দখিনা প্রেম,পর্ব ২১
লাবিবা ওয়াহিদ
ইদের দিন সকালে সা’দ পাঞ্জাবির বোতাম লাগাতে লাগাতে ভুলবশত রুবাইয়ের ঘরের জায়গায় তপার ঘরে ঢুকে পরে। কিছু বলতে সা’দ সামনে তাকাতেই দেখলো সেহের কী সুন্দর করে ঘুমিয়ে আছে। ঘুমন্ত মুখে সেহেরকে যেন আরও দশগুণ মায়াবী লাগছে। সা’দ জানে না এই মেয়েটিকে উপরওয়ালা এতো নিখুঁত সৌন্দর্য কীভাবে দিলো? যেমন রূপ তেমনই তার মায়া। একদম চোখ ধাঁধানো। সা’দ যেন নেতিয়ে পরলো সেহেরের রূপে। কেমন ঘোর লেগে আসছে তার। তখনই নিচে ডাকাডাকির শব্দ শোনা গেলো আর সা’দের ঘোর কেটে গেলো। সেহেরকে একপলক দেখে সে নিচে চলে গেলো। অতঃপর সকল ছেলেরা ইদের জামাতের জন্য বেরিয়ে গেলো।
★
—“দাদী, পান খাচ্ছো?”
—“হ নায়ক, খাইতাসি। তবে এবারের পানগুলা কেমন জানি, এই কবিররায় ভালা পান কী পায় না ধুর ধুর!”
—“দাদী কিছু কথা জানার ছিলো!”
—“বল তুই নায়ক কী কবি?”
—“আসলে দাদীমা সেদিন বললে না সেহেরের মাকে ছোট চাচা মেরেছে। কাহীনি কী বলবে?” মুহূর্তেই দাদীমার হাস্যোজ্জ্বল চেহারা মলীন হয়ে গেলো। ধীরে ধীরে পান চিবুতে চিবুতে বলা শুরু করলো,
—“ফুলের জম্মের পর সুফিয়া ওরে নিয়া আলাদা সংসার করতো। তার কারণ আমি প্রথমে না জানলেও পরে জানসি যে আমার বইনের মাইয়া জোহরার লগে কবির পরকিয়ায় লিপ্ত। অথচ মাইয়াটা কখনো আমারে এই কথা জানায় নাই। সুফিয়ার বাপ-মা ছিলো না তাই সে পাশের গ্রামে সুফিয়ার এক কাকার বাড়িত থাকতো, একদিন ফুলরে কবির ধইরা নিজের কাছে আইন্না রাখসিলো। সুফিয়া খবর পাইয়া কবিরের কাছে গেছিলো। হেইদিন আমি ছিলাম আমার বড় পুঁতের বাড়ি। কবির আর সুফিয়ার ভিত্রে কথা কাটাকাটি হইতে হইতে একসময় কবির রাইজ্ঞা মাইডারে থ্রাপাইয়া হুতাইয়া লাইসে। তারপর গলায় পারা দিয়া!”
বলেই দাদীমা হুঁ হুঁ করে কেঁদে উঠলো। সা’দ চুপ করে বসে রইলো কিছু বলার মতো অবস্থা তার নেই। দাদীমা কিছুক্ষণ পর আবার বলে উঠে,
—“সুফিয়ার খুন আবিদ নিজ চোক্ষে দেখসে। দেইখা আমারে যাইয়া বলসে। আমি এইসব হুইন্না তহনই ছুইট্টা গেছি কিন্তু কবির বা সুফিয়ারে কোনোহানে পাইলাম না। রাইতে পুলিশরে খবর দিতেই আমাগো দীঘিতে সুফিয়ারে ভাইসসা থাকতে দেখসে। পুলিশরে সব ঘটনা খুইলা বললেও তারা কয় প্রমাণ ছাড়া কিছুই করতে পারবো না। তাই কিছুই হইলো না, সবাই ধইরা নিলো সুফিয়া নিজে মরসে। দুঃখের কথা আর কী কমু নাতি! হেই থেইকা আমার ফুলডা কতো অত্যাচারিত হইসে। জম্মের পর থেইকা বহুত কষ্ট সইসে আমার ফুল। আমার ফুলরে আল্লাহ’য় কবে সুখ দিবো! ওর সুখ না দেখলে যে মইরাও শান্তি পামু না।”
—“আজ যে তোমার ফুলের আরেক বিপদ দাদী, কিন্তু আফসোস তোমাদের বলতে পারলাম না। কিন্তু চিন্তা করিও না, তোমার ফুল আবার সুখী হবে, অনেক অনেক সুখী হবে। এখন শুধু সঠিক সময়ের অপেক্ষা।”
এদিকে সেহের বিছানার সাথে হেলান দিয়ে বসে আছে। সেদিনের সা’দের সাথে কাটানো মুহূর্তটুকু সেহের এক মুহূর্তের জন্যেও ভুলতেও পারছে না। সা’দ সেদিন সেহেরকে অনেক কিছু বুঝিয়েছে এবং সেহের বুঝেছেও৷ কারণ, তার মা তাকে কথা দিয়েছে এই বলে সে ততোদিন ওদের কিছু বলতে পারবে না যতোদিন না সেহেরের বিয়ে হচ্ছে। সেহের তো বিয়ে করেছে তার মানে সে নিশ্চয়ই তার মায়ের ওয়াদাভঙ্গ করবে না। এই কয়েকদিনে সেহের ভেতরে ভেতরে নিজেকে শক্ত করেছে এবং নিজের মনে সাহসও জুগিয়েছে। সেহের এখন আর অন্যায় সহ্য করবে না, সবার আগে প্রয়োজন নিজেকে ভালোবাসা, অন্যের স্বার্থে নিজেকে বিসর্জন দেয়ার মতো মেয়ে সেহের নয়। তাই এখন থেকে অন্যায় দেখলেই তার মুখ চলবে৷ ভেবেই সেহের একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো৷
★
—“আরে তপা যে!”
তপার রাস্তা আটকিয়ে কথাটা বললো মানজু। তপা বেশ বিরক্ত হলো মানজুকে দেখে। তপার বিরক্তিমাখা মুখ দেখে মানজু মনে মনে হাসলো। অতঃপর নিজেকে সামলে বললো,
—“কই যাওয়া হচ্ছে হু?”
—“তোমাকে বলবো কেন? আমি যেখানে ইচ্ছা সেখানে যাবো!”
—“নিজের বাড়ির খবর রাখো?”
—“মানে?” ভ্রু কুচকে প্রশ্ন করলো তপা। মানজু হাত দিয়ে ইশারা করে তপাকে কাছে ডাকলো৷ তপা মানজুর দিকে এগিয়ে যেতেই মানজু ফিসফিস করে কিছু বললো। এতে তপার চোখ বড়ো বড়ো হয়ে গেলো।
—“সত্যি?”
—“হ্যাঁ।”
—“কিন্তু মা যে বললো সা’দের সাথে আমার বিয়ে হবে?”
—“আরে মূর্খ মেয়ে, তোমার মা আর বাবা তো ফুলকে তাড়ানোর জন্য এসব করছে। এখন তুমি ভেবে দেখো তো ফুলের ইয়া বড় বাড়িতে থাকবে কিন্তু তুমি সাধারণ কাঠের বাড়িতে থাকবে৷ এটা কী কোনোদিন সম্ভব বলো? কই তুমি আর কই ফুল। ওর মতো মেয়ের যোগ্যতা আছে নাকি এতো বড়ো বাড়িতে থাকার? জলদি বাসায় যাও আর খেয়াল রাখো!”
—“তোমার কথায় যে বিশ্বাস করবো এটা তুমি ভাবলে কী করে?”
—“বিশ্বাস হলে নিজে গিয়ে দেখো। বিকালে শুনেছি সকলে আদিবা আপুর শ্বশুরবাড়িতে যাবে তখন সকলের ফাঁকে এসব করবে!”
—“না আমি কিছুতেই হতে দিবো না। মা আমার সাথে এতোবড়ো প্রতারণা করবো, এর ফল তো তাদের ভোগ করতেই হবে!”
বলেই তপা রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে উল্টো দিকে হাঁটা দিলো। তপা চলে যেতেই মানজু ফিক করে হেসে দিলো। অতঃপর মানজু ফোনে কারো নাম্বার ডায়াল করে বললো,
—“কাজ হয়ে গেছে, এখন ফাইনাল খেলার পালা।”
★
জোহরা যেন রাগে ফুঁসেই চলেছে। এই কয়েকটা দিন অনেক অত্যাচার করেছে কবির তার উপর। জোহরা কবিরের দিক চিন্তা না করে সেহেরকে সবকিছুর জন্য দোষারোপ করছে। সে নিশ্চিত যে সেহেরই এসব করছে। বাড়িভর্তি মানুষের জন্য সেহেরকে না পারছে গিলতে, না পারছে ফেলে দিতে। ঘাড়ের উপর উঠে লাফাচ্ছে যেন। এই অপয়াকে যতো তাড়াতাড়ি তাড়ানো যায় ততোই মঙ্গল। তখনই কবির এসে জোহরাকে তার অনাকাঙ্ক্ষিত সংবাদটি জানালো। এতে জোহরা যেন মেঘ না চাইতেও জল পেয়ে গেলো। কবির জোহরাকে কিছু শপিং ব্যাগ দিয়ে বেরিয়ে গেলো। জোহরা প্যাকেটের জামা-কাপড় দেখতে দেখতে পৈশাচিক হাসি দিলো। এবার সেহেরকে কঠিন শাস্তি দেয়া যাবে।
তপা বাড়ি ফিরে চুপচাপ তার মায়ের উপর নজর রাখতে শুরু করলো। যতক্ষণ না প্রমাণ পাচ্ছে ততক্ষণে সে মুখ খুলবে না। বিকালে সকলে রেডি হলো, সেহেরের খাবারে কিছু মিশিয়ে দেয় যার ফলে সে ভিষণ ক্লান্তি এবং অসুস্থতা অনুভব করছে। এই অবস্থায় সেহের যেতে পারবে না বলে দিয়েছে। যেহেতু কবিরের পরিবার আগে থেকেই যাবে না তাই দাদীমার এই বাড়িতে একা সেহেরকে রেখে যেতে মন সায় দিলো না। তপাকে জিজ্ঞেস করলে সেও যাবে না বলে জানালো। দাদীমা থাকতে চাইলে সা’দ আবিদ মিলে তাকে জোর করে নিয়ে গেলো। দাদীমা যেতেই জোহরা এক স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। তপা উপর থেকে মায়ের ভাব-গতি লক্ষ করে নিজের ঘরে চলে গেলো। অতঃপর জোহরা নিজের ঘর থেকে বেনারসিটা নিয়ে সেহেরের ঘরে চলে গেলো। সেহের তখন কিছুটা সুস্থবোধ করছিলো দেখে উঠে দাঁড়াবে এমন সময়ই জোহরা হাসিমুখে সেহেরের ঘরে হাজির হয়। সেহের কিছুটা ভ্রু কুচকালো।
—“কিছু বলবে মা?”
জোহরা হাসিমুখে বেনারসিটা এগিয়ে দিয়ে বলে,
—“এটা পরে তৈরি হয়ে নে মা!”
—“তৈরি হবো মানে!”
—“মানে আজ তোর বিয়ে। এখন কথা না বাড়িয়ে জলদি তৈরি হ, বরপক্ষ কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসবে!”
জোহরার কথায় সেহেরের মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পরলো। সেহের সাথে সাথে উঠে দাঁড়ালো আর চোখমুখে হালকা রাগ ফুটিয়ে তুলে বলে,
—“আমি বিয়ে করবো না, আপনি কী করে আমার অনুমতি ছাড়া আমার বিয়ে ঠিক করলেন? আমি কী একবারও বিয়ের কথা বলেছি!”
সেহেরের তেজি কথায় জোহরা চোখ গরম করে সেহেরের উদ্দশ্যে বলে,
—“এতো তেজ বাপরে! তাহলে তুইও শুইনা রাখা আজ তোরে আমি বিয়া দিমুই! তোর জন্য আমার সংসারে যতো অশান্তি। ভালোয় ভালোয় রাজি হ নয়তো তোরে যে কি করমু তুই ভাইবাও পাবি না। আমি চাই না এখন তোরে মার দিতে!”
—“আপনার চাওয়া না চাওয়ার মধ্যে কী আসে যায়? আমাকে কী খেলার পুতুল পেয়েছেন আপনারা? মানুষ মনে করেন না আমাকে? আমারও ইচ্ছা আছে, আমিও ভালো থাকতে চাই! এতোদিন কিছু বলিনি দেখে কোনোদিন বলবো না এমন কিছু ভুলেও মাথায় আনবেন না। আমার মাকে তো মেরেছেনই এখন আবার আমা…”
—“ওই বিয়াদপ মেয়ে চুপ! একদম চুপ। আর একটা কথা কইলে তোরে থাপ্রাইয়া কান লাল করে দিমু। যতো বড়ো মুখ নয় ততো বড় কথা! বিয়া হইবো মানে হইবোই৷ এই জোহরা কী জিনিস এখনো তুই বুঝোস নাউ! জলদি তৈরি হ! তোর মায়ের ওয়াদা কী ভুলে গেছোস!”
—“আমি জানি আপনি মাকে নিয়ে মিথ্যা বলছেন। আমার মা কোনো ওয়াদাই করেনি! কেন মিথায় বলে গেছেন এতোগুলা দিন?”
—“হা হা জেনে গেছিস যাক ভালো। তাহলে শুন, আমি শুধু চেয়েছি এখানের রানী হিয়ে বসবাস করতে। কিন্তু সংসার তো সামলাতে হবে? তাই সেই সংসার চালানোর ভয়ে আমি তোকে আমার কাছে রেখে দিয়েছি মিথ্যা ওয়াদার কথা বলে বলে আমার কাজ করিয়েছি তোকে। আর কিছু শুনতে চাস?”
বলেই বেনারসিটা সেহেরের হাতে ধরয়ে দিতেই সেহের সেটা জোহরার মুখে ছুঁড়ে মারলো। আজ কেন জানি না সেহের নিজের মধ্যে নেই, এদের প্রতি তার এতোটাই রাগ এবং ঘৃণা জমে আছে যা সেহের চিন্তাও করতে পারে না। সেহের তো অন্ধকারে ঢিল ছুঁড়েছিলো মাত্র! সেখানে এতো বড় প্রতারণা তাও নিজের মৃত মাকে নিয়ে, সেহেরের যেন বুক ফেটে কান্না আসছে। কী করে পারলো সব বিবেচনা না করে সৎ মায়ের কথা শুনে। তার তো বোঝা উচিত ছিলো যারা তার মাকে খুন করতে পারে তারা নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য সব করতে পারে সব!
সেহেরের এহেম কান্ডে জোহরা তো তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠলো। “সেহের” বলে চিৎকার দিয়ে সেহেরের গায়ে হাত তোলার আগেই সেহের তার হাত ধরে ফেলে।
—“এতোদিন আমার ভালো রূপ দেখেছেন এখন দেখবেন আমার নতুন রূপ! আমি কী জিনিস এখন আপনি বুঝবেন তাই ভুল করেও আমাকে থাপ্পড় কারার স্পর্ধা দেখাতে আসবেন না!”
জোহরা আরও দ্বিগুণ রেগে অকথ্য ভাষায় একটা গালি দিয়ে তার অপর হাত দিয়ে সেহেরের চুলের মুঠি ধরে দেয়ালে ধাক্কা দিলো যার ফলে অনেক জোরে সেহের কপালে আঘাত পেলো। সেহের আর্তচিৎকার দিয়ে কপালে হাত চেপে ধরলো৷ তরল কিছু অনুভব হতেই সেহের নিজের হাত কপাল থেকে সরিয়ে চোখের সামনে ধরে দেখলো, রক্ত! জোহরা বিশ্রী ভাষায় গালাগাল করে ঘর থেকে হনহন করে বেরিয়ে এলো। এদিকে কিছুক্ষণ পর সেহেরের মাথা কেমন ভার হয়ে আসছে। কপালে হাত রেখেও রক্ত পড়া বন্ধ করতে পারছে না। আস্তে আস্তে তার শরীরটা নিস্তেজ হয়ে আসছে৷ চারপাশটা কেমন ঝাপসা লাগছে। জ্ঞান হারানোর আগে তপাকে সে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো। এরপর সেহেরের আর কিছু মনে নেই। এদিকে জোহরা রেগে বক্সার ঘরে আসতেই দেখলো কবির কালাম এবং কাজীসাহেব কে নিয়ে আসছে। ওদের দেখে জোহরার এতক্ষণে হুঁশ ফিরলো, সেহেরকে তো সে রাগের মাথায় মেরে এসেছে এখন কী জবাব দিবে তাদের? ভাবতেই জোহরার গাঁয়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো। ঝামেলা হলে তো কবির তাকে আস্ত রাখবে না। ভাবতেইভতার গলা শুকিয়ে আসলো।
কামাল নতুন বরের মতো মুখে রুমাল দিয়ে বসে আছে যেন জীবনে বিয়ে করেনি। কবির হাসিমুখে তাদের আপ্যায়ন করে জোহরার কাছে এসে বলে,
—“সব ঠিকাঠাক তো?”
জোহরা ভয়ের চোটে আনমনে মাথা নাড়ালো যার উত্তর “হ্যাঁ”। কবির এতে তৃপ্তির হাসি দিলো। হেসেই বললো,
—” তাহলে যাও ওরে লইয়া আইয়ো, কাজী কইসে দেরী করতে পারবো না!”
জোহরা এবার ভয়ে কুঁকড়ে উঠে। সেহের নিশ্চয়ই অচেতন হয়ে পরে আছে। এখন কী করবে সে কিছুই বুঝতে পারছে না। জোহরা রীতিমতো ঘেমে একাকার। জোহরাকে থম মেরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কবির দিলো এক ধমক। ধমক শুনে সে উল্টো দিকে হাঁটা ধরতেই দেখলো সেহের বেনারসি পরিধান করে এক হাত ঘোমটা টেনে তাদের দিকেই আসছে। সেহেরকে এভাবে দেখে জোহরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। এর মানে সেহের জ্ঞান হারায়নি। ভাগ্যিস ঘোমটা টেনেছে নয়তো সেহেরের মাথার আঘাতটা দৃশ্যমান হতো। জোহরা জলদি সেহেরকে ধরে এনে কামালের পাশে বসিয়ে দিলো। সেহেরকে বসানোর পর জোহরা বিয়ের জন্য তাড়া দিতে থাকলো। যখন সেহেরকে কবুল বলতে বলা হলো তখন সেহের নড়েচড়ে উঠলো এবং কাজীকে হাত দিয়ে ইশারা করলো। কাজী সেহেরের ইশারায় কিছুটা এগিয়ে যেতেই সেহের কাজীর কানে কানে কবুল বললো। কাজী সেহেরের কবুলে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলে উঠে। বিয়ে সম্পন্ন হতেই কামালের দুই ছেলে, বউ, চেয়ারম্যান রতম চাচা এবং গ্রামের প্রায় কিছু মুরব্বিরা এসে হাজির হলো। আশরাব তার বাবাকে সদ্য বরের পোশাকে এবং তার পাশে আরেকটি মেয়েকে দেখে চটে গেলো। দাঁতে দাঁত চেপে হুংকার ছেড়ে বললো,
—“তপা! তুমি এতোটা নিচ যে আমার সাথে এক বিছানায় কাটিয়ে শেষ অবধি আমার বাবাকে বিয়ে করলে ছিঃ!!”
আশরাবের এমন কথায় কামালসহ সকলে হকচকিয়ে সদর দরজায় তাকালো। পরিচিত কন্ঠে তপা ঘোমটা খুলে সদর দরজায় একবার তো আরেকবার নিজের পাশের মানুষটাকে দেখে ভয়ংকরভাবে চমকে উঠলো।
চলবে!!!