দি_বাটারফ্লাই_ইফেক্ট লেখিকা : #আরফিন_জাহান_আনিকা পর্ব : ১৫

0
20

গল্পের নাম : #দি_বাটারফ্লাই_ইফেক্ট
লেখিকা : #আরফিন_জাহান_আনিকা
পর্ব : ১৫ (❌কপি করা নিষেধ❌)

“তোমার টাকা তুমি সময়মতো পেয়ে যাবে। থ্যাংকস মেজর রোহান।”

রেদওয়ানের কথা শুনে মেজর রোহান হাসল। আর বলে উঠল,

“নতুন ফোর্স আসার আগে আপনি পালান।”

রেদওয়ান আর এক মিনিট দাড়াল না। তার দলের সবার মৃত লাশ পড়ে আছে। সে দ্রুত পাশের জঙ্গল বরাবর হাটতে থাকল। তবে হঠাৎই একটা গু লির আওয়াজ তার যাত্রা থামিয়ে দিলো।

পিছন হতে কেউ গু লি করেছে। বুক বেয়ে রক্ত বেরুচ্ছে। পিছতে তাকাতে দেখে আফনান দাড়িয়ে। রোহানও কিছু বলছে না। রেদওয়ান চিল্লিয়ে বলে,

“ইউ ব্লাডি বিচ…”

আর কথা শেষ করতে পারে না রেদওয়ান। আফনান তার রাইফেল দিয়ে আর একটা গু লি করতেই রেদওয়ান মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। আর আফনান বলে উঠে,

“লেটস দা মেইন গেইম বিগেন।”
…….

দেশের সব নিউজ চ্যানেলে আজ একটা নিউজই চলছে। আফনানের পুরো পরিবার অধির আগ্রহে টিভির সামনে বসে আছে। দুদিন পার হয়ে গিয়েছে আফনানদের মিশনের। দেশের সর্বোচ্চ সম্মাননা দেয়া হবে মেজর আফনান সাদিককে।

তার পুরোটাই লাইব হচ্ছে। এত বড় একজন ক্রিমিনালকে কীভাবে সে শেষ করে দিলো তা বেশ অবাকের বিষয়। এখন সে পুরো দেশের হিরো। একটু পর আফনান মনচে উপস্থিত হয়। প্রথমে তাকে স্পিচ দিতে হবে। স্টেজে উঠে সে ডেস্কের কাছে যায়। মাইকটা নিজের দিকে ঘুরিয়ে স্পিচ দিতে থাকে।

” আসসালামুয়ালাইকুম। এখানে আমার অনেক সিনিয়র সহ আমার টিমের অনেক মেম্বাররাও উপস্থিত আছেন। সবাইকে অনেক ধন্যবাদ আমাকে এই সম্মানের যোগ্য মনে করার জন্য। তবে এর ক্রেডিট আমার একার না। আমার সহকারী মেজর রোহান আর আমার পুরো টিম যদি সততা আর সাহসের সাথে না লড়ত তবে এই মিশনটা সফল করা আমার পক্ষে সম্ভব হতো না।”

আফনান একটু থেমে আবার বলতে শুরু করে,

“আমরা চেয়েছিলাম রেদওয়ানকে জী বিত ধরতে। তবে ও পাল্টা আমাদের আ ক্রমণ করায় সেটা সম্ভব হয়ে উঠেনি। তাই আত্মরক্ষার খাতিরে ওকে মা রতে হয়েছে। তবে আমাদের প্রত্যেকের উচিত নিজের দেশের স্বার্থে নিজেকে বিলিয়ে দেয়া। দেশ রক্ষায় কাজ করা। আবারো সবাইকে ধন্যবাদ আমার সাথে থাকার জন্য। ”

সবাই করতালির মাধ্যমে আফনান ও ওর টিমকে অভিনন্দন জানায়। সিনিয়র অফিসার আফনানের সাথে হ্যান্ডসেক করে বলে,

” কনগ্রাচুলেশন ইয়ং ম্যান। ইউ ডিজার্ব ইট।”

আফনানের বুকে একটা ছোট্ট ব্যাজ লাগিয়ে দেয়। এইটা পাওয়ার স্বপ্নে ডুবে থাকে হাজারো আর্মি অফিসাররা।

টিভিতে এসব দেখে কান্নায় ভেঙে পড়ে আরিফুল ইসলাম। সে নিজে যা করতে পারেনি তার ছেলে পেরেছে। গর্বে তার শির আজকে অনেক উপরে। অন্তরার আজ যেন একটু বেশিই ভালো লাগছে। সে চুপিসারে সবার মাঝ থেকে দৌড়ে দোতলায় নিজের রুমে চলে গেল। আফনানকে কল করবে ভাবতেই দেখে সেই আগে কল করেছে,

” আসসালামুয়ালাইকুম বৌ।”

” ওয়ালাইকুমাসালাম। এখন ছুটি পাবেন নাহ?”

“আজবতো। কেমন আছি, কি করছি, কীভাবে কি হলো, তা না জিগ্গেস করে তুমি ছুটির কথা বলছ?”

অন্তরার মনটা খারাপ হয়ে গেল। অন্তরাকে চুপ থাকতে দেখে আফনান বলে উঠে,

“আজ বিকালে আসছি।”
…….

“দোস্ত।”

রোহানের কথা শুনে ব্যাগ গুছানো থামিয়ে আফনান ওর দিকে তাকায়।

“তোরে বললাম একটু ঘুমিয়ে নে, নিলি না তো।”

“এখন কি ঘুমের সময় নাকি? কি যা তা বলছিস।”

“না মানে বৌর কাছে গিয়ে তো আজ রাত ঘুমাবি না। তাই আরকি।”

আফনান একটা ছোট্ট বালিশ রোহানের দিকে ছুড়ে মেরে বলে,

“হিংসা হলে এই বালিশ জড়িয়ে আজ শুয়ে থাকিস।”

“মজা নিস না তো। পারলে একটা বৌ খুজে দিস।”

আফনান হেসে বলল, “আচ্ছা।” রোহানো নিজের ব্যাগ গুজাতে থাকে। পুরো এক সপ্তাহের ছুটি পেয়েছে ওরা। এক সপ্তাহ ছুটি মানে আর্মিদের কাছে এক বছরের ছুটির সমান। যেখানে ঈদের সময়ও মাত্র তিন থেকে চারদিন ছুটি থাকে।

আফনান ব্যাগ গুছাতে গুছাতে ভাবতে লাগল রোহান হেল্প না করলে প্রতিশোধটা আর নেয়া হতো না। এসব কিছুও ওদের প্লানেরই অংশ ছিল। যেন নিজের আত্মরক্ষার উদাহরণ দেখিয়ে নিজের সবচেয়ে বড় শত্রুকে নিজ হাতে শাস্তি দিতে পারে আফনান। তাই রেদওয়ান কে এটা বিশ্বাস করানো হয়, রোহান তার দলে।

তবে সে হয়ত ভুলে গিয়েছে, সবাই তার মতো দেশদ্রোহী রাজাকার না। কেউ কেউ দেশপ্রেমীও হয়।
………

“মা।”

আফনানের মা রান্নাঘরে অনেক কিছু রান্না করছিলেন। আজ তার ছেলে তাদের মুখ উজ্জ্বল করে বাড়ি ফিরছে। হয়ত টাকা পয়সার পাহাড় অনেকেই বানিয়ে ফেলে। তবে এভাবে সবার আইডল হতে কজন পারে? এমন সময় রোদেলার মুখে মা ডাক শুনে তার মা একদম থমকে যায়।

আজ কত বছর পর এই ডাকটা সে শুনছে। উপরে উপরে যতই রাগ করে থাকুক, ভিতরে তো সে একজন মা। মা তো মা ই হয়। সে রোদেলার দিকে তাকাল। রোদেলা আরো কাছে এসে বলল,

“মা। একটু কথা বলি তোমার সাথে।”

আফনানের মা চুপ করে রইলেন। রোদেলা আবার বলে উঠল,

“মা। আমি বিয়ে করতে চাই।”

“কিই?!”

একটা চিৎকার দিয়ে উঠে রোদেলার মা। তার মেয়ে কি পাগল হয়েছে। হঠাৎ এসব কি বলছে? এর আগে তারা নিজেরাও রোদেলাকে বিয়ে দিয়ে দিতে চেয়েছিল। ভেবেছিল নতুন সংসার হলে ও হয়ত পুরোনো ব্যাথা ভুলে যাবে। তবে ও আর কাউকে বিশ্বাস করতে পারেনি। আজ হঠাৎ এসব?

” জ্বী মা।”

” যা বলছ ভেবে বলছ তো?”

“হ্যা মা। আর যে আমাকে বিয়ে করতে চায়। সে হয়ত সবটা জেনেই এসেছে।”

রোদেলার মা কিছুটা ওর দিকে ফিরে প্রশ্ন করল,

“তুই কি ঐ ছেলেকে ভালোবাসিস?”

রোদেলা চুপ করে থাকে। সে নিজেও এর উত্তরটা ঠিক জানে না। তবে এটা ঠিক যে ইয়াসিনের বাচ্চামো ওর নজর এড়ায় নেই। কিছুটা দুর্বল হয়ত সে নিজেও হয়েছে।

মেয়েকে চুপ করে থাকতে দেখে রোদেলার মা যা বোঝার বুঝে যায়।

“তা ছেলেটা কে?”

“আমাদের অফিসের সিও। বয়সে আমার থেকে ছোট।”

“তা এতো ভালো মেয়ে থাকতে তোমাকে কেন? মানে বুঝতেই পারছ কি বলছি।”

“জানি না।”

“আচ্ছা। এক কাজ করো। ঐ ছেলেকে কাল আসতে বলো। যা কথা হবে আফনানের সামনেই হবে। পাকনামি করে নিজে কিছু করতে যেও না। আগের বার কি হয়েছে ভুলো নি নিশ্চয়ই।”

রোদেলা আর কিছু না বলে মাথা নেড়ে চলে আসে। একবার বিশ্বাস ভাঙলে আর তা আগের মতো ফিরিয়ে আনা যায় না। এজন্যই হয়ত মানুষ বিশ্বাসকে আয়নার সাথে তুলনা করে। রোদেলার যদি নিজে কিছু করার হতো, সেতো আর মাকে বলত না।

তবে একটা জিনিস দেখে ভালো লাগছে। আজ এত বছর পর মা অন্তত কথাতো বলেছে।

বিকেলবেলা…..

আজ অন্তরা খুব সুন্দর করে সেজেছে। পছন্দের কালো শাড়িটা পড়েছে। মুখে হালকা মেকাপ করতে নিয়েও করেনি। দিয়া এসে ঠিকই এসব নিয়ে মজা করবে। নিচে গিয়ে নিজেও রান্নার কাজে শাশুড়িকে একটু হেল্প করল। এমন সময় গাড়ির হর্ন এর অওয়াজ।

#চলবে ….

( আগামী পর্বে একটু রোমান্স দিবো। তাই আগেই প্রাপ্তবয়স্ক এলার্ট দিয়ে দিলাম। আমার গল্পে রোমান্স দেই না দেখে অনেক অভিযোগ। তাই একটু দিবো এই গল্পে। ধন্যবাদ।)

এই গ্রুপে এড হয়ে আমার যেকোনো গল্প নিয়ে আলোচনা, রিভিউ, সমালোচনা বা হাসির মিমস শেয়ার করার অনুরোধ রইল। ধন্যবাদ।
https://facebook.com/groups/745515844267371/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here