তোর মায়ায়❤,5 Last Part

0
3908

তোর মায়ায়❤,5 Last Part
Ariyana Nur

মাশিয়া অবাক দৃষ্টিতে সামনের মানুষটির দিকে তাকিয়ে রইল।সামনের মানুষটি জিদানের অপর পাশে বসে বলল….

—আপনি কেমন মশাই বলুন তো???হবু শালিকাকে দেখলে কেউ এভাবে ভয় পায় বলুন???

জিদান আমতা আমতা করে কিছু বলবে তার আগেই আফিফা বলল….

—ভয় না পাওয়ার কোন কারন রেখেছিস।যেই ভয় দেখিয়েছিলি সেই ভয় এখনো মনে ঝেকে বসে আছে।আফিফার কথা শেষ হতেই সামনের মানুষটি উচ্চ স্বরে হাসতে লাগলো।তাকে হাসতে দেখে আফিফাও সাথে হাসতে লাগলে।আর এদিকে জিদান আর মাশিয়া ওদের কথা কিছু না বুঝে অবাক হয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে রইল।

(আফিফা আগেই জানতো জিদান ওকে পছন্দ করে।মাঝে মাঝে ওদের ভার্সিটি এর সামনেও এসে ঘুরঘুর করতো।একদিন জিদান কে দেখে ওর ফ্রেন্ডরা মজা করে জিদানের সামনে এসে দাড়ায়।আর ইচ্ছে মত থ্রেড দেয়।আর বলে যদি কখনো ওদের সামনে পরে তাহলে সেদিন ওর তেরোটা বাজিয়ে ছাড়বে।জিদান সেদিন এর পর কখনো ওদের মুখোমুখি হয়নি।)

মেয়েটি এতোক্ষনে মাশিয়াকে খেয়াল করলো।সে মাশিয়াকে চিনতে পেরে লাফ দিয়ে উঠে মাশিয়ার সামনে গিয়ে বলল…

—সরি আপু এতোক্ষন আপনাকে খেয়াল করিনি।কেমন আছেন আপনি???

মাশিয়া অবাক হয়ে সামনের মেয়েটিকে বলল…..
—তুমি আমাকে চেনো???

—কি বলছেন আপু আমি আপনাকে চিনবো না।এক মিনিট এক মিনিট….
আপনিকি আমাকে চিনতে পারেননি????

মাশিয়া মাথা নাড়িয়ে না বুঝালো।

মেয়েটি হতাস হয়ে বলল….
—আরে…আপু আমি আশু।তারপর আশু সব বললে মাশিয়া অবাক হয়ে বলল….

—তুমিই আশু…..
আমার তো বিশ্বাস হচ্ছে না।কিন্তু সেদিন তো যে ছিলো সে কা….
কথাটা বলতে গিয়ে মাশিয়া থেমে গেলো।আশু মাশিয়ার কথা বুঝতে পেরে বলল….

—সব আপু মেকআপ এর কামাল।সেদিন তো ইচ্ছে করেই ঐ কালো মেকআপ করেছি সাথে কালিও মেখেছিলাম।যাতে কেউ বুঝতে না পারে।আর সাথে ঐ বড় মোটা ফ্রেমের চশমাতে তো মুখ অর্ধেক ডাকা ছিলো।তাই কেউ চিনতেও পারেনি।দেখলে তুমিও আমাকে চিনতে পারোনি।

আশুর কোন কথাই মাশিয়ায় মাথায় ঢুকছে না।সে তো পলকহীন আশুর দিকে তাকিয়ে আছে।আর খুটিয়ে খুটিয়ে তাকে দেখছে।

__________________________

ছাদের এক কোনে দাড়িয়ে আছে আশু আর নিলাভ।কারো মুখেই কোন কথা নেই।নিলাভের চোখে মুখে রয়েছে এক রাস খুশির ঝিলিক।আর আশুর চেহারা দেখে যে কেউ বলতে পারবে সে হাই লেভেলের রেগে আছে।নিরবরা ভেঙ্গে আশু রাগি গলায় বলল…..
—মিঃ চৌধুরী এসবের মানে কি???

নিলাভ আশুর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বলল….
—মিসেস চৌধুরী আপনি কিসের কথা বলছেন আমি বুঝতে পারছি না।

আশু মিসেস চৌধুরী কথাটা শুনে আরো রেগে গিয়ে বলল….
—ডোন্ট কল মি মিসেস চৌধুরী।

—কুল কুল এতো হাইপার হচ্ছো কেনো???

—হাইপার কি আর সাধে হচ্ছি আপনি কেনো আমাকে বিয়ে করলেন???তাও আবার আমাকে না জানিয়ে???সেদিন তো বড় বড় কথা বলছিলেন তাকে ছাড়া অন‍্য কাউকে আপনার বিয়ে করা সম্ভব না।তাকে ছাড়া আপনি নিস্ব ইত‍্যাদি ইত‍্যাদি।তাহলে আজ কেন তাকে রেখে আমাকে বিয়ে করলেন???(চেচিয়ে)

নিলাভ কানে হাত দিয়ে বলল….

—দেখো আমার কানে কোন সম‍্যসা নেই।আস্তে কথা বললেও আমি শুনতে পাই।তাই জোরে কথা বলার কোন দরকার নেই। জোরে কথা বললে তোমারি পরে গলা বেথ‍্যা করবে তখন আবার আমার দোষ দিতে পারবে না।

নিলাভের কথা শুনে আশুর রাগ সপ্তম আকাশে উঠে গেলো।
—ঐ মিয়া ফাজলামি পাইছেন।আমি আপনারে একটা কইতাছি আর আপনি আমারে আরেকটা উওর দিতাছেন।

—একটা জিনিস আজ লক্ষ করলাম।তোমাকে রাগলে না আরো বেশি কিউট লাগে।সেটা কি জানো???

—আপনারে…..
আপনারে আমি দেইখা নিমু….

—পরে দেখবে কেনো এখনি দেখো।আর পরে দেখলেও দেখতে পারবে।কেননা আমি তো পাসোনালি তোমার হয়ে গেছি।

—আমাকে বিয়ে করার শখ আপনাকে হারে হারে টের পাওয়াবো কথাটা মনে রাখবেন।
কথাটা বলেই আশু ছাদ থেকে বড় বড় পা ফেলে চলে গেলো।আর নিলাভ ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হাসতে লাগলো।

আস্তে আস্তে আর মাথা ঘামাতে হবে না।আমিই সব কিছু ক্রিয়ার করে দিচ্ছি।

সেদিন মাশিয়া আশুকে রেস্টুরেন্টে দেখে বাসায় গিয়ে নিলাভ কে জানালেই খুশিতে তার চোখ-মুখ জ্বলজ্বল করতে থাকে।কেননা আশুই সেই মেয়ে যাকে নিলাভ পাগলের মত খুজছে।নিলাভ দেরি না করে ৭দিনের মধ‍্যেই সব খোজ খবর নিয়ে আশুর বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব পাঠায়।এদিকে আশুর কোন পছন্দ না থাকায় তারাও রাজি হয়ে যায়।কিন্তু শর্ত হল এখন শুধু রেজিস্ট্রার মেরেজ করে রাখবে।কিছুদিন পর আশুর ফাইনাল পরিক্ষা শেষ হলেই তারা ধুমধাম করে উঠিয়ে দিবে।আশুও বাবা,মার পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যায়।কিন্তু বিয়ের দিন নিলাভ কে দেখে বেচারী বড়সড় একটা শর্কড খায়।

___________________________

দেখতে দেখতে ১মাস কেটে গেলো।নিলাভ নানান ভাবে আশুকে ওর কথা জানাতে চেয়েছে।কিন্তু সে ত‍্যেড়ামি করে নিলাভের সাথে কথাই বলে না।সব সময় উল্টাপাল্টা কথা বলে।আশুর এমন ব‍্যবহারে নিলাভ মন খারাপ করেও নিজেকে সামলিয়ে নেয়।আশু এদিকে নিজে নিজেই ভুল ভেবে নিলাভ কে দোষারোপ দিচ্ছে।সে তাকে ঠকাচ্ছে।

কলিং বেলের শব্দ পেয়ে আশু দরজা খুলে দেখে মাশিয়া দাড়িয়ে আছে।মাশিয়াকে দেখে আশু তাকে জরিয়ে ধরে বলল….
—কেমন আছো আপু???

—আরে এখনো আপু বলবে???আমি যে তোমার একমাত্র ননদ তা কি ভুলে গেলে তুমি???

—আরে বাদ দাও তুমি ঐ সব কথা।তুমি আফিফার বর জিদান জিজুর ফ্রেন্ড সেই হিসেবে তুমি আমার আপু।আমার আর কোন সম্পর্ক লাগবে না।

মাশিয়া আশুর দিকে তাকিয়ে দেখে ওর মুখটা ছোট হয়ে গেছে।মাশিয়া ওর হাত ধরে বলল….
—তোমার রুমে চল।তোমার সাথে কথা আছে।

আশুকে আর কিছু বলতে না দিয়ে মাশিয়া ওকে নিয়ে ওর রুমে চলে গেলো।

পাশাপাশি বসে আছে আশু আর মাশিয়া।মাশিয়ার কাছে সব শুনে আশু মাথা নিচু করে আছে।মাশিয়া একটু থেমে আবার বলল….
—ভালো থেকো আসছি।আর পারলে আমার ভাইটাকে মেনে নিয়ো।

মাশিয়া চলে যেতেই আশুর চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পরতে লাগলো।একটা মানুষ ওর জন‍্য এতো পাগলামি করেছে আর ও জানেই না।আর সে ঐ মানুষটাকেই এতোদিন ইচ্ছে করে ও আরো কষ্ট দিয়েছে।আশু অনেকক্ষন কান্না করে কিছু একটা ভেবে ফ্রেস হতে চলে গেলো।

(সেদিন নিলাভ গ্রামের থেকে আসার পর পুরো পাগলের মত হয়ে গিয়েছিলো।সাথে তার পাগলামো তো ছিলোই।দিন রাত আশুকে ওলিতে গলিতে খুজেছে।কেননা বাচ্চাটি বলেছিলো ও শহর থেকে এসেছে।আশুর কথা ভেবে ভেবে কত যে নিরঘুম রাত কাটিয়ে তার ঠিক নেই।)

_______________________

খোলা আকাশের নিচে নিলাভের কাধে মাথা রেখে বসে আছে আশু।কারো মুখেই কোন কথা নেই।সেদিন আশু নিলাভর উপর থেকে সকল অভিযোগ উঠিয়ে ওকে মেনে নিয়েছে।কিছুক্ষন পর আশু বলল….

—আচ্ছা আপনি এমন পাগলামো কেনো করেছিলেন আর এখনো আমার একটু কিছু হলেই পাগলামো শুরু করে দেন???আমি আপুর থেকে শুনেছি আপনি অনেক রাগি,গম্ভীর টাইপ লোক ছিলেন???আপনার দ্বারা কিন্তু এমন ব‍্যবহার আশা করা যায় না।

নিলাভ আশুর হাত ধরে বলল….
—তোর মায়ায়❤ তোর মায়ায় আটকে আমি এমন করেছি আর করছি।

আশু আর কিছু না বলে চুপ করে করে দূরের আকাশের দিকে চেয়ে রইল।সে তো চেয়েছিলোই এমন একজনকে যে তাকে পাগলের মত চাইবে।আজ সে সার্থক।আল্লাহ তার দোয়া কবুল করেছে।সেও চায় এই পাগল মানুষটার সাথে বাকি জীবন পারি দিতে।এভাবেই চলতে থাকুক তাদের জীবন।

সমাপ্ত

(ভুলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।সবাই ভালো থাকবেন।সুস্থ থাকবেন।এই কামনাই রইলো।ধন‍্যবাদ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here