‘ শ্যামাপাখি,
প্রেমের বৃষ্টি হস নি তুই আমার,
দগ্ধ হৃদয়ে একফোটা বর্ষন হয়েও নামিস নি তুই,
বরং #তোর_নামের_রোদ্দুর পুড়িয়েছে আমায়,
ভালোবাসার দাবানলে জ্বালিয়েছে আমায়,
ঝলসে দিয়েছে শুধুই দুরুত্বের বহ্নিতে।
জানিস শ্যামাপাখি?তবুও যে এ উত্তপ্ত মন ঘুরেফিরে,বারবার তোরই কাছে ছুটে যায়।আরো জ্বলন্ত থাকতে চায়,তোর ভালোবাসার দাবানলে।সানন্দে আরো ঝলসে যেতে চায়,তোর কাছে থেকেও দুরে থাকার মতো চরম অভিশাপের অগ্নিশিখায়।
#তোর_নামের_রোদ্দুর পুড়িয়েছে আমায়,জ্বালিয়েছে শুধু দুরুত্বের অনলে।
ভালোবাসি সিয়া,
খুব ভালোবাসি তোকে ‘
কালো কভারে ঢাকা শুভ্র পাতার ডায়রিটার প্রথম পৃষ্ঠাতেই কালো কালিতে এটে দেওয়া মনের ভালোবাসার কাহিনী।এটুকো পড়েই শ্বাস থেমে গেলো আমার।ডায়রিটা হাতে নিয়েই ধপ করে বিছানায় বসে পরলাম।আয়ানের দেওয়া ব্যাগে রেপিং পেপারে মোড়ানো বইসদৃশ বস্তুটা খুলতেই ডায়রিটা বেরিয়ে আসলো।রুমে ঢুকে মোড়ক খুলতেই আগ্রহ বেড়ে গেলো আমার।আর এ কথাগুলো পড়ে,সিয়া নামটা দেখে এলোমেলো লাগতে লাগলো নিজেকে।
প্রেম,ভালোবাসা!বরাবরই অন্যের হলে ঠিকাছে,তবে নিজের ক্ষেত্রে?স্বাস্থ্যের পক্ষে হানিকারক।আর পরোক্ষভাবে আমার স্বপ্নের রাস্তাতেও প্রতিবন্ধক।কোনোদিনই ভাবিনি এসব নিয়ে।বন্ধুমহলে বেশ কয়েকবার অস্বস্তিতে পড়তে হলেও স্পষ্ট ভাষায় না বলে সরে আসতাম।এলাকায় শেহনাজ মন্জিলের মেয়ে বলে খুব একটা,না একেবারেই কোনো ঝামেলায় পড়তে হয়নি এসব নিয়ে।ইচ্ছা ছিলো পড়াশোনা শেষ করে বিয়ের পর জমিয়ে বরের সাথে প্রেম করবো।শুদ্ধর সাথে বিয়ের পর সে আশাও ছেড়ে দিয়েছিলাম।কিন্তু এই ভাষা?এ ভাষা যে বড্ড অচেনা আমার,কিন্তু সিয়া ডাকটা যে ততোটাই চেনা।শুদ্ধের সম্বোধন!
এই কথাগুলো?এগুলো আমার জন্য লিখেছেন শুদ্ধ?আমাকে এভাবে ভালোবাসতেন উনি?আমাকে?এভাবে?কবে থেকে?কবে অবদি?নাকি এখনো বাসেন?তবে শুদ্ধের এই পরিবর্তন কেনো?কেনোই বা আমাদের মাঝে এতো আড়াল?দুরুত্বের দেয়াল?সবগুলো কথা এভাবে কেনো লেখা যেনো তাকে যুগযুগ ধরে কষ্ট দিয়ে আসছি?জেনেশুনে আমিই দুরে গেছি তার থেকে!
এটা শুদ্ধেরই হাতের লেখা।টেবিলে রাখা কিছু কাগজে ওনার হ্যান্ডরাইটিং দেখেছি আমি।কিন্তু এটাতো আয়ান দিয়ে গেলেন।তার কাছে কেনো এই ডায়রি?উনি কোথায় পেলেন এটা?
নাহ্!কাউকে নিয়ে ভাববো না আমি আর।শুদ্ধ কেনো এমন করছেন?কেনো মুখে বলছেন না সিয়া তোকে ভালোবাসি?কেনো সামনাসামনি এতোটা রুঢ় ব্যবহার করছেন আমার সাথে?কেনো চাননা উনি আমি ওনার সাথেই থাকি?কেনো?সবটা জানতে হবে আমাকে।আজ যখন জেনেছি কোনো এক সময় ভালোবেসেছেন আপনি আমাকে,সেটাকে কি করে অগ্রাহ্য করবো?
-আয়ান কি দিয়েছে?
শুদ্ধের গলা শুনে ডায়রিটা ওড়নার আড়ালে লুকিয়ে ফেললাম।ওনাকে দেখানো যাবে না এটা।হাতের পিঠে গলার নিচের ঘাম মুছে উঠে দাড়ালাম।শুদ্ধ আবারো টলতে টলতে রুমে ঢুকেছেন।বললাম,
-আপনি কি করে জানলেন উনি…
-নতুন বউ দেখতে এসে কিছু দেবে এটা সবাই জানে স্টুপিড!কি দিয়েছে তোকে?
কথাটায় আমি রাগ খুজে পেলাম না,বরং কৌতুহল ছিলো।একবারের জন্য মনে হলো আয়ানের সাথে আমার সাক্ষাৎ ওনার পছন্দ হয়নি।বললাম,
-ব্ বই।বই দিয়েছেন।
-বই?কিসের বই?
-অব্ বই,মানে…
-তোতলামো করবি না একদম।দেখা কি দিয়েছে!
-তা দেখে আপনি কি করবেন?
-বেশি কথা বলছিস ইদানিং!
-শাস্তিও তো কম দিচ্ছেন না!
কিছুক্ষন অপলক তাকিয়ে ছিলেন উনি আমার দিকে।ফাকা মাথা নিয়ে হুট করেই বলে উঠলাম,
-আপনার গফ ছিলো?
-কিহ্?
-গার্লফ্রেন্ড,গার্লফ্রেন্ড!এমনভাবে রিয়্যাক্ট করছেন যেনো ফুলফর্মই বোঝেন না,ফুল মানুষটা কই পাবেন আবার।
-কি যা তা বলছিস তুই?
-আমি যা তা বলি?তাহলে বলুন আপনার শ্যামাপাখি কে?
উনি অবাক হয়ে বললেন,
-তুই কোথায় শুনলি এটা?
-সেটা বড় কথা নয়,কথা হলো কে সে?
-তাতে তোর কি?
-তারমানে বলছেন কেউ ছিলো?
-আছে।
-তাহলে আমি কে?
-কেউ না।চলে যা আমার জীবন থেকে।
তেড়ে এগুতে গিয়েও থেমে গেলাম। গম্ভীরভাবে বললাম,
-শুনে রাখুন,যাবো না আমি।ওই মালটার জন্য এভাবে দেবদাস হয়ে ঘোরেন আপনি তাই না?বাসার সবাইকে কষ্ট দেন।যে নাই,নাই।তাকে নিয়ে…
-কি নাই নাই করছিস?ও আছে।
-না নাই।আমি আছি।কান খুলে শুনে রাখুন,আমিই থাকবো।ওইসব প্রাক্তনের দিন শেষ,বউয়ের বাংলাদেশ।
-হোয়াট?বেশ।শোন সিয়া,আমি ভালোবাসি ওকে।তোর জন্য ওকে পাই নি আমি।তুই চলে গেলেই ওকে ফিরে পাবো।এভাবে জেদ করে কেনো পরে আছিস এ বাসায়?চলে যা না,জোর করে তো আর সংসার হয় না।
চুল টেনে ছিড়ে দিয়ে ভালোবাসি ওকে কথাটা ভালোবাসি তোকে করে দেওয়ার তীব্র ইচ্ছা জাগলো।কিন্তু সংযত রাখলাম নিজেকে।এতো ত্যাড়া লোক চোখের সামনে না দেখলে জানতামই না পৃথিবীতে হয়।যেইনা প্রাক্তনের কথা বলেছি,সেই অজুহাতেই বাসা ছেড়ে চলে যেতে বলছে আমাকে।কিন্তু কেনো?এগিয়ে গিয়ে এক আঙুল ঢুলতে থাকা ওনার বুকে ঠেকিয়ে বললাম,
-হ্যাঁ।জোর করবো।এই মানুষটা আমার।কারো সাথে শেয়ার করবো না একে আমি।
শুদ্ধ কিছুটা থমকে গেলো।এতোটা অধিকারবোধ?এটা কবে থেকে শুরু হলো?কথা শেষ করে শুদ্ধর দিকে আর তাকাইনি।কিছুটা সময় পর উনি বললেন,
-কি বই দিয়েছে আয়ান তোকে?
-বলবো না।
-আমি দেখে নিতে জানি।
মাথা তুলে তার দিকে তাকালাম।কথাটা বলেই এগোনোর জন্য উদ্যত হলেন উনি।আমি হালকা চেচিয়ে বললাম,
-আ্ আচ্ছা,ঠিকাছে ঠিকাছে।ব্ বলছি।বলছি।
উনি থামলেন।আমি ভাবতে লাগলাম।কি এমন বললে এতোটুকো আগ্রহ দেখাবেন না উনি!
-লগ্ন দেখে নাম বলবি বইয়ের?
এদিক ওদিক তাকিয়ে বলে উঠলাম,
-থার্টি ওয়েজ টু কন্ট্রোল এঙ্গার!
ফট করে বলে দিয়ে বড়সর হাসি ফুটলো আমার মুখে।চোখ চকচক করে উঠলো আপনাআপনি।ওয়াহ্ ইনসু,ওয়াহ্!কি নাম নিলি তুই বইন!এবার এই লোক এই বই জীব্বনেও দেখতে চাইবে না।শুদ্ধর জীবনের সুত্র,ওনার কৌতুহল যে ওনার রাগ নিয়ে বলা জোকসের ব্যস্তানুপাতিক এইটা তোর আগেই বোঝা উচিত ছিলো।বাদ দে।এখন বুঝেও খুব একটা দেরি করিসনি তুই।
নিজেকে বাহবা দিয়ে শুদ্ধর দিকে তাকালাম।শুদ্ধ সেভাবেই এগোতে লাগলেন আমার দিকে।কিন্তু তার চাওনি মোটেও সুবিধার লাগছে না আমার।কিছুটা পিছোলাম।ওনার থামার নাম নেই।পরিস্থিতি সামাল দিতে বললাম,
-আ্ আমার কাছে ঘুমানোর ভালো ধান্দা বানিয়েছেন দেখছি।
উনি থেমে গিয়ে বললেন,
-মানে?
-ম্ মানে এই যে রেগুলার ড্রিংক করে আসার অজুহাতে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেবেন,কাছে ঘুমাবেন।এতো তাড়াতাড়ি এতো কাছাকাছি আসবেন,ভাবিনি।
শুদ্ধ সোজা হয়ে দাড়ালেন।আমি মুচকি হাসলাম।উনি আবার এগোতে এগোতে বললেন,
-কাছে আসতে ধান্দা লাগে?
পুরোই বেকুব বনে গেছি।ভেবেছিলাম একথা বললে বিরক্ত হয়ে কেটে পরবেন।কিন্তু উনিতো উল্টো রুপই দেখাচ্ছেন।গলা শুকিয়ে গেলো আমার।কাপাকাপা গলায় বললাম,
-ল্ লাগেই তো।আপনার লাগে।
শুদ্ধ থামেন নি।চোখের দিকে তাকালাম ওনার।সে চোখে আজ কাছে আসতে ধান্দা লাগবে না লেখা জ্বলজ্বল করেছে।তাড়াতাড়ি বললাম,
-লাগে না।ধান্দাও লাগে না,কাছে আসাও লাগে না।
-খুব বউ বউ সেজেছিলি আজ?
এইরে!এবার হয়েছে।এবার আমার দোষ নিয়ে পরবে।
-কথা নেই আর?
শুকনো ঢোক গিলে পেছোতে পেছোতে বললাম,
-আ্ আপনার তাই চোখে পরলো?আ্ আমি তো জাস্ট চুড়িটা এক্সট্রা পরেছিলাম।
শুদ্ধর থামার নাম নেই।না আমি পেছানো বন্ধ করেছি।একটু পরেই দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলো।চমকে উঠে পিছনে তাকিয়ে আবার যেইনা সামনে তাকাবো দেখলাম শুদ্ধ একদম কাছে এসে দাড়িয়েছেন।শ্বাস থেমে গেলো আমার।পাশ কাটিয়ে চলে আসতে যাবো,শুদ্ধ আমার ঘাড়ের দুপাশ দিয়েই দুহাত দেয়ালে রেখে আটকে দিলেন আমাকে।নিচ দিয়ে বেরোনোর জন্য মাথা নিচু করতে যাবো,উনি আমার ডানহাতের উপরদিকটা ধরে একদম দেয়ালে চেপে ধরলেন।
যতোদুর সম্ভব বিস্ফোরিত চোখে তাকালাম তার দিকে।অক্সিজেনহীনতায় নিজেকে এজমা রোগীর চেয়ে কম মনে হলো না।জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছি যেনো কতো প্রাচীন শ্বাসকষ্ট আছে আমার।নিজেকে আরো গুটিয়ে পায়ের আঙুলে ভর করে উচু হয়ে দাড়ালাম।চোখ খিচে বন্ধ করে নিয়ে গাল ঠেকালাম দেয়ালে।আর কোনোভাবে মাঝে দুরুত্ব ঠুসে দেওয়া যায় কি?বুকের ভেতরটাতে হাতুরি পিটানো শুরু।হৃদপিন্ডটা যেনো জেট বিমানের গতি পেয়েছে।ওর ধুকধুক শব্দদুষনটা এতো জোরে হচ্ছে যে কান অবদি পৌছাচ্ছে।
-সাজিসনি বউ?
-ত্ আমি তো বউ ই।আপন…
-খুব শখ?বউ হওয়ার?
চোখ খুলে তার দিকে তাকালাম।আজ অবদি শুধু রাগতে দেখেছি তাকে।আজ কি হলো তবে?আবারো চোখ বন্ধ করে মাথা দেয়ালে ঠেকালাম।
-কি হলো?বল?
-দ্ দুরে যান।শ্ শ্বাসকষ্ট হচ্ছে আমার।
-এটুকো শ্বাস সরি,সাহস নিয়ে ডাক্তারি কি করে পড়বি তুই?
-আ’ম ব্রেভ।
আচমকাই গলায় স্পর্শ!শুদ্ধ ওনার আরেকহাতের এক আঙুলে কিছু আকিবুকি করতে শুরু করেছেন।সারা শরীর ঝাকি দিয়ে উঠলো আমার।একহাতে থাকা ডায়রি আলগা হয়ে আসলো,আরেকহাতে জামা সর্বশক্তিতে খামচে ধরলাম।উনি হাত নামিয়ে আমার কানে ফিসফিসিয়ে বললেন,
-তোর এই সাহসিকতা অন্য কোথাও দেখাবি।শুদ্ধের কাছে না।
কথাটা বলেই টান মেরে আমার পেছনে থাকা হাত থেকে ডায়রিটা কেড়ে নিয়ে সরে দাড়ালেন উনি।দম মেরে দাড়িয়ে রইলাম।এভাবে ডায়রিটা হাতছাড়া হবে ভাবিনি।শুদ্ধ ডায়রিটা দেখেই থমকে গেছেন।এগিয়ে গিয়ে কিছু বলতে যাবো উনি শান্তভাবে বলে উঠলেন,
-দেখেছিস তুই এটা?
-দেখলে তো জানতামই সে শ্যামাপাখি কোন সাইবেরিয়ার অতিথি পাখি।সবেমাত্র খুলেছি।দিন না,দেখি।
আমি হাত এগোতেই উনি ধরে ফেললেন আমার হাত।তীক্ষ্ম চোখে তাকিয়ে চোয়াল শক্ত করে বললেন,
-এটা নেওয়ার চেষ্টা করবি না।করলে এখনই বাসা থেকে বেরিয়ে যাবো।তোকে দেওয়া কথামতো একেবারে যাবো না।তবে শুদ্ধর মাল্টিপল চয়েজ আছে।মনে রাখিস।
থেমে গেলাম।ওনাকে দেখে মনে হলো হারানো মুল্যবান কিছু খুজে পেয়েছেন উনি।এতোটা ভালোবাসতে জানে যে,সে কেনো ভালোবাসাকে সামনে পেয়েও,কাছে পেয়েও দুরে সরিয়ে রেখেছে?কিসের এতো কষ্ট তার?কিন্তু আমি তো থাকবো না শুদ্ধ।আপনার ভালোবাসা ঠিক কতো দিনের,কি হয়েছিলো,সে ভালোবাসা এখনো আছে কি না,না থাকার কি কারন,আমিই বা কিভাবে এতো কষ্ট দিলাম আপনাকে,সবটা না জানা অবদি থামছি না আমি।যে করেই হোক,সবটা জানবো আমি।সবটা!
—————–?
-মেক আনাদার ফর মি অলসো অশোক!
অশোক বিছানায় বসে সামনে টি টেবিলে ড্রিংক বানাচ্ছিলো।দরজায় আয়ানকে দেখে দাড়িয়ে গেলো ও।যদিও আয়ান ওর স্বভাব নিয়ে পরিচিত,এটা অশোকও জানে।তবুও স্যারের সামনে কিছুটা অস্বস্তি দেখাতেই হয়।আয়ান এগিয়ে এসে বিছানায় ওর পাশে বসলো।সবে মায়ের সাথে ডিনার সেরে রুমে পৌছে দিয়ে আসলো তাকে আয়ান।ওর মা জানে,ভদ্র ছেলের মতো অফিসের কাজ সেরে ছেলে ঘরে ফিরেছে।তাই রুমে চলে গেলো সেও।আয়ান অশোককে বসার জন্য ইশারা করলো।
অশোক পাশে বসে বললো,
-স্যার আপনি?
-ডোন্ট গিভ মি দ্যাট লুক!তোমার সাথে তেমন সম্পর্ক না আমার।
-আজাদ ম্যানশন গিয়েছিলেন?
-হাহ্!
বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে বললো আয়ান।অশোক বললো,
-কি উপহার দিলেন স্যার?
আয়ান মাথার নিচে দুহাত রেখে চিৎ হয়ে শুলো আরামমতো।বললো,
-ইনসিয়াকে?শুদ্ধের অতীত।আর শুদ্ধ উপহার হিসেবে খুব তাড়াতাড়ি ডিভোর্স পেপার পেয়ে যাবে অশোক।
-তারমানে আপনি আজই ওই ফাইলদুটো দিয়ে এসেছেন?
আয়ান বাকা হাসলো।অশোক আবারো বললো,
-যদি যেমনটা ভেবেছেন তার উল্টো হয়?ম্যাম যদি শুদ্ধকে সমবেদনা জানাতে শুরু করে?ডায়রি দেখে তৈরী হওয়া আপনার অনুভুতিগুলোর তবে কি হবে?
আয়ান উঠে বসলো।ডায়রী দেখে তৈরী হওয়া অনুভুতি!সত্যিই তাই।ডায়রিটা ওর কাছে কি তা ওই জানে।শুদ্ধের কাছে কি তাও জানে ও।যখন ওটা শুদ্ধের কাছে ছিলো,শুদ্ধ ওটা আকড়েই পরে থাকতো।মুনিয়ার ঘটনার পর যা সহ্য হয়নি আয়ানের।ও তো চেয়েছিলো ওকে বিধ্বস্ত করতে।ইনসিয়াকে নিয়ে কবে থেকে বলা শুরু করেছিলো শুদ্ধ ওর কাছে তার হিসেব নেই।প্রথমে স্বাভাবিকভাবে শুনলেও পরে শুদ্ধের বর্ননাতেই ইনসিয়ার প্রতি মুগ্ধতা কাজ করতে শুরু করেছিলো ওর।তাই ডায়রিটা চুরি করেই নিলো একসময়।নিজের তৃষ্ণা,শুদ্ধের শাস্তি দুটোই একেবারে হয়ে গিয়েছিলো তখনই।
অশোকের কথায় ওর চোখে মুখে অসহায়ত্ব।দিশেহারার মতো বললো,
-জানিনা অশোক।কিছুই জানিনা আমি।বুঝতে পারছি না।কাল অবদি আমি ডায়রিটা বুকে জরিয়ে ভাবতাম এই শ্যামাপাখিকে আমি ভালোবাসি।আজ কেনো তা মনে হচ্ছে না?যখন আজ তাকে আমি সামনাসামনি দেখে আসলাম।কেনো চোখ বন্ধ করলে তার অবয়বও ফাকি দিচ্ছে আমাকে?কিভাবে ভালোবাসলাম তাকে যে এতোদিন না দেখে যেটা ভেবেছিলাম,আর শুদ্ধর বউ হিসেবে দেখে সে অনুভুতিটা মুহুর্তেই পাল্টে যেতে লাগলো?কেনো অশোক?কেনো?বলতে পারো?
অশোক আগেই বুঝতে পেরেছিলো এটা আয়ানের শুধুই প্রতিশোধস্পৃহা।ভালোবাসা নয়।কোনোদিনও ভালোবাসেনি ও ইনসিয়াকে।ভালোবাসা অন্যের চোখ দিয়ে দেখে হয় না।আয়ান যে মনের চোখ দিয়ে দেখার কথা বলছে,সেটাও শুদ্ধর ভাষায় পড়ে।ভালোবাসাটা কোথা থেকেই বা আসবে?ইনসিয়াকে তো দেখেও নি ও কোনোদিন।
-বলো না অশোক?কেনো ইনসিয়াকে মন মস্তিষ্কে বসাতে পারছি না আমি?এ কেমন ভালোবাসা আমার?কেনো পালিয়ে বেরাচ্ছে মেয়েটা আমার কাছ থেকেই?কেনো শুদ্ধের মতো আমিও ওর নামের রোদ্দুরে পুড়তে শুরু করলাম?কেনো বর্ষনের শান্তি হচ্ছে না ও আমার?কেনো অশোক?কেনো?
-স্যার,আপনি শান্ত হন।হয়তো তাকে অন্যকারো সাথে দেখেছেন বলে…
মুহুর্তেই ভেতরের রাগটা নড়াচড়া দিয়ে উঠলো আয়ানের।হ্যাঁ।অন্যকারো সাথে।আর সে অন্যকেউটা শুদ্ধ!খুব বেশিদিন তা থাকতে দেবে না সে।রেগে উঠে দুম করে দরজা লাগিয়ে অশোকের রুম থেকে বেরিয়ে গেলো আয়ান।
চলবে…
মিথিলা মাশরেকা