দলিল – ৫

0
238

দলিল – ৫

কাগজগুলো গাড়িতে রেখে তিথি বের হয়ে আসে। খুব ঠান্ডা মাথায় শুভকে ম্যানেজ করতে হবে যদিও পরিস্থিতি সবটাই তার হাতের নাগালে। তিথির প্ল্যান হলো শুভকে সে বলবে টাকাটা না পেলে সে সই করবে না। এতে শুভ আটকে যাবে। কারন তিথির সই করা কাগজ সাবমিট করা হবে রেজিস্ট্রি অফিসে। সেক্ষেত্রে তিথির সই হলো আসল জিনিস। ইশ! অনেক দিন পর একটা শান্তি শান্তি অনুভুতি হচ্ছে। শুভ তিথির সাথে কেমন একটা দূরত্ব টানছিল। এটা তিথিকে ভাবায়। কেমন খোচা লাগত। কখনও আবার মনে হয় না সবই ঠিক আছে। কিন্ত আজকের বিষয়টা বলছে না ঠিক নেই কিছু। কোথায় যেন সুর কেটে যাচ্ছে। তবে তিথি দেখেছে শুভ বেশ স্বার্থপর টাইপের নিজেকে ছাড়া কিছু বোঝে না। জগতের নিয়মও তাই। তাহলে তিথি কেন ভুল করবে। সেও বুঝে নিবে তার প্রাপ্য। যেভাবে শুভ নেয়। তিথি হেসে ফেলল নিজের অজান্তে। নিজেকে হঠাৎ বেশ অচেনা লাগছে। শুভর বিষয়ে এমন করে ভাবছে এটাও অদ্ভুত।

নাহ, অদ্ভুত নয় সব ঠিক। তার ভাবনা ঠিক। নিজের কিছু আছে এটা বোঝাতে হয় কখনও কখনও । বুঝে নিতেও হয় নিজের একশ ভাগ।

তিথিকে নিশ্চুপ থাকতে দেখে বারেক বলে ফেলল।
; আমনে সইগুলা কইরা দেন। আমি লইয়া যাই।

তিথি বারেককে পাত্তাই দিলো না। উল্টো বলে বসল।

: আপনি শুভকে একটু ডেকে দিন না।

: জ্বে।

তিথির জবাবটা বেশ ধারালো।ছিল। বারেক হতভম্ব হয়ে গেছে। সে সোজা হাঁটা ধরল।

শুভ সিগারেট খাওয়া শেষ করে চায়ের স্টলে বসেছে। ভারী খুশী আজ সে। এতগুলো টাকা পেয়েছে। অন্যের জমির বদৌলতে। এটা কি কম নাকি। শুভ ঠান্ডা মাথায় তিথিকে ঠকিয়ে ফেলেছে। কিন্ত সে এটাকে ঠকানো ভাবছে না।

চায়ের আড্ডায় শুভকে ভীষন উচ্ছসিত লাগছে। সবার নজর ওর দিকে। এমনিতে সে প্রচুর ফুর্তিবাজ। সুযোগ পেলেই হৈ চৈ করে। আজ সেই সুযোগ এসেছে।
তিথি কল্পনা করল কিছুক্ষন পর ওর আনন্দিত মুখটা চুপসে যাবে। আর সেটা তিথি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখবে।

বারেক সামনে এগিয়ে যেতেই তিথি হেসে ফেলে। সে শুভর এত আড়াল করা প্ল্যানটা মুহুর্তে পানির মধ্যে মিশিয়ে দিয়েছে। এটা শুভ জানার পর কি রিএ্যকশান হবে তা দেখার বিষয়।
তিথি দেখল বারেক গিয়ে শুভকে কিছু বলতেই শুভ বেশ দ্রুতই হেঁটে আসছে।

তিথি গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ছিল।
শুভ কাছে এসে জানতে চাইল।
: তুমি সই করোনি?

তিথি চোখ তুলে শুভকে দেখছে। কি সহজ হিসাব তার।

:হুম করবো। তোমার সাথে আগে আলোচনা করে নিই।

শুভ থমকে গেছে। তার মুখে খুশী খুশী ভাবখানা নাই।
একটা বিধ্বস্ত অবস্থা।

: কিসের আলোচনা ?

তিথি দৃঢ় কন্ঠে কথা বলছে। ওর গলার স্বরে কেমন কাঠিন্য ভাব।

: আমার নামে জমিটা দেখলাম।
তুমি এ কথা আগে বলো নাই কেন?

: আগে বলা না বলাতে কি হয়েছে তুমি জানো না কত ঝামেলা পোহাতে হয়েছে এটা পেতে গিয়ে।

তিথি জেরা করছে। সে ইচ্ছে করেই করছে।শুভকে একটু ভেঙে দেয়া দরকার।

: বেশ ভালো কথা। অনেক ঝামেলা করে পেয়েছো, আমার নামে রেজিস্ট্রি করেছো। তারপর এখন সেটা বিক্রিও করে ফেলছো ।
অথচ আমিই জানলাম না।
শুভ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল।

: বলার দরকার হয়নি। এখন তো জানলে?

শুভ ভাঙাচোরা হাসিটা ধরে।রাখতে পারছে না। তিথি স্পষ্ট দেখল শুভ এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করছে।

: সবই ঠিক আছে। কিন্ত এতকিছু আমার থেকে আড়াল না করলেই তো হত শুভ?

শুভ এক পলক তিথিকে দেখল। মেয়েটা বেশ গুছিয়ে কথা বলছে। কিন্ত এখানে সে তিথির সাথে তর্ক করে জিততে পারবে না।
কারন পরিস্থিতি সবটাই তার বিপক্ষে চলে গেছে।

: আসলে ঐসব ঝুট ঝামেলায় তোমাকে জড়ানোর কোন ইচ্ছে আমার নেই তাই জানাইনি।
: ওকে। তবে একটা প্রশ্ন তোমার চাচার জমি আমার নামে কেন রেজিস্ট্রি হলো?

: আছে। এতকিছু জানা লাগবে না।

: ভালো কথা। তবে এখন কিছু হিসাব যে জানা লাগবেই আমার।
টাকাগুলো কি করেছো?

: আছে।

তিথি শুভর খুব কাছ ঘেঁষে দাড়াল। ছেলেটা বেশ টেনশানে পড়ে গেছে। মুখটা ঘেমে যাচ্ছে। এত সুন্দর একটা পরিকল্পনা ভেঙ্গে গেলে এমনই হয়।

: পুরো আড়াই লাখ এখানেই?

শুভ চমকে গেলো। টাকার ব্যাগটা তিথির হাতে। এরপর সে কি বলবে বুঝে গেছে শুভ। ইশ! টাকাগুলো আগেই একাউন্টসে ট্রান্সফার করলেই এই ঝামেলাটা হত না। শাকিল একবার বলেছিল যে ব্যাংকে টাকাটা আগেই দিয়ে দিবে। কিন্ত শুভ রাজি হয়নি। তার মনে একটা সন্দেহ ছিল যদি শাকিল পুরো টাকাটা না দেয়।
তাই আজই নগদে পুরো টাকাটা বুঝে নিয়েছে। কিন্ত এটাই যে আরেক বিপদ হয়ে দাঁড়াবে সেটা বুঝেনি।

শুভ শুকনো মুখে হুম করল।

: শোনো আমি আশপাশটা হেঁটেছি। ব্যাংক দুটো অফিস পরেই। বারেক বলল সাব রেজিস্টার আসবে আরো পরে। চলো এক কাজ করি টাকাগুলো আমার একাউন্টসে জমা দিয়ে।আসি। শুধু শুধু টেনশান রেখে লাভ নেই।
কারন আমাদের আজ ঢাকায় পৌঁছাতে বেশ রাত হবে। এতগুলো টাকা নিয়ে মুভ করা বোকামো ছাড়া কিছুনা। কি বলো?

: তিথি তুমি কাগজগুলোতে সই করো আগে।

: না টাকাগুলো বুঝে নিই। তারপর সই।

তিথি কেমন স্ট্রং হয়ে কথা বলছে। শুভ হেরে যাচ্ছে। অন্তত তিথির দিকে তাকালে তাই মনে হবে।
তিথি শুভর হাতটা টেনে ধরল।

: এত চিন্তায় পড়ে গেছো কেন? আমি টাকাগুলো জমিয়ে রাখছি। খরচ তো করছি না।
যেহেতু জমিটা আমার ছিল তাই টাকাটাও আমার। কি ঠিক?

শুভ কথা বাড়াতে চাইলেও কোন লাভ হবে না। কারন তিথির নামে রেজিস্ট্রি করে বড় ধরনের ধরা খেয়ে গেছে। সেটার মাশুল আজ দিতে হলো।
শুভ গাড়ির ভেতর থেকে কাগজগুলো নিয়েছে।
তিথির মন হঠাৎ খুশীতে ঝলমল করলেও শুভর মুখ থমথমে।

: শোনো আপাতত আধঘন্টায় টাকার ঝামেলাটা সেরে ফেলা যাবে কি বলো?

শুভ কোন জবাব দিচ্ছে না।

তিথির মাথাটা বেশ ফুরফুরে লাগছে। এতগুলো টাকা পেয়ে যাবার আনন্দ সহজ কথ নয়।
তার চেয়েও বড় কথা মেয়েদের সব মানতেই হবে এটা মাথা থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে।
বুদ্ধি কৌশল কেবল ছেলেরা নয় মেয়েরাও খাটাবে। সেটা সংসার বা বাইরে।

শুভ আগে আগে হাঁটার চেষ্টা করলেও তিথি শক্ত করে ওর হাতটা ধরে রাখল।

তামান্না হাসান

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here