দি বাটারফ্লাই ইফেক্ট লেখিকা : #আরফিন জাহান আনিকা পর্ব : ৪

0
16

গল্পের নাম : #দি বাটারফ্লাই ইফেক্ট
লেখিকা : #আরফিন জাহান আনিকা
পর্ব : ৪ ( ❌কপি করা নিষেধ❌)

আজকে সকাল থেকে রুপচর্চায় ব্যস্ত অন্তরা। তার যেন ঈদ ঈদ লাগছে। তার খুশিতে কে কি ভাববে তার যায় আসে না। এই আঠারো বছর বয়সটাই এমন। সবকিছুতেই বেশি আবেগ। অন্তরার মা মেয়ের হঠাৎ রাজি হয়ে যাওয়া দেখে প্রথমে খুশি হলেও এখন বেশ লজ্জা পাচ্ছে। মেয়েটা এমন করে লাফাচ্ছে যেন বিয়ে করে জামাই সে নিয়ে আসবে।

“অন্তরা। থামবি তুই?”

মায়ের কথায় চোখ থেকে শশার স্লাইড দুটো সড়ায় অন্তরা। অতঃপর মায়ের দিকে বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে বলে উঠল,

“তুমিই তো চাইতে আমি বিয়েতে রাজি হই। এখন আবার কি সমস্যা। তোমার এমন হ্যান্ডসাম ছেলের সাথে বিয়ে দিলে বুঝতা।”

অর্পিতা বুঝে অন্তরার সাথে কথা বলে লাভ নেই। পরে ভাবতে থাকি এই বাচ্চা মেয়ে সংসার করতে পারবে তো? তাছাড়া সবকিছু এত তাড়াতাড়ি হচ্ছে যে, ও বাড়ির লোক সম্পর্কে তেমন একটা জানাও হয়নি। তবে এতটুকু বিশ্বাস ছেলেটা খুব ভালো। এজন্যই তো চিন্তাটা বেশি হয়।

ভালো মানুষদের শত্রুর অভাব নেই। তাছাড়া যেই চাকরি করে তা নিয়ে অনেকেই তো কত কিছু বলে। সেনাবাহিনীর স্ত্রী হতে হলে নাকি মনোবল খুব শক্ত রাখতে হয়। আচ্ছা মেয়েটা বিয়ের পরও তো স্বামীর থেকে দূরেই থাকবে। সব কিছু সামলাতে পারবে তো? অন্তরা বেগম রান্নার জন্য কিচেনে চলে যায়।

“কিরে? তোর তো দেখি ভাগ্য খুলে গেল।”

ফারিয়ার কথা শুনে দরজার দিকে তাকায় অন্তরা। এই মেয়েকে দেখলেই কেন জানি তার মেজাজ বিগড়ে যায়। সবকিছুতে অন্তরাকে হিংসে। সবার কাজিনদের মাঝে এমন একজন থাকবেই যে একটু হিংসুটে স্বভাবের।

“কেন? তোরতো সব কিছুতেই আমার থেকে বেশি আছে। এই একটা জায়গায় নাহয় একটু পেলামই।”

ফারিয়ার যেন কথাটা ভালো লাগল না। সে অন্তরার পাশে গিয়ে বসল।

“তা সব জেনে বিয়ে করতে যাচ্ছিস তো।”
“কি জানবো? আজব।”

” তারমানে তুই কিছুই বুঝিস না। এখনো বাচ্চাই আছিস।”

অন্তরা ভ্রু কুচকে ফারিয়ার দিকে তাকাল।

“কি বলতে চাইছিস বলতো?”

“তেমন কিছু না। শুধু বললাম, দেখিস আবার। বিয়ের পরদিনই তোকে যাতে ফেলে না যায়। আর্মিরা নাকি একটু আনরোমান্টিক টাইপের হয়। দেশের চিন্তায় পরিবারের খেয়াল থাকে না।”

“তুই কয়জন আর্মিকে চিনিস? যে এত কথা বলছিস। আর তাছাড়া, এটাতো গর্বের বিষয়। এজন্য পুরুষের বড় বড় সাফল্যের পর তাদের স্ত্রীদেরও সম্মানের চোখে দেখা হয়। তুই বুঝবি না।”

“বেশিই ইমোশনাল হয়ে যাচ্ছিস না তুই?”

“হলে হলাম। আচ্ছা তুই কখনো কারো প্রেমে পড়েছিস। না মানে টাইম পাসতো করেছিস জানি। সত্যিকারে কারো কথা মনে হয়েছে যাকে নিয়ে পুরোটা জীবন থাকা যায়?”

” না কেন? তুই একদিনেই ঐ ছেলের প্রেমে পড়েছিস বুঝি?”

“একদিনে নয় পিও। আরো কাহিনী আছে। একবার কলেজে পিকনিকে গিয়ে আমি একটা জামেলায় পড়েছিলাম। আর তখনই। সেসব পড়ে বলব। তবে কি জানিস? তুই যেদিন কারো প্রেমে পড়বি ঐ দিন বুঝবি।”

“এসব ফালতু বিষয়ের জন্য আমার কাছে সময় নেই। আমি এখন নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে আছি।”

“এতই ক্যারিয়ার নিয়ে থাকলে আফনানকে পটানোর ট্রাই করছিলি কেন তখন শপিং মলে? যাই হোক, অভিশাপ দিলাম। তুই এক বেকার ছন্নছাড়া ছেলের প্রেমে পড়বি। বেশি ম্যাচুরিটি দেখালে এমনই হয়।”

ফারিয়া ওর কথায় একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। সে মোটেও ওমন মেয়ে না। সে কোনো বড়লোক, হ্যান্ডসাম ছেলেকেই বিয়ে করবে।

বিকেলে …….

প্রায় সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। আফনান কিছু কাজে বাহিরে গিয়েছিল। ফিরতে দেরি হয়ে যাচ্ছে। গাড়িতে বসে ড্রাইভিং করতে করতে ফিরছে। এক হাত দিয়ে ড্রাইভ করছে, অন্য হাত দিয়ে একটা মোজোর বোতল ধরে আছে। একটু পরপর দুই ঠোঁটের মাঝে দিয়ে ইকটু করে চুমুক দিচ্ছে। কোকাকোলা বয়কটের পর মোজোই সবার ভরসা।

তার গাড়িটা বেশ দামি। বাটন ক্লিক করাতে উপরের ছাদটা সড়ে গিয়ে ভাজ হয়ে যায়। সন্ধ্যার আগ মুহুর্তে আবহাওয়াটা খুব সুন্দর থাকে। একটা মিষ্টি বাতাস বয়ে বেড়াচ্ছে চারিদিকে। আকাশের রংটা এখন একদম লাল। একটুতো উপভোগ করাই যায়।

শরীরের সাদা শার্টটার সামনের দুটো বোতাম খোলা। একটু পর পর যখন বোতলে চুমুক দিচ্ছে দেখতে বেশ আকর্ষণীয় লাগছে আফনানকে। রাস্তার পাশ দিয়ে অনেকে বসে এই সময়ে আড্ডা দেয়। ফাস্টফুডের খাবার খায়। আফনানের গাড়ি আর রূপ দেখে যেকোনো মেয়ে একবার হলেও এদিকে তাকাতে বাধ্য। আফনান অবশ্য এসবে কোনো পাত্তা না দিয়ে শান্তিতে ড্রাইভ করতে থাকে। আর ভাবে,

“কয়েকটা দিন একটু সহ্য করে নিও। আমি কথা দিচ্ছি, খুব তাড়াতাড়ি সব কিছু ঠিক করে দিবো। আমাকেতো ঠিক করতেই হবে।”

এইদিকে আফনানের বাড়িতে ছোট করে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান করা হয়েছে। একটু আগে ও বাড়িতে তত্ত পাঠানো হয়েছে। সবাই হলুদের অনুষ্ঠানে খুব ব্যস্ত। তবে একজনের মুখে কোনো হাসি নেই। সে হলো চারু। সম্পর্কে সে সায়েমের আপন বোন। তার বিয়ে হয়েছে, একটা ছোট্ট মেয়েও আছে। তার স্বামী প্রবাসী হওয়ায় এ বাড়িতেই সে আছে।

তবে বাড়ির এতসব অনুষ্ঠান তার একদম ভালো লাগছে না। নিজের কাজিন আফনানের জন্য তার মনে লুকিয়ে থাকা অনুভূতিকে অনেকদিন যাবৎ সে ধামাচাপা দিয়ে রেখেছে। তার স্বামী নির্গাত ভালো মানুষ ছিলেন বলেই এতটা ইগনোর করার পরও দিনের পর দিন সংসার করে গিয়েছে। শেষে আর অবহেলা সইতে না পেরে নিজের গর্ভবতী স্ত্রীকে রেখেই বাহিরের দেশে পারি জমান তিনি।

তাতে চারুর কিছু আসে যায় না। এই বাচ্চাটাও তার কাছে একটা মিস্টেক। নিজের সন্তানকেও তেমন একটা ভালোবাসে না সে। কখনো কখনো সাহিত্যের কথাও সত্য হয়। সব মায়েরা মমতাময়ী হয় না। তবে এসব কিছুই এ বাড়ির কেউ জানে না। দিয়ার শুধু মাঝে মাঝে একটু সন্দেহ হয়।

তবে চারু মনের অনুভূতি কাউকে বুঝতে দেয়নি। শুধু দূর থেকে ভালোবেসে গিয়েছে আফনানকে। সে জানে এটা পাপ। তবে মনকি তা শুনে? এখন আফনানের বিয়েটা তার কাছে কাটা ঘাঁ তে লবণের ছিটের মতো লাগছে।

সব কাজিনরা মিলে নাচ গান করছে। মাইকে একের পর এক গান বেজে যাচ্ছে। যেভাবেই হোক অনুষ্ঠানটা শেষ হলো।
পরেরদিন বাড়িতে বিয়ের প্রস্তুতি।

#চলবে …..

( আসসালামুয়ালাইকুম। আমার #প্রজাপতিরা_উড়ে_যাক গল্প আর অন্য কিছু গল্পে আপনারা বানান নিয়ে অভিযোগ করেছিলেন। এটাতে তাই কিছুটা সাবধান ছিলাম। সমস্যা হচ্ছে আমি ইংরেজি কিবোর্ড দিয়ে বাংলা লিখতে পারিনা। যেই বাংলা কীবোর্ড দিয়ে লিখি সেখানে পাশাপাশি অক্ষর বা চিহ্ন অনেক সময় ভুল হয়ে যায়। তবে বোঝাই যায় না। ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন আশা করি। ধন্যবাদ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here