তোর ছায়ার সঙ্গী হব,পর্ব ৭,৮

0
2392

তোর ছায়ার সঙ্গী হব,পর্ব ৭,৮
লেখক-এ রহমান
পর্ব ৭

১৫
ঈশা আর রিমা তার ঘরে বিছানায় বসে গল্প করছে। ওয়াশ রুমের দরজা খোলার শব্দে দুজনি সেদিকে তাকায়। ইভান ওয়াশ রুম থেকে শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে মাথা মুছছে। অফ হোয়াইট টি শার্ট আর ব্ল্যাক ট্রাউজারে ইভান কে দেখে রিমা ক্রাশ খেলো। সে হা করে তাকিয়ে আছে তার দিকে। ঈশা ভ্রু কুচকে ইভানের দিকে তাকিয়ে আছে। ইভানের চোখ ঈশার উপরেই আগে পড়ে। ঈশার এভাবে ভ্রু কুচকে তাকানোর মানে ইভান বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করলো
–হোয়াট?
ঈশা চেচিয়ে বলল
–তুমি আবার আমার ওয়াশ রুমে?
ইভান এবার খুব শান্ত ভাবে উত্তর দিলো
–এই রুমে এই ওয়াশ রুমে আমি যখন তখন ম্যানারস মেইনটেইন না করেই ঢুকতে পারি। ইটস মাই রাইট। আফটার অল ইউ আর মাই লিগাল ওয়াইফ!
বলেই হাতের ভেজা টাওয়াল টা ঈশার মুখে ছুড়ে মারল। একটু মুচকি হেসে ঘর থেকে বের হতে গিয়েই আবার ঘুরে তাকাল। ঈশা টাওয়াল টা মুখ থেকে সরিয়ে বিরক্ত নিয়ে তার দিকে তাকাল। ইভান রিমার দিকে তাকিয়ে বলল
–তুমি রিমা?
রিমা এতক্ষন হা করে তার দিকে তাকিয়ে ছিল। তার কথা শুনে দাঁত কেলিয়ে বলল
–হ্যা। আমিই রিমা।
ইভান একটু হেসে বিছানার উপরে এসে আরাম করে বসে পড়লো। তারপর রিমার দিকে তাকিয়ে হাত বাড়িয়ে বলল
–নাইচ টু মিট ইউ!
রিমাও হেসে হাত বাড়িয়ে দিলো। ইভান আর রিমা নিজেদের মতো গল্পে মশগুল। সেখানে যে ঈশা বসে আছে তা তাদের মাথাতেই নেই। ঈশা খুব বিরক্ত হল। রাগ হল ইভানের উপরে। এতো কি গল্প রিমার সাথে তার। এমন ভাব করছে যেন তার ছোট বেলার কোন বান্ধবির সাথে দেখা হয়েছে। কিছুক্ষন পর ইরা এসে সবাইকে খেতে ডাকল। রিমা ইরার সাথে বের হয়ে গেলো। ঈশা উঠে দাঁড়ালো। মুখটা কাল করে দাড়িয়ে আছে। তার মুখ কাল করার কারন ইভান বেশ বুঝতে পারছে। সে একটু হেসে উঠে দাঁড়ালো। ঈশা তার দিকে তাকিয়ে রাগি সরে বলল
–রিমা বাইরে চলে গেছে। তুমি এখানে এখনো কি করছ?
ইভান তাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে বলল
–ওয়াশ রুমে নিজের ব্যাক্তিগত জিনিস গুলো আমাকে দেখানোর জন্য ফেলে রেখেছিস?
ঈশা একটু অপ্রস্তুত হয়ে বলল
–কি সব আজে বাজে কথা বলছ?
ইভান তার মুখটা ঈশার একদম কাছে এনে চোখে চোখ রেখে ঘোর লাগা কণ্ঠে বলল
–তোর কোন কিছুই আমার অজানা নয়। এই তোকে আমি পুরোটাই জানি। কিন্তু অন্য কেউ এসব জানুক তা আমি সহ্য করবোনা।
গলাটা হালকা করে চেপে ধরে বলল
–বি কেয়ার ফুল। নাহলে জানে মেরে ফেলব।
ঈশা তার দিকে তাকিয়ে একটা শুকনো ঢোক গিলে ফেললো। ইভান আলতো করে গালে একটা চুমু দিয়ে তাকে ছেড়ে দিলো। ঈশা ছাড়া পেয়ে বাইরে যেতে নিলেই ইভান আবার বলে
–আর ইউ জেলাস?
ঈশা বেশ বিরক্ত নিয়ে ঘুরে তাকিয়ে বলল
–আর ইউ ম্যাড?
ইভান একটু বাকা হেসে দেয়ালের সাথে হেলানি দিয়ে হাত গুঁজে বলল
–তোমার এই অনুভুতি গুলো অন্য কারও কাছে লুকাবে। আমার কাছে নয়। চাইলেও পারবেনা। আমি তোমার শিরায় শিরায় বিরাজ করি মিসেস ইভান মাহমুদ।
ইভানের শেষের লাইনটা শুনে ঈশার গায়ে কাটা দিয়ে উঠলো। তার রাগ করার কথা থাকলেও আশ্চর্য জনক ভাবে মুখে হাসি ফুটে উঠলো। সে চেয়েও হাসি চেপে রাখতে পারলনা। শেষ লাইনটা ঈশার কানে বেজেই যাচ্ছে। ঈশার অবস্থা বুঝতে পেরে ইভান একটু হেসে বাইরে গেলো। ঈশা দাড়িয়ে ভাবছে। ইভান আবার ফিরে এসে বলল
–খেতে আসো।
ইভানের কথা শুনে ঈশা উলটা ঘুরেই ঠোঁট কামড়ে হাসল। সেই হাসি দেখে ইভানের মনটা একদম শান্ত হয়ে গেলো।

১৬
রিমা বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে বলল
–তোর বর যা হ্যান্ডসাম! আমি তো প্রথম দেখাতেই ক্রাশ খেয়েছি। উফফ…।
রিমার কথা শুনে ঈশার মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। সে একটু হেসে বলল
–বাইরে থেকে দেখতে হ্যান্ডসাম কিন্তু ভিতর থেকে পুরাই আগুন। যে কোন সময় জালিয়ে দেবে।
তার কথার মানে রিমা বুঝতে পারলনা। উঠে বসে বলল
–আরমান ভাইয়ার কথা ভেবে খারাপ লাগছে। বেচারা তোকে খুবই পছন্দ করত। তোর বিয়ের কথা শুনে তার মন ভেঙ্গে যাবে।
ঈশা একটু নিশ্বাস ছেড়ে বলল
–আরমান ভাইকে আমি অনেক বার বোঝাতে চেষ্টা করেছি। যত বার কথা হয়েছে আমি তাকে ততবার বলতে চেষ্টা করেছি। উনি আমার কোন কথাই শুনতে চাননি। লোকটা ততটাও খারাপ না।
ঈশা রিমার দিকে মুখ ঘুরে দাড়িয়ে ছিল। কথাটা শেষ করে সামনের জানালায় থাই গ্লাসে চোখ পড়ে। ইভান পানির গ্লাস হাতে নিয়ে উলটা দিকে ঘুরে দাড়িয়ে আছে। তাদের সব কথা সে শুনেছে। ঈশা ভয় পেয়ে যায়। তার দিকে ঘুরে তাকাবে তার আগেই আওয়াজে চমকে উঠে।পিছনে ঘুরে এক দৌড়ে ইভানের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। হাতে থাকা গ্লাসটা জোরে চাপ দিয়ে ভেঙ্গে ফেলায় কাচের টুকরো ইভানের হাতে ঢুকে যায়। সবাই দৌড়ে আসে। ঈশা হাত ধরতে চাইলে ইভান তার কাছ থেকে হাত ছাড়িয়ে নেয়। সবাই বুঝতে পারে সে ঈশার উপরে কোন কারনে রাগ করেছে। হাত থেকে রক্ত টুপটুপ করে নিচে পড়ছে। ঈশা নিস্পলক সেদিকে তাকিয়ে চোখ থেকে পানি জরাচ্ছে। কিন্তু ইভানের সেদিকে খেয়াল নেই। সে রাগে কাঁপছে। ইরা ইভান কে টেনে বেসিনের কাছে নিয়ে গিয়ে হাত থেকে কাচ বের করে হাত ধুয়ে দিলো। তারপর চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিলো। কেউ কোন কথা বলছেনা। কারন সবাই জানে এখন কথা বললেই ইভান আরও রেগে যাবে। ইরার ব্যান্ডেজ করা শেষ হতেই ইভান ঘরে চলে যায়। ঈশা তার দিকে তাকিয়ে কাঁদতে থাকে। রিমা কিছুই বুঝতে পারেনা কি হল। সে ঈশার ঘাড়ে হাত রাখে। তাকে দেখে ঈশা চোখের পানি মুছে ফেলে।

বিকেলে রিমা চলে গেলো। ঈশা দুই পায়ের ভাজে মুখ গুঁজে বিছানায় বসে আছে। ইলহাম এসে বলল
–আপি কি হয়েছে?
তার কথায় মুখ তুলে তাকাল ঈশা। সামনে বসতে বলল ইশারা করে। তারপর জিজ্ঞেস করলো
–তোর ভাইয়া কি করছে?
–ঘুমিয়ে আছে?
ঈশা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলে
–এখনো?
–একটু আগেই ঘুমাল। হাত ব্যাথা করছিলো। ঘুমাতে পারছিল না। জর এসেছে হালকা।
তার কথা শুনে ঈশার চোখ বেয়ে দু ফোটা পানি বেয়ে পড়লো। ঈশা কে কাঁদতে দেখে ইলহাম বলল
–একটা কথা বলব আপি।
ঈশা মাথা নেড়ে সম্মতি দেয়।
–তুমি আজ রাতে ভাইয়ার কাছে থাকবে? আমি পাশের রুমে থাকব। ভাইয়া অনেক অসুস্থ। কাউকে বলবে না। কিন্তু তোমাকে না বললেও তুমি বুঝতে পারবে।
তার কথা শুনে ঈশা করুন চোখে তার দিকে তাকাল। ভাইয়ের কষ্ট সেও আজ সহ্য করতে পারছেনা। মোটামুটি বাধ্য হয়েই কথাটা ঈশাকে বলল। ঈশা একটু হেসে বলল
–আগে থেকে কাউকে কিছু বলিস না। তোর ভাইয়া জানতে পারলে তোকে আর আমাকে সারা রাত বাড়ির বাইরে রাখবে।
ইলহাম একটু হেসে বলল
–আমার কি মাথা খারাপ। জেনে শুনে আগুনে ঝাপ দিবো?
কথাটা বলেই ইলহাম ঈশার কাধে মাথা রাখল। ঈশা তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।

১৭
ঈশা ইভানের পাশে বসে নিঃশব্দে কেদেই চলেছে। মুখে হাত দিয়ে কান্না চেপে ধরে রেখছে। ইভান গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। জেগে থাকলে হয়ত ঈশাকে ঘর থেকে বের করে দিত।ইভানের জর এসেছে। ঈশা তার মাথায় জল পট্টি দিয়ে দিলো কিন্তু এসবের কিছুই ইভান বুঝতে পারলনা। সারা রাত সেবা করার পর ভোর বেলা ইভানের জর কমে। তখন ঈশার একটু চোখ লেগে যায়। ইভানের এক পাশে সে গুটি সুটি মেরে শুয়ে পড়ে।
ঈশা ঘুমিয়ে পড়ার কিছুক্ষন পরেই ইভানের ঘুম ভেঙ্গে যায়। জরের কারনে খুব খারাপ লাগছিলো কিন্তু এখন বেশ ভালো লাগছে তার। জর টাও নেই। পানির পিপাসা পেয়েছে। পানি খেতে উঠতে যাবে দেখে ঈশা তার পায়ের কাছে গুটি সুটি মেরে শুয়ে আছে। তাকে এভাবে শুয়ে থাকতে দেখে ইভান অবাক হয়। ঈশার মুখটার দিকে দেখে ইভানের কষ্ট হয়। কেঁদে কেঁদে চোখ মুখ লাল করে ফেলেছে। ঈশার মুখের দিকে তাকিয়ে করুন সরে বলল
–আমার কষ্ট সহ্য করতে পারিস না কিন্তু আমাকে কষ্ট দিতেও ছাড়িস না। আমি একি কথা সেই ছোট বেলা থেকে বলে এসেছি। তোর সাথে কাউকে সহ্য করতে পারিনা। তবুও তুই অন্য কারও সাথে কথা বলিস। অন্য কারও কথা ভাবিস। অন্য কারও জন্য কষ্ট পাস। কিন্তু তোর এই কষ্ট চিন্তা ভাবনা সব আমাকে ঘিরে হওয়ার কথা ছিল। আমার ভালবাসায় কি এমন কমতি আছে জান।
ঈশার ঠাণ্ডা লাগছে। একটু কেঁপে উঠলো। ইভান কাঁথাটা ঈশার গায়ে দিতেই ঈশা সেটা জড়িয়ে নিয়ে ভালো করে শুয়ে পড়ল।এবার ইভান ঈশাকে কাথা সহ তুলে নিয়ে তার পাশের বালিশে শুয়ে দিলো। ঈশা আরামে ঘুমে গেলো। ইভান ঈশার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। আলতো করে তার ঠোঁটে ঠোঁট ছুয়ে দিলো। তারপর উঠে গিয়ে পানি খেয়ে নিলো। ঈশার পাশে শুয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকলো। ইভানের চোখ বেয়ে দুই ফোটা পানি বেয়ে পড়লো। ঈশার দিকে তাকিয়েই বলল
–তুই আমার অস্তিত্ব। কিন্তু তোর মাঝে আমি কোথায় রয়েছি বলতে পারিস? আমি জেদিন নিজেকে তোর মাঝে খুজে পাব সেদিন তোকে আর কোন কষ্ট দিবনা জান। কিন্তু সেদিন টা কি কখনও আসবে আদৌ।
বলেই ঘুমিয়ে গেলো ইভান।
সকাল বেলা ঘুম ভেঙ্গে ঈশা দেখল সে বালিশে শুয়ে আছে। কিন্তু কাল রাতে তো সে ইভানের পায়ের কাছে শুয়ে ঘুমিয়েছিল। তাহলে ইভান তাকে রাতে ঠিক মতো শুয়ে দিয়েছে। ঈশা বেশ আশ্চর্য হল। কারন ইভান তার উপরে যত রাগ করেছিলো তাতে তাকে ঘরের বাইরে বের করে দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেসবের কিছুই হয়নি। বরং যত্নে তাকে কাথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে দিয়েছে। ইভানের মুখটার দিকে তাকাল সে। খুব শান্ত লাগছে তাকে। ঈশা মনে মনে বলল ”সব সময় যদি এমন শান্ত থাকতো তাহলে কতই না ভালো হতো। আমাকে আর কষ্ট পেতে হতনা।” ভেবেই উঠে গেলো।রাতে ঘুম না হওয়াতে মাথাটা ব্যাথা করছে। ঈশা মাথা চেপে ধরে ঘর থেকে বের হচ্ছে। বের হয়েই দেখে বাড়ির সবাই তার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। যেন পর পুরুষের ঘরে সারা রাত কাটিয়ে বের হল সে। তার চাচি রাগি ভাব নিয়ে এগিয়ে এসে ধমক দিয়ে বললেন
–তুই ইভানের সাথে ঘুমিয়েছিস আমাদের বলেছিস?
তার চাচির কথা শুনে ঈশা আকাশ থেকে পড়লো। এখন কি ইভানের সাথে ঘুমাতে তাকে সবার কাছে অনুমতি নিতে হবে। সে না তার বিয়ে করা বর। তার সাথে থাকেনা বলে এতদিন সবার এতো সমস্যা। আজ ছিল বলে এভাবে জেরা করছে। ঈশা অপরাধীর মতো মাথা নিচু করে বলল
–অনেক রাত হয়েছিলো তোমরা সবাই ঘুমিয়ে পড়েছিলে। আর ইভানের অনেক জর এসেছিলো তাই সারা রাত ওখানে ছিলাম। ভোর বেলা ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম কখন বুঝতে পারিনি।
তার চাচি আবার বজ্র কণ্ঠে বললেন
–তুই আরামে ঘুমাচ্ছিস আর ভোর বেলা তোকে ঘরে না পেয়ে সারা দুনিয়া আমরা খুজে বেড়াচ্ছি। বললেই পারতিস তাহলে এতো চিন্তা করতাম না।
ঈশা এবার বেশ অবাক হল। একটু রেগেই বলল
–এভাবে খোঁজার কি আছে? কি ভেবেছ তোমরা আমি কি পালিয়ে যাব?
–সেই সুযোগ নেই।
ইভানের কথা শুনে সবাই তার দিকে তাকায়। ঈশা পিছনে ঘুরে দাঁড়ায়। ইভান তার দিকে তাকিয়ে আছে। সবার চেচামেচিতে ইভানের ঘুম ভেঙ্গে যায়।ঈশার মা জিজ্ঞেস করে
–তোর নাকি জর? এখন কেমন আছিস?
–ভালো আছি তোমার মেয়ে সারা রাত আমার সেবা করেছে। জর না কমে যাবে কোথায়?
ইভান ঈশার দিকে তাকিয়েই কথাটা বলল। এবার সবার মাথায় ঢুকল বিষয়টা। সবাই ঈশাকে এভাবে জেরা করার জন্য একটু লজ্জা পেল।কারন ঈশাকে খুজে না পেয়ে ভয় পেয়ে গিয়েছিলো সবাই। আবেগের বসে সে আবার কিছু করে যেন না বসে তাই নিয়েই সবার এতো চিন্তা।সবাই যে যার মতো চলে গেলো। ইভান এবার ঈশার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে বলল
–কি বললি তুই?
ঈশা এবার খুব বিরক্ত হয়ে বলল
–সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে নাটক আর ভালো লাগছেনা। এমনিতেই ভালো করে ঘুম হয়নি। তার উপর সবাই এভাবে জেরা করতে শুরু করেছে। তুমি এখন আবার নতুন করে কি বলবে?
ইভান ঈশার কথা শুনে বুঝতে পারল রাতে ঘুম না হওয়ায় তার মেজাজ খারাপ হয়ে আছে। মাথাও ধরেছে। তাই কারও কথাই সহ্য হচ্ছেনা। তবুও একটু রাগি লুক নিয়ে বলল
–আমি কি ঠিক শুনলাম তুই মাত্র বললি ইভানের জর এসেছিলো…।
বলেই থেমে গেলো ইভান। ঈশা এবার তার মুখের ভঙ্গি স্বাভাবিক করে ফেললো। বুঝতে পারল সে এই প্রথমবার ইভানের নাম বলেছে। আগে ভাইয়া ডাকত। কিন্তু বিয়ের পর থেকে কিছুই বলেনা। আজ প্রথম বার ইভান তার মুখে নিজের নামটা শুনেছে। কিন্তু ঈশার খুব মেজাজ খারাপ লাগছে। এতো ছোট বিষয়ে রিয়াক্ট করার কি আছে? সে রেগে বলল
–হ্যা বলেছি তো কি করবে? এখন কি এটার জন্যও শাস্তি দিবে? কি শাস্তি দিবে ঠিক করেছো? নাকি আরও সময় লাগবে ঠিক করতে? ঠিক করে আমাকে জানিয়ে দিও কেমন?
কথাটা বলেই ঈশা চলে গেলো। ইভান হা করে ঈশার দিকে তাকিয়ে আছে। ঈশা যে তার কথায় এই রকম রিয়াক্ট করবে সে ভাবেওনি। খুব অবাক হয়ে গেলো। বুঝতে পারল ঈশার উপরে মানসিক চাপটা একটু বেশিই পড়েছে। আর পর পর দুইবার ইভানের এরকম ঘটানোয় ঈশার মনে তাকে হারানোর ভয় তৈরি হয়েছে। ইভান একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেললো। মনে মনে বলল “মুখ ফুটে একবার বলেই দেখতিস তোর সব কষ্ট দূর করে দিতাম। কিন্তু তুই তো সেটা করবিনা। খুব ইগো তোর!”

চলবে……

তোর ছায়ার সঙ্গী হব
লেখক-এ রহমান
পর্ব ৮

১৮
ইভান ছাদে দাড়িয়ে একটার পর একটা সিগারেট জালাচ্ছে। ঈশা তার পিছনে এসে দাড়িয়ে বলল
–এসব অভ্যাস তো তোমার আগে ছিলোনা? কবে থেকে শুরু করেছো?
ইভান একটু হেসে বলল
–অনেক পরিবর্তনের পরেই আমি আজকের এই ইভান। জিবনের অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়ে গেছে। অনেক নতুন অভ্যেস তৈরি হয়েছে আবার পুরাতন কিছু জিনিস হারিয়ে গেছে যা হারানোর কথা ছিলোনা।
ঈশা ইভানের কথা শুনে ছাদের রেলিঙ্গের উপরে লাফ দিয়ে বসে পড়লো। ঈশার ওখানে বসা দেখে ইভান ভয় পেয়ে চিৎকার করে বলে
–ঈশাআআ…।
ঈশা ইভানের দিকে তাকিয়ে একটু মুচকি হেসে বলে
–কি ভাবছ? এখান থেকে লাফ দিবো। আমি এতো বোকা না।
ইভান ঈশার উপরে বিরক্ত হল। সিগারেটের প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে ঠোঁটে লাগাতেই ঈশা সেটা নিয়ে নিলো। তারপর নিচে তাকিয়ে ফেলে দিলো। ইভান ভ্রু কুচকে ঈশার দিকে তাকিয়ে আছে। এবার ঈশা তার হাত থেকে পুরো প্যাকেট টা নিয়েই নিচে ফেলে দিলো। ইভান অসহায়ের মতো প্যাকেট টার দিকে তাকিয়ে থাকলো। সেটা মাটিতে পড়তেই ইভান ঈশার হাত ধরে বলল
–কি করলি এটা?
–কেন দেখতে পেলেনা? নিচে ফেলে দিলাম।
–আমার কাছে আপাতত একটাই প্যাকেট ছিল।
–জানতাম। এই জন্যই তো ফেলে দিলাম।
ইভান এবার খুব রাগ করে বলল
–নিজেই আঘাত দিয়ে আবার সেটাতে মলম লাগাতে এসেছিস? খুব ভালো নাটক করতে পারিস তুই। আমার সামনে না করে মঞ্চে গিয়ে কর হাত তালি পাবি। এখান থেকে চলে যা।
ইভানের কথা শুনে ঈশা জেদ করে বলল
–যাবনা এখান থেকে কি করবে?
–আমি নিচে চলে যাব।
–যাও! যেখানে খুশি যাও। আমি এখানেই বসে থাকব।
ঈশার কথাটা শেষ হতেই আকাশে মেঘ ডেকে উঠলো। মেঘের গর্জন শুনে ইভান আকাশের দিকে তাকিয়ে বাকা হাসল। তারপর ঈশার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল
–এখানেই বসে থাক। আমি যাচ্ছি।
বলেই সে পকেটে হাত গুঁজে ধিরে ধিরে হাঁটছে সিঁড়ির দিকে। আর হাসছে। কারন ঈশা মেঘের ডাক খুব ভয় পায়। ইভান জানে সে বেশিক্ষন থাকতে পারবেনা। ইভানের ভাবনার মাঝেই আবার জোরে মেঘ ডেকে উঠলো। আর ঈশা দৌড়ে এসে ইভান কে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরল। ইভান দাড়িয়ে গেলো। এভাবে ঈশা তাকে জড়িয়ে ধরবে তা ইভান ভাবেনি। ঈশা ভয়ে কাঁপছে। ইভান ঈশার হাত ধরে তাকে সামনে এনে দাড় করাতেই ঈশা আবার ইভান কে জড়িয়ে ধরল। কিছুক্ষনের জন্য ইভানের মনে হল তার শুন্য বুকটা ভরে গেলো। প্রথম ঈশা তাকে জড়িয়ে ধরেছে। ইভানও কিছু না ভেবে তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। চোখ বন্ধ করে অনুভব করছে ঈশাকে। তাদের মাঝে এই মুহূর্তে কোন বাধা নেই। চোখ বন্ধ করেই ইভান বলল
–ভয় পাস না জান। আমি আছি তো। সব কিছু থেকে তোকে রক্ষা করবো।
দুজন দুজন কে জড়িয়ে ধরে মুহূর্তটা অনুভব করছে। এমন সময় বৃষ্টি এলো। ঈশার মনে পড়লো ইভানের জর। বৃষ্টিতে ভিজলে আরও ঠাণ্ডা লাগবে। তাই ইভান কে ছেড়ে দিলো। তার পর সিঁড়ির দিকে চলে যেতে লাগলো। হঠাৎ হাতে টান অনুভব করলো। পিছনে ঘুরে দেখে ইভান তার হাত টেনে ধরে তার দিকে তাকিয়ে আছে। ঈশা কিছু চিন্তা না করেই বলল
–নিচে চল।
ইভানের তার কথায় কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। সে ঈশার দিকে তাকিয়ে বলল
–কোন এক দিন তুই জেদ করছিলি আমার সাথে এভাবে বৃষ্টিতে ভিজতে। কিন্তু সেদিন আমি তোর ইচ্ছাটা পুরন করতে পারিনি কারন তুই অসুস্থ ছিলি। আজ পুরন করতে চাই। দিবি?
ঈশা কিছু না ভেবেই বলল
–তোমার জর। বৃষ্টিতে ভিজলে ঠাণ্ডা লাগবে। আরও অসুস্থ হয়ে যাবে।
ইভান একটু হেসে বলল
–তুই সেবা করবি। আমি ছোট বেলা থেকে তোর কোন ইচ্ছা অপূর্ণ রাখিনি। এটাই বাকি ছিল। আর এরকম একটা সুযোগের অপেক্ষায় ছিলাম। আমাকে তোর ইচ্ছাটা পুরন করার সুযোগ দিবিনা? প্লিজ জান।
ইভানের কথা শুনে ঈশা চেয়েও আর কিছু বলতে পারল না। ইভান বুঝতে পারল ঈশার সম্মতি। তাকে টেনে এনে ঘুরিয়ে তার পিঠে নিজের বুক ঠেকিয়ে চুল গুলো খুলে মুখ ডুবিয়ে দিলো। পিছন থেকে চুল সরিয়ে পিঠে আলতো করে ঠোঁট ছোঁয়াল। এক হাত ঈশার পেটে দিয়ে চেপে ধরল। ঈশাও চোখ বন্ধ করে ফেললো। সেই ছোটবেলার কথা। ঈশার খুব জর ছিল। তবুও সেদিন বৃষ্টিতে ভিজতে ইচ্ছা করছিল তার। কিন্তু সেদিন ইভান এভাবেই তার হাত টেনে আটকে রেখেছিল। ঈশা খুব জেদ করছিলো। তখন ইভান খুব শান্ত ভাবে বলেছিল
–তোর এই ইচ্ছাটাও কোন একদিন পুরন করবো। সেদিন তোর মনে হবে আজ এই ইচ্ছাটা পুরন না হয়ে ভালই হয়েছিলো। আজকের থেকে সেদিন অনেক বেশি কিছু পাবি।
তার কথা শুনে ছোট্ট ঈশা কিছু না বুঝলেও আজ বুঝতে পারছে। সত্যিই সেদিন ইচ্ছাটা পুরন না হয়ে খুব ভালো হয়েছে। সেদিন শুধু বৃষ্টিতেই ভিজতে পারতো। কিন্তু এভাবে ইভান কে কাছে পেতনা। আজ সব মিলে যেন মনে হচ্ছে সে পৃথিবীর সব থেকে সুখি। ইভান তাকে জড়িয়ে নিয়ে কানের কাছে মুখ এনে বলল
–বলেছিলাম না এমন অনেক কিছুই পাবি যাতে তোর মনে হবে সেদিন ইচ্ছাটা না পুরন হয়েই ভালো হয়েছে। তোর জীবনে আমি কোন কিছুর আফসোস রাখতে চাইনা। সময় মতো সব পাবি তুই।
ঈশা একটু হেসে বলল
–তোমার মনে আছে?
–আমার সব মনে আছে জান।
বলেই ঈশাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে কপালে একটা চুমু দিলো। ঈশা কি ভেবে ইভানের দিকে তাকিয়ে বলল
–আর না। তুমি অসুস্থ হয়ে যাবে। নিচে চল।
ইভান একটু হেসে ঈশাকে কোলে তুলে নিলো। ইভানের এমন কাজে ঈশা অবাক হল। ঈশাকে নিয়ে গিয়ে রেলিঙ্গের উপরে বসিয়ে দিলো সামনে মুখ ঘুরে। তারপর তার দুই পাশে হাত দিয়ে ঘাড়ে নিজের থুতনিটা রাখল ইভান। ঈশার মাথার সাথে নিজের মাথা লাগিয়ে বলল
–তোর সব ইচ্ছা পুরন করে আমি মরে গেলেও কোন আফসোস নেই। বরং শান্তিই পাব।
ইভানের কথা শুনে ঈশার খুব কষ্ট হল। কেঁদে ফেললো। কাদ কাদ গলায় বলল
–আমি নিচে যাব।
ইভান ঈশার মনের অবস্থা বুঝতে পেরে তাকে দুই হাতে জড়িয়ে বলল
–কাদছিস কেন? আমি মরতে চাইলেই কি তুই আমাকে মরতে দিবি?
বলেই ঈশার গালে নিজের নাক ঘোষতে ঘোষতে বলল
–আমি যেখানেই থাকি । তোকে কখনও একলা ছাড়বনা। আমি তোর ছায়ার সঙ্গী হবো।
ঈশা মাথা নাড়ায়। ইভান সামনে তাকিয়ে বলে
–এই মুহূর্তটা সারা জীবন মনে রাখবো।
ঈশাও একটু হেসে বলল
–আমিও।
ইভান ঈশার গালে একটা চুমু দেয়।

১৯
ঈশা ওয়াশ রুম থেকে বের হয়ে চোখ বড় হয়ে গেলো। অবাক হয়ে সামনে তাকিয়ে দেখছে ইভান কে। সে ঈশার বিছানায় পা লম্বা করে শুয়ে মোবাইলে গেম খেলছে। ঈশা কে এভাবে দাড়িয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুচকে তাকাল। ঈশা তার তাকানো দেখে তাড়াতাড়ি করে ঘরের দরজা বন্ধ করে দিলো। ঈশার এভাবে দরজা বন্ধ করা দেখে ইভান উঠে বসে পড়লো। ভ্রু কুচকে ঈশার দিকে তাকিয়ে বলল
–এমন ভাবে দরজা বন্ধ করছিস যেন আমি পর পুরুষ। কেউ দেখলে পাপ হয়ে যাবে।
ঈশা তার সামনে এসে বলল
–তুমি এতো রাতে কেন এখানে?
ঈশার কথা শুনে ইভানের খুব রাগ হল। ইভান এবার উঠে গিয়ে তার সামনে দাঁড়ালো। এক হাতে দুই গাল চেপে ধরে বলল
–আমার যখন ইচ্ছা তখন আসবো। এসবের কইফিয়ত দিতে আমি বাধ্য নই। তুই আমার বিয়ে করা বউ।
ঈশা একটু ব্যাথা পাচ্ছিলো। সেটা বুঝতে পেরে ইভান তাকে ছেড়ে দেয়। চোখ বন্ধ করে নিজের রাগ দমন করতে চেষ্টা করে। তারপর শান্ত ভাবে বলে
–টেবিলে ঔষধ আছে খেয়ে নে।
ঈশা তার কথা শুনে অবাক হয়ে যায়। একটু কাপা কাপা গলায় বলে
–কিসের ঔষধ?
–বিষ এনেছি তোর জন্য।
ইভান উলটা ঘুরে বিছানায় বসতে বসতে কথাটা বলে। ঈশা তার কথায় বিরক্ত হয়ে বলে
–ঠিক করে বল।
ইভান বিছানায় পা তুলে বসে তার দিকে তাকিয়ে বলে
–মাইগ্রেনের ঔষধ। খেয়ে নে ব্যথা ঠিক হয়ে যাবে।
ঈশার মুখ হা হয়ে যায়। সে হা করে ইভানের দিকে তাকিয়ে থাকে। অবাক হওয়ারই কথা। ঈশার যে মাইগ্রেনের ব্যাথা তা ইভান কি করে জানলো। সে এখন পর্যন্ত কাউকেই কথাটা বলেনি। ইভানের জানাটা একদম অস্বাভাবিক। ইভান এবার বিরক্ত হয়ে বলে
–দেখে তো মনে হচ্ছে ঔষধ না, আমাকে খাওয়ার ইচ্ছা আছে।
ঈশা তার কথায় অপ্রস্তুত হয়ে যায়। নিজেকে স্বাভাবিক করে বলে
–তুমি কিভাবে জানলে আমার মাথা ব্যাথা।
ইভান একটু হেসে বলে
–তুই আমাকে তোর কাছ থেকে দূরে ঠেলে দিয়েছিস আমি না। আমি সব কিছুর খবর রাখি।
ঈশা তার কথা শুনে কষ্ট পায়। মন খারাপ করে। ইভান ঈশার দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারে তার মন খারাপ হয়ে গেছে। ইভানের খারাপ লাগে। তাই তার মন ভালো করতে বলে
–ইরা বলল তোর শরীর খারাপ। ভাবলাম মাঝে মাঝে মাইগ্রেনের ব্যাথা হয় । এখনো হয়ত তাই হয়েছে। তাই ফোনটাও বন্ধ করে রেখেছিস। আর ঔষধ খেলে কিছুক্ষনের মধ্যেই ব্যাথা কমে যায়। কিন্তু এতো রাত অব্দি ব্যাথা কমেনি মানে তোর কাছে ঔষধ নেই। আর তুই তো ঔষধ খেতে পারিস না তাই কখনই ঔষধ আনতে বলবিনা নিজে থেকেই। তাই নিজের দায়িত্তেই নিয়ে আসলাম।
ইভানের সব কথা শুনে ঈশা সন্দিহান দৃষ্টিতে তার দিকে তাকাল। তারপর চোখ ছোট ছোট করে বলল
–আমার মাইগ্রেনের ব্যাথা গত চার বছর থেকে। তখন তো তুমি ছিলেনা। জানলে কিভাবে মাঝে মাঝে হয়?
ঈশার প্রশ্ন শুনে ইভান একটু অপ্রস্তুত হয়ে যায়। ঈশার মাথা থেকে বিষয়টা বের করতে উঠে গিয়ে ঔষধের স্ট্রিপ থেকে ঔষধ টা খুলে হাতে নেয়। ঈশা ভাবে ইভান তাকে জোর করে ঔষধ খাওয়াবে। কিন্তু সে ঔষধ খেতে পারেনা। তাই উলটা ঘুরে দেয়ালের সাথে দাঁড়ালো। ইভান তাকে নিজের দিকে ঘুরে দেয়ালের সাথে চেপে ধরল । ঈশা দেখল ইভান তার দুই ঠোটের মাঝে ক্যাপ্সুল টা আলতো করে চেপে ধরে আছে। এক হাতে ঈশার দুই গাল চেপে মুখটা হা করে ঔষধ টা নিজের মুখ থেকে তার মুখে ঢুকিয়ে দেয়। তার পর পানির বোতল থেকে তার মুখে পানি ঢেলে দেয়। একটু বেশি পানি পড়ায় ঈশার গলায় আটকে যায়। আর ঈশা কাশতে থাকে।ইভান ঈশাকে ছেড়ে দিয়ে তার মাথায় হাত দেয়। ঈশা থেমে গেলে বলে
–ঠিক আছিস?
ঈশা মাথা নাড়িয়ে হ্যা বলে।কিন্তু পরক্ষনেই ঈশার বমি বমি ভাব হয়। সে উকাতে শুরু করে। ইভান তাড়াতাড়ি করে নিজের পকেট থেকে একটা চকলেট বের করে মোড়ক টা একটু খুলে ঈশার মুখে দেয়। ঈশা একটু কামড় দিয়ে মুখে ধরে থাকে চকলেট। মুখে কিছুক্ষন ধরে থেকে ইভানের হাতে থাকা চকলেটটার দিকে তাকায়। চকলেট টা দেখে ঈশার চোখ ছলছল করে উঠে। এই চকলেট টা ঈশার খুব পছন্দ। ইভান তাকে প্রায় সময়ই এনে দিত। কিন্তু ইভান চলে যাওয়ার পর থেকে ঈশা এই চকলেট টা আর খায়নি। খুব মিস করত। ঈশার চোখে পানি দেখে ইভান বলল
–এতো পছন্দ করিস এই চকলেট টা তাহলে খাওয়া বাদ দিয়েছিলি কেন?
ঈশা ইভানের কথার উত্তর দেয় চকলেটের দিকে তাকিয়ে আনমনে
–সব সময় তো তুমিই এনে দিয়েছ। এতদিন দাওনি তাই খাইনি।
কথাটা বলেই ঈশা নিজেই চমকে উঠে। ইভান কিভাবে জানল সে চকলেট আর খায়না।ঈশা তার দিকে এবার অসহায়ের দৃষ্টি নিয়ে তাকায়। সব কিছু কেমন ঘোরের মতো লাগছে। ইভানের কথা গুলো কেমন এলোমেলো। অনেক কিছু বলার আছে কিন্তু কিছুই বলতে পারছেনা। ঈশার চোখের ভাষা বুঝতে পেরে ইভান বলল
–আমার বুকের ভিতরে হার্ট বিট সব সময় তোর অস্তিত্ব জানিয়ে দেয়। তুই কি করিস কি করিস না সব কিছুই আমার জানা হয়ে যায়। আমি চোখ বন্ধ করেই তোকে দেখতে পাই জান।
ঈশা কিছু বলতে পারলনা। তার চোখ দিয়ে দুই ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো। ঈশার চোখের পানি যত্নে মুছে দিয়ে ইভান তাকে নিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো। ঈশা উঠতে চেষ্টা করলে ইভান তাকে বিছানায় চেপে ধরে।তার চোখে চোখ রাখে। ঈশা তার চোখের মাঝে হারিয়ে যায়। এক অদ্ভুত আকর্ষণ কাজ করে। ঈশা যেন আজ সম্মহনের স্বীকার। ইভান ঈশার ঘাড়ে নাক ডুবিয়ে দেয়। ঈশা চোখ বন্ধ করে ফেলে। এতে তার চোখের পানি গাল বেয়ে কানে গড়িয়ে পড়ে। ইভানের গালেও তার চোখের পানি লেগে যায়। ইভান মুখ তুলে ঈশার দিকে তাকায়। সে চোখ বন্ধ করে আছে। আজ যদি ইভান তার ভালোবাসার অধিকার খাটায় তবুও ঈশা বাধা দিবেনা। কিন্তু ইভান তা করবেনা। সে তার মুখ ঈশার কানের কাছে নিয়ে গিয়ে ফিস ফিসিয়ে বলল
–আমি শুধু তোকে জোর করে বিয়েই করেছি। কারন আমি তোকে অন্য কারও হতে দিতে পারিনা। অন্তত আমি বেঁচে থাকতে এটা কোন ভাবেই মেনে নিতে পারবোনা। আমি ছোট বেলা থেকেই তোকে শুধু আমার ভেবেছি। তাই তো এই অধিকার বোধ থেকে তখন জোর করেছি। কিন্তু আর কখনও কোন বিষয়ে তোর উপরে জোর করিনি। আজও করবোনা। আমার মাঝে যেমন তুই বিরাজ করিস তেমন তোর মাঝেও আমি আমাকে খুজি। যেদিন আমি তোর মাঝে পুরোটা বিরাজ করবো। যেদিন তুই ভালবেসে আমাকে স্পর্শ করবি সেদিন আমি তোকে আমার ভালোবাসার স্পর্শে ভরিয়ে দিবো। সেদিন তোর আর আমার মাঝে থাকবে শুধু ভালোবাসা। শুধুই ভালোবাসা!
ইভানের কথা শেষ হতেই ঈশা চোখ খুলে ফেললো। ইভান কে এভাবে তার উপরে শুয়ে থাকতে দেখে তার অস্বস্তি হল। সে কিছু বলতে পারলনা আবার ইভান কে সরাতেও চাইলনা। কিন্তু জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগলো। তার এভাবে শ্বাস নেয়া দেখে ইভান নিজে থেকেই তার উপর থেকে সরে গিয়ে পাশে শুয়ে পড়লো। ঈশা উঠে বসতে চাইলে ইভান তাকে টেনে নিজের বুকে শুয়ে দেয়। পরম যত্নে তার চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে বলে
–এখন ঘুমা জান।
ইভানের কথা শুনে ঈশা আর কিছু না বলে তার বুকের উপরে মাথাটা রেখে নিজের শরীরের ভার ছেড়ে দিলো। কি এক পরম শান্তি ইভানের বুকের মাঝে। কিছুক্ষন পর ঘুমিয়েও গেলো।

চলবে………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here