তোর ছায়ার সঙ্গী হব,পর্ব ২১,২২
লেখক-এ রহমান
পর্ব ২১
৪৮
চেয়ারে হেলানি দিয়ে স্থির দৃষ্টিতে ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে আছে ইভান। দরজায় নক করতেই ওই অবস্থা থেকেই বলল
–কামিং!
বলেই চোখ তুলে তাকাতেই দেখল রিহাব অগ্নি দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। তার দৃষ্টির মানে বুঝতে পেরে ইভান একটু হাসল। তারপর খুব শান্ত ভাবে বলল
–বস।
রিহাব রেগে বলল
–আমি যা জানতে এসেছি সেটা বল।
ইভান একটু হেসে বলল
–আগে তো বস। তারপর বলি। অনেক কথা তো। বলতে সময় লাগবে।
রিহাব সামনের চেয়ারে বসে ইভানের দিকে তাকিয়ে বলল
–তোর এলোমেলো কথায় আগেই সন্দেহ হয়েছিলো কিন্তু এরকম কিছু সেটা বুঝতে পারিনি।
ইভান শব্দ করে হাসল। রিহাব রেগে বলল
–তুই কি জানিস ওখানে কি হতে যাচ্ছিলো? কোন ধারণা আছে আমি একটু লেট করলে কি হতো?
ইভান শান্ত দৃষ্টিতে রিহাবের দিকে তাকিয়ে বলল
–তোর কি মনে হয় আমি কোন প্রস্তুতি ছাড়াই এরকম একটা কাজে হাত দিবো। তোর সাথে সেদিন কথা বলেই আমি সব খবর নেই। শোভনের সাথে ইরার প্রেমের সম্পর্ক হয়ত এখনো হয়ে উঠেনি তবে ইরার অনুভুতি গুলো তার প্রতি ধিরে ধিরে গভীর হতে শুরু করেছিলো। শোভন সব কিছুই খেয়াল করছিলো। আর সে অল্প কিছুদিনেই ইরাকে প্রপোজ করত। আর ইরা যেহেতু ওকে পছন্দ করে তাই না বলার কোন প্রশ্নই উঠে না। শোভনের আচরণ সম্পর্কে ইরা কিছুই জানেনা। আর জানালেও সে বিশ্বাস করত না। উলটা আমাকেই ভুল বুঝত। যে বোকামিটা তুই করেছিস। তাই তো ছোট একটু নাটক করতে হল।
রিহাব হতাশ হয়ে বলল
–তুই তো নিজেও এটা করতে পারতিস আমাকেই কেন পাঠালি?
ইভান মুখ চেপে হেসে বলল
–নাহলে এই ভুল বুঝাবুঝির অবসান হতে আরও দেরি হতো। কিন্তু আমি আর সময় নষ্ট চাইনা। আমি চাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিয়েটা হয়ে যাক।
রিহাব এবার রেগে চেয়ার থেকে উঠে দাড়িয়ে বলল
–তুই যা ভাবছিস তা কখনই হবে না। ইরা এই বিয়েতে রাজি না। আর আমি ওকে জোর করে বিয়ে করবোনা।
কথা শেষ করেই রিহাব চলে যাওয়ার জন্য যেতে নিলেই ইভানের কথায় থেমে যায়।
–যদি ইরা রাজি হয় তাহলে?
রিহাব এবার নিজেকে শান্ত করে আবার ইভানের সামনের চেয়ারে বসে খুব শান্ত ভাবে বলল
–তুই আসলে কি চাইছিস বল তো?
–আমি চাইছি তোর আর ইরার বিয়েটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হয়ে যাক।
–কিন্তু আমি এই বিয়ে করতে চাইছিনা।
–তুই তো ইরাকে পছন্দ করিস তাহলে কেন চাইছিস না?
–আমি ইরাকে পছন্দ করি ঠিকই কিন্তু ইরা আমাকে পছন্দ করেনা। তাই আমি জোর করে কিছুই করতে চাইছিনা।
–ইরা খুব ইমোশনাল। ওর ইমোশন ক্যাপচার করা খুব একটা কঠিন ব্যাপার না।
রিহাব একটু রেগে বলল
–তুই কি বলছিস সেটা বুঝতে পারছিস নাকি না বুঝেই বলছিস? সব জায়গায় তোর এই নাটক কাজে দেয়না ইভান। এটা আমার লাইফ! সারাজিবনের একটা সম্পর্ক। আমি এখানে কোন রিস্ক নিতে চাইনা। আমি এমন কিছুই করতে চাইনা যাতে এটার প্রভাব ভবিষ্যতে পড়ে। তুই কি আবার সেই ৫ বছর আগের ঘটনা তৈরি করতে চাইছিস? তোর অনেক ধৈর্য তাই তুই সব কিছু মেনে নিয়েছিলি। কিন্তু আমার অতো ধৈর্য নেই। আমি আমার জীবনের এতগুল বছর সামান্য একটা ভুল বুঝাবুঝির অবসান হওয়ার অপেক্ষায় নষ্ট করতে পারিনা।
ইভান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল
–আমার আর ঈশার বিষয়টা সম্পূর্ণ আলাদা। তুই সবটা জেনেও এমন কথা কেন বলছিস? আমাদের মধ্যে আদৌ কি কোন ভুল বুঝাবুঝি হয়েছিলো? ঈশার মধ্যে আমাকে বোঝার ভুল থাকতে পারে কিন্তু আমার মধ্যে ঈশার প্রতি কোন মান অভিমান কিছুই ছিল না। আমাদের সম্পর্ক ভাঙ্গার জন্য অনেক কিছুই করা হয়েছিলো। আর আমি এতো বছর ঈশার উপরে অভিমান করে যে দূরে ছিলাম না সেটা তুই জানিস। কারণটাও ভালো করেই জানিস। তাই এরকম ভাবার কোন কারন নেই। আর এখানে ভুলের কোন জায়গা নেই রিহাব। ইরাকে শুধু ওর ভুলটা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়া হয়েছে। যা হয়েছে সেটা আজ নাহলেও পরে তো হতোই। তখন কি হতে পারতো ভেবেছিস একবারও।
রিহাব একটু ভেবে বলল
–আমাকে নিয়ে ইরার মনে এমনিতেই অনেক খারাপ ধারনা আছে। কিছু করতে গিয়ে বিষয়টা যদি আরও খারাপ হয়ে যায় তাহলে?
ইভান একটু হেসে বলল
–ওই সিচুয়েশনে তুই শোভনের থেকেও ওর কাছে বেশি অপরিচিত ছিলি। কিন্তু শোভনের কাছ থেকে বাঁচতে তোকে জড়িয়ে ধরা মানে বিশ্বাসটা কত বেশি সেটা বোধ হয় আর বলার প্রয়োজন নেই। তাছাড়া তুই নিজেই তো শোভন কে বলেছিস যে তোর বুকেই ইরা নিজেকে সেফ মনে করছে।
ইভানের কথা শুনে রিহাব একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। কারন এতো টেনশনের মাঝে এই বিষয়টা রিহাবের মাথাতেই ছিলোনা। ইভানের দিকে তাকিয়ে বলল
–সব কিছু গুছিয়ে রেখেছিলিস আগে থেকে। তুই যে কি……।
ইভান তার কথা সম্পূর্ণ করতে না দিয়ে বলল
–সব কিছু গোছানো ছিল কিন্তু এটা ছিলোনা। আমি আসলে এটাই দেখতে চেয়েছিলাম ইরার চোখে। কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি দেখতে পাব তা ভাবিনি। এখন শুধু ইরাকে রিয়েলাইয করানোর পালা।
রিহাব ইভানের দিকে কঠিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে চেয়ার থেকে উঠে বলল
–আমার কাজ আছে। আমি যাচ্ছি।
বলেই দরজা খুলতে গেলেই পিছন থেকে ইভান আবার বলল
–তোর হবু বউকে বিয়ের দাওয়াত টা কাল বাসায় এসে দিয়ে যাস। পাত্রির নামটা নাহয় গোপন থাকলো।
রিহাব বিরক্ত হয়ে বলল
–তোর যা মনে চায় কর। আমাকে এসব বলিস না।
ইভান একটু হেসে বলল
–ঠিক আছে। আমিই নাহয় সব করবো। তোর কিন্তু দাওয়াত থাকলো কাল। কাজ শেষ করে আসিস।
৪৯
অনেক রাত হয়েছে। ঈশা ইভানের জন্য অপেক্ষা করছে। আসতে এতো দেরি হচ্ছে কেন? খুব চিন্তা হচ্ছে তার। ভাবনার মাঝেই কলিংবেল বেজে উঠলো। ঈশা দরজা খুলে কঠিন ভাবে ইভানের দিকে তাকিয়ে আছে। ইভান শান্ত ভাবে বলল
–সরি জান। দেরি হয়ে গেলো।
ঈশা কোন কথা না বলে ঘরে চলে এলো। ইভানও ঈশার পিছনে ঘরে চলে এলো। ঈশা কোন কথা বলছেনা। ইভান তাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল
–আজকে একটা খুব জরুরী মিটিং ছিল। কিছু নতুন স্টাফ জয়েন করলো। তাদের জন্যই মিটিং। তাই শেষ করতে দেরি হয়ে গেলো।
ঈশা এমন ভাব করলো যেন ইভানের কথা তার কানেই গেলনা। ইভান ঈশাকে ছেড়ে দিলো। একটু দূরে দাড়িয়ে আছে হাত গুঁজে। বেশ কিছুক্ষন ইভানের উপস্থিতি না পেয়ে ঈশা পিছনে ঘুরে তাকায়। ইভান তার দিকে তাকিয়ে আছে। ঈশা রেগে গিয়ে বলল
–তুমি খুব খারাপ একটা মানুষ।
ইভান হাসতে চেয়েও চেপে গিয়ে একি অবস্থা থেকেই বলল
–এটা পুরাতন কথা। নতুন কিছু বল।
ঈশা আরও রেগে বলল
–তোমার মতো বাজে দুনিয়াতে আর একটাও নেই। আমার কাছে আসবেনা একদম। দূরে যাও।
ইভান নিজের হাসি চেপে রেখে বলল
–মস্তিস্ক বিকৃত হয়ে গেছে। চোখে কি কম দেখছিস? আমি আমার জায়গাতেই আছি। কাছে যাইনি তো।
কথাটা শেষ হতেই ঈশার মেজাজ চরম খারাপ হয়ে গেলো। সে বের হয়ে যাবে তখনি ইভান তার হাত টেনে তাকে দেয়ালের সাথে আটকে দেয়। ঈশা নিজেকে ছাড়াতে চেষ্টা করে। ইভান কঠিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে
–এভাবে অকাজে নিজের শক্তি প্রয়োগ করে লাভ নেই। তুই নিজেকে ছাড়াতে পারবিনা।
ঈশা থেমে গেলো। মাথা নিচু করে মুখ কাল করে দাড়িয়ে থাকলো। ইভান ঈশার সামনের চুল গুলো কানে গুঁজে দিয়ে কোমর টেনে তাকে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়। ঈশা ইভানের শার্টের কিছু অংশ খামচে ধরে। ইভানের ভারি নিশ্বাস ঈশার মুখে পড়ছে। মাতাল করা পারফিউমের সেই ঘ্রান ঈশাকে আরও কাছে টানছে। ইভান ঈশার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল
–তুই কি সত্যিই চাস আমি তোর কাছে আসবনা। ঠিক আছে। তাহলে আসবো না।
বলেই ঈশাকে ছেড়ে দিলো। ঈশা রেগে আগুন হয়ে গেলো। সে ইভানের কাছে এসে তার শার্টের কলার টেনে ধরে মুখের কাছে নিজের মুখ এনে বলল
–তুমি চাইলেও আমার কাছ থেকে দূরে যেতে পারবে না। তোমাকে আমি আমার কাছে আসতে বার বার বাধ্য করবো।
ঈশার কথা শেষ হতেই ইভান তার ঠোঁট ঈশার ঠোটের মাঝে ডুবিয়ে দিলো। ইভানের মোহময় স্পর্শে ঈশার সব রাগ পানি হয়ে গেলো। সে চোখ বন্ধ করে অনুভব করছে। ইভান দুই হাতে তাকে জড়িয়ে নিলো। ঈশাও ইভানের পিঠের শার্ট খামচে ধরল। কিছুক্ষন পর ইভান তার ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলল
–সরি জান। আমি চাইলেও তোর রাগ ভাঙ্গাতে পারতাম না। কারন আমি জানি তোর রাগের থেকে জেদটা একটু বেশি। তাই আরেকটু সেটা বাড়িয়ে দিলে তুই জেদ করে নিজে থেকেই আমার কাছে আসবি আর আমার রাগ ভাঙ্গাতেও সহজ হয়ে যাবে। দেখ তাই হল।
ঈশা কোন কথা না বলে ইভান কে জড়িয়ে ধরল। ইভান নিশব্দে হেসে ঈশার মাথাটা তার বুকে চেপে ধরে বলল
–তোকে কখন কিভাবে কন্ট্রোল করতে হয় সেটা আমি ভালো করেই জানি।
ঈশা বুকের ভিতরে মাথা রেখেই বলল
–ফ্রেশ হয়ে এসো। খাবে না।
–তুই খেয়েছিস?
ঈশা মাথা নাড়িয়ে হ্যা বলল। ইভান ঈশার চুলের ভাজে হাত বুলাতে বুলাতে বলল
–মিটিং ছিল আজকে। তাই খেয়ে এসেছি।
ঈশা আর কিছু বলল না। ইভান ঈশাকে ছেড়ে দিয়ে বলল
–আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
ঈশার কপালে একটা চুমু দিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।
৫০
সবাই মিলে টেবিলে বসে খোশ গল্পে মশগুল। চায়ের সাথে আড্ডা বেশ জমিয়ে উঠেছে। ছোট বেলার কথা গুলো মনে করে সবাই হাসতে লাগলো। ইভান বারবার ঘড়ি দেখছে। বেশ বোঝা যাচ্ছে কারও জন্য অপেক্ষা করছে। ঈশা বুঝতে পেরে জিজ্ঞেস করলো
–কার জন্য এতো অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছ?
ইভান তার দিকে তাকিয়ে একটু হাসল। কিছু বলতে যাবে তার আগেই কলিং বেল বেজে উঠলো। মুখের হাসিটা প্রশস্ত করে বলল
–রিহাব এসেছে।
বলেই ইরার দিকে তাকাল। ইরার কানে কথাটা যেতেই সে দরজার দিকে ঘুরে তাকাল। ঠোটের কোণে ক্ষীণ হাসি ইভানের চোখ এড়াল না। ইলহাম দরজা খুলে রিহাবকে ভিতরে ঢুকতে সাইড দিলো। রিহাব ঢুকেই ইরার দিকে তাকাল। ঠোঁটে মিষ্টি হাসি নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে। ঘটনাটা বাড়ার আগেই ইভান বাধা দিয়ে বলল
–তাড়াতাড়ি আয়। তোর জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।
ইরার ঘোর কাটতেই সে মাথা ঘুরিয়ে চোখ নামিয়ে নেয়। রিহাব ইভানের পাশে এসে বসে। ইভান একটু হেসে রিহাবের দিকে তাকিয়ে বলল
–ঈশা রিহাব বিয়ে করছে তোকে বলেছে?
রিহাব ইভানের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে নিলো। ঈশা কৌতূহলী কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো
–সত্যি ভাইয়া! কই আমি তো জানিনা।
ঈশার কথার উত্তরে রিহাব কি বলবে বুঝতে পারল না। অগ্নি দৃষ্টিতে ইভানের দিকে তাকাল। ইভান হালকা হেসে দুষ্টুমির সূরে বলল
–কি বলিস তোকে জানায় নি এখনো? ছি রিহাব! তুই ঈশাকে বলিস নি? আচ্ছা ঠিক আছে এখন বল।
রিহাব রেগে গেলো ইভানের কথায়। পাশ ফিরে ইরার দিকে তাকাতেই চোখে পড়লো ইরার মুখও ভঙ্গি আগের মত নেই। মুখটা কাল করে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। কথাটা যে তার পছন্দ হয়নি সেটা বেশ বোঝা যাচ্ছে। রিহাব তার দিকে তাকিয়েই বলল
–আর কত অপেক্ষা করবো। তাই এবার বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েই নিলাম।
ইলহাম খুশি হয়ে বলল
–কবে বিয়ে হচ্ছে?
রিহাব একটু হেসে ইভানের দিকে তাকিয়ে বলল
–কথা চলছে। সব ঠিক থাকলেই এই সপ্তাহেই বিয়ে।
ইভান নিঃশব্দে হেসে ফেললো। ঈশা অবাক হয়ে বলল
–এতো তাড়াতাড়ি কেন?
–আসলে আব্বু আম্মু সামনে সপ্তাহে লন্ডন চলে যাবে। প্রায় ৬ মাসের জন্য। তাই তাদের তাগিদেই তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে হচ্ছে। আর আমিও ভাবলাম যে অনুভূতির মুল্য বোঝে তাকে বেশিদিন অপেক্ষা করানো ঠিক না। নাহলে একবার সেই মানুষটা হারিয়ে গেলে শত চেষ্টায়ও আর ফিরে পাওয়া সম্ভব না।
রিহাব কথাটা বলে মাথা নিচু করে হাসল। ইরা রিহাবের কথা শুনে তার দিকে তাকাল। রিহাবের কথাটা তাকে কোথাও একটা খুব করে আঘাত করলো। সেই আঘাতের মানেটা ইরার কাছে স্পষ্ট না। কারণটা সে এখনো বুঝতে পারছে না। রিহাবের সেই হাসি ইরার শরীরে একটা অদ্ভুত জ্বালার সৃষ্টি করছে। ইভান ঠোঁটে বাকা হাসি নিয়ে নিস্পলক ইরার দিকে তাকিয়ে আছে। আর ইরা রিহাবের দিকে।
চলবে…….
তোর ছায়ার সঙ্গী হব
লেখক-এ রহমান
পর্ব ২২
৫১
গোধূলি বেলায় আকাশ রক্তিম বর্ণ ধারন করেছে। চারিদিকে সূর্য তার লাল আভা ছড়িয়ে দিগন্তের মাঝে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। নারিকেল গাছের মাথায় লাল সূর্যটা ডুবে যাচ্ছে একটু একটু করে। তার আশে পাশেই পাখি উড়ছে। ইরা নিস্পলক সেদিকে তাকিয়ে আছে। সূর্য ডোবা দেখার ভাগ্য এভাবে আগে কখনও হয়নি। প্রতিটা সেকেন্ডে সূর্যটা একটু একটু করে অর্ধেক হয়ে যাচ্ছে। কি অদ্ভুত দৃশ্য। প্রকৃতি সত্যিই মনোরম। শত মন খারাপের মাঝেও প্রকৃতি মন ভালো দেয়। ইরা মাথা তুলে আরও উপরে তাকাল। পুরো আকাশের দিকে তাকিয়ে ইরার মনটা ভীষণ করে কারও শুন্যতা জানিয়ে দিলো। কিন্তু কে সে? ইরা মাথা নামিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো। কারও অস্পষ্ট অবয়ব দেখা যাচ্ছে। তার মনটা আবার খারাপ হয়ে গেলো। চোখ খুলে সামনে তাকিয়ে আবার ভাবনায় ডুব দিলো। ঈশা ধির পায়ে ইরার পাশে এসে দাঁড়ালো। ইরাকে ভালো করে দেখে নিয়ে বলল
–তোর কি মন খারাপ?
একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ইরা ছোট্ট করে না বলল। ঈশা তার দিকে তাকিয়ে বলল
–আমি জানি তোর মন খারাপ। কিন্তু যদি বলতে না চাস তাহলে বলিস না আমি জোর করবো না।
ইরা সামনে তাকিয়ে বলল
–আচ্ছা আপু ভালোবাসা কিভাবে হয়?
ইরার প্রশ্ন শুনে ঈশা স্ট্যাচু হয়ে গেলো। এই প্রশ্নের উত্তরে তার কি বলা উচিৎ সেটা সে জানেনা। ইভানের প্রতি তার অনুভুতি গুলো ধিরে ধিরে তৈরি হয়েছিলো। সেই ছোট বেলা থেকেই। তার সমস্ত কিছু ঘিরে শুধু ইভানই ছিল। এই অনুভুতি কবে কিভাবে তৈরি হয়েছে তা নিয়ে সে কখনই ভাবেনি। তার এই সুপ্ত অনুভুতি প্রকাশ পেয়েছে যখন অন্য কারও সাথে বিয়ের কথা হচ্ছিলো। কিন্তু তার আগে এই পর্যন্ত কিভাবে পৌঁছেছে তা সে জানেনা। ইরা আবারো বলল
–তুমি তো ভাইয়া কে ভালবাস তাহলে বল কিভাবে ভালোবাসা হয়?
ইভান সিঁড়ি থেকেই দুজনের কথা শুনছিল। ঈশার অবস্থা বুঝতে পেরে এগিয়ে গিয়ে বলল
–কাকে জিজ্ঞেস করছিস? তোর বোন যে আমাকে ভালবাসে সেটাই বুঝতে পেরেছে যখন অন্য কাউকে বিয়ে করতে যাচ্ছিলো। তার আগে তো এসব মাথাতেই ছিলোনা।
ঈশা রেগে ইভানের দিকে তাকাল। ইরা ইভানের কথা শুনে তার দিকে তাকিয়ে বলল
–কি বলছ ভাইয়া? এতো ভালবেসেও বুঝতে পারেনি কেন?
–বোঝার জন্য মাথায় বুদ্ধি থাকতে হয়। সেটা নেই তাই।
ইভানের কথা শুনে ঈশা চরম রেগে গেলো। চলে যেতে নিলে ইভান হাত টেনে ধরে বলে
–আমি তোকে বোঝার সুযোগ দেইনি। আমার ভালোবাসার বৃত্তে আবদ্ধ করে রেখেছিলাম যাতে ভালোবাসার মধ্যে থাকা কোন কষ্টই তোকে ছুঁতে না পারে।
ইভানের কথা শুনে ঈশার মুখে হাসি ফুটে উঠলো। ইভানও একটু হাসল। ইরা ইভানের কথার মানে বুঝতে চেষ্টা করলো। কিন্তু কিছুই বুঝতে পারল না। ঈশা একটু হেসে বলল
–আমি একটু আসছি।
ইভান তার হাত ছেড়ে দিলো। ইরা আবার সামনে তাকাল। তাকে এভাবে ভাবনায় ডুবে থাকতে দেখে ইভান তার মাথায় হাত দিয়ে বলল
–আমি জানি তুই কি ভাবছিস। যে কোন সম্পর্কের মাঝে ভালো থাকার প্রধান শর্ত হচ্ছে বিশ্বাস। আর বিশ্বাস থাকলে ভরসা আপনা আপনিই চলে আসে। আর এই দুইটার সমন্বয় হল ভালোবাসা। ভালবেসে যেমন ভালো থাকা যায় তেমন ভালো থেকেও ভালোবাসা যায়। আসলে ভালোবাসার ধরনটা ওই দুইটা মানুষের উপরে নির্ভর করে যারা একসাথে থাকতে চায়। তারা কিভাবে ভালবাসতে চায় সেটা তাদের উপরে নির্ভর করে। সবার ভালোবাসার ধরন এক না। একেক জনের মনের অনুভুতি একেক রকম। সেটা প্রকাশ করার ধরনও একেক রকম। তুই তোর মনের অনুভুতি কিভাবে প্রকাশ করবি সেটা সম্পূর্ণ তোর উপরে নির্ভর করে।
একটু থেমে আবার বলল
–যে কোন সম্পর্ক তোকে নিজে থেকে কিছুই দেবেনা। নিজের জায়গাটা নিজেকেই তৈরি করে নিতে হয়। নিজের অধিকার আদায় করে নিতে হয়। যে কোন একজনকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে অপরজনের অপেক্ষা করতে হয়। তা নাহলে সুপ্ত অনুভুতি দিয়ে সম্পর্ক এগিয়ে যায়না। এক কথায় তোর অনুভুতি সামনের মানুষটার প্রতি যেমনই হোক না কেন সেটা প্রকাশ করাটাই ইম্পরট্যান্ট অনুভূতির ধরনটা না।
ইরা সামনে তাকিয়েই বলল
–আমি বুঝব কিভাবে তার প্রতি আমার অনুভুতি আছে কিনা?
ইভান সামনে রেলিঙ্গে কনুইয়ের উপরে ভর দিয়ে বলল
–সেই মানুষটার কোন কথা যখন তোর মনের উপরে খুব বেশি প্রভাব ফেলবে তখন বুঝবি তার প্রতি তোর অনুভুতি আছে। এই অনুভুতি গুলো খুব সূক্ষ্ম হয়। এগুলো বলে বোঝানো সম্ভব না। অনুভব করতে হয়। তুই জানতে চাইলি এতো ভালোবাসার পরেও ঈশা কেন বুঝতে পারেনি। আসলে আমি ওকে এসব অনুভুতি বোঝার সুযোগ দেইনি। আমাকে প্রয়োজন হওয়ার আগেই কাছে পেয়েছে। মিস করার আগেই সামনে এসেছি। আমার কোন কথায় কষ্ট পেলে বা রাগ করলে সেটা মনে কোন রকম প্রভাব ফেলার আগেই আমি তার সেই কষ্ট বা রাগ মন থেকে দূর করে দিয়েছি। আমার অনুভুতি প্রকাশের ধরন এটাই।
ইরা কিছুক্ষন ইভানের দিকে তাকিয়ে থেকে সামনে তাকাল। ইভানের কথা তার মাথায় ঢুকলেও এখনো কোথাও একটা কনফিউশন কাজ করছে। আদৌ তার মনে কোন অনুভুতি আছে কিনা সেটা সে বুঝতে পারছেনা। আর এটাই খুব স্বাভাবিক। কারন এই মুহূর্তে সে বুঝতে চাইছে যে এটা যদি ভালোবাসা হয় তাহলে আগের অনুভূতিটা কি ছিল? সেটা জতক্ষন সে বুঝতে পারেনি ততক্ষন তার কাছে কিছুই স্পষ্ট না। বেশ কিছুক্ষন দুজনে চুপ থাকার পর নিরবতা ভেঙ্গে ইভান বলল
–ডিসিশন নেয়াটা খুব কঠিন হয়ে গেলো তাই না?
ইরা তার দিকে তাকাল। ইভান কি বলতে চাইছে সেটা বুঝতে পারল না। আবার এই মুহূর্তে সে কি ভাবছে সেটাও বুঝতে দিতে চাইছেনা। তাই খুব ম্লান গলায় বলল
–কিসের ডিসিশন ভাইয়া?
ইভান সামনে তাকিয়েই একটু হাসল। তারপর বলল
–তুই এখন যার কথা ভাবছিস আমিও তার কথাই বলছি।
ইরা অবাক হয়ে তার দিকে তাকাল। কাপা কাপা গলায় বলল
–কাকে নিয়ে ভাবছি?
ইভান আগের অবস্থা থেকেই বলল
–বলেছিলাম না কোন কিছুই আমার চোখ এড়ায় না। তোর এই অনুভুতি গুলোও আমার চোখে ভালভাবেই পড়েছে। তুই নিজে যেটা বুঝতে পারিস নি সেটাও আমার বুঝতে বাকি নেই। নিজের অনুভুতি গুলো প্রকাশ করতে হয়। দেরি হয়ে গেলে তখন সেগুলোর কোন মুল্য থাকেনা।
ইরা অবুঝের মত তাকিয়ে থাকে। ইভান একটু হেসে ইরার মাথায় হাত দিয়ে বলে
–আচ্ছা তোর জন্য একটু সহজ করে দেই। সবাই কিন্তু রাজি। রিহাব কে সবার খুব পছন্দ হয়েছে।
ইভানের কথা শুনে ইরা একটু অপ্রস্তুত হয়ে যায়। নিচে তাকিয়ে থাকে। কি বলবে বুঝতে পারেনা। ইভান কোন কথা না বলে নিচে চলে যেতে নিলে ইরা মন খারাপ করে বলে
–রিহাব ভাইয়ার কার সাথে বিয়ে হচ্ছে?
এমন অবুঝের মত প্রশ্ন শুনে ইভান খুব বিরক্ত হয়। এক রাশ বিরক্তি নিয়ে ঘুরে তাকিয়ে বলে
–সিরিয়াসলি ইরা! তুই কি সত্যিই এতো বোকা।
ইরা ইভানের কথা শুনে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থাকে। ইভান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে
–কাল বিয়ে। তোকে দাওয়াত দিয়েছে। তোর সুযোগ মতো ওর হসপিটালে চলে যাস। সেখানে গেলেই সব দেখতে পাবি। আমি এতো প্রশ্নের উত্তর দিতে পারব না।
বলেই ইভান চলে যায়। ইরা গভীর ভাবনায় ডুবে যায়। ইভানের কথার মানে বুঝতে চেষ্টা করে। সে যতই বোকা হোক হসপিটালে যে কারও বিয়ে হয়না সেটা খুব ভালো মতো বুঝতে পারছে। কিন্তু ইভান ওকে কেন যেতে বলল? বেশ কিছুক্ষন ভাবার পর ইরার মুখে হাসি ফুটে উঠলো। সে ইভানের কথার মানে বুঝতে পেরেই হাসি মুখে এক দৌড়ে নিচে চলে গেলো।
৫২
ইরা রিসিপশনে দাড়িয়ে আছে। একজন মেয়ে এসে জিজ্ঞেস করলো
–হাউ মে আই হেল্প ইউ ম্যাম?
–ডাক্তার রিহাব আছেন?
মেয়েটা ইরাকে ভালো করে দেখে নিয়ে বলল
–ওনার সাথে কি অ্যাপয়েন্টমেন্ট আছে?
ইরা মাথা নাড়িয়ে না বলল। মেয়েটি বলল
–স্যার আজকে সারাদিন বিজি থাকবেন। ওনার সাথে দেখা হবেনা।
ইরা তার কথার কোন উত্তর না দিয়ে বলল
–উনি এখন কি করছেন?
মেয়েটি ইরার উপরে বিরক্ত হয়ে বলল
–স্যার এখন রাউন্ডে আছেন। কিন্তু দেখা হবেনা ওনার সাথে।
ইরা মেয়েটির দিকে কঠিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে কোন কথা না বলে সোফায় বসে ওয়েট করতে লাগলো। কাজ শেষ করে রিহাব ওই দিক দিয়েই যাচ্ছিলো। হঠাৎ ইরার দিকে চোখ পড়তেই দাড়িয়ে গেলো। তার এখানে থাকার কারণটা রিহাবের বোধ গম্য হলনা। ইরার সামনে দাঁড়ালো। কিন্তু ইরা গভীর ভাবে ফোনের মাঝে ডুবে আছে। রিহাব ইরাকে দেখে জিজ্ঞেস করলো
–তুমি এখানে?
রিহাবের কথা শুনে ইরা খানিকটা চমকে গেলো। তার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে পাশে ব্যাগটা হাতে নিয়ে দাঁড়ালো। সামনের ছোট ছোট চুল গুলো ঠিক করতে করতে বলল
–অন্য কারও আসার কথা ছিল কি?
রিহাব তার কথা শুনে তার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলো। তারপর রিসিপশনের মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বলল
–আমি একটু বিজি থাকব। কিছুক্ষনের জন্য আমাকে ডিস্টার্ব করবে না।
ইরার দিকে ঘুরে তাকিয়ে বলল
–আমার সাথে আসো।
ইরা মেয়েটার দিকে কঠিন দৃষ্টি নিক্ষেপ করে রিহাবের সাথে চলে গেলো। রিহাব ইরাকে তার কেবিনে আনল। তারপর সামনে সোফায় বসতে বলল। ইরা চারিদিকে ভালো করে দেখে নিয়ে সোফায় বসে পড়লো। রিহাব তার পাশে বসে তার দিকে তাকিয়ে বলল
–কখন এসেছ?
ইরা ফোনের দিকে চোখ রেখেই বলল
–১৫ মিনিট হবে।
–কি খাবে?
ইরা ফোন থেকে চোখ সরিয়ে রিহাবের দিকে তাকিয়ে বলল
–কফি।
রিহাব দুইটা কফি দিয়ে যেতে বলল। পানির গ্লাস হাতে নিয়ে সেটার দিকে তাকিয়েই বলল
–তুমি এখানে হঠাৎ?
ইরা কঠিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল
–তার মানে আমি আসাতে আপনি খুশি হন নি?
রিহাব পানিটা শেষ করে গ্লাসটা রেখে বলল
–আমি সেরকম কিছুই বলিনি বা ইঙ্গিতও করিনি। আবার এভাবে তোমাকে এখানে এক্সপেক্টও করিনি। তাই একটু কৌতূহলী হয়ে জানতে চাইছি কারণটা।
ইরা একটু হেসে বলল
–কেন কোন কারন ছাড়া কি আমি আপনার কাছে আসতে পারিনা?
রিহাব খুব সোজা সাপটা উত্তর দিলো
–আমার মনে হয়না কোন কারন ছাড়া আমার কাছে তোমার আসা উচিৎ।
রিহাবের কথা শুনে ইরার মন খারাপ হল। ফোনটা বন্ধ করে রিহাবের দিকে মনোযোগ দিলো। সে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। ইরা খুব শান্ত গলায় বলল
–রিহাব ভাইয়া একটা মানুষ যখন তার ভুল বুঝতে পেরে নিজে থেকেই মাফ চায় তখন আমার মনে হয় তাকে মাফ করে দেয়া উচিৎ।
রিহাব ইরার দিকে তাকাল। একটু হেসে স্বাভাবিক ভাবে বলল
–তুমি কি আমাকে কিছু বলতে চাও?
ইরা রিহাবের দিক থেকে চোখ নামিয়ে মিন মিনে কণ্ঠে বলল
–বিষয়টা ঠিক……।
ইরা কথা শেষ করতে পারেনা। থেমে যায়। রিহাব তার দিকে তাকিয়েই জিজ্ঞেস করে
–বিষয়টা কি ইরা?
ইরা এবার কঠিন হয়ে বলল
–না বোঝার তো কিছু নেই। আমি এখানে এতো আয়োজন করে নিশ্চয় আপনার বিয়ের দাওয়াত খেতে আসিনি।
রিহাব একটু হেসে বলল
–তাহলে কেন এসেছ?
ইরা চোখ নামিয়ে নিল। এক রাশ হতাশা নিয়ে বলল
–যে অনুভুতি বুঝে তাকে অপেক্ষা করানো ঠিক না আর যে বোঝেনা তাকে বোঝানো কি আপনার দায়িত্ব না?
ইরার কথার মানে বুঝতে পেরে রিহাব খুব শান্ত গলায় বলে
–আমি তো সব দায়িত্বই নিতে চেয়েছি। কিন্তু তুমি তো চাওনি।
ইরা ছল ছল চোখে কাপা কাপা গলায় বলল
–এখন কি সম্ভব না?
ইরার কথা শেষ হতেই দুই ফোটা পানি গাল বেয়ে পড়লো। সে নিজের আবেগ ধরে রাখতে পারল না। রিহাব তার মনের অবস্থা বুঝতে পেরে এক হাতে তার মাথাটা নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে বলে
–কষ্ট পাচ্ছ তবুও নিজের মনের কথাটা বলতে পারছনা।
রিহাবের এমন আদুরে কণ্ঠে ইরা নিজেকে ঠিক রাখতে পারল না। তার চোখ বেয়ে আরও দ্রুত পানি ঝরতে লাগলো। কিন্তু এতো কষ্টের মাঝেও রিহাবের কাছেই তার ভাললাগছে। সে এই মুহূর্তটাকে মিস করতে চাইছেনা। তাই নিজেও সব সংকোচ পেরিয়ে রিহাবকে জড়িয়ে ধরল। রিহাব ইরার এভাবে জড়িয়ে ধরায় তাকে নিজের সাথে আরও শক্ত করে জড়িয়ে নিয়ে বলল
–আমি আব্বু আম্মুর সাথে কথা বলেছি। কাল তোমাদের বাসায় যাবে সবার সাথে কথা বলতে।
কথাটা ইরার কানে আসতেই সে বাস্তবে ফিরে আসে। নিজের এমন কাণ্ডে অপ্রস্তুত হয়ে যায়। রিহাব কে ছেড়ে দিয়ে একটু দূরে সরে যায়। রিহাব নিঃশব্দে হেসে বলে
–এভাবে লজ্জা পেলে সারাজীবন আমার সাথে থাকতে পারবে তো?
ইরা তার কথায় আরও লজ্জায় মিইয়ে যায়। মাথা নামিয়ে হাসে। তার সেই সম্মতির হাসি রিহাবের মনকে শান্ত করে দেয়।
চলবে………।