তোর ছায়ার সঙ্গি হব_২,পর্ব-১৫,১৬
লেখক-এ রহমান
পর্ব ১৫
অনেকটা সময় ধরে ঈশা ইভান কে ডেকেই যাচ্ছে কিন্তু তার ঘুম থেকে উঠার কোন নাম নেই। ঈশা হতাশার সুরে বলল
–প্লিজ ওঠো না। অনেক বেলা হয়েছে। অফিসে যাবে না।
ইভান আবারো উলটা দিকে ঘুরে শুয়ে পড়লো। ঈশা আবার ডাকল। এবার ইভান খানিকটা বিরক্ত হয়েই ঘুম জড়ানো কণ্ঠে বলল
–প্লিজ ঈশা। আমাকে ঘুমাতে দে। আমি আজ অফিসে যাবনা।
–কেন যাবে না?
ঈশার কথা কানে আসতেই ইভান বিরক্ত হয়ে উঠে বসল।তারপর খুব স্বাভাবিক ভাবেই বলল
–ওহ! আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম আমার আজ সারার সাথে ইম্পরট্যান্ট মিটিং আছে। সারা ওয়েট করছে সেই কখন থেকে। থ্যাঙ্ক ইউ জান ঘুম থেকে তোলার জন্য।
ঈশা দরজার দিকে পা বাড়াতে জেয়েও থেমে গেলো। ইভান বিছানার উপরেই বসে আছে। সে ভালো করেই জানে এই কথা শোনার পর ঈশা তাকে আর অফিসে কেন এই ঘরের বাইরেই যেতে দিবে না। তাই চুপচাপ নিশ্চিন্ত হয়ে বসে আছে সে। ঈশা পিছনে ঘুরে নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়ে বলল
–থাক আজ অফিসে যেতে হবে না। তুমি ঘুমাও।
ইভান নিজের হাসি আটকে রেখে বলল
–কিন্তু সারা……।
কথা শেষ করার আগেই ঈশা ইভানের কাছে এসে বসলো। কঠিন ভাবে বলল
–তোমার ঘুম হয়নি তুমি এখন ঘুমাবে।
–এখন তো ঘুম ভেঙ্গে গেছে। কিভাবে আর ঘুম আসবে?
ঈশা একটু তাকিয়ে থেকে বলল
–তুমি শুয়ে পড় আমি মাথায় বিলি কেটে দিচ্ছি। ঠিক ঘুম আসবে।
ইভান মাথা নাড়িয়ে শুয়ে পড়লো। ঈশা মাথায় বিলি কেটে দিচ্ছে। ইভান একটু হেসে বলল
–এতো ভয় পাস তাহলে দূরে থাকিস কেন? জানিস তো ছেলেদের বিশ্বাস করতে হয়না কখন কি করে ফেলে।
ঈশা কঠিন দৃষ্টিতে ইভানের দিকে তাকাল। কিছু বলল না। ইভান একটু হেসে চোখ বন্ধ করে ফেলল। বেশ কিছুক্ষন পর ঈশা যখন বুঝতে পারল ইভান ঘুমিয়ে পড়েছে তখন সে ধির পায়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেলো। ইভান তখনই চোখ খুলে ফেলল। উঠে বসলো। গভির ভাবে ভাবতে লাগলো। আরমান দেশে এসে পড়েছে। কিছুক্ষনের মধ্যে এই খবর সবাই জেনে যাবে। আর ইভানের মা জেনে গেলে তার বোনের ছেলেকে এই বাড়িতে অতি জত্নে আনবে। আর এই বাড়িতে আসা মানেই ইভানের জন্য বিপদ। তার আগেই জেভাবে হোক ঈশাকে তার কাছে আনতে হবে। কিন্তু কিভাবে? এই মুহূর্তে জোর করে আনলে বিষয়টা ঠিক হওয়ার চাইতে বিগড়ে যাবে। তাই এমন কিছু করতে হবে যাতে ঈশা নিজে থেকেই আসে। এমন কিছু একটা প্ল্যান করতে হবে। ইভান ভাবতে শুরু করলো।
আজ থেকে বেশ কয়েক বছর আগের কথা। ইভান আর ইলহাম যখন বিদেশে পড়ালেখা করতে গিয়েছিলো তখন তাদের বিজনেসের ম্যানেজার হিসেবে আরমানের বাবাও ছিলেন। বেশ ভালই চলছিল তাদের বিজনেস। কিন্তু যখন ইভান আর ইলহাম এসে অফিসের কাজ সামলাতে শুরু করলো ঠিক তখনই বিপত্তি শুরু হল। অ্যাকাউন্টেন্ট অনেক টাকার হিসেবে গোলমাল করে ফেলে। আরমানের বাবার উপরে বিশ্বাস রেখেই ঈশার বাবা আর ইভানের বাবা তেমন কিছুই গুরুত্ত দিতেন না। কারন তিনি খুব সৎ লোক ছিলেন। জার উপরে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করা যায়। কিন্তু অফিসের ম্যানেজার হওয়ায় সমস্ত হিসেবের দায় ভার তার উপরে পড়ে যায়। ইভান সবটা জেনে যাওয়ায় সত্যিটা জাচাই না করেই তার বাবাকে সব জানায়। আর তিনি আরমানের বাবাকে চাকরি থেকে বের করে দেন। এতে তাদের অনেক বদনাম হয়। কিন্তু পরে অবশ্য ইভান নিজেই সত্যিটা জানতে পেরে তাকে আবার সসম্মানে অফিসে আনতে চেয়েছিল। কিন্তু তিনি রাজি হননি। এই ভুলের জন্য অনেকবার সবাই তাদের কাছে ক্ষমা চেয়েছে। অনেক ক্ষতি পূরণও দিয়েছে। অবশ্য আরমানের বাবা মা সবাইকে ক্ষমা করে দিলেও তারা দুই ভাই বোন ক্ষমা করতে পারেনি। আরমান এই ভুল বুঝাবুঝির জন্য সারাজীবন ইভান কেই দায়ি করে এসেছে। সে ইভান কে হারাতে নানা ভাবে চেষ্টা করেছে। ইভান কিছুই বলেনি। সে তার ভুলের প্রাপ্য হিসেবে মেনে নিয়েছে। কিন্তু আরমান এবার ইভানের উপরে প্রতিশোধ নিতে ঈশাকে টার্গেট করে। যা ইভান কোন ভাবেই মেনে নিবে না। কারন ঈশা তার জীবন। ঈশার কিছু হলে সে বাচবে না। তাই তো ইভান এতো চিন্তিত।
ভাবনার মাঝেই ইভানের ফোন বেজে উঠে। সে একটু চমকে উঠে। একটা শ্বাস ছেড়ে ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকায়। ইলহামের নাম্বার দেখে তাড়াতাড়ি রিসিভ করে ফেলে
–হ্যালো।
ইলহাম বেশ চিন্তিত হয়েই বলল
–কোথায় তুই?
–বাসায়।
–তুই ঠিক আছিস তো?
–হুম। কেন বলছিস?
–অফিসে আসিস নি তাই জিজ্ঞেস করলাম।
–এমনিতেই। আজ ভাবলাম বাসায় থাকি। তুই সব সামলাতে পারবি তো? নাকি আমাকে যেতে হবে? হলে বলিস আমি বাসাতেই আছি চলে আসব।
ইলহাম আশ্বস্ত করে বলল
–না না আসতে হবে না। তুই রেস্ট নে।
ইলহাম চুপ হয়ে গেলো। ইভান বুঝতে পারল সে কিছু একটা ভাবছে। তাই একটু চিন্তিত হয়ে বলল
–ইলহাম! সব ঠিক আছে তো?
ইলহাম ছোট্ট করে ‘হুম’ বলল। ইভান আরও কিছু জিজ্ঞেস করতে যাবে তার আগেই বলল
–ইভান, আরমান দেশে ফিরেছে।
ইভান বুঝতে পারল ইলহামের চিন্তার কারন। সে ছোট্ট করে বলল
–জানি।
–আজ রাতে ওদের বাসায় সবার দাওয়াত। সবাই যাবে। এমন কি তুই ঈশাও।
ইভান একটু ভ্রু কুচকাল। এতো তাড়াতাড়ি সে আরমানের মুখমুখি হতে চায়না। অন্তত ঈশাকে তার কাছে আনার আগে তো নয়ই। কিন্তু এখন কি করবে? আরমান ঈশাকে অবশ্যই ফোন করবে। আর ইভান কোন কাজের বাহানা দিলেও ঈশাকে আটকাতে পারবে না। সে যাবেই। ইভানের চুপ করে থাকায় ইলহাম আবারো বলল
–কি ভাবছিস?
–সবটা আরমানের প্ল্যান। ঈশাকে ওই বাসায় নিয়ে যাওয়ার জন্যই ছোট নাটক। কিন্তু তার আগেই কিছু একটা করতে হবে।
–কি করবি ভেবেছিস?
–এখনও ভাবিনি। ভেবে নিব। তুই ভাবিস না। ওই দিকটা সামলে নিস।
–আচ্ছা।
বলেই ইলহাম ফোনটা রেখে দিয়ে ভাবতে লাগলো। এইদিকে ইভানও ভাবতে লাগলো কিভাবে ঈশাকে আটকাবে?
———-
বই হাতে নিয়ে বারান্দায় পায়চারি করতে করতে পড়ছে ঈশা। ঘরে তার ফোন বেজেই যাচ্ছে। পড়ায় বিঘ্ন ঘটায় বেশ বিরক্ত হয়েই সে ঘরে গেলো ফোন তুলতে। আরমানের নাম্বার দেখে ঈশা একটু হাসল। অনেকদিন পর আরমানের ফোন। ফোনটা তুলতেই আরমান ওপাশ থেকে বিচলিত হয়ে বলল
–কেমন আছো ঈশা?
ঈশা একটু হেসে বলল
–ভালো আছি আরমান ভাইয়া। তুমি কেমন আছো?
–এতক্ষন ভালো ছিলাম না। তোমার সাথে কথা বলে এখন ভালো আছি।
কথাটা শুনে ঈশা শব্দ করে হাসল। হাসি মুখেই বলল
–তুমি আগের মতই থেকে গেলে।
–পরিবর্তন হলে বুঝি তুমি খুশি হতে?
ঈশা আবারো হাসল। তারপর স্বাভাবিক ভাবে বলল
–তারপর বল তোমার কি খবর?
–সেটা বলার জন্যই তো ফোন দিলাম। আমি দেশে এসেছি। আর আজ রাতে কিন্তু তোমরা সবাই বাসায় আসছ।
কথাটা শুনেই ঈশা অবাক হয়ে বলল
–কি বল? কখন এসেছ? আমাকে বলনি কেন?
–সারপ্রাইজ দেব বলে। আগে বললে কি তোমাকে এত খুশি দেখতে পেতাম। যাক গে! ইভান কোথায়? ওকে ফোনে পাচ্ছি না। তুমি একটু বলবে আমাকে ফোন দিতে।
–আমি আসলে জানিনা কোথায়। ঠিক আছে আমি ফোন করে বলে দিচ্ছি।
–ওকে বাই। রাতে দেখা হচ্ছে।
–হুম।
ফোনটা রেখেই ঈশা একটু হেসে ইভান কে ফোন দিলো। কয়েকবার ফোন বেজেই গেলো কিন্তু রিসিভ করলো না। ঈশা অবাক হল। ইভান তো এমন কখনও করেনা। ব্যস্ত থাকলেও ঈশার ফোন ধরতে সে কখনও দেরি করেনা। কিছুক্ষন পর আবার ফোন করলো। এবার ইভান রিসিভ করলো। ঈশা একটু গম্ভির হয়েই বলল
–কোথায় তুমি?
ইভান কঠিন ভাবে বলল
–কেন? কোন দরকার আছে?
ইভানের এভাবে কথা বলাটা ঈশা ঠিক হজম করতে পারল না। রেগে গেলো। কিন্তু সে এই মুহূর্তে ইভান কে দেখাতে চাইছে না তাই নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়ে বলল
–দরকার ছাড়া কি ফোন করা যায় না?
–আমি ব্যস্ত ঈশা। কি বলবি তাড়াতাড়ি বল। বলার কিছু না থাকলে রেখে দিচ্ছি।
ইভানের এরকম রুড ব্যাবহার ঈশার মন খারাপ করে দিলো। আরমানের কথাটা বলার জন্যই তাকে খুশি মনে ফোন দিয়েছিল কিন্তু সে যে এমন ব্যাবহার করবে বুঝতে পারেনি। মন খারাপ করেই বলল
–আরমান ভাইয়া ফোন দিয়েছিল। দেশে এসেছে। আজ রাতে ওই বাসায় আমাদের যেতে বলেছে। আর তোমাকে ফোন দিতে বলেছে।
ঈশার কথা শেষ হতেই ইভান সময় নষ্ট না করেই বলল
–আমার সময় নেই। আমি খুব ব্যস্ত। তুই সবার সাথে চলে যা। আর আমি পরে আরমানের সাথে কথা বলে নিবো। এখন রাখছি।
ফোনটা কেটে দেয়ার আগে ঈশার কানে স্পষ্ট কোন মেয়ের কণ্ঠ কানে আসল। সে ইভান কে বলছে
–দিজ ইজ ফর ইউ।
কথাটা কানে আসতেই ইভান ফোনটা কেটে দিলো। টুট টুট শব্দ করলেও ঈশা সেটা কানে ধরেই ভাবছে। ইভানের এমন ব্যবহারের কারন আবার কোন মেয়ের আওয়াজ। কোথায় থাকতে পারে ইভান। আর কি এমন ব্যস্ততা যে ঈশার সাথে এমন ব্যাবহার করল। ঈশার মাথায় রাগ চেপে গেলো। সে দ্রুত ইলহামের নাম্বারে ফোন করলো। ইলহাম ফোন রিসিভ করতেই ঈশা কঠিন গলায় বলল
–ভাইয়া ইভান কোথায়?
ইলহাম ঈশার এমন রুড কণ্ঠ শুনে খুব অবাক হল। বুঝতে পারল কিছু একটা হয়েছে। কিন্তু কি সেটা বুঝতে না পারলেও ইভান তাকে যা বলতে বলেছে সেটাই তাকে বলতে হবে। পরে ইভান নিজে থেকেই তাকে সব খুলে বলবে। তাই সে ইভানের কথা মতই বলল
–ওর ফ্ল্যাটে। সারার সাথে মিটিং করছে।
কথাটা কানে আসতেই ঈশার মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। সে কোন কথা না বলে ফোনটা কেটে দিলো। একটু ভেবে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলো। ইলহাম ইভান কে ফোন করে সব জানালো। ইভান সব শুনে একটু হেসে ফোনটা রেখে দিলো। ইভান জানত যে ঈশা এই কথা শোনার পর আর দেরি করবে না। কারন মুখে না বললেও সে যে ইভানের সাথে কাউকে সহ্য করতে পারেনা সেটা ভালো করেই ইভান বুঝতে পারে। তাই তো বুঝে শুনে এই প্ল্যান করেছে জাতে ঈশা নিজে থেকেই চলে আসে তার কাছে।
ইভানের ভাবনার মাঝেই ফোন বেজে উঠে। আরমানের ফোন দেখে ইভান সেটা রিসিভ করে ফেলে। আরমান হাসি মুখে বলে
–কখন এসেছি আমি তোর সাথে দেখা করার জন্য অপেক্ষা করছি। আর তুই কিনা ব্যস্ত। আমাকে এভাবে কষ্ট দিতে পারছিস বল! আর দেরি করিস না চলে আয়। ওহ হ্যা ঈশার সাথে কথা হল ও আসছে রাতে। অবশ্য তুই না আসলেই ভালো। ওর সাথে আমি একটু নিজের মতো সময় কাটাতে পারব।
আরমানের কথা শুনে ইভান রেগে হাতে থাকা কফির মগটা ছুড়ে ফেলে দিলো। দাতে দাত চেপে বলল
–আমার ঈশাকে নিয়ে একটাও বাজে কথা বললে তোকে আমি খুন করে ফেলব। আমি সব সহ্য করতে পারি আরমান! কিন্তু ঈশাকে নিয়ে কেউ কিছু বললে তাকে আস্ত রাখিনা মনে রাখিস।
ইভানের কথা শুনে আরমান শব্দ করে হাসল। সাভাবিল হয়ে বলল
–কুল। এখনি এতো রেগে জাচ্ছিস কেন? আমি তো এসে পড়েছি। সবে মাত্র খেলা শুরু। আরও অনেক কিছুই দেখতে পাবি আর শুনতেও পাবি। দেখিস আবার তোর পাখিকে তোর কাছ থেকে আমি ছিনিয়ে না নেই।
ইভান ফোনটা ছুড়ে ফেলল। রাগে তার মাথার রগ ফুলে গেছে। মাথায় হাত দিয়ে দুই পাশে চেপে ধরে রাগ কন্ট্রোল করতে চেষ্টা করছে। এবারে ইভানের জেদ চেপে বসলো। জোর করে হলেও সে ঈশাকে নিজের করেই ছাড়বে। ঈশাকে কোনদিন সে অন্য কারও হতে দিবে না।
ইভান একটা সময় আরমান কে খুব ভালবাসত। ইলহাম আর আরমান তার কাছে শুধু ভাই না ঈশার পরেই দুজন প্রিয় মানুষ ছিল। কিন্তু এই ভুল বুঝাবুঝির পর আরমান তার সাথে গেম খেলতে শুরু করে। সেটা ইভান বুঝেও না বোঝার ভান করেই থাকত। আরমানের মনে ইভানের জন্য যে ক্ষোভ আছে সেটা জাতে শেষ হয়ে যায় তাই ইভান আরমান কে আবার নতুন করেই তাদের পরিবারের সাথে ভালো সম্পর্ক তৈরি করে দিতেই বাসায় এনে রাখত। ইভান নিজেই ঈশার সাথে আরমানের ভালো সম্পর্ক তৈরি করে দিয়েছে। কিন্তু সে বুঝতে পারেনি যে আরমান এটার সুযোগ নিবে। ঈশাকে তার কাছ থেকে আলাদা করার চেষ্টা করবে। ইভান দাতে দাত চেপে বলল
–তোর এই আশা কোনদিন পুরন হবে না। আমার ঈশা শুধুই আমার। আমি ঈশাকে কারও হতে দিবনা।
চলেব…………
তোর ছায়ার সঙ্গি হব_২
লেখক-এ রহমান
পর্ব ১৬
ঈশা চিৎকার করে কাঁদছে আর সব জিনিস পত্র এক এক করে মেঝেতে আছাড় মারছে। কাচের জিনিস গুলো সারা মেঝেতে পড়ে বিছিয়ে গেলো। নিজের চুল দুই হাতে যতটা পারছে টানছে। ইভান এক পাশে দাড়িয়ে নিরব দৃষ্টিতে ঈশার দিকে তাকিয়ে আছে। আটকাচ্ছে না তাকে। ইভান হয়ত এটাই চাচ্ছিল। ঈশা রাগ করেই তার মনের কথাটা তাকে বলে দিক। তার জেদ সম্পর্কে ইভানের ধারনা আছে। রেগে গেলে ঈশাকে কন্ট্রোল করা মুশকিল। এক সময় নিজে থেকেই সে শান্ত হয়ে যাবে। ভাবতে ভাবতেই ঈশা ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় সামনে থাকা ফুলদানিটা নিয়ে জোরে একটা বাড়ি মারতেই ফুলদানিটা সহ ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে নিচে পড়ে গেলো। আর সেই ফুলদানির ভাঙ্গা অংশ ঈশার দুই হাতে লেগে রক্ত বের হতে লাগলো। এতক্ষন ইভান চুপ করে থাকলেও এবার আর পারল না। সে দৌড়ে ঈশার কাছে গেলো। বিচলিত হয়ে বলল
–কি করলি এটা জান?
ঈশা কোন কথা না বলে রক্ত মাখা হাত দিয়ে ইভান কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো। ইভান আবার ঈশার কাছে আসতে নিলেই সে ইভানের গালে সজোরে একটা থাপ্পড় মারে। ইভান থেমে যায়। সে বুঝতে পারে ঈশা নিজের মধ্যে নেই। এক সময় ঈশা জ্ঞান হারিয়ে ঢলে পড়ে। ইভান খুব জত্নে তাকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় শুয়ে দিলো। তার হাতে ব্যান্ডেজ করে দিলো।
ঈশা তখন ইলহামের কাছে শুনেই ইভানের ফ্ল্যাটে চলে আসে। এসেই নিজের চোখে সারাকে দেখেই সে নিজের হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। সারাকে অপমান করে বের করে দিয়েও শান্ত হয়না। নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে সব ভাংতে শুরু করে।
বেশ কিছুক্ষন পর ঈশার জ্ঞান ফিরল। ঈশা চোখ খুলেই ইভান কে দেখতে পেল। তার দিকে অসহায় দৃষ্টি নিয়ে দেখে আছে। ঈশাও নিরব দৃষ্টিতে দেখছে তার দিকে। কিন্তু পরক্ষনেই আবার তার রাগটা চাড়া দিয়ে ওঠে। তার চোখ বেয়ে আবার পানি পড়তে লাগলো। সে উঠতে চেষ্টা করলে ইভান তাকে চেপে ধরে বিছানার সাথে। ঈশা চিৎকার করে বলে
–তুমি আমাকে স্পর্শ করবে না। ছেড়ে দাও আমাকে।
ইভান আরও জোরে ঈশাকে চেপে ধরে কঠিন গলায় বলল
–ছাড়ার জন্য তো ধরিনি জান।
ঈশা আবারো চিৎকার করে বলল
–আমার সামনে থেকে চলে যাও।
ঈশার কথা যেন ইভানের কানেই গেলো না। সে নিজের মুখটা ঈশার দিকে এগিয়ে নিয়ে গেলো। ঠোঁটে ঠোট ছোঁয়াতে গেলেই ঈশা মুখ ফিরিয়ে নেয়। ইভান এক হাতে ঈশার মুখটা ঘুরিয়ে তার ঠোট দুটো নিজের ঠোটের মাঝে নিয়ে নেয়। ঈশা ছটফট করতে শুরু করে। ইভান তাকে আরও জোরে চেপে ধরে। কিছুক্ষন পর ঈশাও শান্ত হয়ে যায়। ইভান তার হাতের বাধন আলগা করে দেয়। ঈশা দু হাতে ইভানের পিঠের শার্ট খামচে ধরে। এতদিন ইভান তাকে স্পর্শ করলেও তার মনের মাঝেও কোথাও একটা সংকোচ কাজ করত। আবেগের বশে ঈশার উপরে জোর করে না বসে সেটাই ভেবে এতদিন নিজের সমস্ত আবেগ আটকে রেখেছে। আজ ঈশা নিজেই সমস্ত সংকোচ পেরিয়ে গেছে। তাই ইভানের মাঝেও কোন সংকোচ নেই ঈশাকে নিজের করে পেতে। বেশ কিছুক্ষন পর ঈশা মুখ দিয়ে ‘উম’ শব্দ উচ্চারন করলে ইভান তাকে ছেড়ে দেয়। দুজনি অনেক জোরে জোরে শ্বাস নিতে থাকে। ঈশা অন্য দিকে ফিরে তাকায়। তার চোখ বেয়ে পানি ঝরছে। ইভান একটা শ্বাস ছেড়ে ঈশার শরীরের উপরে নিজের ভর ছেড়ে দেয়। ঈশার গালে নিজের নাক ঘোষতে ঘোষতে বলে
–আজ আমি তোমার কোন কথা শুনব না। তুমি চাইলেও আমাকে আটকাতে পারবে না।
বলেই ঈশার গলায় মুখ ডুবিয়ে দেয়। ঈশা আবেশে চোখ বন্ধ করে ফেলে। ইভান তাকে ভালবাসার স্পর্শে ভরিয়ে দিচ্ছে। ঈশাও আজ তাকে বাধা দিচ্ছেনা। এই মুহূর্তে তার মন কে শান্ত করতে এই ভালবাসাময় মুহূর্তের খুব করে দরকার ছিল। কারন সে এই মুহূর্তে ইভানের ভালোবাসাটা অনুভব করতে চায়।
———-
অনেকটা সময় ফোন ভাইব্রেট করতেই ইভান নিভু নিভু চোখে রিসিভ করলো। হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে ইলহামের বিচলিত কণ্ঠ ভেসে এলো
–ইভান কই তুই? ঈশাকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না।
ইভান ঘুম জড়ানো কণ্ঠে বলল
–কি বলছিস?
–ওঠ ঘুম থেকে ভালো করে শোন। ঈশা বাসায় নেই।
এবার ইভানের ঘুম কেটে গেলো। পাশ ফিরে একবার ঈশাকে দেখে নিলো। সে বেঘরে ঘুমাচ্ছে। সে উঠে বসলো। ঠোট কামড়ে চোখটা বন্ধ করে ফেলল। এতো কিছুর মাঝে এটা মাথা থেকেই তার বেরিয়ে গিয়েছিলো। ঈশা যে তার কাছে আছে এটা অন্তত ইলহাম কে জানালেই পারত। আবারো ইলহাম বলল
–শুনতে পেয়েছিস আমি কি বলেছি?
ইভান খুব শান্ত ভাবে ‘হুম’ বলল। ইলহাম বেশ অবাক হল। ঈশাকে পাওয়া যাচ্ছে না এটা জানার পর জার সব থেকে বেশি অশান্ত হওয়ার কথা সেই নাকি সব থেকে শান্ত। ইভান এবার সাভাবিক ভাবেই বলল
–ভাবিস না ঈশা আমার কাছে আছে।
–তোর কাছে মানে?
ইভান এবার অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। কি বলবে একটু সময় নিয়ে সাজিয়ে নিলো। তারপর খুব শান্ত ভাবে বলল
–আসলে কালকের নাটকটা কেন করা সেটা এতক্ষনে নিশ্চয় বুঝতে পারছিস। এটা নিয়েই আমার উপরে কাল রাতে ছোট খাট একটা কাল বৈশাখী ঝড় বয়ে গেছে। তাই সব কিছু সামলাতেই বাসায় জানানোর বিষয়টা মাথা থেকে বের হয়ে গেছে। সরি রে। আমি আসলেই বুঝতে পারিনি পরিস্থিতি এতটা খারাপ হয়ে যাবে। আমি তো চেয়েছিলাম ঈশার মনে ভয় তৈরি করতে। কিন্তু ঈশা এতটা এভাবে রিয়াক্ট করবে সেটা বুঝতে পারিনি।
ইলহাম ইভানের কথা শুনে কিছুক্ষন চুপ করে থাকল। তারপর শব্দ করে হাসল। ইলহামের হাসি ইভানের যেন গায়ে আগুন জালিয়ে দিলো। বেশ বিরক্তি নিয়ে বলল
–তুই হাসছিস?
হাসি থামিয়ে ইলহাম বলল
–কি ধরনের কাল বৈশাখী বয়ে গেছে টা আন্দাজ করেই হাসছি। তো ঘরের পরিস্থিতি ঠিক আছে তো? তোর বউ তো আবার এসবে এক্সপার্ট। গিনেজ বুকে নাম লেখাতে পারবে।
ইভান হাসল। অসহায় হয়ে বলল
–আমি ঠিক আছি আপাতত এটাই অনেক। এর থেকে আর বেশি কিছু এক্সপেক্ট করিস না।
ইলহাম আবারো হেসে জিজ্ঞেস করলো
–ঈশা কোথায়?
–ঘুমাচ্ছে।
–ঠিক আছে তোরা সময় মতো বাসায় চলে আসিস। আমি সবাইকে বলছি।
ইভান ফোন রেখে দিলো। ঈশার দিকে ঘুরে তাকাল। কতো শান্তভাবে ঘুমাচ্ছে। অথচ কাল রাতের কথা মনে পড়তেই ইভান চোখ বন্ধ করে ফেলল। ঈশার মুখ থেকে এলোমেলো চুলগুলো সরিয়ে দিলো। গালে আলতো করে ঠোট ছোঁয়াল। ইভান উঠে বিছানা থেকে পা নামাল। সারা ঘরে চোখ বুলিয়ে নিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। ঘরের অবস্থা নিয়ে এই মুহূর্তে কিছু না বলাই শ্রেয়। খুব সাবধানে ঘরে পরা স্যান্ডেল পায়ে দিয়ে ওয়াশ রুমে গেলো।
ঈশার ঘুম ভেঙ্গে গেলে পিটপিট করে তাকায়। চারিদিকে দেখে বোঝার চেষ্টা করে ঠিক কোথায় আছে। দুই হাত মেলে আড়মোড়া ভাঙ্গতে গিয়েই খেয়াল করে হাতে ব্যান্ডেজ। তারপর উঠে বসে সারা ঘরে একবার চোখ চালিয়ে নেয়। এবার তার মাথায় বাজ পড়ে। সে যে খাটের উপরে বসে আছে সেটা ছাড়া ঘরে আর কোন জিনিস অবশিষ্ট আছে বলে মনে হয়না। রাগের মাথায় এতো কিছু করে ফেলেছে বুঝতেই পারেনি। তারপর নিজের দিকে চোখ পড়তেই ইভানের রাতের শেষ কথাটা মনে পড়ে যায় ‘তুমি চাইলেও আমাকে আটকাতে পারবে না।’ এক রাশ লজ্জা ঘিরে ফেলে। ঠোটের কোনে হাসি ফুটে উঠে। ইভান ওয়াশ রুমে থেকে বের হয়ে ঈশাকে বসে থাকতে দেখে দাড়িয়ে যায়। বোঝার চেষ্টা করে তার মনের অবস্থা। ঈশা ইভানের দিকে একবার তাকিয়ে পা নামাতেই ইভান গম্ভির গলায় বলে
–দাড়াও।
ঈশার কাছে এসে তাকে কোলে তুলে নেয়। ওয়াশ রুমের ভিতরে নিয়ে গিয়ে নামিয়ে দেয়। ঈশার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে
–কিভাবে কি করবে? হাতে পানি লাগবে তো।
ঈশা চোখ নামিয়ে নিয়ে মিন মিনে কণ্ঠে বলে
–ব্যান্ডেজ খুলে দাও। তেমন কাটেনি। ঠিক হয়ে যাবে।
ইভান তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ঈশার দিকে তাকায়। ঈশা ইভানের দিকে তাকাতেই ভয় পেয়ে যায়। চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। ইভানের বুকে মাথা দিয়ে কেদে ফেলে। ইভান বুঝতে পেরে সজত্নে তাকে জড়িয়ে ধরে। চুলের ভাজে এক হাত ঢুকিয়ে বলে
–রিলাক্স জান। একদম বকব না। ভয় পায়না।
ঈশা ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলে
–আমি এরকম করতে চাইনি।
–যা হয়েছে ভালো হয়েছে। খারাপ তো কিছু হয়নি। বরং লাভ হয়েছে।
ইভানের দুষ্টুমি ভরা কণ্ঠ শুনে ঈশা লজ্জায় মিইয়ে গেলো। তার সাথে আরও লেপটে গেলো। ইভান বুঝতে পেরে হাসল। ঈশাকে ছেড়ে দিয়ে হাত দুইটা সামনে নিয়ে ব্যান্ডেজ খুলে দিলো। ভালো করে দেখল। আসলেই তেমন কাটেনি। কয়েকটা জায়গায় ছোট ছোট কাটার ফলেই অনেক রক্ত বেরিয়েছে। ঈশার দিকে তাকিয়ে বলল
–বেশী সময় নিবিনা। ওকে?
ঈশা বাধ্য মেয়ের মতো মাথা নাড়াল। ঈশার শাওয়ার নিতে নিতেই পুরো ঘর পরিস্কার করা হয়ে গেছে। ওয়াশ রুমের দরজা খুলে দেখে নিলো। ইভান কফির কাপে চুমুক দিয়ে ফোনে কার সাথে যেন কথা বলছে। ওয়াশ রুমের দরজা খোলার আওয়াজ শুনে ইভান ফোনটা রেখে ঈশার দিকে তাকাল। ঈশা চোখ নামিয়ে নিলো। কাপটা টেবিলে রেখে তার সামনে দাড়িয়ে এক টানে দেয়ালের সাথে চেপে ধরল। ভালো করে কিছু সময় ঈশাকে দেখে নিয়ে তার সামনের ভেজা চুলগুলো কানের পিছনে গুঁজে দিয়ে খুব সভাবিক ভাবেই বলল
–তোর প্রতি আমি কতটা দুর্বল। তারপরেও তোর এতটা কাছে আসিনি। আর বাইরের একটা মেয়ের কাছে আসব? বিশ্বাস নেই আমার উপরে?
ঈশা ইভানের দিকে তাকাল। দুই হাতে গলা জড়িয়ে অনেকটা কাছে এসে বলল
–বিশ্বাস অবিশ্বাস বুঝিনা। আমার সেই ইভান কে চাই যে ঈশার জন্য পাগল। তার জিবনের সবটা জুড়ে শুধু ঈশাই থাকবে।
ইভান ঈশার কোমর ধরে আরও কাছে টেনে বলল
–আমার সবটা জুড়ে শুধু ঈশাই আছে। তোর অনুভুতি বুঝতে আমার একটুও কষ্ট হয়না। এই রুড বিহাভ, সারা এসব তো শুধু বাহানা ছিল।
ঈশা হাসল। ইভান ঈশার হাসি দেখে ভ্রু কুচকে তাকাল। নিজেকে ইভানের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বিছানায় গিয়ে বসে। কফির কাপটা তুলে নিয়ে তাতে একটা চুমুক দিয়ে বলে
–তোমার কি মনে হয় আমি সারার জন্য কাল এতো কিছু করেছি? যদি ভেবে থাক তাহলে ভুল ভাবছ।
ইভান এসে ঈশার হাত থেকে কফির কাপটা নিয়ে কফিটা শেষ করে সেটা পাশের টেবিলে রেখে দিলো। তারপর ঈশার কাছে এসে তাকে বিছানার সাথে চেপে ধরে বলল
–কেন করেছিস?
ঈশা ইভানের দিকে তাকাল। একটু অভিমানের সুরে বলল
–সেদিন তো খুব বললে আমার অনুভুতির সাথে পরিচিত তাহলে আমার অনুভুতি বুঝতে তোমার এতো সময় লাগবে কেন? আর আমার সাথে কেন কাল রুড বিহেভ করেছ?
ইভান ঈশার দিকে তাকিয়ে আছে। ঈশা আবার খুব শান্ত ভাবে বলল
–তুমি আমাকে জোর করলেও আমি তোমাকে আটকাতাম না। সেটা তুমি জানতে। তারপরেও আমার সাথে এতো নাটক করার মানে কি? এই জন্যই আমি এতো রাগ করেছিলাম। তুমি সবটা বুঝেও আমাকে কষ্ট দেয়ার জন্য নাটক করেছ। আমার খুব রাগ হয়েছিল।
ইভান ঈশার কথা শুনে তাকে নিজের সাথে জড়িয়ে নিলো। চোখ বন্ধ করে বলল
–আমি তোর মুখ থেকে শুনতে চেয়েছিলাম। তাই তো এতো কিছু করেছি। কিন্তু তুই তো তুই। সব কিছুর আগে তোর জেদ। বলবি না মানে বলবি না। আমকেই বুঝে নিতে হবে। তাই তো এবার আমারও জেদ ছিল। তুই নিজে থেকে কাছে না আসলে আমিও কিছুই বুঝবো না।
ঈশা হেসে ফেলল। ইভানও হেসে ঈশার গলায় মুখ ডুবিয়ে দিলো। ঈশা ইভান কে ছাড়াতে চেষ্টা করলো। ইভান একি অবস্থা থেকেই বলল
–চেষ্টাও করিস না। আমাকে আমার কাজে বাধা দিলে কিন্তু হাত পা বেধে রাখবো।
ঈশা হেসে বলল
–বাসায় যাবে না?
ইভান মুখ তুলে ঈশার দিকে সরু চোখে তাকাল। স্বাভাবিক ভাবেই জিজ্ঞেস করল
–কার বাসায়?
ঈশা একটু হেসে বলল
–তোমার বাসায়।
ইভান হাসল। ঈশার গালে স্লাইড করতে করতে বলল
–এতো তাড়াতাড়ি কেন? আগে হানিমুনটা সেরে ফেলি তারপর না হয় বাসায় যাওয়া যাবে।
চলবে……