ করে।
নির্ঝর জলদি চলে আসে।
–ভাইয়া পুলিশ কে ফেন করে বলো আজিজ রায়হান কে ধরতে।
–হুম বলেছি।। তমা কই।
–তমা উপরে।
–ওকে তমাকে তাহলে একটা সারপ্রাইজ দেওয়া যাক।
–হ্যাঁ ভাই অনেক জ্বালিয়েছে এই সাতচুন্নি।
–হা হা চল তাহলে তৈরি হই।
–হুম ভাই চলো।
চলবে,