গল্পের নাম : #দি বাটারফ্লাই ইফেক্ট
লেখিকা : #আরফিন জাহান আনিকা
পর্ব : ৩ ( ❌কপি করা নিষেধ❌)
আফনান হঠাৎ অন্তরার মুখ এক হাত দিয়ে চেপে ধরে। অন্তরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই অন্য হাত দিয়ে টেনে পাশেই এক ড্রেস চেন্জিং রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দেয়। জায়গাটা খুব ছোট। অল্প সময়ে এতকিছু হওয়ায় অন্তরা কিছুটা স্থির হয়ে গিয়েছে। আফনান ওর সামনে এগুতে থাকে। অন্তরা অবুঝের মতো মুখ করে পিছতে পিছতে একদম দেয়ালে আয়নায় গিয়ে ঠেকে।
আফনান এক হাত ওর পকেটে রেখে অন্য হাত আয়নার উপরে রাখে। অনেকটা ঝুকে পড়ে অন্তরার উপর। ভয়ে চোখ মুখ বন্ধ করে ফেলে অন্তরা। আফনানতো মোটেও ওমন ছেলে না। ভদ্র, দায়িত্ববান একজন পুরুষ। কি করতে চলেছে ও?
“জেনে বুঝে বিষধর সাপ পালতে চাইছ মেয়ে, ছোবল খেয়ে টিকতে পারবে তো?”
অন্তরা কাপা কাপা কন্ঠে বলে, “মানে?”
“আই কেন বি দা মোস্ট ডেনজারাস হিউম্যান ইউ হ্যাব এবার সিন।”
আফনানের কথা শুনে চোখ মেলে তাকায় অন্তরা। কি বুঝাতে চাইছে ওনি? আফনান পকেট থেকে একটা হাত বের করে অন্তরার বাম গালের উপর আলতো করে ছোয়ায়। বৃদ্ধা আঙুল ঠোটের উপর রেখে কিছুটা নাড়তে থাকে। এই স্পর্শে অন্তরার ঠোটগুলো বারবার কেপে উঠছে। অন্তরার কি হলো কে জানে? হঠাৎ ডুকরে কেদেঁ উঠল।
আফনান এক ঝটকায় ওর থেকে একদম দূরে সরে যায়। সে চেয়েছিল মেয়েটা ভয় পাক। ওকে খারাপ ভেবে বিয়ে ভেঙে দিক। এতেই ওর মঙ্গল। তবে এতটা ভয় পেয়ে কেদেঁ উঠবে তা ভাবেনি। তবে আফনান কিছু বলার আগেই অন্তরা বলে উঠে,
“ওয়াও। আই লাভ ডার্ক রোমান্স। আপনি চাইলে আমাকে ছু/রি দিয়ে কে/টেও ফেলতে পারেন। আমি কিছু মনে করব না।”
আফনান ওর কথা শুনে বোকাবনে চলে যায়। কি করতে চাইলো আর হলোটা কি? মেয়েটা কি পাগল? পুরো পরিকল্পনা ভেস্তে যেতে দেখে রাগে দরজা খুলে বেরিয়ে যেতে নিলেই দেখে ফুফাতো ভাই সায়েম দাড়িয়ে। এই ছেলে যে পাজি। না জানি এখন কি বলে।
এদিকে সায়েম উকি মেরে দেখে ভিতরে অন্তরাও আছে। বড় বড় চোখ করে আফনানের দিকে তাকায়। আফনান বিরক্তমাখা মুখ নিয়ে বলে, “কি?”
“ডিস্টার্ব করলাম মনে হয়। ”
“তুই যা ভাবছিস তেমন কিছু না।”
“হায় হায় গো। আমগো এই বড় গোমড়া মুখো ভাইরে আমরা কড়ল্লা ভাবছিলাম। এ দেখি মিষ্টি কুমড়া। আমগো থেকে দুই দাপ আগাইয়া আছে।”
“বেশি বকছিস কিন্তু।”
সায়েম কিছু না বলে একটা ভোঁ দৌড় লাগায়। আফনানও একবার অন্তরার দিকে তাকিয়ে সায়েমের পিছে তাড়াতাড়ি যেতে থাকে। না জানি এই ছেলে সবার সামনে কিছু বলে বসে। অন্তরা এসব দেখে মুচকি হেসে একা একাই বলে ওঠে,
“আই ক্যান বি দা মোস্ট ‘জামাইপাগল’ গার্ল ইউ হ্যাব এবার সিন।”
….
সারাদিনের ক্লান্তি শেষে রাতে বাসায় ফিরেছে রোদেলা। দেখে ড্রয়িং রুমে বসে সবাই বিয়ের কেনাকাটা দেখছে। রোদেলা পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলে দিয়ার চোখে পড়ে।
“আপুওও..। দেখে যাও। সব কিনেছি আমরা। তুমি তো আসলে না।”
রোদেলা মলিন হেসে যেই না কাছে যেতে নিল তখনই এক মাঝ বয়সী মহিলাকে বসে থাকতে দেখে থমকে দাড়াল। আর কত বছর এই মানুষটা তার সাথে ভালো করে কথা বলে না। সম্পর্কে সে রোদেলা আর আফনানের মা। এখন রোদেলা গেলে সে উঠে যাবে। রোদেলা যেতে নিয়েও যায়নি। চুপ করে সিড়ি বেয়ে উপরে চলে গেল।
উপস্থিত সবাই বিষয়টা দেখে মনমরা হয়ে যায়। তবে কারো কিছু করার নেই। রুমা বেগমের মুখের উপর কথা বলার সাহস এ বাড়ির কারো নেই। তাকে এত বুঝিয়েও মা মেয়ের সম্পর্ক ঠিক করা যায় নি। এখন একভাবে সবাই সব আশায় ছেড়ে দিয়েছে। অথচ এসবে রোদেলার কোনো দোষই ছিল না। তবে আফনানের বিষয়টা চোখে ঠিকই পড়েছে। নিজের মুঠি শক্ত করে সে একাই বলে উঠে,
“ডন্ট ওয়ারি রোদ আপু। তোর সাথে যারা অন্যায় করেছে, প্রত্যেককে আমি নিজ হাতে শাস্তি দিব। জাস্ট ওয়েট এন্ড সি।”
এমন সময় হঠাৎ আননোন নাম্বার থেকে আফনানের ফোনে একটা কল আসল। আফনান কল ধরতে বাড়ির বাহিরে বেড়িয়ে হাটতে হাটতে গ্যারেজের সামনে চলে আসে। কলটা রিসিব করতেই কেউ বলে উঠে,
“কেমন আছেন মেজর আফনান সাদিক?”
“জ্বী? কে বলছেন?”
ওপাশ থেকে হো হো করে হাসির আওয়াজ শোনা গেল। লোকটা আবার বলে উঠল,
“এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে মাই ডিয়ার জুনিয়র?”
জুনিয়র শব্দটা শুনেই আফনান বুঝে গেল ফোনের অপর প্রান্তে কে? রাগে তার মুখ চোয়াল সব শক্ত হয়ে উঠল। ফর্সা ঘাড়ের প্রতিটা রগ যেন দেখা যাচ্ছে। সে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করে।
“কি হলো মিস্টার দেশপ্রেমিক? খুব পুরোনো স্মৃতি তাড়া করছে মনে হয়?”
“চুপ জানো য়ারের বাচ্চা। তোর মতো কুত্তার বাচ্চারা দেশ ও দশের শত্রু। এই দেশের মাটিতে বড় হয়ে তোরা এই দেশেরই ক্ষতি করিস। এদেশের বোনদের ইজ্জত নিস আর দেশের মাঝে মাদক ছড়াস।”
“হা হা আফনান। তোর রাগ জেদ এখনো তোর বাচ্চাকালের মতোই আছে। শুনলাম বিয়ে করতে যাচ্ছিস। একটু সাবধানে রাখিস তোর বৌকে বিয়ের পর। না জানি তোর বোনের মতো…”
“চুপ। একদম চুপ। আর একটা কথা বললে আমি এক্ষুণি তোর আড্ডাখানায় এসে তোকে জানে মেরে মাটিতে পুতে ফেলব।”
“আমাকে আর কতো হাসাবি বলতো? পুরোনো সব ভুলে গেলি নাকি।তুই ছোট থেকেই একটু বেশি দেশের প্রতি টান দেখাস যার ফল তোর বো..”
“রিদওয়ান। আর একটা কথা বললে তোর জিব আমি ছিড়ে ফেলল।”
রিদওয়ান হাসতে হাসতে কল কেটে দেয়। আফনান নিজের রাগকে কন্ট্রোল করতে না পেরে গাড়ির কাচের উপর সজোরে একটা ঘুষি মারে। কাচ ভেঙে হাতের নানান জায়গায় ঢুকে যায়। টপটপ করে রক্তের ফোটা বেয়ে বেয়ে পড়তে থাকে। কোনোভাবে নিজেকে সামলে সবার চোখ ফাকি দিয়ে দোতলায় নিজের রুমে চলে যায়।
ফোনের গ্যালারি থেকে একজনের ছবি বের করে বলতে থাকে, “বলেছিলাম মেয়ে দূরে থাকতে। থাকলে না তো? প্রেমের দহনে নিজেও পুড়বে আমাকেও পুড়িয়ে ছাই করে দিবে। ”
আফনান ভাবতে লাগল। খুব দ্রুত মিশনটার প্রস্তুতি নিয়ে তা সফল করতে হবে। ল্যাপটপটা হাতে নিয়ে দ্রুত হেড অফিসে একটা মেইল পাঠালো। সে তার ছুটি আরো দুদিন কমিয়ে ফেলতে চাচ্ছে। বিয়ের পরদিনই সে আর্মি ক্যাম্পে বেক করবে। আর যে হাতে উপায় নেই। ওখান থেকে লোক দিয়ে নজর রাখতে হবে বাড়ির সবার উপর।
উফফ। একসাথে এতজনের জীবন সামলাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে আফনানকে। ওযু করে নামাজের পাটি বিছিয়ে বসে পড়ল। রবের কাছে দুর্বলতা প্রকাশ করাই যায়। দুহাত ওই আল্লাহর পানে মেলে চাইতে লাগল সবকিছু। যেন তার মনোবল আরো শক্ত হয়। পাপীদের প্রাপ্য শাস্তিটুকু যেন সে দিতে পারে।
পেজের রিভিউ অপশনে গিয়ে ফাইব স্টার দিয়ে একটা সুন্দর রিভিউ দিয়েন❣
#চলবে …..
(আসসালামুয়ালাইকুম। আমার কোনো গল্পই আমি বুস্ট করি না। তাই সবার সামনে যায় না। একটু রিয়েক্ট দিয়ে কমেন্ট করবেন। পড়ার জন্য ধন্যবাদ।)