দি_বাটারফ্লাই_ইফেক্ট লেখিকা : #আরফিন_জাহান_আনিকা পর্ব : ৮

0
23

গল্পের নাম : #দি_বাটারফ্লাই_ইফেক্ট
লেখিকা : #আরফিন_জাহান_আনিকা
পর্ব : ৮

আকাশটা সকাল থেকে মেঘলা। বৃষ্টি আসবে আসবে করেও যেন আসছে না। রোদেলা দ্রুত অফিস পৌছে নিজের গাড়িটা পার্কিং এড়িয়াতে রাখল। ভিতরে যেতে না যেতেই দেখে সবার চোখে মুখে ভয়ের ছাপ। নতুন ceo আসতে না আসতেই সবার অবস্থা বাজে করে ফেলেছে।

রোদেলার একজন কলিগ মিস মিফতা রোদেলাকে দেখামাত্রই দৌড়ে তার কাছে চলে আসে।

“রোদেলা, এত দেরি করলে কেন?”

“তোমাকে তো বলেছিলাম দি, আমার ভাইয়ের বিয়ে। সেজন্যই।”

“ওহ, হ্যাঁ। ভুলে গিয়েছিলাম। তাড়াতাড়ি স্যারের রুমে যাও। খুব রেগে আছে তোমার উপর। আপকামিং প্রজেক্টের ফাইলের একটা কপি তার কাছে পাঠানোর কথা ছিল। কিন্তু….”

“তো কি হয়েছে? আমি ছুটিতে যাওয়ার আগে তাকে মেইল করে সব পাঠিয়ে দিয়েছিলাম তো।”

“তা আমি জানি না। তুমি যাও। খুব রেগে আছে ঐ লোক।”

রোদেলা আর কথা না বাড়িয়ে লিফটে উঠে পড়ল। কিছু সময় পর উপস্থিত হলো স্যারের রুমের সামনে। দরজা নক করে প্রশ্ন করল,

“স্যার আসবো?”

“আসুন।”

রোদেলা ভিতরে আসে। এখন আপাতত রুমে কেউ নেই। সবাই বকা খেয়ে চলে গিয়েছে হয়ত। এবার তার পালা। ইয়াসিন চেয়ারে হেলান দিয়ে ফোনে গেমস খেলতে লাগল। রোদেলা ওকে দেখে অবাক। এটাতো সেই ছেলে। তবে আজকে অনেক ভিন্ন লাগছে। দামি শার্ট, দামি ব্লেজার, অনেকটা গোছানো। রোদেলা অবাক হয়ে প্রশ্ন করে,

“আপনি?”

ইয়াসিন চোখটা বাকিয়ে রোদেলার দিকে তাকায়। আবার গেমসে মনোযোগ দেয়। যেন দুনিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো বাবল সুটার গেমস খেলা। রোদেলা ভাবে ঐদিনের কথা হয়ত ছেলেটার মনে নেই। তবে সেদিন কি গরিব একটা ভাব নিয়েছিল।

“মিস রোদেলা।”

“জ্বী স্যার।”

“নতুন ফাইলটার কপি পাঠানোর দায়িত্বটা কার ছিল?”

“স্যার আমার।”

“পাঠিয়েছেন?”

“জ্বী স্যার। মেইল করে পাঠিয়েছিলাম।”

ইয়াসিন চেয়ারে একটু সোজা হয়ে বসে ফোনটা সাইডে রাখে। রোদেলার দিকে তাকিয়ে পা থেকে মাথা অব্দি একবার পরখ করে। বেশ পরিপাটি শালীন মেয়েটা। প্রথম দেখায় কেউ ধরতে পারবে না বয়স এতো। নিজেকে খুব গুছিয়ে রেখেছে।

ইয়াসিন তার সিবি চেক করে জেনেছে কিছুটা। আর বাকি তথ্য পেরেছে সব অফিসের পুরোনো কিছু স্টাফদের কাছ থেকে। সবার সব তথ্য নেয়ার সময় রোদেলার নাম শুনেই বাসের কথা মনে পড়ে। তখন থেকেই মেয়েটাকে দেখার জন্য সে কিউরিয়াস।

বড়লোক ফেমিলির মেয়ে। চাকরি না করলেও পারে। তবে কেন করে সেটা সেই জানে। হয়ত ইনডিপেনডেন্ট হওয়ার নেশায়। এই নেশায় আজকাল অনেক মেয়েরাই বিয়ের বয়স পার করে ফেলে। তবে রোদেলাকে তেমন মনে হচ্ছে না। অনেক তথ্যই কম সময়ে তার ব্যাপারে জেনে নিয়েছে। আরো জানতে ইচ্ছে করছে।

হঠাৎ এই মেয়েটার প্রতি ইয়াসিনের ইনটারেস্ট কেন আসলো সে নিজেও জানে না। তবে কিছুতো আছে মেয়েটার মাঝে। হয়ত চোখ দুটো। মেয়েটার চোখ খুলো টানা টানা বেশ মায়াবী। প্রথম দেখায় এট্রাক্ট করতে পারবে এমন। ইয়াসিনের ধ্যান ভাঙে রোদেলার কথায়।

“স্যার। আমি কি চলে যাবো?”

“হুমম। তবে যাওয়ার আগে একটা কফি বানিয়ে দিন।”

“জ্বী?”

“কোন সমস্যা? কফি মেশিন তো পাশেই আছে। গ্লাসে ঢেলে দিতে পারবেন না?”

“না স্যার। পারব। দিচ্ছি।”

রোদেলা মনে মনে বেশ বিরক্ত হয়। তবে প্রকাশ করে না। ইয়াসিন ওর অবস্থা দেখে হাসে। মেয়েটা একটু বেশিই শান্ত। তবে ভিতরে ভিতরে এখনো যেন বাচ্চামো একটা ভাব আছে। কোন কারণ বসত সেটাকে বের হতে দেয় না। মুখে কেমন মলিন একটা হাসি থাকে।

রোদেলা কফি রেডি করে বের হয়ে যায়। ইয়াসিন কাউকে কল দিয়ে বলে, “একটা মেয়ের ছবি দিচ্ছি। কালকের মধ্যে সব তথ্য বের করে রেডি করবে। কুইক।”
……..

প্রায় রাত হয়ে এসেছে। নিজের রুমের জানালা খুলে বাহিরে তাকিয়ে আছে অন্তরা। মা কয়েকবার খাবার খেতে ডেকে আর আসেনি। বিয়ের পর প্রথম নিজ বাড়িতে মেয়েরা স্বামী নিয়েই আসে। তবে অন্তরা ফারিয়ার সাথে একাই এসে পড়েছে। সবাই অবশ্য পরিস্থিতি মেনে নিতে বাধ্য। আর্মিরা বেশি একটা ছুটি এমনিতেও পায় না। তবে তাই বলে বিয়ের পরদিনই চলে যাবে সেটা অবশ্য কেউ ভাবেনি।

“কিরে কি ভাবছিস?”

একটা প্লেট হাতে নিয়ে রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলে ফারিয়া। প্লেটে ডিমের ডোজা বানিয়ে দিয়েছে অন্তরার মা। সাথে সস। বিছানায় উঠে একটা ডোজা নিয়ে সস লাগিয়ে খেতে লাগল ফারিয়া। অন্তরা এখনো বাহিরে তাকিয়ে আছে।

“কিরে নে। আমি খেতে খেতে সব সাফার করে ফেললে আবার কিছু বলিস না কিন্তু।”

“খা তুই। খাবো না আমি।”

“মহিলা দেবদাশ হয়ে গেলি মনে হয়। শরৎচন্দ্র বেচে নেই। থাকলে তোর মতো সেনাবাহিনীর বৌদের নিয়ে একটা উপন্যাস লিখত। নাম দিতো ‘দি মহিলা দেবদাশ”।”

অন্তরা বিরক্ত নিয়ে ফারিয়ার দিকে তাকায়। হাতে থাকা প্লেটের ডোজার দিকে চোখ পড়তে পেটের ইদুর গুলো দৌড় শুরু করে। আজকে দুপুর থেকে না খাওয়া। তবে আফনান কি খেয়েছে? এই চিন্তায় আর কিছুই মুখে দেয় না।

ফারিয়ার ফোনে হঠাৎ একটা কল আসে। লেখা উঠে, “হালা ফইন্নি।” সায়েম জোর করে নাম্বারটা দিয়ে দিয়েছিল। তাই এটা দিয়ে সেইব করে রাখে ফারিয়া।

কলটা রিসিব করে হাটতে হাটতে ছাদে চলে যায়। অন্ধকারে হালকা বাতাসে ভালোই লাগছে।

” আসসালামুয়ালাইকুম।”

” ওয়ালাইকুমাসালাম। কি দরকার?”

“আজবতো। কল ধরে মানুষ ভালো আছে নাকি এসব আগে জিগ্যেস করে।”

“আপনার সাথে পিরিতির আলাপ পারতে আমি বরণ ডালা সাজিয়ে বসে থাকি না।”

“বরণ ডালাতো বিয়েতে লাগে। বিয়ে করতে চান নাকি?”

ফারিয়া হাসে। ছাদের মাঝে বসে পড়ে।

“আমার এতটা খারাপ দিন আসেনি বেকার ছেলে বিয়ে করব। তাও এমন চিল মুডে থাকা লোক।”

“বেকার ছন্নছাড়া ছেলে বিয়ে করে তোমার একটা লাভ হবে কি জানো? সে সারা দিন রাত শুধু তোমাকেই সময় দিবে। অফিস নামক সতীনের জ্বালা সহ্য করতে হবে না।”

“এত সময় লাগবে না আমার।”

নানান কথায় ফোনালাপ চলতে থাকে দুজনের মাঝে। প্রথমে যতটা খারাপ মনে হয়েছিল। ছেলেটা ততটাও খারাপ না।

এদিকে এখনো না খেয়ে বসে আছে অন্তরা। হঠাৎ আননোন নাম্বার থেকে একটা মেসেজ আসে। নোটিফিকেশন দেখে বুঝতে অসুবিধা হয়না কে সে। মনটা একটু হলেও ভালো হয়। মেসেজটা পড়তে থাকে।

“দুপুরেও নাকি কিছু খেয়ে বের হওনি ও বাসা থেকে। এখন কিছু খেয়ে নিও। খেয়ে মেসেজ দাও। সমস্যা কি তোমার বলোতো? একেতো কান্না করা মুখ দেখে বের হয়েছি। কোনো কিছুতেই মন বসছে না। দুমাস এভাবে কিভাবে থাকব আমি? কষ্ট শুধু তোমার হয়? আমার হয়না? দরকারি কাজ ছিল দেখেই তো এসেছি।
কাল বিকেলে কল দিবো। যখন সময় পাবো কল দিবো ডেইলি। কথা বলবে ফোনে। মনটা একটু হালকা লাগবে। আজ এসে অনেক কিছু সামলাতে হয়েছে তাই কল দিতে পারিনি। দিলেতো এক ঘন্টা চলে যাবে তোমার উহু উহু কান্না শুনতে শুনতে। প্লিজ খেয়াল নিও। রাখছি। ওহ আর একটা কথা, থাক বলবো না। সামনা সামনি না বললে ফিল আসবে না। খোদা হাফেজ।”

অন্তরা পড়ে আর হাসে। কি বলতে চেয়েছিল সেটাও একটু ভাবে। তবে বেশি একটা ভাবার সময় পায় না। খিদেয় পেটটা জ্বলছে। পাশের প্লেটটা হাতে নিয়ে খেতে থাকে।

#চলবে …..

( আসসালামুয়ালাইকুম। পড়ার জন্য ধন্যবাদ। )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here