তোর ছায়ার সঙ্গী হব,পর্ব-২৫,২৬
লেখক-এ রহমান
পর্ব ২৫
৫৬
সামনে থালার মতো শেষ বিকেলের লাল সূর্যটা দূর দিগন্তের মাঝে হারিয়ে যাচ্ছে একটু একটু করে। পুরো আকাশ জুড়ে রঙের খেলা। কোথাও রক্তিম আভা, কোথাও গাড় নীল কোথাও আবার সাদা মেঘের ভেলা উড়ে বেড়াচ্ছে। শন শন আওয়াজ কানের পর্দা ভেদ করে যেতেই এক অদ্ভুত রকমের কাপুনি ধরিয়ে দিচ্ছে। এক অদ্ভুত গর্জনের সাথে নীল জলের উচ্ছ্বসিত ঢেউ পা ছুয়ে দিচ্ছে। পায়ের নিচে বালি সরিয়ে দিচ্ছে জলের তোড়। আশে পাশে কয়েক জোড়া কাঁকড়া ছুটাছুটি করছে। মাঝে মাঝে বালির মধ্যে লুকিয়ে পড়ছে। সামনে দূরে নীল আকাশ পানি ছুয়েছে। শিল্পির হাতে আকা নিপুন ছবির মতো দূরে নীল আকাশে অর্ধ ডোবা সূর্যের পাশে একটা নৌকা দুলছে। ঢেউয়ের সাথে সাথে ঝিনুক পায়ে এসে বাড়ি খাচ্ছে। খালি পায়ে নরম বালির উপরে দাড়িয়ে আছে ঈশা। তার দৃষ্টি সামনের সূর্যটার উপর স্থির। অবাক চোখে তাকিয়ে আছে সে। এমন একটা দৃশ্য ঈশা এভাবে দেখতে পাবে সেটা কল্পনাও করেনি। ইভান প্যান্টের পা গুটিয়ে পানিতে পা ডুবিয়ে পকেটে হাত গুঁজে পাশেই দাড়িয়ে সামনে তাকিয়ে আছে। ঈশার পায়ে একটা শক্ত কিছু বাড়ি খেতেই সে ঝুকে সেটা হাতে নিলো। ছোট মতন একটা শঙ্খ। হাতের তালুর উপরে রেখে সেটার দিকে দেখেই একটু হেসে বলল
–কি সুন্দর না!
ইভান ঈশার হাতের দিকে তাকিয়ে বলল
–হুম!
তারপর আবার বলল
–এই মুহূর্তটা সত্যিই অনেক মনোরম। কিন্তু তুই সাথে থাকায় এখন ভয়ংকর সুন্দর হয়ে উঠেছে।
ঈশা তার কথা শুনে ঘুরে তাকাল। ইভানের মনের অবস্থাটা বুঝতে চেষ্টা করছে। ইভান সামনেই তাকিয়ে আছে। ঈশাও সামনে তাকাল। কিছুক্ষনের মধ্যে সূর্যটাও ডুবে গেলো। কিন্তু সূর্য ডুবার পর পুরো আকাশ জুড়ে কিছুটা রক্তিম আভা দেখা যাচ্ছে। ধিরে ধিরে চারিদিকে অন্ধকার ছেয়ে আসছে। সাথে নিস্তব্ধতা গ্রাস করে নিচ্ছে। আর তার মাঝেই সমুদ্র তার নিজের মতো গর্জন করেই যাচ্ছে। মিষ্টি ঠাণ্ডা বাতাসে ঈশা একটু কেঁপে উঠলো। ইভান ঈশার দিকে তাকিয়ে বলল
–চল এখন যাই। বেশ ঠাণ্ডা পড়ে যাবে।
দুজনে তাদের হোটেলে চলে এলো। সমুদ্রের পাশেই ইভান তাদের জন্য হোটেল বুক করেছিলো। রুমের দরজা খুলে ঢুকে ঈশা চারিদিকে ভালো করে দেখে নিলো। এসেই সাথে সাথে ইভান তাকে সমুদ্রের পাড়ে নিয়ে গেছে সূর্য ডুবা দেখতে। তাই ভালো করে রুমটা খেয়াল করতে পারেনি। ইভান ওয়াশ রুমে গেলো ফ্রেশ হতে। ঈশা সামনে জানালার পর্দা সরিয়ে হা হয়ে গেলো। বড় জানালা দিয়ে সম্পূর্ণ সমুদ্রটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। ঈশা মুগ্ধ হয়ে দেখছে। ইভান ওয়াশ রুম থেকে বের হয়ে ঈশার পাশে এসে জানালাটা হালকা খুলতেই সমুদ্রের গর্জন ভেসে এলো। কান যেন জুড়িয়ে দিলো। ঈশার দিকে তাকিয়ে বলল
–ফ্রেশ হয়ে আয়।
ঈশা ওয়াশ রুমে গেলো। ইভান একটা চেয়ারে বসে সামনে জানালায় পা তুলে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে আছে। অন্ধকারে তেমন স্পষ্ট দেখা না গেলেও গর্জন করে যে ঢেউ গুলো আছড়ে পড়ছে আশে পাশে সেগুলোর কিছু অংশ দেখা যাচ্ছে। ঈশা ফ্রেশ হয়ে ইভানের পাশে দাঁড়ালো। ইভান ঈশাকে টেনে নিজের কোলে বসালো। ঈশা সামনে তাকিয়েই একটু ভেবে বলল
–আমার জীবনে কখনও কোন আফসোস থাকলো না। কোন অভিযোগ করার সুযোগ ও দিলেনা।
ইভান তার মুখ নিজের দিকে ঘুরে নিলো। ঈশার চোখে পানি। সযত্নে মুছে দিয়ে বলল
–জানিস যখন ছোটবেলায় তুই নিজের ইচ্ছা গুলো আমাকে বলতিস তখন আমি সেগুলো কল্পনা করতাম। নিজের মতো করে মনের মধ্যে গুছিয়ে নিয়েছিলাম। তখন তোর এই সব ইচ্ছা পুরন করার মতো অবস্থায় আমি ছিলাম না। কিন্তু কিছুই ভুলিনি।
ঈশা ইভান কে জড়িয়ে ধরল। ইভান তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল
–কেন কাদছিস? এটা তো তোরই ইচ্ছা ছিল। ভাললাগেনি?
ঈশা কোন কথা বলতে পারল না। ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে লাগলো। ছোটবেলায় একবার নিজের মনের ইচ্ছা জাহির করতে গিয়ে ইভানের সামনে বলেছিল কোন এক শরতের বিকেলে সমুদ্রের পানিতে পা ডুবিয়ে সূর্য ডোবা দেখবে। আজ এতো বছর পর ইভান সেটা ঠিকই মনে রেখেছে। শুধু মনেই রাখেনি সঠিক সময়টার অপেক্ষায় ছিল। আজ ঈশার নিজেকে সব থেকে সুখি মনে হচ্ছে। এই খুশি কিভাবে প্রকাশ করা সম্ভব তা ঈশার জানা নেই। ইভান ঈশাকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। ঈশা কেদেই যাচ্ছে। কিন্তু এই প্রথমবার ইভান তাকে থামাতে চেষ্টা করছেনা। কারন সেও বুঝতে পারছে ঈশা তার জীবনের এই প্রাপ্তিটা চরম ভাবে অনুভব করছে। যার ফলে তার চোখে আজ পানি। আর এই মুহূর্তে ইভান তাকে একটুক্ষণ কাঁদতে দিতে চায়। কারন সব থেকে সুখের মুহূর্তে মানুষের যখন সব কথা হারিয়ে যায় তখন সে এভাবে কেঁদে নিজের মনের কথা প্রকাশ করে। কিন্তু কিছুক্ষন পরেই আর ইভানের সহ্য হলনা।
–আর কাদিস না জান প্লিজ। এবার তো আমার উপরে একটু রহম কর।
ইভানের এমন অনুরধের সূরে বলায় ঈশার খুব মায়া হল। সে উঠে নিজের চোখ মুছে ফেললো। নাক টেনে কাদ কাদ গলায় বলল
–বাসায় সবাই চিন্তা করবে না?
ইভান একটু হেসে বলল
–তোর কি মনে হয় আমি তোকে কিডন্যাপ করে এনেছি? সবাই সব কিছু জানে। শুধু তুই জানিস না।
ঈশা এবার একটু রাগ করে বলল
–তার মানে সবাই জানতো? আমাকে কেউ কিছুই বলেনি।
–আমি যেখানে নিষেধ করেছি সেখানে কে তোকে কি বলবে।
ঈশা ইভানের দিকে তাকিয়ে আছে। এভাবে ঈশাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ইভান বলল
–কি হয়েছে? কিছু বলবি?
ঈশা কোমল কণ্ঠে বলল
–তোমাকে দেখে আমার খুব হিংসা হয়। এভাবে কেউ কাউকে ভালবাসতে পারে।
ইভান শব্দ করে হেসে ফেললো। ঈশা তার দিকে তাকিয়ে বলল
–কেন এতো ভালবাস?
ইভান ঈশার মুখটা আলতো করে তুলে একটু হেসে বলল
–কেন ভালোবাসি জানিনা শুধু জানি তুই আমার জীবন। তোর মাঝেই আমার অস্তিত্ব।
বলেই ঈশার ঠোঁট দুটো নিজের ঠোটের মাঝে আবদ্ধ করে নিলো। এ এক অনাবিল সুখের মুহূর্ত। নিজের সব স্বপ্ন আজ চোখের সামনে বাস্তব হতে দেখে ঈশার নিজের প্রতিই হিংসা হচ্ছে। কিভাবে পারে এতো ভালবাসতে। এতো ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্যতা কি তার আছে।
৫৭
ঈশা ইভানের অনুপস্থিতি ভীষণ ভাবে সবাইকে জানিয়ে দিচ্ছে। এই দুইজন মানুষ সব কিছু কত সহজে সামলে নিয়েছিলো। কিন্তু তাদের ছাড়া এই দুইদিন সব কিছু যেন থেমে যাচ্ছে। কিন্তু তবুও সবাই চেষ্টা করছে তাদেরকে ছাড়া সব কিছু ঠিক ঠাক ভাবে করতে। কারন এই প্রথমবার তারা শুধু দুজন নিজেদের মতো একান্তে কোথাও সময় কাটাতে গেছে। তাদের এই সম্পর্ক নিয়ে এতো বছর সবার মাঝে শঙ্কা থাকলেও এখন সবাই খুব খুশি। তারা নিজেদের মতো তাদের জীবন সাজিয়ে নিয়েছে। কিন্তু ইরার খুব টেনশন হচ্ছে। সে এমনিতেই তার বিয়ে নিয়ে খুব ভয়ের মধ্যে আছে। তার উপরে সব থেকে বড় সাপোর্ট তার ইভান ভাইয়া পাশে নেই। যে সব সময় তাকে খুব সুন্দর ভাবে বুঝিয়ে সব সমস্যার সমাধান করে দেয়। এখন যে সে তার মনের কথা গুলোও কারও কাছে বলতে পর্যন্ত পারছে না। অসহায়ের মতো শুধু বসে বসে দেখছে। আর এইদিকে দুইদিন হল রিহাবেরও কোন খবর নেই। কি কাজে ব্যস্ত একবার ফোনও করার সুযোগ নেই। ইভানের মা এসে ইরাকে অমন ভাবে ভাবতে দেখে বলল
–কি রে? এতো কি ভাবছিস?
ইরা চমকে উঠলো। মলিন মুখে একবার তাকিয়ে বলল
–কিছু না চাচি।
তার চাচি পাশে বসলেন। মাথায় হাত দিয়ে বললেন
–মন খারাপ লাগছে?
ইরা তার কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে পড়লো। তার চাচি পরম আদরে মাথার চুল গুলো বিলি কেটে দিচ্ছে।
–চাচি ভাইয়া আপু কবে আসবে?
ইরা সামনে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো। তার চাচি একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বলল
–কবে আসে আসুক। থাকুক না একটু সময় নিজেদের মতো। সবাই চায় ওরা দুজন ভাল থাক। সুখে থাক। অনেক কষ্ট পেয়েছে।
আবার একটু হেসে বলল
–ভাবিস না। তোর বিয়ের আগেই চলে আসবে।
ইরার এসব কথা কোন ভাবেই মনের উপরে প্রভাব ফেলতে পারল না। এই দুইটা মানুষ ছাড়া সে যে বড় অসহায় উঠেছে এই দুই দিনে। কিন্তু তাকে যে অন্য বাড়িতে গিয়ে থাকতে হবে। তখন কি করবে। কথাটা ভাবতেই এক রাশ কষ্ট মনে জমা হল। নিজের অজান্তেই দুই ফোটা পানি চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়লো। ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্নার রেশ তুলতেই তার চাচি বললেন
–কাদিস না মা। এটাই নিয়ম। মেয়েদের বিয়ে করে শ্বশুর বাড়িতে যেতে হয়। এটার কোন বিকল্প নেই। তাই বলে ভাবিস না মেয়েরা পর হয়ে যায়। তুই সব সময় এই বাড়ির মেয়ে হয়ে থাকবি। তোর অধিকার সব সময় এই বাড়িতে থাকবে।
ইরা উঠে তাকে জড়িয়ে ধরে ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলল
–আমি তোমাদেরকে খুব মিস করবো চাচি।
ইরার কান্না দেখে তার চোখেও পানি চলে এলো। হাজারো হোক এই বাড়ির মেয়ে। এই বাড়িতে বড় হয়েছে। কিন্তু এখন সমস্ত অধিকার ছেড়ে যেতে হবে। এটা খুব কষ্টের। এর মাঝেই ইরার ফোনের শব্দে দুজনি একটু চমকে উঠলো। ইরা চোখ মুছে ফোন হাতে নিয়ে দেখে রিহাবের নাম্বার। কষ্টের মাঝেও তার মুখে লজ্জার ছাপ ভেসে উঠলো। তার চাচি বুঝতে পেরে একটু হেসে থুতনি ধরে তুলে বলল
–অমনি সব কষ্ট ভুলে গেলি তাই না।
তার কথা শুনে ইরা আরও বেশি লজ্জা পেলো। তার চাচি একটু হেসে উঠে গেলেন। ইরা ফোনটা ধরে নরম গলায় বলল
–হ্যালো!
–কেমন আছো?
–এতদিন পর মনে পড়লো ভালো আছি কিনা?
রিহাব বুঝতে পারল এতদিন ফোন না করায় ইরা রাগ করেছে। একটু হেসে বলল
–সরি! খুব ব্যস্ত ছিলাম।
–থাকেন না আমি কি নিষেধ করেছি?
ইরা অভিমানের সূরে বলল। রিহাব খুব স্বাভাবিক ভাবে বলল
–আমাকে এতো মিস কর জানতাম না তো? কখনও বলনি তো।
ইরা এবার লজ্জা পেলো। রিহাবের প্রতি তার অনুভুতি গুলো এতো তাড়াতাড়ি তীব্র হবে সে নিজেও ভাবেনি। রিহাব কে তাহলে কি সে ভালবাসতে শুরু করেছে। তার ভাবনার মাঝেই রিহাব বলল
–কোথায় হারিয়ে যাচ্ছ? আমাকে এভাবে অপেক্ষা করিয়ে নিজে হারিয়ে গেলে আমি কিন্তু মেনে নিবনা।
ইরা একটু হেসে বলল
–একা এর কোথায় যাবো আপনাকে নিয়েই যাবো।
রিহাব তার কথা শুনে হাসল।
৫৮
শরতের শেষের দিকে একটু ঠাণ্ডা বাতাস বইছে। আর সমুদ্রে ঠাণ্ডাটা খুব তাড়াতাড়ি পড়ে। এখনো অন্ধকারের রেশ কাটেনি। দূর সমুদ্রে মাঝে মাঝে মাছ ধরার জাহাজের লাইট চোখে পড়ছে। তেমন তীব্র আলো না হলেও অন্ধকারের কারনে সেগুলো ভালভাবেই চোখে পড়ছে। খুব কাছেই তীব্র গর্জনে ঢেউ আছড়ে পড়ছে। ইভান ঈশাকে পিছন থেকে চাদরে জড়িয়ে বসে আছে। নরম বালির উপরে দুজন বসে ভোর বেলার সমুদ্র দেখছে। তারা একা না আশে পাশে অনেকেই আছে তাদের মতো যারা রাতের সমুদ্র দেখতে উৎসুক। কথায় আছে এক সমুদ্রের নাকি হাজার রুপ। তাই তো প্রতিটা সময়ের রুপ দরশন করতেই তারা এখানে এসেছে। কারন ঈশার সমুদ্র খুব পছন্দ। ঈশা মাথা ঘুরিয়ে ইভানের দিকে তাকাল। নির্ঘুম চোখ দুটোতেও কি অনাবিল শান্তির ছাপ স্পষ্ট। সারা রাত জেগে থেকেও তার মুখে কোন ক্লান্তির ছাপ নেই। মাঝখানে ঈশা একটু সময়ের জন্য ঘুমিয়ে পড়লেও ইভান একটুও ঘুমায়নি। ঈশাকে নিজের সাথে জড়িয়ে আরাম করে ঘুমোতে দিয়েছে। ঈশাকে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে তার গালে এক আঙ্গুল স্লাইড করতে করতে বলল
–এই রোমান্টিক ওয়েদারে এভাবে তাকিয়ে থাকলে আমি কিভাবে নিজেকে কন্ট্রোল করি।
ঈশা একটু হেসে বলল
–সারা রাত যে ঘুমাওনি সেটা খেয়াল আছে। এর পর খারাপ লাগবে তো!
ইভান ঈশাকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে নিয়ে তার ঘাড়ে থুতনি রেখে বলল
–ঘুমাতে তো সারা জীবনই পারব ম্যাডাম! কিন্তু এই সময়টা তো আর সব সময় আসবে না।
একটা তপ্ত শ্বাস ছেড়ে বলল
–এই একটা নির্ঘুম রাত আমার সারা জীবনের সুন্দর মুহূর্ত গুলোর সাক্ষী হয়ে থাকবে।
ঈশা ইভানের হাতটা শক্ত করে ধরল। তাদের জীবনে হয়ত অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়ে যাবে। কিন্তু এই মুহূর্তগুলো সব সময় থাকবে। এই স্মৃতি গুলো স্মরণীয় হয়ে থাকবে সারা জীবন।
চলবে………
তোর ছায়ার সঙ্গী হব
লেখক-এ রহমান
পর্ব ২৬
৫৯
আজ সেই কাঙ্ক্ষিত দিন। রিহাব আর ইরার বিয়ে। ঈশা আর ইভান ৩ দিন হল ফিরেছে। এই তিনদিনে সব কিছু গুছিয়ে নিয়েছে। খুব একটা কষ্ট হয়নি কারন খুব ছোট করে ঘরোয়া একটা অনুষ্ঠান হচ্ছে। তবে ইভান খুব ব্যস্ত। আসার পর থেকে সে একরাতও ঘুমায়নি। দুই হাতে একটা প্লেট ধরে উপরে সিঁড়ি বেয়ে উঠছে ঈশা। ভ্রু কুচকে সেই প্লেটের দিকে তাকিয়ে আছে। অন্য মনস্ক হতেই পা এলোমেলো ভাবে সিঁড়িতে পড়তেই পড়ে যেতে নিলে কেউ একজন তার কোমর জড়িয়ে ধরে। একটু ভয় পেয়ে উঠতেই হাতটা দেখে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো। পাশে ঘুরে তাকাতেই ইভানের রক্তিম চোখ দেখে একটু ভয় পেয়ে গেলো। ইভান কে কিছু বলতে না দিয়েই চোখে চোখ রেখে আবেগি কণ্ঠে বলল
–আমি তো জানতাম তুমি ধরবে।
ইভান রাগ করে ঈশাকে সোজা করে দিয়ে বলল
–একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিবো গালে। এখান থেকে পড়ে গেলে কি হতো?
–পড়তাম না তো! তুমি আছো যে।
ইভান আরও রেগে গেলো। ঈশার চুল ধরে মুখটা নিজের কাছে এনে দাতে দাঁত চেপে বলল
–আমি সব সহ্য করতে পারি কিন্তু তোকে নিয়ে কোন হেয়ালি আমি কোন ভাবেই সহ্য করবো না। কথাটা মাথায় রাখিস।
বলেই ঈশার চুল ছেড়ে দিলো। কিন্তু ঈশা এক চুলও নড়ল না নিজের জায়গা থেকে। ইভান একটু বিরক্ত হল। ভ্রু কুচকে নিতেই ঈশা তার মুখটা কাছে এনে আলতো করে ইভানের ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ছুয়ে দিলো। কিছুক্ষনের জন্য ইভান থমকে গেলো। ঈশা যে এমন কিছু করবে সেটা তার ধারনাও ছিলোনা। একটু হেসে ঈশা চলে যেতে নিলে ইভান তার হাত ধরে তাকে টেনে এনে দেয়ালের সাথে চেপে ধরল। ঈশা চারিদিকে তাকিয়ে মুখে লজ্জা মাখা হাসি নিয়ে ফিস ফিস করে বলল
–কি করছ? এটা সিঁড়ি যে কেউ যেকোনো সময় এসে যাবে।
ইভান ঈশার কথার গুরুতু না দিয়ে বলল
–তুই আমার বিয়ে করা বউ। এসব আমার অধিকার। কারও উপস্থিতি আমাকে এসব থেকে বঞ্চিত করতে পারবে না।
কথা শেষ করে ইশার দিকে আগাতেই নিচ থেকে কথা বলতে বলতে ঈশার বাবা উপরে উঠছিলেন। ইভান তার গলার আওয়াজ পেয়ে সরে এক পাশে দাঁড়ালো। ঈশা একটু হেসে বলল
–এরকম সাহস না দেখানোই ভালো যার জন্য হাসির পাত্র হতে হয়।
ইভান তার কথায় রেগে গেলো। ঈশা এক দৌড় দিয়ে উপরে চলে গেলো। ইভান তার দিকে তাকিয়ে একটু হাসল।
৬০
ঈশা অনেকক্ষণ যাবত আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুলের খোপায় ফুল লাগাতে চেষ্টা করছে। কিন্তু কোন ভাবেই পারছেনা। ইভান দরজায় দাড়িয়ে ঈশাকে দেখছে। একটু হেসে কাছে এসে তার চুলে ফুলের গাজরাটা আটকে দিলো। ঈশা কিছু বলতে যাবে তার আগেই পিছন থেকে জড়িয়ে নিয়ে বলল
–কার জন্য এতো সাজগোজ?
ঈশা আয়নায় ইভানের চোখে চোখ রেখে বলল
–আমাকে বউ সাজতে দেখতে ইচ্ছা করেনা তোমার?
ঈশার কথা শুনে ইভান তাকে ছেড়ে দিলো। স্থির দৃষ্টিতে আয়নার মাঝে ঈশাকে দেখে নিলো। নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে বলল
–একটা সময় এই ইচ্ছাটা খুব করে ছিল জানিস। কিন্তু এই ইচ্ছাটার অপেক্ষায় তোকেই হারিয়ে ফেলছিলাম। যদি তোকেই হারায়ে ফেলি তাহলে এসব চাওয়ার কি মানে? তাই এখন তোকে পাওয়ার পর এসব ভাবিনা। ভাবি কোন অপূর্ণতা নাই আর জীবনে।
ঈশা ইভানকে জড়িয়ে ধরে শক্ত করে। ইভান বুঝতে পারে ঈশার মনের অবস্থা। তাকে জড়িয়ে ধরে বলে
–আমার সব চাওয়া পাওয়া তুই পর্যন্তই শেষ জান।
ঈশার চোখ বেয়ে দুই ফোটা পানি বেয়ে পড়ে। ভাবতে থাকে “একটা মানুষ এতোটা কিভাবে ভালবাসতে পারে। ক্লান্তি আসেনা তার? নাকি তার জন্মই আমাকে ভালোবাসার জন্য?”
ঈশার ভাবনার মাঝেই ইভান তার মুখ তুলে চোখ মুছে দিয়ে বলে
–আজ ইরার বিয়ে। এখনি কেঁদে সব মেকাপ নষ্ট করে ফেলবি? আর কিছুক্ষন থাক তারপর কাদিস।
ইভানের কথা শুনে ঈশা আয়নায় তাকাল। আসলেই তো চোখের পানিতে কাজলের এক অংশ লেপটে গেছে। টিস্যু দিয়ে সযত্নে মুছতে মুছতে বিরক্তি নিয়ে বলল
–তুমি আমার মেকাপ নষ্ট করে দিলে কেন?
ইভান রেগে বলল
–একটা থাপ্পড় লাগাব। আমি তোকে কাঁদতে বলেছি।
ইভানের কথা শুনে ঈশা একটু ভাবল। তারপর বুঝতে পারল ঠিকই তো। সে নিজেই ইভানের কথা শুনে কেঁদে ফেলেছে। অসহায়ের মতো মুখ করে বলল
–কেন এভাবে ইমোশনাল কথা বল।
ঈশার কথা শুনে ইভান তাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে গালে একটা চুমু দিয়ে বলল
–তাড়াতাড়ি বাইরে আয়। রিহাবরা এখনি এসে যাবে।
ঈশা মাথা নাড়াল। ইভান বাইরে যেতে নিয়ে আবার থেমে গেলো। পিছনে ঘুরে বলল
–ঈশা
ইভানের আবেগি কণ্ঠে নিজের নাম শুনে ঈশার সারা শরীরে এক তৃপ্তির শিহরণ বয়ে গেলো। পিছনে ঘুরে তাকাল। ইভান একটু হেসে বলল
–অনেক সুন্দর লাগছে জান।
ঈশা হেসে দিলো। ইভান বাইরে চলে গেলো।
৬১
বিয়ে শেষ হল। বিদায়ের পালা। ইরা কেঁদে কেটে ভাসিয়ে দিচ্ছে। তার সাথে তার মাও। বাকি সবাই ছল ছল চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। ঈশা ধির পায়ে সামনে এগিয়ে গেলো। ইরার মাথায় হাত রাখতেই ডুকরে কেঁদে উঠে তাকে জড়িয়ে ধরল। ঈশা আর কিছু বলতে পারলনা। চোখ বেয়ে অঝরে পানি পড়লো। ইলহাম এগিয়ে এসে ইরার দিকে তাকিয়ে ছলছল চোখে ধরা গলায় বলল
–পেত্নি এতোই যখন কাদবি তাহলে বিয়ে করার কি দরকার ছিল।
তার কথা শুনে কষ্টের মাঝেও সবাই হেসে দিলো। ইরাও নিজের চোখের পানি মুছে ইলহামকে জড়িয়ে ধরে বলল
–আমাকে বিরক্ত করতে আসবে কিন্তু ভাইয়া।
ইলহাম পরম যত্নে তার মাথায় হা বুলিয়ে দিয়ে বলল
–আসবো রে। তোর সাথে ছোট বেলা থেকেই কত খেলেছি। খেলার ছলে অনেক মেরেছি। পারলে তোর এই ভাইকে মাফ করে দিস।
তার আবেগি কথা শুনে ইরার কান্নার মাত্রা বেড়ে গেলো। ইভান ইরার মাথায় হাত দিয়ে বলল
–এতো কাদছিস কেন? আমরা তো যাবোই তোর বাড়িতে। এক বারেই তো আর চলে যাচ্ছিস না।
ইরা এবার ইলহাম কে ছেড়ে দিয়ে ইভান কে জড়িয়ে ধরল। ইভান ধির পায়ে তার সাথে কথা বলতে বলতেই গাড়ির সামনে এনে দাড় করিয়ে দিলো। গাড়ির দরজা খুলে তাকে ভিতরে বসিয়ে দিলো। ইরা দুই হাতে মুখ চেপে কাঁদতে লাগলো। ইভান রিহাবের দিকে তাকিয়ে বলল
–সাবধানে যাস। পৌঁছে ফোন করিস।
রিহাব সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে বসে পড়লো। গাড়ি নিজ গতিতে চলছে। ইরা জানালার কাচে মাথা ঠেকিয়ে নিরবে চোখের পানি ফেলছে। রিহাব একবার তাকে দেখে নিয়ে বলল
–একেই তো পরিবারের কাছ থেকে এভাবে নিয়ে যাচ্ছি তারপর আবার এতো কাদলে নিজের অপরাধ বোধ টা বেড়েই যাচ্ছে। সেটা রাখার জায়গা আমার নেই।
রিহাবের এমন কথা শুনে ইরার মায়া হল। মনে হল সত্যিই একটু বেশি করে ফেলছে। সে তো জেনেই বিয়ে করছে যে তাকে শ্বশুর বাড়িতে যেতে হবে। তাহলে এতো কান্না কিসের? চোখ মুছে নিজেকে স্বাভাবিক করে নিলো। রিহাব সামনে থাকা পানির বোতল টা এগিয়ে দিলো। ইরা সেটা হাতে নিয়ে একটু পানি খেয়ে নিলো। তারপর সেটা সামনে রেখে জানালা দিয়ে আবার তাকাল। রিহাব ধির কণ্ঠে বলল
–এখন ভালো লাগছে?
মন খারাপের মাঝেও এক রাশ ভালো লাগা ছুয়ে গেলো। মাথাটা আলতো নাড়িয়ে হ্যা বলল। খানিকবাদে গাড়ি এসে দাঁড়ালো বাড়ির সামনে। তারা গাড়ি থেকে নামল। সবাই তাদেরকে দেখার উদ্দেশ্যে বাড়ির সামনে ভিড় করেছে। ইরার শাশুড়ি তাকে বরন করে নিলো। তারপর ভিতরে একজন কে উদ্দেশ্য করে বলল
–ওকে ঘরে নিয়ে যাও।
ইরার দিকে তাকিয়ে বলল
–ঘরে গিয়ে এসব চেঞ্জ করে ফেল। অনেক টায়ার্ড লাগছে তাই না?
শাশুড়ির কথা শুনে ইরার মায়ের কথা মনে পড়লো। শাশুরিকে জড়িয়ে ধরল। তার শাশুড়ি পরম আদরে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল
–আমিও একদিন বউ হয়ে এসেছি এই বাড়িতে। আজকের দিনটা কতটা কষ্টের তা আমার খুব ভালো মত জানা আছে।
ইরা চোখ থেকে দু ফোটা পানি ফেললো। তার শাশুড়ি মুখ তুলে চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল
–আর যেন চোখে পানি না দেখি। এখন যাও।
ইরা একটু হেসে মাথা নাড়িয়ে ঘরে চলে গেলো। সামনের ঘরের দরজাতে লাগান এক গুচ্ছ ফুল। দরজা খুলে ভিতরে যেতেই চোখে পড়লো সাজানো খাট। মেয়েটি ইরাকে ঘরে ঢুকিয়ে দিয়ে বলল
–ভাবি আমি আসি। ভাইয়া এখনি চলে আসবে।
বলেই একটা হাসি দিলো। ইরা খুব শান্ত ভাবে জিজ্ঞেস করলো
–তোমার নাম কি?
–শান্তা।
ইরা একটু হাসল। মেয়েটি চলে গেলো। ইরা একা একা সব ঘুরে দেখছিল। ঘরটা অনেক সুন্দর করে সাজানো। আচমকা দরজা খোলার আওয়াজে চমকে উঠলো ইরা। রিহাব রুমে এসে ঢুকল। তারপর দরজাটা লক করে দিলো। ইরার এখন ভয়ে বুক কাঁপছে। হাত পা রীতিমতো কাঁপছে। এক হাতে শাড়ীর আচল মুঠ করে ধরে এক পাশে দাড়িয়ে আছে। রিহাব ইরার দিকেই আসছে। কিন্তু ইরার সাহস হল না চোখ তুলে তার দিকে তাকাতে। সে মাথা নামিয়ে দাড়িয়ে আছে। রিহাব তার অনেকটা কাছে এসে পড়েছে। এবার তো ইরার মুখের কথাই বন্ধ হয়ে গেছে। কিছু বলতে চাইলেও মুখ থেকে বের হচ্ছেনা। এই অবস্থায় রিহাব ইরাকে অবাক করে দিয়ে বলল
–এখনো চেঞ্জ করনি?
রিহাবের শান্ত গলার আওয়াজ শুনে ইরার একটু সাহস হল। হাতের মুঠোয় ধরে রাখা শাড়ী ছেড়ে দিলো। একটা শুকনো ঢোক গিলে নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়ে বলল
–করতেই যাচ্ছিলাম।
রিহাব বিছানায় বসে পড়লো। ইরার দিকে তাকিয়ে বলল
–তাড়াতাড়ি চেঞ্জ করে নাও।
ইরার এই মুহূর্তে রিহাবের মুখটা দেখতে খুব ইচ্ছা হচ্ছিলো। কিন্তু শত সাহস সঞ্চয় করেও চোখ তুলে তাকাতে পারল না। তাই আর চেষ্টা না করে লাগেজ থেকে নিজের কাপড় বের করে ওয়াশ রুমে চলে গেলো। রিহাব একটা ছোট শ্বাস ছেড়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো। ইরা ওয়াশ রুম থেকে বের হয়ে দেখে রিহাব চোখের উপরে হাত দিয়ে শুয়ে আছে। ঘুমিয়ে গেছে কিনা বুঝতে পারছে না। ধির পায়ে তার পাশে বসতেই রিহাব হাত সরিয়ে ইরার দিকে তাকায়। তারপর উঠে বসে খুব শান্ত গলায় বলে
–এখনো মন খারাপ?
ইরা চোখ নামিয়ে মাথা নাড়িয়ে না বলল। তারপর একটুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল
–আপনি চেঞ্জ করবেন না?
–করবো।
কিছুক্ষন এভাবেই চুপ করে থেকে রিহাব বলল
–তুমি রেস্ট নাও আমি চেঞ্জ করে আসি।
বলেই ওয়াশ রুমে চলে গেলো। ইরা উঠে এবার পুরো ঘরটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। ঘরে দেখা শেষ করে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো। রিহাব ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে ইরাকে রুমে দেখতে না পেয়ে বারান্দায় গেলো। ইরা দাড়িয়ে আছে। থেমে থেমে ওঠা হাওয়ায় চুল গুলো অগছালোভাবে উড়ছে। রিহাব ইরার পিছনে গিয়ে দাঁড়ালো। তার এক হাতের উপরে হাত রেখে অপর হাত দিয়ে কোমর ধরে নিজের সাথে জড়িয়ে নিলো। আচমকা এমন হওয়ায় ইরা ভয় পেয়ে কেঁপে উঠলো। সামনে তাকিয়ে বলল
–তোমার সাথে নতুন জীবনের পথ চলা শুরু করতে চাই। মৃত্যু পর্যন্ত তোমার সাথে থাকতে চাই। সঙ্গ দিবে আমাকে?
ইরা চুপ করে থাকে। তার কোন উত্তর না পেয়ে রিহাব তাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে মুখটা আলতো করে তুলে তাকায়। ইরার অস্বস্তি হয়। চোখ বন্ধ করে ফেলে। তার ঠোঁট কাঁপছে অনবরত। রিহাব তার সেই ঠোঁটে আলতো করে নিজের ঠোঁট ছুয়ে দিয়ে বলে
–আমার মনের সব টুকু ভালোবাসা দিয়ে তোমাকে ভালবাসতে চাই। দিবে কি আমাকে সেই সুযোগ?
ইরা চোখ খুলে ফেলে। রিহাবের এই অদ্ভুত দৃষ্টি ইরার ভিতরে জমান সমস্ত আবেগকে অস্থির করে তুলছে। সে আর তাকিয়ে থাকতে পারল না। ইরা রিহাব কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। রিহাবও ইরাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো।
চলবে…………