তোর নামের রোদ্দুর,পর্ব-সারপ্রাইজ পর্ব

0
1677

আজকের ঘটনাগুলো বেশ অদ্ভুত ছিলো।কিছু তো হয়েছে শুদ্ধর।নইলে এতো সহজে উনি রিসেপশনে যেতেন না।ছবি তোলা,গেস্ট এটেন্ড করা,এমনকি আমার সাথে ডুয়েট নাচ!এগুলোও সম্ভব?কিভাবে?কেনো?ছবি তোলার সময় হেসেছেন উনি!নাচ করার সময় আমি হা করে তার দিকে তাকিয়ে থাকলেও উনি যথেষ্ট গুছিয়ে স্টেপসগুলো গানের ছন্দে মিলাচ্ছিলেন,এমনকি আমারটাও মানিয়ে নিচ্ছিলেন।নাচ করার সময় অন্যরকম লাগছিলো তাকে,তার স্পর্শকে।কি হয়েছে ওনার?কাল রাতে জ্বর থেকে অতিরিক্ত কিছু হয়ে যায়নি তো?আমি ভুলভাল ওষুধ খাইয়ে দি নি তো?ইয়া আল্লাহ!এখন কি হবে???

আকাশকুসুম ভাবতে ভাবতে রুমে আসলাম।দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে দেখি শুদ্ধ হুইস্টলিং করতে করতে আয়নার সামনে দাড়িয়ে দুহাতে চুল উল্টাচ্ছেন।ছোটখাটো শক পেয়ে দরজার কাছেই দাড়িয়ে রইলাম।হুইস্টলিং?এ তিন বছরে উনি হেসেছেন কি না তা নিয়েও সন্দেহ আছে।আজ উনি হুইস্টলিং করছেন?

শুদ্ধ আয়নার ভেতর দিয়ে আমার দিকে তাকালেন।হুইস্টলিং করতে করতেই ভ্রু নাচিয়ে বুঝালেন কি হয়েছে।নিজেকে সামলে মাথা নেড়ে কিছু না বুঝালাম।নিচদিক তাকিয়ে আস্তেধীরে বেডের দিকে এগিয়ে গেলাম।

-কি হয়েছে?

আচমকাই একদম কাছে শুদ্ধের আওয়াজ পেয়ে পিছন ফিরতে যাবো,ওনার বুকের সাথে ধাক্কা লেগে বিছানায়তেই পরে গেলাম।কোনোমতে পিছনে দুহাত দিয়ে শোয়া থেকে বেচে আধশোয়া হয়ে আছি।সামনে শুদ্ধ একহাত বুকে গুজে আরেকহাত ঠেকিয়ে নিজের থুতনি ধরে আছেন।চোখ বড়বড় হয়ে গেলো আমার।উনি আমার দিকে ঝুকে আবারো বললেন,

-কি হয়েছে তোর?

আমার?আমার কি হয়েছে?নিজে যে দুনিয়া গায়েবি আচার ব্যবহার করছেন তারবেলায়?কাপাকাপা গলায় বললাম,

-ক্ কি হবে?ক্ কিছু না।

উনি সোজা হয়ে দাড়ালেন।কোনোরকম ফাক পেয়ে উঠে আসলাম ওখান থেকে।শ্বাস নিয়ে কাবার্ডের বা পাশের পাল্লা খুলে ভেতরে ঢুকে জামা বের করছিলাম।এই লেহেঙ্গায় আর কতোক্ষন?কাবার্ড লাগাতেই দ্বিতীয়বারের মতো আতকে উঠলাম।পাশের দিকটায় উনি হেলান দিয়ে দাড়িয়ে নিজের নখ দেখছেন।

-কি হয়েছে?এভাবে ভয় পাচ্ছিস কেনো?

একটা শুকনো ঢোক গিলে হাতে ভাজ দেওয়া জামা এলোমেলো করতে করতে বললাম,

-ক্ কই?ক্ কিছুই না।

সরে আসছিলাম।শুদ্ধ সামনে পথ আগলে দাড়ালেন আমার।উনি এগোতেই আমি পিছিয়ে কাবার্ডে লেগে গেলাম।আমার ঘাড়ের পাশ দিয়ে কাবার্ডে হাত রাখলেন উনি।বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে আছি আমি।উনি বাকা হেসে বললেন,

-কি হয়েছে?

দম আটকে আসছে আমার।লোকটা এমন করছে কেনো?সেদিনের মতো আজও কি বড়সড় শাস্তি কপালে নাচছে আমার?এতোবড় দোষের কি করলাম?কোনটা?ওষুধ খাওয়ানো?সুট পরানো?ইশান ভাইয়াকে নিয়ে ছবি তোলা?আলিফের সাথে নাচতে চাওয়া?কোনটা?

-ক্ কিছু না বললাম তো।দ্ দুরে যান।

উনি হাত সরিয়ে নিজেও একটু সরে দাড়ালেন।শ্বাস স্বাভাবিক হলো আমার।চেন্জ করবো বলে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়িয়েছি,শুদ্ধ হাতের কব্জি ধরে হেচকা টানে আবারো নিজের সামনে দাড় করালেন আমাকে।কি রিয়্যাক্ট দেবো বুঝে উঠতে পারছি না।তবে বিস্ময় আমার সব সীমা পার করছে তা টের পাচ্ছি আমি।শুদ্ধ ঠোটে সেই এক টেডি স্মাইল ঝুলিয়ে বললেন,

-পালাচ্ছিস কেনো?

-কিছু না।

-ভয় পাচ্ছিস?

-কিছু না।

-তোর জন্য সুট পরলাম।সরি।পরলাম কই?পরতে বাধ্য করলি আমাকে।এবার বল,কেমন দেখাচ্ছে আমাকে।

-কিছু ন্..

কি বলছি নিজেও জানি না।পরে ওনার ভ্রুকুটি দেখে হুশ ফিরতেই বললাম,

-ভ্ ভালো।ভালো দেখাচ্ছে।আমাকে ছেড়ে দিন প্লিজ!

-শুধুই ভালো?

-অ্ অন্নেক ভালো।অনেক ভালো।এবারতো ছেড়ে দিন প্লিজ!

আমার কথাকে গ্রাহ্য করে শুদ্ধ হাত ছেড়ে দিলেন আমার।বুকে হাত দিয়ে শ্বাস নিলাম।শুদ্ধর দিকে তাকিয়ে দেখলাম উনি ওভাবেই বাকা হাসছেন।যা বিপদসংকেত মনে হলো আমার কাছে।তাড়াতাড়ি সরে আসবো বলে পিছন ফিরতে যাচ্ছিলাম।কিন্তু পিছন ফেরার আগেই উনি কোমড় জরিয়ে ধরলেন আমার।মাঝের দুরুত্বটাও বিলীন হয়ে গেছে সেই সাথে।হাতদুটো থেকে জামাটা পরে গেছে।আর সে হাত আপনাআপনি শুদ্ধর কাধে চলে গেছে।মাথা বাকিয়ে যতোটুকো পিছিয়ে রাখা যায়,রেখেছি।বুকের ভেতরে হৃদপিন্ডটা যেনো ট্রেনের বেগে ছুটছে আর শুদ্ধের তপ্ত নিশ্বাস মুখে পরতেই সে বেগ যেনো ত্বরন পাচ্ছে।লাবডাব শব্দটা বাইরে থেকেই শোনা যাচ্ছে আমার।আর হাত পা যেনো অবশ হয়ে আসছে ক্রমশ।

-তোর এজমা আছে?

মুহুর্তেই গায়ে আগুন ধরে গেলো আমার।সবটা ভুলে চেচিয়ে বললাম,

-আমাকে দেখে আপনার হাপানি রোগী মনে হয়?

উনি ঠোট টিপে হেসে বললেন,

-তোর এই কাপুনি,শ্বাসকষ্ট দেখে মনে হয়।

আমি কিছুটা হচকিয়ে গেলাম।চোখ নামিয়ে নিলাম।কান গরম হয়ে গেছে।শরীরটাও নুইয়ে যাচ্ছে।শুদ্ধ ওনার মুখ এগিয়ে আমার কানের কাছে এনে ফিসফিসিয়ে বললেন,

-ইটস্ মাই টার্ন নাও।

স্বয়ংক্রিয়ভাবে মুখ হা হয়ে গেলো আমার।মাথা তুলে তার দিকে তাকালাম।উনি ঠোট কামড়ে ধরে হাসছেন।ওনার টার্ন?কিসের?যেটুকো শ্বাসপ্রশ্বাস চলছিলো আমার তাও এবার থেমে যাবে,টের পাচ্ছি আমি।উনি বললেন,

-তোকে কেমন দেখাচ্ছে সেটা শুনবি না?

চুপ করেই আছি।শুদ্ধ নিজের সাথে আরো কিছুটা জাপটে ধরলেন আমাকে।চোখে চোখ রেখে কিছুটা সময় দেখেছি তাকে।বরই অদ্ভুত মানুষটা।বোঝা বরই কঠিন ওনাকে।উনি আমার গালের পাশে ওনার মুখ এনে ঘোর লাগা কন্ঠে বলতে লাগলেন,

-আমার শ্যামাপাখি আজ আমার মনের মতো করে সেজেছে।কাজলহীন চোখের ওই ঘন পাপড়ি পলক ফেলতেই মৃদ্যু কেপে উঠে আমার চারপাশে ভুমিকম্প তুলে দিচ্ছে।চোখজোড়ার দুরন্তপনা বরাবরের মতোই ঝড়ের কারন।হাতের চুড়িগুলোর শব্দ কানে বাজলেই মন জুরে দমকা হাওয়া বয়ে যায়।কানের দুলে পড়া একফালি রোদ্দুর ঝলসে দিয়ে যায় আমার চোখ।হাটার সাথে দুলতে থাকা মাত্রাতিরিক্ত ঘেরের লেহেঙ্গাটা রঙিন করে দিয়ে যায় চারপাশটা।ছাড়া চুলগুলো ছুটে এসে চোখমুখ ছুইয়ে দিতেই পাগল পাগল লাগে নিজেকে।ডুব দিতে ইচ্ছা করে ওদের সুঘ্রানে।আর এই ঠোটজোড়া!কি বলে ব্যাখা দেবো এদের শ্যামাপাখি?এদের দেখলে যে সম্মোহনী হারিয়ে যায় আমার।বড্ড টানে এরা আমাকে।

শুদ্ধ কোমড় ছেড়ে দু গাল ধরলেন আমার।একবার তার হাতের দিকে তাকিয়ে আমি আবারো তার দিকে তাকালাম।নাহ্!উনি আজ নিজের মধ্যে নেই।চোখদুটোর চাওনি অসম্ভব গভীর।দুহাতে লেহেঙ্গাটা খামচে ধরে চোখ খিচে বন্ধ করে নিলাম।আজ ওই চোখে তোর সর্বনাশ আকা ইনসিয়া।শেষ করে দেবে তোকে আজ ওই চোখ।তাকাস না ও চোখের দিকে তুই।তাকাস না!

গুনে গুনে ছ সেকেন্ড পর ঠোটজোড়া ছাড়া পেলো আমার।নিচদিক তাকিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছি।মনে হলো যেনো অলিম্পিকে দৌড় লাগিয়ে আসলাম মাত্র।কি হয়েছে সেটা বুঝ আসতেই এক আকাশসম বিস্ময় নিয়ে মাথা তুলে শুদ্ধের দিকে তাকালাম আবারো।উনি মুচকি হেসে আমার কপালে ঠোট ছুইয়ে বললেন,

-ক্যাবলাকান্ত সিয়া!গার্ডেনে বলেছিলাম না,সব গুন দেখাবো আমার?ভালোবাসবো বউ!খুব ভালোবাসবো তোকে!

কথাটা বলেই ভাবলেশহীনভাবে এলোমেলো পা ফেলে উনি চলে গেলেন ওয়াশরুমে।আমি এখনো ঠায় মেরে দাড়িয়ে।বড়সড় শক বলতে এর বেশি কিছু হতে পারে না।ফ্রিজড্ হয়ে দাড়িয়ে থেকে শুধু এইটাই ভাবতে লাগলাম,এটা কি ছিলো!!!

চলবে…

মিথিলা মাশরেকা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here