তোর ছায়ার সঙ্গী হব,পর্ব ১৫,১৬
লেখক-এ রহমান
পর্ব ১৫
৩৩
ইলহাম আর ইরা এক এক করে সব জিনিস নিচে নামিয়ে রাখছে। আর ঈশা তার মা আর চাচি সেগুলো যত্ন করে গোছাচ্ছে। ইভান রা আজ ঈশাদের বাড়ির নিচ তলায় শিফট করছে। সবাই তাই খুব ব্যাস্ত। ঈশা ইভানের ঘর গুছিয়ে দিচ্ছিল। সব জিনিস পত্র বের করে সাজিয়ে রাখছিল। সব গোছানো শেষে ইভানের লাগেজ টা খুলল সে। সব জিনিস এক এক করে বের করতেই একটা প্যাকেট চোখে পড়লো। প্যাকেট টা খুলতেই তার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। সেই ছোট বেলা থেকে এখন পর্যন্ত তার সমস্ত ছবি। তার সাথে একটা ডাইরি। ডাইরিটা উলটে পালটে দেখতে লাগলো। পুরো ডাইরিটা ভর্তি লেখা। লেখার চাপে কয়েক গুন ওজন বেড়ে গিয়েছে তার। খুব যত্ন করে সেটা উলটে পালটে দেখতে লাগলো। একটা পাতায় লেখা “আমার স্বপ্ন তোকে লাল শাড়ী পরে ঘরে বউ করে আনবো। জানিনা কবে সেই স্বপ্ন পুরন হবে।” লেখাটা পড়েই একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে ঈশা সব কিছু গুছিয়ে রাখল। কিন্তু সেই ডাইরিটা নিজের জন্য রেখে দিলো। পরে সময় করে পড়বে সেটা।
সব কিছু গুছিয়ে দিয়ে ঈশা নিজের ঘরে চলে গেলো। ভেতর থেকে দরজা আটকে দিলো। ইভানের ডাইরিটা খুলে পড়তে শুরু করলো। সমস্ত ডাইরি জুড়ে ইভানের আবেগ ছড়িয়ে আছে। তার মনের সব না বলা কথা যেন আজ জীবন্ত হয়ে ধরা দিচ্ছে ঈশার কাছে। সে ইভান কে আজ অনুভব করতে পারছে।
ইভান অফিস থেকে এসে দেখে সব গোছানো শেষ। তার ঘরে ঢুকে একবার সব ভালো ভাবে দেখে নিলো। খুব সুন্দর করে গোছানো। ঠিক ও যেভাবে চায় সব সেই জায়গা মতই আছে। বিছানায় ল্যাপটপ টা রেখে একটু চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়লো। ইলহাম এসে বলল
–ভাইয়া তোমাকে মা খেতে ডাকছে।
চোখ খুলে উঠে বসে বলল
–শুরু কর আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
সব কিছুর উপরে চোখ বুলাতে বুলাতে আবার বলল
–আমার ঘর কে গুছিয়েছে রে?
–আপি। কেন?
–না এমনি। যা আসছি।
ইভান একটু হাসলো। ওয়াশ রুমের দরজার কাছে যেতেই আবার ঘুরে এলো। এসেই তার লাগেজের সব জিনিস ভালো করে খুজে দেখতে লাগলো। সব আছে শুধু তার ডাইরি নেই। ইভান একটু ভাবল। তারপর একটা শ্বাস ছেড়ে বলল
–ভেবেছিলাম বিয়ের দিন বাসর রাতে তোকে সব দিয়ে দিবো। কিন্তু সেই সুযোগ হয়নি। আজকে নিজে থেকেই সব কিছু তোর কাছে চলে গেলো।
খাওয়া শেষ করে সোফায় বসে ফোনে কি যেন মনোযোগ দিয়ে দেখছে ইভান। কলিং বেল বাজতেই ইলহাম দৌড়ে গেলো। দরজা খুলে বলল
–আপি তুমি?
ঈশা ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে বলল
–চাচি কোথায়?
–ঘরে।
ঢুকেই সোফায় বসা ইভানের দিকে চোখ পড়লো তার। মনোযোগ দিয়ে কি যেন দেখছে ফোনে।তার দিকে একবারও তাকালনা। ঈশা তার চাচির কাছে গেলো।
–চাচি…।
–কি রে ঈশা? কিছু বলবি?
— তোমার তেল রেখে এসেছিলে।
–ও ভালো করেছিস। আমি উপরে যাব ভাবছিলাম। একটু কাজ আছে।
–আচ্ছা তুমি আসো আমি গেলাম।
বলেই ঈশা বাইরে চলে এলো। ইভান তখনও একি অবস্থায় আছে। সে ইভানের দিকে দেখতে দেখতে চলে গেলো দরজার কাছে। দরজা খুলতে যাবে তখনি ইভানের কথা কানে এলো
–কান্না ছাড়া আর কিছুই কি পারিস না তুই?
ঈশা পিছনে ঘুরে দেখে ফোনের দিকে তাকিয়েই ইভান কথাটা বলেছে। কিন্তু ঈশা আশ্চর্য হল। সে যে কেঁদেছে সেটা ইভান জানলো কিভাবে। ঈশা পরিস্থিতি সামলাতে বলল
–কিছু বললে?
ইভান আগের অবস্থা থেকেই বলল
–যা বলেছি শুনতেও পেয়েছিস আর বুঝতেও পেরেছিস।
ঈশা অবাক হয়ে দাড়িয়েই থাকলো। তার দাড়িয়ে থাকা বুঝতে পেরে ইভান আবার বলে উঠলো
–তোকে বুঝতে তোর দিকে তাকাতে হয়না। আমার বুকের ভিতরে যে হার্ট টা আছে সেটাই আমাকে সব জানিয়ে দেয়।
ইভানের দিকে তাকিয়ে আছে ঈশা। ইভান এবার ঈশার দিকে তাকিয়ে বলল
–এভাবে দূর থেকে দেখে কি মন ভরে? মন ভরানোর জন্য কাছে এসে অনুভব করতে হয়।
ঈশা কোন কথা না বলে চলে গেলো। আসলে ইভানের লেখা ডাইরি পড়ে ঈশা অনেক কেঁদেছে। কারন ইভানের সমস্ত ভালোবাসা আবেগ অনুভুতি যা কখনও সে ঈশার সামনে প্রকাশ করেনি সেই সব কিছুর সমষ্টি ওই ডাইরিটা। এতদিন ধরে এতো কষ্ট পেয়েছে ইভান ঈশা বুঝতে পারেনি। ঈশার জন্য ইভানের অনুভুতি গুলা এতোই গভীর ছিল যে ঈশা সেসব পড়ে নিজের চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি। নিজের মন কে শান্ত করতে অনেক কেঁদেছে। ইভান তাকে কতটা ভালবাসে তা ঈশা উপলব্ধি করতে পেরেছে।
৩৪
রাতের ফুরফুরে হাওয়ায় ইভান ছাদের রেলিঙ্গের উপরে বসে ছাদের বিপরিত দিকে পা ঝুলিয়ে নিচে তাকিয়ে আছে। হাতে সিগারেট। গভীর ভাবে কিছু একটা ভাবছে। ঈশা কখন এসেছে সে খেয়াল করেনি। বেশ কিছুক্ষন সে দাড়িয়ে ইভান কে দেখছে। তারপর আসতে করে গিয়ে ইভানের পাশে উলটা দিকে ঘুরে ছাদের দিকে পা ঝুলিয়ে বসলো। গভীর ভাবনায় ডুবে থাকায় ঈশার উপস্থিতি বুঝতে পেরে সে একটু চমকে উঠলো । একবার ঈশার দিকে তাকিয়ে হাতের কাল ঘড়িটা দেখে বলল
–তুই এতো রাতে এখানে?
ঈশা তার কথার উত্তর না দিয়ে সামনের আকাশে চাঁদটার দিকে তাকিয়ে বলল
–কি সুন্দর চাঁদ তাই না।
ইভান ঈশার কথা শুনে একটু অবাক হয়। মাথা ঘুরিয়ে একবার চাঁদ দেখে বলল
–হুম!
ঈশা এবার উপরে তাকিয়েই বলল
–তুমি এতো রাতে এখানে কি করছ?
ইভান একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল
–কিছুনা। কিন্তু তুই এতো রাতে কেন ছাদে এসেছিস?
–তুমি আছো তাই।
ঈশার কথা শুনে ইভান তার দিকে তাকাল। হাতের সিগারেট টা ফেলে দিয়ে তার দিকে ঘুরে বসলো। ঈশার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল
–তুই কিভাবে জানলি আমি এখানে আছি?
ঈশা একটু হেসে বলল
–আন্দাজ করেছি।
–যদি না থাকতাম।
–তাহলে চলে যেতাম।
–একা একা রাতে এভাবে ছাদে আর কখনও আসবিনা।
–আসিনা তো!
ইভান এবার বিরক্ত হয়ে বলল
–ঈশা আমি সিরিয়াস!
ঈশা ইভানের দিকে তাকিয়ে বলল
–আমি এতো রাতে একা ছাদে আসিনা। আজ আসতে ইচ্ছা হল। তখন মনে হল তুমি এই সময় ছাদে থাকতে পার তাই আসলাম।
ইভান ঈশার কথা শুনে খুব শান্ত ভাবে বলল
–যদি কখনও আসতে ইচ্ছা করে তাহলে আমাকে ফোন দিবি। আমি তোকে নিয়ে আসবো। এভাবে আন্দাজ করে আর কখনও আসবিনা।
ঈশা সামনে তাকিয়েই বলল
–আর ফোন দিতে হবেনা।
ইভান ঈশার কথার মানে বুঝতে না পেরে ভ্রু কুচকে বলল
–কি বললি তুই?
ঈশা একটু হেসে বলল
–তুমি আমার কথার মানে বুঝতে পারনা এটা আমি বিশ্বাস করতে পারলাম না।
ইভান ঈশার কথায় অবাক হয়ে গেলো। সে বুঝতে পারল ঈশা তাকে কিছু বলতে এসেছে। আর সে ততোক্ষণ পর্যন্ত বলবে না যতক্ষণ না তার মনে হইছে ইভান তার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছে। তাই ইভান হেয়ালি না করে তার কথায় মনোযোগ দেয়ার চেষ্টা করছে। ঈশার মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে চেষ্টা করছে। ঈশা ইভানের দিকে না তাকিয়েই একটু হেসে বলল
–আগের মতো অভ্যাস টা এখনও আছে। কথা শোনার জন্য মনোযোগ দেয়ার চেষ্টা কর।
ঈশা যে ইভানের আচরণ বুঝে ফেলবে ইভান ভাবেনি। একটু হেসে বলল
–তোর কথা শোনার জন্যই আমি অপেক্ষা করে থাকি কিন্তু তুই বলিস না।
ঈশা কিছু বলল না। ইভান জিজ্ঞেস করলো
–এখন তোর শরীর কেমন আছে? জর কমেছে?
ঈশা ইভানের দিকে তাকিয়ে বলল
–বুঝতে পারনা?
ইভান একটু হেসে বলল
–সে আমি না দেখেও বুঝতে পারি। কিন্তু তোর কাছ থেকে জানতে ইচ্ছা করলো।
–ভালো আছি।
দুজনি বেশ কিছুক্ষন চুপ করে থাকলো। ঈশা আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। আর ইভান ঈশার দিকে। ঈশা ভাবছে কিভাবে কথা শুরু করবে। আর ইভান অপেক্ষা করছে ঈশা কি বলবে সেটা শোনার জন্য। বেশ কিছুক্ষন পর ঈশা আকাশের দিকে তাকিয়েই বলল
–তোমার ফোনের ওয়াল পেপারে আমার যে ছবিটা আছে সেটা কোথায় পেলে?
ঈশার এমন কথায় ইভান একটু অপ্রস্তুত হয়ে যায়। কারন এই ছবিটা অল্প কিছুদিন আগের তোলা। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল। ঈশার কাছে এরকম কোন ছবিই নেই। ইভান কথাটাকে এভয়েড করার জন্য একটু অবাক হয়ে বলে
–সিরিয়াসলি ঈশা! তুই আমার ফোন চেক করিস?
ঈশা ভ্রু কুচকে তার দিকে তাকিয়ে বলল
–কেন? তোমার ফোনে কি এমন সিক্রেট আছে যা আমার জানা যাবেনা?
ইভান কি বলবে বুঝতে পারলনা। পরিস্থিতি সামলাতে বলল
–এভাবে চেক করার কি আছে। চাইলে আমি নিজে থেকেই দিয়ে দিতাম।
–এটা কিন্তু আমার প্রশ্নের উত্তর না।
ইভান এবার ঠোঁট কামড়ে ঈশার দিকে তাকিয়ে ভাবছে আচ্ছা রকম পরিস্থিতিতে পড়ে গেলো। সে এই প্রশ্নের উত্তর টা আসলে দিতেই চায়না। কিন্তু সে এটাও জানে ঈশা নাছোড়বান্দা। একবার যদি মনে হয়েছে সেটা শুনেই তবে ক্ষান্ত হবে। একটু সাজিয়ে মিথ্যা বলল ইভান
–ইরার কাছে পেয়েছি।
ইভান যে মিথ্যা বলছে তা বুঝতে পেরে ঈশা একটু হাসল। আর সত্যিটা সে বলতে চাইছেনা তাই আর জোর করলনা। ঈশার মুখের দিকে তাকিয়ে ইভানও বুঝতে পারল ঈশা তার মিথ্যে ধরে ফেলেছে। তাই আর কথা বাড়ালনা। ইভান পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করে আরেকটা সিগারেট জালানোর জন্য বের করলো। তখনি ঈশা সিগারেটের দিকে তাকিয়ে বলল
–তুমি না বলেছ আমাকে পেলে আর সিগারেট খাবেনা।
ঈশার কথা শুনে ইভান ঈশার দিকে ঘুরে তাকায়। কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলে
–পেলে তো দুনিয়া ছেড়ে দিতেও একবার ভাবতাম না।
ঈশা ইভানের দিকে তাকিয়ে বলল
–এখনও কি বাকি আছে?
ইভান ঈশার কথা শুনে শব্দ করে হেসে উঠল।তারপর নেমে একটু সামনে গিয়ে একটা সিগারেট হাতে নিয়ে বলল
–তুই কি ভাবছিস সেদিন রাতে সত্যি আমাদের মাঝে কিছু হয়েছে? আমি তোকে জালানোর জন্য এমনি বলেছিলাম। কিছুই হয়নি আমাদের মাঝে।
কথাটা শেষ করেই ইভান হাতে থাকা সিগারেট টা ঠোঁটে লাগিয়ে লাইটার টা জালাতেই ঈশা গিয়ে ইভানের পিঠে নিজের মাথাটা ঠেকিয়ে বলে
–সেটা আমি বিশ্বাসও করিনি।
ইভান লাইটার টা নিভিয়ে ঠোটের সিগারেট টা নিচে ফেলে দিয়ে ঈশার দিকে ঘুরে বলে
–তাহলে?
ঈশা একটু হেসে বলে
–যেদিন রাতে তুমি আমাকে ঔষধ খাওয়াতে আমার ঘরে এসেছিলে। চাইলেই অনেক কিছুই করতে পারতে। আর আমি বাধাও দিতাম না। ভালো করেই বুঝতে পেরেছিলে আমি তোমার মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলাম কিন্তু তবুও তুমি আমার মুখ থেকে শোনার অপেক্ষা করছিলে। আর মাতাল অবস্থায় তুমি আমার সুযোগ নিবে তা আমি কিভাবে বিশ্বাস করি বল।
ইভান ঈশার দিকে নিরব দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।আজ ঈশা অনেক কিছু বলতে চায়। আর ইভান তাকে বলার সুযোগ দিতে চায়। ঈশা ইভানের দিকে তাকিয়ে বলল
–তুমি মজা করছিলে আমি সুযোগ দিয়েছিলাম।
বলেই ইভানের দিকে এগিয়ে গেলো তারপর তার টি শার্ট টা খামচে ধরে নিজেকে তার সাথে লেপটে দিয়ে বলল
–তাই বলে তোমার সব কথা বিশ্বাস করে নিয়েছি সেটা ভাবার দরকার নেই। আমি তোমার শিরায় শিরায় বিরাজ করি মিস্টার ইভান মাহমুদ।
ইভান ঈশার কথা শুনে কিছু বলতে পারলনা। অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকলো। ইভানের মুখের কাছে নিজের মুখটা এনে ঈশা বলল
— তোমার প্রতি এভাবেই সম্পূর্ণ আড়ষ্ট হয়ে পড়ি। তোমাকে ছাড়াতে গেলে আরো ক্রমশ জড়িয়ে যাই আমি। আমার কিছুই আর করার থাকে না। তুমি এভাবেই বেঁধে ফেলো যদি দূরে যেতে চাই। যেখানেই যেতে চাই, সেখানেই বিছিয়ে রেখেছো তোমার অনুভুতি। তোমাকে কি অতিক্রম করা কখনো সম্ভব!!
“এই জীবনের প্রাপ্তির হিসাবে শুধুই তুমি।“
ঈশার কথা শুনে ইভান এবার আকাশ থেকে পড়লো। ইভানের বুঝতে বাকি রইলনা যে ঈশা সেদিন যতটা মাতলামি করেছিলো ততটা মাতাল ছিলোনা। যা বলেছিল সব সজ্ঞানে। ইভান ঈশা কে ছেড়ে দিয়ে রেলিঙ্গের ধারে গিয়ে দাড়িয়ে সামনে তাকিয়ে বলল
–তাহলে সেদিনের সব কথা তোর মনে আছে।
ঈশা একটু হেসে বলল
–ভেবেছিলাম তুমি বুঝতে পারবে।
ইভান একটু হেসে বলল
–স্ট্রেঞ্জ! সেটাই ভাবছি আমি কেন বুঝতে পারলাম না। সেদিন রাতেও তুই যা করেছিলি সব জেগেই করেছিলি।
ঈশা তার দিকে তাকিয়ে বলল
–মাঝে মাঝে না বুঝতে পারার সুবিধা আছে। সেদিন যদি বুঝতে তাহলে আজ কি আবার শুনতে পেতে?
ঈশার কথা শুনে কিছুক্ষন তার দিকে তাকিয়ে থাকলো ইভান। দুজনের দৃষ্টি দুজনের উপরে স্থির। কেউ কোন কথা বলছেনা। ইভান এভাবে কিছুক্ষন থেকে পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট টা বের করে নিচে ফেলে দিলো। তারপর ঈশার কাছে এসে তার কোমর ধরে এক টান দিলো। নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে তার ঠোঁট দুটো নিজের ঠোটের মাঝে আবদ্ধ করে নিলো। আজ ঈশাও সাড়া দিয়ে ইভানের পিছনের টি শার্ট খামচে ধরল। বেশ কিছুক্ষন পর ছেড়ে দিয়ে ইভান বলল
–এই নেশার কাছে ওই নেশাটা কিছুই না। ওটার সত্যিই আর দরকার নেই।
ইভানের কথা শুনে ঈশা লজ্জায় চোখ নামিয়ে নিলো। ইভান ঈশার মুখটা আলতো করে তুলে বলল
–তোর এই লজ্জা মাখা মুখটা আমাকে আরও বেশি তোর কাছে টানে।
ঈশা এবার লজ্জায় ইভানের বুকে মুখ লুকাল। ইভানও পরম ভালবাসায় তাকে জড়িয়ে নিলো। দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করে অনুভব করছে। এর মাঝেই ইভান বলল
–এই মুহূর্তটার জন্য আমি এতো বছর অপেক্ষা করেছি। কিন্তু তুই যে আমাকে এতো বছর অপেক্ষা করালি তার শাস্তি কি হবে বল?
ঈশা ইভান কে ছেড়ে দিয়ে বলল
–তোমার এই শাস্তির লিস্ট কি এই জীবনে কখনও শেষ হবে?
ইভান ঈশাকে আবার জড়িয়ে ধরে বলল
–এই জীবনে আমার কোন শাস্তি থেকে তুই বাঁচতে পারবিনা।
ঈশার কপালে নিজের কপাল ঠেকিয়ে বলল
–আমার এই ভালবাসায় ভরা শাস্তি শুধুই তোর জন্য। ইনফ্যাক্ট আমার আবেগ অনুভুতি সবই শুধুই তোর।
ইভানের কথা শুনে ঈশা কেঁদে ফেললো। ঈশাকে কাঁদতে দেখে ইভান একটু বিচলিত হয়ে বলল
–কি হয়েছে জান? কাদছিস কেন?
ঈশা আরও জোরে কেঁদে ফেললো। ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলল
–তোমাকে আমি অনেক কষ্ট দিয়েছি। অনেক বেশি। কিভাবে সহ্য করেছো? আমাকে কিভাবে এতো সহজে মাফ করতে পারলে? আমি অনেক খারাপ। আমি শুধু তোমাকে কষ্ট দেই।
ইভান পরম যত্নে ঈশার চোখের পানি মুছে দিয়ে তাকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বলল
–আমি তোকে তোর মতো করেই ভালবেসেছি। শুধু তোর ভালোবাসা টা না তোর রাগ অভিমান ঘৃণা সবটাই আমার নিজের করে নিয়েছি। তুই আমাকে যতোই ঘৃণা কর না কেন তাতে আমার কোন আফসোস নেই। কারন এই সব কিছু তো আমারি হওয়ার কথা ছিল। তুই আমার অস্তিত্ব। আর থাকলো ভালবাসা সেটা নাহয় আমি আমার ভালোবাসা দিয়েই জয় করে নিবো।
ইভানের কথা শুনে ঈশা তাকে জড়িয়ে ধরল। ইভানও শক্ত করে ঈশাকে জড়িয়ে ধরে বলল
–তোকে খুব ভালোবাসি জান। নিজের থেকেও বেশি।
চলবে……।
(এরপর কারা কারা হ্যাপি একটু বলেন তো!)
তোর ছায়ার সঙ্গী হব
লেখক-এ রহমান
পর্ব ১৬
৩৫
সকাল থেকে ঈশা খুব ব্যাস্ত। একবার এই ঘরে তো একবার ওই ঘরে। তার মা আর ইরা দাড়িয়ে তাকেই দেখছে। সে ভ্রু কুচকে নিজের সব জিনিস খুঁজে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে কিছু জিনিস খুঁজে পাচ্ছেনা তা খুজতে খুব ব্যস্ত। ঘরের মধ্যে ঈশা নিজের সব প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র দুইটা লাগেজে ভোরে নিচ্ছে। এই বাড়িতে ওর যত জিনিস পত্র আছে সব কিছুই গুছিয়ে নিচ্ছে। কিছুই বাদ রাখছেনা। কিন্তু তাকে কেউ কোন প্রশ্ন করার সাহস পাচ্ছেনা। সে মনোযোগ দিয়ে লাগেজের দিকে তাকিয়ে আছে।
–ঈশা তুই কি কোথাও যাচ্ছিস?
চাচির আওয়াজে সবাই তার দিকে ঘুরে তাকায়। ঈশা ছোট্ট করে হ্যা বলে। এবার তার মা তার দিকে ঘুরে তাকিয়ে বলে
–আমিও এই প্রশ্নটাই করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তুই রাগ করবি তাই করতে পারিনি।
ঈশা আবার ব্যাগ গোছাতে গোছাতে বলে
–বললাম তো যাচ্ছি।
–কোথায়?
ঈশার মা জিজ্ঞেস করে। ঈশা উঠে দাড়িয়ে তার মায়ের সামনে এসে বলে
–মা আমার বিয়ে হয়েছে। আর কতদিন তোমাদের বাসায় থাকব। ৫ বছর হল তো।
ঈশার কথা তার মা আর চাচির মাথার উপর দিয়ে গেলো। দুজনি একবার ঈশার দিকে তাকাল। তারপর একে অপরের দিকে তাকাল। ঈশার চাচি শান্তভাবে বলল
–তা না হয় বুঝলাম। কিন্তু এখন কই যাচ্ছিস তা এখনো বুঝতে পারলাম না।
ঈশা বিরক্ত হয়ে কিছু বলতে যাবে তখনি ইলহাম এসে বলল
–আপি তুমি ডেকেছ?
ঈশা তার দিকে তাকিয়ে বলল
–হ্যা।আমাকে একটু হেল্প কর!
–কি হেল্প আপি?
–এগুলা আমার সাথে নিচে নিয়ে চল।
–কোথায়?
ঈশা বিরক্ত হয়ে বলল
–তোদের বাসায়।
সবাই ঈশার কথা শুনে তার দিকে তাকিয়ে আছে। ঈশা এবার খুব বিরক্ত বোধ করে বলল
–এভাবে তাকানোর কি আছে? বিয়ের পর মেয়েরা তো শ্বশুর বাড়িতেই যায়। নাকি সারাজীবন আমি বাসায় বসে থাকব।
ঈশার চাচি তার দিকে হা করে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো
–কোথায় যায়?
ঈশা বিরক্ত হয়ে কোন কথার উত্তর না দিয়ে ইলহাম কে বলল
–তুই কি আমাকে হেল্প করবি নাকি আমি নিজেই নিয়ে যাব?
ইলহাম কিছু না বলে তাড়াতাড়ি করে তার একটা বড় লাগেজ আর ছোট একটা ব্যাগ হাতে নিয়ে নিচে নেমে গেলো। ঈশা অন্য লাগেজ টা চেন লাগিয়ে বন্ধ করে ইরা কে ডাকতে লাগলো। ইরা দৌড়ে এসে বলে
–কি হয়েছে আপু?
ঈশা লাগেজটা দেখিয়ে দিয়ে বলল
–এটা নিতে আমাকে হেল্প কর।
–কোথায় নিতে আপু?
ঈশা রেগে বলল
–বেয়াদব কথাকার বেশি কথা বলিস! আমার সাথে ধরে নিয়ে চল!
বলেই লাগেজ টা ঈশা ধরে টানতে লাগলো। ইরা কি করবে বুঝতে না পেরে সেও এসে ধরে ফেললো। তারা দুজনে লাগেজ নিয়ে বের হয়ে গেলো। ইভানের মা ঈশার মাকে বলল
–ভাবি আমার মনে হচ্ছে কিছু একটা গণ্ডগোল আছে!
ঈশার মা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো। তারপর ইভানের মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল
–যদিও কিছু বুঝতে পারছিনা কিন্তু আন্দাজ করতে পারছি। তাড়াতাড়ি নিচে চল।
তারপর দুজনেই নিচে চলে গেলো দেখতে। নিচে গিয়ে দেখে ঈশা তার সমস্ত জিনিস পত্র এক এক করে ইভানের ঘরে আনপ্যাক করছে। সবাই দরজায় দাড়িয়ে ঈশাকে দেখেছে। সে কাউকে দেখছে না। নিজের কাজে ভীষণ ভাবে ব্যস্ত। এমন সময় ঈশার মার হাতে থাকা ফোন বেজে উঠে। ফোনের শব্দে সবাই চমকে যায়। ঈশা তার মায়ের দিকে এমন ভাবে তাকায় যেন ফোন বাজাতে তার বিরাট কোন কাজের ব্যঘাত ঘটেছে। তার মা ঈশার দিকে তাকিয়ে ফোন ধরে ফেলে।
–হ্যালো
ঈশার বাবা অপর পাশ থেকে বলে
–শোন আমি আজ দুপুরে বাসায় আসবনা।
ঈশার মা বলে
–না আসলে দেখেবে কিভাবে তোমার বড় মেয়ের কি হয়েছে।
ঈশার বাবা বিচলিত হয়ে বলে
–কি হয়েছে ঈশার?
–জানিনা। শরীর খারাপ হবে হয়ত।
–কি বলছ? ঠিক করে বল?
–বাড়ি থেকে নিজের সব জিনিস এনে ইভানের ঘরে গুছিয়ে রাখছে।
ঈশার বাবা তার মায়ের কথা শুনে কিছুক্ষন চুপ করে থাকলেন। তারপর শব্দ করে হেসে বললেন
–কিন্তু ইভান তো বাসায় নেই।
–তাতে কি? অফিস থেকে আসবে তো। একবারে তো আর যায়নি।
তিনি আরও শব্দ করে হাসলেন। ঈশা তার মায়ের কথা শুনে বললেন
–কি হচ্ছে এখানে? সবাই এমন জটলা পেকে রেখেছ কেন? নিজের কাজে যাও। আর আমাকেও আমার কাজ করতে দাও। তোমাদের জন্য কাজে মনোযোগ দিতে পারছিনা।
বলেই সে নিজের মতো কাজে মনোযোগ দিলো। কিন্তু কেউ কোথাও গেলো না। সবাই চুপ করে দাড়িয়ে তার কাজ দেখছে। সে ইভানের আলমারি খুলে তার সমস্ত কাপড় এক পাশে ঠিক ভাবে গুছিয়ে রাখল। তারপর এক পাশে নিজের কাপড় গুছিয়ে রাখল। ড্রেসিং টেবিলে তার সমস্ত কসমেটিক্স এক এক করে গুছিয়ে রাখল। পুরো ঘর গোছানো শেষ হলে সে মাথা তুলে দেখে সবাই তার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। সে বিরক্ত হয়ে বলে
–এখানে কি সিনেমা চলছে?
সবাই মাথা নাড়িয়ে না বলে। তাদের এভাবে মাথা নাড়ানো দেখে সে বিরক্ত হয়ে বলে
–তাহলে তোমরা কেন নিজেদের কাজ বাদ দিয়ে আমাকে দেখছ?
বলতেই যে যার মতো চলে গেলো।
৩৬
ঈশা বারান্দায় দাড়িয়ে সামনে তাকিয়ে আছে। বিকেল হয়ে গেছে। ইভান রাতে দেরি করে আসে। কারন ঈশা থাকেনা জন্য। ঈশা এসেছে শুনলে হয়ত এখনি চলে আসবে। কিন্তু ঈশা তাকে বলতে চায়না। ইভান কে সারপ্রাইজ দিতে চায়। আর সবাইকে স্ট্রিক্টলি নিষেধ করে দেয়া হয়েছে যাতে কেউ ইভান কে কিছু না বলে। তাই তো কেউ তাকে কিছুই বলেনি। কিন্তু ইভান জানেনা বলেই রাতে হয়ত দেরি করে আসবে। ঈশার যে অপেক্ষার প্রহর শেষ হচ্ছেনা। এই টুকু সময় অনেক বেশি মনে হচ্ছে। অথচ ইভান তার জন্য বছরের পর বছর অপেক্ষা করে আছে। কোন অভিযোগ করেনি কখনও। তাকে না পাওয়ার যে ক্ষত তার মাঝে তৈরি হয়েছে সেটাও সে কখনও বুঝতে দেয়নি। সব সময় তাকে ভালো রাখার চেষ্টা করেছে। তার ভালো থাকার মাঝেই নিজের সুখ খুঁজে নিয়েছে। ভাবতেই ঈশার চোখ ভরে এলো। আর অপেক্ষা করতে না পেরে ইভান কে ফোন দিলো। ইভান ল্যাপটপে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছিলো। ফোন বাজতেই পাশে রাখা ফোনের স্ক্রিনের দিকে বিরক্তি নিয়ে তাকাল। ভাবল কাজের সময় ফোন ধরবেনা। কিন্তু স্ক্রিনে ঈশার নামটা দেখে তার সমস্ত টেনশন ক্লান্তি দূর হয়ে গেলো। একটু হেসে ফোন ধরেই বলল
–কি ব্যাপার মিসেস ইভান মাহমুদ আমাকে মিস করছেন বুঝি?
ঈশা ঠোঁট কামড়ে হেসে বলল
–আমি তো আর তোমার বাসায় তোমার ঘরে থাকিনা যে ফোন করে জিজ্ঞেস করবো কখন আসছ। তুমি সময় বলবে তারপর আমি অধির আগ্রহে বসে অপেক্ষা করবো।
ইভান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল
–আর কত আমাকে অপেক্ষা করাবি বল?
ঈশা হেসে বলল
–যে জিনিস সহজে পাওয়া যায় তার মুল্য থাকেনা। ধৈর্যের ফল সব সময় মিষ্টি হয়।
–এতো বছর ধরে ধৈর্য ধরেই আছি। কবে যে এর শেষ হবে!
ইভান অসহায়ের মতো কথাটা বলল। ঈশা তার কথা শুনে নিজের হাসি চেপে রেখে বলল
–তুমিই না বল আমার জন্য সারাজীবন অপেক্ষা করতে পারবে। তাহলে এখন কি হল?
ইভান সিরিয়াস হয়ে বলল
–ভয় পাই। তোকে পেয়ে মরে গেলেও কোন আফসোস থাকবেনা। কিন্তু তোকে পাওয়ার আগেই যদি মরে যাই! তোর ভালোবাসা অনুভব করার আগেই যদি আমার কিছু হয়ে যায় তাহলে তুই খুব কষ্ট পাবি। আর তোকে কষ্টে থাকতে দেখলে আমি মরেও শান্তি পাবনা।
–কোথায় থেকে আসে এতো ভালোবাসা?
ঈশা আবেগি হয়ে জিজ্ঞেস করলো। ইভান একটু হেসে বলল
–যেখান থেকে ভালোবাসার সৃষ্টি হয়েছে ঠিক সেখান থেকেই।
ঈশা হেসে ফেলে। তার হাসি শুনে ইভানের মন ভালো হয়ে যায়। সে একটা স্বস্তির নিশ্বাস ছেড়ে বলে
–তোর এই হাসির মাঝেই আমার সব কষ্টের শেষ। তুই এভাবে হাসতে থাকলে আমি মৃত্যু পর্যন্ত তোর জন্য অপেক্ষা করতে পারব।
ইভানের কথা ঈশার মন ছুয়ে যায়। এতোটা ভাললাগা কাজ করে যে চোখ ছলছল করে উঠে। ঈশা চুপ করে থাকে। কারন কথা বলতে গেলেই সে কেঁদে ফেলবে। ঈশার অবস্থা ইভান বুঝতে পারে। ঈশাকে শান্ত করতে বলে
–ভাবিস না এতো সহজে মরবনা। আমি মরে গেলে তোকে কে বিরক্ত করবে বল।
ঈশা একটু হাসল। ইভান বলল
–সন্ধার মধ্যেই চলে আসবো।
বলেই ফোনটা রেখে দিলো। ঈশা ফোন রেখে বেশ কিছুক্ষন মুখে হাত দিয়ে হাসল। ইভান বুঝতেও পারছেনা তার জন্য কত বড় সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে।
৩৭
সন্ধ্যা হয়ে এলো তার পরেও ইভানের কোন খবর নেই। কিন্তু সে তো বলেছিল যে সন্ধ্যার মধ্যেই চলে আসবে। কিন্তু এখনো এলনা। তাহলে কি আরেকবার ফোন দিবে। না এতবার ফোন দিলে ইভান সন্দেহ করবে। কারন ঈশা তাকে কারন ছাড়া খুব কমই ফোন করে। ঈশা ঘরে বসেই ভাবছে এতোটা সময় অপেক্ষা করলো আর একটু অপেক্ষা করুক। চলেই আসবে। ভেবে বাইরে গেলো। তার চাচি রান্না ঘরে চা বানাচ্ছে। ঈশা রান্না ঘরে ঢুকে পাশে তাকের উপরে বসে বলল
–আমাকে ডাকনি কেন চাচি?
ইভানের মা একটু হেসে বলল
–তুই রেস্ট নিচ্ছিলি তাই ডাকি নি।
–নিচ্ছিলাম না। এমনিতেই বসে ছিলাম।
ইভানের মা ঈশার মাথায় হাত দিয়ে বলল
–জানিস তুই এসেছিস আমার বিশ্বাসই হচ্ছেনা। মনটা আজ ভরে গেলো তোকে দেখে।
ঈশা তাকের উপর থেকে নেমে ইভানের মাকে জড়িয়ে ধরে বলে
–আসতে তো আমাকে হতোই। তোমার ওই জেদি ছেলেকে দূর থেকে আর সামলাতে পারছিলাম না। তাই তো বাধ্য হয়ে এই বাড়িতে আসতে হল।
ইভানের মা চোখ মুছে কিছু বলতে যাবে তখনি ঈশার ফোন বেজে উঠলো। অপরিচিত একটা নাম্বার থেকে ফোন এসেছে। ধরবে কি না একটু ভেবে ফোনটা ধরেই ফেললো। ফোনটা ধরেই ওপাশের থেকে কিছু একটা শুনে ঈশার হাত থেকে ফোনটা পড়ে গেলো। ইভানের মা জিজ্ঞেস করলেন
–কি হয়েছে?
ঈশা তার মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল
–তোমার ছেলে এক্সিডেন্ট করেছে।
কথাটা শুনেই ইভানের মা কাঁদতে শুরু করে দিলো। ঈশা নিজেকে শক্ত রেখে বলল
–আমাদের হাতে সময় নেই। এখনি হসপিটাল যেতে হবে।
বলেই ঈশা নিজের বাসায় ফোন করে দিলো। সবাই উপর থেকে নেমে এলো। হসপিটালে যাওয়ার জন্য বের হল। রাস্তায় ঈশা তার বাবা আর ইভানের বাবাকে ফোন করে জানিয়ে দিলো। কিছুক্ষন পর সবাই হসপিটালে পৌঁছে গেলো। হন্তদন্ত করে সবাই ইভান কে খুজতে লাগলো। সামনে দেখল রাশিক আর সাহিল দাড়িয়ে আছে। পাশে তাকাতেই ঈশার চোখ পড়লো ইভানের দিকে। হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে আছে। আকাশি রঙের শার্টটাতে ছোপ ছোপ রক্তের দাগে বেগুনি বরন ধারন করেছে। ঈশা দৌড়ে গেলো ইভানের কাছে। একটু ঝুকে ইভানের মুখে হাত দিয়ে বলল
–তোমার কিচ্ছু হবেনা। তুমি ঠিক হয়ে যাবে।
ইভানের চোখ বন্ধ হয়ে আসছে। তবুও সে জোর করে খুলে ইশাকে দেখছে। মন ভরে দেখছে। আর কখনও দেখতে পাবে কিনা জানেনা। ঈশা ইভানের চোখ বন্ধ হওয়া দেখে বলল
–চোখ খুলে রাখো। তোমার কিচ্ছু হবেনা। ইভান! আমার কথা শুনতে পাচ্ছ? প্লিজ ইভান! তোমাকে ছাড়া আমি বাচবনা। তোমাকে ছাড়া আমি শুন্য। আমার জন্য হলেও তোমাকে বাঁচতে হবে। আমি তোমাকে আমার ভালোবাসা দিয়ে ভরিয়ে দিবো। তুমি যে ভালোবাসার জন্য এতদিন অপেক্ষা করে ছিলে সবটা আমি তোমাকে দিবো। প্লিজ ইভান চোখ খোল।
ইভানের চোখ বন্ধ হয়ে গেলো। সে ঈশার মুখ থেকে শুধু নিজের নামটা পর্যন্ত শুনতে পেয়েছিল। তার পরের কথা গুলো তার কানে যাওয়ার আগেই তার চোখ বন্ধ হয়ে যায়। প্রিয়তমার যে ভালোবাসা টুকু অনুভব করার জন্য এতদিন অপেক্ষা করেছিলো। যে ভালবাসাটা তার চোখে নিজের জন্য দেখতে চেয়েছিল সেটা ঈশা প্রকাশ করলো ঠিকই কিন্তু ইভানের দেখার ভাগ্য হলনা। ইভান ঈশাকে বলেছিল যে তার মনে জমিয়ে থাকা ভালোবাসা প্রকাশ করার আগেই যদি ইভানের কিছু হয়ে যায় তাহলে সব থেকে বেশি কষ্ট পাবে ঈশা। তার আফসোসের শেষ থাকবেনা। সেটাই কি হতে যাচ্ছে ঈশার জীবনে? ঈশা ইভান কে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিল। কিন্তু সে নিজেই অনেক বড় সারপ্রাইজের সম্মুখীন হয়ে গেলো।
চলবে………।