তোর_অপেক্ষায়,পর্ব_১২,১৩

0
839

#তোর_অপেক্ষায়,পর্ব_১২,১৩
#সামান্তা_সিমি
#পর্ব_১২

চিকন মাটির রাস্তার দুপাশে ধানী জমির ক্ষেত।বিকেলের পড়ন্ত রোদ ছুঁয়ে দিচ্ছে সবুজ ফসলের ডগা।আবেলা বাতাস স্নিগ্ধ হয়ে আছড়ে পড়ছে শরীরে।মাথার উপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে নাম না জানা পাখিদের মেলা।বহুদিন পর এমন স্বর্গীয় পরিবেশের সাক্ষী হয়েছি।আমরা চারজন চিকন রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলেছি রেলগাড়ির মত।আপুরা সবাই গল্প করতে করতে এগিয়ে চলছে।কিন্তু আমি চুপ করে এই প্রকৃতিকে অনুভব করতে চাইছি।একমাত্র নানু বাড়িতে আসলেই এত সৌন্দর্য উপভোগ করার সৌভাগ্য হয়।
চারজন এবার আলপথ পেরিয়ে উঠে এলাম বড় রাস্তায় যেটা দুদিকে ভাগ হয়ে গেছে।আমরা ডানদিকের রাস্তাটা নিলাম।শেষ কবে এখানে এসেছি মনে নেই তবে রাস্তাঘাট অস্পষ্টভাবে মনে আছে।রাস্তায় হাঁটতে থাকা পথিকরা ঘাড় ঘুরিয়ে আমাদের দেখছে।গ্রামে নতুন মুখ দেখে তারা কৌতূহলী হচ্ছে বোধ হয়।আর আমাদের পোশাকআশাকের ধরনই বলে দিচ্ছে আমরা এই গ্রামের মানুষ নই।
কিছুদূর হেঁটে সামনে যেতেই দেখতে পেলাম রাস্তার পাশে বিরাট বড় মাঠ।থোকা থোকা সবুজ ঘাসে তা ছেয়ে আছে।সেখানে ছেলেপুলেরা হৈচৈ করে ক্রিকেট খেলছে।আমি মুগ্ধ হয়ে চারপাশ দেখতে লাগলাম।হঠাৎ জেরিন আপু বলে উঠল,

‘ এই এটা দুর্জয় ভাইয়া না?ওই যে ব্যাটিং করছে!আরে ইমন ভাইয়াও তো। ‘

আপুর কথায় আমরা সবাই দূরবীক্ষণ যন্ত্রের মত মাঠের দিকে ভালেভাবে নজর দিতেই ভাইয়াদের দেখতে পেলাম।দুর্জয় ভাইয়ার গেট আপ দেখে আমার হুঁশ উড়ে যাওয়ার মত অবস্থা। উনার গায়ে পাতলা কালো কলারবিহীন টি-শার্ট, পরনের প্যান্ট হাঁটু পর্যন্ত মুড়ে রেখেছেন।পায়ে কেনো জুতা নেই।গলায় একটা লাল গামছা দূর থেকেও ঝিলিক মারছে।হাতে ব্যাট।ব্যাট ধরার স্টাইল দেখে রীতিমতো ক্রাশ খাবার জোগাড়।তাঁর দৃষ্টি সামনের দিকে যেখানে থেকে অপর ছেলেটি বল নিয়ে দৌড়ে আসছে।এতদিন পর্যন্ত উনাকে স্যুট বুট পড়া অবস্থাতেই দেখেছি। এই রূপ আমার কাছে সম্পূর্ণ নতুন।এই মুহূর্তে উনাকে দেখে বোঝার উপায় নেই যে শহরের ছেলে।কি সুন্দর গ্রামের স্কুল পড়ুয়া ছেলেদের সাথে হৈচৈ করে ক্রিকেট খেলছেন।ইমন ভাইয়ারও একই রূপ।তবে ভাইয়াকে দেখে অবাক হওয়ার মত কিছু নেই।কারণ সে মাঝেমধ্যেই ছুটির দিনে পাড়ার ছেলেদের সাথে সব ধরনের খেলাতেই যোগ দেয়।

জেরিন আপু মহাব্যস্ত হয়ে বলল,
‘ চলো সবাই মাঠে গিয়ে খেলা দেখি।হাজার হোক দুর্জয় ভাইয়া খেলছে।আই কান্ট মিস ইট।’

‘ কি বলছিস!ওখানে গেলে কখন জানি বল এসে মাথা ফাটিয়ে দিয়ে চলে যাবে টেরও পাবি না।তারচেয়ে ভালো রাস্তার কিনারায় দাঁড়িয়েই খেলা দেখি।’

সুহানা আপুর কথায় পাত্তা দিল না জেরিন আপু।একপ্রকার টানতে টানতে নিয়ে গেল সবাইকে।অহনা আপুরও বেশ আগ্রহ।নিজের ভাইকে এমন উৎফুল্ল হয়ে ঘুরে বেড়াতে সে নাকি খুব কমই দেখেছে।
আমরা চারজন মাঠের কোণায় একটা খেজুর গাছের পাশে দাঁড়িয়ে রইলাম।ছেলেদের চিৎকার চেঁচামেচি শুনে বোঝা যাচ্ছে খেলা টানটান পর্যায়ে।ভাইয়ারা এখনো আমাদের খেয়াল করেনি।
আমি শুধু অবাক হয়ে দেখতে লাগলাম ভাইয়ারা কিরকম ব্যাট হাতে দৌড়ে দৌড়ে রান নিচ্ছেন।এখানে উপস্থিত ছেলেদের মধ্যে উনারা দুজনই বয়সে অন্যদের থেকে বড় বাকিদের দেখলেই বোঝা যায় ওরা সব স্কুল পড়ুয়া।দুর্জয় ভাইয়া একটু একটু পর পর গলার গামছায় মুখ মুছে নিচ্ছেন।ভীষণ হাসি পেয়ে গেল আমার।ঘাম মোছার জন্যই তাহলে গলায় গামছা ঝুলিয়ে রেখেছেন।পারেনও বটে উনি।

প্রায় দশমিনিট হতে চলল আমরা উৎসাহ নিয়ে খেলা দেখছি।ততক্ষণে ভাইয়ারা বেশ কয়েকটা চার-ছক্কা মেরে দিয়েছেন।হঠাৎই দেখলাম লাল স্কচটেপে প্যাঁচানো বলটা দুর্জয় ভাইয়ার ব্যাটের চরম আঘাত খেয়ে আকাশপথে তীব্র গতিতে ধেয়ে আসছে আমাদের দিকে।আমরা কি করব বুঝতে না পেরে নিজেদের জায়গাতেই দাঁড়িয়ে রইলাম।অথচ এটা জানি যে এই বল এসে যদি কারো মাথায় লাগে তাহলে নির্ঘাত কুপোকাত হয়ে যাবে।
এদিকে উড়ন্ত বল অনুসরণ করতে গিয়ে মাঠের সবাই আমাদের দেখে নিয়েছে এবং কয়েকজন জোরে জোরে চিৎকার করে বলছে,

‘ ক্যাচ! ক্যাচ! ক্যাচ!’

আমার পাশে জেরিন আপু দাঁড়িয়ে ছিল।সে এবার দুপা এগিয়ে উদ্যত হলো বলকে ধরার জন্য। কিন্তু তাঁর হাতের ধাক্কা লেগে আমি হুমড়ি খেয়ে পড়লাম মাটিতে।আপু বল ধরায় ব্যর্থ হওয়ায় সেই বল খেজুর গাছের সাথে লেগে একদম লাফ দিয়ে এসে পড়ল আমার কপালে।ঘটনা এত দ্রুত ঘটল যে আমি কয়েক সেকেন্ডর জন্য বুঝতেই পারলাম না আসলে কাহিনীটা কি!তবে টের পাচ্ছি মাথার একপাশে ব্যথা অনুভূত হচ্ছে। নিজের অজান্তেই হাত চলে গেল মাথায়।
ততক্ষণে ছেলেগুলো সব দৌড়ে আসলো আমার কাছে।আপুরা আমাকে টেনে তোলার চেষ্টা করছে কিন্তু মাথাটা কেমন যেন ঝিমঝিম করে উঠছে।ভিড়ের ফাঁক দিয়ে দেখতে পেলাম দুর্জয় ভাইয়া ব্যাট ছুড়ে ফেলে দৌড়ে আসছেন।উনার পেছনে ইমন ভাইয়া।এবার কপালের ব্যথা বেমালুম ভুলে গেলাম।ব্যথার বদলে এক বস্তা লজ্জায় আক্রান্ত হলাম আমি।ইশ্! এতগুলো মানুষের সামনে আমি এইভাবে পড়ে গেলাম।আমার সাথেই যে কেনো এমন হয়!নিশ্চয়ই ওরা মনে মনে আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করছে।
দুর্জয় ভাইয়া এসে ছেলেগুলোকে সরিয়ে আমার সামনে হাঁটু মুড়ে বসে জিজ্ঞেস করলেন,

‘ কোথায় লেগেছে?’

আমি কোনো উত্তর না দিয়ে দম বন্ধ করে উনার দিকে তাকিয়ে আছি।উনার গাল এবং কপাল বেয়ে ঘামের রেখা ঝড়ছে।সামনের চুলগুলো ভেজা ভেজা।কালো টি-শার্টের হাতা গলিয়ে ফর্সা বলিষ্ঠ দুটো হাত বেরিয়ে আছে।এমন রূপ দেখে আমি যেন কিছুক্ষণের জন্য হারিয়ে গেলাম।কপালের ব্যথা ভুলে চোখ পিটপিট করে তাকাতে লাগলাম উনার দিকে।
জেরিন আপুর হাসির শব্দে হুঁশ ফিরল আমার।আপু হাসতে হাসতে বলছেন,
‘ তুমি যে কিভাবে পড়ে গেলে পূর্ণী! একটু সাবধানে থাকবে তো নাকি।তোমার জন্য এখন ওদের খেলায় ডিস্টার্ব হলো।’

এমন কথা শুনে মাথা নিচু করে ফেললাম আমি।তখনই দুর্জয় ভাইয়া প্রচন্ড এক ধমক দিয়ে বলে উঠলেন,
‘ স্টপ লাফিং! এখানে কোনো সার্কাস হচ্ছে যে এভাবে হাসার প্রয়োজন পড়ছে?আর ওকে সাবধানে থাকার কথা বলছো তোমার কারণেই তো ওর ধাক্কা লেগেছে।সো নেক্সট টাইম চলাফেরা করার সময় নিজেই কেয়ারফুল থাকবে আশা করি। ‘

উনার ধমক শুনে এখানে উপস্থিত সবাই ভয় পেয়ে গেল।জেরিন আপু একদম চুপ মেরে গেলেন।অহনা আপু আস্তে করে বলল,

‘ রেগে যাচ্ছিস কেনো ভাই?জেরিন তো ইচ্ছে করে ধাক্কা দেয়নি।শান্ত হ।’

দুর্জয় ভাইয়া শান্ত হলেন কিনা বুঝা গেল না।এবার আমার দিকে ফিরে বললেন,

‘ কোথায় ব্যথা পেয়েছিস?মাথায়?’

আমি হ্যাঁ বোধক ইশারা দিতে উনি আমার কপালের উপরের চুলগুলো সরিয়ে চেক করতে লাগলেন।উনার স্পর্শ পেয়ে আমি তো কখন জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যাই সেই প্রমাদ গুনছিলাম।টের পেলাম আমি হালকা হালকা কাঁপছি।উনি কোথাও আঘাতের চিহ্ন না পেয়ে চুলগুলো কানের পেছনে গুঁজে দিয়ে বললেন,

‘ উঠ্। কোনোদিকে না তাকিয়ে সোজা বাড়িতে গিয়ে ব্যথার জায়গায় বরফ লাগাবি।হেঁটে যেতে পারবি?পায়ে চোট লাগেনি তো?’

আমি মাথা নেড়ে সুহানা আপুর সাহায্যে উঠে বসলাম।
আমি যদি বলতাম পায়ে ব্যথা পেয়েছি তাহলে উনি কি করতেন?এই কাঁচা রাস্তায় তো রিকশা ভ্যান কিছুরই দেখা মিলে না।আমাকে কি সবাই চ্যাংদোলা করে বাড়ি নিয়ে যেত?দৃশ্যটা কল্পনা করেই শিউরে উঠলাম।ভাগ্যিস পায়ে কোনো ব্যথা লাগেনি।
দুর্জয় ভাইয়ার অর্ডার মত চারজন আবার ফিরতি পথ ধরলাম।পেছনে না তাকিয়েও শুনতে পেলাম উনি ক্লান্ত গলায় সকলকে বলছেন,

‘ ব্রো আজকের মত এখানেই শেষ।কাল আবার হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে।গুডবায়।’

পেছনে পায়ের পদধ্বনি শুনে বুঝতে পারলাম ভাইয়ারাও বাড়ি ফিরে যাচ্ছে। একটু খারাপ লাগল আমার।শুধু শুধু উনাদের উত্তেজনায় ভরা খেলার আনন্দটা মাটি হয়ে গেল আমার জন্য।ধুর আমিও যে কি।কিন্তু আমার তো কোনো দোষ নেই।হতচ্ছাড়া ওই বলটাই যত নষ্টের গোড়া।তবে বলেরই বা কি দোষ।ব্যাটিং তো করেছে দুর্জয় ভাইয়া তাহলে সব দোষ উনার।কে বলেছে এমন ত্যাছড়াভাবে বল মারতে?হাহ্ নিজের কারণেই নিজেদের খেলা মাটি থেকে কাদা হয়ে গেল।

.

বাড়ি এসে মাথায় ব্যথা পাওয়ার কথাটা সবাই নিঃশব্দে চেপে গেলাম।কারণ সবাই জানে মা যদি এই খবর জানতে পারে তো তুলকালাম কান্ড বাঁধিয়ে দেবে।ভাগ্যিস আঘাত তেমন জোরালো ছিল না।নাহলে জায়গাটা সাথে সাথে আলুর মত ফুলে উঠত।তখন মায়ের থেকে লুকানো বেশ মুশকিল হতো।
বাড়িতে ঢোকার আগে দুর্জয় ভাইয়া শাসিয়ে বলে দিয়েছেন তাড়াতাড়ি যেন ব্যথার জায়গায় ঠান্ডা কিছু লাগিয়ে নিই নাহলে উনি নিজেই ঘুষি মেরে মাথার অপর পাশ ফুলিয়ে দেবেন।এমন হুমকি শুনে মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেল আমার।তাই রিস্ক না নিয়ে উনার আদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হলো।

রুমে ঢুকতে যাব এমন সময় জেরিন আপু আমাকে টেনে নিয়ে গেলেন একপাশে।হালকা অন্ধকারে দেখতে পেলাম আপুর মুখ গম্ভীর। নিচে উঠোনের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলেন,
‘ পূর্ণী তুমি কি ভাবছো যে আমি তোমাকে ইচ্ছে করে ধাক্কা দিয়ে ফেলেছি?’

‘ ছি আপু এসব কি বলছো!আমি এমন কেনো ভাবতে যাব।আমি তো নিজের চোখেই দেখলাম ঘটনাটা তোমার অজান্তেই ঘটেছে।’

‘ তখন দুর্জয় ভাইয়ার কথায় মনে হলো সে ভাবছে আমি ইচ্ছাকৃত সব করেছি।কিন্তু এটা সত্যি নয়।’

‘ হ্যাঁ আপু আমারও ভালো লাগেনি উনার এভাবে ধমক দিয়ে কথা বলাটা।সাধে কি আর উনাকে বদমেজাজি বলি?কিন্তু তুমি কষ্ট পেয়ো না আপু।জানোই তো উনি কেমন স্বভাবের।’

আমার কথায় আপু মলিন হেসে আমার গাল ছুঁয়ে চলে গেলেন।এখন সমস্ত রাগ গিয়ে পড়ছে দুর্জয় ভাইয়ার উপর।কেনো এমন করেন উনি?উনার কথায় যে কেউ হার্ট হতে পারে তা কি একবারও ভেবে দেখেন?
কি মিষ্টি দেখতে জেরিন আপু!কত্ত ভালো ব্যবহার করে সকলের সাথে।আপুর সাথে কোনোরূপ খারাপ ব্যবহার কখনোই বরদাস্ত করব না আমি।
.

কিছুক্ষণের মধ্যেই চারদিকে সন্ধ্যার আঁধার ঘন আসলো।সবাই হাতমুখ ধুয়ে হুড়মুড় করে নেমে আসলো নিচতলায়।এতক্ষণে লক্ষ্য করলাম সমস্ত আকাশ জুড়ে থালার মত এক চাঁদ উঠেছে।চাঁদের নরম আলো ছড়িয়ে পড়েছে বাড়ির আঙ্গিনায়।উঠোন জুড়ে জোছনা ঝকঝক করছে।বাড়ির পাশের ঝোঁপ থেকে একতালে ঝিঁঝি পোকারা ডেকে চলেছে।এমন মনোমুগ্ধকর পরিবেশে কি ঘরে বসে থাকা যায়?
আমি বারান্দার উঁচু জায়গাটা বেছে নিলাম বসার জন্য। আমার দুপাশে আপুরাও স্থান দখল করল।ইমন ভাইয়া ঘর থেকে মোড়া নিয়ে এসে আমাদের মুখোমুখি হয়ে বসল।ভাইয়ার পাশেই মিস্টার দুর্জয় চেয়ারে বসে আছেন বাম হাঁটুর উপর ডান পা তুলে।আকাশের দিকে তাকিয়ে আপনমনে কি যেন ভেবে চলেছেন।উনার ফর্সা গায়ের রঙ চাঁদের আলোয় আরো উজ্জ্বল দেখাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর পর দুহাত টানা দিয়ে চেয়ারে আয়েশ করে হেলান দিচ্ছেন। এই মুহূর্তে অদ্ভুত সুন্দর দেখাচ্ছে উনাকে।কিন্তু হঠাৎ হুঁশ হতেই নড়েচড়ে বসলাম।আমি কেনো উনাকে এমন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছি?আজ কি হলো আমার?হ্যাঁ মানছি উনি দেখতে শুনতে ভালো।একটু নয় অনেকটাই ভালো তবুও কি আমার এমন লুকিয়ে চুরিয়ে দেখা উচিত?
উচিত অনুচিত কিনা জানি না তবে মন বলে যে একটু দেখাতে ক্ষতি কি?

চলবে…

#তোর_অপেক্ষায়
#সামান্তা_সিমি
#পর্ব_১৩

“নিশি রাইতে চান্দের আলো ঘরে ঢুকেছে
বন্ধু তোমার ভালোবাসা আমায় ছুঁয়েছে।”

শুরু হয়ে গেল ইমন ভাইয়ার বেসুরে গলার গান।এত মিষ্টি একটা গানের বারোটা না বাজিয়ে ছাড়লো না সে।ভাইয়ার গান শুনে মনে হলো যেন ঝিঁঝি পোকারাও তাঁদের ডাক থামিয়ে থম মেরে আছে।পরের লাইন গাইতে গেলেই দুর্জয় ভাইয়া ইমন ভাইয়ার পিঠে দুম করে এক কিল বসিয়ে দিয়ে বললেন,

‘ আর একটা শব্দ করলে তোকে আমি হাতপা বেঁধে খালে ফেলে আসবো।ষাড়ের মত চিল্লিয়ে পরিবেশ কেনো নষ্ট করছিস?’

গানের মাঝপথে বাঁধা পেয়ে ইমন ভাইয়া দুঃখী দুঃখী গলায় বলল,
‘ আমি তো পরিবেশ অনুযায়ী গান গাইছিরে দুর্জয়।চাঁদের আলোয় বসে চান্দের গান।ভাব একবার।কিন্তু আফসোস সেটা বোঝার মত তোদের মন এবং মানসিকতা কেনোটাই নেই।’

এমন সময় খালামণি চলে এলেন নাস্তা নিয়ে। সবার জন্য ছোট ছোট বাটিতে সর্ষে তেল দিয়ে ঝাল করে চানাচুর মুড়ি মাখানো।চাঁদের আলোয় বসে সবার সাথে আড্ডা দিতে দিতে মুড়ি খাওয়া এ যেন এক নতুন অভিজ্ঞতার সাথে পরিচিত হচ্ছি আমি।এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে আমার জীবনে কোনো দুঃখ কষ্টের ছিটেফোঁটাও নেই।চারদিকে কত আনন্দ।
জীবন কত অদ্ভুত।মাঝেমাঝে মন খারাপের পাল্লা এতই ভারী হয়ে যায় মনে হয় এর চেয়ে মৃত্যুই ভালো কিন্তু আবার ছোট ছোট কিছু মুহূর্ত এক ছটাক সুখ নিয়ে আসে তখন শুধু বাঁচতেই ইচ্ছে করে।বেঁচে থাকার আনন্দ বোধ হয় এই সুখে ভরা অল্প মুহূর্তগুলোতেই।কষ্ট তো সবার জীবনেই থাকে।

খাওয়ার একপর্যায়ে ইমন ভাইয়া হঠাৎ বলে উঠলেন,
‘ আমাকে তোরা গান গাইতে দিলি না তাহলে এখন তোরা কেউ গা।আমি গাইলে পরিবেশ নষ্ট হয় তোরা গেয়ে দেখিয়ে দে।কিরে দুর্জয় ধর একটা গান।’

এই কথায় আপুরা সবাই কলরব শুরু করল।জেরিন আপুর উৎসাহই যেন বেশি।যাক এটা দেখে ভালো লাগছে যে দুর্জয় ভাইয়ার উপর আপুর আর রাগ নেই।কিন্তু মিস্টার দুর্জয় কি গান গাইবে?
আড়চোখে উনার দিকে তাকিয়ে দেখি চোখেমুখে অসম্ভব বিরক্তি। আপুরা উনাকে খুঁচিয়ে চলেছে গান ধরার জন্য। আপুরা কি বুঝতে পারছে না ওরা ভুল মানুষকে রিকোয়েস্ট করছে। উনি গান গাইবে এটা আমি স্বপ্নেও ভাবতে পারি না।

‘ ঠিক আছে গান না গাইলে অন্যকিছু কর।কবিতা বল।শুনেছি তুই স্কুলে থাকতে অনেক ভালো আবৃত্তি করতে পারতি।আমাদেরকেও শোনা ভাই!’

এবার যেন দুর্জয় ভাইয়ার বিরক্তিভাব কেটে গেল।
উনার চেহারার ভঙ্গিমা দেখে বোঝা যাচ্ছে গান গাওয়া নিয়ে তাঁর আগ্রহ কম কিন্তু কবিতাতে ভালো পারদর্শী।
অহনা আপু উৎসাহ নিয়ে বলল,
‘ ঠিক বলেছো ইমন ভাইয়া।ভাই স্কুলে আবৃত্তির জন্য প্রাইজও পেয়েছিল অনেক।প্লিজ ভাই আমাদের রিকোয়েস্ট টা রাখ।তোমার পছন্দমতো একটা কবিতা বলো।’

দুর্জয় ভাইয়া এবার গা ঝাড়া দিয়ে সোজা হয়ে বসে বললেন,
‘ ওকে ওকে।রাখব রিকোয়েস্ট। ভাবতে দে আমায়।’

উনি কিছুক্ষণ চুপ থেকে হঠাৎ আকাশের দিকে মুখ করে বলে উঠলেন,
“সখী ভাবনা কাহারে বলে
সখী যাতনা কাহারে বলে
তোমরা যে বলো দিবস-রজনী ভালোবাসা
ভালোবাসা
সখী ভালোবাসা করে কয়!সেকি কেবলই যাতনাময়
সেকি কেবলই চোখের জল?সেকি কেবলই দুঃখের শ্বাস?
লোকে তবে করে কি সুখেরই তরে এমন দুঃখের আশ?
আমার চোখে তো সকলই শোভন
সকলই নবীন,সকলই বিমল,সুনীল আকাশ,শ্যামল কানন,
বিশদ জোছনা,কুসুম কোমল-সকলই আমার মতো।
তারা কেবলই হাসে,কেবলই গায়,হাসিয়া খেলিয়া মরিতে চায়-
না জানে বেদন,না জানে রোদন,না জানে সাধের যাতনা যত।”

এটুকু বলে থামলেন দুর্জয় ভাইয়া।সবাই চুপচাপ। আমি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছি উনার দিকে। উনার কন্ঠের মাধুর্য যেন গ্রাস করে ফেলেছে। আজ মনে হচ্ছে উনার মত এমন মধুর কন্ঠ আর কখনো শুনিনি।রবীন্দ্রনাথের এই কবিতাটিও যেন উনার আবৃত্তিতে নতুন করে প্রাণ ফিরে পেয়েছে।কানে এখনো কবিতার লাইনগুলোর রেশ লেগে আছে।
জোছনামাখা এমন চমৎকার একটা পরিবেশে দুর্জয় ভাইয়ার মুখের কবিতা সত্যিই আমাকে মোহিত করে ফেলেছে।বাকিদেরও একই অবস্থা। উর্ধ্বশ্বাসে ওরা সবাই দুর্জয় ভাইয়ার প্রশংসা করে চলেছে।এতকিছুর ভিড়েও খেয়াল করলাম উনার অপলক দৃষ্টি আমার দিকে।হঠাৎ কেনো জানি ভীষণ লজ্জা লাগছে।মাথা নিচু করে ফেললাম। ভাবছি উনাকে যদি কখনো জিজ্ঞেস করতে পারতাম আপনার ওই চোখ দ্বারা কি বুঝাতে চান আমাকে?আফসোস কোনোদিনও এই প্রশ্ন আমি উনাকে করতে পারবো না।

ইমন ভাইয়া খুকখুক করে কেশে দুর্জয় ভাইয়ার পিঠে চাপড় মেরে বললেন,
‘ দুর্জয় ব্রো তা আপনার সখীর সাথে কবে আমাদের পরিচয় করিয়ে দেবেন?পরিচয় না হোক অন্তত ছবি তো দেখাতেই পারেন হু?’

দুর্জয় ভাইয়া হাসলেন।ইমন ভাইয়ার মাথার চুল ইচ্ছেমতো অগোছালো করে দিয়ে বললেন,
‘ অপেক্ষা কর।’

.

রাতে ডিনার শেষে ঘুমাতে যাওয়ার সময় মামা এসে বলে গেলেন কাল নাকি আমাদের মেলায় নিয়ে যাবেন।পাশের গ্রামে আদিবাসীদের সাংস্কৃতিক উৎসব উপলক্ষে প্রতিবছর এইসময়ে মেলা বসে। মেলার কথা শুনতেই আমার খুশি উপচে পড়ার মতো।গ্রাম্যমেলা সম্পর্কে এতদিন শুধু বইয়ে পড়ে এসেছি কখনো স্বচক্ষে দেখা হয়নি।আমি এখনই কল্পনায় দেখতে পাচ্ছি কালকের দিনটাও আজকের মতো নিঃসন্দেহে খুব মজায় কাটবে।তবে আজকের দিনটা আমার মনে গেঁথে থাকবে আজীবন।বিশেষ করে সবাই মিলে চন্দ্রবিলাস করার সময়টুকু।এরপর থেকে যতদিন চাঁদের জোছনা দেখব আজকের সন্ধ্যার কথা বারবার মনে পড়বে।

___________________________

রিকশা থেকে নামতেই চোখে পড়ল রাস্তার পাশে বিরাট মাঠ জুড়ে মেলা বসেছে।সেখানে লোকে-লোকারণ্য।চারদিকে অনবরত কথা বলা এবং চিৎকার চেঁচামেচির গুঞ্জন।কেমন যেন অগোছালো পরিবেশ। তবে আমার মনে আনন্দ টগবগ করছে।অবশেষে মেলাতে এসেই গেলাম।
মেলার ভেতরে ঢোকার পথে বিভিন্ন খাবারের দোকান।প্রত্যেকটা দোকানে মোটামুটি বেশ ভিড়।আমরা মেয়েদের গ্রুপটা খাওয়ার দোকান এড়িয়ে সোজা এগিয়ে চললাম।পেছনে মামা,ইমন ভাইয়া এবং দুর্জয় ভাইয়া।ভেতরে দোকানগুলো সব একে অপরের সাথে হিজিবিজি হয়ে আছে।মাঝখানের জায়গা ফাঁকা।সেখানেই সবাই ঘুরে ঘুরে দোকান দেখছে।কেউ কেউ আবার দোকানির সাথে জিনিসপত্র নিয়ে কঠোরভাবে দামাদামি চালিয়ে যাচ্ছে।ভিড় ঠেলে আমরা ধীরে ধীরে এগিয়ে চললাম।
পেছন থেকে মামা বললেন,
‘ মেয়েরা সবাই হাত ধরাধরি করে থাকো।এখানে হারিয়ে গেলে কিন্তু খুঁজে পেতে মুশকিল হবে।কিছু কিনতে মন চাইলে বলবে আমরা দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করব।’

আমরা সমস্বরে হ্যাঁ বলে দিলাম।ইমন ভাইয়া হাসতে হাসতে বলল,
‘ এই কাজের মেয়েরা সব সাবধানে থাক।চারজনের মধ্যে একজনও যদি হারিয়ে যায় তো বাড়ি পরিষ্কারের কাজে লোক কম পড়বে।সো নিজ নিজ দায়িত্বে সবাই সেইফ থাকার চেষ্টা করো।’

আমি এবং আপুরা প্রসাধন সামগ্রীর দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে কসমেটিকস দেখতে লাগলাম।কেনার মত তেমন কোনো জিনিস চোখে পড়ে না।সবই সাধারণ দেখতে।তবে চুড়িগুলো খুব সুন্দর।
আমার পাশে জেরিন আপু দাঁড়িয়ে কানের দুল দেখছিল।হঠাৎ কানে ফিসফিস করে বলল,
‘ পূর্ণী চলো ওই দোকানটাতে যাই।ওটায় অনেক সুন্দর পার্স ব্যাগ দেখা যাচ্ছে।আমি একটা কিনব।সুহানা আর অহনা আপু এটাতে দেখুক।এটাতে তো তেমন ভালো কিছু নেই।’

আমি ঘাড় ফিরিয়ে ভাইয়াদের দিকে তাকালাম।উনারা আমাদের থেকে কিছুটা দূরে একসাথে কথা বলছেন।জেরিন আপুকে বললাম,
‘ মামা তো বলেছে যেখানে যাব উনাদের যেন আগে বলে যাই।’

‘ আরে সমস্যা হবে না।আমরা তো বাইরে কোথাও যাচ্ছি না।জিনিসপত্র গুলো দেখে আবার চলে আসব।’

‘ আচ্ছা আপুদেরকে বলে যাই।’

‘ বলতে হবে না।আমরা বেশি লেট করব না।’

জেরিন আপুর কথায় সায় দিয়ে ভীড় ঠেলে এগিয়ে চললাম কাঙ্ক্ষিত দোকানের দিকে।এই দোকানে বিভিন্ন ডিজাইনের মেয়েদের ব্যাগ।দেখতে গর্জিয়াস না হলেও এগুলোর গায়ে সুতার কাজ সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে।একটা ব্যাগ নাড়াচাড়া করতে করতে বললাম,
‘ কোনটা কিনবে আপু? ‘

‘ আমি..কোনটা..আচ্ছা তুমি পছন্দ করে দাও তো। দেখি তোমার পছন্দ কেমন হয়!’

আমি হাসিমুখে সব ব্যাগ উল্টেপাল্টে দেখতে লাগলাম।এখানে ডিজাইনের সাথে বিভিন্ন কালারও আছে।অনেক খোঁজাখুঁজির পর লাল রঙের একটা ব্যাগে চোখ আটকে গেল।ব্যাগের চেইন খুলতে খুলতে আপুকে বললাম,
‘ এটা কিন্তু দারুণ।উজ্জ্বল কালার।দেখো এটা।’

পাশ থেকে জেরিন আপুর কোনো সাড়া না পেয়ে তাকিয়ে দেখি আপু নেই। ব্যাগ ফেলে রেখে পেছনে ফিরলাম।আপু নেই মানে নেই।আশেপাশে অচেনা মানুষ গিজগিজ করছে।কেউ কারো দিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না।এবার আমার চেহারায় কালো ছায়া নেমে আসলো।একটু আগেই তো আপু এখানে ছিল। হায় আল্লাহ্ আপুকে যদি না পাই তাহলে মামা তো আমাকে বকতে বকতে শেষ করে ফেলবে।মনে মনে আল্লাহকে স্মরণ করে কিছুটা সামনে এগিয়ে গেলাম যেখানে আপুরা এবং ভাইয়ারা দাঁড়িয়ে ছিল।কিন্তু কই ওরা সব?কাউকেই তো নজরে আসছে না।আমি কি রাস্তা ভুলে গেলাম নাকি?
বেশকিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর মনে সন্দেহ আসলো আসলে জেরিন আপু হারিয়ে যায়নি।হারিয়েছি আমি।এবার যেন বুক ভেঙে কান্না নেমে আসলো।আমার ফোনও তো সাথে নেই।ওটা সুহানা আপুর ব্যাগে রয়ে গেছে।একটা দোকানের পাশে দাঁড়িয়ে আমি অস্থির চোখে চারদিকে তাকাতে লাগলাম যদি চেনামুখ গুলো দেখা যায়।চেনামুখ দূরে থাক কারো ছায়াও তো নেই।শুকনো মুখে আশেপাশের দোকানগুলোতে ঘুরতে লাগলাম।এভাবে প্রায় দশমিনিট কেটে গেল কিন্তু কারো দেখা পেলাম না।আমি কি আজ বাড়ি ফিরতে পারব না?চারদিকে সবাই অজানা।কারো সাথে কথা বলার সাহসও পাচ্ছি না।ঘুরতে ঘুরতে একজায়গায় এসে থামলাম।বহু কষ্টে নিজেকে সামলে রেখেছি এতক্ষণ। এবার না পেরে কেঁদে দিলাম।এমন সময়,
‘ পূর্ণতা?’

পেছন থেকে পরিচিত ডাক শুনতে পেয়ে চমকে উঠলাম।তাকিয়ে দেখি দুর্জয় ভাইয়া।আমার ছোট্ট প্রাণটা যেন নতুন করে জীবিত হয়ে উঠল।কান্না সামলে অস্ফুটস্বরে বললাম,
‘ ভাইয়া…!’

কিন্তু দুর্জয় ভাইয়া গলা ফাটিয়ে ধমক দিয়ে উঠলেন,
‘ থাপ্পড় চিনিস বেয়াদপ?একা একা ঘুরে বেড়ানোর সাহস কে দিয়েছে তোকে?এদিকে আমরা খুঁজে খুঁজে পাগল হয়ে যাচ্ছি আর তুই?আমার অবস্থাটা কি হয়েছিল ভাবতে পারছিস একবার?’

ধমক শুনে আমার চোখের জল আর সামলাতে পারলাম না।উনার মুখের দিকে তাকাতে দেখলাম ফর্সা চেহারায় লাল আভা।চোখ দুটো লালচে।মাথার চুলগুলো এলোমেলো।যদি এই জায়গাটা মেলা না হত তাহলে সত্যি সত্যি বোধ হয় উনি আমাকে চড় মেরে বসতেন।
আমতাআমতা করে বললাম,
‘ আ..আমি তো জেরিন আপুর সাথে একটা দোকানে ঢুকেছিলাম।হঠাৎ দেখি পাশে আপু নেই।ভেবেছি আপু হারিয় গেছে কোথাও।ক..কিন্তু পরে দেখলাম যে আমিই আপনাদের কাউকে খুঁজে পাচ্ছি না।’

দুর্জয় ভাইয়ার চোয়াল শক্ত হয়ে উঠল।একহাতে নিজের চুল খামচে ধরে কিছুক্ষণ জ্বলন্ত চোখে অন্যদিকে তাকিয়ে রইলেন।
আমি ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
‘ আপনাকে এমন দেখাচ্ছে কেনো?জেরিন আপু কোথায়?সে ঠিক আছে তো?’

দুর্জয় ভাইয়া আমার দিকে আগুনের ফুলকির মত চাহনি দিয়ে বলে উঠলেন,
‘সে তো ঠিকই আছে তবে তোকে আমি ওয়ার্নিং দিয়ে রাখছি জেরিন থেকে তুই একশো হাত দূরে থাকবি।মেয়েটা যেন তোর আশেপাশে না থাকে আর তোকেও যেন জেরিনের আশেপাশে না দেখি।তোর নিজের বোকামির কারণে তোর যদি কোনো ক্ষতি হয় বিলিভ মি আমি তোকে জানে মেরে দেব।কথাটা যেন মাথায় থাকে!’

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here