তোর নামের রোদ্দুর
অন্তিমপর্ব
লেখনিতে:মিথিলা মাশরেকা
অন্ধকার রুমে হঠাৎই চোখে উজ্জল আলোর ছটা পরতেই আতকে উঠলাম।সোজা হয়ে শুয়ে পরলাম গুটিশুটি মেরে।নার্স এসে কাধে আলতোভাবে নাড়া দিয়ে কিছুটা রাগী গলাতেই বললো,
-এখনো ঘুমাননি কেনো আপনি ম্যাম?
ধরা পরে গেছি।মৃদ্যু হেসে উঠে বালিশে ঠেস দিয়ে বসে মাথা নিচু করে নখ দেখতে লাগলাম।চারপাশ স্তব্ধ।বেডের পাশেই ডাক্তারী যন্ত্রপাতি।দেয়ালে নানা মেডিক্যাল চার্ট টানানো।শুভ্র রঙে মোড়ানো কেবিনের দেয়ালগুলোতে বেশ মানিয়েছে ওগুলো।
-কতোদিন বোঝাবো আপনাকে ম্যাম?রাত জাগা আপনার শরীরের জন্য ক্ষতিকর।আপনি কেনো যে ঘুমের ওষুধটা…
-ইটস্ ওকে সিস্টার।ওটুকো জানি আমি।ভুলে কেনো যাচ্ছেন?আমি এর আগেও মেডিকেলে ভর্তি ছিলাম।তফাৎটা হলো তখন স্টুডেন্ট হিসেবে,আর এখন পেশেন্ট হিসেবে।
-ম্যাম আপনি….
-ওই দেখুন!এগারোটা ছাপান্নো বেজে গেছে।সিস্টার?একটা লাইটার এনে দিতে পারবেন আমাকে?
-এতো রাতে লাইটার কেনো ম্যাম?আপনি ঘুমোন প্লিজ!
-আরে কখন হুটহাট চিরতরে ঘুমিয়ে যাই তার নেই কোনো ঠিক ঠিকানা,তবুও আমার ঘুম নিয়ে পরে আছেন আপনি?আনুন না লাইটার।আনলেই বুঝতে পারবেন।
সিস্টার একঘেমেয়ি স্বভাবটার সাথে পরিচিত হয়ে গেছেন কিছুটা।কথা না বাড়িয়ে লাইটার আনতে চলে গেলো সে।পাশের টেবিলে রাখা প্র্যাকটিকাল খাতার নিচ থেকে ছবিটা বের করলাম।প্রতিবারের মতো প্রথমেই মৃদ্যু স্বরে বললাম-মাশাল্লাহ্!
কেনো বলবো না?সাদা গেন্জির উপর কালো জ্যাকেট পরিহিত আমার জীবনের সেই সবচেয়ে সুদর্শন পুরুষ।শুদ্ধ।ঘাড় বাকানো অবস্থায় ঠোটের হাসিটায় চোখ আটকে যায় প্রতিবার।ছবিটায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললাম,
-রাগ করেন নি তো আপনি?এই খাতার ভার আপনার উপর দিয়ে রেখেছিলাম বলে?কি করবো বলুন?লুকানোর জায়গা নেই আর কোথাও আপনাকে।সময় কাটাতে খুব চেয়েচুয়ে আলিফের ছোট ভাইটার সব প্র্যাকটিকাল খাতা আনিয়েছি।ছবিটবি আকলে সময় কাটবে হয়তোবা।কি জানেনতো,যখন একা থাকি,আপনার ছবি দেখতে দেখতে ওই সময়টাই কখন চলে যায় টের পাইনা।আর এই খাতাগুলোতে?এতোটুকো সময় কাটে না!
নার্স আবারো আসলেন।এগুতে এগুতে গম্ভীরভাবে বলতে লাগলেন,
-এখন যদি আপনি না ঘুমোন,আপনাকে জোড় করেই ঘুম পারাবো বলে রাখলাম।
ঠোট টিপে হেসে লাইটারটা নিলাম ওর কাছ থেকে।ঘড়ির দিকে তাকালাম একপলক।বারোটা বাজে।লাইটার জ্বালিয়ে ছবিটার সামনে ধরে ফিসফিসয়ে বললাম,
-শুভ জন্মদিন শুদ্ধ!উইশ ইউ ম্যানি ম্যানি হ্যাপি রিটার্নস্ অফ দ্যা ডে!
সিস্টার অবাক চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।ফু দিয়ে নিভিয়ে দিলাম লাইটার টা।সে উকি দিলো ছবিটা দেখবে বলে।ছবিটা সরিয়ে নিয়ে বললাম,
-হোয়াট ডু ইউ থিংক সিস্টার?এতোদিন দেখেন নি,আজ দেখতে দেবো আপনাকে?
হতাশার নিশ্বাস ফেললো সে।বললো,
-কেনো দেখতে দেন নি?
-নজর দেবেন তাই।আমার শুদ্ধ এতোটাই ভালো দেখতে যে যে কেউই একবার দেখলে আবারো নির্লজ্জের মতো তার দিকেই তাকায়।আপনি জানেন,শ্যামাও মোহে পরে গিয়েছিলো ওনার।
-শ্যামা কে?
-একটা পাখি।ভারি নির্লজ্জ!শুদ্ধকে দেখে শীষ বাজাতো।ওনার কাছে আসতো।
-আর শুদ্ধ?সে কি করতো?
-শ্যামাকে ভুলে তার শ্যামাপাখিকে নিয়ে থাকতো।
-আর আজ হয়তো শ্যামাপাখিকে ভুলে অন্য কাউকে….
-না!একদমই না!সে আজও শ্যামাপাখিকেই চায়।
-তবে এই তিন মাসে একবারও খোজ নেয়নি কেনো আপনার?
-তাকে বোঝার মতো সক্ষমতা এখনো হয়নি আপনার সিস্টার।তার আশেপাশে থেকেও আমারই বুঝতে যে বড্ড দেরী হয়ে গিয়েছিলো।
-ঘুমিয়ে পড়ুন।
-একটা রিকোয়েস্ট রাখবেন সিস্টার?
-কি?
-আপনার কোনো কলিগের ফোন নিয়ে আসবেন?
উনি একটা জোরে শ্বাস ফেলে আমার কাধে হাত রেখে বললেন,
-ম্যাম!যদি তার ফোন রিসিভ করারই হতো তবে এতোদিনে সবগুলো আননোন নাম্বারই রিসিভ করতেন উনি।আমার তেমন আর কোনো কলিগ বাকি নেই।
চোখ সরিয়ে নিলাম।অভিমানটা এতোটা বেশি ওনার যে এই তিন মাসে একটাবার দেখতে আসেন নি উনি আমাকে।সেদিন শুদ্ধ বেরিয়ে আসার সময় অশোকের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে তার পিছনে ছুটেছিলাম আমি।গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন উনি।সে গাড়ির পিছনে দৌড় লাগাতে গিয়ে এক্সিডেন্ট হয় আমার।জ্ঞান ফেরার পর কেবিনে ডক্টর ছিলো তখনও।ওনার কাছ থেকে জানতে পারি কি ঘটেছিলো।অশোকই এডমিট করিয়েছিলেন আমাকে।তবে আরো একজনের পাগলামি নাকি ছিলো চোখে পরার মতো।জানতাম।সেটা শুদ্ধই ছিলেন।
রিপোর্টস্ দেখে সবার আগে আমাকেই জানাতে বলেছিলাম ডক্টরকে।রিপোর্টে পাওয়া যায় এক্সিডেন্টের ফলে মস্তিষ্কে অনেকখানি রক্ত জমাট বেধেছে।যেকোনো মুহুর্তে সেই রক্তক্ষরনের ফলে মৃত্যু হতে পারে আমার।ডক্টরের কথায় তব্দা মেরে বসে ছিলাম কিছুক্ষন।পরপরই বেচে থেকে কি করবো এই প্রশ্নটা মাথায় আসতেই চুপচাপ কথাটাকে মনে গেথে নিলাম।নিতেই হতো।যা বাস্তব।যা সত্যি।অতি কষ্টে কথাটা চেপে গেছি সবার কাছ থেকে।শুধু যীনাত আপু জানে।ওকে না বলা থেকে আটকাতেও কম ঝামেলা হয় নি।শেষ ইচ্ছা ওর কাছে বলে প্রমিস আদায় করিয়েছি।হসপিটালাইজড্ থাকাটা ওর জোরাজুরিতেই হয়েছে।শেহনাজ মন্জিল,আজাদ ম্যানশন দুই বাসার সবাই জানে পায়ে ফ্র্যাকচার,কিছু গভীর ক্ষত আছে এজন্য রয়েছি হসপিটালে।অশোক অনেক চেষ্টা করেছিলেন জানার,জানতে দেইনি।
শুদ্ধ সামনে আসেননি আমার।তবে আমি জানি,উনি ঠিকই খোজ নিয়েছেন আমার।আর আমিও যে স্ট্রোকের বিষয়টা লুকাতে সক্ষম তার প্রমান এখনও অবদি তার অভিমান রয়ে যাওয়া।তিন মাসে তার ছবিটাকে বুকে জরিয়ে হাজারো কথা বলেছি।সবটা হয়তো তার বুকে মাথা রেখে বলার কথা ছিলো।একটাবার শুধু তার গলার আওয়াজ শোনার জন্য প্রতিদিন আলাদা আলাদা নম্বর থেকে কল করেছি তাকে।রিসিভ করেননি উনি।ভুলটা তো আমারই ছিলো।এ শাস্তিও আমার প্রাপ্য।কিন্তু বেচে গেলাম কেনো?এখনও বেচে আছি কেনো?মরার আগে শুদ্ধর আওয়াজ শুনতে পাবো বলে?
-ম্যাম?শুয়ে পরুন।
নিজেকে সামলে আস্তেধীরে শুয়ে পরলাম।নার্স চাদর মুড়িয়ে দিলো গায়ে।প্রতিদিনের মতোই অবাধ্য চোখের জলে বালিশ ভিজতে লাগলো।আজকের দিনটাতে আপনার আওয়াজ বড্ড শুনতে ইচ্ছে করছে শুদ্ধ!বড্ড দেখতে ইচ্ছে করছে আপনাকে!
.
-ইনসিয়া?
পুরুষালি কন্ঠে ঘুম ভাঙলো।ঠোটের কোনে হাসি ফুটলো খানিকটা।আয়ান এসেছেন।পাশেই মাহি দাড়িয়ে।অশোকও আছেন সাথে।উঠে বসতে যেতেই,
-উঠো না।শুয়েই থাকো।
কথা না শুনে উঠে বালিশে পিঠ ঠেকিয়ে বসলাম।বসাটাও রিস্কি।যদি সোজা বসতে গিয়ে কিছু উল্টোপাল্টা হয়ে যায়?শুদ্ধকে দেখার আগেই যদি…না।এটুকো চেষ্টা তো করতেই হবে আমাকে।মাহি লুকিয়ে চোখের জল ফেলছে আর হাত দিয়ে চোখ মুছছে।
-কেমন আছেন ম্যাম?
-এইতো।ভালো।আপনি?
-যেমন দেখছেন।
-হুম।শুকরিয়া খোদার।দেখছি তো!
-ইনসিয়া ভাবি,ক্ষমা করে দাও আমাদের।বাসায় ফিরে চলো না।
-কি বলছো মাহি এসব?কিসের ক্ষমা?যে মানুষটার দোষী ছিলে,সেই যখন কাছে টেনে নিয়েছে তোমাদের,তবে আমাকে কেনো এসব বলছো?
-দোষী তো তোমারও আমরা ইনসিয়া।আমাদের জন্যই…
-ওসব থাক।মুনিয়া কেমন আছে?আন্টি?
-ভালো সবাই।এক্সেপ্ট….
-আপনাদের এনগেইজমেন্ট শুনলাম?যীনাত আপু বললো।
-হুম।
-মাহির বিয়েটা কি করে আটকালেন?
-সবটা শুদ্ধ করেছে।
জানতাম।সবাইকে ক্ষমা করেছেন উনি।আমি ব্যাতিত।মাথা নিচু করে মৃদ্যু হাসলাম শুধু।
-আপনি হাসছেন ম্যাম?
-খুশির খবরে আর কি করবো বলুনতো অশোক?তা আপনার কি খবর?বিয়ের পীড়িতে বসবেন না?
আহত দৃষ্টিতে তাকালেন উনি।হয়তো আশা করেননি এমন প্রশ্ন।এই অবস্থাতে।পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বললেন,
-বাসায় কেনো যাচ্ছেন না ম্যাম আপনি?
-আসলে পায়ের ওই….
-বাহানা দিও না ইনসিয়া ভাবি।তুমি নেই বলে শুদ্ধ ভাইয়াও বাসায় যায় নি এখনো অবদি।সে কোথায় আছে,কি করে কেউ জানে না এখনো।ফুপা ফুপির দিকে তাকানো যায় না।তুমি ফিরে চলো,সবটা ঠিক হয়ে যাবে।ফুপা তো বলেছেন,বাসায় সবরকমের নার্সিংয়ের ব্যবস্থা করবেন উনি।
নার্সিং?কেয়ারিং?এগুলো শুনতেই শুদ্ধর চেহারা ভেসে উঠলো সামনে।অশোক বললেন,
-ম্যাম?স্যারকে ফোন দেবো?আজ ওনার জন্মদিন।কথা বলবেন না?
একটা শুকনো ঢোক গিললাম।এই কথাটা আগেও বলেছেন অশোক।কথা বলতে চাই কি না।কিন্তু হ্যা বলতে পারিনি।জানতাম উনিই কথা বলতেন না আমার সাথে।তবুও আজ মন মানছে না।একটাবার তার গলাটা শোনার জন্য তৃষ্ণার্ত হয়ে আছে।যদি এটাই শেষ সুযোগ হয়?এমনটা মনে হচ্ছে বারবার।সব দ্বিধাদ্বন্দ একপাশে ঠেলে মাথা নাড়লাম।অশোক চকচকে চোখ করে পরক্ষনেই নিজেকে কিছুটা সামলে কল লাগালেন শুদ্ধের ফোনে।লাউডস্পিকারে রাখলেন ওটা।
-হ্যাঁ অশোক?বলো।
সারা শরীর জুড়ে শান্তির হাওয়া বয়ে গেলো।কতোদিন পর।এভাবেই চেয়েছিলাম তার গলা শুনতে,যীনাত আপু বা কারো ফোনই রিসিভ করেননি উনি।আজ তবে?গাল বেয়ে পানি পরতে লাগলো আমার।মাহি হাত মুঠো করে ধরলো।ক্ষীণ স্বরে বললাম,
-শুভ জন্মদিন শুদ্ধ।
দু সেকেন্ড নিরবতায় কেটে গেলো কলটা।কান্নার বেগ বাড়তেই শ্বাসকষ্ট শুরু হলো।বেডের চাদর খামচে ধরে মনেমনে বলে চলেছি,আরেকটু সময় দাও আমাকে।আরেকটু সময় দাও।শুদ্ধ আসবেন।আমার মন বলছেন উনি আসবেন।এতোদিন যদি সময় দিয়ে থাকো,আজ,এখন আরেকটু সময় থাকতে দাওনা এই পৃথিবীতে।শুষতে দাও না আরো কিছুক্ষন এই মুক্ত বাতাসের অক্সিজেন।অপচয় হোক আর কিছুটা সময়,আমার জন্যে।চোখ ঝাপসা হয়ে আসলো।মাহি,আয়ান,অশোক চেচিয়ে কিছু বলছেন।কানে আসছে না।নার্স দৌড়ে এসে অক্সিজেন মাস্ক পরিয়ে দিলো আমাকে।ঝাপসা হয়ে আসলো চারপাশ।
চোখ মেলেছি আবারো।হাতে কারো স্পর্শে পিটপিট করে তাকালাম।মাথার উপর শুভ্র ছাদটা মনে হলো একদম নিচে নেমে এসেছে।ঢলোঢলো চোখে তীর্যক আলোর উৎস অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখি বেডের পাশে সবাই দাড়িয়ে।আব্বু পাশে বসে।আম্মু,ইরাম,যীনাত আপু,বাবা,সেজোমা,মাহি,আয়ান,সিফাত ভাইয়া,সিমা ভাবি,তাপসী আপু,ইশান ভাইয়া,তার কোলে গোলুমলো তায়্যিবটা,এককোনে মাথা নিচু করে মেঝের দিকে একধ্যানে তাকিয়ে দাড়িয়ে অশোক।মুখে অক্সিজেন মাস্কটা ভারী লাগছে।একদম সেদিনের শুদ্ধর পরিয়ে দেওয়া হেলমেটের মতো।খুলতে যাচ্ছিলাম,আব্বু থামিয়ে দিলেন।ঠোটে হাসি ফুটিয়ে আস্তে করে বললাম,
-ক্ কেমন আছো সবাই?
আম্মু,আব্বু,ইরাম সহ সবাই হুহু করে কেদে দিলো।ওরাই নিজেদের মধ্যে নিজেদের সামলাতে ব্যস্ত।একটু হাসি টেনেই বললাম,
-মরে যাইনি তো এখনো।কাদছো কেনো এভাবে সবাই?
আম্মু চেচিয়ে বললো,
-এতোবড় কথাটা কেনো জানতে দিস নি আমাদের ইনসু?
আব্বু ধমকে বললেন,
-থামো!কিছু হয়নি ওর।সব ঠিক হয়ে যাবে ইনসু মা আমার।কিচ্ছু হবে না তোর।
যীনাত আপু চোখ মুছে বললো,
-হ্যাঁ।তাইতো!এই বুচি?জানিস?তোর ফ্রোজেন আর্ট করা পেন্সিলবক্সটা ইরু নিয়ে নিয়েছে।বাসায় গিয়ে তবলা পর্টি হবে ওর পিঠে।কি বলিস?
চোখের কোন বেয়ে পানি গরিয়ে পরলো।সেজোমা বললো,
-মা আমার।চল না?বাসায় নিয়ে যাবো তোকে।আমার থেরাপিস্টটা বড্ড ফাকিবাজি করছে তোর অনুপস্থিতে।
-আপু?তুই জানিস?তোর ফেভারিট অডিও স্পিকার কিনেছেন আব্বু।ওটা বাজিয়ে পার্টি করবি না?শেহনাজ মন্জিলে আর লুকিয়ে চুরিয়ে পার্টি করতে হবে না আমাদের।দাদুন অনুমতি দিয়েছে তো!
-ইনসিয়া ভাবি,আমার ব্যালকনির ফুলগুলো দিয়ে গাজরা বানিয়েছি।তোমার না পছন্দ?
-ইনসু?সীমা আমার শার্ট ইস্ত্রি করতে গিয়ে প্রতিবারই কালোদাগ বসিয়ে দেয়।অসহনীয় হয়ে গেছে বোনু এটা।তুই সুস্থ্য হলে আগে আমার এই কাজগুলো করে দিবি বলে রাখলাম!
-এই তায়্যিবটা ইনসু মাম্মাম ইনসু মাম্মাম করে এতো পাগলামি করে না?কি বলবো তোকে!একবার খালি তুই ঠিক হয়ে যা,এই ছেলেটাকে তোকে দিয়ে দেবো।
-খালি আমাকে বলছো কেনো আম্মু?তোমরাই তো বলো,শুদ্ধ মামুও তো ইনসু মাম্মাকে নিয়ে পাগলামী করে।ওর নাম নিচ্ছো না যে!
থমকে গেলাম।সবাই এ ওর মুখ চাওয়াচাওয়ি করে চোখের পানি মুছতে লাগলো।আম্মু মুখে আচল গুজে কাদছেই।আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বেরিয়ে যেতে লাগলো সবাই।আব্বু কপালে চুমো দিয়ে চোখের কোনের পানিটা মুছে উঠে যেতেই চোখ পরলো পাশে জানালার ধারে রাখা সোফাটায় বসে থাকা শুদ্ধকে।কলিজা মোচড় দিয়ে উঠলো আমার।খামচে ধরলাম বিছানার চাদর।উনি এসেছেন?এটা যেনো কোনো স্বপ্ন না হয়।যদি উনি সত্যিই এসে থাকেন,একটাবার ছুয়ে দেখতে পারবো তাকে।এটা যেনো কোনোভাবেই মনোভ্রম না হয় আমার।
শুদ্ধ একধ্যানে তাকিয়ে আছেন ফ্লোরের দিকে।আর আমি খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছি তাকে।একদম উশকোখুশকো চুলগুলো এলোমেলোভাবে কপালে পরে আছে তার।চোখ কোটরে বসে গেছে।বেড়ে যাওয়া চাপ দাড়িগুলোতেও ক্লান্তি,জড়তা।ছাইরঙা শার্টের গলার কাছের বোতামদুটো খোলা।তার পুরোপুরি সুযোগ নিয়ে ধবধবে প্রশস্ত বুকের দুচারটে লোম উকি দিচ্ছে।হাটুর উপর ঠেকানো কনুইদুটোর কোনোটার হাতা নেমে এসেছে,তো কোনোটার ভাজ এলোমেলো হয়ে গেছে।এই হালে মানুষটাকে সহ্য হলো না আমার।সবটার জন্য আমিই দায়ী ভেবে চরম আত্মগ্লানীতে বুক ভারী হয়ে আসলো আবারো।চোখ সরিয়ে নিলাম।কিন্তু পারলাম না বেশিক্ষন অন্যদিক ফিরে থাকতে।আবারো তারদিক তাকিয়ে বললাম,
-শ্ শুদ্ধ?
উনি রোবটের মতো মাথা তুলে তাকালেন।উঠে দাড়িয়ে একপা এগিয়ে ধপ করে হাটুতে বসে পরলেন মেঝেতেই।
-আ্ আই লাভ ইউ শুদ্ধ।
শুদ্ধ উঠে এসে পিঠের নিচ দিয়ে হাত দিয়ে তুলে ধরলেন আমাকে।চেচিয়ে বলে উঠলেন,
-কেনো এমন করলি তুই সিয়া?কেনো এতোবড় শাস্তি আমার?কি দোষ করেছিলাম আমি?কি দোষ ছিলো আমার?তোকে শাস্তি দিতে গিয়ে এই তিনমাসে প্রতিমুহুর্ত মরেছি আমি।তবুও তুই…
জানতাম এমনটাই হয়েছে।কথাগুলো কতোটা কষ্টের তার আন্দাজ ছিলো।তবুও তার কথায় শান্তি লাগছে প্রচন্ড।উনি সিয়া বলে ডাকছেন আমাকে,কাছে এসে জরিয়ে ধরেছেন।আর কি চাই?আর কিই বা লাগে?সার্থক আমার জীবন।সার্থক এই তিনমাসে আমার বেচে থাকার সংগ্রাম।মুচকি হেসে আস্তে করে মাস্ক খুলতে যাচ্চিলাম।উনি আটকে দিলেন।
-এটা খুলিস না সিয়া।
-এরকম আগেও দুবার হয়েছে শুদ্ধ।যীনাত আপু জানে।তখন কিছু হয়নি আমার,আজ তো আপনি আছেন।কিচ্ছু হবে না আমার।বলতে দিন আমাকে।এই সময়গুলো যে খুবই মুল্যবান আমার কাছে।নইলে যে…
শুদ্ধ শক্ত হয়ে বসলেন খানিকটা।জিভ দিয়ে ঠোট ভিজিয়ে বললেন,
-কিচ্ছু হবে না তোর সিয়া।আমি হতে দেবো না।
-জ্ জানি তো।ভয় পাচ্ছেন মেনো আপনি?কিচ্ছু হবে না সত্যিই আমার।তবে আমার কথা আজ শুনতে বাধ্য আপনি।উত্তেজিত করবেন না আমাকে।জানেনই তো,আপনার সিয়া কিন্তু থ্রেট দিতে এক্সপার্ট।
-এভাবে কেনো বলছিস তুই?এমন তো নয় এর চিকিৎসা নেই।দরকার পরলে পৃথিবীর শেষপ্রান্তে নিয়ে যাবো তোকে আমি।তোকে সবরকমের…
-যখনতখন যেকোনো কিছু ঘটে যেতে পারে।কথাটা শুনেছেন নিশ্চয়ই?যতোটুকো সুযোগ পাচ্ছি,সে সময়টা এসবে নষ্ট হতে দেবেন না প্লিজ।
চেচিয়ে বলে উঠলেন,
-এককথা বলেছি তো!কিছু হবে না তোর!
-আচ্ছা বেশ।শান্ত হন আপনি।আর এই মাস্কটা খুললে কিছুই হবে না।সত্যি বলছি।
উনি আর থামান নি আমাকে।দুহাতে জরিয়ে রাখলেন।স্থির হয়ে আছেন উনি।একটা জোরে শ্বাস নিয়ে বললাম,
-আপনি বলেছিলেন শুদ্ধ।সরি থাকবে না আমাদের মাঝে।সরির পরিবর্তে লাভ ইউ।দেখুননা আজ আপনার এতোটুকো অভিমান নেই।কেনো যে সেদিন মনে পরেনি কথাটা!
….
-আপনি জানেন শুদ্ধ?সেদিন আয়ান ভাইয়া ওসব বলেছিলেন বলে তাকে চড় মেরেছিলাম আমি।মাহিকেও অপমান করেছিলাম।কিন্তু মুনিয়াকে যে হালে দেখেছিলাম,ওর কথা শুনে আটকে যাই আমি।কাগজটা দেখে মাথা ফাকা লাগছিলো আমার।ঠিক তখনই আয়ান ভাইয়াকে মেরে ফেলার কথা ,মাহিকে জবরদস্তি এইসব কানে আসে।ঠিক রাখতে পারিনি নিজেকে শুদ্ধ।হিট অফ দ্যা মোমেন্টে নিজের ভালোবাসাকে অস্বীকার করেছি।আপনার ভালোবাসাকে অপমান করেছি।
……
-সে সন্ধ্যার বৃষ্টিতে আমার বলা ভালোবাসি কথাটাওই সময়ের আবেগ ছিলো না শুদ্ধ।আমার জীবনের চরম সত্য ছিলো।আছে।যদি সেটাও না মানেন,এটা মেনে নিন না,আপনার নামের রোদ্দুরে পুড়ে পরিশুদ্ধ হয়েছে আমার ভালোবাসা।একে মোহ,আবেগ,সাময়িক অনুভুতি বলে ফেলনা করে দেবেন না প্লিজ!
-চুপ কর সিয়া!একটু শান্ত হ।আর কিছুই বলতে হবে না তোকে।তোর রেস্ট…
-ব্যাগে ওটা কি?
উনি আমার চুলে আঙুল পেচাতে পেচাতে বললেন,
-তিনমাস তো আমার পাওয়া শাস্তির সময়ের থেকে কম ছিলো সিয়া।তবুও এই তিনমাস আরো বেশি কঠিন ছিলো।কারন এবার তোকে কষ্ট দিচ্ছিলাম আমি।আমি তো জানতাম আমি নেই বলে আজাদ ম্যানশন যাস নি তুই।ভেবেছিলাম অনেক তো হলো,আজকের জন্মদিনে সিয়া নামের উপহারটা নিজের করে নিয়ে বাসায় ফিরবো।সবটা নিয়ে আগের মতো আবারো….
-আগের মতো?
-হ্যাঁ।আর তাই হবে।তুই ঠিক হয়ে যাবি সিয়া।ডক্টর বলেছে,একটা টিনি অপারেশন করলেই তোর…
-ব্যাগে তারমানে রিটার্ন গিফট?কি ওতে?দেখাবেন না?
…..
-এভাবে আকাশকুসুম ভেবে এই সময়টা নষ্ট করলে কখনো ওষুধ খাবো না।অপারেশনও করাবো না কিন্তু!
-এটাতে?এটাতে তো শাড়ি।
-আজাদ ম্যানশনে তো পরতেই দিতে চাইতেন না।মানা করেছিলেন।আজ শাড়ি?
-ছোটবেলায় শাড়ি পরে কারো সাথে নাকি বরবউ খেলতে চেয়েছিলিস তুই।খুব বকেছিলাম তোকে সিয়া।তোর হয়তো মনে নেই।হয়তো সে কারনেই তুই এতো ভয় পেতি আমাকে।সেদিন কেনো বকেছিলাম জানি না।তবে যেদিন জানলাম তোকে ভালোবাসি,সেদিন থেকে ভয় ছিলো শাড়ি পরলেই তুই অন্যকারো চোখে পরে যাবি।আমি তোকে হারিয়ে ফেলবো।রিস্ক নিতে চাইনি।
-পরিয়ে দেবেন?প্লিজ!
কাতর আবেদন।ফেলতে পারবেন না শুদ্ধ আমি জানি।উনি আস্তেধীরে শাড়িটাতে মুড়িয়ে নিলেন আমাকে।লাল কালোর মিশ্রন।মাথার বাধা চুলগুলো আমিই টেনে খুলে দিলাম।কপালে আলতো স্পর্শে টিপ পরিয়েছেন উনি আমার।
-কেমন লাগছে আমাকে?
….
-বলুন না?
-আজ আমার শ্যামাপাখিকে….
-থাক।বলতে হবে না।আরো বেশি দুর্বল হয়ে পরবেন আপনি।
-পাগলামি করিস না সিয়া।তুই খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ্য হয়ে যাবি।ডক্টরের সাথে কথা হয়েছে আমার।আমরা খুব তাড়াতাড়িই এব্রোড যাবো তোর চিকিৎসার জন্য।ওখানে তোর অপারেশন হলেই…
-এখন দিন নাকি রাত শুদ্ধ?দম বন্ধ লাগছে আমার।
ছাড়িয়ে নিয়ে একটু অবাক চোখে তাকালেন উনি।হাত উচু করে ধরলাম।কিছুটা চুপ থেকে উনি কোলে তুলে নিলেন আমাকে।গলা জরিয়ে তাকে দেখে তার বুকে মাথা ঠেকালাম।করিডরে দাড়িয়ে থাকা মানুষগুলোর দিকে একপলক না তাকিয়ে হাটা লাগালেন।সিড়ির কাছে আসতেই বললাম,
-সিড়িতে কেনো?লিফট্?
-লাগবে না।
-তবে এই সিড়ির প্রতিটা ধাপে আমার কিছু কথা রাখার কথা দিতে হবে আপনাকে শুদ্ধ!
-আমার জীবনে শুধুই তুই সিয়া।তুইই থাকবি।কিছু হবে না তোর।সুস্থ্য হয়ে যাবি তুই।
কথাটা বলে একপা বাড়ালেন উনি সিড়িতে।বুঝেছি এ কথাগুলোতে কতোকি মানা করেছেন উনি।বললাম,
-কোনোদিনও নিজের কোনো ক্ষতি হতে দেবেন না।নিজের অযত্ন করবেন না।
আরেকপা তুললেন উনি সিড়িতে।
-দুই পরিবারের কাউকে কষ্ট দেবেন না,অফিসে রেগুলার থেকে বাবাকে হেল্প করবেন,সেই প্রানোচ্ছল শুদ্ধ সবাইকে ফিরিয়ে দেবেন,আমার কিছু সেভিংস্ আছে,ওগুলো দিয়ে নিজের জন্য একটা ঘড়ি,পান্জাবি আর বাকিগুলো নিম্নবিত্তদের দিয়ে দেবেন…
আরো হাজারটা দাবিতে শুদ্ধের সিড়ি শেষ করেছিলাম।একটা টু শব্দ করেননি উনি।পৌছালাম ছাদে।পড়ন্ত বিকেলের শেষাংশ।লালাভ সূর্য ডুবিডুবি।ঠিক সেদিনের মতো।তফাৎটা এটাই সেদিন ছিলো সবুজ দিগন্তে,আজ ইটপাথরের দালানের ফাকফোকরে।শুদ্ধকে জরিয়ে চুপচাপ দেখতে লাগলাম ওই শেষ বিকেলের রোদ্দুর।
-আপনি চুপ কেনো শুদ্ধ?
-আমি কথা বললে তুইও কথা বলবি,উত্তেজিত হয়ে পরবি।ওসব থাক।তোর অপারেশনটার পর সব কথা হবে।
লোকটা এখনো ভেবেই চলেছে কিছু হবে না আমার।কি বলবো ওনাকে আমি?এতোটা ভালোবেসেন যে আমার শেষ সময়টা যে আসন্ন তা চোখের সামনে দেখেও,সবটা বুঝেও এমন ব্যবহার করছেন যেনো কিছুই হয়নি।কিন্তু আমার যে শুনতে ইচ্ছে করছে ওনার কথা!পরের বাসাটার এক ছাদে এক বৃদ্ধ তার স্ত্রীর সাথে দাড়িয়ে গাছে পানি দিচ্ছিলেন।হুট করেই দাদুটা একটা গোলাপ ছিড়ে দীদার কানে গুজে দিলো।দীদাটা সরু চোখে তাকিয়ে কিছু বললও।ধারনা করলাম সে বলেছে,ইহ!বুড়ো বয়সে ভীমরুতি ধরেছে।মুচকি হাসলাম।আমার চোখ অনুসরন করে শুদ্ধও দেখেছেন তা।হাক ছেড়ে বললেন,
-ও দাদু?একটা গোলাপ এপাশেও ছুড়ে মারো!
দাদুটা কিছুটা অবাক হয়ে তাই করলেন।সোজা আমার কোলে এসে পরলো ওটা।শুদ্ধ মুখ দিয়ে তুলে কোনোভাবে বললেন,
-আই লাভ ইউ।
তার কথা অস্পষ্ট ছিলো,বলার ভঙিমাটাও আলাদা ছিলো।হয়তো হাসাতে চেয়েছিলেন আমাকে।আজ কি করে আপনার চাওয়া ফিরিয়ে দেই শুদ্ধ?গোলাপ হাতে নিয়ে হাসলাম কিছুটা।
-সিয়া দেখ!সুর্যাস্ত!
-উহুম!আপনাকে দেখবো।কথা বলুন না শুদ্ধ।আপনার কথা শুনতে ইচ্ছে করছে।চুপ করে থাকবেন না প্লিজ!
-ভালোবাসি শ্যামাপাখি।ভালোবাসি।তুই সুস্থ্য হয়ে গেলে সবটা ভালোবাসায় মুড়িয়ে নেবো তোকে।
সেই ডাক।সেই ভালোবাসার স্বীকারোক্তি।কিন্তু এতো শান্ত কন্ঠ?আমার সুস্থ্যতা নিয়ে এতো বিশ্বাস?এখনো ভেবে চলেছেন তাকে ছেড়ে যাবোনা আমি,হবেনা কিছু আমার।এই বিশ্বাসেই তো আপনি জয়ী শুদ্ধ।যদি আবারো জয়ী হতেন!কিন্তু সে সুযোগ তো নেই শুদ্ধ।হেরে গেলাম আমি।এক মুহুর্তের অবিশ্বাস ভেঙে গুড়িয়ে দিলো সবটা।ওনার শার্ট খামচে ধরে বললাম,
-বাচতে চাই আমি শুদ্ধ!বাচতে চাই!আপনার হাতে হাত রেখে অনেকটা পথ চলতে চাই!একদম শেষ বয়সের ঢলে পরা চামড়া নিয়ে এভাবেই আপনার দেওয়া গোলাপ কানে গুজে নিতে চাই শুদ্ধ!জড়িয়ে ধরে রাখুন আমাকে এভাবেই!প্লিজ শুদ্ধ!প্লিজ ছেড়ে দেবেন না!কোথাও যেতে দেবেন না আমাকে প্লিজ!আমি বাচতে চাই!
-কিছু হবে না তোর!আমি তোকে এভাবেই জরিয়ে রাখবো সিয়া।কোথাও যেতে দেবো না।কোথাও না!
চোখেমুখে ঠোট ছুইয়ে দিয়ে আরো শক্ত করে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলেন আমাকে শুদ্ধ।সেই নেশালো ঘ্রান!কতোটা শান্তি!এতোটা শান্তিতেই তো চোখ বুজতে চেয়েছিলাম।ভাগ্যবতী আমি।বরই ভাগ্যবতী!
?
-আজও শুদ্ধ বেচে আছে সিয়া,কোনো ক্ষতি করেনি নিজের।সেটা আলাদা কথা ওর ভেতরের ক্ষতটা কেউ দেখতে পায়না।আজও আজাদ ম্যানশনের,শেহনাজ মন্জিলের সবার মন গুছিয়ে চলে শুদ্ধ।সেটা আলাদা কথা ওর নিজের মনটাই মরে গেছে।আজও শুদ্ধ প্রানোচ্ছল,বৃষ্টিতে ফুটবল খেলতে যায়,বন্ধুদের রিইউনিয়নেও যায়।সেটা আলাদা কথা ঠিক পরমুহুর্তেই কলিজা টুকরো টুকরো করে কাটছে কেউ এমন কষ্ট বুকে নিয়ে বেরিয়ে আসে।আজও বর্ষন হয়।যদিও প্রেমের বর্ষন নয়।আজও সবটাই ঠিকাছে সিয়া।সবটাই ঠিকাছে। শুধু শুদ্ধ অনুভুতিহীন যন্ত্রমানব হয়ে আছে।হয়তো সেদিন বিশ্বাসকে ছেড়ে নিজের চোখকে প্রাধান্য দিলে অনুভুতিগুলো সবটা তোর উঠোনে ভরিয়ে দিতে পারতাম।বলতে পারতাম সে সব কথা,যা তুই বারবার শুনতে চেয়েছিলি।আমি কি করে জানবো সিয়া,হেরে যাবে আমার বিশ্বাস।দুরে সরে গিয়ে শেষ অবদি জিতিয়ে দিয়ে যাবি চোখের দেখাটা।কি করে জানবো সিয়া?কি করে?
তুইও তোর কাজটা করে চলেছিস।পোড়ানো।শুধু ধরনটা বদলেছে।
ব্যালকনির দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দুপুরের চোখ ঝলসানো রোদের দিকে চেয়ে শুদ্ধ।শ্রান্ত দুপুরটাতে নড়েচড়ে ওঠা ফুলগাছের সজিব ডালটা বাতাসের উপস্থিতি জানান দিলো।হয়তো লেগেছে ওর গায়ে।হয়তো না। চোখের কোনা বেয়ে জল গড়াতেই চোখ বন্ধ করে নিলো ও।
কাছে পাওয়ার পরও তুই
শত অপূর্নতার কারন
তোর নামেতে বিলীন হওয়ার
সুখলাভও যে বারন,
আর ভালোবাসা?
সে তো পাড়ি জমিয়েছে বহুদুর
জ্বালিয়েছে পুড়িয়ে
ঝলসে দিয়েছে শুধু
তোর নামের রোদ্দুর
তোর নামের রোদ্দুর
?সমাপ্ত?