দি বাটারফ্লাই ইফেক্ট লেখিকা : #আরফিন জাহান আনিকা পর্ব : ৬

0
15

গল্পের নাম : #দি বাটারফ্লাই ইফেক্ট
লেখিকা : #আরফিন জাহান আনিকা
পর্ব : ৬ (আর কত কপি করবি? নামটা ঠিক রাখিস বোন)

বাসর ঘরে বসে চিল্লিয়ে কেদে যাচ্ছে অন্তরা। শেষে আর সহ্য করতে না পেরে আফনান এসে একহাত দিয়ে ওর মুখ চেপে ধরে।

“ফর গড সেক। প্লিজ কান্না থামাও। নিচে আওয়াজ গেলে সবাই খারাপ ভাববে।”

অন্তরা আফনানের হাত ছিটকে ছড়িয়ে দিয়ে ফোফাতে ফোফাতে বলল,

“ভাবলে ভাবুক। আমার মনের আশা পূরণ না করলে আমি এভাবেই চিল্লাব।”

“আচ্ছা। বলো কি সমস্যা? আমি দেখছি।”

“আপনি শেরওয়ানি কেন খুললেন?”

“তো কি তোমার শাড়ি খুলব? খুলি??”

নিজের বলা কথায় নিজেই লজ্জা পেয়ে যায় আফনান। না জানি মেয়েটা এখন কত জোরে চিৎকার দিবে। তবে অন্তরা হয়ত কান্নার তালে কথাটা ভালো করে শুনেনি। সে নিজের ফোন বের করে আফনানের হাতে ধরিয়ে দিলো। আর মুখ ফুলিয়ে বলতে লাগল,

“জানেন, সব মেয়েদের শখ থাকে বাসর ঘরে ফুলের মাঝে বসে সুন্দর সুন্দর ছবি তোলার। জামাইকে নিয়ে কাপল পিক তোলার। কিন্তু আপনি ছবি না তুলেই জামা পাল্টে ফেলছিলেন।”

“তুমি এইজন্য এভাবে মরা কান্না করছিলে?”

“হুমম। তা নয়ত কি?”

“দূরর। আমি আরো ভাবলাম ভয় পাচ্ছো।”

“ভয় কেন পাবো?”

অন্তরার বোকা প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই আফনানের কাছে। মেয়েটা আসলে চিল্লায় বেশি বুঝে কম। যেসব মেয়েরা খুব চঞ্চল ওরা আসলেই কিছু বুঝেনা। চুপচাপ প্রকৃতির মেয়েরা সেই তুলনায় অনেক চতুর হয়। কথায় আছে না, “খালি কলস বাঝে বেশি।”

আফনান অন্তরার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে নেয়।

“শুরু করো?”

“কি শুরু করব?”

“আরে বোকা পোজ নিতে বলছি। আমি বিভিন্ন এংগেল এ তুলে দিচ্ছি।”

অন্তরা তাড়াতাড়ি চোখের জল মুছে মাথার ওড়না আর শাড়িটা ঠিক করে নেয়। এইসব ছবি আইডিতে ছাড়তে হবে। সে নানান স্টাইলে খাটের ফুলগুলো নিয়ে ছবি তুলতে লাগল। কখনো কখনো টেবিলের মোমবাতি হাতে নিয়েও স্টাইল করতে থাকে। আফনানও খুব মনোযোগ দিয়ে ফটোগ্রাফারদের মতো করে ছবি তুলে দিচ্ছে।

আর মনে মনে ভাবছে, “হে মাবুদ। মেজর আশিকের মতো প্রতিটা বিবাহিত পুরুষকে ধৈয্যের জন্য পুরষ্কৃত করা উচিত। এই দিন দেখার জন্য আর্মির ট্রেনিং নিয়েছিলাম?”
পরে ভাবল এটা হোম ওয়ার্ক।

“দেখি দেখি। তাড়াতাড়ি দেনতো। ছবি কেমন উঠছে?”

অন্তরা লাফিয়ে খাট থেকে নেমে আফনানের কাছে গেল। ফোনটা ছু মেরে নিয়ে ছবিগুলো দেখল। ওয়াও!

“জানেন আমার বান্ধবীদের বয়ফ্রেন্ড যখন ওদের ছবি তুলে দিত। তখন ভাবতাম কবে আমার পার্সোনাল ফটোগ্রাফার হবে। প্রতিটা মেয়েরই একজন পার্সোনাল ফটোগ্রাফার থাকা লাগে।”

এরপর সে আফনানের শেরওয়ানি ধরে টান মেরে একদম কাছে নিয়ে আসল। ইচ্ছামতো সেলফি নিচ্ছে। এতটা কাছে এসে আফনান অবাক নয়নে অন্তরার দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটা আসলেই খুব কিউট।

“আমাকে দেখা হলে কাধে হাত দিয়ে ক্যামেরার দিকে তাকান। এক পজিশন বারবার ভালো লাগে না। চলুন চেন্জ করি।”

অন্তরার কথায় তাড়াতাড়ি চোখ সড়িয়ে নেয় আফনান। ছবি তোলা শেষ হলে অন্তরা আয়নার সামনে গিয়ে চেয়ার টেনে বসে।

“একটু হেল্প করুন তো। আমার মাথায় হাজার হাজার ক্লিপ, জুয়েলারি। এসব খুলতে পারছি না। পুরো মাথাটা ব্যাথা করছে।”

আফনানও কাছে এসে এক এক করে সব খুলতে থাকে। মেয়েটার মাথাটা আসলেই ব্যাথা হয়ে যাওয়ার কথা। চিকন চিকন কত ক্লিপ দিয়ে আটকানো। সব শেষ করে যেই না শাড়ির পিন খুলতে যাবে, অন্তরা হঠাৎ দাড়িয়ে যায়।

” কি হলো?”

“বাকিটা আমি ওয়াসরুমে একাই করতে পারব।”

কথাটা বলে ড্রয়ার থেকে একটা নরমাল সুতি শাড়ি বের করে অন্তরা বাথরুমে চলে যায়। আফনান হেসে বলে, “পাগল মেয়েটা।” আফনানের ফোনে একটা নোটিফিকেশন আসে। আওয়াজ পেয়ে চেক করতেই তার মুখটা মলিন হয়ে যায়। কাল বিকেলের মধ্যেই ফিরতে হবে। আফনান চুপ করে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ে।

অন্তরা এসে আফনানকে দেখে ভাবে ঘুমাচ্ছে হয়ত। আর বিরক্ত না করে সেও পাশে চুপটি করে শুয়ে পরে। একটু পর ঘুমিয়েও যায়। আফনান পাশ ফিরে ওর ঘুমন্ত চেহারার দিকে তাকিয়ে থাকে। না জানি কতদিন এই চেহারা দেখার তৃষ্ণা নিয়ে থাকতে হবে।
……

এদিকে ফারিয়া চারু আর দিয়ার সাথে এক রুমে শুয়েছে। সায়েম নিজের রুমে একা।

সায়েম বারবার ফারিয়ার কথা ভাবছে। মেয়েটা মুখে রাগী লুক নিয়ে যতটা খারাপ সেজে থাকে ততটাও খারাপ না। কিছু কিছু মেয়েরা থাকে। মুখে মধু অন্তরে বিষ। ফারিয়া তার উল্টোটা।

সায়েমের কি হলো কে জানে। পুরোনো গিটারটা অনেকদিন পর হাতে নিল। আজ কেন জানি গাইতে ইচ্ছে করছে।

আমার আশার সময় হলে তুমি হাত ফসকে গেলে !!

“তুমার যাওয়ার পায়তারাঁ, আমি হই যে দিসেহারা।
তুমি অন্য গ্রহের চাঁদ, আমার একলা থাকার ছাদ।
তুমার ফেরার সম্ভাবনা, আমাবস্যায় জোছনা।
তোমার গোপন সবি হয়, আমার আপণ মনে হয়।
আমি ভোরের ঝড়া পাতাঁ, আমার মরার কিসের ভয়! ”

রাত দুটো….

রোদেলা বিছানায় কাতরাচ্ছে। সে কারো সাথেই ঘুমোই নেই। রাতে প্রায়ই পেনিক এটাক আসে তার। ঘুমের ঘোরে পুরোনো স্মৃতি গুলো বারবার ভেসে উঠছে। একটা বদ্ধ লাইব্রেরি। তিন চারটা ছেলে। দুজন হাত পা বেধে ফেলছে, আর একজন নোংরা ভাষায় গালিগালাজ করছে।

মারামারি। আরেহ! ছেলেটাকে মেরে ফেলবে তো। এই থামো তোমরা। প্লিজ।

“না…..।”

জোরে চিল্লিয়ে ঘুম থেকে উঠে রোদেলা। বারবার হাপাতে থাকে। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। হঠাৎ নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে। পাশের টি টেবিলের উপর জগ রাখা। এক গ্লাস পানি ঢেলে ডগডগ করে পান করে।

কেদেঁ কেদেঁ উপরে তাকিয়ে বলে,

” আল্লাহ। এই যন্ত্রণা থেকে কি আমার আর মুক্তি নেই।”

আজ প্রায় ১২ টা বছর পরেও রোদেলা সুস্থ হয়নি। প্রতিদিন রাতেই একবার তার ঘুম ভাঙে। কি ভয়ানক স্মৃতি তাড়া করে বেড়ায়। অথচ মেয়েটার কোনো দোষই নেই। হ্যাঁ। একটা দোষ আছে। ভালোবেসেছিল। সেটাই তার দোষ।

#চলবে

( আসসালামুয়ালাইকুম। পড়ার জন্য ধন্যবাদ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here