দিন_বদলের_হাওয়ায়-৮,০৯

0
477

#দিন_বদলের_হাওয়ায়-৮,০৯
#তানজিলা_তিহা (লেখনীতে)
০৮

আমার কথায় আমার শাশুড়ি হকচকিয়ে গেলো। সে হয়তো ভাবতে পারে নি তার মুখের উপর চট করে কথাটা বলবো আমি। আমার শাশুড়ির মুখটা কালো হয়ে গেলো। রে/গে গেলেন হয়তো। শান্তি আমার কথা শুনে শাশুড়িকে আবার জিজ্ঞেস করলো,

‘কি হলো আম্মা কথা বলছেন না কেন? ভাবি যা বললো তা যদি সত্যি হয় তাহলে এতো বাজার সদাই গেলো কোথায়? আপনাকে দেখে তো মনে হয় না আমরা যাওয়ার পর চুলায় আ/গু/ন ধরিয়েছেন।’

আমার শাশুড়ি আমার দিকে একবার বি/র/ক্তিকর দৃষ্টিতে তাকিয়ে ওকে বললেন, বাজার তো ছিলো। কিন্তু পাশের মাদ্রাসার এতিম কয়টা ছেলেপেলে গো পরশু খাওয়াইছি। তাই শেষ হয়ে গেছে।’

আমি তৎক্ষণাৎ শাশুড়িকে বললাম, ‘আম্মা আমি না শুনে গেছিলাম গত পরশু এখানে এমপি সাহেবের আশার কথা ছিলো। তিনি আসেন নাই? আর তিনি আসলে তো মাদ্রাসায় নিজে খাবার দিয়ে যায়।’

আমার কথায় শান্তি বললো, ‘হ্যাঁ তাই তো আম্মা। আপনি এগুলো কি করলেন?’

এইবার শাশুড়ি ভালো জ/ব্দ হয়েছে। আমি জানি আমার বলা কথাগুলোর শোধ আমার শাশুড়ি নিশ্চয়ই নিবে। নিক তবে এবার তো প্রতিবাদ করতে পেরেছি তাই শান্তি। শান্তির কথার জবাবে শাশুড়ি কিছুই বলতে পারলেন না। আমতা আমতা করতে লাগলেন। শান্তির বুঝতে দেরি হলো না। ও শাশুড়িকে বললো, এতো হু না কেন করছেন আম্মা? আপনার মেয়ের বাড়িতে যে পাঠিয়ে দিয়েছেন সেটা বললেই তো হয়! আমি আপনার মতো মানুষ দেখি নি। এখন আমরা এতো গুলো মানুষ খাবো কি? আপনার মেয়ে কি আমাদের খাওয়াবে নাকি? বলুন তো আপনার মেয়েকে আমাদের জন্য খাবার নিয়ে আসতে। দেখি কত দরদী!

শান্তি বিড়বিড় করে আরো অনেক কিছুই বললো শাশুড়িকে। শাশুড়ি চুপচাপ শুনছেন কিছু বলতে পারছেন না। আমি হলে হয়তো এতক্ষণে কু/রু/ক্ষে/ত্র বানিয়ে ফেলতেন। আমি আর এসবে থাকলাম না। নিজের ঘরে চলে গেলাম।

কিছুক্ষণ পর শান্তি আমার কাছে এসে বললো, ভাবি আমি বাজারে যাচ্ছি। তুমি আমার ঘরটা গুছিয়ে দিয়ো।

শান্তি চলে গেলো। আমি কাজে লেগে পড়লাম। শান্তির ঘর গুছিয়ে ঘরে ঝাড়ু দিয়ে দিলাম। হঠাৎ মনে হলো স্বর্ণা ভাবির সাথে কথা বলা দরকার। তাই স্বর্ণা ভাবির ঘরে গেলাম। ওনাদের বাসায় কলিং বেল দিতেই উনি দরজা খুলে দিলেন। আমাকে দেখে বললেন, আরে ভাবি আপনি ভিতরে আসুন।

আমি ভিতরে গেলাম। ভাবি আমাকে ড্রইং এর সোফায় বসতে বললেন। এরপর বললেন, বলুন চা খাবেন নাকি কফি?

কিছুই খাবো না। একটু দরকারি কথা ছিলো তাই এসেছি। এখনই যেতে হবে বাসায় কাজ আছে।

জানি তো আপনার দম ফেলার সময় হবে না এখন। শান্তি ভাবিকে দেখলাম এসেছে।

হুম। বলছিলাম আপনি যে গতকাল আপনার বান্ধবীর ছেলেদের কথা বললেন তারা কি পড়বে? নাকি টিচার নেওয়া হয়ে গেছে তাদের জন্য।

হ্যাঁ পড়বে তো অবশ্যই, এখনো নেওয়া হয় নি।

রেদোয়ান পড়াবে বলেছে। এখন যদি আপনার বান্ধবী পড়াতে দেয় তবে…

অবশ্যই দিবে। আমি তাহলে ভাইয়ার নাম্বারটা ওকে দিয়ে দিবো। নাম্বারটা বলুন।

আমি রেদোয়ানের নাম্বার দিলাম। খুব ভালো লাগছে। ভাবির থেকে বিদায় নিয়ে ঘরে চলে আসলাম। কিন্তু দরজার সামনে আসতেই ভিতর থেকে শাশুড়ির ক/র্ক/শ শব্দ শুনতে পেলাম। রেদোয়ান হয়তো বাড়িতে এসেছে। আমার শাশুড়ি চিৎকার করে বলছে,

তোর বউ কি আর ঘরে থাকে? পাড়ায় পাড়ায় আড্ডা দিতে যায়। সেই কখন গেছে এখনো আসে না। ঘরের বউ ঘরে থাকবো তা না সারা পাড়া মাথায় নিয়া ঘুরবো। যত্তসব। আমি এখন কিছু কইলেই আমার দো/ষ।

ভীষণ অবাক হলাম। রেদোয়ান বললো, মা তুমি ভুল ভাবছো। আয়রা ওমন না। তোমার সাথেই তো কত বছর ধরে থাকছে। ও কোথায় গেছে তা কি জানো?

দেখ গিয়া কোনে আড্ডা দিতাছে। আমারে জিগাছ কেন? আমি কেমনে কমু তোর বউয়ের খবর? আমারে জিগায়া গেছে নি ও?

শাশুড়ির রা/গী কথার কারণ বেশ বুঝতে পারছি। সকালের জে/দটা এখন মিটিয়ে নিচ্ছেন। দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। দরজায় কলিং বেল বাজাতেই রেদোয়ান দরজা খুলে দিলো। জিজ্ঞেস করলো, কোথায় গিয়েছিলে?

স্বর্ণা ভাবিদের বাসায় গিয়েছিলাম। গতকালের বিষয়ে একটু আলাপ করলাম।

রেদোয়ান আর কিছু বললো না। আমার শাশুড়ি কেমন করে যেন তাকিয়ে আছে। আমি সেদিকে গুরুত্ব দিলাম না। নিশ্চুপ ভাবে নিজের ঘরে চলে এলাম।

কিছুক্ষণ পর শান্তি এলো। আমি আমার কাজে ভর্তি হয়ে গেলাম। রান্নাঘরে ব্যস্ত হয়ে গেলাম। রান্না শেষ করে এরপর রান্নাঘর থেকে বের হলাম। ঘামে পুরো চুপসে গেছি। তাই গোসল করে নিলাম। গোসল সেরে সবাইকে খাবার দিলাম। এ বাড়িতে আবার কেউ কারো সাথে খেতে পারে না। যারটা তার ঘরে গিয়ে দিয়ে আসতে হয়। এ নিয়ম আগে ছিলো না। অল্প কিছুদিন যাবৎ তৈরি হয়েছে। সবার ঘরে গিয়েই খাবার দিয়ে আসলাম। রেদোয়ানকেও দিলাম। খাবার দেওয়ার কিছুক্ষণ পর আমার শাশুড়ির ঘর থেকে চেঁচামেচির শব্দে সেখানে গেলাম। শাশুড়ি খাচ্ছে আর বলছে, এগুলো কি রান্না করছে আল্লাহ মাবুদ! এতো লবণ কেউ খাবারে দেয়। মরিচ দিয়ে খাবার লাল করে ফেলছে। আমারে মনে হয় বেশি দিন বাঁচতে দিতে চায় না এখনই এডি খাওয়ায়া মা/র/তে চায়।

নানান কথা বলছেন উনি। আমি শুনেও না শোনার ভান ধরে চলে এলাম। ঘরে এসে রেদোয়ানের প্লেট থেকে একটু তরকারি মুখে দিলাম। নাহ লবণ আর ঝাল তো ঠিকই আছে। তবে এতো চেঁচামেচির কারণ কি? আমি রেদোয়ানকে জিজ্ঞেস করলাম, আজকের তরকারি কেমন হয়েছে?

রেদোয়ান হেসে বললো, তা কি আর বলতে হয়? তোমার হাতের রান্না বলে কথা ভালো না হয়ে কি উপায় আছে?

আমি হতাশার নিঃশ্বাস ফেলে বললাম, লবণ ঠিক আছে তরকারির?

হ্যাঁ। একদম পারফেক্ট।

ঝাল হয়েছে বেশি?

না। মোটামুটি হয়েছে যেটা সবসময়ই খাই।

তাহলে মা চেঁচামেচি করে খাবারে লবণ বেশি ঝাল বেশি এগুলো বলছে কেন?

রেদোয়ান তৎক্ষণাৎ খাওয়া বন্ধ করে দিলো। মুখটা মলিন করে বললো, বাদ দেও না। মা তো এমনই। কিছু মনে করো না। ঠিক হয়ে যাবে আবার।

আমি কিছু বললাম না। দেখলাম রেদোয়ান ভাত নড়াচড়া করছে। খাবার মুখে তুলছে না। হয়তো ক/ষ্ট পেয়েছে। নিজের ভু/ল বুঝতে পারলাম। এই মুহূর্তে এ কথাটা তাকে বলা আমার মোটেও উচিত হয় নি। এখন সে খেতেই পারবে না। মায়ের ব্যবহারে নিশ্চয়ই ক/ষ্ট পেয়েছে। যতই হোক মা তো তার। আমি তাকে বললাম,

আজ স্বর্ণা ভাবিকে বলেছি। উনি তোমার নাম্বার নিয়েছেন। বলেছেন তার বান্ধবীকে বলবেন।

তাই নাকি? ভালোই তো।

হুম। কিন্তু জিজ্ঞেস করা হলো না স্টুডেন্ট কোন ক্লাসে পড়ে।

ওটা গেলেই বোঝা যাবে। দেখি ফোন আসে কিনা।

হুম।

বিকেলে সেই ছাত্রদের বাবা ফোন করলেন রেদোয়ানকে। রেদোয়ানকে যেতে বলা হয়েছে। ঠিকানা মেসেজে দিয়ে দিবেন বলেছেন। রেদোয়ান তৈরি হয়ে সেখানে গেলো। আমি হাঁড়ি পাতিল ধুয়ে রাতের খাবারের আয়োজন করতে লাগলাম। এমন সময় শান্তি এসে আমাকে বললো, ভাবি রুশা আপা কি এই বাড়িতে এসেছিল?

হ্যাঁ গতকাল এসেছিলো তো।

আম্মা কি তাকে ঘরের বাজার সদাই সব দিয়ে দিয়েছে?

আমি কি বলবো ভেবে পাচ্ছি না। আপাতত ঝ/গ/ড়া ফা/সা/দ চাই না। তাই বললাম, আমি তো তা জানি না শান্তি। রুশা আপা আম্মার ঘরে ছিলো সারাক্ষণ।

শান্তি কি যেন ভেবে চলে গেলো।

আমি আমার কাজে মন দিলাম। কাজ টাজ সেরে ঘরে এসে বসে থাকলাম। কিছুক্ষণ পর রেদোয়ান আসলো। ওর চোখে মুখে হাসি। ওকে এতো খুশি দেখে বললাম, কি হয়েছে? এতো খুশি দেখাচ্ছে তোমাকে?

কাল থেকে পড়াতে যাচ্ছি।

খুশি হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, তোমাকে রেখেছে তারা?

হ্যাঁ। দুটো ছেলেকে পড়াতে হবে। একটা সেভেনে পড়ে আরেকটা এইটে। দুজনকে মিলিয়ে মাসে চার হাজার টাকা বেতন দিবে।

তাহলে ভালোই তো। কিছুটা হলেও তো উপকার হবে এতে!

ভীষণ ভালো লাগছে। দুজনেই আজ আমরা খুব খুশি।

এর মাঝেই কেটে গেলো চার দিন। ভালো চলছে সব। রেদোয়ান এখন পড়াতে যায়। তার স্টুডেন্টরা নাকি তাকে অনেক পছন্দ করে। রোজ এসে তাদের গল্প শোনায়। আমার শাশুড়ি এখন আর আমার সাথে ভু/লেও কথা বলে না। শান্তি প্রয়োজনে দু একটা কথা বলে। এছাড়া সেও কথা বলে না। এতে অভ্যস্ত আমি। আজ আমার মেজ জা এসেছে। ও আসার কিছুক্ষণ পরই সবাইকে ডাকলো। কি যেন কথা আছে সবার সাথে। সবাইকে শাশুড়ির ঘরে ডাকলো। আমি আর রেদোয়ান দুজনেই সেখানে গেলাম।

কিন্তু সেখানে গিয়ে আমার মেজ জায়ের কথা শুনে ভীষণ অবাক হলাম!

চলবে…..

#দিন_বদলের_হাওয়ায় [৯]
#তানজিলা_তিহা (লেখনীতে)

আজ আমার মেজ জা এসেছে। ও আসার কিছুক্ষণ পরই সবাইকে ডাকলো। কি যেন কথা আছে সবার সাথে। সবাইকে শাশুড়ির ঘরে ডাকলো। আমি আর রেদোয়ান দুজনেই সেখানে গেলাম। আমার শাশুড়ি, ছোট জা, মেজ জা সবাই বসে আছে একসাথে। ওদের এভাবে নিশ্চুপ বসে থাকতে দেখে আমি বললাম, আমাদের ডেকেছো জুলি?

আমার মেজ জা আমার কথা শুনে আমার দিকে মুখ ফিরিয়ে বসলো। বললো, হ্যাঁ ভাবি একটু কথা তো ছিলো।

বলো কি বলবে।

কথাটা হচ্ছে ভাবি…

আমার জা আমতা আমতা করতে লাগলো। শান্তি ওর এই সুর দেখে বললো, এতো ইনিয়ে বিনিয়ে ঢং করো না তো ভাবি। কি বলতে ডেকেছো তাই বলো তো জলদি। কি কারণে আমাদের এখানে জড়ো করলে?

জুলি এবার স্পষ্ট সুরে বললো, কথাটা হচ্ছে ও তো বিদেশ। আমি একা। আমি চাচ্ছি এখন থেকে আমি আমার বাপের বাড়ি থাকবো। তাহলে আমার সাংসারিক খরচ কিছুটা বেঁচে যাবে। আমার আয় হবে।

জুলির কথায় ভীষণ অবাক হলাম। ওর কথা শেষ হতেই শান্তি বললো, তুমি এ কথা বলছো ভাবি? আমিও তো একা। তাহলে আমিও আমার বাপের বাড়ি চলে যাবো। এটাই ভালো হবে।

শাশুড়ি ওদের কথা শুনে বললেন, কি বলো তোমরা? দুইজনেই চইলা গেলে। সংসারের কি হইবো? বাড়ি ভাড়া, সংসার খরচ কিভাবে চলবো?

জুলি শাশুড়ির কথা শেষ হতেই ঝটপট বললো, আমরা দুজনেই যদি চলে যাই তবে বাড়িটা ছেড়ে দিবো মা।

তাহলে আমরা এতোগুলা মানুষ থাকমু কই?

আমার শাশুড়ি চিন্তিত হয়ে বললেন। শান্তি তাকে বললো, আম্মা আপনি তবে গ্রামের বাড়িতে চলে যান। মাসে মাসে আমরা আপনার জন্য খরচ পাঠিয়ে দিবো। সেটা দিয়ে আপনি চলতে পারবেন।

তাহলে রেদোয়ান আয়রা?

জুলি আমতা আমতা করে বললো, ভাইয়া তো এখন কিছু একটা করছে। তাদের সংসার তারাই তো চালাতে পারবে এখন। ঠিক না ভাইয়া?

রেদোয়ানকে উদ্দেশ্য করে শেষোক্ত প্রশ্নটি করলো জুলি। রেদোয়ান স্বাভাবিক ভাবেই বললো, হ্যাঁ কেন পারবো না? আমার সংসার আমাকেই তো চালাতে হবে। তোমরা যেহেতু নিজেদের ডিসিশন জানিয়ে দিয়েছো তখন তো আর কিছু করার নেই।

জুলি বিনিময়ে হাসলো। শান্তি বললো, তাহলে তো বাড়িওয়ালাকে বাড়ি ছাড়ার কথা বলতে হয়। এ মাসের তো শেষ দিক চলে এসেছে। এবার ভাড়া দেওয়ার সময় বলে দিবো। তাহলে আর এক মাস পর বাড়িটা ছাড়তে পারবো।

শাশুড়ি বললেন, কিন্তু দেশের বাড়িতে আমি একলা থাকমু কেমনে? একলা একলা এতো কাম করমু কেমনে?

শাশুড়ির কথা শুনে মনে মনে ভাবলাম এই যাত্রায় তার একটা শিক্ষা হবে। কয়েক বছর ধরে তো এখানের কুটাটা ওখানে নেন নি। এ বাড়িতে আসার পর থেকে তাকে রান্নাঘরে রান্না করতে যেতে আমি দেখি নি। গত ছয় মাসে তো আরো বেশি অকর্মা হয়ে গেছেন তিনি। আগে আমি রান্নাঘরে থাকলে এক বার হলেও যেয়ে জিজ্ঞেস করতেন কি রান্না করছি কিছু লাগবে না ইত্যাদি। এখন তাও করেন না। এবার উনি বুঝবেন কেমন লাগে।

শান্তি বললো, আপনি একাই তো আম্মা। তত কাজ তো নেই। একা মানুষের আর কি? ঠিকই সব করে ফেলবেন দেখবেন।

শাশুড়ি আর কথা বাড়ালো না। যে যার মতো যার যার ঘরে চলে গেলো। আমি আর রেদোয়ানও ঘরে চলে এলাম। রেদোয়ান খাটে বসে চিন্তামগ্ন হয়ে পড়লো। কিভাবে কি করবে সেই নিয়েই হয়তো ভাবছে। আমি ওর পাশে গিয়ে বসে পড়লাম। জিজ্ঞেস করলাম, কি ভাবছো?

রেদোয়ান দীর্ঘশ্বাস ফেললো। বললো, ভাবছি বাবার কথা। আমি আমার বাবার মতো হতে পারলাম না।

কেন?

বাবা তার ভাইবোনদের আগলে রাখতেন। কিন্তু আমি! আমাদের সাজানো গোছানো সংসারটা ভেঙে যাচ্ছে।

এটা কি তোমার ব্যর্থতা? ওরা তোমার সাথে না থাকতে চাইলে তুমি ওদের আগলে রাখবে কেন?

রাখছি না তো। দেখলে না যা খুশি তাই করতে বললাম।

তুমি ওদের কথা ভাবছো আমাদের কথা ভাবছো না? আমরা কোথায় থাকবো? কি করে থাকবো? খাবো কি?

আমাদের একটা ব্যবস্থা হবেই দেখো। সব তো আল্লাহর হাতে।

তা তো জানি। দুটো টিউশনিতে আমাদের চলবে?

দুটো খেয়ে পড়ে চলে যাবে। থাকতে পারবে না আমার সাথে ছোট্ট কুঁড়ে ঘরে?

তুমি যেখানে যেভাবে রাখবে আমি সেভাবেই থাকতে পারবো।

তাহলে এতো কথা কিসের? দিন চলে যাবে আমাদের।

আমি আর কিছু বললাম না। দিন ঠিকই চলে যাবে। এখন যেমন কেটে যাচ্ছে দিন তখনও কাটবে। এখন কষ্টে আছি হয়তো তখন আরেকটু বেশি কষ্ট হবে। কিন্তু তখন শান্তিতে থাকবো। কেউ তখন খোঁটা দিতে পারবে না। মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারবো।

___________

সময়ের আপন গতিতে চলমান। কেটে গেলো সাত দিন। ভালো খারাপ মিলিয়েই দিন গুলো কেটে গেলো। আজ আমার মামা শ্বশুর আর মামি শাশুড়ি বেড়াতে আসবেন। তাদের জন্য রমরমা আয়োজন করা হচ্ছে। শাশুড়ি বলেছেন আমার মামা শ্বশুর আর মামি শাশুড়ির আদর যত্নে যেন কোনো কমতি না হয়। আমি তার নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছি। আমার মামা শ্বশুর খুব ভালো মনের মানুষ। তিনি মাস তিনেক আগে আমাদের বাড়িতে আরেক বার এসেছিলেন। তখন আমার অবস্থা দেখে মাথায় হাত রেখে বলেছিলেন, তুই সুখী হবি দেখবি মা। এখন দুর্দিন আছে সুদিন একদিন তোর আসবে। দেখছিস না তোর দুর্দিনে মানুষ গুলো যেমন বদলে গেছে তোর সুদিনে তারা ঠিক একই ভাবে বদলে যাবে। তখন তারা আগের মতো হয়ে যাবে বুঝলি। এটাই জগতের নিয়ম রে মা। এই স্বার্থপর গুলোকে কখনো আপন ভাবিস না রে মা।

মামার কথা গুলো শুনতে খুব ভালো লেগেছে। কষ্টও লেগেছে। দুর্দিন বদলে কবে আমার সুদিন আসে সেই অপেক্ষাই করছি আমি। নিশ্চয়ই একদিন সুদিনের দেখা পাবো!

রান্নাঘরে কাজ করছিলাম রেদোয়ান তখন বাসায় আসলো। এসেই আমাকে ডাক দিলো। আমি হাতের কাজটা শেষ করে ঘরে গেলাম। রেদোয়ানকে বেশ খুশি খুশি দেখাচ্ছে। জিজ্ঞেস করলাম, এতো খুশি কেন তুমি?
ডাকছিলে কেন?

কথা আছে বসো।

ও আমাকে হাতের ইশারায় ওর পাশে বসতে বললো। আমি বসে পড়লাম। ও বললো, আজ সকালে আমার ছাত্র রাফি ফোন করে বললো ওর তিনটা বন্ধু আমার কাছে পড়তে চায়।

বেশ খুশি হলাম। বললাম, তুমি কি বললে?

যদি পড়তে চায় তবে মন্দ কি? আমি বলেছি পড়তে চাইলে পড়াবো।

বেশ করেছো। আমাদের দিন তাহলে কোনমতে চলেই যাবে।

রেদোয়ান হাসলো তবে কিছু বললো না।

বিকেলের দিকে আমার মামা শ্বশুর আর মামি শাশুড়ি এলেন। রাস্তায় প্রচুর যানজট তাই আসতে দেরি হয়েছে। তারা আসার পর পরই ভুরিভোজের আয়োজন শুরু হলো। ভুরিভোজ শেষ হওয়ার পর আমার শাশুড়ির সাথে মামি গল্প পাতিয়ে দিলেন। মামা ড্রইং এ বসে আছেন। রেদোয়ান পড়াতে গেছে। আমি বাসনপত্র সব গুছিয়ে হাঁড়ি পাতিল ধুয়ে মুছে রান্না ঘর থেকে বের হতেই মামা আমাকে ডাকলেন। আমি তার কাছে গেলাম। মামার কাছে যেতেই মামা আমাকে বললেন, বস আমার পাশে।

আমি বসলাম। মামা পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, কেমন আছিস?

এইতো ভালোই।

রেদোয়ান কোথায় গেলো?

পড়াতে গেছে।

চাকরি পেয়েছে?

আমি হেসে বললাম, না আর চাকরি। টিউশনি করে।

ভালোই তো। শুনলাম তোদের বাড়ি নাকি ছেড়ে দিবি?

হ্যাঁ। ওরা আর থাকতে চাচ্ছে না। আমরা কি করতে পারি বলুন? আমাদের তো এখন আর সেই জোর নেই যে নিজ পকেটের টাকা দিয়ে বাড়ি ভাড়া মিটিয়ে সবাইকে একসাথে রাখবো।

তা ঠিক। কিন্তু যখন সেদিন চলে আসবে তখন দেখবি এসব দুধের মাছিরা কোথাও যাচ্ছে না।

আমি হাসলাম। মামা আমায় আবার জিজ্ঞেস করলেন, এ বাড়ি ছাড়লে তোরা কোথায় যাবি?

দেখি কোথায় যাই। এ শহরে তো ভাড়া বাসার অভাব নাই। আমাদের টোনাটুনির জায়গা কোথাও হয়েই যাবে।

আয়রা তোকে একটা কথা বলি শোন। জীবনে চলার পথে অনেক বাঁধা অনেক বিপত্তি আসবে। আসবে দুঃখ, আসবে সুখ। সবকিছুকেই নিয়ে জীবন। সবসময় দুঃখ কষ্ট থেকে শিক্ষা নিবি। সুসময়ের বন্ধু গুলোকে সবসময় লাল মার্ক করে রাখবি। দুঃখ শেষে তারা কিন্তু আবার ফিরে আসবে। তখন তাদের পাত্তা দিস না কিন্তু। আর যদি তা না পারিস তাদের কিছু না বলতে পারলেও মনে জায়গা দিস না। তাহলে জীবনে ঠকে যাবি।

মামার কথায় উত্তরে কিছু বললাম না। কিন্তু ভাবনায় পড়ে গেলাম। সত্যি কি আমার সুদিনে তাদের পাশে রাখবো আমি? কখনোই না! তাদের থেকে পাওয়া কষ্টগুলো আমার অন্তরকে ক্ষ-ত-বি-ক্ষ-ত করে ফেলেছে। জানিনা আমার শেষ পরিণতিতে কি আছে। কখনো কি তাদের ক্ষমা করতে পারবো আমি?

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here