দিন_বদলের_হাওয়ায়-১৬,১৭

0
719

#দিন_বদলের_হাওয়ায়-১৬,১৭
#তানজিলা_তিহা (লেখনীতে)
১৬

রুশা আপার কথা শুনে হা করে তাকিয়ে রইলাম। ওনার কথাগুলোকে গভীর ভাবে ভেবে চলেছি। আসলে কি বোঝাতে চাইছেন উনি? আপা আমাকে সবটা পরিষ্কার করে বলছেন না কেন? নানান ভাবনা মাথায় উঁকি দিচ্ছে। আমাকে এমন ভাবনায় ডুবে থাকতে দেখে রুশা আপা আবার বললেন, কি ভাবছো আয়রা?

কিছু না আপা। আমাকে একটু বলেন না কি হয়েছে। না বললে টেনশনে আজ আর আমার ঘুম হবে না।

রুশা আপা হাসলেন। বললেন, তাহলে তোমাকে আর টেনশন দিবো না। মা তো গ্রামে চলে গেছে সেই কবেই তা তো জানো?

জ্বি আপা।

আমার মা কেমন মানুষ সেটাও তো বেশ ভালো জানো। গ্রামে তো মা একা আছেন। একাই ঘরের সব কাজকর্ম করতে হচ্ছে তাকে। সেটা তার ভালো লাগছে না। মা গ্রামে থাকতে চাইছেন না। সেইজন্য আরকি ছোট মেয়েকে ফোন করে ডেকে আনছেন।

আমি ভীষণ অবাক হলাম। আমরা কি তাকে গ্রামে পাঠিয়েছি? তার মেজ বউয়ের জন্যই তো সে গ্রামে গেছে! সেই তো শাশুড়িকে গ্রামে পাঠাবে বলেছে। আমি শান্ত ভাবেই বললাম, আমি তো আম্মাকে গ্রামে যেতে বলি নি। ডিসিশন তো জুলি দিয়েছিলো।

হুম। কিন্তু সবটা দেখো তোমার ঘাড়ে পড়বে আয়রা। সাবধানে থেকো। কেউ কিছু বললে ছেড়ে দিয়ো না। তাহলে কিন্তু তোমায় দুর্বল ভেবে বসবে।

আমি নিরব রইলাম।

রাতে অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পথে জহির ভাইয়া রুশা আপাকে নিয়ে গেলেন। রেদোয়ান কিছুক্ষণ আগে বাড়িতে এসেছে। আমি বাবাকে খাইয়ে ঔষধ খাইয়ে দিলাম। রেদোয়ান বললো কাল বাবাকে হাসপাতালে নিতে হবে। কিন্তু সন্ধ্যায় তো শাশুড়ি ফোন করে বললো তারা কাল আসবে। ছোট ননদ ও আসবে। শুনেই তো মনে কু ডাকছিলো। যদি বাবাকে ডাক্তারের কাছে নেই আর ওনারা চলে আসেন তখন কি হবে? তাদের তো কিছু বলতে মুখে আটকায় না। যদি মা বাবাকে কিছু বলে দেয়? এখন কি করবো আমি? টেনশনে পড়ে গেলাম। রেদোয়ান হঠাৎ আমায় জিজ্ঞেস করলো, কি ভাবছো?

কাল তো আম্মা আসবেন। বাবাকে ডাক্তারের কাছে নেই কি করে বলো তো?

মা আসবে দেখে ওনাকে ডাক্তারের কাছে নেওয়া যাবে না? ডাক্তারের কাছে কি সারাজীবন থাকবে নাকি? ডাক্তার দেখিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করিয়েই তো চলে আসবে।

তবুও যদি চলে আসে?

আসলে আসবে তাতে কি? চুপচাপ ঘুমাও তো। সকালে আমার অফিস আছে।

ওর কথার পর আর কিছু বললাম না। চুপচাপ শুয়ে পড়লাম।

সকাল বেলা নাস্তা সেরে দশটার দিকে আমি আর মা বাবাকে নিয়ে হাসপাতালে গেলাম। ডাক্তারের এখানে লম্বা সিরিয়াল লেগেছে। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করার পর বাবাকে ডাক্তার দেখালাম। ডাক্তার পরীক্ষা নিরীক্ষা দিলেন। সেগুলো করলাম। রিপোর্ট দেখে উনি আরো নতুন কিছু ঔষধ লিখে দিলেন আগের কয়েকটা বাতিল করে দিলেন। বললেন বাবা ভালো আছেন। শান্তি পেলাম শুনে। বাবাকে নিয়ে বাড়ি ফিরতে ফিরতে দেড়টা বেজে গেলো। বাড়িতে এসে আমার চোখ আপনাআপনিই বড় হয়ে গেলো। যা ভেবেছিলাম গতকাল তাই হলো আমার ছোট ননদ আর শাশুড়ি এসেছেন সাথে রুশা আপাও আছেন। রুশা আপা মলিন মুখে দাঁড়িয়ে আছে। ছোট ননদের চেহারা রাগে লাল হয়ে আছে। শাশুড়ি আমার শান্ত ভাবেই বসে আছেন। আমাকে দেখে আমার শাশুড়ি আমার কাছে এগিয়ে এলেন। বললেন, কেমন আছো মা? কই গেছিলা এতো দেরি হইলো?

আমি স্বাভাবিক কণ্ঠেই বললাম, ভালো আছি আম্মা‌। আপনি কেমন আছেন?

আমার শাশুড়িকে কথা বলতে না দিয়ে আমার ননদ বললো, দুই ঘন্টা বাড়ির সামনে দাঁড় করিয়ে রেখে জিজ্ঞেস করো কেমন আছে? তুমি কি মানুষ?

তার কথায় তাজ্জব বনে গেলাম। দুই ঘন্টা যাবৎ তারা এখানে এসেছেন তাহলে আমাকে ফোন করলেন না কেন? আমি শান্ত ভাবেই বললাম, আমার বাবাকে ডাক্তার দেখাতে গিয়েছিলাম আপা। আপনারা একটা ফোন করতেন?

আমার ননদ তেজ দেখিয়ে বললো, কেন ফোন করবো কেন? তুমি জানো না আমরা আজকে আসবো তাহলে কোন আক্কেলে বাড়ি থেকে বের হও তুমি? তোমার বাবাকে আজকেই ডাক্তার দেখাতে হলো? বছরেও তো তোমাদের বাড়ি আসি নি। যখন আসি তখন তোমরা দুই ঘন্টা দাঁড় করিয়ে রাখো বাড়ির সামনে। এসব মানুষের কাজ?

রুশা আপা ওনাকে বললেন, রুনা তুই থাম এবার। অসুখ কি বলে কয়ে আসে নাকি?

সেটা কিভাবে বলবো আমি? আমার তো তাই মনে হচ্ছে। বলে কয়ে না হলে আজই কেন আসতে হবে? গতকাল সন্ধ্যায় ফোন করে বলেছিলাম না আসবো? যদি অসুখ থাকতো তবে তো ও কালই বলতে পারতো। আজ হঠাৎ অসুখের উদয় হলো কোথা থেকে?

আমি নিরব দাঁড়িয়ে রইলাম সেখানে। কথা বলার ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। আমার শাশুড়িও নিরব। মা বাবার দিকে তাকাচ্ছি বার বার। কতটা বাজে পরিস্থিতিতে পড়েছেন তারা। কেউ এভাবে বলে? বাবা তো অসুস্থ তার কেমন লাগছে? আমার চোখ পানিতে টইটুম্বর। সে আবার বললো, এখন কি দরজা খুলবে নাকি আরো দুই তিন ঘন্টা দাঁড় করিয়ে রাখবে?

আস্তে করে দরজার সামনে গিয়ে দরজার তালাটা খুললাম। দরজা খোলার সাথে সাথে রুনা আপা দ্রুত ঘরে প্রবেশ করলেন। আর বললেন, ব্যাগগুলো ঘরে নিয়ে এসো।

আমি আর মা বাবাকে ঘরে এনে শুইয়ে দিলাম। এরপর ব্যাগপত্র গুলো বাহির থেকে অনলাম। মা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছেন। আমি মাথা নিচু করে নিলাম। মা বললেন, আমরা আমগো বাইত্তে যাই গা রে মা। ডাক্তার দেহানের দিন দিন আইসা ডাক্তার দেখায়া যামু।

না মা। এতো জার্নি বাবার জন্য ঠিক হবে না। তোমরা এখানেই থাকো। ওনারা আর কয়দিন থাকবে? দুই একদিন পরই চলে যাবে।

মা আর কিছু বললেন না। আমি ভিতরের রুমে গেলাম। খাটের উপর রুনা আপা আর শাশুড়ি বসে আছেন। রুশা আপা পাশেই দাঁড়িয়ে আছেন। আমি গায়ের বোরখাটা খুললাম। রুনা আপা আমাকে বললেন, কত দূর থেকে আসলাম। একজন মানুষ বাড়িতে আসলে যে একটু পানি টানি দিতে হয় জানো না? সব খেয়ে ফেলেছো? ফেলবেই তো যে ছেলের বউ শাশুড়িকে দূরে পাঠিয়ে টই টই করে ঘুরে তার আবার এসব সম্পর্কে জ্ঞান থাকে নাকি? মুরুব্বি বাড়িতে না থাকলে এসব মনে থাকে নাকি? এসেই মা বাবার সাথে বিড়বিড় শুরু করে দিলে?

আমি যেন বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। হা করে তাকিয়ে রইলাম কিছুক্ষণ। এরপর ঘরে থাকা ট্যাং দিয়ে তাদের শরবত গুলিয়ে দিলাম। আমার শাশুড়িকে দেখছি আসার পর থেকেই চুপ আছেন। তিনি আর কি বলবেন সব তো মেয়েকে দিয়ে বলাচ্ছেন। রুনা আপা এক ঢোকে সবটা শরবত খেয়ে নিলেন। এরপর বললেন, তোমার বাবা মা এখানে কতদিন ধরে আছে?

আমি আস্তে করে বললাম, দশ দিন এসেছেন। বাবার টাইফয়েড হয়েছে।

বাব্বাহ্ নিজের মা বাবাকে দশ দিন বাড়িতে রাখতে পারো। আর শাশুড়িকে গ্রামে পাঠিয়ে দাও? ভালো নীতিই তো আবিষ্কার করেছো।

আমরা তো আম্মাকে গ্রামে পাঠাই নি আপা।

তাহলে কি বলতে চাচ্ছো মা নিজের ইচ্ছেয় গেছে? এই বয়সে বুড়ো মানুষটা নিজের কাজ নিজে করতে পারে? কিভাবে পারলে তাকে একা রাখতে?

ওনার কথার মাঝেই আমার মা এলেন। উনি মাকে দেখে বললেন, নিজের বাবা মাকে ঠিকই সাথে রাখছো আর ফূর্তি করছো।

রুশা আপা এগিয়ে এসে রুনা আপাকে বললেন, রুনা চুপ কর তুই। কি বলছিস? ওনারা কয়েকদিনের জন্য বেড়াতে এসেছেন আর তুই! চুপ থাক।

রুনা আপা তেজ দেখিয়ে বললেন, তুই চুপ থাকলে থাক আপা আমাকে কথা বলতে দে। নিজের মা বাবাকে সাথে রেখে আমার মাকে গ্রামে পাঠিয়ে দিয়েছে তাকে কিছু বলবো না আমি? তুই মাকে পর করে দিলে কি আমিও পর করে দিবো? অন্যদের সাথে মিলে দেখছি তো মায়ের সাথে কি ব্যবহার করছিস।

রুশা আপা চুপ হয়ে গেলেন। ভীষণ রকমের অবাক আমি। আমার মায়ের সামনে এসব কি বললেন উনি? মা মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে তার কথা শুনে। আমি মায়ের মুখের দিকে তাকানোরও সাহস পাচ্ছি না!

চলবে…..

#দিন_বদলের_হাওয়ায় [১৭]
#তানজিলা_তিহা (লেখনীতে)

‘আপনি আমার মা বাবাকে নিয়ে আর একটা কথাও বলবেন না আপা। আমার মা বাবা আপনারটা বা আপনার ভাইয়েরটা খেতে এখানে পড়ে রয় নি আপা। অসুস্থ বলে রয়েছে। মুখ সামলে কথা বলুন। অনেক সহ্য করেছি আপনার কথা। আমার মা বাবাকে নিয়ে আর একটা শব্দ উচ্চারণ করবেন না আপনি।’

তীব্র রাগে উচ্চস্বরেই কথাগুলো বলে ফেললাম। রুনা আপা হতভম্ব দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। বোধহয় আমার থেকে এমন কিছু আসা করেন নি। তিনি আমার দিকে তাকিয়েই আছেন। রাগে আমার হাত পা কাঁপছে। আমাকে নিয়ে বলুক আমি কিছু বলবো না কিন্তু আমার মা বাবাকে কেন বলবেন উনি? কোন অধিকারে বলবেন? আমার মা বাবা তো সহজে কোনদিন ওনাদের বাড়িতে আসেন নি। তবে কেন এই কথা উঠবে? রাগে আমার শিরা উপশিরা স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে আমাকে শান্ত হতে বললেন। রুনা আপা কিছুক্ষণ বাদে আমাকে বললেন, বড়দের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় তাও দেখি ভুলে গেছো। এতো তেজ আসে কোথা থেকে তোমার?

বড়দের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় তা আমি আপনার থেকে ভালো জানি আপা। আমার মা বাবা আমাকে এই শিক্ষাটা দিয়েছে। কিন্তু আপনার মধ্যে এর অভাব রয়েছে। যদি এই শিক্ষা আপনার মধ্যে থাকতো তবে নিজের মা বাবার বয়সী আমার মা বাবাকে এভাবে বলতে পারতেন না আপা। আবার নিজের বড় বোনের মুখের উপর কথা বলে তাকে বোবা বানিয়ে দিতেন না।

তুমি সীমা অতিক্রম করছো আয়রা! তুমি আমার শিক্ষা নিয়ে কথা বলছো?

আপনার কি মনে হয় আপনি আপনার সীমায় আছেন আপা? একটা মিথ্যেকে বার বার বলতে আপনার লজ্জা করে না আপা? আপনার মা আপনার বাড়ি যেয়ে থাকতে পারবে কিন্তু আমার মা আমার বাড়ি আসলে অপরাধ? এই নীতি আপনি কোথায় পেলেন আপা? আমার বাড়িতে এসে আমাকে নিয়ে আমার বাবা মাকে নিয়ে কথা বলতে আপনার বিবেকে বাঁধে না? দুদিনের জন্য ভাইয়ের বাড়িতে বেড়াতে এসে এসব না করে শান্তিতে থাকা যায় না আপা?

রুনা আপা হা করে তাকিয়ে আছেন। তিনি কথা বলতে পারছেন না। আমার শাশুড়িও কেমন ঝিম কেটে আছে।রুনা আপা রাগ সংযত করে বললেন, তোমার সাহস তো কম নয় আয়রা! দেখি আজ রেদোয়ান আসুক। তোমার একটা ব্যবস্থা করেই ছাড়বো।

হ্যাঁ ব্যবস্থা তো একটা হওয়াই উচিত। সেটা হোক আপনার অথবা আমার। অনেক পার পেয়েছেন। আমাকে শান্ত পেয়ে অনেক বলেছেন। আজ এর একটা ব্যবস্থা হবেই।

বলেই আমি সেখান থেকে চলে আসলাম। মা আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। তাকে এমনভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বললাম, এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?

হুদ্দাই ঝগড়াডি করলি কেন? জামাইয়ের কাছে কইলে তুই কি করবি তখন?

কেন? যা করার তাই করবো। যদি সে সবটা না জেনে বোনের কথায় আমাকে শাসন করে তবে তার সংসারে আর থাকবো না।

এডি কইতে হয় না মা। আল্লাহ বেরাজি হয়।

আমি আর কিছু বললাম না।

রুনা আপা এখনো বিড়বিড় করে আমাকে নিয়ে কিছু একটা বলছেন। আমি সেদিকে ততটা পাত্তা দিলাম না। নিজের মতো নিজের সব কাজ করতে লাগলাম। দুপুরের খাওয়া দাওয়া শেষে ভিতরের রুমে রুনা আপা আর আমার শাশুড়ি শুয়ে পড়লেন। আমি মা আর বাবা সামনের রুমেই আছি। আমাদের সাথে রুশা আপাও আছেন। রুশা আপা আমাকে বললেন, আয়রা তুমি যে এতো কথা বলতে পারো আমি জানতাম না।

আমি কিছু বললাম না। চুপ করে রইলাম।

রুশা আপা আবার বললেন, যাক ভালোই হলো। সবসময় চুপ থাকতে হয় না কিছু সময় বলতেও হয়। রেদোয়ানের সামনে কিন্তু ড্রামা শুরু করবে নতুন সামলে থেকো।

আচ্ছা আপা আম্মা এতো চুপচাপ কেন?

আমিও তাই ভাবছি। বুঝতে পারছি না ঠিক কি হয়েছে। আসার পর থেকেই আম্মা চুপ।

আমি আর কিছু বললাম না।

বিকেলে রুশা আপা চলে গেলেন। আমি আর মা নীরবে বসে আছি‌। বাবা ঘুমাচ্ছিলেন। রেদোয়ান তখন আসলো। তাকে এতো তাড়াতাড়ি বাড়িতে ফিরতে দেখে বেশ অবাক হলাম। জিজ্ঞেস করলাম, তুমি এতো তাড়াতাড়ি অফিস থেকে ফিরলে যে?

ছুটি নিয়েছি। রুনা আপা ফোন করে বললো জলদি আসতে।

এবার বুঝতে পারলাম আসলে ব্যাপার। আমি আর বেশি কিছু বললাম না। রেদোয়ান গোসল সেরে আসলে তাকে খাবার বেড়ে দিলাম। আজ আর আমি তার সামনে বসলাম না। আমি মায়ের কাছে গিয়ে বসলাম। এ ঘর থেকেও শোনা যাচ্ছে রুনা আপার বিড়বিড়ানির শব্দ। জানি না কি বলছেন উনি। তবে ভালো কিছু বলছেন না এটা বুঝতে পারছি।

খাওয়া শেষে রেদোয়ান আমাকে ডাক দিলো। আমি বাসনপত্র সব গুছিয়ে নিলাম। এরপর ও আমাকে বললো, বাড়িতে কি হয়েছে আয়ু?

রুনা আপা আমায় কিছু না বলতে দিয়ে তিনি বললেন, আমি তোকে বললাম না কি হয়েছে? তোদের বাড়িতে বেড়াতে এসেছি তোর বউয়ের কথা শুনতে?

রেদোয়ান তাকে শান্ত ভাবেই বললো, হ্যাঁ আপা তাইতো। এখন আমার বউ কি বলেছে তা সে নিজের মুখে বললে ভালো হতো না? দুই পক্ষের কথাই তো শোনা উচিত। আয়রা তুমি বলো তো কি হয়েছে।

বাড়িতে যা যা হয়েছে আর আমি যা কিছু বলেছি সবটাই আমি রেদোয়ানকে বললাম। রুনা আপা মাঝে অনেক বার ফোড়ন কেটেছেন। কিন্তু রেদোয়ান তাকে থামিয়ে দিয়েছে। আমার বলা শেষ হলে রুনা আপা বললেন, ও আমার শিক্ষা নিয়েও কথা বলেছে শুনলি? আমি তোদের এখানে এসে কি অপরাধ করেছি?

আমিও তৎক্ষণাৎ বলে ফেললাম, আপনি যে আমার মা বাবাকে যা ইচ্ছে তাই বলেছেন! আমার বাবা মায়ের নামে মিথ্যে অপবাদ দিয়েছেন সেটা? আপনি আবার এটা নিয়ে কথা বলছেন আপনার এখনো লজ্জা করে না?

ওই দেখলি দেখলি তোর বউ কি বললো! এর একটা বিচার আজ তোকে করতেই হবে।

রেদোয়ান শান্ত কণ্ঠেই বললো, কি বিচার করবো আপা? আয়রা যা বলেছে তা তোর জন্য কমই। দেখ আপা কারো মা বাবাকে এভাবে বললে কোন সন্তান চুপ থাকবে না। আমি আমার স্ত্রী সম্পর্কে যথেষ্ট অভিজ্ঞতা রাখি রে আপা। ওকে তোরা সারাদিন গাল মন্দ করলেও তোদের কিছু বলবে না। কিন্তু তুই কি করলি রে আপা?

ও বুঝতে পেরেছি। বউয়ের গোলাম হয়ে গেছিস। বউ যা বলবে তাই রাইট। আমাদের কথার মূল্য নেই। আমরা খারাপ কথাই বলি।

রুনা আপা আহাজারি শুরু করলেন। রেদোয়ান বিরক্ত হয়ে বললেন, তোর যা ইচ্ছে মনে কর আপা। ওকে আর একটা কথাও তুই বলবি না। আয়রার সাথে মিলে থাকতে পারলে আমার বাড়ি আসিস আর না পারলে আসিস না।

রুনা আপা আমার শাশুড়িকে বললেন, দেখলে মা দেখলে তোমার ছেলে কত পাল্টে গেছে। বউয়ের আঁচল ধরে চলে। ও আমার সাথে কি ব্যবহার করলো দেখলে তুমি?

আমার শাশুড়ি সারাক্ষণই নীরব ছিলেন। রুনা আপার কথায় তিনি মুখ খুললেন বললেন, কি কমু আমি? ঠিকই তো কইছে। আসার পর থেইকা কম কইছোছ তুই মাইয়াটারে? ও তোরে কমই কইছে। আচ্ছা তোর মায়েরে যদি তোর ননদ এমনে কইতো তাইলে তুই চুপ থাকতি? দেখতাছোছ মাইয়াটার বাপ অসুস্থ এরপরও ইচ্ছা কইরা ওরে কত কি শুনাইলি। ওর জায়গায় একবার নিজেরে বসায়া দেখ।

শাশুড়ির কথা শুনে রুনা আপা হতভম্ব দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন শাশুড়ির দিকে। আমিও অবাক। আমি আর রেদোয়ান একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছি অবাক দৃষ্টিতে! তিনি আমার পক্ষে সাফাই গাইছেন কেন?

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here