দি_বাটারফ্লাই_ইফেক্ট লেখিকা : #আরফিন_জাহান_আনিকা পর্ব : ১২

0
22

গল্পের নাম : #দি_বাটারফ্লাই_ইফেক্ট
লেখিকা : #আরফিন_জাহান_আনিকা
পর্ব : ১২ (❌কপি করা নিষেধ❌)

গায়ে কাথা টেনে গভীর ঘুমে মগ্ন রোদেলা। সারা রাত জেগে থেকে বাসায় এসে দুটো ব্রেডে জ্যাম লাগিয়ে খেয়ে নেয় রোদেলা। অন্তরা জুস আর কিছু সালাতও রেডি করে রেখেছিল। তাড়াতাড়ি খেয়ে রুমে এসে শুয়ে পড়ে। সাথে সাথে তলিয়ে যায় গভীর ঘুমের দুনিয়ায়।

অন্তরা নিজেও হালকা পাতলা ব্রেকফাস্ট করে নেয়। নিজের রুমে যাওয়ার সময় কি মনে করে যেন রোদেলার রুমে যায়। মেয়েটা ঘুমোচ্ছে। ঘুমন্ত অবস্থায় ঠিক ছোট্ট বাচ্চার মতো লাগছে। এই মেয়ের বয়স ৩০+? অসম্ভব মনে হচ্ছে অন্তরার কাছে।

আচ্ছা, ঐ অমানুষ গুলোর কি একটুও মায়া হয়নি মেয়েটার প্রতি? তখন তো সে আরো ছোট ছিল। অন্তরা রুম থেকে বেরিয়ে নিজের রুমে গেল। বারান্দায় বসে ধোয়া ওঠা এক কাপ দুধ চা খেতে খেতে সেই ভয়াবহ রাতের কথা ভাবতে লাগত।
…….

বিকেল থেকে রোদেলাকে পাওয়া যাচ্ছে না। আরিফুল নিজের সেনা ক্যাম্পে বেক করেছে। রোদেলাকে কিভাবে কি করে খুজে বের করবে বুঝতে পারছে না আফনানের মা।

“চিন্তা করো না মা। আমি ঠিকই রোদ আপুকে খুজে নিয়ে আসব।”

আফনানের কথা শুনে আরো জোরে কেদেঁ উঠে তার মা। খুব আদরের মেয়ে তার। দুপুরের দিকে বলল, কোন বান্ধবীর বাসায় নাকি যাবে। ঐ যে ফোন সুইচ অফ হলো। আর কোনো খোজ নেই মেয়ের।

আফনান কি করবে বুঝতে পারছে না। এদিক ওদিক সব বন্ধুদের ফোন করে খোজ নিতে বলেছে। আর কত এভাবে বসে থাকবে ঘাপটি মেরে। না আর সম্ভব না। আফনান বাড়ি থেক্র বের হয়ে তার এক ফ্রেন্ডের কাছে চলে যায়।

“হাসিব।”

“কি হয়েছে আফনান? রোদ আপুর খোজ পেলি?”

“নারে। তবে তুই চাইলে সম্ভব।”

হাসিব খুব ভালো ফোন এক্সপার্ট। অনেক আগে একবার রোদেলার কথায় আফনানের সাথে রোদেলার ফোনের কানেক্ট করে দিয়েছিল। যেন আফনান বাসায় দেরী করে ফিরলেও কোথায় কি করছে তা খোজ রাখতে পারে।

সেই ওয়েতে হাসিব আফনানকে রোদেলার বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে কিছু তথ্য দিল। আফনান আর দেরী না করে দৌড়ে সেখানে পৌছে যায়। ঠিকানাটা ওদের কলেজের ঠিক পিছনে। বাগানের খুবই নিরব জায়গা। তবে পৌছে যা দেখে আফনানের শ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম।

“ররোদ, আপপি!”

কাপা কাপা গলায় বলে উঠে আফনান। রেদওয়ান আর ওর সাঙ্গু পাঙ্গুরা আফনানদে দেখে হেসে উঠে। আফনানের কারণেই তার বাবা আজ জেলে। প্রতিশোধ নিতে এতদিন যাবৎ মিথ্যে প্রেমের অভিনয় করেছে রোদেলার সাথে। তাইতো এক ডাকাতেই এমন আসতে রাজি হয়েছে।

বেচারি। নিজের ইজ্জত তো হাড়ালোই। খামাকা নিজের হিরোগিরি দেখানো ভাইকেও মাইর খেতে দেখবে।

আফনান রোদেলার দিকে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলল। এর চাইতে নিজের মৃত্যু যন্ত্রণা ওর কিছে ঢের আরামের হতো। নিজের চোখের সামনে বোনকে ধ/ র্ষণ হতে দেখার অনুভূতি একটা ভাইয়ের কাছে কতটা কষ্টকর তা একন কাটায় কাটায় অনুভব করছে আফনান।

তবে নিজের দিন দুনিয়ার জ্ঞান ফিরে পাবার আগেই হঠাৎ মাথায় প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করল আফনান। রেদওয়ানের কথায় ওর দলের লোকেরা খুব মারছে আফনানকে। তবে এসব আঘাত যেন এতটুকুও লাগছে না আফনানের গায়ে। সে শুধু আধমরা হয়ে পরে থাকা নিজের বোনের দিকে তাকিয়ে আছে।

নিজেদের কাজ শেষ করে রেদওয়ানরা চলে যায়। আফনান অনেক কষ্টে রোদেলার কাছে আসে। পাশে পড়ে থাকা ওড়নাটা দিয়ে শরীরটা পেচিয়ে দেয়। হাতের উপর মাথাটা রেখে ধীরে ধীরে ডাকতে থাকে,

“রোদ আপু। তাকা আমার দিকে। এইযে তোর ভাই এসেছে। সব ঠিক হয়ে যাবে বোন আমার। ওদের সবাইকে আমি শাস্তি দিবো। তুই দেখিস। কিচ্ছু হবে না তোর।”

আর কিছু বলতে পারে না আফনান। কেদেঁ উঠে হো হো করে। সেদিন রোদেলার শরীরটা বেচে গিয়েছিল তবে মরার মতোই। তারপর থেকে হাসিখুশি মেয়েটা একদম নিশ্চুপ অনুভূতিশূন্য হয়ে উঠে।

আফনানের মা এতোটা বছর যাবৎ মেয়ের সাথে রাগ করে আছেন। কথা বলে না। এসবের জন্য সে নিজের মেয়েকেই দায়ী করে। কেন ও কয়েকদিনের পরিচয়ে একটা ছেলেকে ভালোবেসে নিজের পরিবার ছেড়ে যেতে গেল? আজকাল এর মেয়েরা এত সহসে ছেলেদের বিশ্বাস করে ফেলে, যার ভুলের মাশুল তাদের পুরো জীবন ভর দিতে হয়।

তবে কয়েক বছর অব্দি সাইক্রাআর্টিস্ট দেখিয়ে চিকিৎসা নিতে হয়েছে মেয়েটার। পড়াশোনাটাও এজন্য ছেড়ে দিতে হয়েছে। পুরো এক ঘরো হয়ে উঠেছিল মেয়েটা। আর ওই জানোয়াররা? তারা ঠিকই বিদেশ গিয়ে দিব্বি বিন্দাজ লাইফ কাটাচ্ছে। আরিফুল ইসলামের মনে হয়েছিল, তার মতো কাপুরুষ বাবা এ দুনিয়ায় আর একজনও নেই।

নিজে একজন সেনা অফিসার হয়েও, মেয়ের সাথে হওয়া এই অন্যায়ের শাস্তি সে দিতে পারেনি। কম কথা শুনতে হয়নি সবার মেয়েটাকে। ওরতো কোনো দোষ নেই। ওতত শুধু কাউকে ভালোবেসেছিল, বিশ্বাস করেছিল। আর কি?

যেসব ছেলেরা মেয়েদের বাজে চোখে দেখে, তাদের ইভটিজিং করে কিংবা ধ/র্ষণের মতো জগন্য কিছু করে। ওরা জানেও না যে এর প্রভাব একটা মেয়ে ও তার পরিবারে কত জগন্যভাবে পড়তে পারে। ওরা এসবের আগে একবারের জন্যও নিজের মা, বোন বা সন্তানের কথা ভাবে না। হয়ত ভাবে। হয়ত নিজেদের পরিবারের সদস্যকেও ওরা এই চোখেই দেখে।

সেদিন থেকেই আফনান শুধু নিজের ক্যারিয়ারেই ফোকাস করেছে। যেভাবেই হোক ঐ পাপীদের ধরে বোনের সাথে হওয়া অন্যায়ের বদলা নিতে হবে। নিতেই হবে।
…….

দুপুরে উঠে ফ্রেশ হয়ে নেয় রোদেলা। একটা নীল রং এর গোল জামা পড়ে নেয়। একপাশে আয়নার কাজ করা ওড়না ঝুলানো। আজ দুপুর থেকে সন্ধ্যা অব্দি শিফট। ভালোই হলো রাতে আর বাড়ির বাহিরে যেতে হবে না।

এইদিকে ইয়াসিন অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছে কখন রোদেলা অফিসে আসবে। কিছুক্ষণ পর রোদেলা আসল। ইয়াসিন ওর সিট চেনজ করে গত রাতে যেখানে বসে কাজ করেছিল, সেটাকেই পার্মানেন্ট করে দিয়েছে। এখন শুধু অপেক্ষার পালা। ইচ্ছা করেই এই ডেক্সের কম্পিউটার নষ্ট করে রেখেছে ইয়াসিন।

ইয়াসিন কাচের এ পাশ থেকে সবই দেখতে পাচ্ছে। ইয়েছ! এইতো রোদেলা বসেছে। এখন কম্পিউটার অন করে দেখবে কাজ করছে না। সবাইকে ডাকবে। কেউ ঠিক করতে পারবে না। এসব ভেবে ইয়াসিন খুব খুশি হয়।

“আব আয়েগা মাজা। আমাকে ডাকবে, আমি কম্পিউটার ঠিক করে দিবো। রোদেলার চোখে আমি হিরো হবো। আমার প্রতি ও কিছুটা থ্যাংকফুল হবে। আমি ওর নাম্বার চাইব যেন কোনো সমস্যায় আমাকে ডাকে। একটু আকটু কথা হবে। তারপর ভালো লাগা হবে। ভালো লাগা থেকে ভালোবাসা হবে। পরে প্রেম হবে। কয়েকদিন পর বিয়ে করব। বিয়ের পর দুটো বাচ্চা হবে। ছেলের নাম দিবো….”

আর কিছু ভাবতে পারে না ইয়াসিন। বেচারার সব পরিকল্পনা ভেস্তে যায় যখন মনে পড়ে আজ বৃহস্পতিবার। আজ রোদেলার ইউনিটের কারোতো কম্পিউটারে কোনো কাজই নেই! শুধু হাতে করে কয়েকটা ডকুমেন্ট গুজিয়ে জমা দিলেই শেষ।

হতাশ, খুবই হতাশ হয় ইয়াসিন। এমন সময় তার পিএ এসে ইয়াসিনকে চিন্তিত দেখে প্রশ্ন করে,

“এনি প্রবলেম স্যার?”

“কি আর বলব বলো? বাচ্চার নামটা আর রাখতে পারলাম না?”

“মানেহ? আপনি তো আনমেরিড।”

“তুমি বুঝবে না। আচ্ছা, একটা কাজ করো।”

“কিই?”

“মিস রোদেলাকে গিয়ে বলো আমি ডাকছি।”

কথাটা শুনে পিএর মনটা খারাপ হয়ে যায়। ইদানিং অফিসে খুব কথা হচ্ছে নতুন সিও কারণে অকারণে রোদেলাকে নিজের রুমে ডাকে। মেইবি সাবথিং ইজ হ্যাপেনিং বিটুইন দেম।

#চলবে …..

( আসসালামুয়ালাইকুম। আশা করি রোদেলার ব্যাপারটা কিছু হলেও বুঝতে পেরেছেন। পড়ার জন্য ধন্যবাদ। রিয়েক্ট দিয়েন সবাই।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here