গল্পের নাম : #দি বাটারফ্লাই ইফেক্ট
লেখিকা : #আরফিন জাহান আনিকা
পর্ব : ২.( ❌কপি করা নিষেধ❌)
দুপুরের প্রচণ্ড গরমে বাসস্টানে রোদে দাড়িয়ে আছে রোদেলা। গরমে ঘেমে অবস্থা বেহাল। বারবার ঘড়ির কাটার দিকে তাকাচ্ছে। আজ হয়ত অফিস যেতে দেরীই হয়ে যাবে। কপালের ঘামে ভিজে যাওয়া চুলগুলো কানের পিছে গুজে দেয়।
সিফটি ডিউটির এই এক সমস্যা। যারা দুপুর দুটো থেকে রাত আটটা পর্যন্ত ডিউটি করে তাদেরই জ্যামে আটকানো, বাস না পাওয়া, এসব সমস্যা ফেস করতে হয়। এক মুহুর্তের জন্য যারা রেগুলার বাসে যাতায়াত করে তাদের জন্য খারাপ লাগে রোদেলার। পরক্ষণেই মনে পড়ে হাতে সময় নেই। তাই স্টান পার হয়ে অফিসের দিকে হাটতে থাকে।
“আজই গাড়িটা নষ্ট হতে হলো?”
একাএকা বিরবির করতে থাকে রোদেলা।
একটা গাড়ি নিয়ে বাকি সবাই গিয়েছে আফনানের বিয়ের মার্কেট করতে। আর একটা নিয়ে রোদেলা রওনা হচ্ছিল। তখনই দেখে গাড়ির সমস্যা। না চাইতেও বাসে যেতে হবে আজ। চাকরিটা যেন কোনোভাবে না যায়। মাত্র কলেজ পাশ করে চাকরি যে পেয়েছে এটাই অনেক। যদিও বাড়ির কেউই চায়না সে এসব করুক। তাদেরতো টাকা পায়সার অভাব নেই। তবে রোদেলার একটাই কথা সে সাবলম্বী হবে।
স্টানের কিছুটা দূরে আসতেই একটা বাস পাওয়া গেল। দূর থেকে আসতে দেখেই রোদেলা হাত নাড়াল।
“যাক অফিস যেতে বেশি দেরী হবে না।”
বাস এসে থামল। রোদেলা উঠে দেখে বাস পুরো ভর্তি। মেয়েদের সিটেও ছেলেরা বসে আছে। তবে এসব লোকদের সাথে কথা বলতে গেলে “ফেমিনিস্ট” ট্যাগ লাগিয়ে দিবে। তাই অযথা কথা না বলে রোদেলা সিট খুজতে লাগল।
একদম পেছন হতে দুই সারি সামনে একটা সিট ফাকা আছে। তবে পাশে একটা ছেলে বসা। শ্যামলা গায়ের রং এর ছেলেটির গায়ে গাঢ় নীল রঙের শার্টটা বেশ বাজে দেখাচ্ছে। শ্যামলা হয়ে এ রং পড়েছে এজন্য নয়। ঘেমে একাকার হয়ে আছে তার উপর আবার আরামছে সিগারেট টানছে। শার্টের কয়েকটা বোতাম খোলা। চুলগুলো বেশ এলোমেলো। বখাটে বখাটে দেখাচ্ছে।
রোদেলা পাশে বসবে কিনা দ্বিধাদন্দ্বে পড়ে গেল। “আফা সইড়া যান। যাত্রী উঠব।” কন্টাক্টারের গলার আওয়াজে তাড়াতাড়ি সামনে এগুতে থাকে রোদেলা। ছেলেটার পাশে গিয়ে দাড়ায়।
“একটু ভিতরে যান। আমি বসব।”
রোদেলার কন্ঠ পেয়ে উপরে তাকায় ছেলেটা। নাম তার ইয়াসিন। পা থেকে মাথা অব্দি রোদেলাকে দেখে বলে,
“আপনি ভিতরে যান।”
ইয়াসিন উঠে বাহিরে আসে। রোদেলার কাছে ছেলেটাকে বেশ অভদ্র মনে হয়। মেয়ে মানুষ দেখেও নিজের সিট ছাড়তে চাচ্ছে না। বিগড়ে যাওয়া মেজাজ নিয়ে জানালার পাশের সিটটায় বসে। সবার এই সিট ভালো লাগলেও তার জানালার পাশে বসতে ভয় হয়। এর কারণও অবশ্য আছে।
“ছেলেটা কি এখনও সিগারেট খাবে?” মনে মনে ভাবতে থাকল রোদেলা। দেখে যেমন বখাটে মনে হয়, ফেলতে বললে না জানি বাসের ঝাকুনির সুযোগে গায়ে হাত দিয়ে বসে। এসব ছেলেদের বিশ্বাস নেই। মুখে একটা বাজে রিয়াকসন দিয়ে বসে থাকে সে। ইয়াসিন পাশের সিটটায় বসে সাথে সাথে জানালা দিয়ে ঢিল মেরে সিগারেট ফেলে দেয়। আর রোদেলার দিকে তাকিয়ে বলে, “ডন্ট জার্জ এ বুক বাই ইটস কাবার ম্যাম।”
রোদেলা বেশ অবাক চোখে ইয়াসিনের দিকে তাকায়। ছেলেটা মাইন্ড রিডার নাকি? মনের কথা পড়তে পারে। ইয়াসিন ঠোট বাকিয়ে হেসে উত্তর দেয়, “অবাক হওয়ার কিছু নেই ম্যাম। আপনার চেহারা দেখেই বুঝতে পেরেছি আমার সম্পর্কে কী কী ভাবতে পারেন আপনি।”
রোদেলা বেশ লজ্জায় পড়ে যায়। আর বলতে লাগে, ” না আসলে…”
“সমস্যা নেই। আমরা রাস্তার গরিব ছেলেপিলে। আমাদের এসবের অভ্যাস আছে।”
রোদেলা কপাল কুচকে প্রশ্ন করে, “মানে?”
ইয়াসিন হেসে উত্তর দেয়, “মানে আমরাতো গরিব ঘরের যেমন তেমন ছেলেমেয়ে। পোশাক আশাকও তেমন দামি না। গায়ের রং কালো। আমাদের পাশে বসতে আপনাদের মতো ভালো ঘরের মেয়েদের একটু সমস্যা হবেই।”
“আপনি যা ভাবছেন আসলে তা না।”
“সেটাই ম্যাম সেটাই। আপনি যে সামনে দাড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে ভাবছিলেন তা আমি দেখেছি। ধরুন আমার জায়গায় একটা ফর্সা সুদর্শন ছেলে খুব পরিপাটি হয়ে দামি শার্ট পড়ে বসে আছে। আপনার কিন্তু পাশে বসতে তেমন সমস্যা হতো না। তখন সিগারেট খেতে দেখলে বা সিট ছেড়ে উঠতে না চাওয়াতেও তেমন খারাপ ভাবতেন না। এটা আসলে হিউম্যান সাইকোলজির একটা ব্যাপার। আপনার দোষ নেই।”
রোদেলা চুপ হয়ে যায়। আসলেই কি ছেলেটার কথা সঠিক। হয়ত ঠিকই বলছে। আজকাল সবাই খুব সহজে মানুষের পোশাক বা বাহ্যিক সৌন্দর্য দেখে সে খারাপ না ভালো তা সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়। রোদেলাও হয়ত তেমন কিছু করেছে। সে নিজের কৃতকর্মে লজ্জা পেয়ে বলল, “সরি।”
“সরি বলার কিছু নেই ম্যাম। আমি আপনাকে ভিতরের সিটে বসতে বলেছি কারণ একটু পর বাসে ভিড় বাড়বে। তখন দাড়িয়ে থাকার অযুহাতে অনেকে হয়ত আপনাকে স্পর্শ করত। সেটা মনে হয় ঠিক হতো না। এজন্য।”
” জ্বী ধন্যবাদ। আর বারবার ম্যাম ডাকার প্রয়োজন নেই। আমার নাম রোদেলা।”
” রুলস নম্বর ওয়ান ফর গার্লস। দু মিনিটের কথাতেই কাউকে ভালো মনে হলেই নিজের পরিচয় বলতে নেই।”
রোদেলা আর কিছু বলে না। অন্যদিকে ফিরে বাহির দেখতে থাকে। ছেলেটার কথায় তাকে বেশ শিক্ষিত ভালো পরিবারের মনে হয়। রোদেলা ভাবে কি অল্প কথায় রোদেলাকে বাজিমাত করে ফেলল লোকটা। ইনটেলিজেন্ট।
তবে সাথে সাথেই খেয়াল হলো ছেলেটা তাকে ম্যাম ডাকার কারণও আছে। ছেলেটার বয়স ২৭ কি ২৮ হবে। তার থেকে প্রায় ৫ বছরের ছোট। আর তার বয়স? বাসের জানালার কাচে নিজের প্রতিবিম্ব দেখে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি হাসল রোদেলা। যতই স্মার্ট ভাবে চলাফেরা করুক। চেহারার হালকা ভাজ, চোখের নিজের কালো দাগ। সবকিছুই যেন তার ৩২ বছর বয়সের সাক্ষ্য দিচ্ছে।
কথায় আছে, মেয়েরা কুড়িতে বুড়ি। সে হিসেব করতে গেলে তার এখন অনেক বয়স। এখন হয়ত স্বামী সন্তান নিয়ে তার ঘর করার কথা ছিল। অথচ সে কি করছে। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে রোদেলা। নিজের জীবনে ঘটে যাওয়া সব কিছুর হিসেব মেলাতে থাকে। সবটা এমন না হলেও পারত।
এদিকে ইয়াসিন ফোন স্ক্রল করতে করতে চোখটা বাকা করে রোদেলার দিকে তাকায়। মেয়েটা যথেষ্ট স্মার্ট ও শালীন। তবে বয়সটা ঠিক ধরা যাচ্ছে না। তার সমবয়সী হতে পারে। বা কিছুটা সিনিয়র। বিশ বছরের যুবতী তো আর নয়। পর মূহুর্তেই ভাবে,
“হু কেয়ারস?”
নিজের কাজে আবার মগ্ন হয়ে পড়ে সে।
……
এদিকে শপিংমলে এসেছে আফনানের পুরো পরিবার। তার বাবা, ফুফু, ফুফাতো ভাই সায়েম, আরেক চাচাতো বোন দিয়া। এডজাস্ট ফেমিলি ওদের। সবাই এক বাড়িতেই থাকে। ফুফা মারা যাওয়ার পর ফুফুও ওদের সাথে থাকে। এখন সবার উদ্দেশ্য বিয়ের মার্কেট। অন্তরাকেও সাথে নিয়ে এসেছে। তার পছন্দেরও তো একটা ব্যাপার আছে। সাথে তার কাকাতো বোনও এসেছে। ফারিয়া নাম। খুব গায়ে পড়া স্বভাবের। এজন্য আফনান মুখ আরো গোমড়া হয়ে আছে।
ভাবতেই অবাক লাগে, তার একটা থ্রেড শুনে বড় বড় সন্ত্রাসদের অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। তার পুরো আর্মি ক্যাম্পে যথেষ্ট সুনাম আছে। সবাই তাকে কত সম্মান করে। অথচ বিয়ের ব্যাপারে তার হাত পা বাধা। না চাইতেও এসব শপিং জামেলার মধ্যে পরতে হচ্ছে। ঐ দিকে কিছুদিন পর কত গুরুত্বপূর্ণ মিশনে তার যেতে হবে সেসব নিয়ে আরেক চিন্তা।
উফফ। সে আর পারছে না। সবাই যখন সব কাপড় দেখতে ব্যস্ত। সে এসব জামেলা থেকে বাচতে কিছুটা দূরে গিয়ে দাড়ায়। অন্যদিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভাবতে থাকে। হঠাৎ মনে হয় পিছে কেউ আছে। আর তখনই শুনতে পায় সেই বিখ্যাত লাইন।
” একি রণ-বাজা বাজে ঘন ঘন–
ঝন রনরন রন ঝনঝন!”
তাকিয়ে দেখে অন্তরা সব কয়টা দাতঁ বের করে দাড়িয়ে আছে। আফনান বিরক্ত মাখা মুখ নিয়ে বলে, “এখানে কি?”
” সেকি দমকি দমকি
ধমকি ধমকি
দামা-দ্রিমি-দ্রিমি গমকি গমকি”
” কি সব বলছ?”
“কবিতা। ভাবলাম একা বোর হচ্ছেন। তাই আবৃত্তি শুনাতে আসলাম।”
“ফর গড সেক, যাও প্লিজ। কেউ দেখলে ইতস্তত ফিল হবে। আর কবিতা শুনতে চাচ্ছি না। যাও।”
” ওঠে চোটে চোটে,
ছোটে লোটে ফোট…”
#চলবে …..
( আসসালামুয়ালাইকুম। একটু কমেন্ট করে বলবেন গল্পটা চলবে কিনা। নয়ত বাদ দিয়ে দিব। পড়ার জন্য ধন্যবাদ।)