তোর নামের রোদ্দুর
পর্বঃ২৪
লেখনিতে:মিথিলা মাশরেকা
-তর সেন্সিটিভ জামাই ফোন দিছিলো!
ফোনটা কান থেকে নামিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ওটার দিকে তাকিয়ে রইলাম কিছুক্ষন।আবারো কানে ধরতেই আলিফ খেকিয়ে বলে উঠলো,
-কথা কস না ক্যান?এহন তুইও কি ঢং জুড়বি?
-কি হয়েছে?কি বলেছে শুদ্ধ?ক্ষেপেছিস কেনো?
-আমি ক্ষেপি?আর তর ট্রিগার জামাই…
-দেখ আলিফ!বেহুদা শুদ্ধকে আবোলতাবোল নামে ডাকবি না।কি বলেছে সেইটা বল।
-আমি বেহুদা আর আবোলতাবোল কই?আলিফরে এইডা কইতে পারলি তুই?ও!মেয়ে তো এখন মেডিকেল স্টু!তা কয়ডা বন্ধু বানাইছোত তুই এই কয়দিন কলেজ যাইয়া?তর সেন্সিটিভ জামাই ভায়োলেন্ট হয় নাই?কতা কইছোস কয়জনের লগে?হাড্ডিগুড্ডি ঠিক আছে ওই মালগুলার?
-কল কেটে দিবো?
-আইসা আমার ঘাড় থাইক্কা মাথাডা কাইটা নিয়া যা।তাতেও শান্তি পাইতাম।
-হেয়ালি ছাড়!কাজের কথা বল!
-প্লিজ ডিকিউ!তর সাথে বাইর হমু না আমি।আবার কোন কামে শুদ্ধ ভাইয়ার মনে ওইবো আমি তরে লাইকটাইক করি,আমার বারোটা বাজাই দিবো আবার।মনুরে নিয়ে চইলা যা তুই।
-প্লিজ ইয়ার!ক্লিয়ার করে বলনা!কি বলেছেন শুদ্ধ তোকে?
-হুন!শুদ্ধ ভাইয়া ফোন দিয়া কইছে,উহুম উহুম।
-হারামি!শুদ্ধ তোকে তোকে উহুম উহুম শোনাতে কল দিয়েছিলো?
-মাননীয় বিশুদ্ধ বধু,কতাটা কইতে গলা ঝাইড়া নিলাম।ওহন হুন।শুদ্ধ ভাইয়া কইছে,”কইছে সিয়াকে নিয়ে একঘন্টার মধ্যে অমুক রেস্ট্রুরেন্টে চলে আসো।মৌনতাও আছে আজাদ ম্যানশনে।ওকেও নিয়ে আসো।আর হ্যাঁ,ফ্রন্ট সিটে বসিও না সিয়াকে।কেমন?আ’ম ওয়েটিং।”
ঠোটযুগল প্রসারিত হয়ে মুখ থেকে বেরোলো,হু?ক্লাস নেই আমার আজ,তা বলে…ওনার তো অফিস আছে।তাহলে এখন কেনো বেরোতে বলছেন উনি?আলিফ,মৌনতাকে নিয়ে রেস্ট্রুরেন্টে!ট্রিট দিবে নাকি ওদের কোনো?
-মানে সিরিয়াসলি ডিকিউ?আমি তর ড্রাইভার লাগি?আমিই ক্যান?ভাইয়া যে আমারে ট্রিট দেওনের লাইগা ডাকে নাই হেইডা আমি জানি।তর বাসা থাইকা টুকরা টুকরা হওয়া দিল জোড়া দিতে এখনও স্কচটেপ কিনতাছি ইয়াশার টাকা দিয়া।তর জামাই ওইদিন কি যাতনা ডাই দিছিলো,আইজকা আইছে তরে লিফট্ দেওনের লাইগা?মনুও নাকি যাইবো তর বাসায়?তর কলেজে নতুন বন্ধু জোটে নাই?কতা কস নাই ওগো লগে?তাগো ধরলো না ক্যান?আমি তো…
ওর কথা শেষ না হতেই আরেকটা কল আসলো ফোনে।শুদ্ধর নাম্বার।ঠোটের কোনে হাসি ফুটলো আমার।
-পরে কথা বলছি আলিফ।
-হ হ জামাই পাইছো,আলিফ তো এখন থার্ড পার্…
একদম।থার্ড পার্সোনই তুই।তোর কথা শোনার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা নেই এখন আমার।ওকে জবাবটা দেওয়ার সময় নেইনি।কলটা কেটে তাড়াতাড়ি শুদ্ধর কল রিসিভ করতেই উনি বলে উঠলেন,
-একটু তাড়াতাড়ি রিসিভ করবি তো!
-ওই আসলে…
-থাক।বলতে হবে না।যাই হোক,আলিফ যাচ্ছে তোকে পিক করতে।মৌনতাও আসবে ও বাসায়।ওদের সাথে চলে আয়।এক কাজ কর!ওই নিস্কর্মা মাহিকেও নিয়ে আয়।আমি ওয়েট করছি।আর শোন!চুল ছেড়ে আসিস না।কেমন?রাখছি।
শব্দহীন হেসে ফোন ছেড়ে মাহির রুমে গেলাম।ওকে বললাম রেডি হতে।আমিও রেডি হয়ে নিলাম।অফ হোয়াইট গাউন,শুদ্ধর কথামতো বাধা চুল।নিচে নেমে আম্মুর সাথে কথা বলতে বলতেই মৌনতাও এসে গেলো।তিনজন বসে একটু সবে কথা শুরু করেছি,আলিফ হাজির।
-ওউ ডিকিউ,আধাঘন্টা পার হইছে হেই খেয়াল আছে তর?
-আছে।তুই বস,স্নাকস্ খেয়ে তারপর বেরোবো।
-হ!আমি তো ধইরাই নিছিলাম তর শশুড়বাড়ির ভাত উইঠা গেছে আমার।যা আন।খাই কিছু।
কিছুক্ষন হাসি তামাশা করে বেরিয়ে এলাম চারজন।শুদ্ধর বলা রেস্ট্রুরেন্টে পৌছালাম এক ঘন্টা আগেই।গাড়ি থেকে নামতেই গেইটেই দেখি শুদ্ধ পকেটে হাত গুজে আমার দিকে তাকিয়েই মুচকি হাসছেন।চোখ নামিয়ে এগোলাম।মাহি বললো,
-এতোদিন পর তোমার মনে হলো শুদ্ধ ভাইয়া যে আমাদেরও ট্রিট দেওয়া জরুরি?
-আসলেই ভাইয়া,নট ফেয়ার।আফটার অল আমরা আপনার ছোট্ট ছোট্ট শ্যালক শ্যালিকা।
মৌনতার কথা শুনে শুদ্ধ আগ্রহ নিয়ে আলিফের দিকে ঝুকলেন।ও বেচারা মাথা নিচু করে বুকে হাত গুজে দাড়িয়ে।বিরক্তি নিয়ে কপাল কুচকে আছে।শুদ্ধ বললেন,
-আলিফ?তুমি কিছু…
-আমি কিছুই কমু না।
শুদ্ধ হেসে গলা জরিয়ে ধরলেন ওর।বললেন,
-এ তো দেখি মেয়েদের মতো অভিমান করে!ওকে।আলিফ?আজ তোমার জন্য স্পেশাল তেহারী ফ্রি!
আলিফের চোখ চকচক করে উঠলো।সবাই হেসে রেস্ট্রুরেন্টে ঢুকলাম।ভেতরে ঢুকতেই তিনচারটে মেয়ে দৌড়ে এসে জরিয়ে ধরলো আমাকে।একপ্রকার পরা থেকেই বেচেছি।শুদ্ধ ওদের ছাড়াতে ছাড়াতে চেচিয়ে বললেন,
-ছাড় ছাড়!তোরা দেখছি আমার বউকে জরিয়ে ধরেই দম আটকে দিবি।সর!দুরে যা!
ওরা সরে গেলো।বলা যায় শুদ্ধই সরিয়ে দিলেন ওদের।আমি দম নিয়ে সামনে তাকাতেই আরেকদফা ঝটকা।যাদের তিন চারজন ভেবেছিলাম,সেখানে সাত আটজন মেয়ে দাড়িয়ে।উকি দিয়ে দেখলাম তার পিছনে কমপক্ষে চৌদ্দ পনেরোজন ছেলে।পুরো রেস্ট্রুরেন্ট এরাই দখল করে আছে।আর তারথেকেও বড় কথা সবাই একসাথে এমনভাবে দাড়িয়ে যেনো একে অপরের কতো চেনা,আবার আমার দিকেও তাকিয়ে!
-গাইস!সবাই চোখ নামা।অনেক দেখেছিস!
সবাই হেসে দিলো শুদ্ধের কথায়।এক ভাইয়া এগিয়ে এসে শুদ্ধর কাধে হাত রেখে বললো,
-বিয়ে বৌভাত মিস করেছি ব্রো!আজকে তো ভাবি দেখতে দে!
আরেকজন এগিয়ে এসে বললো,
-ঠিক বলেছিস সাইফ!কিরে শুদ্ধ!বউ দেখানোর জন্য এভাবে রিইউনিয়ন করলি,এখন বলছিস না দেখতে?এইটা কোনো কথা?
আমি হতভম্ব হয়ে একবার তাদের দিকে,একবার মাহি মৌনতা আলিফের দিকে,তো একবার শুদ্ধর দিকে তাকাচ্ছি।এরা সবাই শুদ্ধর ফ্রেন্ড?সবাই?সে সন্ধ্যায় এদের কথা বলেছিলেন উনি?বিশাল ফ্রেন্ডসার্কেল ছিলো তার!ছিলো!উনি আবারো সবার সাথে যোগাযোগ করেছেন তারমানে?আমি যাতে সবার মাঝে আনইজি ফিল না করি এজন্য আমার ফ্রেন্ডদেরও এনেছেন।এতোদিক,এতোটা ভাবেন কিভাবে উনি?হাউ?
-বলো ইনসিয়া,কেমন আছো?
-জ্বি আপু আলহামদুলিল্লাহ ভালো।আপনি?
-ভালো আর কিভাবে থাকি বলো?পাঁচবছর আগে শুদ্ধকে প্রপোজ করলাম,বলে না শ্যামাপাখিকে ভালোবাসি।তিনবছর পর ফোন দিলো,ভাবলাম এবার হয়তো লাইন ক্লিয়ার।ওমা!এ ছেলে বলে আমার বউ সিয়াকে দেখতে চলে আয়!জীবনটা বেদনার!
আপুটার বলার স্টাইলে হেসে দিলাম।বাকিরাও হাসলো।আরেক আপু বলে উঠলো,
-আমার বোন তো মিস বাংলাদেশীতে চান্স পেয়েছিলো।গ্রুপ ফটোতে শুদ্ধর ছবি দেখে সে পাগলপ্রায়।শুদ্ধকে বললাম,ব্যাটা বদমাইশ বলে মিস ওয়ার্ল্ডও নাকি ওর শ্যামাপাখির কাছে হার মানবে।তোয়াক্কাই করলো না বোনটাকে আমার।
এক ভাইয়া শুদ্ধর কাধে চড় মেরে বললো,
-কথা একদম ভুল বলেনি শুদ্ধ।যা দেখছি,ইনসিয়ার ময়ো এতো মায়াবী চেহারা এরআগে কোথাও দেখেছি বলে মনে পরছে না।
শুদ্ধ গলা জাপটে ধরে বাকিয়ে ধরলেন ভাইয়াটাকে।আমার দিকে তাকিয়ে হেসে হেসে বললেন,
-মুখ সামলে কথা বল!আমার বউ ওটা।
আমি মুখ লুকানোর জায়গা পাচ্ছি না।মৌনতা পিছন থেকে ধাক্কা মেরেছে।এক আপু বললো,
-হ্যাঁ।তাই তো।এই তামিম?এই কথাটা বিয়ের পর আমাকে বলেছিলে না তুমি?তারমানে আমার চেহারা এখন আর মনে নেই তোমার।রাইট?বাসায় চলো,মনে করিয়ে দেবো।
সবাই হাসতে লাগলো।শুদ্ধ সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন আমাকে।তেরোজন ভাইয়া,পাঁচটা আপু শুদ্ধর ব্যাচমেট।আর বাকি তিনটা আপু ওরমধ্যের তিনটা ভাইয়ার বউ।মুলত আমার কাছেই তাদের নাম বলা।সবাই সবকিছু জানে আমাকে নিয়ে।শুদ্ধ যে আগে থেকেই তার শ্যামাপাখির বর্ননা দিয়ে এসেছেন সবার কাছে তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহের অবকাশ রইলো না ওদের কথাবার্তা শুনে।খেয়াল করলাম সবাই থাকলেও আয়ান ভাইয়া ছিলো না ওখানে।তারমানে উনি ফেরেন নি এখনো।আড্ডা খাওয়াদাওয়ার পর্ব শেষে সবাই বেরিয়ে আসছিলো।শুদ্ধ ভাইয়াগুলোর সাথে দাড়িয়েছেন।দুটো আপু আমার কাছে এসে কাধে হাত রেখে বললো,
-তুমি জানো না ইনসিয়া,শুদ্ধর কাছে তুমি কি।হয়তো জানো।কিন্তু যতটুকোই জানো,জেনে রাখবে সেটা কমই জানো।আজ তিনবছর পর সেই আগের শুদ্ধকে দেখেছি আমরা।তিনবছর আগে যাই হয়ে থাকুক না কেনো,সেটাকে নিয়ে ওকে বাচতে দিও না ইনসিয়া।ছেলেটা বড্ড বেশি ভালোবাসে তোমাকে।বড্ড বেশি!
চোখদুটো শুদ্ধর দিকে চলে গেলো।দুপাশে দুজনের কাধে হাত দিয়ে ঠোটে হাসি ঝুলিয়ে সেও আমার দিকে তাকিয়ে।চোখাচোখি হতেই চোখ নামিয়ে নিলাম।সবাইকে বিদায় জানিয়ে বাসায় ফিরলাম শুদ্ধের সাথে।
.
আকাশে মেঘ করেছে।গুরুম গুরুম ডাক বিকেলের স্নিগ্ধতাকে ছাপিয়ে শোর মাচাচ্ছে।মাঝে মধ্যে আলোর ঝলকানিও দেখা যায় ওই দুরে দালানগুলোর ফাক ফোকর দিয়ে।ব্যালকনিতে থাকা গাছগুলো সবুজে মুড়িয়ে নিয়ে অসম্ভব সুন্দরভাবে সেজেছে।রেলিংয়ে মাথা ঠেকিয়ে হালকা বাতাসে সেগুলোর হেলদোল দেখতে বেশ লাগছে।দরজা খোলার আওয়াজে পিছন ফিরে তাকালাম।শুদ্ধ টাই খোলার জন্য টানতে টানতে ব্যালকনিতেই এগোচ্ছেন।সবে ফিরলেন অফিস থেকে।চেহারায় একরাশ ক্লান্তি,তবুও চোখেমুখে প্রশান্তির ঝিলিক।ঠোটে অমায়িক হাসি।
-শ্যামা এসেছিলো?
-কে শ্যামা?
-যে প্রতিদিন আসে সকাল বিকেল।
ফুসে উঠে বললাম,
-আমার অগোচরে কে আসে এ রুমে?
শুদ্ধ ভ্রুকুচকে তাকালেন।টাই ছেড়ে এগিয়ে এসে কোমড়ে হাত দিকে আমার দিকে তাকিয়ে শব্দ করে হেসে দিলেন।আমি কপাল কুচকে তাকিয়ে আছি।উনি হাসি থামিয়ে বললেন,
-তোকে নিয়ে জেলাস যে ওই কালচে পাখিটা।দেখেছিস তো ওকে?
হচকিয়ে গেলাম।ওটার কথা মনেই নেই।আসে না আর ও।
-ও্ ওই পাখি আমাকে নিয়ে জেলাস হতে যাবে কেনো?
হুট করে শুদ্ধ টাইটা আমার গলায় পেচিয়ে নিজের দিকে টেনে নিয়ে বললেন,
-কারন তুই আসার পর ওকে সময় দেই না আমি।যেই শুদ্ধর সকালটা ওকে দিয়ে শুরু হতো আর রাতটাও যে এসেছে তা ওরই ডাকে টের পেতাম,সেই শুদ্ধ ওকেই ভুলতে বসেছে।
এভাবে কাছে টেনে বলার কি দরকার?ওটুকো দুরে নেটওয়ার্ক পায়না?মাথা নিচু করে বললাম,
-আমি কি করলাম?
-সব দোষ তোর।তুই ছিলি না।তোকে ভুলতে ওকে এনেছিলাম।জানিনা কেনো একদিন রাস্তার পাশে ওর আওয়াজে তোর কথা মনে পরেছিলো,নিয়ে আসলাম।কতোটা যত্ন করতাম,তা ওই জানে।একসময় রাগে খাচাও খুলে দিয়েছিলাম।যায়নি ও।এভাবেই আসতো।এখন তুই এসেছিস,বেচারা আর শুদ্ধর পাত্তা পাচ্ছে না।তাহলে তোকে নিয়ে জেলাস হওয়া অস্বাভাবিক কিছু?
মেঘ বড্ড জোরে ডেকে উঠলো।চমকে উঠে দুরে সরে গেলাম আমি।আর শুদ্ধ মুচকি হেসে ফ্রেশ হতে চলে গেলেন। তার কথাগুলো ভাবতে লাগলাম।তারমানে এতোদিন আমার অবয়বে ওই পাখিকে শ্যামাপাখি বানিয়ে মনের কথ বলে এসেছেন উনি।তবে তো সব কথা ওই পাখিটাই শুনে নিয়েছে।ঠিক তখনই পাখিটা হাজির!ডানা ঝাপটে শীষ বাজাচ্ছে।
সরু চোখে পাশে তাকালাম।এই শ্যামা?লজ্জা করে না তোর?অন্যের বরের উপর নজর দিস?ইচ্ছা তো করে তোর ঠোট বেধে দি।লজ্জা করেনা?আমার বরকে দেখে শীষ বাজাস?তোর আওয়াজে আমাকে ভুলতে বসেন শুদ্ধ?তোর চোখটাও বেধে দেবো।ওই চোখ দিয়ে আমার বরকে দেখতে এই ব্যালকনিতে আসিস তুই?তোর খাবারদাবারের ব্যবস্থা তোর বাসায় ফুডপান্ডা দিয়ে পাঠিয়ে দেবো।খবরদার খাওয়ার অজুহাতে এই বারান্দায় আসবি না তুই!
-এবার তো মনে হচ্ছে তুইই জেলাস হচ্ছিস!ওভাবে কেনো দেখছিস বেচারা পাখিটাকে?যেনো চোখ দিয়েই গিলে খাবি!
শুদ্ধর কথা শুনে হচকিয়ে গেলাম।কোনোদিক না তাকিয়ে দৃষ্টি আবারো দুর আকাশে নিক্ষেপ করলাম।এই বৃষ্টিটা নামছে না কেনো?কতোক্ষন হলো এভাবে দাড়িয়ে আছি বৃষ্টি দেখবো বলে।শ্যামাকে তাড়াবো।বৃষ্টিতে ভিজে একসা হয়ে যাবে ও।শুদ্ধর এতো কাছের কেনো হবে ও?কোন অধিকারে?
রিনরিন শব্দতরঙ্গে আলোড়িত হলো চারপাশ।নেমেছে!বৃষ্টি শুরু হয়েছে। কি অপরুপভাবে আকাশ তার মনোমুদ্ধকর বর্ষন দেখাতে ব্যস্ত হয়ে পরেছে।হাত বাইরে বাড়িয়ে দিলাম।কি রোমান্টিক পরিবেশ!এমনি বিরবিরয়ে বলে উঠলাম,
-তালুতে জমা জল ঝাপটে মুখে মারার জন্য একটা স্বাভাবিক,রোমান্টিক তুমি চাই।হি হি!
হঠাৎই আরেকহাতে কারো স্পর্শে শিহরিত হয়ে মনের কাজটা হাত করেই ফেললো।পানি মেরেছি শুদ্ধের মুখে।চোখ খিচে বন্ধ করে রয়েছেন উনি।আমার হাত না ছেড়ে দু সেকেন্ড পর আরেকহাতে মুখের পানি ঝেড়ে বিরক্তি নিয়ে তাকালেন উনি আমার দিকে।এবার ভয় করছে।প্রতিবার দোষ করার পর মনে পরে দোষটা আমারই।কেয়া ফায়েদা?সাজা তো পেতেই হবে তাইনা!একটা শুকনো ঢোক গিললাম।শুদ্ধ চোখ সরিয়ে একবার আকাশের দিকে তাকালেন।তারপর একরাশ উচ্ছ্বাস নিয়ে বললেন,
-চল।দৌড় লাগা!
রিয়্যাক্ট দেওয়ার আগেই শুদ্ধ আমার হাত ধরে দৌড় লাগিয়েছেন।একপ্রকার নিজেকে সামলাতে সামলাতে চলেছি তার সাথে।রুম থেকে বেরিয়ে সিড়ি দিয়ে নিচে নেমে একদম বাসা থেকে বেরিয়ে এলেন উনি।ড্রয়িংরুমের সোফায় মাহিকে দেখলাম কানে হেডফোন দিয়ে চোখ বন্ধ করে গা এলিয়ে বসে আছে।আম্মু,বাবা রুমে হয়তো বা।কারো নজরে না পরেই বেরিয়ে এলাম দুজনে।
#চলবে…