দিন_বদলের_হাওয়ায়-১৪,১৫

0
577

#দিন_বদলের_হাওয়ায়-১৪,১৫
#তানজিলা_তিহা (লেখনীতে)
১৪

কার ভাগ্যে কি আছে তা আমরা কেউই জানি না। ভাগ্য উপরওয়ালা কর্তৃক নির্ধারিত। এর ভালো মন্দ তিনি বহু আগেই লিখে রেখেছেন। রাস্তার ওপাশে পায়রার স্বামী মাহবুব দাঁড়িয়ে আছে। তার আশেপাশে অনেক লোকজনের সমাগম। লোকেরা তাকে ঘিরে রেখেছে আর কি কি যেন বলছে। মনে হচ্ছে মাহবুবকে তারা ধরে রেখেছে। এই দৃশ্য দেখে আমি রেদোয়ানকে ডাক দিলাম। বললাম, রেদোয়ান দেখো তো ওটা মাহবুব না?

রেদোয়ান আমার কথায় ওদিকে তাকালো। বললো, তাই তো মনে হচ্ছে। কিন্তু ওখানে এতো লোকজন কেন? চলো তো গিয়ে দেখি।

রেদোয়ান আমার হাত ধরে টেনে ওখানে নিয়ে গেলো। লোকজনের ভীড়ের মধ্যে থেকে একজন লোককে ও ডেকে জিজ্ঞেস করলো, কি হয়েছে ভাই? এখানে এতো ভীড় কেন?

লোকটা বললো, আরে ভাই বইলেন না। এই লোক একটা ঠ/ক/বা/জ। দুই সপ্তাহ আগে মালের অর্ডার করছি এখনো মালের ডেলিভারি নাই। টাকা তো অগ্রিমই নিয়া রাখছে। এতোগুলা মানুষরে ঘুরাইতাছে।

পায়রার জামাই তো ব্যবসা করে কাপড়ের ব্যবসা। ওদের তো ভালোই চলছিলো। কিন্তু কেন এমন হলো কি করে? হঠাৎই দেখলাম মাহবুব আমাদের দিকেই তাকিয়ে আছে। আমাদের দেখে ও পুরোপুরি বদলে গেলো। এতোক্ষণ লোকজনের কথায় মাথা নিচু করে রেখেছিল আর বলছিলো ও খুব জলদিই ডেলিভারি দিয়ে দিবে। কিন্তু এখন আমাদের দেখে কেমন জানি করে বললো, আপনারা কাল আমার অফিসে আসবেন আমি সবার হিসেব চুকিয়ে দিবো।

লোকেরা কিছুটা শান্ত হলেও পুরোপুরি হয় নি। মাহবুব আড় চোখে আমাদের দেখছে। আর ভাবটা এমন যেন আমাদের চিনে না। কিছু না বলে রেদোয়ানের হাত ধরে ওখান থেকে আসতে আসতে বললাম, চলো বাড়ি চলো। এখানে দাঁড়িয়ে কি করছো?

আরে দেখছো না? নিশ্চয়ই একটা গোলমাল আছে। ওকে জনগণ গণ ধো/লা/ই দিবে।

দিক তাতে তোমার কি? উচিত শিক্ষা হবে। দেখছো না কেমন করে তাকাচ্ছে আমাদের দিকে? অ/হ/ং/কা/র শেষ হয় না। কেন নিজের সম্মান ভুলে যাও? টাকার গরমে পা মাটিতে পড়ে না।

রেদোয়ান আর কিছু বললো না। আমরা সামনে থেকে একটা সিএনজি ভাড়া করে বাড়িতে চলে আসলাম। বাড়িতে এসে খেয়াল করলাম পায়রা অনেক গুলো কল দিয়েছে। ভীষণ চিন্তা হচ্ছে নিশ্চয়ই ওর কোন বি/পদ হয়েছে। ছোট বোনটার বি/প/দে পাশে না থাকতে পারলে কেমন বোন আমি? কেমন যেন লাগছে। আবার পরোক্ষণেই ওর ব্যবহারের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। অ/হং/কা/রে তো ওর পা মাটিতে পড়ে না। তাই এবার ওর সাথে কিছুতেই যোগাযোগ করবো না আমি। একটা উচিত শিক্ষা ওকে দিতেই হবে। মাথায় চিন্তার পাহাড়। তবুও রেদোয়ানকে এসবের কিছুই বুঝতে দিলাম না।

আজ আমরা আমাদের নতুন বাসায় উঠেছি। বাসাটা বেশ ভালোই। এটা বড় দালান নয় ছোট টিনের ঘর। দুটো রুম আছে। আমাদের মতো ছোট ছোট আরো তিনটে পরিবার এখানে থাকে। যাক ভালোই। দুজনের আর এর থেকে বড় বাসার কি দরকার? অট্টালিকার সাধ আমার মিটে গেছে। কি লাভ অট্টালিকায় থেকে যদি সেখানে মানসিক কোন প্রশান্তি আমি না পাই? এখানে তো অন্তত দুটো খেয়ে পড়ে শান্তিতে থাকতে পারবো। তাতেই হবে।

ভালোই কাটতে শুরু করলো নতুন বাসার দিনগুলো। রেদোয়ান চাকরিতে জয়েন করলো।‌ দিন কাটতে লাগলো। বেশিরভাগ সময়ই অফিস নিয়েই এখন বিজি থাকে। আমি বাড়িতেই থাকি। আমাদের পাশের ঘরের মেয়েটার একটা পাঁচ বছরের ছেলে আছে। ছেলেটা ভীষণ দুষ্টু্। সারাক্ষণই দুষ্টুমি করতে থাকে। আমার সাথে তার অনেক ভাব। প্রায় সময়েই ও আমার কাছে থাকে। ওর মা প্রথম প্রথম নাকি ভাবতো আমি বাচ্চা পছন্দ করি না। তাই সবসময় ওকে দূরে রাখার চেষ্টা করতো কিন্তু ও তো মানতো না। সব বাচ্চাদের একটা কমন স্বভাব হচ্ছে যা বারণ করবে তা বেশি বেশি করবে। ও ও তাই। ব্যাপারটা মন্দ না। ওর সাথে আমার বেশি সময় কাটে। কয়েকদিন আগে রুশা আপাও আমাদের বাড়ি এসেছিলেন। রুশা আপা আগের মতন নেই অনেক পরিবর্তন হয়েছেন তিনি। এবার উনি আমার ছোট ননদ সম্পর্কে ইনিয়ে বিনিয়ে কি কি যেন বলার চেষ্টা করেছেন। বুঝতে পারি নি আমি। জিজ্ঞেস করেও কিছু জানতে পারি নি। আমার ছোট ননদ থাকে বহুদূরে। উনি থাকে পঞ্চগড়ে। বছরে আসে আবার আসেও না। যোগাযোগ তেমন নেই তার সাথে। রেদোয়ানের বউ হয়ে আসার পর তার সাথে চার কি পাঁচ বার দেখা হয়েছে মনে হয়। বুঝতে পারি না আমি এতো দূরে আমার শাশুড়ি মেয়ে বিয়ে দিলো কি করে? উনি তো মেয়েদের ছাড়া বাঁচেন না। তবে ইদানিং দেখছি নিজেকে নিয়ে বেশি ভাবছেন। শাশুড়ি গত সপ্তাহে এখানে এসেছিলেন। শুনেছি ও বাড়ি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আমার শাশুড়ি বার বার একই কথা আওড়াচ্ছিলেন। তাকে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। তিনি বার বার চাতক পাখির ন্যায় আমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন। যদি একটু বলি আমাদের সাথে থাকতে! কিন্তু আমি বলি নি। দূরে থাকুক ভালো থাকুক। একটু তো বুঝতে দেওয়া দরকার তাদের। আমি বুঝতে পারি না মানুষ কিভাবে এতো বদলাতে পারে। সুসময়ে আঠার মতো পিছে লেগে থাকে আর দুঃসময়ে আবর্জনার মতো ফেলে দেয়। আমি সেদিন তাকে কিছু বলি নি। আমার শাশুড়ি মুখ কালো করে সেদিন আমার বাড়ি থেকে চলে গিয়েছেন আর আসেন নি। এখানে আসার পর ও বাড়িতে আর যাই নি আমি। জুলি আর শান্তি প্রায় সময়ই ফোন করে ও বাড়িতে যাওয়ার জন্য। কিন্তু যাই না। সুবিধাবাদী দলের আরেকজন সদস্য হলো পায়রা। সেও ফোন করে প্রায় সময়েই। কিন্তু ধরি না। আপন জনদের থেকে তো কম কষ্ট পেলাম না। এবার না হয় দূরে থাকি তাদের থেকে। একটু শান্তিতে বাঁচি। জীবনে তাদের থেকে সবচেয়ে বড় কষ্ট পেয়েছি। কি করে তাদের আবার আগলে নেই আমি? ভালো আছি এখন আমি এভাবেই থাকতে চাই। পিছনের ভ/য়ং/কর ঘটনাগুলো মাঝে মাঝে ভুলে যেতে চাই কিন্তু এগুলো কি এতো সহজে ভুলে যাওয়া যায়? এসব মনে যে ক্ষ/ত তৈরি করেছে তা এতো সহজে কি করে মুছে যাবে? তাই স্বার্থপর এই লোকগুলোর থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিতে চাই।

গতকাল মা ফোন করেছিলো। বাবার শরীরটা ভালো
নেই। বাবা নাকি অনেক অসুস্থ। শুনেই মনটা কেমন যেন আনচান করছে। বাবাকে দেখতে যাওয়া দরকার। কিন্তু কিভাবে যাবো? রেদোয়ানের সময় হচ্ছে না। বন্ধ কোম্পানি নতুন করে খোলা হয়েছে। কাজের তো অভাব নেই। প্রায় নয় মাসে কোম্পানির অনেক ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। শুনেছি সরকার থেকে কিছুটা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। তবুও সবটা কাটিয়ে উঠতে অনেক বেগ পেতে হচ্ছে। এতো তাড়াতাড়ি সবটা সম্ভবও নয়। কোম্পানি খুললো দু মাস হলো। এর আগে নয় মাসই কর্মচারীরা বাড়িতে বসে ছিলো। দু মাসের মাথায় ছুটি চাইলে ছুটি দিবে কে? রেদোয়ানকে অনেক বার বলেছি। সে বলেছে দেখবে। তার দেখাদেখিতে তিন দিন কেটে গেলো। ভীষণ রা/গ হচ্ছে। আমার বাবা অসুস্থ আর আমি এখনো যেতে পারলাম না। খুব কষ্ট হয়। রেদোয়ান একদিনের ছুটি নিতে পেরেছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার পরশু শুক্রবার। যাক দুদিন যেয়ে সেখানে থাকতে পারবো। রেদোয়ান অফিস শেষে বাড়ি ফিরলো রাত আটটা। আমি সব গোছগাছ করে রাখলাম। সকাল সকালই বেরিয়ে পড়বো।

আমাদের বাড়িতে পৌঁছাতে পৌঁছাতে সকাল নয়টা বেজে গেলো। ভোরে রওয়ানা দেওয়ার পরও নয়টা বাজলো। বাড়িতে কারো কোন সাড়াশব্দ পাচ্ছি না। একদম থমথমে পরিবেশ। আমি মায়ের দরজায় টোকা দিতেই মা দরজা খুললেন। আমাকে দেখে ভীষণ খুশি হলেন। জরিয়ে ধরে মাথায় চুমু খেলেন। বাবাও চোখ মেলে তাকাল। মলিন হেসে বললেন, ‘আইলি তো আইলি আমার শেষ সময়ে আইলি?’

চলবে……

#দিন_বদলের_হাওয়ায় [১৫]
#তানজিলা_তিহা (লেখনীতে)

বাবার কথায় বুকের ভিতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো। ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। আমি বাবার পাশে বসে পড়লাম। বাবার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললাম, এভাবে কথা বলছো কেন তুমি? তোমার কিছুই হবে না‌। দেখো সব ঠিক হয়ে যাবে।

বাবা আমার কথায় দু ফোঁটা চোখের জল ফেললেন। বললেন, মা রে ঠিকই কই আমি। আমার সময় শেষ হইয়া আইছে। আর বেশিদিন টিকমু না। তুই আইছোছ আমি মেলা খুশি হইছি। ম/রা/র আগে তোরে দেখার খুব ইচ্ছা ছিলো। তা এহন পূরণ হইয়া গেলো। এখন শান্তিতে ম/র/তে পারমু।

বাবার কথা শুনে খুব খারাপ লাগছে‌। হাউ মাউ করে কেঁদে দিলাম। বাবার গলা জড়িয়ে ধরে বললাম, আর একটা কথাও বলবে না। কিছু হবে না তোমার।

বাবা আমাকে জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করলেও পারলেন না। বাবার শরীর প্রচন্ড রকমের গরম। গায়ে ভীষণ জ্বর। আমার শরীরও গরম হয়ে গেছে। মাকে জিজ্ঞেস করলাম, ঔষধ খাইয়েছো? মা বাবাকে ডাক্তার দেখাও নি?

না রে মা। ফার্মেসি থেইক্কা ঔষধ আইন্না দিছি। মাহবুব কাইল আইন্না দিচ্ছিলো। বড় ডাক্তার এনে আসে না। শুক্রবার দিন আসবো বলছে।

বাবার এতো জ্বর কিন্তু তাকে এখনো ডাক্তার দেখানো হয় নি? ভালো‌ লাগছে না। বাবাকে উঠিয়ে কোন রকমে একটা পাঁউরুটি খাইয়ে ঔষধ খাইয়ে দিলাম। বাবা নিশ্চুপ ভাবে শুয়ে রইলেন। মনে হচ্ছে বাবা ঘুমিয়ে গেছে। আমি মায়ের সাথে ঘর থেকে বের হতে হতে মাকে বললাম, বাবার শরীর তো ভীষণ খারাপ। বাবাকে শহরে নিয়ে যাই?

কালকে তো বড় ডাক্তার আইবোই। আগে তারে দেখায়া লই। সে যদি শহরে নিতে কয় তহন নিয়া যাইছ।

আমি আর কিছু বললাম না। ঘর থেকে বেরিয়ে দেখলাম পায়রা উঠোনে দাঁড়িয়ে দাঁত ব্রাশ করছে। আমাকে দেখে ও আমার কাছে দৌড়ে এলো। বললো, কিরে আপা কখন এলি রে? কেমন আছিস তুই?

কথা বলতে আমার মোটেও ইচ্ছে হচ্ছে না। তবুও সৌজন্য মূলক হাসি দিয়ে বললাম, আমি ভালো আছি। তুই?

এইতো আছি রে কোনমতে। কখন এলি তোরা?

কিছুক্ষণ আগে।

দুলাভাই কই রে? সে কেমন আছে?

ভালো আছে ও।

তোদের ফোন করলে ফোন ধরিস না কেন রে আপা?

এবার ওকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলাম। বললাম, আমার কাজ আছে পায়রা। তোর সাথে পরে কথা বলবো।

বলেই নিজের ঘরে চলে এলাম। পায়রার নরম ব্যবহার আমাকে আশ্চর্য করছে। বুঝতে পারছি না কি হচ্ছে। আমি ঘরে গিয়ে মুখ হাত ধুয়ে এরপর মায়ের কাছে গেলাম। মা নাস্তা তৈরি করছে। আমাকে দেখে মা বললো, আজকে দেরি হইয়া গেছে। তোর বাপের জ্বর একটুও কমে নাই আজকে। কয়বার যে মাথায় পানি দিছি। সারা রাইত ঘুমাইতে পারি নাই। সকালের দিকে একটু চোখ লাইগা আইছিলো। তাই দেরি হইয়া গেছে।

দাও আমার কাছে বেলুন দাও। আমি রুটি বেলি আর তুমি ছেঁকে নাও।

আমি কাজে লেগে পড়লাম। মা রুটি ছেঁকছেন আর বিভিন্ন কথা বলছেন। সায়রার কথা বললেন প্রথমে। সায়রা এসেছিলো কিন্তু পরশু চলে গেছে। আজ রাতে নাকি আবার আসবে। ওর স্বামীর ছুটি নেই। ভেবে পাচ্ছি না পায়রা এখানে এখনো কি করছে? তার স্বামী তো বিরাট ব্যবসায়ী। তাদের লোকসান হচ্ছে না? তারা তো টাকা ছাড়া মানুষ চিনে না। বিভিন্ন কথার মধ্যে দিয়ে পায়রার কথা উঠলো। পায়রা নাকি জামাই সহ এখন এখানেই থাকে। মাহবুব নাকি ব্যবসায় অনেক বড় লস খেয়েছে। এতে তার সবকিছুই নিলামে উঠেছে। বোন আর তার স্বামীও পিছন থেকে সরে দাঁড়িয়েছে। সবকিছু কাটিয়ে উঠতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে সে। এরপর এ বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। ভীষণ অবাক হলাম মায়ের কথায়। বিশ্বাস হচ্ছে না। যার এতো অর্থসম্পদ ছিলো, যে টাকার গরমে মানুষকে মানুষ ভাবতো না কই গেলো তার টাকা?
আর তার বোন। সে না পিছু ছাড়তো না ভাবির সে গেলো কোথায় এখন? এবার বুঝবে কত ধানে কত চাল। আমি আর কিছুই বললাম না।

আমি আর মা মিলে নাস্তা তৈরি করে নিলাম। সবাইকে নাস্তা দিলাম। এরপর বাবার কাছে যেয়ে বসলাম। ভীষণ খারাপ লাগছে। বাবা ঘুমিয়ে আছেন। তার চেহারায় বিদ্যমান শত ক্লান্তি। গায়ের জ্বর এখনো কমে নি। অনেক টেনশন হচ্ছে। আমি রেদোয়ানকে বললাম, বাবাকে কি শহরে নিয়ে যাবো? এখানে ডাক্তার তো কাল আসবে।

নিলে তো মন্দ হয় না। তোমার মাকে বলেছো?

হ্যাঁ বলেছি। মা তো বলেছে ডাক্তার আসা পর্যন্ত দেখতে। কিন্তু বাবার জ্বর তো কমার নাম নেই।

নিলে নিয়ে চলো আজই। অবস্থা তো বেশি ভালো না।

আমি কিছু না বলে বাবার মাথায় হাত দিলাম। মনে হচ্ছে জ্বর বাড়ছে। আমি তৎক্ষণাৎ রেদোয়ানকে বললাম, এই দেখো না আমার মনে হচ্ছে বাবার জ্বর বাড়ছে। জ্বর মাপা দরকার।

চলো ওনাকে আমাদের বাড়িতেই নিয়ে যাই। ওনাকে ডাক্তার দেখানো দরকার।

আমি মাকে ডাক দিয়ে বললাম, বাবাকে এক্ষুনি শহরে নিয়ে যাবো। দেখো জ্বর বাড়ছে।

প্রতিদিনই তো এমন বাড়ে কমে। আর একটা দিন দেখ না।

জ্বর হয়েছে বাবার কত দিন হলো?

অনেক দিনই তো হইবো। প্রথমে অল্প আছিলো। হাঁটতে চলতে পারতো। উঠতো আবার কইমা যাইবো। কিন্তু আট নয় দিন ধইরা বেশি।

এখনো বলছো আরো দেখবে? তুমি তাড়াতাড়ি ব্যাগ গুছাও বাবাকে আমি শহরে নিয়ে যাবো।

মা আর কথা বাড়ালেন না। ব্যাগ গুছিয়ে রেডি হয়ে নিলেন। রেদোয়ান রাস্তা থেকে একটা অটোরিক্সা নিয়ে এলো। আমরা বেরিয়ে পড়লাম শহরের উদ্দেশ্যে। পায়রাকে বাড়িতে রেখে আসা হলো।

আমাদের আসতে আসতে দুপুর গড়ালো। বাড়িতে আসার কিছুক্ষণ পরই হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। বাবা এখন সজাগ। বার বার তাকে নিতে না বারণ করছেন। তাকে অনেক দুর্বল দেখাচ্ছে। ডাক্তার কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা সহ ঔষধ পত্র দিলেন। সাথে সাথেই পরীক্ষা গুলো করিয়ে নিলাম। রিপোর্ট দেখাতে গিয়ে শুনলাম বাবার টাইফয়েড হয়েছে।‌ প্রতিদিন একটা করে ইনজেকশন দিতে হবে। মা তো হায় হুতাশ শুরু করলেন। ডাক্তার ঔষুধসহ ইনজেকশন এর নাম লিখে দিলেন। আমরা বাসায় চলে আসলাম।

বাবার ট্রিটমেন্ট নিয়মিত চলতে থাকলো। নিয়মিত ইনজেকশন সহ ঔষধ পত্র সবই ঠিকঠাক খাওয়াতে লাগলাম। সপ্তাহের মাথায় বাবা একটু সুস্থ হলো। এর মাঝে সায়রা দু বার এসে বাবাকে দেখে গেছে। পায়রা একবার এসেছিল। জানি না ও বাবাকে দেখতে এসেছিলো নাকি অন্য উদ্দেশ্যে এসেছিলো।‌ যতক্ষণ ছিলো ততক্ষণ শুধু একটা কথাই বলেছিলো ওর স্বামীকে একটা চাকরি খুঁজে দিতে। আশ্চর্য ব্যাপার আমি চাকরি পাবো কোথায়? সারাক্ষণই শুধু ও কানের সামনে ঘ্যান ঘ্যান করেছে। আমার স্বামীর যখন চাকরি ছিলো না কম তো বলে নি তখন। উঠতে বসতে অপমান করেছে। সেটা এখন বুঝুক ও।

আজ বিকেলে রুশা আপা এসেছে। আপাকে কেমন যেন দেখাচ্ছে। তার কথার ধরনও কেমন যেন। রুশা আপাকে চিন্তিত দেখাচ্ছে। তাকে এমন বিচলিত দেখে আমি জিজ্ঞেস করলাম, কি হয়েছে আপা? আপনাকে এমন লাগছে কেন?

আপা হেসে বললেন, চিন্তিত কেন লাগবে? খবর শুনেছো?

কি খবর আপা?

তোমার ছোট ননদ এসেছে। কাল এখানে আসবে।

এ তো ভালো কথা। ছোট আপা অনেক দিন পর এখানে আসছে। তার জন্য আয়োজন করতে হবে তো। আগে বলে দিয়েছেন ভালো করেছেন।

রুশা আপা আমার কথায় হাসলো। বললো, ওদের জন্য আয়োজন করবে ওদের তুমি চিনো না? ওরা কি বিনা উদ্দেশ্যে কখনো কোথাও যায়?

রুশা আপার কথা বেশ রহস্যময়। কিছুটা আঁচ করতে পারলেও সম্পূর্ণ বুঝে উঠতে পারছি না। তাই বললাম, আপা একটু ভেঙে বলেন না কি হয়েছে?

আপা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, অনেক কিছুই হয়েছে। সময় হলেই বুঝতে পারবে! সুখ আর বোধহয় বেশিদিন তোমার কপালে টিকবে না আয়রা।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here