দখিনা প্রেম,পর্ব ১৩,১৪

0
1339

দখিনা প্রেম,পর্ব ১৩,১৪
লাবিবা_ওয়াহিদ
পর্ব ১৩

গত সন্ধ্যা থেকে সেহের নিখোঁজ। সকাল হয়ে গেলো এখন অবধি সেহের বাড়ি ফিরেনি। দাদীমা তো “ফুল” “ফুল” বলে মরণকান্না জুড়ে দিয়েছে। তাকে কেউ থামাতে পারছে না। আবিদ তার বন্ধুদের নিয়ে পুরো গ্রাম খুঁজেও সেহেরকে পায়নি। ওদিকে কবির জোহরার সাথে কথা কাটাকাটি চরম হয়েছে৷

—“কই থাকোস তুই হারাদিন? এই কয়টাদিনের লেইগা মাইয়াটারে আটকায় রাখতে পারলি না? তোর লেইগা আমার এক লাখ টেকা গাঙ্গে গেলো মা**!! ভাইরা বাড়িত থেইকা যাক তারপর দেহিস তোরে কী করি!”

—“বিশ্বাস করেন আমার ধারেকাছেই ছিলো সেহের। হঠাৎ কই চলে গেলো কি জানি। দয়া করে বিশ্বাস করেন আমি সত্যি কইতাসি!”

—“এই চুপ মা**!! আর একটা মিথ্যাও কবি না। ধারেকাছে থাকলে কী উইড়া উইড়া হারায় গেলো! আর একটা শব্দ করবি তো তোরে আমি মাইরা পাতালে পুঁইত্তা রাখমু।”

জুবায়ের আর তার পুরো পরিবার গ্রামে পৌঁছিয়েছে প্রায় ৭টা নাগাগ! এখানে এসে এসব কান্ড দেখে তাদের হুঁশই উড়ে গেছিলো৷ হ্যাঁ জুবায়ের জেঠু এবং কবিরের মেজো ভাই! অফিসের কাজের কারণে প্রায় অনেক বছরই আসেনি, তবে মাঝেমধ্যে মায়ের সাথে দেখা করে যেতেন জুবায়ের। তবে সা’দ বা রুবাই কোনোদিন গ্রামে আসেনি। জুবায়ের কে দেখে দাদীমা তাকে ধরেই অনেকক্ষণ কাঁদলো। আসিয়া(সা’দের মা) চাচীকে জিজ্ঞেস করেছিলো,

—“কে নিখোঁজ ভাবী?”

—“সুফিয়ার মেয়ে।”

—“সুফিয়ার মেয়ে মানে? সুফিয়ার মেয়েও ছিলো?” অনেকটা অবাক হয়ে বললো আসিয়া!

—“হ্যাঁ আছে।”

—“আমাদের কেন জানানো হয়নি?”

—“কবির ভাই চাইতো না ফুলের কথা কেউ জানুক!”

আসিয়া বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো। কবির কেমন বাবা যে কিনা নিজের মেয়েকে আড়ালে রেখেছে। আসিয়ার কেমন রহস্য লাগছিলো। কবির তো মেজো ভাইকে দেখে খুশিতে আত্মহারা, গতকাল রাত থেকে আপ্যায়নের কোনো ত্রুটি রাখেনি সে। রুবাইয়ের কেন যেন বিরক্ত লাগছে এই পরিবেশ। দাদী তো কান্নার চটে রুবাইকে খেয়ালই করেনি। তবে রুবাই বুঝতে পেরেছে এখানকার অবস্থা। তাও সে মাকে বলে নিজের ঘরেই আছে, বের হয় না। কান্নাকাটি তাকে কেমন যেন অস্থির করে দেয়। আসিয়াও বলেছে যেন রুবাই বের না হয়, পরিস্থিতি ঠিক হলে সে নিজেই ডেকে পাঠাবে। রুবাইও বেশি কিছু না বলে সেই যে খেয়ে দেয়ে ঘুম দিয়েছে এখনো উঠেনি। এদিকে জুবায়ের বা আসিয়ার চোখে ঘুম নেই। এই পরিস্থিতিতে কারই বা ঘুম আসবে? তারা কী ভেবে গ্রামে এসেছিলো আর এখন কী হচ্ছে৷ দাদীমা সেহেরের জামা-কাপড় জড়িয়ে কেঁদেউ চলেছে আর দাদীমার চারপাশে পুরো পরিবার দাঁড়িয়ে বা বসে আছে। জেঠু ভাঙ্গা গলায় জুবায়েরকে বললো,

—“তোর ছোট ছেলে আসেনি?”

—“না ভাই, আমাদের অনুপস্থিতিতে ও অফিস সামলাচ্ছে। তবে চিন্তা করিও না দু’দিন পর চলে আসবে!”

জেঠু আর কিছু বললো না, আনমনে সামনে তাকিয়ে রইলো। তার মনেও নানান দুশ্চিন্তা উঁকিঝুঁকি মারছে। আবিদ এখনো বাহিরেই আছে, বাসায় ফিরেনি। হঠাৎ কেউ বাইরে থেকে বলে উঠলো,

—“আরে আমাদের ফুল মামুনি আইসে সক্কলে দেইখা যাও!”

সেহেরের কথা শুনে দাদীমার কান্না থেমে গেলো। সে চাচীর সাহায্যে একপ্রকার ছুটে রুম থেকে বেরিয়ে সদর দরজার দিকে গেলো আর তার পিছে বাকিরা! সদর দরজার সামনে গিয়ে দেখলো ফাতেমা খালা সেহেরকে ধরে আছে। সেহেরকে বেশ দুর্বল দেখাচ্ছে, সাথে মুখটাও শুকিয়ে গেছে। আসিয়া তো মুগ্ধ হয়ে গেলো সেহেরকে। সেহের তার মায়ের চেয়েও সুন্দরী হয়েছে তবে চেহারাটা সুফিয়ার সাথে মিলেনি। সেহেরকে দেখে দাদীমা ছুটে গিয়ে সেহেরকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন। কবির আর জোহরা দূরে দাঁড়িয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। হঠাৎ কী মনে হতেই কবির নিজের কপালে নিজেই চাপড় মারলো! জোহরা তা লক্ষ্য করে অবাক হয়ে বললো,

—“কী হলো আপনে কপালে চড় মারলেন কেন?”

—“আরে বলদি আমি তো এসব ঝামেলার মদ্দৈ ভুইলাই গেসিলাম জুব ভাই আর ভাবীরা এই মাইয়া সম্পর্কে জানতো না। এহন তো ভাই, ভাবী আমারে উল্টা পাল্টা ভাববো। যদি ঢাকায় লইয়া যায় তহন কী হইবো?”

—“আরে চিন্তা কইরেন না, উনি তো এহনো কিছুই কয় নাই। আর ঢাকায় কেমতে নিয়া যাইবো তার আগেই তো আপনে সেহেররে….”

—“ও হ ভুইলাই গেছিলাম। আইচ্ছা বাকিটা পরে দেখতাসি!”

সেহের আসার কিছুক্ষণ পর আবিদ খবর পেয়ে সেওও ফিরে এলো। আবিদ বোনকে অনেকক্ষণ জড়িয়ে ধরে বসেছিলো। সকলে এক প্রশ্ন করেছিলো সেহের কোথায় নিখোঁজ হয়ে গেছিলো আর কীভাবেই বা তার এই অবস্থা হলো।? সেহের উত্তর দেয়ার আগেই তার পাশে থাকা গ্রামের চিকিৎসক ফাতেমা খালাই সকল জবাব দিয়েছেন।

—“ওর দাদীর জন্য আমার কাছে ওষুধ আনতে যাইয়াই জঙ্গলে পইরা গেছিলো তাই হাত-পায় এমন কাটাকাটি। কষ্ট টস্ট কইরা রাস্তায় আসতেই আমার এক লোক ওরে দেখে আর আমার কাছে নিয়া আসে। আমিই সারারাত ওর চিকিৎসা করি, কিন্তু তোমাগো খবর দেয়ার মতো কাউরে পাই নাই তাই খবরও দিতে পারি নাই। তবে চিন্তার কিছু নাই, দুইদিন বিশ্রাম করলেই ঠিক হইয়া যাইবো।”

এসব শুনে সকলেই ভালোভাবে শাসালো সেহেরকে যেন আর এভাবে বাসা থেকে বের না হয়। সেহেরকে পেয়ে সবাই খুশি। রিমন তো সেহেরের পাশেই বসে আছে। সেহেরের প্রতি সকলের আদিখ্যেতা দেখে তপা জ্বলেপুড়ে যাচ্ছে। কারো তাকে দেখার মতো সময় নেই। তপা ধপাধপ পা ফেলে মায়ের কাছে গিয়ে রাগান্বিত হয়ে মিনমিন করে বললো,

—“আর কতোক্ষণ এইসব তামাশা চলবে মা? আমার একদমই সহ্য হচ্ছে না!!”

—“তামাশা শেষ হতে আরও কিছুদিন বাকি তাই সবুড় কর। কথায় আছে না সঁবুড়ে নেওয়া ফলে। আর যদি সহ্য করতে না পারোস উপরে নিজের ঘরে যাইয়া বইয়া থাক! ভাল্লাগছে না তোর এসব ঘ্যানঘ্যানানি।”

তপা তাই করলো, কাউকে কিছু না বলে সে উপরে নিজের ঘরে চলে গেলো। সেহেরকে ধরে সেহেরের ঘরে নিয়ে আসলো ফাতেমা খালা। সেহের হাঁটতে হাঁটতে মিনমিন করে ফাতেমা খালাকে বললো,

—“আপনার মিথ্যা বলা উচিত হয়নি,খালা। সকলকে সত্যিটা জানানো উচিত ছিলো!”

ফাতেমা খালা চাপা স্বরে বলে,
—“কিছুই করার ছিলো না মা। সত্য জানলে আঙুল তুমার উপ্রে উঠবে যেখানে তুমার কোনো দোষই ছিলো না। আর আমরা গেরামের মানুষ, ওনারা ২-৪ লাইন বেশি বুঝবেই। তাই কিছু বলার সাহস হইলো না!”

সেহের আর কিছু বললো না। কান্নার কারণে তার গলা ধরে আসছে। অনেক কষ্টে সে নিজের কান্না থামিয়ে রেখেছে। গতরাতের ঘটনা সেহেরকে অনেকটা অশান্ত করে চলেছে।

—“মামা ওই ছেলেকে ধরতে পেরেছেন?”

—“হ্যাঁ মামু পেরেছি। ওরে এবার নরসিংদী নয় ঢাকার জেলখানায় নিয়া আসছি। আমার আদেশ ছাড়া ওই রাফসান কিছুতেই ছাড়া পাবে না। বেশ কড়াভাবেই কেস দিয়েছি। শালার দুই নম্বরি করার জায়গা নাই!!”

—“ঠিক আছে মামা। খেয়াল রাখবেন যাতে ধোলাইটা বেশি খায়! ওর জন্য আমার অবস্থা হেল হয়েছে।”

—“চিন্তা করিস না ভাগ্নে আমি গিয়ে সামলিয়ে এসেছি তো নাকি?”

—“কোথায় সামলালে? ঝামেলা লেগেছেই তো আগে!”

—“কিছু করার নেই। কিছু মাস পর ডিভোর্স পেপার পাঠিয়ে দিস!”

সা’দ কল কেটে দিলো। কেন জানি সে ডিভোর্সের কথাটা মাথায় আনতে পারছে না। সা’দ এখন শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাচ্ছে। কারীব একদম চুপ হয়ে ড্রাইভ করছে। তার ভেতরেও অশান্তি চলছে। চেয়েছিলো কী আর হয়ে গেলো কী! কারীব নিজের মনে মনে একশোবার নিজেকে বকছে তো বকছেই। এদিকে সা’দের মনে অন্যকিছু চলছে।

১০ মিনিট হলো জ্যামে আছে সা’দ। তখনই সা’দের ফোনে কল এলো। কলটা তানজীলের। সা’দ রিসিভ করে “হ্যালো” বলতেই তানজীল বললো,

—“আর কতক্ষণ সা’দ, আমি তো ওয়েট করছি!”

—“জ্যামে আছি আর ১০ মিনিট লাগবে।”

—“ওকে। এখন তো অন্তত বল কী জন্য জোর করে আমায় দেশে আনালি?”

সা’দ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
—“আমি বিয়ে করেছি ভাইয়া!”

চলবে!!!

দখিনা_প্রেম
লাবিবা_ওয়াহিদ
|| পর্ব ১৪ ||

বাড়িতে নতুন মুখ খেয়াল করেছে সেহের কিন্তু তাদের পরিচয় জিজ্ঞেস করার মতো কাউকে আশেপাশে পাচ্ছে না। দাদীমাকেও যে জিজ্ঞেস করবে তাও করছে না কারণ, দাদীমা তার পাশে বসে কুরআন তিলওয়াত করছে। কিছুক্ষণ আগেই ফাতেমা খালা তার ক্ষতগুলোতে আবার লতাপাতার ওষুধটা দিয়ে বেরিয়ে গেছে। যাওয়ার আগে বলেছে বিকালে আবার আসবে। এইসব ওষুধি লতাবাটার মশলাটা অনেক কাজের। এই ধরণের লতাপাতার মাঝে কোনো কৃত্রিমতা নেই। সেহেরের ঘুমে চোখ বুজে আসছে তখনই আসিয়া ঘরে প্রবেশ করলো সাথে রুবাই। সেহের তাদের চিনতে পারলো না তবুও বিনয়ের হাসি তার ঠোঁটে বিদ্যমান। ওদের দেখে দাদীমা কুরআন বন্ধ করে বিছানা থেকে নেমে কুরআন সঠিক স্থানে রেখে আবার ফিরে আসলো। আসিয়া হাসিমুখে সেহের ডানপাশে বসে থুতনিতে হাত দিয়ে বলে,

—“এখন কেমন আছো?”

—“জ্বী আলহামদুলিল্লাহ ভালো!” বলেই সেহের দাদীমার দিকে তাকালো। দাদীমা সেহেরের দৃষ্টি বুঝতে পেরে বলে,

—“এ তোর মেজো চাচী। আর ওয় আমার আরেক নাতনি রুবাই!”

সেহের এতক্ষণে তাদের চিনতে পারলো। কোনো মেহমান আসলেই সেহেরকে রুমে বন্ধ করে রাখতো, রুম থেকে বের হলেই কঠিন সাঁজা পেতে হতো। তাই কে আসতো কে যেতো তা সেহেরের ধারণার বাইরে ছিলো। একবার তপাকে ছেলেপক্ষ দেখতে এসেছিলো, সেহের তখন কলেজ থেকে ফিরেছে। ছেলে তো সেহেরকে দেখে মুখের উপর বলে দেয় সে তপাকে নয় এই মেয়ে মানে সেহেরকে বিয়ে করবে। এ নিয়ে জোহরার সে কী রাগ, এমন বিত্তশালী ছেলেকে জন্য নিজের মেয়ের জন্য পছন্দ করে রেখেছিলো সেখানে কিনা এই ছেলে অন্যের মেয়েকে পছন্দ করলো! সেদিন হাজার বুঝিয়েও ছেলেপক্ষ রাজি হয়নি তপাকে বিয়ে করার জন্য, এরপর আর কী বিয়ে ভেঙ্গে গেলো। জোহরা তো রেগে সেদিন গরম খুন্তির ছ্যাঁক দিয়েছিলো সেহেরের পিঠে। যার ফলে সেহের ১৫ দিন ব্যথায় বিছানা থেকে উঠতে পারেনি। অথচ সেহের জানতোও না তার অপরাধ কী ছিলো। তখন সেহেরের পরীক্ষা চলছিলো, সেই পরীক্ষা দিতে না পারায় সেহেরের আরও এক ক্লাস গ্যাপ গেছে। অতীতের ঘটনা চিন্তা করে সেহের একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। রুবাই সেহেরের পায়ে কাছে বসে বলে,

—“তোমাকে সেহের বলবো নাকি ফুল?”

—“আপনার যেটা ডাকতে ইচ্ছা করে আপু!”

—“আপনি’ কী হ্যাঁ? তুমি বলবে! আমি তো তোমারই বোন। আচ্ছা তাহলে সেহের ডাকি? সকলেই তো ফুল ডাকে!” মিষ্টি হেসে বললো রুবাই! আসিয়া রুবাইয়ের কথার মাঝে বলে উঠে,

—“আমি কিন্তু ফুল ডাকবো। আমার তো ওকে গন্ধরাজ ফুল বলতে ইচ্ছে করে!!”

আসিয়ার বাচ্চামো দেখে দাদীমা হাসলো। সুফিয়াও এমন চঞ্চল ছিলো। তার মেজো বউমাও যে সোনার টুকরা তা আজ বুঝতে পেরেছে। চারজন অনেক কথা বললো, আড্ডা দিলো। এর মাঝে বড় চাচী নাস্তাও দিয়ে গেছে। আবিদ গেছে ভার্সিটি। আবিদের ভার্সিটিটা শহরে পরেছে। যেতে আসতে প্রায় এক ঘন্টার মতো লাগে। দাদীমার থেকে একে একে সবটা শুনলো রুবাই এবং আসিয়া, যে এতটাদিন কতোটা অবহেলা আর অত্যাচার সহ্য করেছে সেহের। সেহের বলতে না দিলে দাদীমা ধমক দিয়ে বলে,

—“চুপ কর, বেশি কুয়ারা করবি না, ওরা আমার আপনমানুষ, ওগো না কইলে কারে কমু!”

বলেই আবার সব ঘটনা খুলে বলা শুরু করে। সব শুনে আসিয়া এবং রুবাই বাকরুদ্ধ হয়ে যায়। কতোটা পাষাণ হৃদয়ের হলে এরা এত নিকৃষ্টভাবে একটা অসহায় মেয়েকে অত্যাচার করতে পারে। দুজনের মনেই বেশ মায়া জম্মালো সেহেরের জন্য। মেয়েটা কতো নিখুঁত অভিনয়ে নিজের কষ্টগুলোকে চেপে রাখতে পারে তা-ই অবাক করার বিষয়! রুবাইয়ের হঠাৎ কী মনে হতেই মাকে বললো,

—“মা ভাইয়ের খবর কী কাল থেকে নিয়েছো?”

—“এই রে! পরিস্থিতির চাপে সা’দের কথা তো ভুলেই গেছি।”

—“সা’দটা কেডা আবার বউমা?”

—“আমার ছোট ছেলে মা। ও কাজের চাপে আসতে পারেনি। নাম সা’দ বিন সাবরান।”

—“মাহশাল্লাহ কী সুন্দর নাম আমার নাতিডার! ওরে আইতে কইয়ো জলদি, নাতিডারে তো হেই ছুডোবেলায় দেখসিলাম!”

—“হ্যাঁ দাদী দেখবাই তো। তোমার নাতি কিন্তু নায়কের মতো হয়েছে, লাইন টাইন আবার মারিও না।” টিপ্পনী কেটে বললো রুবাই। আসিয়া রুবাইয়ের হাঁটুতে হালকা চড় মেরে বললো,

—“এসব কোন ধরণের কথা রুবাই!”

—“আহা! মারো ক্যা! নাতনি তো আমারে সাবধান কইরা দিলো। আইচ্ছা দেহুম নে আমার নাতি কেমন নায়ক!”

রুবাই আর দাদীমা অট্টহাসিতে ফেটে পরলো। এদিকে সেহেরের অজানা আতঙ্কে বুকটা ঢিপঢিপ করছে। বারংবার গতরাতের ঘটনাগুলো তার চোখের সামনে ভাসছে৷ সেহের চোখ বুজে কয়েকবার লম্বা শ্বাস ফেললো।

—“তা নাতজামাই কই নাতনি। হেয় কী আহে নাই?”

—“দাদী উনি তো ইতালিতে থাকে। কীভাবে আসবে!”

দাদীমা বাচ্চার কথা জিজ্ঞেস করতে গিয়েও জিজ্ঞেস করলো না কারণ, তার ছেলে আগেই দাদীমাকে রুবাইয়ের অবস্থা ব্যাখ্যা করেছে। সে একজন মা, সে নিজেও বুঝে সন্তান হারানোর কষ্ট কী পরিমাণ হতে পারে তাই কিছুই না বলে স্বাভাবিক কথা বলছে। এদিকে আসিয়া সা’দকে ফোন করে সা’দের খবরাখবর নিলো।

সা’দের অপজিট চেয়ারে গালে হাত দিয়ে তানজীল আনমনে বসে আছে। কারীব আরেকটা চেয়ারে চুপচাপ বসে আছে। তিনজনের মাঝেই নিরবতা বিরাজমান! নিরবতা ভেঙ্গে তানজীল বললো,

—“এখনো কিন্তু বলিসনি কীভাবে এবং কার সাথে বিয়ে হলো!”

সা’দ মুখ থেকে হাত সরিয়ে এদিক সেদিক তাকিয়ে মলিন কন্ঠে বলে উঠলো,

—“দুর্ঘটনাবশত বিয়েটা হয়ে গিয়েছে ব্রো!”

—“ক্লিয়ার করে বল!”

সা”দ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সামনে থাকা গ্লাসের পানিটা পুরোটা শেষ করে গতরাতের ঘটনা বলা শুরু করলো,

ফ্যাশব্যাক,

সা’দ কারীবকে ফোনে পেতে বললো,
—“কারীব জলদি জঙ্গলের ভেতর আসো, জঙ্গলের শেষ পথেই একটা মাটির কুঁড়েঘর আছে সেখানে চলে আসো!”

—“কিন্তু স্যার আপনি সেদিকে কী করছেন?”

—“আহ! কাম ফাস্ট, বাকিটা পরে বোঝাবো!”

বলেই সা’দ ফোন কেটে তার মায়াবীনির দিকে এগিয়ে গিয়ে তার পাশে বসে। সা’দ বুঝতে পারছে না সেহেরকে কোলে নেয়াটা ঠিক হবে কি না! হাজারো দ্বিধাবোধ তাকে ঘিরে ধরলো। শেষে নিজের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছে সেহেরকে কোলে নিলো আর কুঁড়েঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। সেখান থেকে বেরিয়ে কিছুদূর যেতেই প্রায় অনেক মানুষ তাকে চারপাশ থেকে ঘিরে ধরলো। প্রায় অনেকের হাতে আগুনের মশাল ছিলো। সেই মশালের আলোতে সকলে চোখ বড় বড় করে সা’দ আর সেহেরকে দেখছিলো। সা’দের সামনে থাকা সেই মহিলাটা তার পাশের লোকটাকে উত্তেজিত হয়ে বললো,

—“দেহেন, দেহেন! আমি কইসিলাম না এরা কোনো নষ্টামি করসে, এহন মোর কতা বিশ্বাস হইসে তো? মাইয়াটারে কী অবস্থা করসে দেহেন!”

লোকটির চেহারায় মুহূর্তেই রাগ স্পষ্ট হলো। সা’দ মহিলাটির কথায় ভ্রু কুচকে বলে,

—“আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে আমি এই মেয়েটিকে বাঁচা..।”

—“এই চুপ! চোরের মায়ের বড় গলা। আমাগো গেরামে নষ্টামি করবা আবার এহন হালি হালি মিছা কথা কও। মাইয়াটারে এসব তুমি না করলে কী পশুপাখি আইয়া কইরা দিয়া গেছে? মিছা বলার জায়গা পাও না! দেইখা তো ভালা ঘরের মানুষই মনে হয় কিন্তু ভিত্রে ভিত্রে ছিঃ ছিঃ ছিঃ!” মহিলার পাশে থাকা লোকটি বললো। সা’দের তো মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। কিন্তু সে কিছু বলার আগেই লোকেরা তাকে ধরে কোথায় নিয়ে গেলো। সকলে সা’দকে জোর করলে সা’দ সেহেরকে কোল থেকে নামিয়ে দিলো আর কোল থেকে নামাতেই কিছু মহিলা ধরে সেহেরকে কোথাও নিয়ে গেলো। এদিকে বিচার বসলো। সকলে সা’দকে যা পারছে বলেই চলেছে আর সা’দ প্রতিবাদ করতে গেলেই তাকে ধমক দিয়ে থামিয়ে দিচ্ছে। এদিকে এতো এতো অপমানে সা’দের চোখদুটো টকটকে লাল বর্ণ ধারণ করেছে। কেউ কখনো তাকে কিছু বলার সাহস পায়নি সেখানে সামান্য ভুল বুঝাবুঝিতে তার চরিত্র নিয়ে এতো খারাপভাবে অপমান হতে হবে তা কখনো কল্পনাও করেনি।
সা’দকে বারবার জিজ্ঞেস করা হচ্ছে সে কেন এইসব নষ্টামি কেন করেছে কিন্তু সা’দ বারবার একই উত্তর দিয়েছে যে, সে কিছুই করেনি। একসময় এক মুরব্বি রেগে বলে,

—“এই তুর অভিভাবক ডাক! তারপর তোর ব্যবস্থা করতাসি!”

সা’দ তৎক্ষনাৎ তার মামাকে ফোন করে সব ঘটনা খুলে বললো। মামা তৎক্ষনাৎ রওনা হলো গ্রামের উদ্দেশ্যে। সা’দের মামা নরসিংদী শহরেই থাকে তাই ৪০ মিনিটের মতো লাগবে তার আসতে। ১০ মিনিট পেরিয়ে গেলেও যখন সা’দের অভিভাবক আসলো না তখন তারা আরও ক্ষেপে গেলো। তখনই এক মহিলা এসে খবর দিলো যে মেয়েটার মানে সেহেরের জ্ঞান ফিরেছে। সকলে সা’দকে ধরে নিয়েই সেহেরের কাছে গেলো। এক লোক বললো, “এবার তোর মিছা কথায় কোনো কাম হইবো না, যা বলার ওই মাইয়াই বলবে!”

সা’দ চুপচাপ শুনলো, উত্তরে কিছু বললো না। তার কিছু বলার ইচ্ছাও নেই আপাতত। সেহের এবং সা’দ সামনাসামনি বসে আছে। সেহেরকে নানান প্রশ্ন করলে সেহের অনেক কষ্টে বলে,

—“উনি আমার কো..কোনো ক্ষতি ক…করেননি!”

লোকটি কিছু বলার আগেই আরেক মহিলা বলে উঠলো,

—“দেহেন মাইয়াটা ভয় পাইয়া আছে। এই পোলায় কেমনে তাকায় আছে মাইয়াটার দিকে আর মাইয়াটা প্রাণের ভয়ে কিছু কইতাসে না। দেহো মা তুমি ভয় পাইয়ো না কও এই পোলায় তোমার কী ক্ষতি করসে?”

সেহেরের শরীরের যন্ত্রণায় কথাই বলতে পারছে না৷ তাই সে থেমে থেমে আবারও উত্তর দিলো সা’দ নির্দোষ। কিন্তু গ্রামের মানুষ বুঝলো না, সকলের ধারণা সেহের সা’দের ভয়ে মিথ্যা ভলছে তাইতো সেহের বারবার তোতলাচ্ছে। কেউ একবারের জন্যেও চিন্তা করছে না সেহের অসুস্থ সে কথা বলার মতো অবস্থায় নেই। কেউ না বুঝলেও একজন বুঝলো সে আর কেউ না সা’দ। সা’দ সকলকে থামানোর চেষ্টা করে বললো,

—“এতো প্রশ্ন করা বন্ধ করুন, দেখছেন না সে অসুস্থ তাও কেন বারবার কথা বলার জন্য জোর করাছেন??? সবকিছুর একটা লিমিট আছে!”

—“এই পুলা তুমি চুপ থাকো, নিজের দোষ ঢাকার জন্য উইঠা পইরা লাগসো তাইনা? তবে তুমিও জাইনা রাখো এতো সহজে তুমারে আমরা ছাইড়া দিমু না।”

তখনই আরেকজন মহিলা নাক সিটকে বলে উঠলো,

—“আমার তো মনে হয় এরা শহরের পুলাপাইনগো মতো অবৈধভাবে মিলামেশা করসিলো!”

—“আমিও একমত, পুলা-মাইয়া দুইডায় সমান অপরাধী! ধইরা ওগো বিয়া দাও, নষ্টামি এক্কেবারে ছুইট্টা যাইবো!”

—“মানে কী পাগল আপনারা? বলছি না আমার মামা আসছেন সে আসলে সব তো হবেই নাকি!”

—“তুমার ওই মামা ফুমা দিয়া আমাগো কাজ নাই, তুমাগো আমরা বিয়া দিমুই ব্যাস! তখন নষ্টামীর ফল হারে হারে টের পাইবা বুজ্জো!”

বলে মুরব্বি কিছু লোককে কাজি ডাকানোর ব্যবস্থা করলো। সা’দের মামা আসার আগেই জোর-জবরদস্তি করে বিয়ে পড়ানো হলো। বিয়ে পড়ানোর জন্য দুজন লোক ইয়া মোটা গাছের ডাল আর গরম পেরেক হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। সা’দ যদি কবুল না বলে তাহলে এগুলা দিয়ে তাকে মেরেই ফেলবে বলে হুমকি দেয়া হলো৷ আর সেহের যদি বিয়েতে রাজি না হয় তাহলে তাকে নগ্ন করে পুরুষদের মাঝে ছেড়ে দেয়ার হুমকি দেয়। এমন কঠিন পরিস্থিতিতে দুজনের একজনও কখনো পড়েনি। আর একটা মেয়ের কাছে তার সম্মানটা বেশি জরুরি। তাই দুজনেই কঠিন পরিস্থিতির ফাঁদে পড়ে অবশেষে “কবুল” বললো। কবুল বলার পরপর সেহের হুঁ হুঁ করে কেঁদে উঠলো। এদিকে সা’দ কঠিন ক্রোধে ফেটে পরছে। এক লোক তো খুশিতে বলে উঠলো,

—“আলহামদুলিল্লাহ, আমরা আমাগো গেরামরে পাপমুক্ত করলাম।”

বিয়ের প্রায় ৫-৭ মিনিট পরে সেখানে গ্রামের মহিলা চিকিৎসক ফাতেমা খালাকে ডাকেন সেহেরের চিকিৎসার জন্য। ফাতেমা এসে সেহেরকে দেখেই চিনে ফেলে এবং সকলকে বলে সে সেহেরকে চিনে। এবং সেহেরের পুরো পরিচয়টাও সকলের কাছে বললো। কিন্তু সা’দের সেদিকে হেলদোল নেই, সে একমনে চিন্তা করেই চলেছে তার সাথে ঠিক কি কি হলো! সা’দ ভাবতেও পারেনি তার জীবনটা এভাবে মোড় নিবে। কিছুক্ষণ বাদে সা’দের মামা আসে সাথে কারীবও ছিলো। সা’দের মামা যখন নিজের পরিচয় দিলো তখন গ্রামের সকলেই চুপ ছিলো। সা’দ সেই সুযোগে সকলকে সবটা খুলে বলে এবং সেহেরের সাথে কী কী ঘটেছে সেটাও খুলে বলে। সবটা শুনে গ্রামের মানুষ বাকরুদ্ধ! তার চেয়েও বেশি অবাক হয় সা’দের পরিচয় জেনে। এতো বড় আর্টিস্টের সাথে এমন নিকৃষ্ট আচরণন করেছে ভাবতেই তারা ভয়ে কাচুমাচু হয়ে আছে। সাথে এও ভয় পাচ্ছে যদি তাদের পুলিশে ধরিয়ে দেয়। কিন্তু তাও তারা সে ভয় প্রকাশ না করে বলে,

—“এহন কিছুই করার নাই! বিয়া যেহেতু হইসে সেহেতু আমাগো হাতে আর কিছু নাই! এহন তুমার বউ নিয়া বিদায় হও, আর যাতে এমুখো না দেহি!”

—“সে তো যাবোই! আপনাদের মতো নিকৃষ্ট মানুষদের গ্রামে থাকার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে আমার নেই। ”

বলেই ফাতেমা খালার সাহায্যে সেহেরকে নিয়ে সেই বিচার বসার জায়গাটি থেকে চলে আসে। ফাতেমা খালার বাসায় সেহেরকে রেখে সা’দ বলে,

—“আমি ঢাকায় রওনা হচ্ছি, আপনি দয়া করে এসব ঘটনা ওদের গ্রামে বলবেন না এমনকি তার পরিবারকেও না। আমি চাই বিয়ের ঘটনাটা সকলের কাছে গোপন থাকুক। আপনি সেহেরকে সুস্থ করে তার বাড়িতে পৌঁছে দিবেন। আর এই হলো আমার কার্ড যখন যা টাকা লাগে আমাকে ফোন করে জানাবেন আমি আপনাকে টাকা পাঠিয়ে দিবো। আর এখন সেহেরের চিকিৎসার জন্য টাকা দিয়ে যাচ্ছি আপনি রাখুন!”

ফাতেমা খালা মুগ্ধ হয়ে যায় সা’দের কথায়। এতক্ষণ এতো অপমানের পরেও সে তার সেহের মায়ের খেয়াল রাখছে ভাবতেই তার আনন্দ অনুভব হচ্ছে। ফাতেমা খালা শুধু কার্ডটা নিয়ে মলিন হেসে বলে,

—“টাকা-পয়সা লাগবো না বাবা। সেহের মা আমার মাইয়ারই মতো। আর তুমি চিন্তা কইরো না, তুমাগো বিয়ার কথা কেউ জানবো না এই ফাতেমা তুমারে কথা দিলাম!”

ফাতেমা খালা টাকা নিতে আপত্তি করলেও সা’দ জোর করে তার হাতে দুই হাজার টাকা গুজে দিয়ে চলে গেলো। যাওয়ার আগে সা’দ একবার সেহেরের দিকে তাকালো। সেহেরও তাকিয়ে ছিলো যার ফলে দুজনের চোখাচোখি হয়ে যায়। সেহের সঙ্গে সঙ্গে দৃষ্টি নত করে ফেলে। “সেহের” নামটা কাজী সাহেবের মুখে শুনেছিলো সা’দ।
সারারাত সেহের ফাতেমা খালার সেবা পেলো। সেহের এখন অবধি জানে না ফাতেমা খালাকে যে সা’দ টাকা দিয়ে গেছে।

সব শুনে তানজীল বাকরুদ্ধ! তানজীল অবাক হয়ে বলে,

—“তাহলে কী এখন ডিভোর্সের চিন্তাভাবনা
করছিস?”

—“আরে না! আমার সময় চাই।”

তানজীল সেই মুহূর্তে গ্লাস থেকে পানি খাচ্ছিলো। সা’দের জবাব শুনে তার মুখের পানি গলায় আটকে সব ফ্রুত করে বেরিয়ে গেলো। কারীবও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে সা’দের দিকে। সা’দ তাদের এরূপ দৃষ্টি লক্ষ্য করে বললো,

—“কী সমস্যা?”

—“মানে সিরিয়াসলি? যেই সা’দকে কোনোদিন কোনো মেয়ের পাশে দেখা গেলো না সে কিনা অচেনা একটা মেয়েকে বিয়ে করে এখন ডিভোর্সের জন্য না করছে? মেয়েটা কী সুন্দরী নাকি সা’দ? প্রেমে-ট্রেমে পড়লি নাকি?” শেষের কথাটা টিপ্পনী কেটে বললো তানজীল। সা’দ মুচকি হেসে বললো,

—“গভীরভাবে পড়েছি!”

সা’দের কথায় দুজন আরেকদফা বিষম খেলো। দুইজনের রিয়েকশন দেখে সা’দ হুঁ হাঁ করে হেসে দেয়। হাসি থামিয়ে সে নিজেই আবার বলা শুরু করলো,

—“প্রেমের ছন্দ লিখেও প্রেম-ভালোবাসাকে বরাবরই অবিশ্বাস করতাম। বিশ্বাস করতাম এইসব প্রেম-ভালোবাসা শুধু গল্প-উপন্যাস এবং সিনেমাতেই হয়, বাস্তব জীবনে এর আয়োজন খুবই ঠুনকো। প্রেম মানেই ধন-দৌলত, এক আকাশ কষ্ট এবং ধোঁকাবাজি যেগুলোর এক অংশকেও আমি সহ্য করি না। কিন্তু কে জানতো, আমিও কোনো একসময় এই প্রেম নামক জালে ভয়ংকরভাবে জড়িয়ে যাবো? আজ মন চাচ্ছে প্রেমিকপুরুষদের তালিকায় প্রথম নামটা যেন আমার থাকে। আজ খুব করে চাইছি, খুব!! গভীরভাবে প্রেমে পড়েছি ঠিক দখিনা হাওয়ার মতো। দখিনা হাওয়া যেমন মনকে প্রফুল্ল করে দেয় ঠিক তেমনই আমার “দখিনা প্রেম।”

—“হইসে ভাই থাম! আমাদের তোর এই বিষয় আর হজম হচ্ছে না!”

—“ঠিক! আমারও বিয়ের ব্যাপারটা একই রকমভাবে হজম হচ্ছে না। তাই আমার সময় চাই। সময়ের সাথে সাথে আমার সবটা হজম হয়ে যাবে আশা করছি।”

—“তো এখন আমি কী করবো? কোথায় যাবো? তোর বোনকে কল করলে তো বাংলাদেশি নম্বর দিয়ে কল দিতে হবে। যদি সে জানে আমি বাংলাদেশে থেকেও তার সাথে দেখা করিনি, বউ আমার সাথে কেলেঙ্কারি বাধিয়ে ফেলবে!”

—“তো যাও গ্রামে। সেখানে তোমার বউয়ের সাথে ইদ করিও এড্রেস আমার কাছে আছে, রুবাই আপু মেসেজ করে দিয়েছিলো!”

—“না চান্দু তোকে ছাড়া আমার যাওয়া চলবে না। তুই না গেলে আমিও যাচ্ছি না।” তানজীলের কথার মাঝে কারীব বলে উঠলো,

—“তাহলে স্যার, আমি ছুটিতে পরিবারের সঙ্গে ইদ কাটাই?”

—“ঠিক আছে। তোমার আজ থেকে ছুটি। সাব্বিরকে জানিয়ে দিবা আজকে শুটিং প্লেস দেখে কাল থেকে ওরও ছুটি। আমি নাহয় এখন আমার দুলাভাইয়ের ইচ্ছা পূরণ করি!”

—“আচ্ছা স্যার জানিয়ে দিবো। আসি!”

বলেই কারীব চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে গেলো। সা’দ ফোন বের করে এড্রেস দেখতেই থম মেরে গেলো।

চলবে!!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here