দি_বাটারফ্লাই_ইফেক্ট লেখিকা : #আরফিন_জাহান_আনিকা পর্ব : ৯

0
22

গল্পের নাম : #দি_বাটারফ্লাই_ইফেক্ট
লেখিকা : #আরফিন_জাহান_আনিকা
পর্ব : ৯ ( পর্ব ৮ আগে পড়ে নিন। সবার রিকোয়েস্টে আজকে আরেক পর্ব দিলাম।)

চোখের পলকে যেন সময়টা কেটে যাচ্ছে। আফনান গিয়েছে প্রায় এক মাস। এখন শুধু ফোনে ফোনে কথা হয় অন্তরার সাথে। মাঝে মাঝে একটু খারাপ লাগলেও মানিয়ে নিচ্ছে মেয়েটা।

এখন এ বাড়ির বড় বৌ সে। রান্না থেকে ঘরের সবকিছুতেই একটু একটু করে আধিপত্য বাড়ছে তার। বাড়ির সবার সাথেই সম্পর্ক অনেকটা ভালো অন্তরার। শুধু দিন শেষে রুমে ফিরলে অনেকটা একাকিত্ব গ্রাস করে সারা মনটাকে। সবকিছু থেকেও কি যেন নেই নেই লাগে।

“ভাবি আসব?”

দিয়ার কন্ঠে দরজায় তাকায় অন্তরা। মেয়েটা খুব ছটফটে আর মিশুক স্বভাবের।

“আসো। বলার কি আছে।”

“একা একা বোর হচ্ছিলাম। আর তোমাকে একটা জিনিস বলার ছিল।”

“কি?”

“কাল পুরো বাড়ি ফাকা হবে।”

“মানে?”

“আরে আমার এক খালার মেয়ের বিয়ে। সবাইকে ইনভাইট করেছে। রোদ আপু বলছে সে যাবে না। অফিসে নাকি কাজের খুব চাপ। তার উপর কদিন যাবৎ নাইট সিফটে যেতে হচ্ছে তাকে।”

“ওহ। সমস্যা কি? আমি আছিতো। রান্নাবান্না করে রাখব। আর বাকি কাজতো বুয়া করেই দিবে। আবার পড়ার চাপও একটু বেশি এখন আমার।”

“কিই? তুমিও যাবে না? বললেই হলো বুঝি? মা খুব বকবে।”

“একটু ম্যানেজ করে নিও বোন আমার। বুঝোইতো এখন এসবের মাঝে যাওয়ার মন মানুষিকতা আমার নেই।”

দিয়া মন খারাপ করে জবাব দেয়, “আচ্ছা। কি আর করার। দেখি।” দুজনে বসে বসে গল্প করতে থাকে।
……..

রোদেলা খুব ক্লান্তি নিয়ে বিকেল বেলা বাসায় ফিরছে। এমন সময় টিপটিপ বৃষ্টি শুরু হলে দৌড়ে গিয়ে একটা ছাউনির নিচে দাড়ায়। তার বৃষ্টিতে ভিজতে একদমই ভালো লাগে না। ঐ ঘটনার পর একবার কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে রোদেলা বৃষ্টিতে ভিজতে ছাদে উঠেছিল। তার মা চিল্লিয়ে বলে উঠে,

“আর কত নির্লজ্জের পরিচয় দিবি? এত কিছুর পরও ঢং কমেনি। এখন আশেপাশের বাড়ির ছেলেদের শরীর দেখানোর শখ উঠেছে?”

তারপর আজ এত বছর রোদেলা বৃষ্টিতে ভিজে না। কোনো মাই হয়ত দুনিয়াতে নিজের সন্তানকে এতটা ঘৃণা করেনা যতটা রোদেলার মা তাকে করে। অথচ একটা সময় তার মা দুনিয়ার সব চাইতে বেশি তাকে ভালোবাসত। পাড়া প্রতিবেশীদের গর্ব করে বলত,

“ভাবী আমার মেয়ে কোনো ভুল করতেই পারে না। ও কোনোদিন এমন কিছু করবে না যাতে আমাদের মান সম্মান যায়। দেখে নিয়েন।”

তবে রোদেলা সেই অহংকার টিকতে দেয় নি। কলেজ জীবনের ছোট্ট একটা ভুল আজ সব শেষ করে দিয়েছে। বৃষ্টির সময় দোয়া করলে নাকি সেটা কবুল হয়?

রোদেলা ছাউনির কিছুটা সাইডে এসে আকাশের দিকে তাকায়। আশেপাশে এখন কেউ নেই। সে পুরো একা। কেদেঁ কেদেঁ বলে উঠে,

” আল্লাহ, সবাইতো মুভ অন করে নিয়েছে। আমি কেন পারছি না? একটা পাপের জন্য আর কত শাস্তি দিবে আমায়? আমিও তো তোমার এক সৃষ্টি। একটু কি দয়া হয়না আমার উপর।”

ওপর থেকে কোনো সারা আসে না। রোদেলা চুপ করে চোখ বন্ধ করে পাশের পিলারে হেলান দেয়। কাদতে থাকে অনায়াসে। এতে যদি মনটা একটু হালকা হয়।

অন্যদিকে আর্মি ক্যাম্পে এখন খুব তাড়া। হাতে বেশি সময় নেই। আর এক বা দেড় মাস পর খুব বড় একটা মিশনে যাবে সবাই। এজন্য সবকিছু নিয়েই প্রস্তুতি চলছে।

মেজর আফনানের কাছে খবর এসেছে তার সিনিয়র তাকে ডাকছে। সেখানে উপস্থিত হয় আফনান।

“মেজর আফনান সাদিক।”

“ইয়েস স্যার।”

“আপনি আপনার টিম নিয়ে রেডি?”

“জ্বী স্যার।”

“শেষ বারের মতো আপনার টিমকে আজ কিছু বলার থাকলে বলতে পারেন। তারপর মোটিবেট করার সময় নাও পেতে পারেন। মাত্র দের মাস সময় পাবো সর্বোচ্চ।”

“জানি স্যার।”

“এখন টিমের কাছে যেতে পারেন।”

“আফ কোর্স স্যার।”

আফনান তার সিনিয়রকে কুর্নিশ করে পিছপা হয়ে তার ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে গেল। কিছুটা দূরে তার টিমের সব আর্মি অফিসাররা সারিবদ্ধ ভাবে দাড়িয়ে আছে। সবাই যতই শক্ত আর স্টেইট ভাবে দাড়াক চোখে মুখে হালকা ভয়ের ছাপ দেখা যাচ্ছে। আফনান বুঝল এখন শেষবারের মতো মিশনে যাওয়ার আগে পুরো টিমের মনোবল কিছুটা বাড়াতে হবে।

“আপনারা সবাই প্রস্তুত।”

“ইয়েস, স্যার।”

“আমি জানি আপনারা হয়ত কিছুটা ভয়ে আছেন। প্রথমে পুলিশরাও এতে ইনবলব ছিল। তবে তারা সফল হয়নি। আজ অব্দি প্রায় তিনটা আর্মি টিম এই মিশনে আগেও গিয়েছে। তবে দুর্ভাগ্য বসত তারাও ফিরে আসতে পারেনি।”

“….”

“আপনারা ভয় পাবেন না। আমি কথা দিচ্ছি। আমার পুরো টিমের একজন অফিসারের গায়েও আমি একটা গুলি লাগতে দিবো না। বর্ডার পার হয়ে আসা এই অপরাধীদের আমরা নিশ্চয়ই নিজেদের আয়ত্তে আনব। আমাদের প্রথম অভিযান হবে প্রায় এক থেকে দেড় মাস পর। আমরা সফল হলে প্রায় ছমাস পর আরেকটা মিশনে যেতে হবে অন্য জায়গায়। দুটো স্থানেরই হেড একজন। এই মিশনটা সফল হলে তাকে আমরা অবশ্যই খুজে বের করতে পারব। আর শাস্তি দিব। সে যেই হোক।”

সবাই একসাথে বলে উঠল, “অবশ্যই স্যার।”

“মনে রাখবেন, আমরা কারা?”

“দেশের গর্বিত সৈনিক।”

“একদম ঠিক। একটা দেশ টিকেই থাকে সেনাবাহিনীদের ভরসায়। আমরা যেকোনো প্রয়োজনে দেশের খাতিরে সর্বদা প্রস্তুত থাকব। নিজেদের প্রাণের চেয়েও দেশটা আমাদের কাছে অধিক প্রিয়। গট ইট?”

“ইয়েস স্যার।”

“আমার আপনাদের প্রতি বিশ্বাস আছে। আমরা পারব। আমাদের পারতেই হবে। আপনারা প্রস্তুততো বীর সৈনিক?”

“জ্বী স্যার।”

আফনান সেই স্থান ত্যাগ করে। বন্ধু মেজর রোহানের কাছে যায়। কিছুটা আড়ালে নিয়ে বলে।

“রোহান, আমাকে একটা হেল্প করতে পারবি?”

“কি হেল্প?”

“কাল একটা কাজ করতে হবে।”

………

আজ পুরো বাড়ি খালি। সবাই বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়েছে। শুধু রোদেলা আর অন্তরা যায়নি। রাতে খুব আজেবাজে স্বপ্ন দেখেছিল অন্তরা। তার মা বলত, অন্তরার নাকি একটা আধ্যাত্মিক ক্ষমতা আছে। আসন্ন বিপদ সম্পর্কে নাকি ও স্বপ্নে একটু হলেও আন্দাজ পেয়ে যায়। অন্তরা অবশ্য নিজেও কিছুটা বিশ্বাস করে।

একবার ছোটবেলা রাতে স্বপ্ন দেখেছিল তার শরীরের উপর কিছু দিতে আঘাত করা হচ্ছে। এর পরেরদিন তার একটা একসিডেন্ট হয়। আবার একবার স্বপ্নে দেখে সে ডিম বাজতে গিয়ে পুড়িয়ে ফেলেছে। পরদিন দেখা গেল হঠাৎ তাদের পাশের বাসায় আগুন লেগে যায়। এমন অহরহ ঘটনার সাক্ষী সে আছে।

#চলবে ……

( আসসালামুয়ালাইকুম। অনুপ্ররেণার জন্য গল্প পড়লে রিয়েক্ট দিয়ে কমেন্ট করার অনুরোধ রইল। ধন্যবাদ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here