দি_বাটারফ্লাই_ইফেক্ট লেখিকা : #আরফিন_জাহান_আনিকা পর্ব : ১১

0
21

গল্পের নাম : #দি_বাটারফ্লাই_ইফেক্ট
লেখিকা : #আরফিন_জাহান_আনিকা
পর্ব : ১১ (Don’t Copy❌)

অন্তরার ঘুমটা আজ ফজরেরও আগে ভেঙে গিয়েছে। কেন জানি এখন আর বাড়িতে একা থাকতে ভয় করছে না। মনে হয়, আফনান সব সময় ওর আশেপাশেই আছে। আচ্ছা, কাল যদি ও ঠিক টাইমে না আসত তাহলে কি হতো?

ভাবতেই শরীরে কাটা দিয়ে উঠে। আফনান সব সময় ওর প্রয়োজনে হাজির হয়। এর আগে একবার কলেজ থেকে একটা ট্রিপে গিয়ে জঙ্গলে হাড়িয়ে গিয়েছিল অন্তরা। পাশেই ছিল সেনা ক্যাম্প। কোনো এক কাজে আফনান সেখান দিয়ে যাচ্ছিল। কলেজ ড্রেস পড়া এক পিচ্চিকে দেখে বলে,

“এই মেয়ে। এখানে কি করছ?”

প্রথমে কিছুটা ভয় পেয়ে যায় অন্তরা। পড়ে শরীরে সেনাদের ঐ ব্যাচ দেখে কিছুটা আশ্বস্ত হয়।

“কি হলো বলো? এটা তো ডেনজারাস এরিয়া। বাহিরে কারো প্রবেশ নিষেধ।”

“না মানেহ। আমি পথ হাড়িয়ে ফেলেছি। কীভাবে ফেরত যাব বুঝতে পারছি না।”

বলেই অন্তরা কান্না করে দেয়। প্রায় সন্ধ্যাও হয়ে এসেছিল। অনেকটা ভয় পেয়েছে বেচারী। আর এই লোক ভালো নাকি খারাপ তাও তো সে জানে না।

“আচ্ছা চলো। আমি তোমাকে দিয়ে আসি?”

“আপনি আবার আমার র ক্ত খাবেন না তো?”

“কিই?”

” না মানে খারাপ ভাববেন না। কোরিয়ান থ্রিলার মুভিতে দেখতাম। সিরিয়াল কি/লাররা দেখতে খুব হ্যান্ডসাম হয়। পরে এমন জঙ্গলে কাউকে পেলে নিয়ে মে/রে খে/য়েও ফেলে।”

আফনান ভেবাচেকা খেয়ে যায়। সুন্দর দেখে সুনাম করল নাকি বদনাম ঠিক আন্তাজ করতে পারছে না। তবে সে অন্তরাকে ঠিকই তাদের পিকনিক স্পটে পৌছে দেয়।

ঘরে বসে এসব পুরোনো কথা ভাবছিল অন্তরা। ঐদিন থেকেই আফনানকে বেশ মনে রেখেছে মেয়েটা। ঘরের ড্রেসিং টেবিলটার সামনে গিয়ে বসে। একটু সাজতে ইচ্ছে করছে একা একা। মেয়ে মানুষের এই এক অভ্যাস। যখন বাসায় কেউ থাকে না। একা একা সাজবে। নিজেকে দেখবে। আবার একা একাই মেকাপ মুছে ফেলবে।

অন্তরা সাজতে গিয়ে কিছু একটা পাচ্ছিল না।খুজতে খুজতে একটা ড্রয়ার টান দেয়। একটা লাল ডায়েরি। উপরে বড় বড় অক্ষরে আফনানের নাম লেখা। বেশ পুরোনো। কয়েক বছর আগের হবে। কিউরিসিটির বসে সে ডাইয়েরিটা খুলে বসে। এক এক পেজ উল্টিয়ে পড়তে থাকা। আফনান কলেজ থাকতে এই ডায়েরিটা লিখত। তবে মাঝ অব্দি লিখে আর কেন জানি লিখেনি।

কোথাও ভালো স্মৃতি, কোথাও খারাপ। এসব কিছু। তবে একটা তারিখ দেখে ওর চোখ আটকে যায়। সেটা প্রায় বারো বছর আগের। অন্তরা পড়তে শুরু করে। তবে এখানে এমন কিছু লেখা ছিল যা পড়ে অন্তরা একদম বাকশূণ্য হয়ে পড়ে। হঠাৎ হাত থেকে ডায়েরিটা পড়ে যায়।

“এসব কি সত্য? এমন হয়েছিল?”

নিজেকে নিজে প্রশ্ন করে অন্তরা। তার চোখ দিয়ে ফোটা ফোটা পানি বের হতে থাকে। যেন চোখের সামনে ভাসছে সবটা।

বারো বছর আগে…..

আজ কলেজে অনেক বড় অনুষ্ঠান। কলেজের একজন ছাত্রকে সেনা ক্যাম্প থেকে পুরষ্কৃত করা হবে। ছাত্রটির নাম হলো আফনান সাদিক। এই পুচকে ছেলে এমন কিছু করেছে যার জন্য পুরো সেনা ক্যাম্প তার কাছে কৃতজ্ঞ।

দেশের একজন প্রতিষ্ঠিত বিজনেসম্যান মিস্টার ইয়াহিদ খান যে এত বড় ড্রা গস পাচারকারী ছিলেন, তাও আবার ফাসাতে চেয়েছিলেন সেনা অফিসারকে। তা সবার কল্পনার বাহিরের ছিল। কিছুদিন আগে কলেজ থেকে বান্দরবান পিকনিক ছিল। খেলার ছলে ঘুরতে ঘুরতে এক জায়গায় গিয়ে থামে আফনান ও তার বন্ধুরা।

কিছু লোক মুখে কাপড় দিয়ে ঢেকে রেখেছে। একটা গাড়িয়ে ট্রাংক ভর্তি করে কি যেন ভরছে। আর নিজেদের মাঝে কথা বলছে। আফনানের বন্ধু এসব আড়াল থেকে দেখে ফিসফিসিয়ে বলে,

“আফনান, চল পালাই। আমাদের দেখলে বিপদে পড়ব।”

“আরে থামতো সিরাত। কিছু একটাতো এখানে হচ্ছে। সুবিধের বলে মনে হচ্ছে না। ওয়েট সব ভিডিও করব আমি।”

সিরাত ভয়ে চলে আসে ঠিকই। তবে আফনান আসে না। এক এক করে সব ভিডিও করে। সাথে ওদের মধ্যে যা কথা হয় তাও উঠে যায়। কে এসবের পিছনে, সে কাকে ফাসাতে চায় সব।

অতঃপর লুকিয়ে ফেরত এসে সব প্রমাণ নিজের বাবা আরিফুল ইসলামকে দেয়। সেনাবাহিনীর সব অফিসাররা বেশ গর্বিত হয় ওর উপর। তবে এর ফল যে কত ভয়ানক হতে পারে তা ওদের পুরো পরিবার বুঝতে পারে নি।
……….

সারা রাত কাজ করে রোদেলা বেশ ক্লান্ত। পুরো রাত কম্পিউটারের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে চোখ ব্যাথা করছে। ইয়াসিনও ইচ্ছে করে রাতে বাড়ি ফিরেনি। মেয়েটাকে একা লেখে যাবে না ও।

“চলুন মিস রোদেলা।”

রোদেলা পাশে তাকায়। হাতে ব্লেজারটা নিয়ে দাড়িয়ে আছে ইয়াসিন। রোদেলা জিগ্যাসা সূচক দৃষ্টিতে তাকালে ইয়াসিন ইশারা দিয়ে বুঝায়, আজ এ অব্দিই। রোদেলা উঠে ক্লান্ত শরীরে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। ইয়াসিনও পাশে পাশে হাটছে।

” আজ খুব টায়ার্ড মনে হয়।”

“জ্বী।”

“আমি পৌছে দেই?”

“নো থ্যাংকস। আমি যেতে পারব।”

ইয়াসিন আর কথা বাড়ায় না। লিফটে উঠে পড়ে দুজনে। রোদেলা চুপ করে নিচে তাকিয়ে আছে। মেয়েটা এত লজ্জা পায় কেন? যেন তাকালেই কিছু হয়ে যাবে। ইয়াসিন হাসে। বাকিদের সরাতে পারছে না আর এ একবার তাকায়ও না। হয়ত পুরোনো ট্রমার জন্য।

নিচে এসে ইয়াসিন তাড়াতাড়ি রোদেলার আগেই গাড়ি থেকে বের হয়। দৌড়ে গিয়ে বিল্ডিং এর পাশের দোকান থেকে দুটো এনার্জি ডিংক নিয়ে আসে।

“নিন।”

“কি এটা?”

“এনার্জি ড্রিংক। ভালো লাগবে।”

“নো। থ্যাংকস।”

“আপনি কি এই ওয়ার্ড ছাড়া আর ইংরেজি পারেন না। নিতে বলছি নিন তো।”

রোদেলা বারবার মানা করা শর্তেও নিতে বাধ্য হয়। তবে এই সময়ে এটির খুব দরকার ছিল আসলেই। রোদেলা ঠোট ছুইয়ে ক্যানটায় একটু একটু করে চুমুক দেয়। গ্যারেজে নিজের গাড়িতে গিয়ে বসে। ইয়াসিন অপেক্ষা করছে কখন রোদেলা গাড়ি থেকে নামবে।

সে আগেই টায়ার পানচার করে রেখেছে। কোথায় যেন শুনেছিল, এবরিথিং ঈজ ফেয়ার ইন লাব এন্ড ওয়ার। যদিও সে নিজে এটা মানে না। তবুও একটু আকাম তো করাই যায়। রোদেলা গাড়ি থেকে নেমে যায়।

ইয়াসিন হেসে বলে,

“এখন এই সময়ে গাড়িও পাবে না। যাই। একটু হিরো সেজে আসি।”

তবে ওর পুরো প্লানে জল ঢেলে দিয়ে গাড়ির পিছনে গিয়ে দুটো টায়ার আর হাবিজাবি যন্ত্রপাতি নিয়ে আসে রোদেলা। কোমরে ওড়না বেধে একাই টায়ার পাল্টিয়ে সব ঠিক করে ফেলে। ইয়াসিন দূর থেকে দাড়িয়ে এসব দেখে বলে,

“দূররর বা ল। কপালটা আমারই খারাপ। ভুলে গিয়েছিলাম মেয়েটা সবকিছুতে বেকআপ রাখে।”

মনমরা হয়ে ইয়াসিনও নিজের গাড়িতে গিয়ে বসল। এদিকে…

#চলবে….

( আসসালামুয়ালাইকুম। বাসায় মেহমান। পর্ব বড় দিতে চেয়েও পারিনি। এজন্য দুঃখিত। কাল দেখি কি করা যায়। আর বেশি পর্ব নেইও গল্পটার। পড়ার জন্য ধন্যবাদ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here