গল্পের নাম : #দি বাটারফ্লাই ইফেক্ট
লেখিকা : #আরফিন জাহান আনিকা
পর্ব : ৫ ( ❌কপি করা নিষেধ❌)
ফুলের ঘ্রাণে মো মো করছে পুরো রুমটা। খাটের উপর লাল সাদা ফুলের পাপড়ি দিয়ে খুব সুন্দর করে সাজানো। রুমের লাইট অফ। তবে তাতে কী? ছোট ছোট মোমবাতি চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তার আলোয় যেন আরো বেশ আবেদনময়ী লাগছে খাটে বসা তরুণী মেয়েটাকে।
অন্তরা চুপিসারে উঠে গিয়ে লাকেজ থেকে ফোনটা বের করে। কি সুন্দর করে সাজিয়েছে আফনানের কাজিনটা এই রুমটাকে। আফনান আসছে না কেন? কত ছবি তোলা বাকি। বিয়েটা চোখের পলকে কত তাড়াতাড়ি হয়ে গেল তাই না? দুপুরে তিন কবুল বলে আজীবনের জন্য এই লোকটার হয়ে গিয়েছে সে। আজ বিকেলেই এ বাড়িতে এসেছে অন্তরা।
প্রথমে ভেবেছিল সবাই না জানি কেমন হয়। হিন্দি সিরিয়ালের মতো কোনো কুটনি শাশুড়ি না জানি কপালে আসে। তবে সবাই এত ভালো হবে সেটা কল্পনার অনেকটা বাহিরে ছিল। সবাই কতটা ভালো! আর সব কাজিনদের মাঝে এত ভালো সম্পর্ক বলার বাহিরে।
তবে সবচেয়ে ভালো হলো শশুর মশাই। তিনি কত বড় একটা সিক্রেট গোপন রেখেছে। অন্তরা আজ সকালেই জানতে পেরেছে সবটা। প্রথমে তার চাচি নিজের মেয়েকেই জোর করে নিতে বলছিল আরিফুল ইসলামকে। তবে তিনি তার কথায় অনড় ছিলেন। টাকা লেনদেনেরও ব্যাপার ছিল। ভাগ্যিস এসব কথা কেউ জানে নি। এমনকি সাথে ও বাড়ি থেকে ফারিয়াকে আসতে দেখেও কিছু মনে করেনি।
এমন সময় দরজায় আওয়াজ আসে। বাহিরে চেচামেচি হচ্ছে। সবাই আফনানকে আটকে রেখেছে টাকার জন্য। অন্তরা একটু নেড়েচেড়ে বসে।
“ভাই। ২০,০০০ দিবা কিনা কও? নয়ত তোমার বউর সাথে ঘুমানো হইবো না আজ।”
সায়েমের কথার সাথে সবাই সহমত। দিয়াতো হাতে পার্টি স্প্রে নিয়ে দাড়িয়ে আছে। টাকা দিতে দেরি হলে প্রতি দশ মিনিটে একবার করে মুখে দেয়া হবে। আফনানের আবার এসব বারতি জামেলা একদম ভালো লাগে না। সে সাথে সাথে পকেট থেকে টাকা বের করে পুরোটা দিয়ে দেয়।
সবাই অবশ্য খুশির বদলে বেশ বিরক্ত। এই ছেলেটা এমন কেন? একটু মজাও করতে দেয় না। রোদেলাও বেশ বিরক্ত হয়ে বলল,
“আসলে বৌয়ের কাছে যাওয়ার জন্য তর সইছে না। এজন্য এমন তাড়াহুড়ো করছে। চলতো সবাই। ওকে যেতে দে।”
“আপু তুমিও এদের মতো কিসব বলছ?”
“রোদ আপু আর সায়েম ভাইয়া ঠিকই বলছে।”
আফনান ওদের কারো কথায় পাত্তা না দিয়ে মুখের উপর দরজা লাগিয়ে দিল। অন্তরা চুপচাপ দেখছে সব কিছু। বাহির হতে সায়েম চিল্লিয়ে বলল,
“ভাই ঘুম থেকে জাইগা আমগো আরো কিছু বখশিশ দিও। এত খুশি তুমি। সেই হিসেবে তো পাই।”
সবাই অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল। এদিকে নিচে আফনানের মা সবাইকে ডাকছে। ছেলে মেয়ে দুটোকে এখন একটু একা ছেড়ে দেয়া উচিত।
……..
রাতের আকাশটা আজ ঝলমল তারার আলোয় এক অনন্য সাজে সজ্জিত হয়েছে। যেন প্রকৃতিও এদের একাগ্রতার সাক্ষ্য দিচ্ছে। এই মৃদু বাতাসে আর একটু আকটু আলোতে আফনানদের বাড়ির ছোট বাগানটায় হেটে বেড়াচ্ছে ফারিয়া। এমন একটা সুন্দর পরিবার তারও হতে পারত।
আসলে কিছু বিষয় ভাগ্যের উপরেও ছেড়ে দিতে হয়। তবে ফারিয়া প্রতিজ্ঞা করেছে আফনান আর অন্তরার মাঝে সে আর ডুকবে না। বিয়েতো হয়েই গিয়েছে। এখন আবার জামেলা করে কিই বা লাভ হবে।
“ফিউ…”
“আল্লাহ গো..”
এক চিৎকার দিয়ে দূরে সরে যায় ফারিয়া। আর একটু হলে ভয়ে জ্ঞানটাও হয়ত হারিয়ৃ ফেলত বিরক্ত মাখা মুখ নিয়ে পিছে ফিরে দেখে সায়েম দাড়িয়ে। উফফ! ছেলেটা শুরু থেকেই পিছু ছাড়ছে না। এমন বেশি কথা বলা ছন্নছাড়া ছেলে ফারিয়ার একদম পছন্দ না।
“কি হয়েছে পিও। ভয় পেলে।”
ফারিয়া সায়েমের কথায় বেশ বিরক্ত হয়ে বলে,
“না গো মুরুব্বি। ভয় পাইনি।”
“এভাবে না। সুন্দর করে বলবে। বলবে, মুরুব্বি মুরুব্বি উহু উহু। ভয় পাইনি।”
“জ্বী ভাইয়া তুমি একদম ঠিক বলেছ। গেলাম”
ফারিয়া পাশ দিয়ে চলে আসতে নিল। ছেলেটা সবসময় চিল মুডে থাকে। সবসময় ফালতু কথায় মানুষের হাসি আসে বুজি? তবে সায়েম নাছোড়বান্দা। এত তাড়াতাড়ি ফারিয়াকে শান্তি দিবে না। সকালে আসার সময় এক গাড়িতে পাশাপাশি বসেছিল দুজন। ফারিয়ার জুলনিয়ালা চুরিতে ফাস লেগে বেচারার নতুন পানজামি ছিড়ে গেছে।
দৌড়ে গিয়ে পথ আটকে দাড়ায় সে। আবার বলতে থাকে,
“শেষের কথাটাও ঠিক হয়নি। বলবে, টাকা বলেছ ভাইয়া সেই হইছে”
“টাকা বলেছ মানে?”
সায়েম জিহ্বায় কামড় দিয়ে বলল, “আসলে টাকার জায়গায় যেটা হবে ঐটা মেয়ে মানুষের সামনে বলা যাবে না। ফেইসবুকে একটিব থাকো না নাকি?”
“না। কয়েকদিন যাবৎ থাকা হয় না। এবার যেতে দাও।”
“আগে টাকা দেও। তারপর।”
“টাকা দিবো মানে? আমি তোমাকে টাকা দিতে যাবো কোন দুঃখে?”
“দুঃখে না পিও। সুখে টাকা দিবা। তোমার চুড়ির সৌন্দর্যের প্রশংসা করতে গিয়ে যে আমার পানজাবি ছিড়ে গিয়েছে ভুলে গেলে নাকি। জরিমানা টা দিয়ে যাও।”
“আপনি সামান্য পানজাবির টাকা আমার থেকে নিবেন?”
“এত অবাক হওয়ার কিছু নেই। বেকার ছেলেদের কাছে পাচ টাকার মূল্য দশটা গার্লফ্রেন্ডের সমান। আর ৪৫৬ টাকার পানজাবি তো…”
“ব্যাস ব্যাস। আর শুনতে চাচ্ছি না।”
ফারিয়া সায়েমের ফালতু কথা থামিয়ে দিয়ে নিজের পার্সটা হাতে নিল। ৪৬০ টাকা হাতে ধরিয়ে দিয়ে চলে আসতে নিতেই সায়েম পিছন হতে ওর চুলের খোপা টেনে ধরে। ফলস্বরূপ পুরো খোপা খুলে চুলগুলো ছড়িয়ে যায়। একটা দমকা হাওয়ায় সব চুলগুলো উড়তে থাকে। কিছু অবাধ্য চুল উড়ে এসে সায়েমের মুখের উপরও পড়ে।
সে অবাক নয়নে তাকিয়ে থাকে ফারিয়ার দিকে। সামান্য খোলা চুল একটা মেয়ের পুরো রূপ সৌন্দর্যই পাল্টে দিতে পারে। ফারিয়া বারবার জিগ্যেস করতে থাকে চুল কেন খুলল। তবে সায়েম নিজের ভাবনায় এতটাই ডুবে ছিল যেন ওর কাছে সবকিছু থেমে আছে। শেষে ফারিয়ার রাগের সব ধৈয্যের পালা শেষ হয়ে যায়। সায়েমের ডান হাত ধরে মুখের সামনে নিয়ে একটা জোরে কামড় দিয়ে দেয়। ব্যাথা পেয়ে সায়েমের হুশশ ফিরে।
“আহহ।”
“এখন মুখ খুলল? এবার বলো চুল কেন খুললে?”
‘বাকি টাকা দিতে।”
নাক মুখ খিচে হাতটাকে একটু ঢলে নিল সায়েম। পরে ফু দিতে দিতে অন্য হাত দিয়ে পকেট থেকে দু টাকার দুটো পয়সা বের করে ফারিয়ার হাতে ধরিয়ে দিল।
” বেকার হতে পারি। তবে ছেছড়া নই।”
ফারিয়াও তাল মিলিয়ে বলে উঠল, “জ্বী জ্বী। আমিও বুঝতে পেরেছি। আপনি গরিব হতে পারেন, তবে বড়লোক নন।”
আর এক মুহুর্ত না দাড়িয়ে ফারিয়া চলে আসল। সায়েম এবার আর আটকালো না। এখনতো আর কথা বলার কিছু বাকি নেই। নিজের হাতের দিকে তাকাল। দাতের দাগ স্পষ্ট হয়ে আছে। এটাকে বৃথা যেতে দেয়া যায় না। একটা ছবি দিলে ফ্রেন্ডস গ্রুপে দিয়ে বলল।
“এই দেখ সবাই। হবু গার্লফ্রেন্ডের কাছ থেকে পাওয়া ফাস্ট লাভ বাইট।”
…….
আফনান বাসর ঘরে ঢুকেই ড্রয়ার থেকে একটা গেনজি বের করে শেরওয়ানি খুলতে লাগল। তা দেকে অন্তরা হু হু করে কেদেঁ উঠল।
#চলবে….
( আসসালামুয়ালাইকুম। পড়ার জন্য ধন্যবাদ )